৫ই এপ্রিল, ২০১৬;
পীর সাহেবের গলি, শান্তিনগর, ঢাকা।
যেমন হঠাৎ করে শুরু হয়েছিল, ঠিক তেমনি হঠাৎ করেই ঝড় থেমে গেল। এখন শুধু গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। অঞ্জনের ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়ালে কিছু মাঝারি আকৃতির গাছের ওপর দিয়ে সামনের বড় রাস্তাটা চোখে পড়ে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভাল লাগেনা অঞ্জনের, কিন্তু মানুষের বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্য দেখাটা তার অদ্ভুত সব শখের মধ্যে একটি। বড় রাস্তার আশেপাশে দোকান ঘাটের সংখ্যা কম। আচমকা বৃষ্টি চলে এলে সঙ্গে ছাতা না থাকলে ভেজা ছাড়া কোন উপায় নেই। কেহ কেহ মাথার ওপর একটু শেডের খোঁজে দৌড় লাগায়, কেহ বা আবার “আজকে ভিজতে হবেই”- মেনে নেয় এই অমোঘ নিয়তিকে।
ঘড়িতে বাজে তিনটা। অথচ আকাশের ঘন কালো মেঘের কল্যাণে এখনই মনে হচ্ছে সন্ধ্যা নেমে গেছে। আজ সকাল থেকেই ভায়োলিন হাতে অনেকক্ষণ সুর তোলার চেষ্টা করছে অঞ্জন। মন খারাপ করা একটা দিন, আকাশ খানিকক্ষণ থেমে থেকে আবার কেঁদে উঠছে, বেহালায় বিষণ্ন একটা সুর তোলার জন্য এর চেয়ে নির্মম সময় আর কি হতে পারে? কিন্তু কিছু একটার অভাব মনে হচ্ছে অঞ্জনের! বার বার সুর কেটে যাচ্ছে।
সামুয়েল বারবারের বিখ্যাত কম্পোজিশন আগাদি ও ফরস্ট্রিংস বাজিয়েছে গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত। মাথায় এখনও সেই সুর বাজছে, অন্য কিছু করতে গেলে তাই তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। একটা এক্সপেরিমেন্ট করলে কেমন হয়? সেবাস্তিয়ান বাচের ভায়োলিন কনসার্টো কম্পোজিশনের কিছু সোলো মিউজিকই-মেজরের পরিবর্তে ডি-মাইনরে বাজানোর চেষ্টা করা যেতে পারে! বাচ বেঁচে থাকলে এই কথা শুনলে হয়ত হার্টফেল করতেন। বেচারা নিজের তৈরি কম্পোজিশনগুলি খুব ভালবাসতো, কেউ বিকৃত করুক এটা চাইত না। কিন্তু একা বাজিয়ে মজা নেই। কবির ছেলেটা থাকলে বেশ সুবিধাহত, খুব ভাল বাজায় সে। একটা ক্লাসিক মিউজিক কম্পোজিশন বিষয়ক সেমিনাওে গিয়ে তার সাথে অঞ্জনের পরিচয় হয়। সেই থেকে দুজনের মাঝে চমৎকার একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
এমন দিনের খাবারের মেনু হওয়া উচিত ভুনা খিচুরি, ইলিশ মাছ ভাজা, খাসির রেজালা আর সালাদ। কিন্তু একজন একা মানুষের ভাগ্যে এমন খাবার জোটার কোন সম্ভাবনা নেই। রান্নার কাজে অবশ্য অঞ্জনের বেশ ভালই দখল আছে। সব সময় একা একা থাকে বলে ঠেকায় পড়ে শিখতে হয়েছে।
কলিংবেল বাজল হঠাৎ। বিশাল একটা ফ্লাটে অঞ্জন একা থাকে। পৈতৃক নিবাস সিলেটে, বাবা-মা দুজনেই মারা গেছেন। একলা মানুষ ছন্নছাড়া জীবনে কখনও এখানে, কখনও ওখানে- এভাবে ভেসে বেড়াচ্ছে কেবল। বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে কিছুদিন আগে, বিয়ে-শাদী করে সংসার পাতার ইচ্ছে হয় না তার। চাকরি-ব্যবসা কিংবা অর্থ উপার্জন হবে এমন কোন ধরনের কাজের সাথেও অঞ্জন জড়িত নয়। পিতার সম্পত্তি যা ছিল তাই দিয়েই একা একজন মানুষের জীবন বেশ ভালই চলে যাচ্ছে।
হঠাৎ কলিং বেল বাজার শব্দ হল। অঞ্জন এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে চমকে উঠল। দেখল দরজার বাইরে কবির দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টিতে হালকা ভিজে গেছে বেচারা। মাথার চুল মুছছে রুমাল দিয়ে। অঞ্জনের মুখে হাসি ফুটল, “কবির! অনেকদিন বাঁচবে ভায়া। তোমার কথাই তো ভাবছিলাম! এসো এসো!”
“কী সৌভাগ্য! কী সৌভাগ্য আমার! অঞ্জনদা আমার কথা ভাবছেন!” কবিরের মুখেও হাসি।
“তারপর? বলো কী অবস্থা?”
“এই তো দাদা, ভালই কাটছে দিনকাল।” ফ্লাটের ভেতরে ঢুকে পায়ের স্যান্ডেল খুলে এক পাশে রাখল কবির।
অঞ্জন কবিরের মাথা মুছার জন্য একটা টাওয়েল নিয়ে এলো। সেটা কবিরের দিকে বাড়িয়ে দেয়ার সময় বলল, “দিনকাল তো ভাল কাটবেই! নতুন বিয়ে করেছ ভায়া!”
“নতুন আর কই? বছর এক বছরের মত তো হয়েই গেল...” কবির অঞ্জনের হাত থেকে টাওয়েলটা নিলো। তার মুখে লাজুক হাসি।
“হয়েছে হয়েছে! আর লজ্জা পেতে হবে না! তোমার স্ত্রী কেমন আছে তাই বলো?”
“হ্যাঁ ভাল আছে।” অঞ্জনের ফ্ল্যাটের বিশাল ড্রয়িং রুমের বিলাসবহুল সোফায় আরাম কওে বসল কবির।
অঞ্জন চোখ রাঙিয়ে বলল, “বউ নিশ্চয়ই গভীর রাত পর্যন্ত বেহালা বাজিয়ে শোনানোর আবদার করে?”
“আরে নাহ! মিলির আসলে এসবে খুব একটা আগ্রহ নেই!”
“বল কি? সুরের প্রতি নারীর অনাগ্রহ!” অঞ্জনের দৃষ্টিতে অবিশ্বাস। “এতো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যেও কথা শোনালে ভায়া!”
“ঠিক অনাগ্রহ বলা ঠিক হবে না।" কবির একহাতে মাথা চুলকাচ্ছে। “আসলে এমনিতেই আমাদেও অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ, তার উপর মেয়েটি একটু লাজুক প্রকৃতির। এখনও সবকথা মুখ ফুটে বলতে চায় না আমার সামনে!”
“হাহাহা”! প্রাণখুলে বেশ খানিকক্ষণ হাসল অঞ্জন। হাসি থামতে বলল, “পারফেক্ট বাঙালী কন্যা পেয়েছ ভাই! ঠিক যেমনটি তোমার দরকার ছিল! এই জন্যই তো এই মডার্ন যুগে এখনও অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ টিকে আছে!”
“আমাদের অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ হলেও আমরা পরস্পরকে অনেকদিন ধরে চিনি অঞ্জন দা। ভালবাসার সম্পর্ক না থাকলেও বন্ধুত্ব ছিল অনেক দিনের।”
অঞ্জন মাথা নেড়ে বলল, “যতই চেনা জানা হোক, বিয়ে মানেই নতুন বউ। আর নতুন বউ মানেই নতুন জীবন।”
“পারফেক্ট কথা বলেছেন দাদা।” কবির সম্মতি দানের ভঙ্গীতে মাথা ঝাঁকাল।
“কিন্তু নতুন বউ বাড়িতে ফেলে বাইরে ঘুরছ কেন? এটাতো ঠিক না ভায়া।” অঞ্জনের মুখে দুষ্টুমির হাসি।
“ইয়ে... মিলি একটু তার বাবার বাড়িতে গেছে। কয়েকদিন থাকবে।”
অঞ্জন ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, “মেয়ের বাপের বাড়ি কাছে হলে যা হয় আরকি। দুবেলা এইকাজে সেইকাজে দে ছুট!”
“অবশ্য আমিও খুব একটা কিছু বলি না।” একমুহূর্ত থেমে থেকে আবার বললো কবির। “আপনি তো জানেন যে বাবা-মা, ভাই-বোন কেউ নেই আমার। আমি সারাদিন থাকি মিউজিকের স্কুলে ব্যস্ত। খালি বাড়িতে মেয়েটা একা একা বসে থেকে বোর হয়।”
“হুম, বুঝতে পারছি।”
“আপনার কথা বলুন। কী করছিলেন? নতুন কোন কম্পোজিশন তুলেছেন?” জিজ্ঞাসা করলো কবির।
“একটা এক্সপেরিমেন্ট করলে কেমন হয় ভাবছি! বাচের ‘ভায়োলিন কনসার্টো’ ডিমাইনেও বাজাব।”
“বাহ! ইন্টারেস্টিং হবে মনে হচ্ছে।” কবিরের কণ্ঠে আগ্রহ।
“তুমি চলে এসেছ, এখন দুজন মিলে বসব। দাঁড়াও আগে চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে দেই। শরীরটাকে গরম কওে নিতে হবেনা? তোমার গায়ের শার্টটা তো ভিজে গেছে, চাইলে কাবারড থেকে আমার একটা টি-শার্ট বের করে পড়তে পার।”
অঞ্জন কিচেনে গিয়ে চা বসিয়ে দিয়ে ফিরে আসল। কবির শার্ট পালটে অঞ্জনের একটা নীল- রঙের টিশার্ট গায়ে দিয়েছে। একটা বেহালা হাতে নিয়ে টুকটাক সুর তুলছিল সে। অঞ্জনকে দেখে বলল, “কালরাতে জেসি কাইয়েহর করা স্যাড রোমান্স মিউজিকের সোলোটা পারফেক্ট তুলেছি অঞ্জনদা!”
“জেসি কাইয়েহ আবার কে?” অঞ্জন হতবাক।
“আপনি জেসিকার নাম শুনেন নাই?” অবাক হল কবির। “বিখ্যাত অপেরা সিঙ্গার জুলিয়াইয়েহর মেয়ে! সেতো এইযুগের ক্রেজ! সুন্দর, সেক্সি আর চমৎকার ভায়লিনিস্ট। ওর স্যাড রোমান্স মিউজিকতো ইয়াং ছেলেপিলেদেও মাথা নষ্ট কওে দিয়েছ! ওভারদা গ্রিনফিল্ড নামের পঞ্চাশ পর্বের একটা কোরিয়ান ধারাবাহিক ড্রামা পুরোটা দেখে ফেলেছি আমি শুধু এই মিউজিকটার কারণে।”
“বাজাও তো দেখি! বেশ ইন্টারেস্টিং কিছু মনে হচ্ছে!”
ভায়োলিন হাতে নিয়ে সুর তুলল কবির। মুহূর্তেই ডুবে গেল গভীর বিষাদে! তার চোখে সামনে ভেসে উঠছে ওভারদা গ্রিনফিল্ড ড্রামার দৃশ্যপট। “চাথেইউং” গাড়ির সেলসম্যান, সততার আদর্শে উজ্জিবত একজন তরুণ, কিন্তু খুব গরীব ফ্যামিলিতে তার জন্ম। প্রতিমুহূর্তে দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় তাকে। কিন্তু চোখের সামনে কোন অন্যায় অবিচার ঘটতে দেখলে কখনও মেনে নেয়না, দৃঢ়তার সাথে প্রতিবাদ করে। অন্যদিকে “সংইয়াংহু” নামের মেয়েটি একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। ধনির দুলালী, খুব বেশি জেদি আর একরোখা স্বভাব তার। কারো হুকুম মেনে নিতে নারাজ। দুজন ভিন্ন ধরনের মানুষ একে অপরের কাছে আসল, ভালবাসল! এই ভালবাসার কারণেই পরস্পরের জন্য নিজের জীবনের সবটুকু সুখ উৎসর্গ করার অনবদ্য এক প্রেমকাহিনী!
“বাহ! অসাধারণ, অসাধারণ!” কবির থামতেই হাত তালি দিয়ে উঠল অঞ্জন।
“মেয়েটি তিনবছর বয়স থেকে ভায়োলিন চর্চা করত, অঞ্জন দা। তবে সে বেশি বিখ্যাত হয়েছে তার চার্ম দিয়ে, দেখলে প্রেমে পড়ে যাবে দাদা! গ্যারান্টি দিতে পারি।”
“আরে ধুর! ওইসব প্রেম ভালোবাসা আমাকে দিয়ে হবে না।” ঠোঁট উল্টে হতাশ একটা ভঙ্গী করল অঞ্জন।
“বয়স তো কম হলো না দাদা”। কবিরের চোখে মুখে আগ্রহ, যেন প্রিয় অঞ্জনদার বিয়ের দাওয়াত পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। “চল্লিশ তো পার করে ফেলেছেন। এখনও বিয়ে করছেন না কেন? আপনার বাবা তো অঢেল সহায় সম্পত্তি রেখে গেছেন। স্ত্রীকে কামাই রোজগার কওে খাওয়ানোর টেনশন নেই। সারাদিন শুধু সামনে বসিয়ে ভায়োলিন বাজিয়ে শুনবেন!”
“সংসার আমার জন্য না কবির।” উদাস গলায় বলল অঞ্জন। “সুরের সাধনা ছাড়া আমার আর কোন কাজে কখনও মন বসবেনা কখনও!”
“কী পান দাদা এই সাধনা করে?”
“সাধনায় কি না মেলে বল?” অঞ্জন হাসল। “পাগানিনির নাম তো নিশ্চয়ই শুনেছ?”
“কী বলছেন? তাকে চিনবো না? পাগানিনির বিখ্যাত ‘২৪ নম্বর ক্যাপ্রাইস’ কম্পোজিশন! আহা! কী নেই ওর মধ্যে? ওর চেয়ে ভাল ভায়োলিনের কম্পোজিশন আর কেউ কখনও করতে পারেনি।”
“এই পাগানিনি সুরের সাধনার জন্য কি করেছিলেন জান?” অঞ্জন জিজ্ঞাসা করল।
“বেশি কিছু জানি না”। না-বোধক মাথা ঝাঁকাল কবির।
“অনেকে ধারণা করে পাগানিনি ছিলেন শয়তানের উপাসক। প্রথম জীবনে তিনি খুব একটা ভাল বেহালা বাজাতে পারতেন না। ভাল বেহালা বাজানোর ক্ষমতার বিনিময়ে তিনি নিজের আত্মা শয়তানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন!”
“কি বলছেন আপনি? সত্যি নাকি?” কবিরের কণ্ঠে যারপর নাই বিস্ময়।
“সত্যি মিথ্যা জানি না। তবে শুনেছি লোকটার প্রত্যেকটি কনসার্টে দর্শকরা সুরের মূর্ছণায় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বসে থাকত। অনেকে বলে পাগানিনির মাঝে তখন স্বয়ং শয়তান উপস্থিত থাকত”!
“ভারি ইন্টারেস্টিং তো!”
“তবে একটা জিনিস কি জানো?” এক মুহূর্ত থামল অঞ্জন। তারপর কবিরকে কিছু বলতে না দিয়েই বলে গেল, "এতনাম-যশ-খ্যাতি অর্জনের পরও লোকটা ছিল খুব বেশি অসুখী। ঘর সংসার ছেড়ে সারাজীবন ঘুওে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে। দিনের মধ্যে খাওয়া আর সাময়িক বিশ্রামবাদে প্রায় পুরোটা সময় তিনি বেহালা হাতে বসে থাকতেন, নানা রকম সুরের এক্সপেরিমেন্ট করতেন। কিসের নেশায় যেন সারাক্ষণ বিভোর থাকতেন। কেউ জানেন না এই মানুষটা সারাজীবন আসলে কী খুঁজে গেছেন!”
“এই না হলে সুরের সাধনা!” কবিরের কণ্ঠে প্রশংসার সুর।
অঞ্জন বলে যাচ্ছে, “পরবর্তী সময়ে পাগানিনির ছাত্র ক্যামিলো সিভরি তার ওস্তাদেও দেখানো পথে সাধন করে গেছেন। শুধু তাই না, জেমস বারনার, বরিস ব্লেচার, লোয়েল লাইবারম্যান, জেফ নেলসন, রাফায়েল আগুস্টাইন ইতিহাসের এমন অনেক বিখ্যাত ভায়োলিনিস্ট পাগানিনিকে অনুসরণ করেছেন এবং তার দেখানো পথে সুরের সাধনা করেছেন।”
“কী অদ্ভুত! একদম কিচ্ছু জানা ছিল না এ সম্পর্কে!”
“আরও একটা মজার বিষয় আছে”। হাসি হাসি চেহারা অঞ্জনের। “ইতালির জেনোয়ার মিউজিয়ামে পাগানিনির যে বিখ্যাত ভায়োলিন ‘ক্যানোনেগুয়ারেনিয়াস’ সংরক্ষিত আছে, অনেকে মনে করে সেটা আসল না।আসল ভায়োলিনটা ছিল অভিশপ্ত, তাই পাগানিনি সেটা ধ্বংস করে দিয়েছেন”।
“এতো দেখছি রীতিমত রহস্য গল্প শুরু হয়ে গেল, দাদা।”
“রহস্যেও আর কি দেখেছ? এই রহস্যেও কোন শেষ নেই...”
উচ্চ শব্দে রিংটোন বেজে উঠল হঠাৎ। মোবাইলের খোঁজে পকেটে হাত চালাল কবির। “এই মোবাইল জিনিসটা বড় অদ্ভুত অঞ্জনদা! যখনই তুমি খুব মনোযোগ দিয়ে কোন কাজ করতে যাবে ঠিক তখনই বেজে উঠে মনোযোগ নষ্ট করে দেবে!”
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল অঞ্জন, “প্রযুক্তি আমাদের দিয়েছে অনেক কিছু, কিন্তু জীবনকে করেছে যান্ত্রিক।”
কবির মোবাইল বের করে রিসিভ করল, “হ্যালো!”
ওপাশ থেকে এক নাগাড়ে কিছু কথা বলা হল। কবির কিছুক্ষণ হু হা করল। তারপর কান থেকে ফোন নামিয়ে রেখে অঞ্জনের দিকে তাকাল। “একটা বাজে ঘটনা ঘটে গেছে দাদা!”
“কী ঘটনা?” অঞ্জনের কণ্ঠে উৎকণ্ঠা।
“বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রাচীন আমলের অলংকারের একটা প্রদর্শনী হচ্ছিল ঢাকায়। সেখান থেকে একটা ব্রিটিশ অলংকার চুরি হয়ে গেছে। চুরির সময় মিলি তার আশেপাশেই ছিল। পুলিশ চোর সন্দেহে তাকে গ্রেফতার করেছে!”
“সর্বনাশ...”