Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দিগ্বিজয়ী নেপোলিয়ন বোনাপার্টের উত্থান পতন

ইতিহাসের বিখ্যাত কয়েকজন দিগ্বিজয়ীর নাম বলতে গেলে অবশ্যই শুরুতে একজনের নাম চলে আসবে যিনি নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। অ্যালেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের পরেই যার নাম। শূন্য থেকে শুরু হয়ে সম্রাট হওয়া, রহস্যময় ঘটনার সম্মুখীন হওয়া এবং সম্রাট-জীবন থেকে এক নির্জন দ্বীপে নির্বাসিত হয়ে মারা যাওয়া- এ সবই নেপোলিয়নের জীবনেরই ঘটনা। এ লেখাটি তাঁকে নিয়েই। যদিও ছোট একটি লেখায় সংক্ষিপ্তভাবে নেপোলিয়নের জীবনী আঁটানো সম্ভবপর না, তাও একটি ছোট প্রচেষ্টা।

৪০ বছর বয়সে নেপোলিয়ন Image Source: National Gallery of Art, Washington, D.C.

১৭৬৯ এর ১৫ অগাস্ট। এ দিন নেপোলিয়নের জন্ম হয় করসিকা দ্বীপে। ফ্লোরেন্সের সমৃদ্ধ ট্র্যাডিশনওয়ালা এক ইতালিয় পরিবারে তার জন্ম, যদিও তারা বাস করতেন ফ্রান্সে। বাবা কার্লো আর মা মারিয়া। বাবা-মার চতুর্থ সন্তান, তৃতীয় পুত্র ছিলেন নেপোলিয়ন। [তার নামের ফরাসি উচ্চারণ কিন্তু নাপোলেওঁ বোনাপার্ত]

ফ্রেঞ্চ তার মাতৃভাষা ছিল না কখনোই, জীবনেও ঠিক বানানে ফ্রেঞ্চ লিখতে পারেন নি। কথা বলতেন ফ্রেঞ্চে, তবে তাতে থাকতো করসিকার টান। সারা বিশ্ব তাকে ফ্রেঞ্চ হিসেবে চিনলেও বিশুদ্ধ ফ্রেঞ্চ তিনি নন। ছোট থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন তিনি। তুখোড় ছিলেন অংকে। আর অগাধ জ্ঞান ছিল ভূগোল আর ইতিহাস বিষয়ে। মহাবীর অ্যালেক্সান্ডার দা গ্রেট এর অভিযান তাকে বরাবর আকর্ষণ করত। স্বপ্ন দেখতেন দিগ্বিজয়ী হবেন অ্যালেক্সান্ডার-এর মতোই।

২৩ বছর বয়সে নেপোলিয়ন Image Source: commons.wikimedia.org

১৭৮৫ তে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলেন নেপোলিয়ন, আর্মিতে হলেন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট। ফ্রেঞ্চ রেভুলশন যখন চলছিল সে সময় তিনি ছিলেন প্যারিসে। ১৭৯২-তে হয়ে গেলেন আর্মির ক্যাপ্টেন। পরের ছয় বছরে আর্মির হয়ে অনেক অভিযানেই অংশ নেন তিনি। তার যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজির কারণে তিনি বিখ্যাত হন। তবে এর মাঝে তিনি একবার গৃহবন্দিও হয়েছিলেন। আবার স্পাই-এর কাজও করেছিলেন!

১৭৯৮-তে ফ্রেঞ্চ আর্মির লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশদের পরাজিত করা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসা ধ্বংস করা, পারলে টিপু সুলতানকে হাত করে ব্রিটিশদের হারানো যেতে পারে। তবে এর মাঝে তার মিশর ভ্রমণের ইচ্ছা জাগল এই গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের আগে। বিশেষ করে পিরামিড দর্শন। তিনি অনেকজন অভিজ্ঞ, বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, পরিব্রাজক নিয়ে আলেক্সান্দ্রিয়া থেকে কায়রোর দিকে যান। সাথে তার বাহিনী।

মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে তার আর্মিকে আক্রমণ করে মিসরের মামলুক বাহিনী মুরাদ আর ইব্রাহিম এর নেতৃত্বে। ফ্রেঞ্চ আর্মি যুদ্ধে জিতে যায়। এ যুদ্ধের নাম ছিল ব্যাটল অফ পিরামিড

ব্যাটল অফ পিরামিড। [Louis-François, Baron Lejeune, 1808]; Image Source: commons.wikimedia.org

তারা পিরামিডের কাছে পৌঁছে যান। রহস্যময় স্ফিংক্স দর্শনের পরে নেপোলিয়ন তাদের বললেন, “আমাকে একা থাকতে দাও। আমি একাই থাকব ভিতরে। তোমরা যাও। বাইরে থাকো।

ফারাও খুফু এই পিরামিড বানিয়েছিলেন সেই কত হাজার বছর আগে, নিজের কবর হিসেবে। কিন্তু কী কারণে তার কবর এখানে দেয়া হল না সেটা জানা নেই। নেপোলিয়ন জানেন, কিংস চেম্বারের পাশেই আছে কুইন্স চেম্বার। তবে সেটা বেশি আকর্ষণীয় না। পিরামিডের ভেতরে কিংস চেম্বারে পৌঁছে তিনি বসে পড়লেন।

স্ফিংসের মূর্তির সামনে নেপোলিয়ন [1868, Jean-Léon Gérôme]; Image Source: Hearst Castle

বাইরে বসে গল্প করছিল যে কজন সৈন্য রয়ে গিয়েছিল পিরামিডের বাইরে। সাথে নেপোলিয়নের কাছের কয়েকজন। হাসি তামাশা চলছিল।

সাত ঘণ্টা পর হঠাৎ একজন সৈনিক পিরামিডের দিকে আঙ্গুল তুলে চিৎকার করে উঠল, “দেখ!” মশালের আলোতে একটা কালো আকৃতিকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল। একটু কিছু দূর দৌড়ালো, এরপর আবার বসে পড়ল, আবার উঠে দৌড়, এরপর আবার পড়ে গেল মাটিতে। আর আগাতে পারল না। মশাল নিয়ে কিছুদুর আগাতেই, সে চিনে ফেলল, নেপোলিয়ন ছাড়া কেউ না তিনি।

যে কজন সেখানে ছিল, সবাই ছুটে গেল। পানি খাওয়াল তাকে। থরথর করে কাঁপছেন নেপোলিয়ন। কথা বলছেন জড়িয়ে জড়িয়ে, “আমি হারবো… আমি হারবো… সময় কম।

সে রাতে আর কিছু করা হলো না। নেপোলিয়নকে সেবা শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তুলতেই কয়েকদিন চলে গেল। মাঝে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “আপনি কী দেখেছিলেন ভেতরে?” তিনি উত্তর দেন, “এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না। আর কোনোদিন জিজ্ঞেস করবে না এটা নিয়ে।” একদম একই রকম ঘটনার সম্মুখীন অ্যালেক্সান্ডার দ্য গ্রেটও হয়েছিলেন!

১০ দিন পর নেপোলিয়ন জীবনের প্রথম কোনো যুদ্ধে হেরে গেলেন। নীল নদের যুদ্ধে ব্রিটিশ নেভির অ্যাডমিরাল নিলসনের নেতৃত্বে করা আক্রমণে নেপোলিয়নের ব্রিটিশ রাজ্য বিজয়ের স্বপ্ন চির ধূলিস্মাৎ হয়ে গেল।

কী পরিবর্তন হলো নেপোলিয়নের কেউ জানেন না। এ ঘটনাটাতে কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যদিও। কিন্তু এ ঘটনার সত্যতা কি আসলেই নেই?

ফ্রান্সে ফিরেই তিনি ক্যু (coup) করলেন আর নিজে সর্বাধিনায়ক হয়ে গেলেন। কয়েক বছর পর নিজেকে ফ্রান্সের সম্রাট বলে ঘোষণা দিলেন। তার আগের সেই যুদ্ধের জাদু আর নেই। আশপাশের কিছু দেশ আক্রমণ করে ভাল একটা অবস্থান পেয়ে গেল ফ্রান্স ইউরোপে।

নেপোলিয়নের সিংহাসনে আরোহণ [Jacques-Louis David, 1804]; Image Source: Louvre, Paris, France

নেপোলিয়ন সিদ্ধান্ত নিলেন রাশিয়া আক্রমণ করবেন, তাঁর পুরনো সেই কারিশমা ফিরিয়ে আনবেন। ১৮১২-তে তিনি রাশিয়া আক্রমণ করলেন এবং খুব বাজেভাবে পরাজিত হলেন। পরের বছর খোদ তার নিজের দেশ ফ্রান্সই আক্রান্ত হল! তার আর্মি এত বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে ফ্রান্স রক্ষার মতো শক্তি ছিল না। অস্ট্রিয়া, প্রুসিয়া, রাশিয়া, ব্রিটেন, পর্তুগাল, সুইডেন, স্পেন, জার্মান রাজ্যগুলো সব একসাথে ফ্রান্স আক্রমণ করে।

তার সময় শেষ হয়ে আসে, ফ্রান্স পরাজিত হয়। নেপোলিয়নের ভাগ্য হয় নির্বাসন। ইতালির কাছে এলবা দ্বীপে তিনি নির্বাসিত হলেন। অনেক চেষ্টা করে তিনি পালিয়ে যান, ১০ মাস পর।

নেপোলিয়নের সমাধি, প্যারিসের Les Invalides-এ;  Image Source: commons.wikimedia.org

আবার ক্ষমতা দখল করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে ইতিহাসের কুখ্যাত কিংবা বিখ্যাত ওয়াটারলু যুদ্ধে হেরে যান। ১৮১৫ সালের ১৮ জুন রবিবার ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয়েছিল বেলজিয়ামের ওয়াটারলুর কাছে। নেপোলিয়ন এই যুদ্ধে দুইটি সম্মিলিত শক্তি, ওয়েলিংটনের ডিউকের অধীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এবং গাবার্ড ভন বুচারের অধীনে প্রুশিয়ান সেনাবাহিনীর নিকট পরাজিত হন। এই দু’ বাহিনী নেপোলিয়নের শত্রু ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সাতটি বাহিনীর সম্মিলনে গড়ে ওঠা মিত্র বাহিনীর কেবল দুটো ফোর্স ছিল। এ যুদ্ধে হারার সাত দিনের মাথায় ক্ষমতা ছেড়ে দেন নেপোলিয়ন।

এবারে তার নির্বাসন হয় দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের সেন্ট হেলেনা দ্বীপে। জীবনের শেষ ছয়টি বছর তিনি এই নির্বাসনে কাটান। একদম মৃত্যু পর্যন্ত বলা হয়, তিনি নাকি পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। কেউ বলে তিনি আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় মারা যান, কেউ বলে পাকস্থলির ক্যান্সারে। কে জানে কীভাবে মারা গিয়েছিলেন!

মৃত্যুশয্যায় নেপোলিয়ন [Horace Vernet, 1826];  Image Source: commons.wikimedia.org

শুধু বলার মতো একটা ঘটনা আছে তার শেষ জীবনের। মৃত্যুশয্যায় যখন ছিলেন, তখন ফ্রান্স থেকে তার একজন কাছের বন্ধু তাকে দেখতে এসেছিলেন শেষবারের মতো তিনি এসে একটা প্রশ্ন করেছিলেন তাকে, “সেই এত বছর আগে, কিংস চেম্বারে কী দেখেছিলে তুমি?

নেপোলিয়ন অবশেষে উত্তর দেয়ার জন্য মুখ খুললেন। কিন্তু বলতে গিয়েও আর বললেন না- থাক, কী লাভ। বললেও তুমি জীবনেও আমাকে বিশ্বাস করবে না।

দিগ্বিজয়ী নেপোলিয়ন সমাহিত হন এ গোপন কথাটা নিজের সাথে নিয়েই। এককালের সম্রাট নির্বাসিত হয়ে করুণ এক মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন।

১৮২১ সালে মডেল করা নেপোলিয়নের ডেথ মাস্ক, ১৮৩৩ সালে নির্মিত।  Image Source: http://rarehistoricalphotos.com/death-mask-napoleon-bonaparte-1821/

Related Articles