Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

তারকাদের জানা-অজানা: কেট উইন্সলেট

কেট উইন্সলেট! নামটি শুনলেই মোহনীয় এক সুন্দরীর চেহারা মনের পর্দায় ভেসে ওঠে, তাই না? ঐ যে, টাইটানিক সিনেমার নায়িকা! যার নাম ছিল রোজ, আর তার প্রেমিকের নাম ছিল জ্যাক। হ্যাঁ, আমাদের অধিকাংশ দর্শকের সাথে এই সুন্দরীর প্রথম পরিচয় টাইটানিক সিনেমার মাধ্যমেই। কতজন তার রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়েছে, তার ইয়ত্তা আছে? পাতলা ঠোঁটের মিষ্টি হাসি হৃদয়ে কি দোলা দেয়নি? কিন্তু তার সম্পর্কে কতটুকু জানি আমরা? চলুন, জেনে নেয়া যাক।

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও ফিল্ম ন্ডাস্ট্রিতে যাত্রা

পুরো নাম: কেট এলিজাবেথ উইন্সলেট
ডাক নাম: ইংলিশ রোজ, করসেট কেট
জন্ম: ১৯৭৫ সালের ৫ অক্টোবর, ইংল্যান্ড
উচ্চতা: ৫ ফুট সাড়ে ৬ ইঞ্চি (১.৬৯ মিটার)

বাবা রজার উইন্সলেট ও মা স্যালি অ্যানি ব্রিজেস-উইন্সলেট দুজনেই মঞ্চে অভিনয় করতেন। নানা অলিভার আর নানী লিন্ডা ব্রিজেস চালাতেন রিডিং রেপার্টরি থিয়েটার। মামা রবার্ট ব্রিজেস চাকরি করতেন লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ড থিয়েটার ডিস্ট্রিক্টে। অর্থাৎ কেট উইন্সলেট এমন এক পরিবারে বেড়ে উঠেছেন, যেখানে নিয়মিত অভিনয় ও সংস্কৃতি চর্চা হয়েছে। পারিবারিকভাবে পাওয়া সহজাত প্রতিভার বলেই হয়তো মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম টিভি বিজ্ঞাপনে কাজ করেন কেট।

বাঁ পাশ থেকে; দুই বছর বয়সী ছোট্ট কেট ও টিনেজ বয়সে কেট; source: দ্য টেলিগ্রাফ

সেই সাথে অ্যাকাডেমিকভাবে অভিনয় শেখার জন্য ভর্তি হন হাইস্কুলের পারফর্মিং আর্টসে। পরবর্তী কয়েক বছর অভিনয়ের কলা-কৌশল রপ্ত করার পাশাপাশি নিয়মিত সেগুলোকে হাতে-কলমে প্রয়োগ করতে থাকেন বিভিন্ন সিটকমে অল্প-বিস্তর অভিনয় করার মাধ্যমে।

৬ বছর পর প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ পান হ্যাভেনলি ক্রিয়েচারস (১৯৯৪) নামের একটি সিনেমায়, যেখানে তাকে একজন খুনে কিশোরীর চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছিল। সিনেমাটি বক্স অফিসে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করতে না পারলেও, সমালোচকদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তবে তার অভিনয় দেখে এক সমালোচক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, কেট উইন্সলেট কোনোদিন বড় তারকা হতে পারবেন না।

কিন্তু কেটকে তখনও কেউ চেনে না বললেই চলে। তাই পরের বছর অডিশন দিলেন অ্যাং লি’র সেন্স অ্যান্ড সেন্সেবিলিটি (১৯৯৫) সিনেমার জন্য। নিজের অভিনয় নৈপুণ্যে অডিশনের সবাইকে হারিয়ে দিয়ে বগলদাবা করেন চরিত্রটি। শুধু তা-ই নয়, এই সিনেমা দিয়েই তিনি জিতে নেন ব্রিটিশ একাডেমি অ্যাওয়ার্ড। সাথে বাড়তি পাওনা হিসেবে মাত্র ২০ বছর বয়সেই পেয়ে যান সেরা পার্শ্ব-অভিনেত্রী হিসেবে অস্কারের মনোয়ন! এরপর তিনি জুড এবং হ্যামলেট নামের দুটো সিনেমায় কাজ করলেন ১৯৯৬ সালে।

১৯৯৭ সালে জেমস ক্যামেরনের পরিচালনায় অভিনয় করলেন বিশ্ববিখ্যাত সিনেমা টাইটানিক-এ। এই সিনেমা তাকে রাতারাতি আন্তর্জাতিক তারকা বানিয়ে দিল। মোহনীয় রূপ দিয়ে কোটি পুরুষের হৃদয় তো হরণ করলেনই, সেই সাথে সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে রোল মডেল হয়ে গেলেন তৎকালীন নারীদের কাছেও! দ্বিতীয়বারের মতো অস্কারের জন্য মনোনয়ন পেলেন কেট। অবশ্য এবার সেরা অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে। এত অল্প বয়সে অস্কারে দুটো মনোয়ন পেয়ে অনন্য এক কীর্তি গড়েছিলেন কেট।

টাইটানিকের সেই অবিস্মরণীয় দৃশ্যে কেট ও ডিক্যাপ্রিও; source: ew.com

রাতারাতি খ্যাতি পাওয়ার পরও তিনি স্টারডমে গা ভাসাননি। গুজব আছে, শেকসপিয়র ইন লাভ (১৯৯৮) ও অ্যানা অ্যান্ড দ্য কিং (১৯৯৯) এই সিনেমা দুটোতে তাকে অভিনয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কেট রাজি হননি। টিপিক্যাল নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করার চেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী ও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করার প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল এই অপ্সরীর।

ফলস্বরূপ, হিডিয়াস কিনকি (১৯৯৮) সিনেমায় তিনি একজন সিঙ্গেল মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। হলি স্মোক (১৯৯৯)-এ অভিনয় করেন কট্টরপন্থী চরিত্রে। দুটো সিনেমার কোনোটিই বিগ বাজেটের নয়, বক্স অফিসেও সাড়া ফেলেনি, কিন্তু কেট উইন্সলেট অভিনয় করে তৃপ্তি পেয়েছেন। বড় বড় সিনেমার অফার ফিরিয়ে দিয়ে এরকম লো বাজেটের সিনেমা করার ব্যাপারে কেট বলেন,

“আমি কখনও টাইটানিককে আমার ক্যারিয়ার গড়ার সিঁড়ি হিসেবে দেখিনি। বড় বড় সিনেমা করব, মোটা অংকের চেক নেব, এসব নিয়ে ভাবিনি কখনও। কারণ আমি জানি, এসব আমাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।”

হলিউডের গ্ল্যামারাস জীবন পায়ে ঠেলে কম বাজেটের সিনেমা কিংবা ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমায় কাজ করার পেছনে কারণ হিসেবে তিনি আরও জানান,

“প্রতিটা সিনেমা শেষ করার পর পরবর্তী সিনেমার ব্যাপারে আমার মাথায় থাকে, এবার আমাকে কতটা ভিন্নভাবে দেখা যাবে? চরিত্রটা কি আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং? আমাকে উজ্জীবিত করবে কি? অভিনয়কে আমি এখন যতটুকু ভালবাসি, তার চেয়ে আরও ভালবাসতে শেখাবে তো? কিন্তু হলিউডের বাইরে না এলে তা সম্ভব নয়। অনেকে ভাবেন, আমরা ইংল্যান্ডের বাসিন্দারা সবাই হলিউডের জন্য মুখিয়ে থাকি, ওখানেই থাকতে চাই। ভুল ধারণা এটা। কাজ ছাড়া নিউইয়র্কেও যেতে চাই না আমরা। আমি ইংল্যান্ডের মানুষ, ইংল্যান্ডেই সুখী এবং একজন ইংরেজ হিসেবে গর্ববোধ করি। আমি আমার কাজটাকে ভালোবাসি। কাজের স্বার্থে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতে পারে, কিন্তু দিনশেষে ইংল্যান্ডই আমার মাতৃভূমি।”

ইনিগমা সিনেমায় কেট; source: The New York Times

একে একে ব্যতিক্রমধর্মী সব চরিত্র রূপায়ণের মাধ্যমে এগিয়ে চলে কেট উইন্সলেটের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। অভিনয় করেন কুইলস (২০০০), ইনিগমা (২০০১), লাইফ অব ডেভিড গ্যাল (২০০৩) ইত্যাদি সিনেমায়।

পাশাপাশি কণ্ঠ দেন অ্যা ক্রিসমাস ক্যারল (২০০১) নামের অ্যানিমেটেড সিনেমায়, এখানে তার কণ্ঠে গাওয়া একটা গানও রয়েছে। ‘হোয়াট ইফ’ শিরোনামের গানটি ২০০১ সালের নভেম্বরে সিঙ্গেল ট্র্যাক হিসেবে মুক্তি দেওয়ামাত্র ইউরোপের টপ টেন হিট চার্টে জায়গা করে নেয়। সেই সাথে প্রথম স্থান দখল করে নেয় অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম এবং আয়ারল্যান্ডের মিউজিক চার্টে। শুধু তা-ই নয়, ২০০২ সালে ওজিএই সং কনটেস্টে পুরস্কার জিতে নেয় কেটের গানটি।

২০০৪ সালে কাজ করেন ইটারনাল সানশাইন অব দ্য স্পটলেস মাইন্ড সিনেমায়। বিখ্যাত অভিনেতা জিম ক্যারির সাথে তাকে দেখা যায় এই চলচ্চিত্রে। কেট এখানে এমন এক প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যে কিনা তার নিজের স্মৃতি থেকে সাবেক প্রেমিকের সব অংশ মুছে ফেলতে চায়। দুর্দান্ত কাহিনী, সাথে জিম ক্যারি ও কেটের অভিনয়ের বদৌলতে বক্স অফিসে সফলতা পাওয়ার পাশাপাশি সমালোচকদের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা পায় সিনেমাটি। আবারও অস্কারের জন্য মনোনয়ন পান কেট। মাত্র ২৯ বছর বয়সে মোটমাট চারবার অস্কারের জন্য মনোনয়ন! অস্কারের ইতিহাসে কেট উইন্সলেট গড়লেন এক কৃতিত্বময় রেকর্ড। এই সিনেমায় কেটের তুখোড় অভিনয়ের জন্য এটিকে পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১০০ অভিনয়ের তালিকায় (২০০৬) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড (২০০৪) সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন আরেক কিংবদন্তী অভিনেতা জনি ডেপের সাথে। তার ক্যারিয়ারে টাইটানিকের পর এই সিনেমা বক্স অফিসে সর্বোচ্চ সাফল্য লাভ করে।

ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড সিনেমায় কেট; source: aroundmovies.com

২০০৫ সালে বিবিসি/এইচবিওর কমেডি সিরিজ ‘এক্সট্রা’র এক পর্বে নিজেরই ব্যঙ্গাত্মক চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি! একই বছরে রোমান্স অ্যান্ড সিগারেটস নামের একটি মিউজিক্যাল রোমান্টিক সিনেমায় দুশ্চরিত্রার ভূমিকায় অভিনয় করেন কেট উইন্সলেট।

পর্দায় যা-ই হন না কেন, ব্যক্তিজীবনে কেট কিন্তু যথেষ্ট দায়িত্বশীল। মিসম্যাচ পয়েন্ট (২০০৫) নামের একটি সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি। কারণ, তিনি তার বাচ্চাকে যথেষ্ট সময় দিতে চেয়েছিলেন। এরপর ২০০৬ সালে অল দ্য কিং’স ম্যান নামের একটি সিনেমায় কাজ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সিনেমাটি বক্স অফিসে ফ্লপ হয়। সে বছর কেটকে আবার দেখা যায় ‘লিটল চিলড্রেন’ নামক সিনেমায়। এখানে একজন বোরিং স্ত্রীর চরিত্রে রূপদান করেন তিনি, যে কিনা এক বিবাহিত প্রতিবেশীর সাথে উন্মত্ত পরকীয়ায় লিপ্ত। ফলাফল, ৫ম বারের মতো অস্কার মনোয়ন এবং ব্রিটানিয়া অ্যাওয়ার্ড!

একই বছরে তার আরেকটি সিনেমা মুক্তি পায়, ‘দ্য হলিডে। এখানে তার সাথে ছিলেন নামী-দামী তারকারা, ক্যামেরন ডায়াজ, জুড ল, জ্যাক ব্ল্যাক প্রমুখ। এই সিনেমায় কেটের চরিত্র ছিল একজন ব্রিটিশ নারীর, যে এক আমেরিকান নারীর সাথে বাসা বদল করে।

সিনেমাটি সমালোচকদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেলেও, বক্স অফিস কাঁপিয়ে দেয়। কেট অভিনীত বিগত নয় বছরের সব সিনেমাকে অতিক্রম করে সবচেয়ে বেশি অর্থ আয় করে দ্য হলিডে। সিনেমায় কাজ করার পাশাপাশি ‘ফ্ল্যাশড অ্যাওয়ে (২০০৬) নামের অ্যানিমেটেড সিনেমায় এক ইঁদুরের চরিত্রে কণ্ঠ দেন কেট।

২০০৭ সালে পুনরায় জুঁটি বাধেন টাইটানিক সিনেমার নায়ক লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর সাথে, সিনেমার নাম ‘রেভল্যুশনারি রোড’। পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কেটের দ্বিতীয় স্বামী স্যাম মেন্ডিজ। এই সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জিতে নেন কেট। গ্লোডেন গ্লোবের জন্য মোট সাতবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন এই মেধাবী অভিনেত্রী।

সিনেমায় একটি অংশে কেট ও ক্যাপ্রিওকে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করতে হয়েছিলো। সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন কেটের স্বামী স্যাম মেন্ডিস! বিষয়টি নিয়ে ক্যাপ্রিও বলেন,

“খুব কঠিন সময় ছিল সেটা। কেট তো চিন্তায় অস্থির, ওর স্বামী স্যাম কী না কী ভাবছে, নিজের চোখের সামনে স্ত্রীকে এরকম দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে, তাই বিব্রতবোধ করছে কিনা! আমি ওকে বললাম, “আরে, এটা তো শুধুই অভিনয়।” কিন্তু কেট বলল- এটা সত্যি জঘন্য লাগছে।”

উল্লেখ্য, সিনেমার শুটিং শেষে লিও কেটকে একটা আংটি উপহার দিয়েছিলেন। যেটার ভেতরের অংশে কিছু একটা লেখা ছিল। আংটির ভেতরে কী লেখা ছিল সেটা আজও কেট কাউকে জানাননি।

২০০৮ সালে কেট অভিনয় করেন বিশেষ এক সিনেমায়, নাম ‘দ্য রিডার’। যদিও এই সিনেমায় কেটের চরিত্রটিতে প্রথমে প্রায় এক মাস শ্যুটিং করেছিলেন নিকোল কিডম্যান, কিন্তু পরবর্তীতে নিকোল গর্ভবতী হয়ে পড়লে কাজটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এদিকে দ্য রিডারের জন্য প্রথম থেকেই পরিচালকের পছন্দ ছিলেন কেট উইন্সলেট। কিন্তু কেট তখন রেভল্যুশনারি রোডের শুটিংয়ে ব্যস্ত, শিডিউল মেলাতে পারছিলেন না। তবে ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন! কিডম্যান অভিনয়ে অপারগ হওয়ায় শেষমেশ দ্য রিডারে একজন জার্মান এসএস গার্ডের চরিত্রে কেটই অভিনয় করেন। বরাবরের মতো এবারও পেয়ে যান অস্কারের মনোনয়ন; ৬ষ্ঠ বার! তবে এবার শুধু মনোনয়ন পেয়েই ক্ষান্ত দেননি। অস্কারের আরাধ্য পুরস্কারটি বগলদাবা করে নেন তিনি। সাথে ঝুলিতে তোলেন বাফটা পুরস্কার, গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার!

অস্কার হাতে কেট; source: ডেইলি নিউজ

কেটকে তারপর দেখা যায় ২০১১ সালে। এইচবিওর ‘মিল্ডরেড পিয়ার্স নামক একটি মিনি সিরিজে, একজন ডিভোর্স হওয়া মায়ের চরিত্রে। সেখানে তিনি স্বামীর কাছ থেকে মেয়েকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর নতুন এক পুরুষের প্রেমে পড়েন। মেয়ে, নতুন প্রেম সব মিলিয়ে টানাপোড়েনময় পরিস্থিতি। বড় পর্দায় পুরস্কার পাওয়াটা ততদিনে ডালভাত হয়ে গেছে কেট উইন্সলেটের জন্য। সেই ধারা বজায় থাকলো ছোটপর্দাতেও। এখানে অভিনয় করে টিভি স্ক্রিনের তিনটি বাঘা বাঘা পুরস্কার বাগিয়ে নেন তিনি!

একই বছর অভিনয় করেন একজন এপিডেমিক ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস অফিসারের চরিত্রে, ‘কনটাজিওন নামের সিনেমায়। কেট অভিনীত ‘কার্নেজ’ নামের একটি সিনেমাও মুক্তি পায় সেবছর। কার্নেজের জন্য হলিউড ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কারের জন্য মনোয়ন পান তিনি।

২০১২ সালে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী একটি কাজ করেন কেট। Thérèse Raquin নামের একটি উপন্যাসের অডিওবুকে নিজের কণ্ঠ দেন। শ্রুতিমধুর কণ্ঠ দিয়ে শ্রোতা-পাঠকদের বুঁদ করে ভূয়সী প্রশংসা পান তিনি।

২০১৩ সালে তার প্রথম যে সিনেমা মুক্তি পায়, তার নাম ‘মুভি ৪৩। খুব স্বাভাবিকভাবেই, এই সিনেমাটিও অদ্ভুত কাহিনীর। ব্ল্যাক কমেডি জনরার সিনেমাটিতে মোট ১৪টি ভিন্ন গল্প আছে। আর গল্পগুলো পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ১৪ জন ভিন্ন ভিন্ন পরিচালক! হিউ জ্যাকম্যানের বিপরীতে ‘দ্য ক্যাচ’ নামের গল্পে অভিনয় করেন কেট উইন্সলেট। একই বছর তাকে আবার দেখা যায় ‘দ্য লেবার নামের সিনেমায়। কেট এবার ছিলেন ১৩ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তানের সিঙ্গেল মায়ের চরিত্রে। দুর্দান্ত অভিনয়ের ফলস্বরূপ ১০ম বারের মতো গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডের মনোয়ন পান তিনি।

২০১৪ সালে তিনি বড়পর্দায় আসেন হালের ক্রেজ ডাইভারজেন্ট ট্রিলজির প্রথম সিনেমা ‘ডাইভারজেন্ট-এ। এখানে তাকে প্রথমবারের মতো নেগেটিভ তথা ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়।

ডাইভারজেন্ট সিরিজে ভিলেন চরিত্রে কেট; source: Hero Complex – Los Angeles Times

কেট ভিলেন হিসেবে কেট এতোটাই কাঁপিয়ে দিয়েছেন যে, তাকে হিটলারের সাথে তুলনা করা হয়েছিল! এরকম নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করার ব্যাপারে কেট জানান, “পুরো বিষয়টা আমার মাথায় ঘুরছিল। আমি এর আগে কখনও নেগেটিভ রোলে অভিনয় করিনি। প্রস্তাবটা পেয়ে চমকে গিয়েছিলাম।

একই বছর তিনি অভিনয় করেন পিরিয়ড ড্রামা ‘অ্যা লিটল ক্যাওস’-এ। আবার কণ্ঠ দেন অডিওবুকে, এবার ‘মাটিলডা নামের শিশুতোষ উপন্যাস। খুব দরদ দিয়ে কাজটি করার ফলও পেয়েছেন, জিতেছেন ওডেসি অ্যাওয়ার্ড।

সাল ২০১৫, ডাইভারজেন্ট সিরিজের দ্বিতীয় সিনেমা ‘ইনসারজেন্ট’-এ আবার ভিলেন চরিত্রে কেট হাজির। নায়িকা হিসেবে তিনি যতটা লাস্যময়ী, ভিলেন হিসেবে ততটাই ভয়ঙ্কর ও নিষ্ঠুর। দর্শকদের রীতিমতো তাক লাগিয়ে ছেড়েছেন। বলা বাহুল্য, সিরিজের প্রথম সিনেমার মতো এটিও বক্স অফিসে হিট করে। তারপর তাকে দেখা যায় ‘দ্য ড্রেসমেকার’ সিনেমায়। সুনিপুণ অভিনয়ের গুণে যা হওয়ার তা-ই হলো। জিতে নিলেন এএসিটিএ অ্যাওয়ার্ড!

‘স্টিভ জবস, ২০১৫ সালে কেটের শেষ সিনেমা। এখানে কেটের চরিত্র ছিল স্টিভ জবসের ডান হাত হিসেবে একজন বিত্তশালী কর্পোরেট নারী ভূমিকায়। পোলিশ উচ্চারণ আর কড়া মেকআপে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দর্শকদের সামনে হাজির হয়ে চমকে দেন কেট। সমালোচকরাও ভূয়সী প্রশংসা করেন কেটের এমন দুর্দান্ত রূপান্তর ক্ষমতা দেখে। আর যায় কোথায়? পেয়ে গেলেন স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড ও অস্কারের মনোয়ন, ৭ম বারের মতো! সাথে জিতে নেন গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড ও বাফটা পুরস্কার।

গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার হাতে কেট; source: vanityfair.com

২০১৬ সালে কেটের দুটো সিনেমা মুক্তি পায়। ‘ট্রিপল ৯ এবং ‘কোল্যাটেরাল বিউটি। ট্রিপল ৯-এর জন্য প্রশংসা পেলেও কোল্যাটেরাল বিউটির জন্য সমালোচকদের মৃদু ভর্ৎসনা শুনতে হয় কেটকে।

এ বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে কেটের দুটো সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। ১৯৫০ সালের সেটআপে কনি আইল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে সিনেমা ‘ওয়ান্ডার হুইল। আরেকটি হচ্ছে রোমান্টিক-ডিজাস্টার সিনেমা ‘দ্য মাউন্টেন বিটুইন আজ’। এছাড়াও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একজন আমেরিকান ফ্যাশন মডেল, শিল্পীর জীবনীর উপর নির্মিত সিনেমায়ও কেট কাজ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৯১ সালে ‘ডার্ক সিজন নামের একটি টিভি সিরিজের সেটে কেটের সাথে অভিনেতা ও লেখক স্টিফেন ট্রেডরের দেখা হয়। সেখান থেকে প্রেমে পড়েন দুজন। প্রায় সাড়ে চার বছর তাদের সম্পর্ক টিকে ছিল। তবে ১৯৯৫ সালে তাদের ব্রেকআপ হওয়ার পরও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন তারা। টাইটানিক যখন মুক্তি পায়, সে সপ্তাহেই হাড়ের ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুবরণ করেন স্টিফেন। তার শেষকৃত্যে অংশ নিতে গিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসে টাইটানিকের প্রিমিয়ার শোতে উপস্থিত হতে কেট দেরি করে ফেলেছিলেন।

১৯৯৮ সালে ২২ নভেম্বর সহকারি পরিচালক জিম থ্রিয়েপ্লেটনকে বিয়ে করেন কেট। ১৯৯৭ সালে ‘হিডিয়াস কিনকি সিনেমায় কাজ করার সময় কেট ও জিম পরস্পরের সাথে পরিচিত হন। জিম সেই সিনেমায় সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করছিলেন আর কেট ছিলেন অভিনেত্রী। তাদের ঘরে ২০০০ সালের ১২ অক্টোবর মিয়া হানি থ্রিয়েপ্লেটন নামের এক কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। অতঃপর ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর এই দম্পতি ডিভোর্সের মাধ্যমে তাদের সংসার জীবনের ইতি টানেন।

লন্ডনে এক বক্তৃতায় কেট; source: Vanity Fair

ডিভোর্সের পর ২০০১ সালেই পরিচালক স্যাম মেন্ডিসের সাথে প্রেমে জড়ান কেট। তাদের বিয়ে হয় ২০০৩ সালে ২৪ মে, অ্যাঙ্গুলিয়ার এক দ্বীপে। ২০০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে জো আলফি উইন্সলেট মেন্ডিস নামের এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন এই দম্পতি। কেটের প্রথম সন্তান মিয়ার জন্ম হয়েছিল সিজারিয়ান পদ্ধতিতে। কিন্তু কেট তাতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তার মনে হচ্ছিল, তিনি মাতৃত্বের স্বাদটা ঠিকভাবে পাননি। তাই পরবর্তীতে দ্বিতীয় সন্তান জো-এর জন্মের সময় তিনি সাধারণ পদ্ধতিতে সন্তান প্রসব করেন।

উইন্সলেট ও মেন্ডিস সেপারেশন ঘোষণা করেন ২০১০ সালের মার্চে এবং পরবর্তীতে ২০১১ সালে ডিভোর্সের মাধ্যমে সম্পর্কের ইতি টানেন।

বাঁ পাশ থেকে প্রথম স্বামী জিম, দ্বিতীয় স্বামী স্যাম ও তৃতীয় স্বামী নেড-এর সাথে কেট; source: হ্যালো ম্যাগাজিন

২০১১ সালের আগস্টে ঘটে যায় এক দুর্ঘটনা। কেট উইন্সলেট নেকার আইল্যান্ডের যে বাড়িতে তার সন্তান-সন্ততি ও তৎকালীন বয়ফ্রেন্ড মডেল লুইস ডৌলারকে নিয়ে থাকতেন, সেটিতে আগুন ধরে যায়। আগুনের ফলে বাড়ির বেশ ক্ষয়ক্ষতি হলেও সবাই অক্ষত ছিলেন। একই মাসে এক ছুটির দিনে নেকার আইল্যান্ডে নেড রকনরোলের সাথে দেখা হয় কেট উইন্সলেটের। ডেটিং করতে শুরু করেন তারা। নেড রকনরোল এর আগে এলিজা পিয়ারসনকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের একটি মেয়েও আছে। যা-ই হোক, ২০১২ সালের গ্রীষ্মে তাদের বাগদান ও ডিসেম্বরে তাদের বিয়ে হয়। ২০১৩ সালের ৭ ডিসেম্বর বিয়ার ব্লেজ উইন্সলেট নামের একটি ছেলে হয় তাদের।

ফিচার ইমেজ- PK Baseline

Related Articles