Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রুশিয়া থেকে জার্মানি (পর্ব-৪৯): ব্যাটল অফ কনিগ্রেটজ

অস্ট্রিয়া আর প্রুশিয়া দুই পক্ষই বোহেমিয়াকে বেছে নিল তাদের চূড়ান্ত মোকাবেলার জন্য। প্রুশিয়ান সেকেন্ড আর্মি সিলিসিয়া থেকে আর বাকি দুই সেনাদল স্যাক্সোনি থেকে বোহেমিয়ার দিকে নজর ফেরাল। বোহেমিয়া প্রাকৃতিকভাবে চারদিক থেকে পাহাড়-পর্বত দিয়ে ঘেরা আর জঙ্গলে ছাওয়া। এর মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে এল্বা নদী।

প্রুশিয়া, বোহেমিয়া ও জার্মান কনফেডারেশন; image source: tacitus.nu

সিলিসিয়া আর বোহেমিয়ার সীমান্তে রাইখেনবার্গ পর্বতমালা (জায়ান্ট মাউন্টেইনস)। এদিক থেকে বোহেমিয়াতে প্রবেশ করবার জন্য পাঁচটি পাহাড়ি গিরিপথ আছে: ট্রেটনাউ, আইপেল, কস্টেলেটজ, নাশোদ আর নেস্টাড। স্যাক্সোনি আর বোহেমিয়ার সীমান্তে এর্জেবার্গ পর্বত (আয়রন মাউন্টেইনস)। এখান দিয়ে আসতে হলে গিরিপথ তিনটি- রাইখেনবার্গ, গ্যাবেল আর কনিগস্টেইন-টেশেন।এখান দিয়ে যে-ই আসবে তাকে আইজার নদী পার হতে হবে।    

প্রুশিয়ান অগ্রাভিযান

আর্মি অফ এল্বা ২০ জুন ড্রেসডেন থেকে আর ২২ জুন ফার্স্ট আর্মি পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে রওনা দেয়। ২৫ জুন দুই বাহিনীই রাইখেনবার্গের কাছে একে অপরের বার মাইলের মধ্যে এসে পৌঁছে। সেকেন্ড আর্মির জন্য যাত্রাপথ সহজ ছিল না। কারণ বেনেডেকের নেতৃত্বে মূল অস্ট্রিয়ান বাহিনী তাদের রাস্তা বন্ধ করে বসে আছে। সুতরাং পাহাড়ি গিরিপথের বিপদজনক রাস্তা ধরে পার হতে শত্রুকে ধোঁকা দেয়ার প্রয়োজন হবে। একইসাথে নির্ভর করতে হবে ফ্রেডেরিক চার্লসের উপর, কারণ তিনি আইজারের ধারে ক্ল্যাম-গ্যালাসকে ব্যতিব্যস্ত করে তুললে স্বাভাবিকভাবেই বেনেডেক বাধ্য হবেন অতিরিক্ত সেনা সেদিকে পাঠিয়ে দিতে।    

প্রুশিয়ান তিন বাহিনীর যাত্রাপথ; image source: battlefieldanomalies.com

ক্রাউন প্রিন্স ফ্রেডেরিক তার সেনাদের কয়েকটি দলে ভাগ করে দিলেন। একদল অস্ট্রিয়ান অধিকৃত অল্মুটজ এলাকার দিকে চলে গেল তাদের বিভ্রান্ত করার জন্য। সেখানে অস্ট্রিয়ান অশ্বারোহীদের সাথে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ শেষে তারা গ্লাতয আর প্যাশকাউ শহরে চলে যায়। অল্মুটজ প্রতিরক্ষার জন্য বেনেডেক দুটি কর্পস প্রেরণ করলে তার সাথে চারটি কর্পস অবশিষ্ট থাকে। আরেকদল প্রুশিয়ান সেনা অস্ট্রিয়ান সিলিসিয়ার দিকে ঘাঁটি করল। এখানে যুদ্ধের বাকি সময় খণ্ড খণ্ড কিছু লড়াই হলেও বলার মতো কোনো জয় অস্ট্রিয়ানরা লাভ করেনি।  

২৬ জুন আর্মি অফ এল্বা অস্ট্রিয়ানদের কয়েকটি সীমান্ত চৌকির দেখা পায়। তাদের হামলায় অস্ট্রিয়ানরা পালিয়ে গেল। ফার্স্ট আর্মির জেনারেল ভন হর্নের সাথে লিবনাউ গ্রামে অস্ট্রিয়ানদের লড়াইয়ের পর তারা আইজারের সেতু অতিক্রম করে সরে যায় পোডল শহরের দিকে।

প্রুশিয়ার একদল সেনা সন্ধ্যার দিকে পোডলের সেতু বরাবর হামলা করে। প্রথমে ক্ল্যাম-গ্যালাস তাদের পিছু হটতে বাধ্য করলেও শীঘ্রই আরো সৈন্য প্রুশিয়ানদের সাথে মিলিত হলো। ক্ল্যাম-গ্যালাস এবার তার সৈনিকদের বেয়োনেট চার্জের আদেশ দিলেন। কিন্তু প্রুশিয়ান ড্রেইস বন্দুকের প্রচন্ড আঘাতে অস্ট্রিয়ানদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। টানা ত্রিশ মিনিট ড্রেইসের গুলি চলার পর অস্ট্রিয়ান চার্জ ভেঙে পড়ে। তারা শহরে ফিরে গেলে প্রুশিয়ানরা পিছু নেয়।

রাতের অন্ধকারে শহরে বিজলির মতো বন্দুকের স্ফুলিঙ্গ চমকাতে থাকল। প্রুশিয়ানদের ক্রমাগত আঘাতে পর্যুদস্ত ক্ল্যাম-গ্যালাস রাত দুটোর দিকে ৫০০ সেনা ফেলে বাকি ২,৫০০ জন নিয়ে পিছিয়ে গেলেন মুশেনগ্রাটজে। ফলে পোডল দিয়ে আইজার পাড়ি দেবার রাস্তা প্রুশিয়ানদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায়। একই দিনে রাতের আগে আগে সেকেন্ড আর্মির একদল নাশোদে এসে পৌঁছে। ফ্রেডেরিক চার্লসের অধীনে অন্য দুই বাহিনী তাদের পঞ্চাশ মাইলের মধ্যে চলে আসে।

ট্রেটনাউ

২৭ জুন সেকেন্ড আর্মির বড় অংশ নাশোদে অবস্থানকারীদের আথে যোগ দিল। জেনারেল বনিনের অধীনে দুই কলাম সেনা রওনা দেয় ট্রেটনাউয়ের দুই মাইল পূর্বে পার্শনিৎজ গ্রামের দিকে। দুই কলাম একইসময় পার্শনিৎজ আসতে ব্যর্থ হয়। প্রথম কলামের অধিনায়ক ক্লসউইৎজ সকাল আটটার দিকে এসে গ্যাঁট হয়ে বসলেন। তার উপর নির্দেশ ছিল দ্বিতীয় কলামের আগমন অবধি এখানে থাকার জন্য। তখন পর্যন্ত কিন্তু অস্ট্রিয়ানরা ট্রেটনাউ ও তার পার্শ্ববর্তী শহরে অবস্থান নেয়নি। ফলে ক্লসউইৎজ যদি দ্রুত এগিয়ে যেতেন তাহলে বেনেডেককে চমকে দিয়ে প্রুশিয়ানরা নিরাপদে ট্রেটনাউ পার হয়ে যেতে পারত। কিন্তু ক্লসউইৎজ দ্বিতীয় কলামের জন্য দুই ঘণ্টা বসে থেকে সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারালেন। তার সময়ক্ষেপণে মন্ডেলের অধীনস্থ অস্ট্রিয়ান ব্রিগেড ট্রেটনাউ শহর আর গিরিপথ জুড়ে শক্ত প্রতিরক্ষা গড়ে তুলে। বনিন তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে তুমুল লড়াই চলল। মন্ডেল কিছুদূর পিছিয়ে গিয়ে বেনেডেকের পাঠানো অতিরিক্ত সেনার সাথে যোগ দিলেন। বেনেডেকের আরো সেনা পথে ছিল।

নিজের সাফল্যে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী বনিন দুপুর একটার দিকে আইপেলের দিকে যাত্রা করেন। প্রুশিয়ান অতিরিক্ত সেনা পার্শনিৎজ এসে পৌঁছলেও তিনি তাদের সাথে নিলেন না। এদিকে অস্ট্রিয়ানরা ততক্ষণে একত্রিত হয়েছে। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ৩৩,০০০ অস্ট্রিয়ান বনিনের ৩৫,০০০ সৈন্যের উপর হামলে পরে। ছয় ঘণ্টা গোলাগুলির পর বনিন পশ্চাদপসরণে বাধ্য হলেন। প্রুশিয়ানদের হতাহত ছিল ৫৬ জন অফিসার আর ১,২৮২ জন সৈনিক। পক্ষান্তরে অস্ট্রিয়া হারায় ১৯৬ জন অভিজ্ঞ অফিসার এবং ৫,০০০ এর বেশি সেনা। পিছিয়ে যেতে বাধ্য হলেও প্রুশিয়ানদের ব্রিচ লোডিং রাইফেল শত্রুদের প্রচন্ড ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছিল।   

বনিন এবং অস্ট্রিয়ানদের সংঘর্ষ; image source: Wikimedia Commons

নাশোদ

এদিকে জেনারেল স্টেইনমেটজ নাশোদের সেনাদের দায়িত্ব নিয়ে সেদিক দিয়ে বোহেমিয়া ঢুকবার চেষ্টা করছেন। সেনারা লম্বা কলামে দ্রুত গিরিপথ পার হবার জন্য যাত্রা করে। তাদের ঠেকাতে একটি অস্ট্রিয়ান কর্পস পথ আটকালে প্রুশিয়ানদের ছোট অগ্রবর্তী দলের সাথে সংঘর্ষ হয়। তিন ঘণ্টা ধরে এই ছোট দলটি অস্ট্রিয়ান কর্পসকে ব্যস্ত রাখে, ফলে মূল সেকেন্ড আর্মি গিরিপথ অতিক্রম করতে সক্ষম হলো। প্রুশিয়ান অশ্বারোহীরা এবার শত্রুর দিকে ধেয়ে যায়, অস্ট্রিয়ানদের একটি ইনফ্যান্ট্রি চার্জও ঠেকিয়ে দেয়া হয়। এরপর স্টেইনমেটজ প্রুশিয়ান ইনফ্যান্ট্রি সামনে আগাতে নির্দেশ দেন। বিশৃঙ্খল অস্ট্রিয়ানরা এবার পালিয়ে যায় স্কালিৎজ শহরের দিকে। প্রুশিয়ানদের হতাহত ছিল ১,১২২, অন্যদিকে অস্ট্রিয়ানদের ক্ষতি হয় ৭,৫০০ সৈন্য । 

নাশোদের লড়াই © Richard Knötel

সেকেন্ড আর্মির অন্যান্য অংশ রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর ২৭ জুন আইপেল আর কস্টেলেটজ দখল করে নেয়। ফ্রেডেরিক চার্লস সেই সময় ব্যস্ত আইজার ঘিরে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে। তার সুযোগ থাকলেও তিনি সেলেন্ড আর্মির সহায়তায় এগিয়ে আসেননি। যদিও মল্টকে এজন্য চার্লসকে টেলিগ্রাম পর্যন্ত পাঠিয়েছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত তাদের চার্লসের সাহায্য দরকার হয়নি। 

মুশেনগ্রাটজ

২৮ জুন ফার্স্ট আর্মি আর আর্মি অফ এল্বা একযোগে ক্ল্যাম-গ্যালাসের উপর আক্রমণ করে বসে। অস্ট্রিয়ান লাইনের উপর মুহুর্মুহু আঘাত ক্ল্যাম-গ্যালাসকে দিশেহারা করে দিল। তিনি আসলে এখানে প্রুশিয়ানদের সাথে লড়াই করতে চাননি। সেজন্য সেনাদের সরিয়ে নিচ্ছিলেন গিশিন গ্রামে। এমন সময় প্রুশিয়ানরা তার দুই পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২,০০০ হতাহত ফেলে ক্ল্যাম-গ্যালাস পিছিয়ে যান।

আশেপাশের অঞ্চল থেকেও ফ্রেডেরিক চার্লস অস্ট্রিয়ানদের তাড়িয়ে দেন। তাদের লক্ষ্য এবার হলো গিশিন, যেখানে ক্ল্যাম-গ্যালাস যুদ্ধের ফয়সালা করেছেন। তার জানা ছিল বেনেডেক আরো সেনা পাঠিয়েছেন। ক্ল্যাম-গ্যালাস আশা করলেন খুব দ্রুতই তারা তার সাথে যোগ দিতে পারবে। ওদিকে ফ্রেডেরিক চার্লস জানতেন গিশিন দখল করলে প্রাগের দিকে রাস্তাও তাদের সামনে খুলে যাবে।তার সাথে সব মিলিয়ে প্রায় ১,৪০,০০০ সেনা, ক্ল্যাম-গ্যালাসের হাতে আছে মাত্র ৬০,০০০। কাজেই জয়ের পাল্লা তার দিকেই ভারি।

সিলিসিয়া-বোহেমিয়া সীমান্ত

২৮ জুন রাত একটায় ক্রাউন প্রিন্স ফ্রেডেরিক ট্রেটনাউতে বনিনের পরাজয়ের সংবাদ পান। অস্ট্রিয়ানরা যে জেনারেল গ্যাব্লেঞ্জের অধীনে তাদের দিকে এগুচ্ছে এই খবরও তার অজানা ছিলনা। অবিলম্বে কস্টেলেটজ আর আইপেলে থাকা প্রুশিয়ানদের বনিনের সাহায্যার্থে যাবার আদেশ প্রেরিত হলো। প্রুশিয়ান সেনাদের গতিবিধিতে গ্যাব্লেঞ্জ সতর্ক হবার প্রয়োজন অনুভব করলেন। তিনি বাম দিকে ট্রেটনাউ আর ডানে পার্শনিৎজ রেখে সেনাদের সাজান। অস্ট্রিয়ান সেনাদের একটি ব্রিগেডকেও নিকটবর্তী এলাকা থেকে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু তারা পথ ভুল করায় উপযুক্ত সময়ে হাজির হতে পারেনি।

২৮ জুন সকাল ৯:৩০ মিনিটে প্রুশিয়ানরা গ্যাব্লেঞ্জের উপর প্রথম আঘাত হানল। অস্ট্রিয়ান মধ্যভাগ আর ডানবাহু শত্রুদের প্রবল আক্রমনে পেছাতে বাধ্য হয়। বামবাহু তার জায়গা ধরে রেখে সমানতালে প্রুশিয়ানদের সাথে লড়াই করতে থাকে। দুপুর ১২:৩০ এ অতিরিক্ত সৈন্য প্রুশিয়ান ডানবাহুতে যোগ দিলে তারা অস্ট্রিয়ানদের উপর প্রচণ্ড হামলা করে। বহু অস্ট্রিয়ান সৈন্য এসময় বন্দি হয়। বাকিরা পালিয়ে চলে যায় ট্রেটনাউ। এই সংঘর্ষে আবারও প্রুশিয়ানদের থেকে অস্ট্রিয়ানদের ক্ষতি ছিল অনেক গুণ বেশি। প্রুশিয়া যেখানে ৭১৩ জন সৈনিককে হতাহত দেখায়, সেখানে অস্ট্রিয়ার ৩,৬৭৪ সেনা আহত, নিহত আর বন্দি।

একই সময়ে নাশোদের লড়াইয়ে পালিয়ে যাওয়া অস্ট্রিয়ানদের সাথে অপা নদীর তীরবর্তী স্কালিতজ শহরে স্টেইনমেটজের অধীনে প্রুশিয়ানদের আরেকটি দলের গোলাগুলি চলছিল। অস্ট্রিয়ান সেনাপতি র‍্যামিং স্কালিতজে আশ্রয় নিয়েই বেনেডেকের সহায়তা প্রার্থনা করলে তিনি একদল সৈন্য পাঠালেন স্কালিতজের চার মাইল পশ্চিমের শহর ডোলানে। ডোলান এবং স্কালিতজের সেনাদের কম্যান্ড সোপর্দ করা হয় আর্চডিউক লিওপোল্ডের হাতে। ডোলানের সেনারা এসে অপার দক্ষিণ তীরে অবস্থান নেয়। তাদের পেছনে ছিল র‍্যামিংয়ের বাহিনী, যারা কমান্ডারের নির্দেশে পেছনের দিকে সরে যেতে থাকে।

এদিকে স্টেইনমেটজের কাছেও অতিরিক্ত সেনা পৌঁছলে তিনি বিলম্ব না করে আক্রমণ করলেন। র‍্যামিং সরতে সরতে ততক্ষণে এত পেছনে চলে গেছেন যে এগিয়ে এসে তিনি ডোলান থেকে আসা বাহিনীর কোনো সাহায্যই করতে পারলেন না। স্টেইনমেটজ তাদের এমন ঠেলা দিলেন যে র‍্যামিংসমেত তারা আরো পিছিয়ে গিয়ে ল্যাঞ্জো আর স্যালনি শহরে আশ্রয় নেয়। ফেলে যায় ৬,০০০ সাথী।      

স্কালিৎজ, ট্রেটনাউ আর নাশোদের লড়াইয়ের পর গিরিপথ সেকেন্ড আর্মির সামনে খুলে যায়। ক্রাউন প্রিন্স কস্টেলেটজ থেকে রাতে ট্রেটনাউ চলে আসেন। এই সময় ফ্রেডেরিক চার্লসের সাথে তার ব্যবধান মাত্র সাতাশ মাইল।

ব্যাটল অফ গিশিন

২৯ জুন, ১৮৬৬।

ফ্রেডেরিক চার্লসের সেনারা মুশেনগ্রাটজ, পোডল আর টুর্নাউ শহর থেকে অগ্রসর হলো গিশিনের দিকে। সেখানে গ্রামের বাইরে উত্তর-পশ্চিমের পাহাড়শ্রেণীতে ক্ল্যাম-গ্যালাস প্রতিরক্ষা সাজিয়েছেন। তার সাথে বেনেডেকের অনেক সেনাও যোগ দিয়েছে। ক্ল্যাম-গ্যাসেলের ডানদিক রক্ষা করছে নিকটবর্তী এইজেনস্টাডট আর ডিলিটজ গ্রামে রাখা অস্ট্রিয়ান ইউনিট। বামদিক রক্ষা করছে লখো শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকার সেনারা। তার মধ্যভাগের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা জঙ্গলাকীর্ণ ভূমির নাম প্রাউসিন (Prywicin), যা চলাচলের জন্য দুর্গম।

টাম্পলিংয়ের টুর্নাউ থেকে আগত সেনারা বিকাল তিনটার দিকে ডানপাশে অস্ট্রিয়ানদের একাংশের দেখা পেল।বিকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে দুই ঘণ্টা সংঘাত চলে। এরপর টাম্পলিং ডিলিটজ অধিকার করে নেন। বাম দিকে ইতোমধ্যে ভন ওয়ের্ডার প্রুশিয়ানদের নিয়ে যথেষ্ট সাফল্য লাভ করেছেন। ক্ল্যাম-গ্যালাস দেখলেন পরিস্থিতি খারাপ। সামনে থেকে না পারলেও দুই পাশ থেকে তাকে প্রুশিয়ানরা চিড়েচ্যাপ্টা করে দিতে পারে। বেনেডেক আরো সেনা পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করলে ক্ল্যাম-গ্যালাস ভাবলেন এই বেলা সরে পড়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তিনি গিশিনের ভেতর দিয়ে পিছিয়ে যাবার নির্দেশ জারি করে দেন। তাদের নিরাপদে সরে যাবার সুযোগ করতে অস্ট্রিয়ানদের দুটি দল দুই পাশে প্রুশিয়ানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

অনেক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকারের পর প্রুশিয়ান বাহিনী অস্ট্রিয়ানদের পরাজিত করে গিশিনের দিকে অগ্রসর হলো। সেখান থেকেও ততক্ষণে ক্ল্যাম-গ্যালাসের অধিকাংশ সেনাই চলে গেছে। অবশিষ্টদের সাথে রাস্তায় তীব্র লড়াইয়ের পর মাঝরাতে প্রুশিয়ান সেনারা গিশিন নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয়। এই যুদ্ধে ৪,০০০ বন্দিসহ ৭,০০০ অস্ট্রিয়ান সেনা খরচের খাতায় নাম তোলে। গিশিনের পর ক্ল্যাম-গ্যালাসের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। তিনি বেনেডেককে জানালেন তার পক্ষে প্রুশিয়ানদের আর বাধা দেয়া সম্ভব নয়। তিনি কনিগ্রেটজ শহরের দিকে চলে যান।

ব্যাটল অফ গিশিন © Th. Görnert/ akg-images.co.uk

বেনেডেক এতদিন স্থির করতে পারছিলেননা তার বিশাল বাহিনী নিয়ে তিনি কি ফ্রেডেরিক চার্লসের দিকে আগাবেন, না সিলিসিয়াতে ক্রাউন প্রিন্সকে ধরবেন। ক্ল্যাম-গ্যালাস যখন গিশিনে প্রুশিয়ানদের প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন সেই সময় তিনি ফ্রেডেরিক চার্লসকে বাধা দেয়াই সঙ্গত মনে করলেন। সেকেন্ড আর্মির বিরুদ্ধে ছোট একটি দল রেখে ১৯ জুন সকালে তিনি বাকি সেনাদের একদল গিশিনের দিকে প্রেরণ করলেন। অশ্বারোহীরা পরদিন টুর্নাউয়ের দিকে রওনা দেবার কথা ছিল।

এদিকে সেকেন্ড আর্মি নিয়ে প্রায় বিনা বাধায় ট্রেটনাউ দিয়ে প্রবেশ করে ক্যালি শহরে ক্রাউন প্রিন্স তার প্রধান ঘাঁটি বানালেন। তার সেনারা আশেপাশের অঞ্চলে অস্ট্রিয়ান উচ্ছেদ অভিযান চালাতে থাকলে বেনেডেক আবার সমস্যায় পড়ে যান। কোনদিকে যাই? ফ্রেডেরিক চার্লসের দিকে না সেকেন্ড আর্মির দিকে? দোনোমনা করতে করতে তিনি গিশিনের দিকে যাওয়া সেনাদের থামিয়ে দিলেন। ওদিকে ক্রাউন প্রিন্স ততক্ষণে এল্বা নদী বরাবর চলে এসেছেন, আর গিশিন চলে গেছে ফ্রেডেরিক চার্লসের হাতে।

কনিগ্রেটজ

জুলাই ১, ১৮৬৬।

বেনেডেক অনুভব করলেন চারদিক থেকে তার গলায় যেন ফাঁস চেপে বসছে। তিনি কনিগ্রেটজের দিকে রওনা হলেন। পরদিন মল্টকের নির্দেশে এল আর্মি অফ এল্বা যেন প্রাগ বরাবর এল্বা নদীর অংশে নজর রাখে। ফার্স্ট আর্মির উপর দায়িত্ব বর্তাল কনিগ্রেটজ বরাবর একই কাজ করবার। তাদের একটি ডিটাচমেন্ট কনিগ্রেটজের নিকটবর্তী সাডোয়া (Sadowa) গ্রামে তথ্য সংগ্রহ করতে গেল।

সন্ধ্যা ছয়টায় ফ্রেডেরিক চার্লসের কাছে খবর এলো কাছাকাছি মূল অস্ট্রিয়ান বাহিনী জড়ো হয়েছে। চার্লস ধরেই নিলেন বেনেডেক তার উপর আক্রমণের ফিকির করছেন। তিনি আগেই হামলা করতে মনস্থ করেন। পরিকল্পনা হলো ফার্স্ট আর্মি অস্ট্রিয়ানদের সম্মুখ অংশে সকাল সকাল ঝাঁপিয়ে পড়বে, আর আর্মি অফ এল্বা আঘাত করবে তাদের বামদিকে। তার আশা ছিল সেকেন্ড আর্মি সময়মতো এসে বেনেডিকের ডানদিকও তছনছ করে দেবে। তাহলে বিজয় ঠেকায় কে! দ্রুত এই পরিকল্পনা উইলিয়ামের কাছে পেশ করা হয়। রাজা তখন গিশিনে, ৩০ তারিখ সেখানে এসে অভিযানের সর্বাধিনায়কের ভার গ্রহণ করেছেন। তিনি প্ল্যান অনুমোদন দিলে মল্টকে আনুষ্ঠানিক নির্দেশ জারি করেন। ক্রাউন প্রিন্সকে মল্টকের নির্দেশ পৌঁছে দেয়া হলো।

কনিগ্রেটজে (koniggratz) কিন্তু লড়াই করবার ইচ্ছা বেনেডেকের ছিল না। তার চিন্তা ছিল অল্মুটজে চলে যাবার। তিনি আশা করছিলেন এর মধ্যে হয়তো অস্ট্রিয়ান সম্রাট ফ্রাঞ্জ জোসেফ প্রুশিয়ানদের সাথে শান্তি আলোচনা শুরু করবেন। কনিগ্রেটজ এলাকাতে বেনেডেক সাময়িক হেডকোয়ার্টার করেছিলেন ক্লাম গ্রামে, যার সামনে সাডোয়া থেকে কনিগ্রেটজের দিকে রাস্তা চলে গেছে। উত্তরদিকে ছোট ছোট দুটি নদী, বিস্ট্রিজ আর ট্রটিনা। ছোট হলেও এই দুই নদী পার হওয়া শক্ত। ক্লামের নিকটবর্তী লিপা গ্রামের উচ্চভূমিতে কামান মোতায়েন করে বিস্ট্রিজ পার হওয়া শত্রুকে আটকে রাখা সম্ভব। এল্বা আর আরো কিছু ছোটখাট নদীও আশপাশ দিয়ে প্রবাহিত। নদীগুলির মধ্যবর্তী এলাকা ছোট ছোট গ্রাম আর বনে ঢাকা। অস্ট্রিয়ানদের সাথে স্যাক্সোনরাসহ বেনেডেকের হাতে তখন দুই লাখের কিছু বেশি সৈন্য।তারা সমস্ত জায়গাতে পাহারা বসাল। ওদিকে সেকেন্ড আর্মি ব্যতিরেকে ফ্রেডেরিক চার্লসের সাথে তখন দেড় লাখের মতো সেনা।

কনিগ্রেটজে প্রুশিয়ান এবং অস্ট্রিয়ান বাহিনীর অবস্থান; image source: battlefieldanomalies.com

জুলাই, ৩, ১৮৬৬।

কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রাস্তায় প্যাচপ্যাচে কাদা। তদুপরি আক্রমণের ফয়সালা হয়েছে অনেক রাতে। তবে প্রুশিয়ানদের উৎসাহের অভাব নেই। সকাল হতে না হতেই আর্মি অফ এল্বা আর ফার্স্ট আর্মি মার্চ শুরু করে। ৭.৩০ এর দিকে এল্বার বাহিনীর অগ্রবর্তী সেনারা স্যাক্সোনদের একটি চৌকি উড়িয়ে দিল। একই সময় সাডোয়ার ইটভাটার কাছে ফার্স্ট আর্মি অবস্থান নিলে অস্ট্রিয়ান আর্টিলারি তোপ দাগল। প্রুশিয়ানদের তরফ থেকেও জবাব দেয়া হলো। এর মধ্যেই কাছাকাছি একটি গ্রাম বেনাটেক প্রুশিয়ানরা দখল করে নেয়।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর কুয়াশার সাথে কামানের ধোঁয়ায় লক্ষ্য ঠিক করা যাচ্ছিল না ঠিকভাবে। ফ্রেডেরিক চার্লস যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে প্রুশিয়ান গোলন্দাজদের ধীরে-সুস্থে নিশানা ঠিক করে গোলা নিক্ষেপের আদেশ দেন। এদিকে সকাল ৮:০০ টায় প্রুশিয়ার রাজা উইলিয়াম রণক্ষেত্রে উপস্থিত হলে সেনাদের মনোবল আরো চাঙ্গা হলো।কমান্ডারদের সাথে কথা বলে রাজা বিস্ট্রিজের দিকে এগোনোর নির্দেশ দেন। ওদিকে বেনাটেকের প্রুশিয়ানদের সাথে অস্ট্রিয়ান বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ বেধে গেল। এই লড়াই ছড়িয়ে পড়ল পুরো আর্মি অফ এল্বার মধ্যেই।  

বেনাটেকের সামনে সোয়াইপওয়াল্ড (Swiepwald) বন।এখান দিয়ে বিস্ট্রিজের দিকে যাওয়া সম্ভব। বেনেডেকও তা জানতেন, তাই এখানে আগে থেকেই দুই ব্যাটালিয়ন অস্ট্রিয়ান সেনা তিনি রেখেছিলেন। প্রুশিয়ার চার ব্যাটালিয়ন তাদের তাড়িয়ে দেয়। বেনেডেক বনের দখল হারাতে চাইলেন না। অন্যদিক থেকে সেনা নিয়ে মোট চল্লিশ ব্যাটালিয়ন অস্ট্রিয়ান প্রতি-আক্রমণ করল। অতিরিক্ত সাহায্য নিয়ে প্রুশিয়ানদের চৌদ্দটি ব্যাটালিয়ন লড়ে যেতে থাকে। তিন ঘণ্টার লড়াইয়ের পরে প্রুশিয়ানরা বনের উত্তরদিকে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারল।

বনের দখল নিয়ে যুদ্ধ © Anthony De Zee

বেনেটেক থেকে সেনারা যখন সোয়াইপওয়াল্ডে প্রবেশ করেছে, তখন অন্যদিকের সেনারা সাডোয়া আর তার পার্শ্ববর্তী গ্রামের সামনের বনে ঢুকে পড়ে। এখান থেকে তারা বিস্ট্রিজের দিকে চলে যেতে সক্ষম হয়। একদল সেনা বিস্ট্রিজ পার হয়ে যায় এবং কনিগ্রাটজের মূল রাস্তার দিকে অবস্থান নিল। অস্ট্রিয়ান সেনারা পিছিয়ে গেল নিকটবর্তী লিপা গ্রামের উচ্চভূমিতে। সেখান থেকে তারা কামানের প্রচণ্ড গোলাবর্ষণে প্রুশিয়ানদের থামিয়ে দেয়।কিন্তু সাডোয়া থেকে অস্ট্রিয়ানরা সরে যাবার ফলে আশেপাশের বহু চৌকি প্রুশিয়ানদের হাতে বিসর্জন দিতে হয়। 

এদিকে আর্মি অফ এল্বা বিস্ট্রিজের দক্ষিণ তীর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। আশেপাশের ছোট ছোট কয়েকটি নদীর সেতু পাহারা দিচ্ছিল স্যাক্সোনরা। তাদের পরাস্ত করে প্রুশিয়ান সেনারা সমস্ত সেতু দখলে নেয়। সকাল এগারটার দিকে বিস্ট্রিজ পার হয়ে ফার্স্ট আর্মি আর আর্মি অফ এল্বা নিজেদের অবস্থান শক্ত করে। কিন্তু সোয়াইপওয়াল্ডে প্রুশিয়ানদের অবস্থা তখনো সঙিন। লিপার কামানের আঘাত প্রুশিয়ানদের প্রভূত সমস্যা করছে। কয়েকবার চেষ্টা করেও সেদিকে প্রুশিয়ানরা একচুলও অগ্রসর হতে পারল না। এদিকে তখন অবধি সেকেন্ড আর্মির দেখা নেই।

এদিকে নদী পার হয়ে লিপা থেকে অস্ট্রিয়ান আর্টিলারির উপুর্যুপুরি আঘাতে ফার্স্ট আর্মি জায়গাতে জমে গেল। সংরক্ষিত সকল সেনাই যুদ্ধে নামানো হয়েছে, ফলে এমন কোনো ডিভিশন হাতে নেই যাদের কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রুশিয়ানরা বিস্ট্রিজ পার করে এনেছে মাত্র ৪২টি কামান, যা অস্ট্রিয়ানদের তুলনায় নগণ্য। ফলে অনেক সেনা হতাহত হতে থাকে। সেই তুলনায় তখন পর্যন্ত অস্ট্রিয়ান ইনফ্যান্ট্রি আর অশ্বারোহী বাহিনী যথেষ্ট সতেজ, কাজেই তারা কামানের ছত্রছায়ায় আক্রমণ করলে খুবই সম্ভব যে প্রুশিয়ানরা পরাজিত হবে। তবে ফার্স্ট আর্মি তাদের অবস্থান ধরে রেখেছিল, যদিও পিছিয়ে যাবার কথাও আলোচনা হচ্ছিল এবং তাতে সহায়তা করতে অশ্বারোহী বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়।

ওদিকে আর্মি অফ এল্বা ততক্ষণে মাঠে নেমে পড়েছে। তারা স্যাক্সোন বাহিনীর দুই পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তারা একবার প্রুশিয়ানদের উপর সরাসরি আক্রমণ চালিয়ে ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয়বার আক্রমণ করবার সময় বামপাশ থেকে প্রুশিয়ানরা আচানক তাদের উপর হামলা করলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে তারা পিছিয়ে গেল। স্যাক্সোন বাহিনী অবস্থান ত্যাগ করলে বিস্ট্রিজের দক্ষিণ তীরে আরো ৬৬টি প্রুশিয়ান কামান যোগ হয়।

শত্রুর উপর হামলা; image source: Wikimedia Commons

ঠিক এই সময় সেকেন্ড আর্মি ট্রটিনার তীরে এসে হাজির হলো। ক্রাউন প্রিন্স পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারেন বেনেডেক তাদের জন্য সামনে পাহাড়সারির আড়ালে ওঁত পেতে আছেন। তিনি বাহিনীকে নির্দেশ দিলেন দৃষ্টিসীমায় থাকা হর্নওয়েস (Horenowes) পাহাড়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নিতে। বেনেডেকের মাথায় বাজ পড়ল। ক্রাউন প্রিন্স যে হর্নওয়েসের দিকে যেতে পারেন সেই চিন্তা তার মাথায় আসেনি। ফলে সেদিকে পাহারাও তেমন নেই। আবার সোয়াইপওয়াল্ডে তার সেনারাও সেকেন্ড আর্মির পার্শ্বভাগে পড়ে গেছে। তিনি দ্রুত তাদের পিছিয়ে যাবার আদেশ দেন।

ক্রাউন প্রিন্স তার কামান মোতায়েন করে অস্ট্রিয়ান ডানবাহুর উপর গোলা ছুড়তে থাকেন। হর্নওয়েসের উপরও প্রুশিয়ানরা ৯০টি কামান বসিয়ে ফেলে।অস্ট্রিয়ান প্রতি আক্রমণ নস্যাৎ করে দেয়া হয়। চারদিক থেকে সেকেন্ড আর্মি ক্লামের দিকে এগোতে থাকে। লিপার চারপাশের বনও তারা দখল করে নেয়। দুপুর তিনটার দিকে দেখা গেল অস্ট্রিয়ানদের বামবাহুতে স্যাক্সোনরা পরাস্ত। ডানদিক সেকেন্ড আর্মির চাপে ভেঙে পড়বার পথে। ক্লামের পতনে জয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে বেনেডেকের কাছে তখন গুরুত্বপূর্ণ সেনাবাহিনী যতটা সম্ভব অক্ষত রেখে ভেগে যাবার। পরপর তিনটি আক্রমণ চালানো হলো প্রুশিয়ানদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে। প্রত্যেকবারেই বিপুল সৈন্য ফেলে অস্ট্রিয়ানরা পিছিয়ে এলো। লিপার দখলও চলে গেল প্রুশিয়ানদের হাতে। দুই পাশে থেকে প্রবল আঘাতে অস্ট্রিয়ান দুই বাহুই ভেঙে পড়ল। ফলে চাপে থাকা ফার্স্ট আর্মি নতুন উদ্যমে এবার বেনেডেকের সম্মুখভাগে আঘাত করে।

বিকাল ৩:৩০ মিনিটে রাজার নির্দেশে ফার্স্ট আর্মি সামনের দিকে অগ্রসর হয়। অস্ট্রিয়ানরা পিছিয়ে যেতে থাকে। তাদের নিরাপদে সরে যাবার জন্য অস্ট্রিয়ান অশ্বারোহী বাহিনী প্রশিয়ান অশ্বারোহীদের বাধা দেয়। অস্ট্রিয়ান আর্টিলারিও পেছাতে পেছাতে গোলা ছুড়ে যায়। অন্ধকার হয়ে যাওয়া পর্যন্ত তারা এ কাজ অব্যাহত রাখে। ওদিকে অস্ট্রিয়ান অশ্বারোহীরা বীরত্বের সাথে লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত হার মানে। কিন্তু কামানের জন্য পলায়নরত অস্ট্রিয়ানদের ধাওয়া করা গেল না।

প্রুশিয়ান এবং অস্ট্রিয়ান অশ্বারোহী বাহিনীর সংঘর্ষ; image source: Wikimedia Commons

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কনিগ্রেটজের দুর্গের কম্যান্ডার দরজা বন্ধ করে দিলে বহু অস্ট্রিয়ান বাইরে দিশেহারা হয়ে পড়ল। তাদের মনোবল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। বেনেডেক এল্বা পার হয়ে পালিয়ে যান। প্রুশিয়ানরা এতটাই ক্লান্ত ছিল যে তারাও ক্ষান্ত দেয়। কনিগ্রেটজ অস্ট্রিয়ানদের কোমর ভেঙে দিয়েছিল। প্রুশিয়ান ৯,০০০ সেনার বিপরীতে তাদের ক্ষতি প্রায় পাঁচগুণ, ৪৪,২০০। এদের প্রায় ২০,০০০ বন্দি হয়েছে। প্রচুর কামান আর গোলাবারুদও প্রুশিয়ানদের অধিকারে আসে।

This is a Bengali language article about the rise and eventual downfall of Prussia and how it led to a unified Germany. Necessary references are mentioned below.

References

  1. Clark, C. M. (2007). Iron kingdom: The rise and downfall of Prussia, 1600-1947. London: Penguin Books.
  2. Wagner A. L. (2015) . The Campaign of Königgrätz. A Study of the Austro-Prussian Conflict in the Light of the American Civil War; Project Gutenberg Ebook.

Feature image © Vaclav Sochor

Related Articles