Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গ্রেগর জোহান মেন্ডেল: বিজ্ঞানী হতে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন যিনি

শৈশব থেকেই তার ছিল উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, যদিও পড়ালেখা করেছেন পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে। জীববিজ্ঞানী ফ্রাঞ্জ উঙ্গারের কাজ তাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। সেই থেকে তিনি তার আশ্রমের বাগানে মটরগাছ নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করলেন। খুঁজে পেলেন বংশগতির অনেক অজানা তথ্য। পিতামাতার কাছ থেকে সন্তানের মাঝে যেসব বৈশিষ্ট্য বাহিত হয়, সেগুলো নিয়ে গবেষণা করলেন। আর সেই শুরু থেকে ধীরে ধীরে এগোতে এগোতে একসময় আগাগোড়া একজন সন্ন্যাসী থেকে তিনি হয়ে গেলেন প্রজননবিদ্যার জনক! সেই সন্ন্যাসীর নাম গ্রেগর মেন্ডেল

গ্রেগর মেন্ডেল (১৮২২-১৮৮৪); source: Famous People

১৮২২ সালের ২০ জুলাই হেইঞ্জেনডোর্ফ নামক একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জোহান মেন্ডেল। জোহান তার জন্মগত নাম। পরবর্তীতে নামের সাথে গ্রেগর যুক্ত হয়। সে যা-ই হোক, গ্রামটি তখন অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্রের অংশ। দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নিলেও অর্থাভাবে শিক্ষা বঞ্চিত থাকতে হয়নি মেন্ডেলকে। কারণ তার কৃষক বাবা তার শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন অসম্ভব আগ্রহী। তিনি জমিজমা (খুব সামান্যই ছিল) বিক্রি করে ছেলের পড়ালেখা চালিয়ে নিয়েছেন! আর অভাবী বাবার কষ্টোপার্জিত অর্থের প্রতিটি পয়সাই যথার্থ কাজে লাগিয়েছিলেন মেন্ডেল। তার হাই স্কুল পরীক্ষার ফলাফল এতোটাই ভালো হলো যে অলোমুচ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপে পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। সেখানে তিনি পদার্থবিজ্ঞান, গণিত ও দর্শনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন।

অলোমুচ বিশ্ববিদ্যালয়; source: TrekEarth

বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’বছর পড়ালেখার পর তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতোটাই নড়বড়ে হলো যে, তার পক্ষে আর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এই অবস্থায় একদিন তার একজন পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক তাকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে অন্য কিছু করার পরামর্শ দেন। কিন্তু মেন্ডেল জানালেন তার বিজ্ঞান পড়ার প্রবল ইচ্ছার কথা। তখন সেই শিক্ষকটি তাকে বলেছিলেন, “বিজ্ঞানী হতে চাও? বিজ্ঞানী হতে হলে সন্ন্যাসী হতে হবে!” তিনি মেন্ডেলকে ‘অ্যাবে অব সেন্ট থমাস’ নামক একটি আশ্রমে ভর্তি হবার পরামর্শ দেন। সেখানে ভর্তি হলে মেন্ডেলের তিনদিক দিয়েই সুবিধা হতো। প্রথমত, সেখানে পড়ালেখায় কোনো খরচ নেই। দ্বিতীয়ত, কিছু আয়-রোজগারও করা যাবে আর তৃতীয় এবং সর্বশেষ কারণ, সেখানে উদ্ভিদবিজ্ঞান পড়ালেখার জন্য ছিল বিশাল এক বাগান। কিন্তু সমস্যা ছিল একটাই, আশ্রমে পড়ালেখা করতে হলে সেখানকার সন্ন্যাসী হতে হতো। বিজ্ঞানী হবেন কিনা এমন কিছুই ভাবেননি মেন্ডেল। তথাপি বিজ্ঞান পড়ার জন্য ধর্মবিমুখ মেন্ডেলকে হতেই হলো সন্ন্যাসী!

১৮৪৩-৪৬ পর্যন্ত তিন বছর মেন্ডেল সেন্ট থমাসে জীববিজ্ঞান বিষয়ক পড়ালেখা করেন। পরের বছর তিনি ধর্মযাজক হন। ১৮৪৮ সালে তিনি ‘প্যারিশ’ ভুক্ত হন। প্যারিশ বলতে অনেকটা থানার ওসি হবার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট এলাকার প্রধান যাজক হবার পাশাপাশি নিজস্ব গীর্জা লাভ করেন মেন্ডেল। কিন্তু গীর্জার রুটিনবাঁধা জীবন তাকে খুব দ্রুতই বিরক্ত করে তোলে। এক বছর পরই মেন্ডেল গীর্জা ছেড়ে একটি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। তবে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেও ভালো লাগেনি মেন্ডেলের। তিনি হাই স্কুলে শিক্ষকতার জন্য নিয়োগ পরীক্ষায় বসলেন এবং দুর্ভাগ্যক্রমে অকৃতকার্য হলেন। নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবার বিষয়টি তাকে ভীষণ মনঃপীড়া দেয়। তিনি তাই ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেলেন রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখা করতে। দু’বছর পর ফিরে এসে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই প্রথমে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৮৫৬ সালে আরো একবার হাই স্কুল নিয়োগ পরীক্ষা দিলেন মেন্ডেল এবং আবার অকৃতকার্য হলেন। তবে এবার ভাগ্যের দোষে। পরীক্ষার পুরো সপ্তাহ জুড়েই তিনি ছিলেন ভীষণ অসুস্থ।

ব্রানের সেন্ট থমাস অ্যাবে; source: Wikimedia commons

দ্বিতীয়বার অকৃতকার্য হয়ে আশা ছেড়ে দিলেন মেন্ডেল। তবে হঠাৎই অন্যদিকে ঝোঁক তৈরি হলো তার। তিনি আবহাওয়াবিদ্যা নিয়ে পড়ালেখা শুরু করে দিলেন। ১৮৬৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন ‘অস্ট্রিয়ান মেটেওরোলজিক্যাল সোসাইটি’। মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি এই সোসাইটির সদস্য হিসেবে আজীবন যত গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, জীববিজ্ঞান বিষয়েও তার অতগুলো গবেষণা নেই! তবে মেন্ডেলের এই উত্থান-পতন, নিয়োগ পরীক্ষায় বসা এবং দু’বার অকৃতকার্য হওয়া, আবহাওয়াবিদ্যার প্রতি হঠাৎ ঝোঁক তৈরি হবার সময়টাতেও তিনি একটি বিষয় সর্বদা ঠিক রেখেছেন। সেটি হচ্ছে বংশগতিবিদ্যা নিয়ে পড়ালেখা এবং গবেষণা। যদিও ধর্মযাজকের জীবনটা মেন্ডেল গ্রহণ করতে পারেননি, তথাপি তিনি আজীবন সেন্ট থমাস অ্যাবের সদস্য ছিলেন। ১৮৬৮ সালে তিনি এই আশ্রমের ‘অ্যাবট’ বা মঠাধ্যক্ষ হন। অ্যাবট হিসেবে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আশ্রমের এই অংশেই মটরশুঁটির গাছ রোপন করতেন মেন্ডেল; source: DNA Learning Center

অলোমুচে পড়ালেখা করার সময় গ্রেগর মেন্ডেল দুজন নামকরা অধ্যাপকের বন্ধু হয়েছিলেন। তার মধ্যে একজন হচ্ছেন পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ফ্রেডরিখ ফ্রাঞ্জ, যিনি মেন্ডেলকে আশ্রমে পড়ালেখা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। অন্যজন জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক কার্ল নেসলার যিনি মেন্ডেলকে বংশগতিবিদ্যার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিলেন। ১৮৬৬ সালে মেন্ডেল বংশগতি নিয়ে তার প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন যার পেছনে এই দুজন অধ্যাপকেরও অবদান ছিল। তবে মেন্ডেলের জন্য তার প্রথম গবেষণাটি মোটেই অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল না। কারণ তখনকার অনেক জীববিজ্ঞানী তার দীর্ঘ পর্যবেক্ষণলব্ধ গবেষণাপত্রটিকে ‘পাগলামি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন!

মেন্ডেল যখন তার প্রথম বংশগতি বিষয়ক গবেষণা প্রকাশ করেন, তখন প্রজনন বিষয়ক ‘সিলেক্টিভ ব্রিডিং’ নামক একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত ছিল। প্রজননের বিজ্ঞানীগণ বিশ্বাস করতেন, সকল অনাগত সন্তানের বৈশিষ্ট্য হবে তার পিতামাতার সম্মিলিত বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ! উদাহরণস্বরূপ, একটি অধিক মোটা গরু এবং অধিক দুগ্ধ প্রদানকারী গাভীর মধ্যে প্রজনন ঘটালে যে সন্তান আসবে তা অধিক মোটাও হবে এবং বেশি দুধও দিবে। এই ধারণা মোটেও পছন্দ ছিল না মেন্ডেলের। আর তিনি তাই প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করার মহাকঠিন কাজ শুরু করলেন। মেন্ডেল দেখলেন যে তার আশ্রমে মটরশুঁটি বেশ জনপ্রিয় এবং বাগানের একটা অংশে সারা বছরই মটরশুঁটি চাষ করা হচ্ছে। মটর গাছের এই সহজলভ্যতার জন্য তিনি একেই বেছে নিলেন গবেষণার জন্য। শুরু হলো তার ম্যারাথন গবেষণা। তিনি মটর গাছের সাতটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা শুরু করলেন। আট বছর যাবত পর্যবেক্ষণকালে তিনি প্রায় ৩০ হাজার মটর গাছ জন্মান!

এই সাতটি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করেন মেন্ডেল; source: Wikiwand

মেন্ডেলের এই দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা ছিল অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক। গবেষণার ফল সাতটি বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রেই অনুরূপ ছিল। এর মধ্যে একটি আলোচনা করলেই পাঠক ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন। তিনি প্রথমে কিছু বেগুনি রঙের ফুল বিশিষ্ট মটর গাছের সাথে কিছু সাদা রঙের ফুল বিশিষ্ট মটর গাছের পৃথকভাবে প্রজনন করান। ফলাফল প্রতিক্ষেত্রে একই হয়। প্রথম প্রজন্মের প্রতিটি গাছেই বেগুনি রঙের ফুল হয়। এরপর তিনি সেই বেগুনি রঙের ফুল বিশিষ্ট মটর গাছগুলোর মধ্যে প্রজনন ঘটালে দেখা যায় দ্বিতীয় প্রজন্মে পুনরায় কিছু সাদা ফুল বিশিষ্ট গাছ হয়েছে। এতে করে মেন্ডেলের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে বেগুনী রঙের ফুলগুলোর মধ্যে কিছু একটা আছে, যা পুনরায় সাদা রঙের ফুল জন্মাতে পারে। তাছাড়া তিনি এটাও নিশ্চিত হন, পিতামাতার বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ সন্তানের মধ্যে আসে না। অন্যদিকে দ্বিতীয় প্রজন্মের কতটি মটরগাছ সাদা ফুল বিশিষ্ট হবে, তা-ও হিসেব করে ফেলেন মেন্ডেল। দ্বিতীয় প্রজন্মের ২৫ ভাগ গাছে সাদা ফুল জন্মায়। তিনি বেগুনি রঙের বৈশিষ্ট্যকে ‘ডমিন্যান্ট’ বা প্রকট বৈশিষ্ট্য এবং সাদা রঙের বৈশিষ্ট্যকে ‘রিসিসিভ’ বা প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য নামকরণ করেন। তার এই গবেষণার প্রধান তিনটি সিদ্ধান্ত পাঠকের সুবিধার্থে উল্লেখ করছি।

  • পিতামাতার সাথে মিলে যাওয়া প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের জন্য তাদের দেহ থেকে সন্তানের দেহে কোনো ‘বিশেষ কিছু’ (জিন) অপরিবর্তিত ভাবে স্থানান্তরিত হয়। উল্লেখ্য, তখনও জিন আবিষ্কৃত হয়নি।
  • উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের জন্য সন্তান তার পিতামাতার কাছ থেকে সে বস্তুটি (জিন) একটি করে পায়।
  • পিতামাতার কোনো একটি বৈশিষ্ট্য সন্তানের মধ্যে না আসলেও, সে বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী বস্তুটি (জিন) তার মধ্যে থেকে যায়। ফলে তার পরের প্রজন্মে সে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ হতেও পারে।

বেগুনি আর সাদা রঙের ফুল বিশিষ্ট মটর গাছ নিয়ে মেন্ডেলের পর্যবেক্ষণ; source: Lumen Learning

আজকের এই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে বসে আমাদের পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব নয়, মেন্ডেলের এই গবেষণা তথা পর্যবেক্ষণ সে সময়ে কতটা যুগান্তকারী ছিল। পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেন মেন্ডেলের নীতিগুলো শুধু মটরশুঁটির জন্যই নয়, প্রায় সকল উদ্ভিদ, পশু-পাখি এমকি মানুষের ক্ষেত্রেও সত্য! ফলে এই সাধারণ বংশগতীয় ধারাগুলোকে নাম দেয়া হলো ‘মেন্ডেলীয় ইনহেরিটেন্স’। তবে এই ব্যাপারটি ঘটতে সময় লাগে ৩০ বছরেরও বেশি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রথমে তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কারে কর্ণপাত করার মতো খুব একটা কেউ ছিলেন না।

১৯০০ সালে বেশ কজন বিজ্ঞানী একত্রে বংশগতি বিষয়ক গবেষণায় দারুণ সব বিষয় খুঁজে পান। তবে সে আবিষ্কার তাদের কাছে আর বিস্ময় থাকেনি যখন তারা জানতে পারেন যে সেগুলো তাদের ৩৪ বছর আগে ১৮৬৬ সালে গ্রেগর মেন্ডেল নামে কেউ একজন আবিষ্কার করেছেন। তারা এই ভেবে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলেন যে এমন যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন যে ব্যক্তি তার সম্বন্ধে তারা জানতেনও না! কতটা অবহেলিত হয়েছিল মেন্ডেলের আবিষ্কার, ভাবা যায়? ১৯০০ সালে, মৃত্যুর ১৬ বছর পর যেন পুনর্জন্ম লাভ করলেন মেন্ডেল। জীববিজ্ঞানীরা তার কাজ নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন ভীষণ উৎসাহে।

রোনাল্ড ফিশার; source: 42Evolution

১৯৩৬ সালে এই উৎসাহী বিজ্ঞানীদের তালিকায় যুক্ত হলো বিখ্যাত প্রজননবিদ এবং পরিসংখ্যানবিদ রোনাল্ড ফিশারের নাম। তিনি মেন্ডেলের কাজগুলো দীর্ঘকাল অবহেলিত থাকার কারণ খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা চালিয়ে দেখেন যে, মেন্ডেলের সিদ্ধান্তগুলো এবং তার পর্যবেক্ষণের পরিসংখ্যানের মধ্যে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। মেন্ডেলের সিংহভাগ পরিসংখ্যানেই ভুল পাওয়া যায়। এ থেকে ফিশার অনুমান করেন যে মেন্ডেলের গবেষণাপত্রগুলো নিশ্চয়ই কেউ বদলে দিয়েছিলেন! ফিশার আরো বলেন যে, মেন্ডেলের পর্যবেক্ষণের তথ্য সম্বলিত প্রতি ২,০০০ কাগজের মধ্যে সর্বোচ্চ একটি প্রকৃত। বাকিগুলো মেন্ডেল বেঁচে থাকাকালীনই ভুল পরিসংখ্যানগত তথ্য সম্বলিত কাগজ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। সেগুলো তার সহযোগীরা করেছিলো বলেও সন্দেহ করা হয়। রোনাল্ড ফিশারের শুরু করা সেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আজ অবধি ডালপালা ছড়িয়ে চলেছে। সত্য হয়তো কখনোই জানা যাবে না। কিন্তু পরিসংখ্যানগত ভুল থাকলেও মেন্ডেলের তত্ত্বগুলো একদম নির্ভুল ছিল।

আর এক যুগের চেয়ে সামান্য বেশি সময় পরই তার কাজ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মাঝে তৈরি হতো কৌতূহল। তাকে নিয়ে শুরু হতো ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক। কিন্তু সেসব দেখার জন্য মেন্ডেল অপেক্ষা করেননি। ১৮৮৪ সালের ৬ জানুয়ারি ৬১ বছর বয়সে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়ে কোনোরূপ স্বীকৃতি ছাড়াই ধরাধাম ত্যাগ করেন এই মেধাবী বিজ্ঞানী। অবশ্য তার শেষটা আরেক দুর্ভাগা বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার মতো হয়নি। বরং যে স্বীকৃতি তিনি পাননি, সেটার জন্য তার তেমন মাথাব্যথাও ছিল না! তিনি যে ‘বংশগতি’ নামক বিজ্ঞানের এক নতুন ধারার শুরু করে দিয়ে যাচ্ছেন, সেই বিষয়টি তিনি নিজেই জানতেন না। বস্তুত আমৃত্যু তিনি সেন্ট থমাসে অ্যাবট পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং সে কাজ তিনি নিষ্ঠার সাথেই করেন। গবেষণা যা করার করেছিলেন অ্যাবট পদে উন্নীত হবার আগেই। এ পদে আসার পর তার বিজ্ঞান গবেষণা একরকম বন্ধই হয়ে যায়। তাই তার কাজের স্বীকৃতি কেউ দিলো কি দিলো না সে ব্যাপারে তিনি ছিলেন উদাসীন!

ফিচার ইমেজ- Special needs worker resume

Related Articles