সুবাদার ইসলাম খান চিশতীর বাংলা বিজয় ঈশা খানের হাত ধরে বাংলার বার ভূঁইয়ারা মুঘলদের বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন। আর ৩৬ বছর পর অবশেষে বাংলার জমিনে সম্পূর্ণভাবে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হলো।
সুবাদার ইসলাম খান চিশতীর ভাটি অভিযান একে একে গুরুত্বপূর্ন দুটি দুর্গ হারিয়ে মুসা খান এবার শঙ্কিত হয়ে পরলেন। তিনি দ্রুত ব্রক্ষ্মপুত্র, ধলেশ্বরী আর শীতলক্ষ্যার তীরের দুর্গগুলোতে শক্তিবৃদ্ধি করলেন।
বাংলার নতুন সুবাদার ইসলাম খান চিশতী: ভাটি অভিযানের প্রস্তুতি ভাটিতে অভিযানের জন্য বাদশাহ জাহাঙ্গীর উন্নত মানের কামান, অস্ত্রশস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ প্রয়োজনীয় রসদ প্রেরন করলেন। ভাটি বাংলা দখলের জন্য সুবাদার ইসলাম খান এখন সম্পূর্নরূপে প্রস্তুত। অন্যদিকে নিজেদের সীমিত সম্পদ আর লোকবল নিয়ে আরেকটি যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ভাটির রাজা মসনদ-ই-আলা মুসা খান।
ভাটির রাজা মসনদ-ই-আলা ঈশা খানের মৃত্যু বাংলার আবহাওয়া আর নিজের সুনিপুণ রণকৌশলের জেড়ে প্রতিবারই ঈশা খান মুঘল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে জয় ছিনিয়ে নিয়ে নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিলেন। তবে মসনদ-ই-আলা ঈশা খান এখন আর নেই। এখন সেই দায়িত্ব তার উত্তরাধীকারীদের হাতে।
বাংলার সুবাদার রাজা মানসিংহের ভাটি অভিযান খিজিরপুর, ঢাকার ডেমরা, সোনারগাঁও, ধলেশ্বরী, মেঘনা আর লক্ষ্যার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই যুদ্ধে মুঘল নৌবাহিনী আরেকবারের মতো শোচনীয় পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে বাধ্য হলো। এই যুদ্ধে খোদ দুর্জন সিংহ মারা গেলেন। বিপুল সংখ্যাক মুঘল সৈন্য ঈশা খানের হাতে বন্দী হলো।
বাংলার মুঘল সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বোর ভাটি অভিযান: ঈশা খানের বিরুদ্ধে আরও একটি ব্যর্থতা বর্ষায় ভাটির নদ-নদীগুলো ফুলেফেপে সমুদ্রের মতো হয়ে যেতো। নিজেদের এলাকা হওয়ায় এসময় ভুঁইয়ারা ঠিকই পথঘাট চিনতো, কিন্তু মুঘলরা চোরাগোপ্তা আক্রমণের শিকার হলেও সহজে বুঝতে পারতো না আক্রমণটা হচ্ছে কোন জায়গা থেকে!
বাংলার নতুন সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বো ১৫৮৩ সালের মাঝেই পুরো রংপুর আর রাজশাহী অঞ্চল মুঘল পতাকার অধীনে চলে আসলো। শাহবাজ খান কাম্বো আর সামনে না এগিয়ে তাণ্ডায় প্রাদেশিক রাজধানীতে ফিরে গেলেন। ভাটিতে অভিযান চালানোর জন্য তার কিছু প্রস্তুতি দরকার।
মসনদ-ই-আলা ঈশা খান: উত্থান কিছুদিন ধরে ঈশা খান বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। পরাক্রমশালী মুঘল সাম্রাজ্যের নৌবাহিনীকে এভাবে ঘোল খাওয়ানোটা চাট্টিখানি কথা না। তিনি খবর পেয়েছেন খান জাহান পরাজিত হয়ে কোন রকমে নিজের প্রাণ নিয়ে তান্ডা পৌছেছেন। তবে ঈশা খান নিশ্চিত মুঘল নৌবহরকে কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ভাটি অঞ্চলে দেখা যাবে। শক্তিশালী মুঘল নৌবহরকে পরাজিত করতে হলে ঈশা খানের শক্তিশালী কারও সহযোগীতা দরকার। এই শক্তিশালী সহযোগী হিসেবে তিনি বেছে নিলেন ত্রিপুরার রাজাকে।
ভাটি বাংলার ‘বার ভূঁইয়া’র উত্থান পরবর্তী কয়েক বছরে মসনদ-ই-আলা ঈশা খান ভাটির জমিদারদের একত্রিত করে একটি শক্তিশালী মৈত্রী গড়ে তুলবেন, মুঘল বিরুদ্ধে দুর্ধর্ষ একটি নৌবাহিনী গড়ে তুলবেন এবং ভাটি বাংলায় মুঘলদের প্রভাব বিস্তারে অব্যাহতভাবে বাঁধা দিতে থাকবেন।
সম্রাট আকবরের কাবুল অভিযান আকবর কাবুল ত্যাগের কিছুদিন পরেই মির্জা মুহাম্মদ হাকিম পাহাড় থেকে নেমে এসে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলেন। তিনি আর কখনোই আকবরকে কোন ভাবে বিরক্ত করেননি। মির্জা মুহাম্মদ হাকিম ১৫৮৫ সালের ১০ অক্টোবর মাত্র ৩২ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি কাবুল শাসন করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর কাবুল আনুষ্ঠানিকভাবে মুঘল সাম্রাজ্যের একটি সুবায় পরিণয় হয়।
সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে বাংলায় মুঘল বিদ্রোহ: স্বাধীন বাংলা সরকার গঠন আকবরকে সিংহাসনচ্যুত করার পরিকল্পনাটা বেশ বাস্তবসম্মত। ঠিকঠাকভাবে কাজে লাগাতে পারলে কিছুদিনের মাঝেই মির্জা মুহাম্মদ হাকিম মুঘল সম্রাট হিসেবে মসনদে বসতে যাচ্ছেন। আকবরের সামনে প্রশ্ন হচ্ছে, সীমান্তের কোন দিকটাতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত? বাংলায় না কাবুলে? আকবর নিজে কোন দিকে যাবেন?
সম্রাট আকবরের ধর্মীয় মতবাদ: বাংলায় বিদ্রোহের বীজ বিদ্রোহীরা কাবুলে সম্রাটের ভাই মীর্জা হাকিমের সাথে যোগাযোগ করে আকবরকে সরিয়ে তাকে মুঘল সিংহাসনে বসানোর পরিকল্পনা করে। এর সাথে সাথেই সামান্য দাবী-দাওয়া আদায়ের একটি বিদ্রোহ সম্পূর্ন ভিন্ন একটি মাত্রা পায়।