মৌলিক থ্রিলার
ব্লাডস্টোন
নাজিম উদ দৌলা
প্রকাশকাল
আগস্ট ২০১৫
নাফিসা বেগম
আদী প্রকাশন
৩৫ বাংলাবাজার, ঢাকা- ১১০০
ফোন : ০১৬২৬২৮২৮২৭
www.adeeprokashon.org
অনলাইন পরিবেশক : www.rokomari.com/adee
প্রচ্ছদ : নাজিম উদ দৌলা
প্রিন্টার্স
জনপ্রিয় কালার প্রিন্টার্স
৪১/৪২ রুপচান লেন সূত্রাপুর, ঢাকা-১১০০।
মূল্য: ২৮০ টাকা
ISBN: ৯৭৮ ৯৮৪ ৯১৩২৮ ০ ৬
আদী প্রকাশন থেকে প্রকাশিত লেখকের অন্যান্য বই:
গল্প সংকলন
স্বপ্ন ব্যাধি ভ্রম ও অন্যান্য
ইনকারনেশন
সাজিদ ভাই, নাফিসা ভাবী এবং আদীকে
(সুখী পরিবারের সংজ্ঞা যাদের দেখে শিখছি প্রতিনিয়ত)
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
ঐতিহাসিক উপন্যাসের সংজ্ঞা কী? এখানে ইতিহাসের কোন সত্যঘটনাকে অবলম্বন করে ঔপন্যাসিকতার কল্পনার জাল বিস্তার করে চলেন। কিছু সত্যচরিত্র আর কিছু কাল্পনিক চরিত্রের মিশ্রণে কোন ঐতিহাসিক পটভূমি হয়েওঠে অর্থবহ। অর্থাৎ, যেখানে ইতিহাস থেমে যায়, সেখানেই শুরু হয় ঐতিহাসিক ঔপন্যাসিকের কল্পনার বিচরণ।
ইতিহাস আর ঐতিহাসিক উপন্যাস এক নয়। যা ঘটেছে শুধু তারই নির্ভেজাল বর্ণনা-গ্রন্থ হলও ইতিহাস। প্রমাণ ছাড়া কোনও তথ্য গ্রহণ করার কিংবা তার অদল-বদল ঘটানোর সামান্যতম স্বাধীনতা ও ইতিহাসবিদের নেই। কিন্তু যা ঘটেছে- ঐতিহাসিক উপন্যাস শুধু তারই ওপর নির্ভও করে লেখা হয়না। যা ঘটেছে তার সঙ্গে যা ঘটতে পারত বলে অনুমান করা যায়- তাকেও উপন্যাস সমমর্যাদায় গ্রহণ করে। ফলে ইতিহাসের সত্য যেখানে শুধু ঘটনার সত্য, উপন্যাসের সত্য সেখানে ঘটনার সত্যের সঙ্গে ঔপন্যাসিকের বোধ-কল্পনা দৃষ্টিও হৃদয়ের সত্যেও একসমন্বিত জীবন-শিল্প।
তাই বলা চলে, ইতিহাস শিক্ষা দেয়া ঐতিহাসিক থ্্িরলারের উদ্দেশ্য নয়। কেউ যদি ইতিহাস শেখার আশায় ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়েন, তাহলে বলব- আপনি ভুল করছেন। অবশ্য “ব্লাডস্টোন”কে পুরোপুরি অর্থে ঐতিহাসিক থ্রিলার বলা যায় কিনা তা নিয়ে আমি দ্বিধাগ্রস্ত। উপন্যাসের মূল পটভূমি বর্তমানের বাংলাদেশ, যেখানে ঘটনার সূত্র ধরে ফ্ল্যাশব্যাকে উঠে এসেছে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি।
ইতিহাস তুলে আনতে গিয়ে আমি যতটা সম্ভব সত্যের একদম কাছ ঘেঁষে গিয়েছি। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতার প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য বিদেশী রাইটারদের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ ও আর্টিকেল পড়তে হয়েছে আমাকে। এখানে কোন কিছুই হুবহু ইতিহাস থেকে নেওয়া নয়। আমার কল্পনার দৃষ্টিতে দেখা দৃশ্যগুলোই বর্ণনার মাধ্যমে বাস্তব রূপ দিতে চেষ্টা করেছি আমি। তবে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেল ও তাওরাত থেকে নেওয়া তথ্যগুলো সম্পূর্ণ অবিকৃতভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে।
বাংলার বারো ভূঁইয়াদের সময়কার অধ্যায়গুলোর কিছু আছে ইতিহাসের নির্মম সত্য আর কিছু আছে কল্পনা। তবে এর পুরোটা আমার একার কল্পনা নয়। বেশ কিছুদৃশ্য-কল্প আকার জন্য আমাকে নির্ভর করতে হয়েছে ইসমাইল হোসেন সিরাজীর “রায়নন্দিনী” উপন্যাসের উপর। ‘মাহতাব খান’ আর ‘অরুণাবতী’ ছিল রায়নন্দিনী উপন্যাসের খুব ক্ষুদ্র অংশ। কিন্তু এরাই ব্লাডস্টোনে অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর পাঠকদের অনুরোধ করব যেন উপন্যাসটি পড়ার পর রাজা প্রতাপাদিত্যকে ঘৃণার চোখে দেখতে শুরু না করেন। উপন্যাসের খলচরিত্রের প্রয়োজনে রাজা প্রতাপের চরিত্রের মন্দ দিকগুলো তুলে এনেছি। কিন্তু এই রাজা যে বাংলাকে ভালবেসে বাংলার স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আজীবন লড়ে গেছেন, তা উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়নি।
এছাড়াও ইতিহাসের যেসব ছোটখাটো ঘটনাবলি উঠে এসেছে উপন্যাসে, তার প্রায় সবই সত্য। প্রসঙ্গক্রমে ব্রিটিশ আমলের যে ইতিহাস উঠে এসেছে, তার প্রায় পঁচানব্বই ভাগ সত্য, পাঁচভাগ আমার কল্পনা। অ্যালেক্সান্ডার দি গ্রেটের মৃত্যুকালীন রহস্যময় দিনগুলির কিছু অংশ তার প্রধান সেনাপতিদের একজন টলেমীর নিজ জবানবন্দী থেকে নেয়া। কিংবদন্তী পাগানিনি সম্পর্কে এই উপন্যাসে যা কিছু জানবেন তা পাগানিনির শিষ্যরা বলে গেছেন। মাদার তেরেসার যে বিশেষ মিটিং এর কথা উঠে এসেছে তা ফ্রান্সিস বালা নামে এক বাংলাদেশী মিশনারি কর্মচারীর ডায়েরি থেকে লব্ধ। সম্রাট সাইরাসের সাথে নাবোনিডাসের ব্যাটেল অফ অপিস, মুঘল বাদশা হুমায়ূনের দিল্লির সিংহাসন থেকে বিতাড়িত হওয়া এবং ক্ষমতা পুনর্দখল, অ্যালেক্সান্ডারের কাবুল-কান্দাহার দখলের পর পাঞ্জাব পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে আবার ফিরে চলা এবং প্রাচীন সময়কার ভৌগলিক বর্ণনার জন্য ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। এই জন্য গুগুল মামাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।
তাছাড়া গত বছর পত্রজ সাহিত্য সাময়িকীর প্রথম সংখ্যার জন্য “অশ্রুপাথর” নামে ছোট একটি উপন্যাসিকা লিখেছিলাম। বিশাল “ ব্লাডস্টোন” উপন্যাসে অশ্রুপাথরের ঘটনাবলীর কিছু অংশ অনুসরণ করা হয়েছে। তবে এটি সম্পূর্ণ আলাদা একটি উপন্যাস। দুটোকে মিলিয়ে ফেলার বা একই ভাবার কোন কারণ নেই।
দীর্ঘ এই উপন্যাস লিখতে গিয়ে বন্ধু সজল, মৌরী, জিয়া, ছোটভাই কিশোর পাশা ইমন, ইশতিয়াক শুভ সহ আরও অনেকের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভাবে সাহায্য ও উৎসাহ পেয়েছি আমি। সবার নাম উল্লেখ করতে পারছি না বলে দুঃখিত। সবাইকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানাই অনেক ধন্যবাদ। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে বই আঁকারে প্রকাশ হওয়া আমার প্রথম উপন্যাস “ইনকারনেশন” প্রকাশিত হওয়ার ছয়মাস পার হওয়ার পূর্বেই প্রকাশিত হচ্ছে দ্বিতীয় থ্রিলার উপন্যাস “ ব্লাডস্টোন”। “ইনকারনেশন” আপনাদের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পেরেছিল আমি তা জানিনা। কিন্তু নিজেকে ধন্য মনে হয়েছে কারণ পাঠকের কাছ থেকে আমি প্রত্যাশিত ভালবাসা পেয়েছি। আশা করি ব্লাডস্টোনে আপনাদের প্রত্যাশার সম্পূর্ণ প্রাপ্তি ঘটবে।
ধন্যবাদান্তে,
নাজিম উদ দৌলা
১১-০৫-২০১৫