খ্রিষ্টপূর্ব ৫৩৯ অব্দ;
ব্যাটেল অফ অপিস, ব্যাবিলন।
পৃথিবীতে যে কয়জন শাসক সমস্ত বিশ্বকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বিশ্বজুড়ে একক রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন তাদের মধ্যে পারস্যের সম্রাট সাইরাস অগ্রগণ্য। তার আগে পৃথিবীর ইতিহাসে কোন রাজা এত বিশাল রাজ্যের অধিকারী হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারেন নি। মিশরীয় সভ্যতা থেকে শুরু করে সিন্ধু সভ্যতা পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তৃতির পর বৃহত্তর মেসোপটেমিয়া নিজের করাগত করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন এই বিশ্ববিজয়ী বীর।
সম্রাট সাইরাসের স্বপ্ন ছিল সমস্ত মেসোপটেমিয়া পারস্যের আয়ত্তে আসবে। বিশাল পার্সিয়ান সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি অভিযানে বেরিয়েছিলেন। একের পর এক সাম্রাজ্য দখল করে সেখানে নিজের অনুসারীদের একজনকে উপ-রাজা হিসেবে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে আসা শুরু করলেন তিনি। কিন্তু পার্সিয়ানদের এই সমগ্র মেসোপটেমিয়ার উপর নিজেদের শাসন স্থাপন কালে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল শক্তিশালী ব্যাবিলন। ব্যাবিলনই ছিল সবচেয়ে বড় পরাশক্তি যাদের পরাভূত করতে পারলে সমস্ত মেসোপটেমিয়ায় পারস্যের নিয়ন্ত্রন বজায় রাখা সম্ভবপর হবে।
একে একে মেসোপটেমিয়ার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য তাদের দখলে এলেও ব্যাবিলন তখন পর্যন্ত পার্সিয়ানদের কবলে যায়নি। তারা ব্যাবিলন আক্রমন করার পর রাজধানী ব্যাবিলন নগরীর উত্তর পাশে, অপিস শহরে টাইগ্রিস নদীর কিনারে সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি সংগঠিত হল। যেই যুদ্ধের চূড়ান্ত ফল হল ব্যাবিলনের অরক্ষিত বাহিনীর হার দিয়ে।
তবে অপিস যুদ্ধে পরাজয়টাই ছিল ব্যাবিলনের স্বাধীনতা নস্যাৎ হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ। এই যুদ্ধে পরাজয়ের পেছনে দায়ী হচ্ছে ব্যাবিলনের সৈন্যদের সমস্ত শক্তি এক করে যুদ্ধে যোগদান করতে না পারা। সব সৈন্যরা অপিস যুদ্ধে মূল বাহিনীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে পারেনি। বাকি সৈন্যরা কয়েক জায়গায় পার্সিয়ানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় অনেকটা বিক্ষিপ্ত ভাবে। এর মূল কারণ হল- পার্সিয়ান বাহিনী ব্যাবিলন আক্রমণের প্রাক্কালে সম্রাট নাবোনিডাস ছিলেন তায়মাতে। যার ফলে তার পক্ষে যথেষ্ট শক্তি নিয়ে এসে অপিস যুদ্ধে যোগদান সম্ভব হয়নি। তেমন কোন বাঁধা ছাড়াই বীর বাহু সাইরাস তাদের হারিয়ে দিতে সক্ষম হল।
এটা স্পষ্টভাবে বোঝার কোন উপায় নেই যে নাবোনিডাস কেন এতো সময় তায়মাতে অবস্থান করছিল। তায়মা দখলের পিছনের পরিকল্পনা মোটামুটি পরিষ্কার। তায়মা একটি গুরুত্বপূর্ণ মরুদ্যান, যেখানে থেকে আরবের সকল বাণিজ্য পরিচালিত হয়, ফলে তায়মা যার দখলে থাকবে তার পক্ষে সমস্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। নাবোনিডাসের পূর্বে অ্যাসিরিয়ানরাও একইভাবে চেষ্টা করেছিল তায়মার দখল নেয়ার জন্য।
কিন্তু তারপরও নাবোনিডাসের নিজের রাজ্য ফেলে প্রায় ১০ বছর সময় সেখানে অবস্থান করার সঠিক কারণ বোঝা খুব মুশকিল। কেনই বা সেখান থেকে চলে এসেছিল তা এখনও অজানা। তার সেখানে না থাকার কারণ হিসেবে ভাবা হয় যে তিনি ব্যাবিলনকে নিজের ঘর হিসেবে মেনে নিতে পারেননি,কারণ তার কাছে এসেছিল তারই জোরপূর্বক পাপের কারণে। তার ফিরে আশার ব্যাপারে দায়ী করা হয় সাইরাসের দেওয়া মৃত্যু হুমকি এবং সন্তান বেলসাজারের সাথে মতের অমিলকে।
যুদ্ধের স্থানটি ছিল অপিস শহরের টাইগ্রিস নদীতে, যা আধুনিক বাগদাদের উত্তরে পঞ্চাশ মাইল দূরে অবস্থিত ছিল। শুধুমাত্র নদী পারাপারের জন্যে নয় অপিস নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছিল, কারণ এটির এক প্রান্তে ছিল মেডিয়ান ওয়াল,যা কয়েক দশক আগে নেবুচাদনেসার তৈরি করেছিলেন দক্ষিণ ব্যাবিলনের একটি সুরক্ষিত আত্মরক্ষামূলক বাধা হিসেবে। অপিস নিয়ন্ত্রণ করেই সাইরাস সক্ষম হয়েছিল মেডিয়ান ওয়াল ভেঙ্গে রাজধানীর দিকের রাস্তা খুলতে।
অপিস যুদ্ধের সময়, পার্সিয়া ছিল পূর্বের মুখ্য শক্তি। এই যুদ্ধের সময় ব্যাবিলনের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনাশ্বাসজনক ছিল। তারা সংক্রামক মহামারী এবং দুর্ভিক্ষের কারণে গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছিল এবং রাজা নাবোনিডাস তার রীতিবিরুদ্ধ ধর্মীয় নীতির জন্য তার অনেক প্রজাদের কাছে অপছন্দের পাত্র হয়ে উঠেছিল। নাবোনিডাস ব্যাবিলন শহরে প্রভু মুন-সিনের বেশ কিছু অর্চনা মূর্তি রাজধানী মধ্যে আনার জন্যে আদেশ দিয়েছিল,একে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়। এটাও ব্যাবিলনের পরাজয়ের কারণ।
তবে কারণ যাই হোক, অপিসে ব্যাবিলনের পরাজয় এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পার্সিয়ানদের ব্যাবিলনে প্রবেশ এর মাধ্যমে ব্যাবিলনের স্বাধীনতা শেষ হয়। যুদ্ধের কিছুদিন পরেই সিপ্পার শহরের সেনারা আত্মসমর্পণ করে পার্সিয়ানদের কাছে এবং যার ফলে তেমন কোন যুদ্ধ ছাড়াই সাইরাস বাহিনী ব্যাবিলনে প্রবেশ করলো। পরবর্তীকালে সাইরাস ব্যাবিলনের অন্যান্য ক্ষুদ্র অঙ্গরাজ্যের রাজারা সাইরাসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতেই স্বাধীন রাষ্ট্র ব্যাবিলন বৃহত্তর পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে যায়। অপিস যুদ্ধের পর সাইরাসের সেনারা যখন বিভিন্ন সাথে বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহের সামাল দিচ্ছিল তখন অল্প কিছু সৈন্য নিয়ে সাইরাস ব্যাবিলনের দুর্গের দিকে যাত্রা করেন। তার লক্ষ ব্যাবিলনের সিংহাসনে বসে নিজেকে সমগ্র মেসোপটেমিয়ার মালিক রূপে ঘোষণা দেয়া।
সম্রাট নেবুচাদনেজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যাবিলনের দুর্গের অভিমুখে যাত্রাকালে সাইরাসের সাথে ছিল অল্প কিছু অনুসারী। কিন্তু দুর্গের দ্বাররক্ষীরা মহাপরাক্রমশালি সাইরাসকে বাঁধা প্রদানের সাহস পেলনা। ফলে এক প্রকার বিনা বাঁধায় সাইরাস রাজ মহলের ভেতরে প্রবেশ করলেন।
মহলের দাস- দাসীরা ভয়ে কাপছিল সব। সম্রাটের স্ত্রী, উপ-স্ত্রী সহ অন্যান্য মেয়েরা সবাই পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছে আগেই। সাইরাস ভেতরে ঢুকে প্রথমেই দরবার কক্ষ খুঁজে বের করলেন। তারপর সেই কক্ষে ঢুকে সম্রাটের বসার জন্য সংরক্ষিত আসনে গিয়ে বসলেন। ব্যাস। ব্যাবিলনের চূড়ান্ত পরাজয় হল এবার। এবং সেই সাথে সমস্ত মেসোপটেমিয়ার উপরে এখন পার্সিয়ানদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হল।
সাইরাসের সেনাবাহিনির অন্যতম প্রধান সেনাপতি সোরেনসেন সম্রাটের সাথে এসে দরবার কক্ষে প্রবেশ করেছে। সম্রাট সিংহাসনে বসতেই সোরেনসেন প্রশ্ন করল, “সম্রাট, আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে এবার?”
“সমস্ত ব্যাবিলন মাটির সাথে মিশিয়ে দাও”। খালি দরবার কক্ষে সাইরাসের কণ্ঠস্বর গমগম করে উঠল। তিনি হয়ত জানেন না যে এখন যেখানে বসে তিনি ব্যাবিলনের ভবিষ্যৎ লিখছেন, ঠিক সেখানে বসেই আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে সম্রাট নেবুচাদনেজার যুদাহ বাসীদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেছিলেন।
সোরেনসেন বলল, “সম্রাট যদি আজ্ঞা দেন, তাহলে একটা কথা বলতে ইচ্ছুক আমি”।
“নির্দ্বিধায় বল সোরেনসেন”। সাইরাস হাসছেন।“ তুমি পার্সিয়ানদের গর্ব। তোমার একটা কেন? হাজারটা কথা শুনতে আমি প্রস্তুত”।
“এত সুন্দর সব স্থাপনা ব্যাবিলনে। আমরা তো চাইলেই এগুলো নিজেদের মত করে ব্যবহার করতে পারি। এগুলোর মালিকানা এখন তো আমাদেরই। এসব ধ্বংস করে না দিলেই কি নয়?”
“কেন সোরেনসেন? আমাদের পার্সিয়ায় কি সুন্দর স্থাপনা কম আছে? ব্যাবিলনের সম্পদ আমাদের ব্যবহার করতে হবে কেন?”
“আপনি ঠিক বলেছেন সম্রাট, পার্সিয়ান দক্ষ কারিগরদের নির্মিত বিস্ময়কর সব স্থাপনা নিঃসন্দেহে আমাদের গর্বের বিষয়। তবুও মন সায় দিচ্ছে না অন্য নগরীর কারুকার্য মন্ডিত এসব ইমারত গুড়িয়ে দিতে”।
“মনকে সায় দিতে বাধ্য কর সোরেনসেন। এটাই পার্সিয়ান সৈনিকদের সবচেয় বড় পুঁজি। মনের জোর, মনে শক্তি। এটা হারালে চলবে না”।
“অন্তত ঝুলন্ত বাগানখানা কি ধ্বংস হতে চলা ইমারতের তালিকা থেকে বাদ রাখা যায় সম্রাট?” সোরেনসেনের কণ্ঠে আকুতি প্রকাশ পেল।
হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠলেন সম্রাট সাইরাস। বেশ কিছুক্ষণ হাসার পর বললেন, “আমি সত্যি হতবাক। বিধ্বংসী ক্ষমতার অধিকারী সোরেনসেন, জন্ম থেকেই যার মধ্যে খুনের নেশা, মাত্র বারো বছর বয়সে সৈন্য দলে যে নাম লিখিয়েছে, সতের বছর বয়সে নিজের বীরত্ব দেখিয়ে সেনাপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছে যে সৈনিক; সেই রক্তপিপাসু সোরেনসেনের শিল্প-স্থাপনার প্রতি মায়া দেখে হতবাক না হয়ে পারছি না”।
লাজুক ভঙ্গিতে হাসল সোরেনসেন।
“এক কাজ করলে কেমন হয় সোরেনসেন?” সম্রাট সাইরাস বললেন।
“কি কাজ সম্রাট?” সোরেনসেনের চোখ মুখে আশার আলোর সঞ্চার হল।
“আমরা কোন কিছুই পুরোপুরি ধ্বংস করব না। অর্ধ-ধ্বংস করে দিয়ে যাব। যাতে শত শত বছর পরেও মানুষ এই ধ্বংসাবশেষ দেখে পার্সিয়ান সেনাদের অবিনাশী শক্তির কথা কল্পনা করে আঁতকে ওঠে”।
প্রস্তাবটা সোরেনসেনকে খুশি করতে পারল না। কিন্তু একবারে ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়ে এটা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।
“তোমরা খেয়াল রাখবে মুন-সিন দেবতার পূজা যেন কখনও শেষ হয়ে না যায়”- এই ছিল মৃত্যুর পূর্বে মহামাতা আদ্দাগুপ্পের শেষ উচ্চারণ।
খাদ্য ফুরিয়ে যাবে, বস্ত্র ফুরিয়ে যাবে, বাসস্থান থাকবে না। কিন্তু প্রভু মুন-সিন এর আরাধনা কখনও ফুরিয়ে যেতে পারবে না। এই আদর্শ নিয়ে বেঁচে ছিলেন আদ্দাগুপ্পে। এই আদর্শ ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন নিজের অনুসারীদের মাঝে।
নাবোনিডাস তায়মা চলে যাওয়ার পর দশ বছর সমস্ত ব্যাবিলনের রাজত্ব দেখা শুনা করেছেন রানী মহামাতা আদ্দাগুপ্পে। অবশ্য রাজকার্য পরিচালনার চেয়ে ধর্ম প্রচারেই অধিক সময় ব্যয় করতেন রানী। সাধারণ ব্যাবিলনবাসী যখনই কোন সমস্যা নিয়ে আদ্দাগুপ্পের স্মরনাপন্ন হয়েছে তাদেরকে একটাই সমাধান দিত প্রভু মুন-সিনের আরাধনা কর, সমস্ত মুশকিল বিদায় নেবে। এমন ভাবে ব্যাবিলনের বুকে আদ্দাগুপ্পে প্রতিষ্ঠা করেছেন মুন-সিন দেবতার অসংখ্য উপাসনালয়। সবখানেই একটা আদর্শ মেনে চলা বাধ্যতামুলক, মুন-সিন দেবতার পূজা কখনও শেষ হতে পারবে না। অনেকে বলে থাকেন মায়ের ইচ্ছাতেই নাবোনিডাস তায়মাতে থেকে যান, আর ব্যাবিলনে ফেরেননি। যেন মা তার নিজের মত করে ব্যাবিলন চালাতে পারে।
আদ্দাগুপ্পের মৃত্যুর সময় তার পাশে ছিলেন সহকারি নেক্রটিস। আদ্দাগুপ্পে প্রধান ধর্মযাজিকার দায়িত্ব নেক্রটিসের হাতে সমর্পণ করে গেছেন। সেই থেকে নেক্রটিস ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগানের শীর্ষে অবস্থিত মুন-সিন দেবতার প্রধান উপাসনালয়ে অবস্থান করছেন আর লালচে আভার আকাশের বুকে ধূপের ধোঁয়ার আস্তরণ ছড়িয়ে দিয়ে চলেছেন।
এই মুহূর্তে নেক্রটিস গভীর ধ্যানে মগ্ন। আশে পাশে কেউ নেই। আদ্দাগুপ্পের সাথে তার ধর্ম-সাধনার এই এক পার্থক্য। আদ্দাগুপ্পে সকল অনুসারীকে সাথে নিয়ে গণসংগীত গাওয়ার মাধ্যমে প্রভুর পুজো করতেন। কিন্তু নেক্রটিস পূজা-অর্চনার সময় সর্বোচ্চ নীরবতা কামনা করেন। অবশ্য তাই বলে ব্যাপারটা এমন না যে নেক্রটিস অন্যান্য অনুসারিদের তার উপাসনার সময় সরে যেতে বলেছেন। পার্সিয়ান সেনারা ব্যাবিলনের দুর্গ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে শুনে প্রভু মুন-সিনের পূজারীরা সব দল বেঁধে পালিয়েছে। পার্সিয়ান সেনাদের দয়া মায়া বলে কিছু নেই, কাউকে আস্ত রাখবে না। শুধু নেক্রটিস পালায়নি। একমনে ধ্যান করে আছেন কারণ প্রভু মুন-সিনের পূজা কখনও থামান যাবেনা। প্রভু রাগ করবেন তাহলে। প্রভুর ক্ষমতার উপরে নেক্রটিসের ভরসা আছে। প্রভু পারবেন তার অপরিসিম ক্ষমতা দিয়ে ব্যাবিলনকে রক্ষা করতে।
হঠাৎ মনে হল শুন্য উদ্যানের ভীত নড়ে উঠল ভীষণ ভাবে। ধ্যান ভেঙে গেল নেক্রটিসের, চমকে উঠে চোখ মেলে তাকালেন তিনি। প্রথমে তার মনে হল ভুমিকম্প শুরু হয়েছে। কিন্তু আরও একবার ভীত নড়ে উঠতেই বুঝলেন ভারী কিছু এসে আঘাত করছে শুন্য উদ্দানের গায়ে।
দ্রুত উঠে পড়ে উদ্যানের শীর্ষের একদম কিনারে চলে এসে নিচে উঁকি দিলেন নেক্রটিস। দেখলেন শত শত পার্সিয়ান সেনা ঘিরে রেখেছেন শুন্য উদ্যান। ঘোড়া টানা গাড়িতে করে ভারী ভারী সব পাঁথর টেনে আনা হয়েছে। এখন সেই সব পাথর বিশেষ ধরণের লিভারের সাহায্যে বিপুল শক্তি ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে উদ্যানের গায়ে। এক একটা পাথরের আঘাতে নড়ে উঠছে সমস্ত স্থাপনা। মনে হচ্ছে না এই অবিমার পাথর বর্ষণের সামনে খুব বেশিক্ষণ টিকবে শুন্য উদ্যান।
দৌড়ে এসে প্রভু মুন-সিনরে মূর্তির সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ল নেক্রটিস। দুই হাত ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে জড়ো করে বলে উঠল, “হে প্রভু। তুমি কি দেখছ না? ঐ বিধর্মীরা কেমন করে তোমার আবাস ঘর গুড়িয়ে দিচ্ছে? তুমি কি এখনও চুপ করে থাকবে প্রভু? আর চুপ করে থেকনা। থামাও ওদের। দেখিয়ে দাও তোমার অবিনশ্বর ক্ষমতা”।
বলা বাহুল্য। মুন-সিন দেবতার মূর্তির এসব কোথায় কোন ভাবান্তর হলনা। বরং নেক্রটিস দেখতে পেল বড় আকৃতির একটা থাম ভেঙে পড়ছে তার মাথার উপরে। ভয়ে আঁতকে উঠল নেক্রটিস। মাত্র এক হাতের ব্যবধানের পড়ল থামটা। তবুও প্রভুর প্রতি নেক্রটিসের বিশ্বাস একটুও কমল না। তিনি ভাবলেন হয়ত কোন কারণে প্রভু তার উপরে রাগ করেছেন, কিন্তু এই থাম ভেঙে মাথার উপর পড়া থেকে প্রভুই তাকে বাঁচিয়েছে।
কিন্তু একটু পরেই দেখা গেল মুন-সিন দেবতার মূর্তিতে ফাটল ধরেছে। প্রথমে একটা হাত কাঁধ থেকে খসে পড়ল তার। তার পর একে একে ভেঙে পড়তে থাকল সবই। মাথার ওপরের রক্ত পাথর ভেঙে পড়ে শত শত টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গেল। এবং এরই সাথে শুন্য উদ্যানের আকাশ থেকে লালচে আভা গায়েব হয়ে গেল। একশ বছর পর গনগনে সূর্যের হলদে আলো তার জায়গা ফিরে পেল। একশ বছরের পুরনো এক গণহত্যার প্রমাণ বিনষ্ট হল নিমেষেই।
কিন্তু নেক্রটিসের প্রভুভক্তি কমল না একটুও। তিনি দৌড়ে গিয়ে রক্ত পাথরের কয়েকটা ভাঙা টুকরো কুড়িয়ে নিয়ে নিজের পোশাকের সাথে বেঁধে নিলেন। এখন পালাতে হবে। এই পাথরগুলো প্রভু মুন-সিনের মতই পবিত্র তার কাছে। যে করেই হোক এগুলো রক্ষা করতে হবে।