Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন মস্কো ক্রেমলিন

ক্রেমলিন, যা কিনা রাশিয়ার জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান, তের শতক থেকে শুরু করে রাশিয়ার সকল ঐতিহাসিক রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে জড়িত। মানবজাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ক্রেমলিনের স্থাপত্যকলা ও শৈল্পিক সৌন্দর্য যে কারো চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। ঐতিহাসিক দুর্গঘেরা এই ক্রেমলিন কমপ্লেক্স রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এর দক্ষিণ দিকে মস্কোভা নদী, উত্তরে সেন্ট ব্যাসিল’স ব্যাসিলিকা (একটি ক্যাথেড্রাল), পূর্বে রেড স্কয়ার এবং পশ্চিমে রয়েছে ‘দ্য আলেক্সান্ডার গার্ডেন’।

ছবিসূত্রঃ World Famous Wonders

অধিকাংশ মানুষ ক্রেমলিনকে একটি ভবন ভেবে ভুল করে থাকেন। মূলত ক্রেমলিন বিশাল জায়গা জুড়ে একাধিক নান্দনিক টাওয়ার, ক্যাথেড্রাল এবং চার্চের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমপ্লেক্স। বর্তমানে রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের বাসভন ক্রেমলিন একসময় জারদেরও বাসভবন ছিল। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাশিয়ান নেতা ক্রেমলিনের সংস্কার করেছেন নিজেদের মতো করে। রাশিয়ান সম্রাজ্ঞী দ্বিতীয় ক্যাথেরিন, যিনি ‘ক্যাথেরিন দ্য গ্রেট’ নামেও পরিচিত, বেশ কয়েকটি চার্চ ভেঙে ফেলেন এবং সেই স্থানে নির্মাণ করেন নিজের দৃষ্টিনন্দন বাসভবন ‘ক্যাথেরিন প্রাসাদ’। জার প্রথম নিকোলাস তো পুরো ‘উইন্টার প্যালেস’ই ভেঙে ফেলেছিলেন, যদিও তা পরে পুননির্মাণ করা হয়। বলশেভিক বিপ্লবের পর রাশিয়ান সমাজে যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে, তার প্রভাব ক্রেমলিনেও পড়েছিল। সে সময় ভ্লাদিমির লেনিন তার বাসভবন ক্রেমলিনের সিনেট ভবনে স্থাপন করেন। আর পুরো ক্রেমলিনকে দৃষ্টিনন্দন ‘ক্রেমলিন স্টার’ দিয়ে সজ্জিত করেন স্টালিন। সংক্ষেপে এই তথ্যগুলো পড়ে কি ক্রেমলিন সম্পর্কে জানার আগ্রহে বেড়েছে আপনার? যদি বাড়ে, তাহলে আজকের লেখাটি আপনার জন্যই। ক্রেমলিনের আদি ইতিহাস থেকে বর্তমানের আদ্যোপান্ত তুলে ধরবো আজ।

গোড়াপত্তন

শুরুর দিকে যেমন ছিল ক্রেমলিন(কাল্পনিক); ছবিসূত্রঃ newworldencyclopedia.org

ক্রেমলিনের আশেপাশের স্থানে খ্রিস্টের জন্মেরও প্রায় হাজার বছর পূর্বে মানুষের বসবাস ছিল। ১০০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে এই স্থানে স্লাভিক জনগোষ্ঠীর বাস ছিল। চৌদ্দ শতকের আগে পর্যন্ত এই স্থানটির নাম ছিল ‘দ্য গ্রাড’ বা দুর্গ সুরক্ষিত উপনিবেশ। ১২৩৭ সালে মঙ্গোলিয়ানদের আক্রমণে গ্রাড ধ্বংস হয়। ১৩৩৯ সালে তা আবার পুননির্মিত হয়। তখন থেকেই ক্রেমলিন শব্দটির প্রচলন শুরু হয়।

ডিউকদের বাসস্থান

ডর্মিশন ক্যাথেড্রাল; ছবিসূত্রঃ kremlintour.com

ক্রেমলিনের প্রাথমিক দিককার বাড়িঘর সব কাঠ দ্বারা নির্মাণ করা হতো। তবে মঙ্গোলিয়ানরা ঘনঘন আক্রমণ করতো এবং আগুন ধরিয়ে দিতো বলে এখানে পাথরের ঘরবাড়ি নির্মাণ শুরু হয়। রাসের মেট্রোপলিটন বা ডিউক (রাস বা রুথেনিয়া অঞ্চলের প্রধান বিশপকে মেট্রোপলিটন বলা হতো) তার কার্যালয় কিয়েভ থেকে মস্কো স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিলে ক্রেমলিনে ১৩৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পাথুরে বাড়ি নির্মিত হয়। এ সময় ক্রেমলিনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তৈরি হয়।

নতুন কার্যালয়ের প্রয়োজনে সেখানে অনেকগুলো চার্চ নির্মাণ করা হয়। ডর্মিশন ক্যাথেড্রাল, সেন্ট পিটার্স চ্যাপেল, চার্চ-বেল্টটাওয়ার অব সেন্ট জন, মনাস্টারি চার্চ, আর্কাঞ্জেল ক্যাথেড্রাল- এসবই ১৩৩০ থেকে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৈরি করা হয়। প্রতিটি স্থাপনাই সম্পূর্ণ চুনাপাথরে তৈরি করা হয়েছিল। কেবল মাত্র মনাস্টারি চার্চ ব্যতীত সবগুলোই বিশ শতকের পূর্বে আধা বা সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। টিকে থাকা সেই চার্চটিও স্টালিনের হাতে চূর্ণ হয় ১৯৩৩ সালে।

ক্রেমলিনে জারদের আগমন

ইভান দ্য গ্রেট বেল টাওয়ার; ছবিসূত্রঃ 123rf.com

১৪৭৫ সালে সমগ্র রাশিয়ার ক্ষমতা চলে যায় তৃতীয় গ্র্যান্ড প্রিন্স ইভানের হাতে। তিনি মস্কোর সংস্কার কাজের সাথে সাথে ক্রেমলিনের সংস্কারে হাত দেন। তখন রেনেসাঁর যুগ। ইতালিতে তখন বিখ্যাত সব চিত্রকর, ভাস্কর, বিজ্ঞানী আর নির্মাতাদের আবির্ভাব হয়েছে। ইভান ইতালি থেকে দুজন বিখ্যাত স্থপতি অ্যান্টোনিও সলারি এবং মার্কো রুফোকে ক্রেমলিনের সংস্কার কাজের জন্য নিয়ে আসেন। এই দুই বিখ্যাত স্থপতির হাতে নির্মিত ক্যাথেড্রালগুলো অদ্যাবধি টিকে আছে। তখনকার সময়ে মস্কোর সর্বোচ্চ ভবন ‘ইভান দ্য গ্রেট বেল টাওয়ার’ এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৫০০-১৫০৫ সালের মধ্যে এবং পরবর্তীতে একাধিকবার বর্ধন কাজ করার পর ১৬০০ সালে টাওয়ারটি এর বর্তমান আকার লাভ করে।

চোখ ধাঁধানো সেন্ট ব্যাসিল’স ব্যাসিলিকা; ছবিসূত্রঃ 123rf.com

১৫১৬ সালের মধ্যে ক্রেমলিনের প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ হয়। তখন রাজা ফরমান জারি করে ক্রেমলিন সিটাডেল (দুর্গ) এর আশেপাশে কোনো বাড়িঘর বা স্থাপত্য নির্মাণ নিষিদ্ধ করে দেন। একইসাথে দেয়ালঘেরা বাণিজ্য শহর কিটাই-গরদ এর সাথে ক্রেমলিনকে আলাদা করতে ১০০ ফুট প্রশস্ত একটি পরিখাও খনন করা হয়। পরবর্তী সময়ে জার ‘ইভান দ্য টেরিবল’ সেই পরিখার উপর সেন্ট ব্যাসিলের ক্যাথেড্রাল নির্মাণ করেন। উল্লেখ্য, জার চতুর্থ ইভানকে তার ব্যক্তিগত জীবনের আক্রমণাত্মক ও বিরক্তিকর স্বভাবের জন্য রাশিয়ান ভাষায় ‘ইভান গ্রোজনি’ বলা হতো। এর সহজ ইংরেজি অনুবাদ ‘ইভান দ্য টেরিবল’ বা ‘ভয়ঙ্কর ইভান’!

১৫৯৮ সালে রুরিক রাজবংশের শেষ জার ফিওদোর ইভানোভিচের মৃত্যু হলে ক্রেমলিনের ক্ষমতা নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়। ১৬০১ থেকে ১৬০৩ সালের মধ্যে রাশিয়ায় এক ভয়াবহ খরা দেখা দেয় এবং প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এই ঘটনায় রুরিক রাজবংশের প্রতি মানুষের ক্ষোভ আরো বৃদ্ধি পায়। ঘটনাক্রমে ১৬১৩ সালে মিখাইল রমানোভ নতুন জার হিসেবে নির্বাচিত হন। আর রাশিয়ায় শুরু হয় নতুন ‘রমানোভ’ রাজবংশের শাসন, যা কিনা ১৯১৭ সালে ‘ফেব্রুয়ারি বিপ্লব’ এর ফলে জার দ্বিতীয় নিকোলাসের পদত্যাগে শেষ হয়।

সেভিয়ার ক্যাথেড্রাল; ছবিসূত্রঃ TripAdvisor,com

যা-ই হোক, মিখাইল ও তার ছেলে অ্যালেক্সিস এর শাসনামলে ক্রেমলিনে বেশ কিছু ভবন নির্মিত হয়। ১১ গম্বুজ বিশিষ্ট ‘সেভিয়ার ক্যাথেড্রাল’, আর্মোরিয়াল গেট, তারেম প্রাসাদ, ‘অ্যামিউজম্যান্ট’ বা বিনোদন প্রাসাদ, ‘প্যাট্রিয়ার্ক নিকন’ প্রাসাদ ইত্যাদি তাদের শাসনামলেই নির্মিত হয়। ১৬৮২ সালে অ্যালেক্সিসের মৃত্যু হলে জার হিসেবে ক্রেমলিনের ক্ষমতায় বসেন পিটার। সে বছরই মস্কোতে বিদ্রোহ হয়। পিটার কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে ক্রেমলিন থেকে পালাতে সক্ষম হন। পরে যদিও তিনি বিদ্রোহ দমন করতে পেরেছিলেন, এই ঘটনার কারণে তিনি ক্রেমলিনকে অপছন্দ করতে লাগলেন। সেন্ট পিটার্সবার্গে নিজের নতুন রাজধানী নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি এবং প্রায় তিন দশক পর ক্রেমলিন ছেড়ে সেখানে চলে যান। জারদের বাসভবন হিসেবে ক্রেমলিনের ব্যবহার আপাতত এখানেই শেষ হয়।

ক্রেমলিনের পুনর্জীবন

ক্রেমলিন সিনেট; ছবিসূত্রঃ Wikipedia

১৭৭৩ সাল পর্যন্ত ক্রেমলিনের আর কোনো সংস্কার কাজ করা হলো না। এই সময়ে কেবল এখানে রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানগুলো হতো। সেই বছর ‘ক্যাথেরিন দ্য গ্রেট’ ক্রেমলিনে তার বাসভবন স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিলে প্রাণ ফিরে পায় ক্রেমলিন। অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি ভবনের নকশা প্রস্তুতের পর অর্থাভাবে তার কাজ আটকে থাকে অনেকদিন। কিন্তু ভবনটি তৈরির জন্য বেশ কিছু প্রাচীন চার্চ ভেঙে ফেলা হয় ঠিকই। কয়েক বছর পর সম্রাট কাজাকভ বেশ কিছু চার্চ পুনর্নির্মাণ করেন। এর মধ্যে প্রাচীন ‘সেভিয়ার ক্যাথেড্রাল’ উল্লেখযোগ্য। কাজাকভই ক্রেমলিনের অত্যন্ত বিলাসবহুল এবং প্রাচুর্যমন্ডিত সিনেট ভবনটি নির্মাণ করেন।

১৮১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নেপোলিয়ন রাশিয়া আক্রমণ করেন এবং ফরাসিরা ক্রেমলিন দখল করে নেয়। অক্টোবরের ২০ তারিখ যখন তিনি ক্রেমলিন ত্যাগ করেন, তখন তার সৈন্যদের ক্রেমলিন ধ্বংস করবার আদেশ দিয়ে যান। ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকলো ফরাসি বাহিনী। কিন্তু ভাগ্যক্রমে টানা তিনদিনই প্রবল বর্ষণ হলো। বিধাতা যেন ক্রেমলিনের প্রতি বিশেষভাবে সদয় ছিলেন। ফলে অনেক বিস্ফোরকই বৃষ্টির পানিতে অকেজো হয়ে যায় এবং ক্রেমলিনের ক্ষতির পরিমাণ আশাতীতভাবে কম হয়। ১৮১৬ থেকে ১৮১৯ সালের মধ্যে এর সামান্য কিছু সংস্কার কাজ হলেও রাজা প্রথম আলেক্সান্ডারের শাসনামলে সংস্কারের চেয়ে ক্ষতিই বরং বেশি হয়। তিনি অনেক প্রাচীন ভাস্কর্যকে পরিবর্তন করে বিকৃত রূপ দেন এবং অসংখ্য ভাস্কর্য ও কিছু চার্চ ভেঙে ফেলেন।

দ্য গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্যালেস; ছবিসূত্রঃ Wikipedia

ক্রেমলিনের ভাগ্য পরিবর্তিত হলো সম্রাট প্রথম নিকোলাসের রাজ্যাভিষেকের সময়। তিনি গ্যান্ড হল আর উইন্টার প্যালেসের অবস্থা দেখে অসন্তুষ্ট হন। তিনি বিখ্যাত আর্কিটেক্ট কনস্টান্টিন থনকে ‘দ্য গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্যালেস’ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নিয়োগ করেন। ১৮৩৯-৪৯ সালের মধ্যে এই জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদ ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৮৫১ সালে নির্মিত হয় ক্রেমলিন আর্মোরি। ১৮৫১ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত ক্রেমলিনে আর কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। কেবল রাজা দ্বিতীয় আলেক্সান্ডারের একটি ভাস্কর্য নির্মিত হয় যা বলশেভিক বিপ্লবের সময় ভেঙে ফেলা হয়।

সোভিয়েত শাসনামল

ক্রেমলিন স্টার; ছবিসূত্রঃ ok.ru.com

পরবর্তীকালে স্টালিন জারদের শাসনামলের সকল স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার উদ্যোগ নেন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনি অনেক নিদর্শন ধ্বংস করে ফেলেন এবং টাওয়ারগুলোর উপরের ‘গোল্ডেন জারিস্ট ঈগল’ সরিয়ে ‘শাইনিং সোভিয়েত স্টারস’ স্থাপন করেন। এ সময় থেকেই ক্রেমলিন হয়ে ওঠে সোভিয়েত রাশিয়ার সকল ক্ষমতার উৎস ও নিদর্শন। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে ক্রেমলিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৯০ সালে ক্রেমলিন ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

বর্তমান স্থাপনাসমূহ

গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্যালেসের ভেতরে; ছবিসূত্রঃ englishrussia.com

ছবিসূত্রঃ englishrussia.com

ক্রেমলিনের ৬৮ একর জায়গা ঘিরে থাকা বিখ্যাত ক্রেমলিন ওয়ালগুলো দৈর্ঘ্যে ২২০০ মিটারের অধিক এবং এদের উচ্চতা স্থানভেদে ১৬ থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। দৈর্ঘ্য আর উচ্চতায় কোনো বিশেষত্ব না থাকলেও দেয়ালগুলোর বিশেষত্ব এদের বেধে। সর্বনিম্ন ১১ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ২১ ফুট পর্যন্ত মোটা এই দেয়ালগুলো!

ক্রেমলিনে ছোট-বড় মোট ২০টি টাওয়ার রয়েছে যেগুলো ক্রেমলিন টাওয়ার নামে পরিচিত। ২৩৩ মিটার উচ্চতার ‘প্যাসকায়া’ টাওয়ারটি ক্রেমলিনের উচ্চতম টাওয়ার যেটির নির্মাণকাজ ১৬২৫ সালে শেষ হয়। বেশিরভাগ টাওয়ারই ইতালির রেনেসাঁ যুগের স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন বহন করে। কারণটাও পরিষ্কার, অধিকাংশ টাওয়ারই যে ইতালিয়ান স্থপতিদের হাতে নির্মিত।

ছবিসূত্রঃ englishrussia.com

ছবিসূত্রঃ englishrussia.com

তিনটি ক্যাথেড্রালসহ মোট ছয়টি সুদৃশ্য ভবনে পরিবেষ্টিত ক্যাথেড্রাল স্কয়ারকে বলা চলে ক্রেমলিনের প্রাণকেন্দ্র। এদের মধ্যে ‘ডর্মিশন ক্যাথেড্রাল’ই হচ্ছে প্রধান যেখানে সকল জারের রাজ্যাভিষেক হতো। পাঁচটি সোনালী গম্বুজ বিশিষ্ট বিশাল চুনাপাথরের এই ক্যাথেড্রালটি ভেতরে-বাহিরে নয়ন জুড়ানো। দক্ষিণ-পশ্চিমের ‘ক্যাথেড্রাল অব দ্য আর্কাঞ্জেল’ এর চেয়েও বড়। আরো কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ হলো চার্চ অব দ্য মেট্রোপলিটন, ক্যাথেড্রাল অব দ্য টুয়েলভ অ্যাপসল এবং এক গম্বুজ বিশিষ্ট চার্চ অব দ্য ডিসপজিশন।

গ্রেট বেল টাওয়ারের একটি ঘণ্টা; ছবিসূত্রঃ englishrussia.com

উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত ‘ইভান দ্য গ্রেট বেল টাওয়ার’ এর কথা আলাদা করে না বললেই নয়। বলা হয়ে থাকে গলনশীল মোমের মতো দেখতে এই টাওয়ারটি মস্কো শহরের একেবারে কেন্দ্রভাগে অবস্থিত। একসময় এটি ছিল মস্কোর সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা, কেননা মস্কোতে এর চেয়ে উঁচু ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কোনো শত্রু দৃষ্টিগোচর হলেই এর ২১টি ঘণ্টা একত্রে বাজানো হতো। ২৬৬ ফুট উঁচু এই টাওয়ারের নির্মাণ কাজ ১৬০০ সালে শেষ হয়। তাহলে কি এটিই উচ্চতম টাওয়ার? আসলে এর নিচে ৪০ ফুট উঁচু ভিত্তি বাদ দিয়ে হিসাব করলে গ্রেট বেল টাওয়ারের উচ্চতা ২২৬ ফুট। তাই প্যাসকায়াই সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার।

জার ক্যানন; ছবিসূত্রঃ friendlylocalguides.com

ক্রেমলিনের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপনাগুলোর কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসবে ১৪৯১ সালে নির্মিত ডিউক তৃতীয় ইভানের প্রাসাদের কথা। এরপরই আসবে তারেম প্রাসাদের কথা। এই ভবনটিও ডিউক তৃতীয় ইভানের শাসনামলে নির্মিত। ক্রেমলিনের সর্ববৃহৎ স্থাপনা হচ্ছে ‘দ্য গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্যালেস’। জার প্রথম নিকোলাস ১৮৩৯-১৮৪৯ সালের মধ্যে এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন। ব্যয়বহুল এই প্রাসাদের সংস্কারকাজ আরো ব্যয়সাপেক্ষ ছিল। ১৯৯০ সালে ১ বিলিয়ন ডলারেরও অধিক অর্থ ব্যয়ে এই প্রাসাদের সংস্কার করা হয়, গড়ে তোলা হয় বিশ্বের অন্যতম জাঁকজমকপূর্ণ ভবন হিসেবে। এর রিসিপশন হলগুলোর সৌন্দর্য চোখ ঝলসে দেবার মতোই। অন্যদিকে জারদের ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্টগুলো তো আছেই।

ক্রেমলিন সম্বন্ধে আরো কিছু অজনা তথ্য

  • মোট প্রাসাদ চারটি, ক্যাথেড্রাল পাঁচটি, পাঁচটি স্কয়ার বা চত্বর, ২০টি টাওয়ার।
  • ক্রেমলিন ও এর আশেপাশের অঞ্চলে মানুষের বসতি শুরু হয় প্রাগৈতিহাসিক ব্রোঞ্জ যুগে
  • ক্রেমলিন ক্লক নামক প্যাসকায়া টাওয়ারের ঘড়ি দুটি ১৫ শতকে নির্মিত হয়।
  • ১৭০৬ সালে পিটার দ্য গ্রেট নতুন করে ক্রেমলিন ক্লক বসান। এই ঘড়িটির রিম, কাঁটা এবং সময় নির্দেশক সংখ্যাগুলো সম্পূর্ণ সোনায় তৈরি (মোট ২৮ কেজি সোনা)।
  • ঘণ্টাসহ ঘড়িটির ওজন ২৫ টন!
  • সম্পূর্ণ ক্রেমলিনের বর্তমান মূল্য প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার!
  • ক্রেমলিন স্টারগুলোর সর্বনিম্ন ওজন ১ টন।
  • ক্রেমলিনের লোকজন কয়েক শতাব্দী যাবত বিশ্বাস করতেন বেল টাওয়ারে ‘ইভান দ্য টেরিবল’ এর ভূত আছে!
  • হেলেন টাওয়ারে টর্চার চেম্বারে দীর্ঘকাল রক্ত পড়ার শব্দ শোনা যেতো! (অন্তত জনশ্রুতি তাই বলে)
  • ক্রেমলিনের ডজনখানেক কর্মচারী লেনিনের অফিসে তার ভূত দেখেছেন বলে দাবি করেছিলেন!

ফিচার ছবিসূত্রঃ isratravels.in

Related Articles