Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রবার্ট বুনসেন: যার মেধার দীপ আজও পৃথিবীজুড়ে জ্বলছে

১৮১১ সালের ৩০ মার্চ জার্মানির গোটিঙ্গেনে জন্মগ্রহণ করেন রবার্ট উইলহেলম এবহার্ট বুনসেন, যিনি রবার্ট বুনসেন নামেই অধিক পরিচিত। তার বাবা ক্রিশ্চিয়ান বুনসেন ছিলেন গোটিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক। অন্যদিকে তার মা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষিকা। বাবা-মায়ের হাত ধরে তাই প্রাথমিক শিক্ষাটা গৃহেই সেরে ফেলেন বুনসেন। ১০ বছর বয়সে গোটিঙ্গেনের এলিমেন্টারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৫ বছর বয়সে গোটিঙ্গেন থেকে ৪০ মাইল দূরবর্তী হলজমিন্ডেন গ্রামার স্কুলে ভর্তি হন। দু’বছর সেখানে পড়ালেখা করে আবার ফিরে আসেন নিজের শহরে এবং গোটিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। বুনসেন তার প্রিয় বিষয় রসায়নের পাশাপাশি পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও গণিতের কোর্স করেন।

রবার্ট বুনসেন (১৮১১-১৮৯৯); source: thefamouspeople.com

মেধাবীরা যেখানে যায়, সেখানেই আলো ছড়ায়। বুনসেনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই আলো ছড়াতে লাগলেন। ভর্তির বছরই তিনি তৈরি করে ফেলেন একটি ‘হিউমিডিটি মিটার’ বা আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে পুরস্কৃত করে। ১৯ বছর বয়সে নিজের চমৎকার গবেষণা কাজের জন্য রসায়নে পিএইচডি লাভ করেন বুনসেন। এত অল্প বয়সে পিএইচডি পাবার দৃষ্টান্ত বিরল। পরে বুনসেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউরোপ গিয়ে রসায়ন পড়ার জন্য স্কলারশিপ পান। ১৮৩২-৩৩ সালে বুনসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় ইউরোপ ভ্রমণে যান এবং অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্সে বিখ্যাত সব গবেষণাগারে কাজ করেন। প্যারিসে তিনি খ্যাতিমান রসায়নবিদ জোসেফ গে লুস্যাকের সাথে কাজ করার সুযোগ পান।

১৮৩৩ সালে রসায়নের জ্ঞান সমৃদ্ধ করে দেশে ফিরে আসেন রবার্ট বুনসেন। এসেই গোটিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা শুরু করেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার লাইসেন্স তখনো তিনি পাননি। তাই বিনা বেতনেই অধ্যাপনা চালিয়ে যান বুনসেন। সংসার চালাবার জন্য টিউশনই যথেষ্ট ছিল। পাশাপাশি গবেষণা করতে থাকেন পুরোদমে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রবল বাসনা থেকেই গবেষণায় ঘাম ঝরাতে থাকেন বুনসেন। সাফল্য আসতেও তাই খুব বেশি সময় নেয়নি। বিখ্যাত চিকিৎসক আর্নল্ড বার্থল্ডের সাথে কাজ করে ১৮৩৪ সালে তিনি আর্সেনিকের অ্যান্টিডট আবিষ্কার করেন। তিনি দেখান যে, একটি আর্সেনিক যুক্ত দ্রবণে আয়রন অক্সাইড হাইড্রেট যোগ করলে দ্রবণের আর্সেনিক আয়রন অক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে ফেরাস আর্সেনাইট হিসেবে অধঃপতিত হয়। আর ফেরাস আর্সেনাইট অদ্রবণীয় বিধায় তা সহজেই দ্রবণ থেকে সরিয়ে নেয়া যায়।

বুনসেনের আর্সেনিকের অ্যান্টিডট; source: nlm.nih.gov

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, নিজে আর্সেনিকের অ্যান্টিডট আবিষ্কার করে নিজেই আর্সেনিক দূষণের শিকার হয়েছেন বুনসেন। তবে নিজের ঔষধেই বেঁচে গেছেন মৃত্যুর হাত থেকে। ১৮৪৩ সালের কথা, তার আর্সেনিকের অ্যান্টিডট আবিষ্কারের প্রায় ৯ বছর হয়ে গেছে। তখনো তিনি আর্সেনিক নিয়ে নানাবিধ গবেষণা করে চলেছেন। উল্লেখ্য, আর্সেনিকের রয়েছে একাধিক যৌগ যাদের মধ্যে কয়েকটি যৌগ যেকোনো সময় শুকনো বাতাসে বিস্ফোরিত হতে পারে। ক্যাকোডাইল সায়ানাইড তার মধ্যে একটি। এই ক্যাকোডাইল সায়ানাইড নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার শিকার হন রবার্ট বুনসেনও। বিস্ফোরণে তার মুখের মাস্ক ভেঙে যায়, তার ডান চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, তিনি প্রচণ্ড আর্সেনিক বিষক্রিয়া আক্রান্ত হন। তবে নিজের অ্যান্টিডটই তাকে সে যাত্রা রক্ষা করে।

বুনসেনের জিংক-কার্বন ব্যাটারি; source: commons.wikimedia.org

তখনকার সময়ে টেলিগ্রাফ লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জিংক-প্লাটিনামের এক প্রকার ব্যাটারি ব্যবহৃত হতো। তবে প্লাটিনাম অত্যন্ত দামি হওয়ায় ব্যাটারির দামও অনেক বেশি ছিল। এক্ষেত্রে বিপ্লব আনেন বুনসেন। তিনি জিংক-কার্বন ব্যাটারি তৈরি করেন। ফলে ব্যাটারি বেশ সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে যায়। এতে করে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গবেষক, সকলের জন্য ব্যাটারি ব্যবহার সুবিধাজনক হয়ে ওঠে। এ সময় বুনসেন গ্যাস বিশ্লেষণের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য গবেষণা করছিলেন। কাঠকয়লা পোড়ালে কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে অধিক কার্বন মনোক্সাইড তৈরি হয়, যা পরিবেশের জন্য অধিক ক্ষতিকর। আর এর কারণ হচ্ছে কাঠকয়লার বিশাল একটা অংশই সম্পূর্ণরূপে পুড়ে যায় না। জার্মানির অধিকাংশ ফার্নেস বা হাঁপর এবং অন্যান্য লৌহ গলানোর কারখানায় তাপের ৫০ ভাগই অপচয় হতো। বুনসেন এই অপচয় রোধে এবং কার্বন মনোক্সাইড বৃদ্ধি রোধে নতুন পদ্ধতি তৈরি করেন যা বেশ কার্যকরীভাবে তাপের অপচয় রোধ করার পাশাপাশি কার্বনমনোক্সাইডের উৎপাদন কমায়।

১৮৪৬ সালে বুনসেন আইসল্যান্ড ভ্রমণ করেন আগ্নেয়গিরি নিয়ে গবেষণার জন্য। সেখানে গিয়ে তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে গিজা বা উষ্ণপ্রস্রবণের নিকটে দাঁড়িয়ে তা পর্যবেক্ষণ করেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বুনসেন এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, ভূ-অভ্যন্তরে গরম পানির আধার উপস্থিত রয়েছে। সেখানে পানির তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু ভূ-অভ্যন্তরে অত্যধিক চাপ একে তরল রাখে। ভূপৃষ্ঠের উপরে উঠে এলেই চাপ হ্রাস পায় এবং পানি তৎক্ষণাৎ ফুটতে শুরু করে। আর সৃষ্টি হয় উষ্ণপ্রস্রবণের।

গিজা বা উষ্ণপ্রস্রবণ; source: youtube.com

বিভিন্ন পদার্থের খনিজ লবণকে উত্তপ্ত করে বর্ণালির দ্বারা মৌল শনাক্তকরণ পদ্ধতি অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। তবে তখন এর নির্ভরযোগ্যতা ততটা ছিল না। শিখার রঙ অনেক সময় সঠিক ফলাফল দিত না। কেননা এতে কালি জমতো। আবার শিখায় কোনো যৌগ দেয়ার পূর্বেই এতে রঙিন শিখা দেখা যেত। বুনসেন এই সমস্যার সমাধানকল্পে নিয়ে এলেন ‘বুনসেন বার্নার’। তিনি একপ্রকার গ্যাস বার্নার তৈরি করলেন যাতে গ্যাসের সাথে সঠিক অনুপাতে বাতাস মিশ্রিত করলে নিখুঁত, কালিবিহীন এবং প্রায় বর্ণহীন শিখা তৈরি হয়। এই নতুন প্রকারের বার্নারের ব্যবহার মৌল শনাক্তকরণকে করে তুললো বেশ সহজ এবং নির্ভরযোগ্য। ১৮৫৭ সালে রবার্ট বুনসেন তার অমর সৃষ্টি বুনসেন বার্নার তৈরি করেছিলেন। দেড়শ’ বছর পরে এসেও আজ পৃথিবীর প্রতিটি রসায়ন এবং মেডিক্যাল গবেষণাগারে বুনসেন বার্নার ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ এই বার্নারের জন্য পেটেন্টও করাননি তিনি। কারণ বিজ্ঞান থেকে অর্থ উপার্জন তার উদ্দেশ্য ছিল না! তিনি বলেছিলেন,

“আমার আবিষ্কার থেকে গবেষকগণ উপকৃত হবেন এবং আমার প্রশংসা করবেন, এটাই আমার জন্য যথেষ্ট!”

বুনসেন বার্নার; source: itembrowser.com

নিউটনের বর্ণালী পরীক্ষা সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত আছি। তবে যে বিষয়টি অনেকে না-ও জেনে থাকতে পারি, তা হলো ১৮০২ সালে হাইড ওলাস্টোনের নিউটনের পরীক্ষার পুনঃপরীক্ষার কথা। তিনি প্রিজমের মধ্য দিয়ে বিশ্লিষ্ট সাত রঙের আলোর বর্ণালীকে একটি বিবর্ধক কাঁচ দ্বারা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পেলেন, সাতটি রঙের মধ্যে রয়েছে স্পষ্ট সাতটি কালো রেখা। সংখ্যাটি আরো বৃদ্ধি পায় ১৮১২ সালে। সে বছর জোসেফ ফ্রনহফার অত্যন্ত শক্তিশালী এক বিবর্ধক কাঁচে ৫০০টির মতো কালো রেখা দেখতে পান (বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে সংখ্যাটা ৩০০০-এ ঠেকেছে)। এই কালো রেখাগুলোকে ব্যাখ্যা করতে পারেননি ফ্রনহফার। এই বর্ণালী নিয়ে আরো বিস্তর গবেষণার শুরু সেখান থেকেই এবং তাতে করে পদার্থবিজ্ঞানে তৈরি হলো নতুন এক শাখা, স্পেক্ট্রোস্কোপি বা বর্ণালীবীক্ষণ।

১৮৫৪ সালটি জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সে বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিভাগের চেয়ারম্যান হয়ে আসেন দুজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী। রসায়নে রবার্ট বুনসেন আর পদার্থবিজ্ঞানে কার্শফ। দুই মেধাবী বিজ্ঞানী দ্রুতই বন্ধু হয়ে ওঠেন। এদিকে কার্শফ স্পেক্ট্রোস্কোপির প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তিনি বর্ণালীর কালো রেখাগুলোর কারণ ব্যাখ্যা করতেও সক্ষম হন। ১৮৫৯ সালে তিনি আর বুনসেন মিলে বুনসেন বার্নারের সহায়তায় তৈরি করেন বিশেষ একপ্রকার স্পেক্ট্রোস্কোপ বা বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র। এই স্পেক্ট্রোস্কোপ দিয়ে গবেষণার ফল হলো অভাবনীয় নিখুঁত। যেকোনো মৌলই অত্যন্ত উত্তপ্ত হলে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো নির্গত করে। উজ্জ্বল রৈখিক এই স্পেক্ট্রা বা বর্ণালীকে বলা হয় ‘ইমিশন স্পেক্ট্রা’। বুনসেন আর কার্শফকেই দেয়া হয় এই বর্ণালী আবিষ্কারের সম্মান।

বুনসেন কার্শফ স্পেক্ট্রোস্কোপি; source: communicatescience.com

১৮৬০ এবং ১৮৬১ সালে বুনসেন এবং কার্শফ উভয়ে মিলে যথাক্রমে সিজিয়াম এবং রুবিডিয়াম, এই দু’টি মৌল আবিষ্কার করেন। তখন থেকেই বিজ্ঞানের একটি নতুন শাখার শুরু হলো যাকে আমরা বলি ‘ক্যামিক্যাল স্পেক্ট্রোস্কোপি। এই রাসায়নিক বর্ণালীবীক্ষণের বিস্ময়কর সাফল্য ছিল এই যে, এর দ্বারা অতি সামান্য পরিমাণে অবস্থিত কোনো মৌলকেও সনাক্ত করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, ৪০ টন পানি থেকে মাত্র ৫০ গ্রাম সিজিয়াম পাওয়া যায়। পানিতে সিজিয়ামের অনুপাত কত সামান্য তা এই তথ্য থেকেই বোঝা যায়। অথচ বুনসেন এবং কার্শফ সিজিয়ামের অস্তিত্ব পানিতেই পেয়েছিলেন স্পেক্ট্রোস্কোপির মাধ্যমে। বর্তমানে স্পেক্ট্রোস্কোপির ব্যবহার বলে শেষ করা যাবে না। দৃশ্যমান থেকে অদৃশ্য বর্ণালীর জগৎ স্পেক্ট্রোস্কোপির জন্যই মানুষের নিকট আজ পরিচিত।

১৮৬৪ সালে বুনসেন এবং তার রিসার্চ শিক্ষার্থী হেনরি রসকো ফ্ল্যাশ ফটোগ্রাফি আবিষ্কার করেন। তাদের ফ্লাশ ছিল ম্যাগনেসিয়ামের উজ্জ্বল দহন। এতসব কাজ করেও বুনসেন কেন নোবেল পুরস্কার পাননি? উত্তর সহজ, তখন নোবেল পুরস্কার ছিলই না। তবে নোবেল পুরস্কার প্রচলনের পূর্বে যে পুরস্কারটিকে নোবেল বলা যেতে পারে তা হচ্ছে ব্রিটিশ রয়্যাল সোসাইটির ‘কুপলি মেডাল’। ১৮৬০ সালে রবার্ট বুনসেন এই সম্মানজনক কুপলি মেডাল লাভ করেন। ১৮৭৭ সালে রয়্যাল সোসাইটি তাকে ডেভি মেডালেও ভূষিত করে। সে বছরই তাকে রয়্যাল সোসাইটির সম্মানজনক সদস্যপদ দেয়া হয়। ১৮৮৩ সালে তাকে ‘ফ্রেঞ্চ একাডেমি অব সায়েন্স’ এর সদস্যপদও দেয়া হয়।

“একজন গবেষক হিসেবে তিনি ছিলেন মহান, একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন সেরা আর একজন মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ।”- রসায়নবিদ হেনরি রসকো

রসকোর উপরোক্ত উক্তিটির যথার্থতা ইতোমধ্যেই টের পেয়েছেন পাঠক। যিনি বুনসেন বার্নারের মতো একটি অতি মূল্যবান আবিষ্কার করেও তা পেটেন্ট করিয়ে অর্থের পাহাড়ে উঠে বসেননি, তিনি মানুষ হিসেবে কতটা মহান তা অনুধাবনযোগ্য। তার আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধুমহল এবং বিজ্ঞানীমহল, সর্বত্রই তার পরিচিতি ছিল হাসিখুশি এবং রসিক মানুষ হিসেবে। আবার পোশাক পরিচ্ছদে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাধারণ। এমনকি নোংরাও বলা চলে! তিনি মনে করতেন ঘনঘন কাপড় ধোয়া, পরিপাটি করে কাপড় পরিধান করা এসবই সময়ের অপচয়। পোশাক পরিধানে সময় বাঁচাতে এত দ্রুত পরিধান করতেন যে অনেকসময় খেয়ালও করতেন না যে তিনি ছেঁড়া কাপড় পরেছেন! গোসল করার ক্ষেত্রেও ছিল তার বিশেষ অনীহা! এ বিষয়ে একটি মজার ঘটনা আছে। একবার এক পার্টিতে গেলে বুনসেনকে দেখে তার কোনো এক সহযোগী প্রফেসরের স্ত্রী বলেছিলেন,

“আমি বুনসেনকে চুমু খেতে চাই, তবে ভালোমতো গোসল করিয়ে তারপর!”

খোশগল্পের জন্য বুনসেনের জুড়ি মেলা ভার। পোশাক আশাকে অপরিচ্ছন্ন হলেও অত্যন্ত শুচিবায়সম্পন্ন মানুষও তার সাথে একবার কথা বলে তার বন্ধু বনে যেত। তার শিক্ষার্থীরা প্রায়শই তার বাড়িতে বেড়াতে যেত তার গল্প শোনার জন্য। তার মৃত্যুর পর তার এসব গল্প-কাহিনী ‘বুনসেনিয়ান’ নামক একটি বইয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ১৮৯৯ সালের ১৬ আগস্ট হাইডেলবার্গে ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই হাসিখুশি মেধাবী বিজ্ঞানী। বলা হয়ে থাকে, মৃত্যুর সময় তার কোনো শত্রু ছিল না, সকলেই ছিল তার বন্ধু!

ফিচার ছবি- Famous People

Related Articles