Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের বিচিত্র কিছু ভবনের গল্প

বিচিত্র মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা। কত বিচিত্র রকম নকশার ভবনই না স্থপতিরা তৈরি করে থাকেন. কিন্তু ভবনের নকশার উদ্দেশ্য যদি শুধুমাত্র শিল্প, সৌন্দর্য এবং উপযোগিতা না হয়ে তার সাথে যুক্ত হয় ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং বিজ্ঞাপনী প্রচারণার কৌশল, তখনই দেখা যায় ভবনের নকশার চূড়ান্ত বৈচিত্র্য। Mimetic Building হচ্ছে সে ধরনেরই ভবন, যেগুলোর আকার-আকৃতি সাধারণ ভবনের মতো না হয়ে সেই ভবন যে উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তার মতো আকৃতি বিশিষ্ট হয়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের ভবন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তারই মধ্য থেকে আকর্ষণীয় কিছু ভবনের সাথে চলুন আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া যাক।

১। দ্য বাস্কেট বিল্ডিং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

দ্যা বাস্কেট বিল্ডিং; Source: trbimg.com

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে অবস্থিত এই ভবনটি আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ঝুড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান লঙ্গাবার্জারের প্রধান কার্যালয়। কোম্পানিটির সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য ‘মিডিয়াম মার্কেট বাস্কেট’-এর আদলেই তৈরি করা হয়েছে এর প্রধান কার্যালয়টি।

ভবনটির আকার-আকৃতি হুবহু আসল ‘মিডিয়াম মার্কেট বাস্কেট’ ঝুড়িগুলোর অনুপাতে তৈরি। সাত তলা এই ভবনটি আয়তনে সত্যিকার ঝুড়ির তুলনায় প্রায় ১৬০ গুণ বড়। ভবনটি ‘দ্য বাস্কেট বিল্ডিং’ নামেও পরিচিত। স্টিল কাঠামোতে তৈরি এই ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৯৭ সালে। শুধুমাত্র এর হাতল দুটির ওজনই ১৫০ টন। শীতকালে হাতলদুটিকে বৈদ্যুতিক উপায়ে গরম করার ব্যবস্থা আছে, যেন এতে তুষার জমতে না পারে।

এটি মাইমেটিক স্থাপত্যবিদ্যার সবচেয়ে সুন্দর উদাহরণগুলোর মধ্যে একটি। দর্শকদের জন্য দিনের কিছু সময় ভবনটি পরিদর্শনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

২। কানসাস সিটি পাবলিক লাইব্রেরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

কানসাস সিটি লাইব্রেরি; Source: amusingplanet.com

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে অবস্থিত কানসাস সিটি পাবলিক লাইব্রেরির বাইরের দেয়ালের দিকে তাকালে মনে হবে, লাইব্রেরিটি বুঝি বিশালাকৃতির তাকের মধ্যে খাড়াভাবে সাজানো কতগুলো বইয়ের ভেতরে অবস্থিত। প্রবেশপথের দুই পাশে মোট ২২টি বিশাল আকৃতির বইয়ের মলাট দৃশ্যমান, যেখানে সত্যিকার বইগুলোর আদলে তাদের নাম, প্রকাশনী সংস্থা সহ বিভিন্ন তথ্য দেওয়া আছে। একেকটি বইয়ের উচ্চতা প্রায় ৭ মিটার এবং পুরুত্ব প্রায় ২.৫ মিটার।

লাইব্রেরিটি অনেক পুরানো হলেও এর সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য একটি গ্যারেজ নির্মাণ করা হয় ২০০৬ সালে। গ্যারেজটিকে কীভাবে আকর্ষণীয় এবং শিল্পসম্মত করে তোলা যায়, এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর মধ্যে জরিপ চালালে অধিকাংশের মতের ভিত্তিতে গ্যারেজের দেয়ালের স্থানে বিশালাকার বইয়ের তাকের ধারণাটি উঠে আসে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাইব্রেরির সামনে এবং দুই পাশে অবস্থিত পার্কিং গ্যারেজকে উন্মুক্ত না রেখে তার সামনের দেয়াল এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন মনে হয় বিশালাকৃতির কতগুলো বই পাশাপাশি সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

পরবর্তীতে লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীর মধ্যে তাদের পছন্দের বইগুলোর তালিকা জানতে চেয়ে আরেকটি জরিপ চালায়। সেখান থেকে সবচেয়ে পছন্দের ২২টি বইকেই স্থান দেওয়া হয় এই দেয়ালে। এই তালিকায় ‘ইনভিজিবল ম্যান’, ‘দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস’ সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় বই স্থান পেয়েছে। লাইব্রেরির ভেতরে প্রবেশ না করেও তাই এই তালিকা দেখেই ঐ এলাকার জনপ্রিয় বইগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।

৩। মেইটান টি মিউজিয়াম, চীন

মেইতান টি মিউজিয়াম; Source: static.nrc_.nl

বাংলা ‘চা’ শব্দটিই এসেছে চাইনিজ ভাষা থেকে। বোঝাই যাচ্ছে, চীনারা চায়ের বেশ ভক্ত। চীনের গুইঝৌ প্রদেশের মেইটান এলাকাটি চা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এটিকে বলা হয় ‘হোমটাউন অফ চাইনিজ গ্রীন টি’। সুতরাং বিশ্বের সবচেয়ে বড় চায়ের পাত্র যদি এই এলাকাতে থাকে, আশ্চর্য হওয়ার কী আছে!

৭৩ মিটার উঁচু এই ভবনটি বিশাল চায়ের পাত্রের আকৃতির একটি ভবন, যার সামনে আরেকটি ছোট ভবন আছে চায়ের কাপের আকৃতির। ভবনটির ভেতরে আছে একটি জাদুঘর, যেখানে চা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য আছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত আকৃতির জাদুঘরগুলোর মধ্যে একটি। এছাড়াও এতে একটি রেস্টুরেন্টও আছে, যেখানে বিভিন্ন স্বাদের চা পাওয়া যায়।

দূর থেকে দেখলে একে শুধুই একটি চায়ের পাত্রের ভাস্কর্য মনে হতে পারে। কিন্তু কাছে এসে তাকালে এর জানালাগুলো দেখলে বোঝা যায়, এটি ভাস্কর্য না, বরং একটি ভবন। ভবনটির মাঝ বরাবর সর্বাধিক ব্যাস ২৪ মিটার। এর ক্ষেত্রফল প্রায় ৫,০০০ বর্গমিটার এবং আয়তন প্রায় ২৮ হাজার ঘনমিটার। অর্থাৎ এই ভবনটির ভেতরে যদি সত্যি সত্যিই চা রাখা যেত, তাহলে এটি প্রায় ২৮ মিলিয়ন লিটার চা ধারণ করতে পারত।

৪। দ্য বিগ পাইনঅ্যাপল, দক্ষিণ আফ্রিকা

দ্য বিগ পাইনঅ্যাপল; Source: cloudfront.net

দক্ষিণ আফ্রিকার বাথার্স্ট এলাকার একটি ছোট গ্রামে অবস্থিত এই ভবনটির অবস্থান বিশাল এক আনারস ক্ষেত্রের মাঝখানে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ আনারস আকৃতির ভবন এটি। তিন তলা বিশিষ্ট এই ভবনটির উচ্চতা ১৬.৫ মিটার। এর ভেতরে আছে ৬০ আসন বিশিষ্ট একটি প্রেক্ষাগৃহ, একটি জাদুঘর, একটি পরিদর্শন মঞ্চ এবং একটি গিফট শপ, যেখানে আনারস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার যেমন জ্যাম, জেলি, জুস, আনারসের ছবিযুক্ত টি-শার্ট সহ আনারস আকৃতির বিভিন্ন উপহার সামগ্রী পাওয়া যায়। এটি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।

অস্ট্রেলিয়াতেও আনারস আকৃতির একটি ভবন আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার এই বিগ পাইনঅ্যাপল ভবনটি তার আদলেই তৈরি। তবে উচ্চতায় এটি অস্ট্রেলিয়ার ভবনটির তুলনায় বড় এবং ব্যবহারের দিক থেকেও এটি অধিকতর আনারস সম্পর্কিত।

৫। হুড মিল্ক বটল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

হুড মিল্ক বটল; Source: Wall Street Journal

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের বস্টন চিলড্রেন মিউজিয়াম চত্বরে অবস্থিত এই বিশালাকৃতির দুধের বোতলটি ১৯৩৩ সাল থেকে দুধ এবং আইসক্রিম বিক্রি করে আসছে। হুড মিল্ক কোম্পানির এই বোতলটি প্রথমে অবশ্য অন্য জায়গায় তৈরি করা হয়েছিল এবং এর মালিকানাও ভিন্ন ছিল। পরবর্তীতে সেখান থেকে সরিয়ে বস্টনে আনা হয়।

বোতলাকৃতির এই বিক্রয়কেন্দ্রটির উচ্চতা প্রায় ১২ মিটার এবং ব্যাস প্রায় ৫ মিটার। কাঠের কাঠামোর তৈরি বোতলটির ভেতরে প্রায় ৫৮,০০০ গ্যালন দুধ সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে।

৬। গিবাউ অরেঞ্জ জুলেপ, কানাডা

গিবাউ অরেঞ্জ জুলেপ; Source: Wikimedia Commons

দ্য বিগ অরেঞ্জ‘ নামে পরিচিত কমলালেবুর আকৃতির এই ভবনটি মূলত একটি ফাস্টফুড রেস্টুরেন্ট, যেটি বিশেষ ধরনের কমলার জুসের জন্য বিখ্যাত। প্রায় বৃত্তাকার এই ভবনটির আকৃতি এবং রংয়ের কারণে একে দেখতে বিশালাকার কমলালেবুর মতোই মনে হয়। কানাডার মন্ট্রিয়ালে অবস্থিত কনক্রিটের তৈরি এই ভবনটি ১৯৪৫ সালে নির্মিত হয়।

কমলার আকৃতির এই ভবনটি তৈরি করেন হার্মাস গিবাউ, তার কমলার জুসের প্রতি ভোক্তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য। তার নামানুসারেই রেস্টুরেন্টটির নাম রাখা হয়। প্রথমে রেস্টুরেন্টি ছিল দোতলা ভবনের অংশ। পরবর্তীতে একে বর্ধিত করে তিন তলায় রূপান্তরিত করা হয়। বৃত্তাকার ভবনটির ব্যাস প্রায় ১২ মিটার।

৭। ন্যাশনাল ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট অফিস, ইন্ডিয়া

ন্যাশনাল ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট অফিস; Source: answersafrica.com

ভারতের হায়দ্রাবাদে অবস্থিত মৎসাকৃতির এই ভবনটি মূলত ভারতের জাতীয় মৎস উন্নয়ন কার্যালয়। অর্থাৎ ভারতের বিজ্ঞানীরা বিশাল এক মাছের পেটের ভেতরে বসেই মৎস ও জলজ সম্পদ নিয়ে গবেষণা করেন। ৪ তলা এই ভবনটি নির্মিত হয় ২০১২ সালে। এটি নির্মিত হয়েছে বার্সেলোনার বিখ্যাত মাছের ভাস্কর্যের অনুকরণে

৮। সিমোন হ্যান্ডব্যাগ মিউজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া

সিমোন হ্যান্ডব্যাগ মিউজিয়াম; Source: theaccessoriesguild.files_.wordpress.com

দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অবস্থিত এই হ্যান্ডব্যাগ আকৃতির ভবনটি একটি হাতব্যাগের জাদুঘর। এখানে ১৫৫০ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত মোট ৩০০ ধরনের ব্যাগ প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে। ২০১২ সালে নির্মিত এই ভবনটির আকৃতি হাতব্যাগের মতোই। এর ছাদের উপরে হাতল সদৃশ কাঠামোও আছে। ১০ তলা উঁচু এই ভবনটিতে জাদুঘরের পাশাপাশি একটি দোকানও আছে, যেখানে ব্যাগ এবং ব্যাগ জাতীয় সামগ্রী বিক্রি হয়।

এমন বিচিত্র নকশার আরও কিছু ভবন নিয়ে জানতে চাইলে পড়ুন- বিচিত্র স্থাপত্যশৈলীর অদ্ভুত কিছু ভবন

ফিচার ইমেজ- etotam.com

Related Articles