Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আরব বংশোদ্ভূত বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিরা

একটি প্রচলিত ধারণা আছে, আরবের মানুষের মেধা কম। সুযোগ-সুবিধার অভাবে, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না থাকার কারণে হয়তো গত কয়েক শত বছর ধরে আরবরা তাদের মেধা কাজে লাগাতে পারছে না, কিন্তু সুযোগ পেলেই যে বিশ্বের অন্য যেকোনো জাতির মতো তারাও সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে আরোহণ করতে পারে, তার প্রমাণ অতীতে বিভিন্ন বিভিন্ন সময় পাওয়া গেছে, এখনও পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাফল্যের চূড়ান্তে পৌঁছানো ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাদের নিজেদের অথবা পিতামাতার জন্ম আরবের কোনো দেশে। চলুন জেনে নেই এরকম কিছু সফল ব্যক্তির পরিচয়।

অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস

স্টিভ জবস ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত অ্যাপল কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ১৯৭৬ সালে স্টিভ ওয়াজনিয়াকের সাথে মিলে তিনি অ্যাপল কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের দুজন মিলে পার্সোনাল কম্পিউটারকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলেন। স্টিভ জবসের তত্ত্বাবধানে অ্যাপল সাড়ে তিন দশক ধরে একের পর এক নিত্য নতুন প্রযুক্তি উপহার দিয়ে বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের অবস্থান অক্ষুন্ন রাখে। ২০১১ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন স্টিভ জবসের সম্পত্তি প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার বলে অনুমান করে।

সিরিয়ান বংশোদ্ভূত স্টিভ জবসের জন্ম ১৯৫৫ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকোতে। তার বাবার নাম আব্দুল ফাত্তাহ জান্দালি এবং মায়ের নাম জোয়ান শিবেল, পরবর্তীতে জোয়ান সিম্পসন। সে সময় তারা দুজনেই ছিলেন উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। জবস ছিলেন তাদের বিবাহ বহির্ভূত সন্তান। জন্মের পরপরই তারা জবসকে এক মার্কিন পরিবারের কাছে দত্তক দিয়ে দেন। তারা এমনকি, জবসের নামও রাখেননি।

স্টিভ জবসের বাবা জানদালি ছিলেন একজন সিরিয়ান অভিবাসী। তার জন্ম হয়েছিল সিরিয়ার হোমস শহরের এক ধনী পরিবারে। লেবাননের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ বৈরুতে পড়াশোনার সময় তিনি ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং জেল খাটেন। জেল থেকে মুক্ত হয়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান পলিটিকাল সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য। সেখানে তার সাথে জার্মান-সুইস বংশোদ্ভুত ক্যাথলিক খ্রিস্টান ছাত্রী জোয়ান শিবেলের পরিচয় হয়। তাদেরই সন্তান স্টিভ জবস।

জবসকে দত্তক দেওয়ার কিছুদিন পর অবশ্য তার সত্যিকার বাবা-মা বিয়ে করেন। তাদের এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। অন্যদিকে জবস তার পালক পিতামাতা পল এবং ক্লারা রেইনহল্ডের কাছে বড় হয়ে ওঠেন। স্টিভ জবসের বয়স যখন ২৭ বছর, তখন তিনি সর্বপ্রথম তার সত্যিকার জন্মপরিচয় জানতে পারেন।

সাবেক শীর্ষ ধনী কার্লোস স্লিম

কার্লোস স্লিম; Source: Independent

বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি কার্লোস স্লিম একজন মেক্সিকান ব্যাবসায়ী এবং উদ্যোক্তা। তিনি ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি আমেরিকা মোভিলের মালিক। এছাড়াও তার মূল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গ্রুপো কার্সো নির্মাণ ব্যবসা, ইনস্যুরেন্স, মাইনিং, বিনোদন, প্রকাশনা, ব্যাংকিং প্রভৃতি ব্যবসার মাধ্যমে মেক্সিকোর স্টক এক্সচেঞ্জের প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যাবসায়িক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসেব অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কার্লোস স্লিম বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিশ্বের ষষ্ঠ সম্পদশালী ব্যক্তি। তার মোট সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

লেবানিজ বংশোদ্ভূত কার্লোস স্লিমের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৮ জানুয়ারি, মেক্সিকো সিটিতে। তার বাবার নাম খালিল সালিম হাদ্দাদ আগলামাজ। তিনি ১৯০২ সালে তৎকালীন অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনস্থ লেবানন থেকে মেক্সিকোতে যান এবং পরবর্তীতে জুলিয়ান স্লিম হাদ্দাদ নাম ধারণ করেন। তিনি ১৯১০ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে মেক্সিকান বিপ্লবের সময় আবাসন প্রকল্পের ব্যবসা করে বিপুল সম্পত্তি অর্জন করেন। কার্লোসের মা লিন্ডা হেলু আতাও লেবানন থেকে অভিবাসী হওয়া মেক্সিকান নাগরিক।

অটোমোবাইল দিকপাল কার্লোস ঘোসন

কার্লোস ঘোসন; Source: dealerscope.com

কার্লস ঘোসন অটোমোবাইল শিল্পের একজন দিকপাল। বর্তমানে তিনি ফ্রান্সের রেনো অটোমোবাইল কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জাপানের মিতসুবিশি মোটরসের এবং নিসানের চেয়ারম্যান। এর আগে তিনি নিসানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং রাশিয়ার আভটোভাজেরও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ঘোসন রেনো কোম্পানিকে ঢেলে সাজিয়ে পুনরায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করতে সক্ষম হওয়ায় ‘দ্যা কস্ট কিলার’ উপাধি পান। পরবর্তীতে নিসান কোম্পানিকেও দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর পর তিনি ‘মিস্টার ফিক্স ইট‘ উপাধি পান। একাধিক জরিপে একাধিকবার তিনি ব্যবসায়িক বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন।

ব্রাজিলের নাগরিক কার্লস ঘোসন লেবানিজ বংশোদ্ভুত। তার দাদা বিশারা ঘোসন ১৩ বছর বয়সে লেবানন থেকে ব্রাজিলে এসেছিলেন। কার্লোসের মা ছিলেন নাইজেরিয়ায় জন্মগ্রহণকারী ব্রাজিলের নাগরিক, যার পরিবারও লেবানন থেকে এসেছিল। কার্লোস ঘোসনের জন্ম ১৯৫৪ সালে। ছয় বছর বয়সে তিনি তার মা এবং বোনের সাথে বৈরুতে তার দাদার বাড়িতে যান। কার্লোস সেখানেই বড় হন, হাইস্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন। পরবর্তীতে তিনি প্যারিসে গিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন এবং কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।

জাহা হাদিদ

জাহা হাদিদ; Source: La Presse

জাহা হাদিদ আধুনিক বিশ্বের সেরা স্থপতিদের একজন হিসেবে বিবেচিত হন। বিশ্বের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী এবং প্রথম মুসলমান, যিনি অত্যন্ত সম্মানসূচক প্রিৎজকার পুরস্কার লাভ করেন। এই পুরস্কারটিকে স্থাপত্যজগতের নোবেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ব্রিটিশ-ইরাকী নাগরিক জাহা হাদিদের জন্ম ৩১ অক্টোবর, ১৯৫০ সালে, ইরাকের বাগদাদে। তার বাবা মুহাম্মদ আল-হাজ হুসেইন হাদিদ মসুলের একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। জাহা হাদিদের শৈশব কেটেছিল ইরাকের সোনালি সময়ে। তৎকালীন ইরাক সরকার তেল বিক্রি লব্ধ অর্থের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করে বিদেশ থেকে বিশ্বের সেরা আর্কিটেক্টদেরকে দিয়ে বাগদাদ শহরটিকে আধুনিকায়ন করার কাজে। সেখান থেকেই তিনি স্থাপত্যকৌশলের প্রতি আগ্রহী হন। তিনি বৈরুতের আমেরিকান ইউনিভর্সিটি থেকে প্রথমে গণিতে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে লন্ডনে স্থাপত্যকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করেন।

জাহা হাদিদ আধুনিক স্থাপত্যকৌশলে বিপ্লব সৃষ্টি করেন। তার নকশা করা ভবনগুলো সময়ের তুলনায় এতই অগ্রগামী যে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা প্রকৌশলীদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল। তার নকশা করা ভবনগুলোর অধিকাংশই প্রচলিত ভবনের চেয়ে বরং ভাস্কর্যের সাথে বেশি তুলনীয়। তার নকশা করা ভবনগুলোতে কোণ এবং সমতলের পরিবর্তে বক্রতলের ব্যবহারের জন্য ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান তাকে ‘বক্রতার রানী’ উপাধিতে ভূষিত করে।

মিশেল তামের

মিশেল তামের; Source: AFP

মিশেল তামের ব্রাজিলের ৩৭ তম এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট। সাবেক প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফের সময় তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সেসময় কিছুদিনের জন্য তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। দিলমার অভিশংসনের পর ২০১৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

মিশেল তামেরও একজন লেবানিজ বংশোদ্ভূত ব্রাজিলিয়ান। তার বাবা নাখুল ইলিয়াস তামের লুইয়া এবং মা মার্চ বার্বার লুইয়া ১৯২৫ সালে লেবানন ত্যাগ করে ব্রাজিলে আসেন। ক্যাথলিক খ্রিস্টান এই পরিবারটি লেবানন ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী লেবাননের অস্থিতিশীলতা এবং দুর্ভিক্ষের কারণে। এই পরিবারে মিশেলের জন্ম হয় ১৯৪০ সালে।

এরা ছাড়াও আরব বংশোদ্ভূত সফল ব্যক্তিদের তালিকায় আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এবং ভোক্তা অধিকার আন্দোলনের অন্যতম সফল উদ্যোক্তা, লেবানিজ বংশোদ্ভূত র‍্যালফ নাদের, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লেবানিজ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইলিয়াস জেমস কোরি, আরেক নোবেল বিজয়ী মিশরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন রসায়নবিদ আহমেদ জেওয়ালি সহ আরো অনেকে। আর খেলাধূলা এবং বিনোদন জগতের দিকে তাকালে তো আরব বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের তালিকা করেই শেষ করা যাবে না!

ফিচার ইমেজ: 10magazine.com

Related Articles