Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নস্ট্রাডামুসের ভবিষ্যদ্বাণীর আসল রহস্য

২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে যখন সন্ত্রাসী হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার বিদ্ধস্ত হয়, তখন ইন্টারনেটে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, বিখ্যাত ভবিষ্যত বক্তা নস্ট্রাডামুস নাকি সাড়ে চারশো বছর আগেই এ বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন। অবশ্য এ জাতীয় গুজব নতুন কিছু না। যখনই বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী নতুন কোনো ঘটনা ঘটে, তখনই শোনা যায় নস্ট্রাডামুস নাকি সেটার কথা আগেই বলে গিয়েছিলেন।

হিটলারের উত্থান, হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলা, অ্যাপোলোর চন্দ্র বিজয় অভিযান, কেনেডি হত্যাকান্ড, প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু, এমনকি হালের আইএসের উত্থান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়া সহ এমন কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা নেই, যা নস্ট্রাডামুস বলে যাননি। কিন্তু আসলেই কি তাই? চলুন সংক্ষেপে জেনে নিই কী আছে কথিত নস্ট্রাডামুর ভবিষ্যদ্বাণীগুলোতে এবং কতটুকুই বা নির্ভরযোগ্য সেগুলো?

কে ছিলেন এই নস্ট্রাডামুস?

১৮৪৬ সালে আঁকা নস্ট্রাডামুসের ছবি; Source: Wikimedia Commons

নস্ট্রাডামুসের প্রকৃত নাম ছিল মিশেল ডে নটরডেম। তিনি ছিলেন এক ফরাসী চিকিৎসক, জ্যোতিষী এবং ভবিষ্যত বক্তা। ধারণা করা হয় তার জন্ম হয়েছিল ১৫০৩ সালে এবং মৃত্যু হয়েছিল ১৫৬৬ সালে। পেশাগত জীবনের প্রথমে চিকিৎসক হিসেবে অতিবাহিত করলেও পরবর্তীতে তিনি জ্যোতিষ শাস্ত্র, রাশিফল নির্ণয় এবং ভবিষ্যত বর্ণনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৫৫৫ সালে তিনি তার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লে প্রফেতি’ তথা ‘দ্য প্রফেসিজ‘ বা ‘ভবিষ্যদ্বাণীসমূহ’ প্রকাশ করেন। গ্রন্থটিতে সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজারটি ভবিষ্যদ্বাণী আছে, যেগুলোর প্রতিটি একেকটি চতুর্পদী পদ্যাংশ। তার মৃত্যুর পরে এসব ভবিষ্যদ্বাণী “দ্য সেঞ্জুরিজ” নামে মোট দশটি খন্ডে সংকলিত হয়। প্রতিটি সেঞ্চুরিতে ১০০টি করে ভবিষ্যদ্বাণী স্থান পায়।

নস্ট্রাডামুসের ভবিষ্যদ্বাণীর বৈশিষ্ট্য

নস্ট্রাডামুস তার চার লাইনের ছন্দোবদ্ধ ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন হেঁয়ালি এবং উপমার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তার অধিকাংশ ভবিষ্যদ্বাণীতেই কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম বা দিন-তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন অদ্ভুত সব উপমা ব্যবহার করা হয়েছে, যার পরিষ্কার কোনো অর্থ বের করা কঠিন। আর এই অস্পষ্টতার কারণেই যেকোনো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে খুব সহজেই উপমাগুলোকে তার সাথে মিলিয়ে ব্যাখ্যা করা এবং দাবি করা সম্ভব যে, নস্ট্রাডামুস আসলে সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন।

সমস্যা আরও আছে। নস্ট্রাডামুসের মাতৃভাষা ছিল ফরাসি। তার কবিতাগুলোও প্রধানত ফরাসি ভাষাতেই লেখা। কিন্তু তিনি ল্যাটিন এবং গ্রিক ভাষাও অধ্যয়ন করেছিলেন, যার প্রভাব তার কবিতাগুলোর মধ্যে লক্ষণীয়। মধ্যযুগীয় ফরাসি, গ্রিক এবং ল্যাটিন ভাষার এমন অনেক উপমা এবং শব্দ তিনি তার কবিতায় ব্যবহার করেছেন, যেগুলোর প্রকৃত অর্থ নিয়ে ইতিহাসবিদ এবং অনুবাদকদের মধ্যে বিভিন্ন মতপার্থক্য আছে। অনেকেই কোনো যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সে ঘটনাকে নস্ট্রাডামুসের ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে মেলানোর জন্য তার কবিতার দ্ব্যর্থবোধক শব্দগুলোকে সে অনুযায়ী ব্যাখ্যা করেছেন।

নস্ট্রাডামুসের প্রফেসিজ বইয়ের প্রচ্ছদ; Source: Amazon

অন্য সব জ্যোতিষীর মতো নস্ট্রাডামুস নিজে অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছেন মহাজাগতিক গ্রহ-নক্ষেত্রের গতি, অবস্থান প্রভৃতি এবং পৃথিবীর ঘটনাপ্রবাহের উপর সেগুলোর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে। কবিতাগুলো লেখার পূর্বে তিনি দীর্ঘক্ষণ আগুন বা পানির দিকে তাকিয়ে ধ্যান করতেন। তিনি দাবি করেন, কবিতাগুলো লেখার সময় তার মধ্যে স্বর্গীয় অনুপ্রেরণা কাজ করত। তার বক্তব্য অনুযায়ী, এক স্বর্গীয় দূত তাকে ভবিষ্যৎ বুঝতে সহায়তা করত।

নস্ট্রাডামুসের বইয়ের ভূমিকা থেকে জানা যায়, তিনি তার ছেলে সিজারের উদ্দেশ্যে লেখা একটি চিঠিতে জানিয়েছিলেন, তিনি ইচ্ছে করেই ছন্দগুলোকে হেঁয়ালিপূর্ণ করে তৈরি করেছেন, যেন মানুষ সহজে সেগুলোর মর্ম উদ্ধার করতে না পারে। কারণ তার আশঙ্কা ছিল, তার সময়ের শাসকরা যদি সেগুলোর সঠিক মর্ম উদ্ধার করতে পারে, তাহলে তাকে মৃত্যুদন্ড দিবে, অথবা তার বই নষ্ট করে ফেলবে। তার আশা ছিল, শুধুমাত্র ভবিষ্যতের আলোকিত মানুষরাই তার ভবিষ্যদ্বাণীর প্রকৃত মর্ম উদ্ধার করতে পারবে।

বর্তমান বিশ্বের অনেকেই সম্ভবত নিজেদেরকে সেই আলোকিত মানুষ বলে মনে করে। কারণ যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটা মাত্রই তারা তার মধ্যে নস্ট্রাডামুসের ভবিষ্যদ্বাণী খুঁজে পায়। তারা মনে করে, সঠিকভাবে মর্ম উদ্ধার করা গেলে নস্ট্রাডামুসের প্রতিটি ভবিষ্যদ্বাণীই সঠিক বলে প্রমাণিত হবে। কিন্তু বাস্তবে হেয়াঁলি এবং উপমার ব্যাখ্যার স্বাধীনতার সুযোগ গ্রহণ করে অনেকগুলো ভবিষ্যদ্বাণীকে বাস্তবের ঘটনার সাথে মেলানো সম্ভব হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকে গেছে। এখানে নস্ট্রাডামুসের সবচেয়ে আলোচিত দুটি ভবিষ্যদ্বাণীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে।

হিটলারের উত্থান প্রসঙ্গে নস্ট্রাডামুসের ভবিষ্যদ্বাণী

১৬৭২ সালের নস্ট্রাডামুসের প্রফেসির প্রথম ইংরেজি অনুবাদ; Source: Wikimedia Commons

নস্ট্রাডামুসের সবচেয়ে আলোচিত ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে একটি হচ্ছে হিটলারের উত্থান সম্পর্কে তার ভবিষ্যদ্বাণী। তার প্রফেসি সমগ্রের দ্বিতীয় খন্ডের ২৪ তম কবিতাটির বঙ্গানুবাদ হচ্ছে অনেকটা এরকম:

ক্ষুধার্ত হিংস্র পশুরা পাড়ি দিবে নদীগুলো,
‘হিস্টার’ এর বিরুদ্ধে সংঘটিত হবে যুদ্ধক্ষেত্রের বড় অংশ,
সবচেয়ে বড়টিকে টেনে আনা হবে লোহার খাঁচার ভেতর,
যখন জার্মানির শিশুরা কিছুই অবলোকন করবে না।

যদিও এই কবিতাংশ থেকে পরিষ্কার বোঝার কোনো উপায় নেই এখানে ঠিক কিসের ইঙ্গিত করা হচ্ছে, কিন্তু নস্ট্রাডামুস ভক্তদের দাবি, যেহেতু এখানে যুদ্ধ, জার্মানী এবং হিটলারের মতো শোনা যায় এরকম একটি শব্দ ‘হিস্টার’ আছে, তাই এটা নিঃসন্দেহে হিটলারের উত্থানেরই ইঙ্গিত। তাদের মতে, এখানে ‘হিস্টার’ শব্দটি দ্বারা হিটলারকে বোঝানো হয়েছে, ক্ষুধার্ত হিংস্র পশুদের নদী পার হওয়ার কথা দ্বারা জার্মান বাহিনীর রাইন নদী দিয়ে ফ্রান্স আক্রমণ করাকে বোঝানো হয়েছে, লোহার খাঁচা বলতে বোঝানো হয়েছে জার্মান ট্যাংকগুলোকে, আর জার্মান শিশু দ্বারা বোঝানো হয়েছে যুদ্ধের শেষে পরাজিত হিটলারকে।

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই কবিতায় ‘হিস্টার’ শব্দটি যতটা না কোনো ব্যক্তির নাম হওয়ার সম্ভাবনা, তার চেয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনা নদীর নাম হওয়ার। কারণ সে যুগে দানিউব নদীটির পরিচিতি ছিল হিস্টার নামে। কাজেই ‘হিস্টারের বিরুদ্ধে (Against Hister) যুদ্ধ’ বাক্যাংশটির অর্থ হতে পারে দানিউব নদীর তীরে যুদ্ধ। অবশ্য কেউ যদি এরপরেও ভবিষ্যদ্বাণীটিকে হিটলারের সাথে মেলাতে চান, তাহলেও পারবেন। কারণ হিটলারের জন্ম হয়েছিল দানিউব নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে।

হিটলারের উত্থান সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী; Source: nostradamuscatherinemcauley.weebly.com

এই কবিতাটি ছাড়াও আরো দুটি কবিতার কথাও উল্লেখ করা হয় হিটলারের উত্থানের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী বোঝাতে। এর একটিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম ইউরোপের এক গরীব পরিবারে এক সন্তান আসবে, যে তার ভাষণ দ্বারা জনতাকে মুগ্ধ করবে এবং যার খ্যাতি পূর্বের রাজ্যগুলোতে ছড়িয়ে যাবে। এটা সত্য যে হিটলারের জন্ম পশ্চিম ইউরোপের এক গরীব পরিবারে, তার ভাষণ আসলেই বিপুল সংখ্যক মানুষকে মুগ্ধ করেছিল এবং পূর্ব ইউরোপে তার খ্যাতি ছড়িয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বা ব্যক্তির নাম অথবা অনন্য কোনো পরিষ্কার নির্দেশক না থাকায় এটাকে হিটলারের কথা ভাবাটা বোকামি হবে। কারণ নস্ট্রাডামুস ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন ১৫৫৫ সালে। এরপর থেকে গত প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে এবং আগামী শত শত বছর ধরে ইউরোপে এরকম হাজার হাজার মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাবে, যাদের জন্ম গরীব ঘরে, যারা ভালো বক্তা এবং যাদের খ্যাতি পূর্ব পর্যন্ত পৌঁছেছে। তাকে রাজনীতিবিদ বা গণহত্যাকারী হতে হবে, এমন কিছু যেহেতু বলা হয়নি, সেক্ষেত্রে যেকোনো সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী বা অভিনেতার জীবনের সাথেও এই কবিতার বিবরণ মিলে যেতে পারে।

৯/১১ এর টুইন টাওয়ার হামলার বিষয়ে নস্ট্রাডামুসের ভবিষ্যদ্বাণী

সব সময় যে নস্ট্রাডামুসের কবিতাকে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়, এমন না। মাঝে মাঝে এর চেয়েও বেশি, অর্থাৎ তার কবিতাংশের শব্দগুলোকে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করেও তার নামে চালিয়ে দেওয়া হয়। যেমন, ২০০১ সালের ৯/‌‌‌‌১১ এর সন্ত্রাসী হামলার পর বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এবং ইমেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, এই হামলার কথাও নাকি নস্ট্রাডামুস বলে গিয়েছিলেন। নস্ট্রাডামুসের বক্তব্য হিসেবে যে কবিতাংশটি প্রচার করা হয়, তার বঙ্গানুবাদ অনেকটা এরকম:

ঈশ্বরের শহরে বিশাল বজ্রপাত ঘটবে,
বিশৃঙ্খলায় ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে দুই ভাই,
দুর্গ টিকে থাকবে, কিন্তু মহান নেতা নতি স্বীকার করবেন,
যখন বড় শহর জ্বলতে থাকবে, তখন শুরু হবে তৃতীয় বড় যুদ্ধ।

৯/১১ সংক্রান্ত নস্ট্রাডামুসের একটি ভবিষ্যদ্বাণী; Source: nostradamuscatherinemcauley.weebly.com

নস্ট্রাডামুস ভক্তদের দাবি, এখানে দুই ভাই বলতে টুইন টাওয়ারকে বোঝানো হয়েছে, দুর্গ বলতে বোঝানো হয়েছে পেন্টাগনকে, মহান নেতা হচ্ছেন জর্জ বুশ (যদিও তিনি নতি স্বীকার করেননি), বড় শহর হচ্ছে নিউইয়র্ক এবং তৃতীয় যুদ্ধ হচ্ছে এই ঘটনার পরবর্তীতে শুরু হয়ে আফগানিস্তান যুদ্ধ সহ একের পর এক চলতে থাকা আমেরিকার যুদ্ধগুলো। কিন্তু স্নুপস এবং আরবান লিজেন্ড সাইট দুটোর তথ্য অনুযায়ী, এই কবিতার প্রথম তিনটি লাইন নস্ট্রাডামুস নিজে লিখেননি। এগুলো নেওয়া হয়েছে নস্ট্রাডামুসকে ভ্রান্ত প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে কানাডার ব্রক ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রের লেখা একটি প্রবন্ধ থেকে।

নীল মার্শাল নামক ঐ ছাত্র তার প্রবন্ধে উদাহরণগুলো ব্যবহার করে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন নস্ট্রাডামুস কিভাবে অস্পষ্ট এবং হেঁয়ালিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে এমন সব কবিতা রচনা করেছেন, যেগুলোর নানা রকম ব্যাখ্যা করা সম্ভব। এই কবিতাটিই পরবর্তীতে ৯/১১ এর ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে ছড়িয়ে পড়ায় নস্ট্রাডামুস বিরোধীরা তাদের বক্তব্যের পক্ষে আরো জোরালো যুক্তি খুঁজে পান। তাদের যুক্তি অনুযায়ী, মাত্র কয়েক বছর আগে সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে লেখা একটি কবিতাংশকেই যেভাবে মানুষ নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে প্রচার এবং বিশ্বাস করেছে, নস্ট্রাডামুসের অধিকাংশ ভবিষ্যদ্বাণীও বাস্তবে সেরকমই।

৯/১১ সম্পর্কে প্রচলিত আরেকটি কবিতাংশের অনুবাদ এরকম:

নতুন শতাব্দীর বছরের নবম মাসে,
আকাশ থেকে আসবে সন্ত্রাসের রাজা,
আকাশ জ্বলতে থাকবে ৪৫ ডিগ্রিতে,
আগুন পৌঁছে যাবে নতুন বৃহৎ শহরে।

এই কবিতাটি নস্ট্রাডামুসেরই লেখা, কিন্তু এর বাক্যগুলো নেওয়া হয়েছে তার লেখা দুটি কবিতা থেকে আংশিক পরিবর্তন করে। প্রথম দুটি চরণ যেখান থেকে নেওয়া হয়েছে, সেখানে লেখা ছিল ১৯৯৯ সালের সপ্তম মাসের কথা। সেটিকে নতুন শতাব্দী হিসেবে পরিবর্তন করা হয়েছে ২০০১ সালের কাছাকাছি প্রমাণ করার জন্য। এছাড়া ঐ কবিতায় মোঙ্গলদের রাজার কথা ছিল, সেটা ৯/‌১১ এর সাথে অপ্রাসঙ্গিক হওয়ায় বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কবিতার পরের দুটি চরণ নেওয়া হয়েছে ভিন্ন একটি কবিতা থেকে।

৯/১১ সংক্রান্ত নস্ট্রাডামুসের একটি ভবিষ্যদ্বাণী; Source: nostradamususa.com

নস্ট্রাডামুস বিশ্বাসীদের দাবি, এখানে সন্ত্রাস, আগুন, বৃহৎ শহর দ্বারা পরিষ্কারভাবেই নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারের সন্ত্রাসী হামলাকে নির্দেশ করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের দাবি, ৪৫ ডিগ্রি দিয়েও তাপমাত্রা না বুঝিয়ে অক্ষাংশকে বোঝানো হয়েছে। কারণ নিউইয়র্কের অবস্থান ৪০ ডিগ্রী ৫ মিনিট অক্ষাংশের কাছাকাছি। অনেকে আবার এই কবিতা ছাড়াও আরেকটি কবিতার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে সন্ত্রাস, আগুন ছাড়া মাবুস (Mabus) নামক এক অ্যান্টিক্রাইস্ট বা দাজ্জাল জাতীয় চরিত্রের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের দাবি, মাবুস বলতে নস্ট্রাডামুস এখানে ওসামা বিন লাদেনকে বুঝিয়েছেন। কারণ মাবুসের অক্ষরগুলোকে এলোমেলো করে সাজালে পাওয়া যায় (Usam B), যেটা তাদের দাবি অনুযায়ী ওসামা বিন লাদেনের (Usama Bin) রেফারেন্স।

তবে নস্ট্রাডামুসের সবগুলো ভবিষ্যদ্বাণীকেই যে হিটলারের অথবা ৯/১১ এর মতো নাকচ করে দেয়া যায়, এমন নয়। কিছু কিছু ভবিষ্যদ্বাণী শুনলে মনে হতে পারে, তা হয়তো সত্যিই নির্দিষ্ট কোনো ঘটনার সাথে পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে। কিন্তু সমালোচকরা এটাকে কাকতালীয় এবং সৃজনশীল ব্যাখ্যা হিসেবেই দেখতে পছন্দ করেন। কারণ নস্ট্রাডামুসের ভবিষ্যদ্বাণীর অধিকাংশই মৃত্যু, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে। এবং গত সাড়ে চারশো বছর ধরে পৃথিবী জুড়ে এ ধরনের লক্ষ লক্ষ ঘটনা ঘটেছে। খুবই স্বাভাবিক যে, সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু ঘটনাকে ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে মিলিয়ে ফেলা যাবে। সেই সাথে তার উপমাগুলোর সৃজনশীল ব্যাখ্যার স্বাধীনতা তো আছেই।

নস্ট্রাডামুস; Source: theceomagazine.com

নস্ট্রাডামুসের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো তাই অনেকটা রাশিফলের সাথে তুলনীয়। রাশিফলে যে ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী খুব বেশি ব্যবহার করা হয়, যেমন “কর্মক্ষেত্রে সংকট”, “সম্পর্কে সফলতা”, সেগুলো বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ক্ষেত্রে মিলে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। নির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখ এবং পরিষ্কারভাবে স্থান-কাল উল্লেখ না করায় এবং অতিরিক্ত উপমা ব্যবহার করায় নস্ট্রাডামুসের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পড়ে তাই কোনো ঘটনা সম্পর্কেই অগ্রীম ধারণা করা যায় না, বরং ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তার মোটামুটি ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়। অনেকে তাই তার কবিতাগুলোকে Prediction (আগে থেকেই ভবিষ্যদ্বাণী) বলে মানতে চান না, বরং সেগুলোকে Postdiction (ঘটনার পরে অতীত কথন) বলে অভিহিত করেন।

ফিচার ইমেজ- express.co.uk

Related Articles