খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দ;
ব্যাবিলনের দুর্গ, মেসোপটেমিয়া।
“মহামান্য বিজ্ঞানী ময়নিহান, বলুন কী বার্তা এনেছেন আপনি?” লম্বা দরবার কক্ষে সম্রাট নেবুচাদনেজারের কণ্ঠ গমগম করে উঠল।
ব্যাবিলনের দুর্গের বিশাল দরবার কক্ষে এই মুহূর্তে কেউ নেই। সম্রাট বসে আছেন তার বিশেষ আরামদায়ক আসনে, দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে তার দুজন আস্থাভাজন দেহরক্ষী। সামনেই অপেক্ষাকৃত নিচু আসনে বসে আছেন ব্যাবিলনের সর্বজনবিদিত বিজ্ঞানী মহামান্য ময়নিহান।
“সম্রাট, আমাদের কাজ শেষের পথে।" হাসি মুখে কথাটা বললেন বিজ্ঞানী।
কথাটা যেন শান্তির পরশ বুলিয়ে গেল সম্রাট নেবুচাদনেজারের সমস্ত সত্ত্বায়। “সত্যি মহামান্য ময়নিহান! আপনার তুলনা হয় না! আমি জানতাম আপনি পারবেন। এই অসাধ্য সাধন কেবল আপনার মত একজন বিজ্ঞানীর পক্ষেই সম্ভব।"
“কিন্তু সম্রাট...” কথাটা শেষ করল না ময়নিহান। মুখের হাসিটা মুছে গেছে তার।
“এর মাঝে আবার কিন্তু কী ময়নিহান?” নেবুচাদনেজারের কণ্ঠে আশঙ্কা প্রকাশ পেল।
“একটা বিষয় নিয়ে সমস্যার সম্মুখিন হয়েছি আমরা।"
“কী বিষয়? বিস্তারিত বলুন বিজ্ঞানী। লুকিয়ে রাখবেন না দয়া করে।" সম্রাটের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল।
এক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেন বিজ্ঞানী ময়নিহান। তারপর বললেন, “সম্রাট, পরিকল্পনামাফিক আমরা ঝুলন্ত উদ্যান নির্মাণের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। পিলারের উপর নির্মিত হওয়া পাথরের দেয়াল ও মেঝেতে বিছিয়ে ধাপে ধাপে উঁচু হয়েছে ঝুলন্ত উদ্যানের মাটি। সমস্ত উদ্যানজুড়ে অসংখ্য বৃক্ষের সমাবেশ। মিডিয়ান রাজ্য থেকে আনা হয়েছে নানা ধরনের বাহারি ফুলগাছ, যা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে অপরুপ সুন্দর বাগান। উদ্যানের চারিদিকে স্বচ্ছ পানির পরিখা খনন করা হয়েছে। পরিখা থেকে চমৎকার স্বয়ংক্রিয় উপায়ে পানি নিয়ে উদ্যানের বৃক্ষসমুহের পানির চাহিদা মেটানো হচ্ছে। প্রখর রৌদ্রতাপ এড়াতে উদ্যানের উপরিভাবে শামিয়ানা দ্বারা বিশেষ পদ্ধতিতে বৃক্ষের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোট কথা- ব্যাবিলনের বুকে আমরা সৃষ্টি করেছি মিডিয়ান রাজ্যের ছোটখাট একটি প্রতিরূপ। চমৎকার ভাবে দাঁড়িয়ে আছে গোটা উদ্যান। কিন্তু একটা জায়গায় একটু সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি...”
“ কোন জায়গা ময়নিহান? নিঃসংকোচে বলুন আমার কাছে।" তাগাদা দিল সম্রাট। আমাকে আর চিন্তায় রাখবেন না দয়া করে! এমনিতেই যুদাহ যুদ্ধ নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। পঁচিশ মাসের অধিক সময় ব্যাপী একের পর এক আক্রমন করে যাচ্ছি আমরা অথচ জেডিকায়াহ তা প্রত্যেকবার সাফল্যের সাথে প্রতিহত করে চলেছে। সময় মত যুদাহ হস্তগত করতে না পারলে ওরা হেম দেশের ফারাওদের সাথে একত্র হয়ে যে কোনো সময় ব্যাবিলন আক্রমন করে বসতে পারে! ওদিকে সময় দেব নাকি উদ্যানের নির্মাণ নিয়ে ভাবব? আর দুশ্চিন্তায় রাখবেন না আমাকে। বলুন কোন জায়গায় সমস্যা হল আপনাদের?”
“আকাশ।" সংক্ষেপে উত্তর দিল ময়নিহান।
“ওহ! বুঝতে পেরেছি।" হ্যাঁ-বোধক ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল সম্রাট নেবুচাদনেজার। “আপনি বলতে চাইছেন উদ্যানের উপরিভাগের আকাশে মিডিয়ান রাজ্যের মত আবিরের লালচে রঙের আভা ছড়িয়ে দিতে পারেননি?”
“জি না, সম্রাট। এই জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।"
নেবুচাদনেজার অভয় দানের হাসি হাসলেন, “এতে ক্ষমা চাওয়ার কী আছে? এখনও পারেননি, তারমানে তো এই না যে কখনোই পারবেন না! আপনার উপর আমার ভরসা আছে মহামান্য বিজ্ঞানী। সময়ের আগেই আপনি তা করতে পারবেন।"
“ব্যাপারটা আসলেই খুব জটিল।” ময়নিহানের কণ্ঠে হতাশা। “মনে হচ্ছে সময়ের মধ্য শেষ করা যাবে না।"
“আপনার মুখে এই কথা মানাচ্ছে না ময়নিহান। সমস্ত ব্যাবিলন জানে আপনার সামনে অসাধ্য বলে কিছু নেই।"
“আমাকে ক্ষমা করবেন মহারাজ। আমি সত্যি অপারগ।" মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে দুই হাত জড়ো করে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গি করল বিজ্ঞানী ময়নিহান।
“না না না... ময়নিহান! আপনি এইকথা বলতে পারেন না!” সম্রাট উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে গেল। প্রবল বেগে মাথা নাড়ছেন। “আপনার হাত দিয়ে গড়ে উঠেছে ব্যাবিলনের সব বিস্ময়কর ইমারত। আপনার হাত ধরে ব্যাবিলন এগিয়ে এসেছে কয়েকশো বছর। মেসোপটেমিয়ার এই ব্যাপক অগ্রগতিতে আপনার একার অবদানই অগ্রগণ্য। দূর দূরান্তের মানব বসতি থেকে মানুষ ব্যাবিলনে আসে আপনার হাত ধরে বিজ্ঞান শিক্ষা লাভের আশায়! আপনি তো আমারও শিক্ষাগুরু, আমি নিজেও আমার বিজ্ঞান চর্চার আগ্রহটুকু আপনার কাছ থেকে পেয়েছি। ময়নিহান শুধু ব্যাবিলন নগরীর নয়, গোটা মানবজাতির গর্ব। আর সেই ময়নিহান কি করে বলছে যে সে অপারগ? আমি এ বিশ্বাস করি না।"
ময়নিহান হাসল। বলল, “সম্রাট, আমি যত বড় বিজ্ঞানী হই না কেন। স্রস্টার সৃষ্টির সামনে আমার সৃষ্টি কিছুই নয়। স্রষ্টার সৃষ্টিকে বদলে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়!”
“কিন্তু আমি যে রানী অ্যামিতিসকে কথা দিয়েছিলাম? তার কী হবে? আপনি তো জানেন যে ব্যাবিলনের রাজার কাছে ওয়াদা রক্ষা অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। জানেন না? আমরা প্রয়োজনে জীবন দিব তবুও কথার বরখেলাপ হতে দেবো না!”
“আমি তা জানি সম্রাট”। বিজ্ঞানী ময়নিহান বলল, “আপনার পিতা নাবাপোলাসা আমার বন্ধু ছিলেন। আমি নিজ চোখে দেখেছি তিনি কথা দিলে কথা রাখার জন্য কতটা মরিয়া হয়ে যেতেন। আপনিতো তারি সুযোগ্য উত্তরসূরি। পিতার সব গুনই আপনার মধ্যে বিদ্যমান। কিন্তু এইক্ষেত্রে আপনার কিই বা করার আছে সম্রাট।”
“কোনো উপায় কি নেই ময়নিহান?” সম্রাট হতাশ হয়ে আবার সিংহাসনে বসে পড়ল। “কোনোভাবেই কি চেষ্টা করে দেখা যায় না?”
“আমরা একটা বিশেষ প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করেছিলাম। সফল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর সফলতা আসেনি।"
“একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?” সম্রাটের কণ্ঠে আগ্রহ, আবার যেন আশার আলো দেখছেন।
“আপনি তো জানেন ব্যাবিলনের উত্তর দিকে হীরকখন্ডের ন্যায় এক প্রকার মহামূল্যবান পাথর পাওয়া যায়, যাতে সূর্যের তাপ পড়লে হলদে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে?” প্রশ্ন করলেন ময়নিহান।
“পাওয়া যায় না বলে একসময় পাওয়া যেত বললে ভাল হয়। গত একশ বছরে অ্যাসিরীয়রা ব্যাবিলনের যে সকল সম্পদ ধ্বংস করে দিয়েছে ঐ মহামূল্যবান পাথর তার মধ্যে উল্লেযোগ্য।" হাত দিয়ে গলার মালা স্পর্শ করল নেবুচাদনেজার। “আমিও এই মুহূর্তে ঐ পাথর দ্বারা সৃষ্ট গলা বন্ধনী পড়ে আছি। অ্যাসিরীয়রা সমস্ত পাথর তুলে নিয়ে গিয়ে মিশরের ফারাও রাজাদের কাছে আর দূরের সেই সিন্ধু সভ্যতার নিকট বিক্রি করে দিয়েছে। যৎসামান্য যা বাকি আছে তাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর।"
“কিন্তু আপনার পিতার উত্তরাঞ্চলের ঘাটিতে বেশ কিছু পাথরখন্ড সংরক্ষিত ছিল", বলল ময়নিহান। “আমরা সেখান থেকে বিশাল আকৃতির একটা পাথর ব্যাবিলনে আনিয়েছি।"
“কিন্তু ওটা কি কাজে লাগবে তার আমার বোধগম্য হচ্ছে না।"
“সম্রাট, ঐ পাথরের গায়ে সূর্যতাপ পড়লে চারিদিকে যে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে তা একটা বিশেষ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে করালে একশ গুন বেড়ে যায়...”
পাথরটির সব ধরণের ব্যবহার একে একে বুঝিয়ে দিল বিজ্ঞানী ময়নিহান। সম্রাট কেবল উৎসাহ দানের ভঙ্গিতে “আচ্ছা!” “আচ্ছা!” করে গেলেন।
বুঝানো শেষে প্রশ্ন করল ময়নিহান, “আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন যে আমরা আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী ঝুলন্ত উদ্যানের শীর্ষে রানী অ্যামিতিসের একটি মূর্তি নির্মাণ করেছি?”
“দেখেছি”। বলল সম্রাট। “চমৎকার কারুকার্য! হুবুহু রানীর অবয়বের প্রতিরূপ যেন।"
ময়নিহান বলে চলেছেন, “আমরা একটি পাথর খন্ড রানী অ্যামিতিসের মূর্তির মস্তকের উপরে স্থাপন করেছিলাম। সূর্যালোক পড়তেই সেই পাথরখন্ড থেকে আলোর বিচ্ছুরণ হয়, আর চারিদিকের দেয়াল জুড়ে বসানো কাচের টুকরোয় প্রতিফলিত হয়ে আলো বেড়ে যায় একশ গুন। তবে এতেই সবটা আলকিত হওয়া সম্ভব ছিলনা। তবে এখানে আমার নিজস্ব একটি বিশেষ প্রক্রিয়া আছে যা আমি সাধারণের কাছ থেকে গোপন রাখতে ইচ্ছুক... কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের... তারপরও কোন কাজ হয়নি। এই প্রক্রিয়ায় সমস্ত উদ্যান জুড়ে এক ধরণের তামাটে আভা ছড়িয়ে যায়। কিন্তু তা মিডিয়ান রাজ্যের আকাশের লালচে আভার মত নয়।"
আশার আলো হঠাৎ দপ করে নিভে গেল সম্রাট নেবুচাদনেজারের চোখ থেকে।
“আমি দুঃখিত সম্রাট।" অসহায় ভঙ্গীতে মাথা নাড়লেন ময়নিহান।“সব ধরণের চেষ্টা করা হয়েছে... কিন্তু এটা কিছুতেই করা সম্ভব হয়নি।"
সম্রাটের কণ্ঠে দ্বিগুণ হতাশা- “এটা সম্ভব না হলে সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবে ময়নিহান। এত সম্পদ... এত শ্রম... এত কিছু ব্যয় করে যে স্থাপনা আমরা নির্মাণ করেছি তা উদ্দেশ্যহীন হয়ে যাবে!”
ময়নিহান কিছু বলার মত পাচ্ছেন না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলেন।
“বিজ্ঞানী ময়নিহান।" ডাকল সম্রাট।
“জি সম্রাট?” মাথা তুলে তাকালেন ময়নিহান।
“সত্যি করে বলুন তো আপনি কিছু লুকাচ্ছেন নাকি? আমার কেন যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা গোপন করে যাচ্ছেন আপনি।”
ময়নিহান কিছু বলছেন না।
“চুপ করে থাকবেন না মহামান্য বিজ্ঞানী।" অস্থির হয়ে উঠলেন সম্রাট। “আমি রানী অ্যামিতিসকে কথা দিয়েছি একশত পূর্ণ চাঁদের পূর্ণিমা পার হওয়ার পূর্বেই তাকে তার রাজ্যের আবহাওয়া উপহার দিব এই ব্যাবিলনের বুকে। আর মাত্র তেরটি পূর্ণিমা বাকি। এর মধ্যে কাজটা সম্পন্ন করা না গেলে আমার দেয়া কথা মিথ্যা হয়ে যাবে! আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা উপায় আছে! আপনি সেটা জানেন! কিন্তু কাজটা হয়ত অনেক কঠিন হবে, তাই আপনি উপায়টা আমার কাছে বলছেন না!”
কয়েক মুহূর্ত নিরবে কাটল। তারপর ময়নিহান বললেন, “আপনি ঠিক বলেছেন সম্রাট। উপায় একটা আছে, কিন্তু উপায়টা বড় কঠিন।"
কয়েক মুহূর্ত কেটে গেল। কেউ কোন কথা বলছে না। সম্রাট অধৈর্য হয়ে উঠলেন। অভয় দিলেন ময়নিহানকে, “হে মহান বিজ্ঞানী। কী সেই উপায়? দয়া করে সমস্ত দ্বিধা ঝেড়ে বলে ফেলুন”।
ময়নিহান জবাব দিলেন, “ঐ হীরকখন্ডের ন্যায় পাথরের তামাটে আলোকে লাল আলোতে রূপান্তর করতে হবে।"
“এটা কি সম্ভব?” সম্রাটের কণ্ঠে একই সাথে সন্দেহ আর নির্ভরতার সুর টের পাওয়া যাচ্ছে।
“হ্যাঁ, সম্ভব। কিন্তু কাজটা দুঃসাধ্য”। ময়নিহান যেন অনেকটা স্বগোক্তি করছেন, “আমাদের রক্ত লাগবে! রক্ত! অনেক রক্ত...!”
“কীসের রক্ত? কতটা লাগবে?”
কয়েক মুহূর্তের বিরতি। ময়নিহান আস্তে করে বললেন, “মানুষের রক্ত। কমপক্ষে এক হাজার মানুষের রক্ত!”
“বলেন কী?” আঁতকে উঠলেন সম্রাট। “মানুষের রক্ত! এ তো দেখছি ভয়ংকর ব্যাপার।”
“এইজন্যই বললাম যে কাজটা দুঃসাধ্য”। ময়নিহার অন্য দিকে ফিরে কথাটা বললেন, সরাসরি সম্রাটের দিকে তাকাচ্ছেন না।
“কিন্তু রক্ত দিয়ে কী করে আপনি ঐ পাথরের হলদে আলোকে লাল আলোতে রূপান্তর করবেন?”
“আমার কাজ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের কী কোনো অবকাশ আছে সম্রাট?”
“না... আসলে...জানেনই তো যে আমিও বিজ্ঞানচর্চা করতে ভালবাসি। জানতে ইচ্ছে করছে কি করে রক্ত দিয়ে আপনি আলোর রূপ পাল্টে দিতে পারবেন”। আরও কিছু কথা বলে প্রশ্নটা করার কারণ ব্যাখ্যা করল সম্রাট।
বিজ্ঞানী ময়নিহান এক মুহূর্ত কিছু একটা ভাবলেন। তারপর বুঝিয়ে দিতে থাকলেন বিষয়টা- “এই পাথরখন্ডের গায়ে অসংখ্য ছোট ছোট রন্ধ্র রয়েছে। একটি পাত্রে একশ মানুষের রক্ত উচ্চতাপে উত্তপ্ত করে তাতে পাথরখন্ডটি রেখে আবারও উচ্চতাপে উত্তপ্ত করতে হবে। একটা সময় সমস্ত রন্ধ্র রক্তে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়ে পাথরটি একটি রক্ত পাথরে রূপ নেবে যা থেকে লাল আলো টিকরে বের হবে।"
“কিন্তু বিজ্ঞানের নীতি অনুযায়ী তো এটা সম্ভব নয় ময়নিহান!” না- বোধক মাথা নাড়লেন সম্রাট নেবুচাদনেজার। বললেন, “পাথরটির গায়ের রঙ পরিবর্তন হলেই তো আর তা থেকে লালচে আলো বের হবে না! আর যদি হয়ই তাহলে রক্ত কেন প্রয়োজন? লাল রঙ ব্যবহার করে কাজটা করা যায় না? আর রক্তই যদি লাগে তাহলে মানুষের রক্ত কেন? পশুর রক্ত ব্যবহার করলে হবে না?”
ময়নিহার হাসলেন, “এই জন্যই তো বললাম যে বাকিটা আমার ব্যাপার। এখানেও একটা বিশেষ বিষয় আছে যা সাধারণের সামানে প্রকাশ্য নয়। মানুষের রক্তের একটি বিশেষ উপাদান আছে যা এই কাজে প্রয়োজন। আর এখানে পাথরের রঙ পাল্টাচ্ছে না, গোটা পাথরের গঠন বদলে যাবে। প্রত্যেকটা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম অংশ পরিবরতিত হয়ে লাল আকার ধারণ করবে। লাল রঙের আলো ছড়াবে চারিদিকে। আপনি আমাকে প্রয়োজনীয় সব উপকরণ এনে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। বাকিটা আমি দেখছি...”
সম্রাটের মুখে আবার হাসি ফুটল। ময়নিহান যখন বলছেন পারবেন, তখন এতে কোন ভুল নেই। বিজ্ঞানী ময়নিহান অতীতেও অনেক অসম্ভব পরিকল্পনার সমাধান করে দিয়েছেন। এটা তো তার কাছে নতুন কিছু নয়। তবুও নিশ্চিত হওয়ার জন্য শেষ একটা বার জিজ্ঞেস করলেন সম্রাট, আমি একটা বড় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি ময়নিহান। আর একবার একটু নিশ্চিত করে বলেন- আসলেই কি এটা সম্ভব?”
“এটা অবশ্যই সম্ভব!” দৃঢ় কণ্ঠে বললেন ময়নিহান। “কিন্তু অত রক্ত কীভাবে আসবে সম্রাট? একহাজার পূর্ণ বয়সী মানুষের রক্ত লাগবে।"
“কীভাবে আসবে সেটা আপনাকে ভাবতে হবেনা বিজ্ঞানী। আপনি প্রক্রিয়া শুরু করুন। আপনার যেমন কিছু নিজস্ব পদ্ধতি আছে আপনি গোপন রাখতে চান, ঠিক তেমনি আমারও আছে!” সম্রাটের ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি, মাথায় চলছে অন্য রকম কিছু চিন্তা ভাবনা।
“ঠিক আছে, সম্রাট। আমি কাজ শুরু করে দিচ্ছি।" বলে উল্টো ঘুরল ময়নিহান। দরবার ছেড়ে বেরিয়ে যাবে ঠিক তখন পেছন থেকে ডাক দিল সম্রাট নেবুচাদনেজার।
“মহামান্য ময়নিহান!”
ময়নিহান দাঁড়িয়ে গেলেন। কিন্তু সম্রাটের দিকে ঘুরে তাকালেন না, মুখেও কিছু বললেন না।
সম্রাট নেবুচাদনেজার বলল, “একটা কথা রাখবেন কি মহামান্য ময়নিহান?"
“কী কথা সম্রাট?”
“মৃত্যুর পূর্বে আপনার জ্ঞানের ভান্ডার থেকে সবকিছু কাউকে শিখিয়ে যাবেন ময়নিহান। যদি তা না করেন তাহলে মানবজাতির অগ্রগতি থমকে যাবে। আজ যদি গোটা ব্যাবিলন ধ্বংস হয়ে যায় তবে শতাব্দির পর শতাব্দি মানুষ হতবাক হয়ে ভাববে এত আগে কী করে আমরা এমন বিস্ময়কর সব সৃষ্টি করেছিলাম!”
ময়নিহান মুচকি হাসলেন শুধু। কিছু বললেন না।