Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গ্যালেন: গ্লাডিয়েটরদের চিকিৎসক ছিলেন যিনি

“ডাক্তারদের মধ্যে সেরা, দার্শনিকদের মধ্যে অনন্য।”

বিখ্যাত রোমান সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াস তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক সম্পর্কে এই উক্তিটি করেছিলেন। ১৬৯ খ্রিস্টাব্দে সে সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং খ্যাতিমান চিকিৎসককে গ্রিসের পারগামন থেকে রোমে নিয়ে আসেন সম্রাট অরেলিয়াস। উদ্দেশ্য, জার্মান আদিবাসীদের সাথে যুদ্ধরত রোমান সৈন্যদের চিকিৎসা। এক বছর পর যুদ্ধ শেষ হলে তাকে নিজের ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ দেন অরেলিয়াস। সম্রাট অরেলিয়াসের পর তার ছেলে কমোডাসও একই ব্যক্তিকে নিজের গৃহচিকিৎসক নিয়োগ দেন।

১৯২ খ্রিস্টাব্দে কমোডাস আততায়ীর হাতে নিহত হলে কিছুদিন দেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা চলে। ১৯৩ সালেই নতুন সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন সেপটিমিয়াস সেভারাস এবং সেই অরেলিয়াসের চিকিৎসা করা ব্যক্তিটিই পুনরায় সম্রাটের ব্যক্তিগত চিকিৎসক পদে নিয়োগ পান! এই প্রভাবশালী চিকিৎসক, যিনি আমৃত্যু রাজদরবারের চিকিৎসক হিসেবে সম্রাটদের পছন্দের শীর্ষে থেকেছেন, তিনি হচ্ছেন প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠতম চিকিৎসক গ্যালেন।

গ্যালেন (১২৯-২১৬); source: Famous People

গ্যালেনের চিকিৎসা বিষয়ক কাজগুলোর প্রভাববলয়ে পশ্চিমা ও আরব বিশ্ব আবদ্ধ ছিল প্রায় ১,৫০০ বছর! এই তথ্য জানার পর গ্যালেনের প্রভাব এবং কাজ সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। গ্যালেন মূলত জন্মগতভাবে একজন গ্রীক। কিন্তু টানা কয়েক দশক রোমান সম্রাটদের গৃহচিকিৎসকের দায়িত্ব পালন এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় নিজের চিকিৎসা সম্পর্কিত জ্ঞানের উন্নয়ন গ্যালেনকে করেছে রোমানদের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিদ। তিনি প্রাচীন গ্রীক চিকিৎসাশাস্ত্রীয় জ্ঞান ও নিজের গবেষণার ফলাফল মিলিয়ে দাঁড় করিয়েছিলেন অসামান্য চিকিৎসা পদ্ধতি, যা সে সময়ে সত্যিই অতুলনীয় ছিল।

গ্যালেন বিশেষভাবে দক্ষ ছিলেন অ্যানাটমি, ফার্মাকোলজি, সার্জারি এবং ভেষজ চিকিৎসায়। প্রাচীনকালের যেকোনো বিজ্ঞানী বা চিকিৎসকের তুলনায় গ্যালেন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি তথ্য টিকে আছে। তার চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্বন্ধীয় কাজের প্রায় ২০ হাজার পৃষ্ঠা এখনো টিকে আছে! যদিও তার চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর অধিকাংশই এখন বিপদজনক বলে চিহ্নিত, তথাপি তার প্রচলিত কিছু পদ্ধতি এখনো ব্যবহৃত হয়।

গ্যালেনিজম; source: Amazon.com

গ্যালেন সম্বন্ধে আরো কিছু জানার আগে চলুন পরিচিত হয়ে নিই ‘গ্যালেনিজম’ এর সাথে। গ্যালেনের চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক কাজগুলো এতোটাই জনপ্রিয়তা পায় যে, সেগুলোকে আলাদা করে গ্যালেনিজম বলা হয়। উল্লেখ্য, গ্যালেনিজমের সবকিছুই গ্যালেনের নিজের আবিস্কার নয়। তিনি প্রাচীন অনেক চিকিৎসকের তত্ত্বও নিয়েছিলেন, যেগুলো তার কাছে সঠিক বলে মনে হয়েছে। গ্যালেনিজম সবিস্তারে বর্ণনা করতে গেলে একটি এনসাইক্লোপিডিয়া রচনার প্রয়োজন পড়বে। তাই সংক্ষেপে গ্যালেনিজমের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরছি।

  • রোগীর পালস বা নাড়ির স্পন্দন সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করে রোগ নির্ণয় সম্ভব।
  • রোগীর মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় সম্ভব।
  • গ্যালেন চোখের ছানি অপসারণ করতে পারতেন।
  • মানসিক সমস্যার দ্বারা উদ্ভুত শারীরিক সমস্যা নির্ণয় করতে পারতেন।
  • মূত্রাশয়ে নয় বরং বৃক্কে মূত্র তৈরি হয়- এই বিষয়টি প্রমাণ করেন।
  • গ্যালেন প্রথম প্রমাণ করেন যে, ধমনীর মধ্য দিয়ে তরল রক্ত প্রবাহিত হয়। তার আগে পর্যন্ত বিশ্বাস করা হতো ধমনী দিয়ে গ্যাস বাহিত হয়!
  • অপটিক ও অ্যাকাউস্টিকসহ ১২টি করোটিক স্নায়ুর মধ্যে ৭টি আবিস্কার করেন গ্যালেন।
  • দুই ধরনের রক্ত চিহ্নিত করেন তিনি, টকটকে লাল রক্ত এবং কালো রক্ত।
  • হৃৎপিণ্ডের চারটি কপাটিকা আবিস্কার করেন তিনি।
  • গ্যালেন আবিস্কার করেন যে, হৃৎপিণ্ডের কপাটিকাগুলো কেবল একমুখী রক্ত চলাচলের ব্যবস্থা করে।

গ্যালেনিজমের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক দেখে নিশ্চয়ই ভাবছেন, গ্যালেনের কোনো ভুলই তো নেই। বরং সময়ের তুলনায় অনেক অগ্রসর কথাই বলে গেছেন গ্যালেন। হ্যাঁ, গ্যালেনিজম সমসাময়িক কালের চেয়ে অনেক অগ্রসর ছিল। তবে এতে ভুলও কম ছিল না। তেমন কিছু ভুল এক নজরে দেখে আসি চলুন।

  • মৃত প্রাণী ও উদ্ভিদের পচনের ফলে সৃষ্ট দুর্গন্ধ থেকে মানুষের রোগ হয়।
  • শিরার কালো রক্ত যকৃতে তৈরি হয়, যা সারা দেহের খাদ্য হিসেবে পরিবাহিত হয়!
  • ধমনীর টকটকে লাল রক্ত হৃৎপিণ্ডে তৈরি হয় এবং দেহে শক্তি দান করে।
  • রক্তক্ষরণকেও চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
  • সূক্ষ্ম রক্তনালিকার মাধ্যমে শিরা ও ধমনী যুক্ত, যাদের মধ্য দিয়ে রক্ত এবং বাতাস প্রবাহিত হয়।
  • কালো পিত্তরস মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতার সৃষ্টি করে।
  • গ্যালেন হিপোক্রেটিসের ‘পিত্তরস দ্বারা রোগ’ হওয়ার তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন।

প্রাচীন পারগামন শহর; source: scoopnest.com

গ্যালেন ১২৯ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের পূর্বে গ্রিসের পারগামন নামক শহরের এক ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্লডিয়াস গ্যালেন নামেও পরিচিত। পারগামন শহরটি বর্তমানে তুরস্কের অন্তর্গত। শিল্প-সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারগামন শহর ছিল সে সময়ের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহরগুলোর একটি। পারগামনের লাইব্রেরি এতটাই সমৃদ্ধ ছিল যে, প্রাচীনকালের সেরা লাইব্রেরিগুলোর আলোচনায় আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরির পরেই একে স্থান দেওয়া হয়। গ্যালেনের বাবা নিকন তার পুত্রের ভবিষ্যৎ যেন দেখে ফেলেছিলেন শৈশবেই। তিনি দর্পভরেই বলতেন যে, তার ছেলে হবে পারগামনের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। নিকন ছিলেন একজন সফল স্থপতি। তিনি ছেলের জন্য উচ্চমানের পড়ালেখার ব্যবস্থা করেন। ফলে ক্লাসিক্যাল গ্রীক সাহিত্যের পাশাপাশি জ্যামিতি, দর্শন, বিজ্ঞান আর যুক্তিশাস্ত্রেও পারদর্শী হয়ে ওঠেন গ্যালেন।

গ্যালেন জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পারদর্শী হয়ে উঠছিলেন ঠিকই, কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের চৌকাঠ তখনো মাড়ানো হয়নি তার। জ্যামিতি আর দর্শন শিখতে শিখতেই ১৬ বছরের কিশোরে পরিণত হলেন গ্যালেন। কিন্তু তখনই তার জীবনে ঘটে যায় এক অদ্ভুত ঘটনা। তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে তার বাবার স্বপ্নে দেখা দেন গ্রীকদের চিকিৎসার দেবতা এসক্লিপিয়াস! স্বপ্নের মধ্যে গ্যালেনকে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়াবার জন্য আদিষ্ট হন নিকন। আর গ্রীক দেবতাদের প্রতি নিকনের ভক্তি-শ্রদ্ধার কোনো অন্ত ছিল না। তিনি তাই কোনোরকম কালক্ষেপণ না করেই গ্যালেনকে দর্শনের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়ানো শুরু করেন। এরপরের ইতিহাস তো আমাদের জানাই আছে। এই ঘটনার পর থেকে গ্যালেন যেকোনো সমস্যায় পড়লে এসক্লিপিয়াসের কাছে সাহায্য চাইতেন এবং তিনি দাবি করতেন, এসক্লিপিয়াস তাকে অনেক সাহায্যও করেছিলেন।

আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি; source: Crystalinks

গ্যালেনের বয়স যখন ২০ বছর, তখন তার বাবা মারা যান। তবে আর্থিক সমস্যার কোনো আশঙ্কা ছিল না তার। কারণ, নিকন মারা যাবার সময় গ্যালেনের নামে যে বিশাল অঙ্কের অর্থ রেখে যান, তা দিয়ে গ্যালেন অনায়াসে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারতেন আরো অন্তত ২০ বছর! যা-ই হোক, বাবা মারা যাবার পরই গ্যালেন পারগামন ছেড়ে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্বন্ধে নতুন নতুন জ্ঞান লাভে নিজেকে উৎসর্গ করেন। তার ভ্রমণ শেষ হয় আলেকজান্দ্রিয়ায়, যেখানে তিনি পাঁচ বছর কাটিয়ে দেন। আলেকজান্দ্রিয়া শহরে থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে জীবনধারণের প্রকৃতি, কোনো কিছুই পছন্দ হয়নি গ্যালেনের। তথাপি সেখানে পাঁচ বছর তিনি কাটিয়েছিলেন কেবল নিজেকে সমৃদ্ধ করার জন্য। ১৫৮ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে নিজ শহর পারগামনে ফিরে আসেন গ্যালেন। সেখানে তিনি একটি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

আলেকজান্দ্রিয়া থেকে শিক্ষা গ্রহণের তখন খুব কদর ছিল। ফলে চিকিৎসক হিসেবে গ্যালেনের গ্রহণযোগ্যতা ছিল বেশ ভালো। তিনি ‘টেম্পল অব পারগামন’ এ রোমান গ্লাডিয়েটরদের চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন। আধুনিককালের খাদ্যসংযম বা ডায়েটিং পদ্ধতি এসেছিল গ্যালেনের হাত ধরেই! তিনি গ্লাডিয়েটরদেরকে সুস্থ সবল রাখতে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেন। প্রতিদিন ক্ষতবিক্ষত গ্লাডিয়েটররা যখন তার কাছে আসতো, গ্যালেনের মনে হতো যেন গ্লাডিয়েটরদের দেহের সেই ক্ষতগুলো হচ্ছে জানালা, যা দিয়ে তিনি মানবদেহের ভেতরে দেখতে পান! তিনি গ্লাডিয়েটরদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবার এক মাসের মাথায়ই তাদের ক্ষত থেকে মৃত্যুর হার অর্ধেকের নিচে নেমে যায়। ফলে চিকিৎসক হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে যায় চারিদিকে।

একজন আহত গ্লাডিয়েটরকে চিকিৎসা দিচ্ছেন গ্যালেন; source: Crystalinks

“সকল অজানা রাস্তাই রোমে গিয়ে শেষ হয়!”

সে সময়ে প্রচলিত এই প্রবাদটির সত্যতা আরো একবার প্রমাণ করেন গ্যালেন। তিনিও রোমে ভ্রমণ না করে পারলেন না। তবে ১৬৬ খ্রিস্টাব্দে তার সেই ভ্রমণ ফলপ্রসূ হয়নি। তিনি সেখানে গিয়ে দেখলেন, সেখানকার চিকিৎসকদের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং তারা গ্যালেনের চিকিৎসা পদ্ধতিকে অস্বীকার করেন। ফলে গ্যালেন অসন্তুষ্ট হন এবং সেখানকার চিকিৎসকদের ‘বিবেকবর্জিত চোর’ বলে আখ্যা দেন, যারা রোগীকে সুস্থ না করে টাকা আয় করতেই ভালোবাসতেন! খুব স্বাভাবিকভাবেই এই উক্তি চারিদিকে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং গ্যালেন প্রাণভয়ে পালিয়ে ফিরে আসেন নিজ শহরে।

তবে গ্যালেনের এই পলায়ন যেন তার রাজকীয় প্রত্যাবর্তনেরই মঞ্চ ঠিক করে দিয়েছিল। কারণ এই পলায়নের মাত্র ৩ বছর পরই তিনি মার্কাস অরেলিয়াসের আমন্ত্রণে পুনরায় রোমে পদার্পণ করেন এবং জীবনের বাকিটা সময় রাজচিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন আর তার বিরোধিতা করার কেউ ছিল না, বরং তাকে সমর্থন না করা চিকিৎসক খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর হয়ে যায়!

গ্যালেনের কাজগুলো বিশ্লেষণ করতে গেলে অধিকাংশ সময় যে সমস্যাটি হয়, তা হচ্ছে তার সংকলিত বা সংগৃহীত কাজগুলোকেও তার নিজস্ব কাজ বলে মনে করা হয়। গ্যালেন মূলত নিজের গবেষণা ও আবিষ্কারের চেয়ে তার পূর্বসূরীদের কাজের সংকলনই বেশি করেছেন। তিনি হিপোক্রেটিস, হিরোফেলাস, সেলসাস, আল্কমেয়ন, প্র্যাক্সাগোরাস, এসক্লিপিয়াডেস, এরাসিস্ট্রেটাস সহ প্রভূত প্রাচীন গ্রীক এবং রোমান চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের কাজ নিয়ে গবেষণা করেন এবং সেগুলো থেকে যা তার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছিল, তা সংকলিত করেন। তিনি তার চিকিৎসা বিষয়ক বইয়ে তাদের নামও উল্লেখ করে গেছেন। আর তার এই কাজই পরবর্তী ১,৫০০ বছর যাবত চিকিৎসাশাস্ত্রকে প্রভাবিত করেছে একচ্ছত্রভাবে।

আডা লাভলেস; source: history.com

ইউরোপে রেনেসাঁর আগমনের পূর্ব পর্যন্ত গ্যালেনের কাজগুলোই ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের মৌলিক নীতি। তবে মধ্যযুগে বেশ কজন মুসলিম চিকিৎসক গ্যালেনের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ১৬ শতকে গিয়ে উইলিয়াম হার্ভের হাত ধরে তা প্রতিষ্ঠা পায়। হার্ভে গ্যালেনের রক্ত সঞ্চালন ও অ্যানাটমিক গবেষণার বিস্তর ভুল প্রমাণ করেন। তবে এজন্য গ্যালেনকে পুরোপুরি দোষ দেওয়া যায় না। কারণ, তখন রোমে মানবদেহ ব্যবচ্ছেদ করা নিষিদ্ধ ছিল। ফলে গ্যালেন তার পর্যবেক্ষণ শূকর ও অন্যান্য প্রাণী ব্যবচ্ছেদ করে চালান। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির গতিটা ছিল অত্যন্ত শ্লথ, এটা সত্যি। রেনেসাঁর সময় গ্যালেনের কাজের একটা বড় অংশ ভুল প্রমাণিত হলেও, রক্তক্ষরণ দ্বারা চিকিৎসা করাটা চলে আসছিল ১৯ শতক পর্যন্ত! এই চিকিৎসার সবচেয়ে পরিচিত শিকার আডা লাভলেস। ১৮৫২ সালে আডা লাভলেস যখন জরায়ু ক্যানসারে মৃত্যুশয্যায়, তখন তার উপর গ্যালেনের রক্তক্ষরণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়! ফলে লাভলেস সুস্থ তো হননি, বরং তার মৃত্যুই আরো ত্বরান্বিত হয়েছিল!

গ্যালেনের মৃত্যু সম্বন্ধে ব্যাপক বিতর্ক আছে। তবে অধিকাংশ ইতিহাসবিদই বিশ্বাস করেন, ২১৬ খ্রিস্টাব্দে রোমে মৃত্যুবরণ করেন গ্যালেন। তার সকল ভুল-ভ্রান্তি একদিকে রেখে বলা চলে, গ্যালেনের কাজই তাকে ইতিহাসের সম্মানের আসনে বসিয়েছে। আমরা বর্তমানে যে চিকিৎসাপদ্ধতি পেয়েছি, তা তো গ্যালেনের মতো গুণী মানুষদের সেই হাজার বছর আগের চিকিৎসাপদ্ধতিরই আধুনিকায়ন!

ফিচার ছবি- alamy.com

Related Articles