Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মন্দাকিনী ও দাউদ ইব্রাহীম: একটি ফটোগ্রাফ, সারাজীবনের কান্না

বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া এক উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। আশির দশকে দাপটের সাথে রাজত্ব করেছেন বলিউড জগতে। অভিনয়ের চেয়ে বরং অসাধারণ দেহসৌষ্ঠবের জন্য তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন অল্পদিনেই। যার উজ্জ্বল ক্যারিয়ার নিয়ে আশায় বুক বাঁধছিলেন ভক্তকূল, তারাই এখন তার নামের আগে ‘প্রাক্তন’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ‘আসলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ স্টাইলে বলিউডে পা রাখা এই নায়িকা ‘ফেঁসে গেলাম, স্ক্যান্ডালে জড়ালাম, বিদায় নিলাম’ স্টাইলে বলিউড ত্যাগ করতে বাধ্য হন। বলা হচ্ছিল হাজারো যুবকের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়া নায়িকা মন্দাকিনীর কথা। আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন দাউদ ইব্রাহীমের সাথে প্রকাশিত একটি ফটোগ্রাফ ধ্বংস করে দেয় যার ক্যারিয়ার।

১৯৬৩ সালের ৩০ জুলাই উত্তর প্রদেশের মিরুতে এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবারে জন্ম নেন ইয়াসমিন জোসেফ। পিতা জোসেফ অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, মা ছিলেন মুসলিম। বেড়ে ওঠেন দক্ষিণ মুম্বাইয়ের অ্যান্টপ হিলে। মাত্র ষোল বছর বয়সে বলিউডে পদার্পণ করেন তিনি। দর্শকদের মন কেড়ে নেন ইয়াসমিন জোসেফ, রূপালি জগতে সবাই যাকে চেনে ‘মন্দাকিনী’ নামে। তার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায়নি। মিরুতের অখ্যাত বালিকা ইয়াসমিন বলিউডে পা রাখার পর রঞ্জিত ভার্কের সাথে দেখা হওয়ার আগপর্যন্ত অন্তত তিনজন চলচ্চিত্র নির্মাতার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হন। রঞ্জিত ইয়াসমিনের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘মাধুরী’। ‘মজলুম’ সিনেমার জন্য তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এই নায়িকা।

এই সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার আগেই তৎকালীন মাধুরীকে নতুন করে আবিষ্কার করেন রাজ কাপুর। তখন তার বয়স বাইশ বছর। তিনি ইয়াসমিন কিংবা মাধুরীর নাম বদলে নতুন নাম রাখেন ‘মন্দাকিনী’। ‘রাম তেরি গঙ্গা মাইলি’ চলচ্চিত্রে রাজ কাপুর তার ছোট ছেলে রাজীব কাপুরের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে অভিষিক্ত করেন মন্দাকিনীকে। ব্লকবাস্টার হিট হয় মুভিটি, এই মুভির জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ারের মনোনয়নও পান তিনি। সাদা স্বচ্ছ শাড়ি পরে ঝর্ণার পানিতে ভিজে নেচে আর শিশুকে স্তন্যদানের একটি দৃশ্যে অভিনয় করে রাতারাতি পরিণত হন ‘টক অফ দ্য টাউনে’।

মিষ্টি মেয়ে মন্দাকিনী; Source: hdwallpapers88.com

এক ‘রাম তেরি গঙ্গা মাইলি’ ছবির সাফল্য দিয়েই অনিল কাপুর, গোবিন্দ, সঞ্জয় দত্ত, মিঠুন চক্রবর্তীদের মতো নামকরা তারকাদের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান মন্দাকিনী। অভিনয়ে দক্ষতার চেয়ে বরং অপূর্ব দেহপল্লব দেখিয়ে একের পর এক ছবি সাইন করছিলেন মন্দাকিনী, আর চলচ্চিত্র নির্মাতারা ভারি করছিলেন নিজেদের পকেট। কেবল মন্দাকিনীকে দেখার জন্যই যুবকেরা ভিড় জমাতে লাগল সিনেমা হলে। মন্দাকিনীকেও তরুণদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যরূপে পর্দায় হাজির করতে লাগলেন নির্মাতারা। মিঠুন চক্রবর্তীর সাথে ‘পরম ধর্ম’ আর অনিল কাপুরের সাথে ‘তেজাব’ সিনেমায় মন্দাকিনীকে উপস্থাপন করা হয় বিকিনিতে।

মন্দাকিনীর ক্যারিয়ার তখন তুঙ্গে, ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি তার একটি ভুল পদক্ষেপ বদলে দিতে পারে তার জীবনের গতিপথ। ১৯৯৪ সালে ভারতের প্রধান সব জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয় এক পুরুষের পাশে বসা মন্দাকিনীর একটি ছবি। পুরুষটি মন্দাকিনীর কোনো ভক্ত নয় যে তার প্রিয় তারকার সাথে একটি ছবি তুলতে স্টেডিয়ামে হাজির হয়ে গিয়েছে। ছবিটি এতো বিখ্যাত হওয়ার প্রধান কারণ, ছবিটি যার সাথে তোলা হয়েছিল তিনি স্বয়ং মাফিয়া সম্রাট দাউদ ইব্রাহীম! এখানে দাউদ ও মন্দাকিনীকে বেশ ঘনিষ্ঠরূপে আবিষ্কার করে ভক্তরা। অন্য কোনো সময় হলে হয়তো ছবিটি নিয়ে মন্দাকিনীকে এতো আলোচনা-সমালোচনার শিকার হতে হতো না। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে খ্যাতনামা বলিউড তারকাদের সাথে দাউদ ইব্রাহীম ছবি তুলবে এটা যেন অনেকটা অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৩ সালের ভয়াবহ মুম্বাই হামলার পর ভারত জুড়ে দাউদের বিপক্ষে তীব্র ঘৃণা ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। আর ঠিক সেই সময় এমন একটি ছবি ছাপা হওয়ার পর দাউদ ও মন্দাকিনীকে ঘিরে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। মন্দাকিনীকে দাউদের রক্ষিতা হিসেবে আখ্যা দিতেও ছাড়েননি অনেকে।

এরপর থেকেই সূচনা হয় মন্দাকিনীর জীবনের কালো অধ্যায়ের। পুলিশ আর সাংবাদিকরা মিলে তার ব্যক্তিগত জীবনকে একপ্রকার নরক বানিয়ে তোলে। এতসব কানাঘুষার মাঝে পুলিশ আবিষ্কার করে আরেক চমকপ্রদ তথ্য। মুম্বাই পুলিশ যখন দাউদকে ধরার জন্য মরিয়া হয়ে ঘুরছে, দেশের ভেতর দাউদের যেখানে যত সম্পত্তি আছে, সবকিছুতে চিরুনি অভিযান চালাতে শুরু করে তারা। এমন সময় মুম্বাই পুলিশের কাছে খবর আসে ব্যাঙ্গালোরের উপকণ্ঠে দাউদের অর্থায়নে একটি বিশাল বাগানবাড়ি তৈরি হচ্ছে। মুম্বাই পুলিশের অনুরোধে ব্যাঙ্গালোর পুলিশ সেখানে হানা দিয়ে জানতে পারে, নির্মাণাধীন সম্পত্তির মালিকানা লেখা মন্দাকিনীর নামে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তে মোটেও সময় লাগল না। মুহূর্তেই পত্রিকাগুলোর প্রধান শিরোনাম হয়ে দাঁড়ায় দাউদ মন্দাকিনীর সম্পর্ক।

এই সেই কুখ্যাত ফটোগ্রাফ! Source: amazonaws.com

পত্রিকাগুলোর বিনোদন পাতায় আসতে থাকে একের পর এক প্রশ্ন। দাউদ ও মন্দাকিনীর মধ্যে আসলে কী চলছে? কীভাবে দাউদের সাথে সম্পর্কে জড়ালেন মন্দাকিনী? অন্য কোনো নায়িকাকেও কি এমন ফাঁদে ফেলেছেন দাউদ? এরকম হাজারো প্রশ্ন ছুটে আসতে থাকে। বলতে গেলে মন্দাকিনীর ক্যারিয়ারে তখন একরকমের বিদায় ঘণ্টাই বাজতে শুরু করেছে। আত্মরক্ষার্থে মন্দাকিনী তখন বোরকা পরে বাইরে বের হন। এসব নিয়েও জনমনে প্রশ্নের কোনো অভাব নেই। মন্দাকিনী কেন ব্যাঙ্গালোরে একাকী নির্বাসনে থাকেন, কেন তিনি বোরকা পরেন, এরকম অজস্র প্রশ্নের জন্ম দেয় ম্যাগাজিনগুলো। এদিকে মন্দাকিনী পড়ে যান ফ্যাসাদে। তিনি বারবার জানান, দাউদের সাথে তার কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই। দাউদের সাথে কোনো প্রকার প্রেমের সম্পর্ক নেই বলেও জানান তিনি। কিন্তু পুলিশের হাতে তথ্য-প্রমাণ থাকায় মন্দাকিনীকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়।

মন্দাকিনীর জীবনে তখন ঘোরতর বিপদ আসতে যাচ্ছে বলেই মেনে নিয়েছিল ভক্তরা। কিন্তু খুবই আশ্চর্যজনকভাবে তাকে বেকসুর খালাস দিয়ে দেয় মুম্বাই পুলিশ। কোনো প্রকার কারণ দর্শানো হয়নি, তাকে আর কোনো জেরাও করা হয়নি। এখানেও পাওয়া যায় আরেক রহস্যের গন্ধ। মন্দাকিনীকে পুলিশ এমনি এমনি ছেড়ে দিল কেন? এখানেও কি ভেতর থেকে কোনো কলকাঠি নেড়েছেন দাউদ ইব্রাহিম? এরকম অসংখ্য প্রশ্ন থাকলেও উত্তর মেলেনি তার কোনোটিরই। মন্দাকিনী ছাড়া পান, কিন্তু তার ক্যারিয়ার আর গতি পায় না। ১৯৯৫ সালে করা ‘জোরদার’ মুভিটিই তাই তার জীবনের শেষ সিনেমা। এরপর ঘটে আরেক ঘটনা। ১৯৯৫ সালেই খবর বের হয় মন্দাকিনী গর্ভবতী। মন্দাকিনী যতই দাবি করুন এই সন্তান দাউদের নয়, লোকমুখে সন্তানটি দাউদের বলেই স্বীকৃতি পেয়ে যায়। লজ্জায় অপমানে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন মন্দাকিনী।

এই ঘটনার পর বেশ কিছুদিন কোনো খবর ছিল না মন্দাকিনীর। কয়েক বছর পর পার হয়ে গেলে খবর পাওয়া যায় জীবনে শান্তি খুঁজে পেতে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন মন্দাকিনী। দালাইলামার এক অনুসারীর সাথে বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হয়েছেন মন্দাকিনী। একসময়কার পর্দা কাঁপানো মন্দাকিনী এখন জীবন কাটাচ্ছেন তিব্বতিদের যোগব্যায়াম শিখিয়ে। এই তো গেলো মুদ্রার এক পিঠের গল্প। এত অভিযোগের তীর যে মন্দাকিনীর দিকে, তারও বলার কিছু থাকতে পারে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে ২০০৫ সালে মন্দাকিনীর একটি সাক্ষাৎকার নেন নিনা ওয়ালিয়া। পাঠকদের জন্য সেই অংশটুকু এখানে অনুবাদ করে দেয়া হলো।

আমি যে দাউদ ইব্রাহীমের রক্ষিতা ছিলাম এই পুরনো আর বস্তাপচা গল্পটি কেন আমার পিছু ছাড়ছে না? আমি এগুলো ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আর কতবার আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হবে? দাউদ ইব্রাহীমের সাথে আমার কোনো রকমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল না, কখনোই না। প্রায় দশ বছর আগে দাউদের সাথে আমার একটি ছবি প্রায় সব সংবাদপত্রে ঢালাওভাবে ছাপানো হয়।

সেসময়ে আমি প্রায়ই দেশের বাইরে যেতাম, শো থাকতো আমার। আমি যেখানে পারফর্ম করছিলাম, দুবাইয়ের সে জায়গাটিতে আসে দাউদ। আমাদের দেখা হয়, কথা হয়। আমি আর দশজন ফিল্মস্টারের মতোই ছিলাম। আমাদের মধ্যে আর কিছুই ছিল না।

১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে দাউদের সাথে আমার ছবিটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই আমার জীবন পুরোপুরি বদলে যায়। একের পর এক প্রতিবেদন আসতে থাকে আমি নাকি দাউদকে বিয়ে করেছি, তার ঔরসে আমার একটি ছেলেও নাকি আছে। কেউ কেউ তো লিখেছেন আমি নাকি দুবাইয়ে তার সাথে সংসার পেতে বসেছি! একটি কথাও সত্যি না। আমার দশ বছরের একটি ছেলে আছে ঠিকই, তবে সে আমার এবং আমার স্বামী আর ঠাকুরের ভালোবাসার ফসল। আর ঠাকুর মুম্বাইয়ের একজন ডাক্তার। ১৯৯০ সালে বিয়ে হয় আমাদের। এটাকে ভালোবেসে করা পারিবারিক বিয়ে বলা যেতে পারে। বিয়ের পর থেকে আমি মুম্বাইয়েই আছি।

মন্দাকিনী এখন; Source: ytimg.com

আজ এতো বছর পরেও আমি দাউদের কথা কেন বলছি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। আমি চাই না আমার ভক্তরা ভাবুক আমি আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে কোনোভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম। লোকে এখনো আমাকে আর দাউদকে নিয়ে অসংখ্য ‘স্ক্যান্ডালের’ কথা বলে। আমার ছোট একটা বাচ্চা আছে। তাকে আমার সুরক্ষা দিতেই হবে। আমার পরিবারের প্রত্যেকেই এই নোংরামিগুলোতে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছে। আমি চাই না আমার ছেলেও এসব শুনে ভুল একটা ধারণা নিয়ে বড় হোক।

আসলে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমি একবারও অস্বীকার করছি না যে দাউদকে আমি চিনি বা তার সাথে আমার দেখা হয়েছে। কিন্তু আমি তার রক্ষিতা নই। এটাই এখন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যি। বলিউডের সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগ নেই। আমি একজন সাধারণ গৃহবধূ। যখন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতাম তখন সেখানকার বেশকিছু বন্ধু-বান্ধব ছিল আমার, এখন আর নেই। আমি বাইরেও তেমন একটা যাই না, কারো সাথে দেখাও করি না।

সিনেমার জগতটা বেশ ভালো লাগত আমার। কিন্তু যখন টের পেলাম সময়টা আমার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, আমি বুঝতে পেরেছিলাম বিদায় নেয়ার এখনই সঠিক সময়। ‘রাম তেরি গঙ্গা মাইলি’ করার পর আমি মিঠুনের সাথে ‘ড্যান্স ড্যান্স’ করি, গোবিন্দর সাথে ‘পেয়ার কারকে দেখো’তে অভিনয় করি। ‘তেজাবে’ আমাকে অতিথি শিল্পী হিসেবে দেখানো হয়। তারপর আমি গান গাওয়া শুরু করি। দুটি অ্যালবাম বের হয় আমার- ‘নো ভ্যাকেন্সি’ আর ‘শাম্বালা’। কিন্তু সেগুলোও খুব বেশি ব্যবসাসফল হয়নি। ধীরে ধীরে গ্ল্যামারের এই দুনিয়াটা থেকে বের হয়ে আসি আমি।

প্রায় মাস তিনেক পর পর আমাকে আর দাউদকে নিয়ে পত্রিকায় কিছু না কিছু প্রকাশিত হয়। আমি সত্যিই এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো সাধারণ একটি জীবনযাপন করতে চাই, স্ত্রী আর মা হিসেবে পরিবারের সদস্যদের সাথে থাকতে চাই। আমি আর এই স্ক্যান্ডালগুলো নিতে পারছি না।

তথ্যসূত্র: Dongri to Dubai: Six Decades of the Mumbai Mafia by S. Hussain Zaidi, August 10, 2012. Roli Books, India

ফিচার ইমেজঃ scoopwhoop.com

Related Articles