Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বার্ডম্যান অফ আলক্যাটরাজ: পাখিদের জন্য এক খুনীর ভালোবাসার গল্প

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী, জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি কাটিয়েছেন কারাগারের অন্তরালে। চার্লি ভন ডাহমার নাম্নী এক ব্যক্তিকে খুনের দায়ে প্রথমবার জেলে যান। তারপর জেলের ভেতরই বিবাদে জড়িয়ে পড়েন এক জেল কর্মকর্তার সাথে। তাকেও খুন করেন তিনি। বারংবার তাকে এক জেলখানা হতে অন্য জেলখানায় পাঠানো হয়েছে অন্য জেলবন্দী কিংবা জেল-কর্মকর্তাদের উপর আক্রমণের অভিযোগে, আর সেই তিনিই কিনা হয়ে উঠেছিলেন পাখিদের ত্রাতা! জেলখানার ভেতর পুষেছিলেন প্রায় শ’তিনেক ক্যানারি (এক ধরনের হলদে ছোটপাখি)। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বই লিখেছিলেন ‘ডিজিসেস অব ক্যানারিস’ অর্থাৎ, ক্যানারির অসুখ-বিসুখ। এ বইটিই বহির্বিশ্বে তাকে পরিচিত করিয়ে দেয় একজন স্বশিক্ষিত পাখি বিশারদ হিসেবে। তার জীবদ্দশাতেই তাকে নিয়ে লেখা হয়েছে বই, তৈরি হয়েছে সিনেমা, যদিও জেল আইনের কারণে সে সিনেমা দেখার সৌভাগ্য তার হয়নি। কারা অন্তরালে পুনর্বাসনের অনন্য এই দৃষ্টান্ত যিনি স্থাপন করেছিলেন তার নাম, রবার্ট ফ্রাঙ্কলিন স্ট্রাউড।

রবার্ট স্ট্রাউডের জন্ম ১৮৯০ সালের ২৮ জানুয়ারি, আমেরিকার সিয়াটল শহরে। মদ্যপ বাবা এবং তার সাথে মায়ের আগের পক্ষের দুই সৎ বোনের যন্ত্রণায় বাড়ি থেকে পালিয়ে যান মাত্র ১৩ বছর বয়সে। তারপর দীর্ঘ পাঁচ বছরে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। তার বয়স যখন আঠারো, তখন তিনি পৌছে যান সুদূর আলাস্কায়।

আলাস্কার জুনিউ শহরে তার সাথে পরিচয় হয় এক যৌনকর্মীর, নাম কিটি ও’ব্রাইয়েন। স্ট্রাউড তার দালালি করতে শুরু করেন। সেই সূত্র ধরে ১৯০৯ সালে চার্লি ভন ডাহমার নামের এক খরিদ্দার কিটির সঙ্গে মিলন শেষে টাকা দিতে অস্বীকার করেন। কিটি তার প্রাপ্য টাকা চাইলে ডাহমার তাকে মারধোর করেন এবং কিটির গলার লকেট ছিঁড়ে নিয়ে চলে যান। স্ট্রাউড এতে ভীষণ ক্ষেপে যান। তিনি চলে যান ডাহমারের কাছে, তুমুল মারামারি হয়। একপর্যায়ে ডাহমার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। রবার্ট ঘটনাটির পরপরই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পন করেন এবং তার রিভলভারটি জমা দেন।

তরুণ এবং বৃদ্ধ বয়সে রবার্ট স্ট্রাউড; Source: bop.gov

২৩ আগস্ট ১৯০৯, রবার্টের বারো বছরের কারাদণ্ড হয় এবং তার প্রথম আবাস হয় ম্যাকলিন আইল্যান্ড জেলখানায়। জেলখানায় ঢোকার কয়েকদিনের মাথায় তিনি ফের সহিংস হয়ে ওঠেন। অন্যান্য কয়েদি এবং জেল কর্মকর্তাদের উপর সামান্য কারণে আক্রমণ করতে থাকেন তিনি। জেলখানার খাবার চুরির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে, অভিযোগকারী কয়েদিকে তিনি ছুরি দিয়ে গুরুতর আঘাত করেন। জেলের ভেতর মরফিন ও অন্যান্য নেশার জিনিস আনারও চেষ্টা করেছিলেন স্ট্রাউড, শেষে ব্যর্থ হয়ে জেল হাসপাতালের এক বেয়ারা ও এক কয়েদিকে আক্রমণ করেন। এসব কারণে ১৯১২ এর সেপ্টেম্বরে তাকে আরো ছয় মাসের অতিরিক্ত সাজা প্রদান করা হয় এবং শেষমেশ ১৯১৫ সালের শেষের দিকে স্ট্রাউডকে ম্যাকলিন আইল্যান্ড থেকে সরিয়ে কানসাসের ল্যাভেনওর্থ জেলে পাঠানো হয়।

নতুন জেলখানায় আসার মাস ছয়েক বাদেই স্ট্রাউড আবার বড় ধরনের বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। দীর্ঘ আট বছর পর স্ট্রাউডের ছোটভাই আসেন জেলখানায় তার সাথে দেখা করতে। কিন্তু ক্যাফেটেরিয়ার গার্ড অ্যান্ড্রিউ এফ. টার্নারের সাথে বিবাদে জড়িয়ে তিনি দর্শনার্থী ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা করার সুযোগ হারান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি টার্নারকে ছোরা দিয়ে আঘাত করেন এবং এতে তার মৃত্যু হয়।

জেলকর্মী হত্যাকাণ্ডে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আদেশ দেন আদালত, সাথে সাথে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সলিটারি কনফাইনমেন্টে তাকে জনবিচ্ছিন্ন করে রাখার আদেশ দেওয়া হয়। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন ধার্য করা হয় ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল। পরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঠিক আট দিন আগে তার মায়ের প্রচেষ্টায় তার দণ্ড মওকুফ করেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন, কিন্তু আমৃত্যু তার সলিটারি সেলের বন্দীত্ব জারি থাকে। শুরু হয় স্ট্রাউডের অনির্দিষ্ট নির্জন কারাবাস।

তার বেশ কিছু দিন বাদে স্ট্রাউড তিনটি অসুস্থ চড়ুই পাখি খুঁজে পান এবং তাদের সুস্থ করে তোলেন। পাশাপাশি তিনি আরো পাখি কেনা শুরু করেন। তখনকার সময়ে বন্দীদের ক্যানারি পাখি কেনার অনুমতি দেওয়া হতো। বন্দী স্ট্রাউডের তখন ছিলো অফুরান সময়। বছর ঘুরতে না ঘুরতে তিনি প্রায় ৩০০ ক্যানারি পাখির মালিক হয়েছিলেন। তিনি এসব পাখিকে পেলে পুষে বড় করতেন, অসুস্থ পাখিকে সুস্থ করতেন। আবার সুযোগ বুঝে তা বহিরাগতদের কাছে বিক্রিও করতেন। পাখি বিক্রির এ টাকা তিনি পাঠিয়ে দিতেন তার মায়ের কাছে।

বার্ডম্যান অফ আলক্যাটরাজ সিনেমায় স্ট্রাউডের ভূমিকায় অভিনয় করেন বার্ট ল্যাঞ্চেস্টার; Source: onedio.com

পাখি পালনের জন্য প্রথম খোপটি তিনি নিজেই তৈরি করে নিয়েছিলেন। মাঝে ল্যাভেনওর্থ হাজতের ওয়ার্ডেন পরিবর্তন হয়, নতুন ওয়ার্ডেন উইলিয়াম বিডেল ছিলেন কিছুটা উদার প্র্রকৃতির। স্ট্রাউডের কাজ তার ভালো লাগে। তাই তিনি ল্যাভেনওর্থকে ‘কয়েদীদের পুনর্বাসনের জন্য উত্তম কারাগার’ হিসেবে প্রমাণ করার লক্ষ্যে স্ট্রাউডকে পাখির খাঁচা, বিভিন্ন রাসায়নিক সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে দেন। সাথে সাথে বহিরাগতদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় স্ট্রাউডের বিশাল পাখিঘর।

তখন পাখি বিষয়ক বিস্তর গবেষণার সুযোগ পান স্ট্রাউড। এসব অভিজ্ঞতা থেকে স্ট্রাউড দুটি বই লেখেন। ১৯৩৩ সালে তার প্রথম বই ডিজিসেস অফ ক্যানারিস প্রকাশিত হয়, বইয়ের পান্ডুলিপিটি অবশ্য জেল কর্তৃপক্ষের অগোচরে বাইরে পাচার করেন স্ট্রাউড। দশ বছর বাদে বইটির বর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয় স্ট্রাউড’স ডাইজেস্ট অন দ্য ডিজিসেস অফ বার্ডস শিরোনামে। বই দুইটি যেমন ছিলো বাণিজ্যিকভাবে সফল, তেমনি তা পাখি চিকিৎসাবিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বিশেষত, হেমোরোজিক স্পেক্টিসিমিয়া গোত্রের রোগ নির্ণয়ে। পাখি বিশারদ সমাজে প্রচুর নামডাক হয় তার।

স্ট্রাউড’স ডাইজেস্ট অন দ্য ডিজিসেস অফ বার্ডস; Source: amazon.com

রবার্টের নামে প্রতিদিন তাই অনেকগুলো করে চিঠি আসা শুরু করে। রবার্ট তার জবাব দিতেন। জেল কোড অনুযায়ী এসব চিঠি জেল কর্তৃপক্ষকে পড়তে হতো, হাতে কপি করতে হতো এবং তা অনুমোদন করতে হতো। আবার একটি বড় সমস্যা ছিলো পাখিদের মল সাফ করা। ‍ওদিকে স্ট্রাউডের ব্যবসা এতটাই বেড়ে গিয়েছিলো যে, তার জন্য একজন ফুলটাইম সেক্রেটারি নিয়োগ দিতে হয়েছিলো!

এমন জনপ্রিয়তা রবার্টের জন্য কাল হয়ে দাড়ায়। ১৯৩১ সালে জেল কর্তৃপক্ষ রবার্টের পাখির ব্যবসা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু স্ট্রাউড এবং ইন্ডিয়ানা রাজ্যের এক পাখি গবেষক ডেলা মে জোন্স বিষয়টি বিভিন্ন পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনে ফাঁস করে দেন। সমগ্র আমেরিকা জুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। প্রচুর চিঠি আসতে থাকে রবার্টের পাখি পালনে বৈধতা দেওয়ার অনুরোধে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুভারের কাছে জমা পড়ে পঞ্চাশ হাজার স্বাক্ষর। ফলশ্রুতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আদেশে স্ট্রাউডকে আরো একটি ঘর ছেড়ে দেওয়া হয় পাখি পালনের জন্য, কিন্তু তার চিঠিপত্র লেখার সুযোগ অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।

ওদিকে ডেলা মে জোন্সের সাথে স্ট্রাউডের বেশ খাতির জমে ওঠে। তিনি ইন্ডিয়ানা ছেড়ে কানসাসে বসবাস শুরু করেন এবং স্ট্রাউডের সাথে ব্যবসা শুরু করেন। তারা পাখি এবং পাখির বিভিন্ন ওষুধ বিক্রি করতেন। বহির্জগতে রবার্টের খ্যাতি এবং পরিচিতি তাই আরো বাড়তে থাকে। জেল কর্তৃপক্ষ এতে বিরক্ত বোধ করেন এবং তাকে ল্যাভেনওর্থ থেকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। রবার্ট জানতেন, কানসাসে কোনো জেলবন্দি বিবাহিত হলে তাকে বদলি করবার নিয়ম নেই। তাই তিনি প্রক্সিতে ডেলাকে বিয়ে করেন। এতে জেল কর্তৃপক্ষ ভীষণ চটে যান। তারা ডেলার সাথে তার চিঠির আদান-প্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন।

তার প্রথম বইটি প্রকাশের বেশ কিছুদিন পর একটি পত্রিকায় তিনি জানান, ডিজিজেস অফ ক্যানারিজ বইটির জন্য কোনো রয়ালিটি তিনি পাননি। এতে বইটির প্রকাশককে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় এবং তার প্রকাশক ইমেজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সেই বদলা নিতে প্রকাশক স্ট্রাউডের বিরুদ্ধে বেশকিছু মিথ্যা অভিযোগ আনেন। ওদিকে স্ট্রাউড তার ল্যাবে পাখির ওষুধের সাথে মদ তৈরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন। অবশেষে ল্যাভেনওর্থ কারা কর্তৃপক্ষ তাকে অন্যত্র পাঠাবার বিষয়ে সফল হয়। তার নতুন ঠিকানা হয় কুখ্যাত আলক্যাটরাজ দ্বীপ।

আলক্যাটরাজ কারাগারের রবার্টের প্রথম দিন; Source: alcatrazhistory.com

ক্যালিফোর্নিয়ায় সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরের একটি দ্বীপ আলক্যাটরাজ। সেখানে নির্মিত কারাগারটি ১৯৩৪ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত কুখ্যাত সব আসামীর ঠিকানা হয়েছিলো। এই অালক্যাটরাজ দ্বীপটিকে যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসীরা বলতো ইভিল আইল্যান্ড বা শয়তানের দ্বীপ। ১৯৪২ সালের শেষদিকে স্ট্রাউডকে আনা হয় আলক্যাটরাজ কারাগারে। কিন্তু তাকে আনা হয় একা, মাত্র দশ মিনিটের নোটিশে তাকে তার সমস্ত পাখিদের ছেড়ে চলে আসতে হয়। তিনি তখন তার সব পাখি এবং গবেষণার যন্ত্রপাতি তার ছোট ভাইকে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

আলক্যাটরাজেও তাকে একাকী অবস্থায় রাখা হয়। সেখানে ল্যাভেনওর্থের মতো পাখি পালনের সুযোগ না পেলেও তাকে লেখালেখি করার সুযোগ দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানে তিনি দুটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেন। একটি হলো তার আত্মজীবনী, অন্যটি আমেরিকার জেল ব্যবস্থা বিষয়ে; যদিও বইগুলো প্রকাশ করতে তাকে অনুমতি দেয়নি জেল কর্তৃপক্ষ। তারা আশঙ্কা করেছিলেন, বহির্বিশ্বে রবার্ট আবার তার প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। রবার্টের মৃত্যুর পর তার উকিল রিচার্ড ইংলিশকে বই দুটির পান্ডুলিপি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

বার্ডম্যান অফ আলক্যাটরাজ। এই বইটি এবং এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা সিনেমাটিকে অবশ্য অনেক সমালোচক অতিরিক্ত কাল্পনিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে অসমাঞ্জস্যপূর্ণ বলেছেন; Source: esty.com

থমাস ই. গ্যাডিস নাম্নী এক লেখক ১৯৫৫ সালে ‘বার্ডম্যান অফ আলক্যাটরাজ’ নামে রবার্ট স্ট্রাউডের জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ করেন। এ বইটি থেকে পরিচালক জন ফ্রাঙ্কেনহাইমার একই নামে সিনেমা তৈরি করেন ১৯৬২-তে। সেখানে রবার্ট স্ট্রাউডের চরিত্রে অভিনয় করেন বার্ট ল্যাঞ্চেস্টার, এর জন্য অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি।

বার্ডম্যান অফ আলক্যাটরাজ সিনেমার পোস্টার; Source: goldenglobes.com

আলক্যাটরাজে অবস্থানকালীন কারা লাইব্রেরিতে রবার্ট আইন বিষয়ে লেখাপড়া করেন এবং তার মুক্তির জন্য রাষ্ট্রের কাছে আবেদন করতে থাকেন। এ সময় তিনি মাঝেমধ্যে এক গার্ডের সাথে দাবা খেলার অনুমতি পেতেন। তিনি তার আবেদনে জানান, এত দীর্ঘ আইসোলেটেড কারাবাস অত্যন্ত নিষ্ঠুর শাস্তি। ১৯৫৯ সালে তার শরীর ভেঙে পড়তে শুরু করলে তাকে আবার স্থানান্তর করা হয় মিসৌরির জেল হাসপাতালে। সেখানে তার দীর্ঘ ৪২ বছরের নিঃসঙ্গ কারাবাসের অবসান ঘটে। তিনি জেলখানার প্রিন্ট শপে একটি চাকরি শুরু করেন। ১৯৬৩ সালের ২১ নভেম্বর তাকে তার ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, কারা চিকিৎসকেরা তার মৃত্যুকে স্বাভাবিক বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু বলেছেন।

আলক্যাটরাজ কারাগারে স্ট্রাউডের সেল; Source: commons.wikimedia.org

ব্যক্তি জীবনে চরম বেয়াড়া হলেও নিজ মেধা ও পরিশ্রমে তিনি পাখিবিজ্ঞানে নিজেকে স্বশিক্ষিত করেছিলেন। আমেরিকার ইতিহাসে কারা অন্তরালে যারা বিখ্যাত হয়েছিলেন, তিনি তাদের একজন। কারা সাইকিয়াট্রিস্ট রমনি রিচির তার সম্পর্কে করা উক্তিটি বেশ উল্লেখযোগ্য।

“রবার্ট একজন সাইকোপ্যাথ। সে হঠাৎ করে সহিংস হয়ে উঠতে পারে ঠিকই, কিন্তু তার আইকিউ মারাত্মক, ১৩৪!”

রবার্টকে নিয়ে তৈরি হয়েছে গান, ইন্সট্রুমেন্টাল; কিছু ভিডিও গেমেও আমরা দেখতে পেয়েছি তাকে। কানাডিয়ান ব্যান্ড আওয়ার লেডি পিস-এর ডেব্যু অ্যালবামের ‘দ্য বার্ডম্যান’ গানটি এবং বিখ্যাত ব্রিটিশ পিয়ানোবাদক রিক ওয়েকম্যানের সপ্তম স্টুডিও ইন্সট্রুমেন্টাল অ্যালবামের ‘বার্ডম্যান অফ আলক্যাটরাজ’ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।

রবার্ট উদাহরণ হয়ে থাকবেন কারা অভ্যন্তরে নতুনভাবে জীবন শুরু করা মানুষ হিসেবে, পাখি বিশারদেরা তাকে স্মরণ করে যাবেন পাখিবিজ্ঞান কিংবা পাখিচিকিৎসার অন্তিম দিন অব্দি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কুখ্যাত আসামীরাও যে নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে সমাজের জন্য অবদান রাখতে পারেন, রবার্ট তার উজ্জ্বল উদাহরণ।

ফিচার ইমেজ- tcm.com

Related Articles