(দ্বিতীয় পর্বের পর)
পরদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলেন নতুন এক ওমর সাহেব। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দৃঢ় চোয়াল আর দু চোখে ধারাল দৃষ্টি বলে দিচ্ছে আজকের তিনি আর গতকালের তিনি এক মানুষ নন। ধীরে সুস্থে সকালের নাস্তা বানালেন তিনি। কাজের মহিলাকে ছুটি দিয়েছেন কিছুদিনের জন্য। এখন একাকী থাকতে চান কিছুদিন।
নাস্তা শেষ করে বাসায় নাবিলার নিজের রুম বাদে অন্য তিনটা রুম আর স্পেস থেকে লুকানো কয়েকটা ছোট মাইক্রোফোন বের করলেন তিনি। নাবিলার কথা তার এতই ভালো লাগত যে, তিনি তার অজান্তে ছোট মাইক্রোফোন বসিয়েছিলেন। কথা রেকর্ড করতেন দুজনের। শুধু যখন দুইজনে কথা বলতেন তখন।
মেয়ের প্রাইভেসির অমর্যাদা তিনি করেননি। একাকী থাকার সময়, অফিসের কাজের ফাঁকে নিজেদের কথোপকথন শুনতেন কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে। এটা তার কাছে একটা নেশার মতো ছিল।
এরপর ছবির অ্যালবাম খুললেন তিনি সব কয়টা। প্রচুর ছবি তুলেছিলেন মেয়ের। নাবিলার পুরো জীবনটা ফ্রেমে তুলে রেখেছেন তিনি। বেছে বেছে তার বিভিন্ন বয়সের ছবি বের করলেন। একাকী তোলা ছবি, তার সাথে তোলা ছবি সব। পিসি থেকে পেনড্রাইভে ভর্তি করেও কিছু ছবি নিলেন। সবকিছু একটা ব্যাগে ভরলেন তিনি। এরপর অফিসে চললেন। কলিগদের অবাক দৃষ্টি উপেক্ষা করে অফিস করলেন দুপুর পর্যন্ত। এরপর ব্রেকে বস এর কাছ থেকে ছুটি মঞ্জুর করিয়ে নিয়ে ব্যাংকে গেলেন তিনি।
মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমাচ্ছিলেন তিনি ব্যাংকে। অ্যামাউন্টটা বেশ বড় হয়ে গেছে। বেশ কিছু টাকা তুললেন ওমর সাহেব। সেখান থেকে বেরিয়ে ছবিগুলোকে এনলার্জ করার জন্য একটা কালার ল্যাবে দিয়ে এলেন। ছবিগুলো ফ্রেমে বাঁধাই করার জন্য টাকা দিয়ে এলেন পাশের আরেক দোকানে।
তারপর বিভিন্ন মার্কেট থেকে টুকিটাকি কিছু জিনিস কেনাকাটা করলেন। তার ভেতর কিছু ইলেকট্রনিক সামগ্রী, বই, নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য, মেডিক্যাল নিডল, স্ক্রু ড্রাইভার, ড্রিল মেশিন, করাত, পেরেক, আঠা, মেজারিং টেপ ছিল।
এরপর তিনি গেলেন এক রেন্টাল কারের দোকানে। তবে যাবার আগে একটুখানি ছদ্মবেশ নিতে ভুললেন না। কলেজে থাকতে বেশ কিছুদিন নাটকের একটা দলের সাথে তিনি ছিলেন, তাই এ ব্যাপারে একটু আধটু জ্ঞান ছিল।
রেন্টাল কারের দোকান থেকে একটা ছোট পিক আপ ভাড়া করলেন দুইদিনের জন্য। শপিং এর জিনিসগুলো গাড়িতে নিয়ে তুললেন। তারপর নিজে ড্রাইভ করে চললেন এক কাঠের আড়তে। বিদ্যাটা যুবক বয়সে আয়ত্ব করা ছিল। বেছে বেছে বিভিন্ন সাইজের বেশ কিছু শক্ত কাঠ কিনলেন।
এরপর গেলেন তুলোর দোকানে। মোট দশটা বড় বড় আর মোটা তোষকের অর্ডার দিয়ে এলেন। পুরু কয়েকটা বিশাল পলিথিন শিট কেনার ভেতর দিয়ে প্রথম দিনের কেনাকাটা শেষ হলো তার।
এরপর পিকআপ ভ্যান চালিয়ে এক পুরানো বন্ধুর বাড়ি চলে এলেন তিনি। বন্ধু এখন বিদেশে থাকে। বহুদিন হল দেশে আসে না। বাড়িটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। চাবি আছে তার কাছে। মাঝেমাঝে এসে দেখা শোনা করে যান। বন্ধু তাকে যাবার আগে এখানে থাকতে বলেছিল, কিন্তু তিনি রাজি হননি।
বাড়িটা শহর থেকে খানিকটা দুরে নির্জন একটা জায়গায় অবস্থিত। লোকজনের আনাগোনা নেই তেমন একটা। বিশাল উঁচু কাচ বসানো সীমানা প্রাচীর। তিনি তালা খুলে ভিতরে ঢুকলেন। কেমন যেন একটা গা ছমছমে পরিবেশ। তোয়াক্কা করলেন না তিনি।
সোজাসুজি বাড়ির গোপন বেজমেন্টে চলে গেলেন, যার খোঁজ শুধু তিনি আর তার বন্ধুই জানেন। তাদের ছন্নছাড়া অতীতের বেশ কিছু ঘটনার সাক্ষী সেটা। বাড়িটা বিদেশী কায়দায় বানিয়েছিল তার বন্ধু।
আগে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও এখন লাইন কাটা। বেজমেন্টে একটা জেনারেটর আছে। সাথে টর্চলাইট এনেছিলেন, সেটা জ্বালিয়ে জেনারেটরটা দেখলেন। ঠিকই আছে ওটা। পাশে কয়েকটা তেলের ক্যান রাখা ছিল। ট্যাংকিতে তেল ঢেলে জেনারেটর স্টার্ট দিলেন। দুইবারের প্রচেষ্টায় চলতে শুরু করল।
মাথার ওপর লাইটের দড়ি ঝুলছিল। সেটা ধরে টান দিতেই হলুদ আলোয় ঝলমল করে উঠল গোটা বেজমেন্ট। কাজ শুরু করলেন তিনি।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে চারপাশে। অন্ধকারে বাড়ির আঙিনার গাছগুলোর শাখা প্রশাখা বিভিন্ন ভীতিকর আকার নেয়ার চেষ্টা করছে। আলো জ্বাললেন না তিনি। অন্ধকারের ভেতরই পিক আপ থেকে মালামাল নিয়ে বেজমেন্টে জড় করতে লাগলেন।
সবকিছু ভেতরে নেয়া হয়ে গেলে তারপর মেজারিং টেপ বের করে একটা মাপ নিলেন বেজমেন্টটার। ছোট একটা নোটবুকে টুকে নিলেন বিভিন্ন মাপ। একটা স্কেচ করলেন রুমটার। এরপর জেনারেটর বন্ধ করে ফিরে চললেন নিজের বাসার দিকে।
ফেরার পথে এক সাইবার ক্যাফেতে ঢুকে প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য জোগাড় করলেন। এরপর পিক আপটা একটা নির্মানাধীন রিয়েল এস্টেট প্রজেক্ট এর গ্যারেজ এক রাতের জন্য ভাড়া করে সেখানে রেখে বাসায় ফিরে এলেন। রাতের খাবার কিনে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। সেটা খেয়ে নিয়ে নিজের স্টাডিতে গিয়ে বসলেন।
বড় একটা আর্টপেপারে স্কেচ করতে শুরু করলেন এরপর। একের পর এক স্কেচ করে গেলেন তিনি। কাগজে ছোট ছোট নোটও লিখে রাখছিলেন। গভীর রাতে চোখ জ্বালাপোড়া করতে শুরু করলে ক্ষান্ত দিলেন তিনি।
পরদিন অফিস শেষে আবার বেরোলেন পিক আপটা নিয়ে। ছোট ছোট চারটা সাউন্ডবক্স আর সেকেন্ড হ্যান্ড কিছু ডাক্তারি যন্ত্রপাতি কিনলেন। দোকান থেকে ছাড়িয়ে আনলেন নাবিলার ফ্রেমে বাধাই করা ছবি। বিভিন্ন সাইজের ছবিগুলো, সবচেয়ে বড়টা প্রমাণ মানুষ সাইজের।
এরপর আরও কিছু কেনাকাটা শেষ করে চললেন নতুন এক দোকানে। কিনলেন তার লিস্টের সবচেয়ে অদ্ভুত জিনিসটা। একটা বিশাল কুকুর। জার্মান শেফার্ড ব্রিড। অনেকগুলো টাকা বেরিয়ে গেল প্রাণীটা কিনতে গিয়ে। দোকানদার প্রাণীটাকে কী বলল কে জানে।
ওমর সাহেব দেখলেন সেটা সুড়সুড় করে তার সাথে গিয়ে পিক আপে উঠল। গলার বেল্টটা একটা আংটার সাথে বেঁধে দিলেন তিনি। তারপর সেটার গলা চুলকে আদর করে স্টিয়ারিং-এ বসলেন।
সন্ধ্যার ভেতর পৌঁছে গেলেন বন্ধুর বাড়িতে। আজও সোজা বেজমেন্টে চলে গেলেন। কুকুরটাকে এক কোনায় বেঁধে রেখে কাজ শুরু করলেন তিনি।
প্রথমে পেপার হোল্ডারে করে নিয়ে আসা নকশাটা মেঝেতে বিছালেন। এরপর সেটা অনুযায়ী কাজ শুরু করলেন তিনি। জাহাজের ট্রেইলার এর মতো কাঠের তৈরি একটা চেম্বার বানাতে শুরু করলেন ড্রিল মেশিন আর হাতুরি-পেরেকের সাহায্যে।
একা বিধায় কাজটা খুব ধীরে এগোচ্ছিল। কয়েক ঘণ্টা পরিশ্রমের পর দেখলেন আস্তে আস্তে আকার নিতে শুরু করেছে সেটা। কাঠগুলো আগে থেকে সাইজ করা থাকায় কাজটা তুলনামূলক দ্রুতই সম্পন্ন হয়েছে।
পরের সপ্তাহজুড়ে অফিসের পর একটানা কাজ করে গেলেন তিনি। এর মাঝে পিক আপটা ফেরত দিয়ে এসেছেন। দোকান থেকে ছাড়িয়ে বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে তুলেছেন তোষকগুলো। অন্য রেন্টাল থেকে আরেকটা পিক আপ ভাড়া করেছেন।
চেম্বারটা তৈরি একদম শেষ। এরপর তিনি তোষকগুলোকে বিশাল চেম্বারটার ভিতর দিকের দেয়ালে আঠা আর কাঠের বেড় দিয়ে লাগিয়ে দিলেন। শুধু মেঝেটা বাদ রইল। একটা ছোট দরজা রয়েছে যেটা দিয়ে চেম্বারটার ভিতরে ঢোকা যায়। অনায়াসে পাঁচজন মানুষের থাকার জায়গা হয়ে যাবে ওটার ভেতর।
এরপর তিনি তার কেনা বিভিন্ন জিনিস ভিতরে নিয়ে সাজালেন। প্রথমে শুরু করলেন নাবিলার ছবিগুলো দিয়ে। শৈশব থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের ছবি ক্রমানুসারে সাজালেন দেয়ালে। চেম্বারটার ছাদে লাগালেন সবচেয়ে বড় ছবিটা, নিম্নমুখী করে। সাউন্ডবক্স গুলোকে চারকোনায় স্থাপন করলেন।
তারপর একটা ডিভিডি প্লেয়ারের সাথে লাইন দিলেন। ডাক্তারি জিনিসগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখলেন একপাশে কয়েকটা স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি ট্রের ওপর। পলিথিন শিটগুলো মেঝেতে বিছিয়ে দিলেন। তার ওপর আগে থেকে তৈরি করে রাখা বিশেষ একটা টেবিল এনে পাতালেন। ইলেকট্রনিক সামগ্রীগুলো টেবিলটার চারপাশে সেট করলেন সময় নিয়ে।
বেরিয়ে এসে এরপর জার্মান শেফার্ডটার কাছে গেলেন ওমর সাহেব। গত কয়দিন কাঁচা মাংস খাওয়াচ্ছেন কুকুরটাকে। কুকুরটার সামনে আরও কিছু কাঁচা মাংশ দিয়ে বেজমেন্টটার ফার্নেস চেক করলেন। ঠিক আছে। এরপর একটা পরীক্ষা করার জন্য কুকুরটাকে কাঠের চেম্বারটার ভিতর ঢুকিয়ে দরজা আটকে দিলেন।
ভেতরের লাইট বন্ধ করে দিয়ে কান পাতলেন কাঠের দেয়ালের গায়ে। অন্ধকারে নিশ্চয়ই কুকুরটা চিৎকার করতে শুরু করবে। বাইরে থেকে শব্দ পাওয়া যায় কিনা দেখতে চাইছেন। কিছু সময় পর অস্পষ্টভাবে শুনতে পেলেন জার্মান শেফার্ডের চিৎকার। বেজমেন্টের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালেন আবার। এবার কিছু শোনা যাচ্ছে না। ফিরে গিয়ে তাড়াতাড়ি বের করলেন সেটাকে চেম্বার থেকে।
বাসায় ফিরে শেষে লম্বা একটা ঘুম দিলেন ওমর সাহেব। তিনি একদম প্রস্তুত এখন। এবার শুধু সুযোগের অপেক্ষা। গত কয়েকদিনের কাজের মধ্য দিয়েও খোঁজ রেখেছেন তিনি রনির। জানেন, তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেবার বন্দোবস্ত হচ্ছে। জানে, পুলিশের এক অফিসার বিশাল অংকের টাকা খেয়ে বসে আছে। রিমান্ডে রনিরা কিছুই স্বীকার করেনি তারই কারণে।
লোক দেখানো বিচার চলেছে সামনে আর আড়ালে চলেছে টাকার খেলা। ওমর সাহেব মনে মনে হাসলেন। তিনিও একটা খেলা শুরু করতে যাচ্ছেন। ভয়ানক এক খেলা। প্রতিশোধের খেলা। পশুত্বের খেলা। আর তাকে সেই খেলায় জয়ী হতেই হবে।
দুইদিন অপেক্ষা করলেন তিনি। থানা থেকে ঘুরে আসলেন একবার। আর লক্ষ রাখলেন রনির গতবিধির ওপর। উইক পয়েন্ট খুঁজছেন। কথায় আছে সবুরে মেওয়া ফলে। তার ক্ষেত্রেও মেওয়া ফলল।
রনির রাত্রিকালীন আখড়ার খোঁজ পেয়ে গেলেন। দুই সাঙ্গপাঙ্গও থাকে ওর সাথে। এবার তিনি আসল প্লান এক্সিকিউট করবেন।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জানেন প্রমাণ ছাড়া আইনিপক্ষের কেউ কাজ করতে পারে না। তাই প্রমাণ রাখা চলবে না। অনেক সময় নিয়ে আগাগোড়া চিন্তা করে দেখলেন পুরো বিষয়টা। এরপর শনিবার দিনটাকে বেছে নিলেন তার কাজের জন্য। তিনি প্রস্তুত। এবার বাকিটুকুর জন্য একটু ভাগ্যের সহায়তা প্রয়োজন।
অবশেষে শনিবার সকালে কাজ শুরু করলেন তিনি। তৃতীয় আরেকটা রেন্টাল কার থেকে একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করলেন। সেটা নিয়ে সন্ধ্যাবেলায় বেরিয়ে পড়লেন। রাত কয়টার দিকে রনি ওখানে যায় তিনি জানেন। সময়মতো মাইক্রোবাসটা নিয়ে তিনি এক মোড়ে অবস্থান নিলেন। নম্বরপ্লেটটা খুলে রাখতে ভোলেননি তার আগে।
এই এলাকাটা নেশাখোরদের আড্ডা বলে পরিচিত। একটা ইলেকট্রিক খুঁটিরও বাতি অবশিষ্ট রাখেনি তারা। লোকজন সন্ধ্যা হলে এই জায়গাটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। রনি এই পথ দিয়েই যাতায়াত করে সবসময়। অস্থির হয়ে হাতঘড়ি দেখলেন তিনি কয়েকবার। এতক্ষণে তো এসে যাবার কথা!
মাঝেমাঝে কিছু লোক ঢুলতে ঢুলতে যাচ্ছিল। তার দিকে তেমন একটা খেয়াল দিল না। তিনি নকল দাড়িগোঁফের জঙ্গলের আড়ালে নিজেকে লুকিয়েছেন। দেখতে মনে হয় কোনো গডফাদারের মতো লাগছে। মনে মনে হাসলেন তিনি কথাটা ভেবে।
যখন চিন্তায় একেবারে অধৈর্য্য হয়ে উঠছিলেন তখন দেখতে পেলেন রনি আসছে। বরাবরের মতোই পায়ে হেঁটে আসছে। এই এলাকায় বাইক ঢোকায় না সে কখনও।
ওমর সাহেব নিজেকে প্রস্তুত করে নিলেন। একটা রুমালে সাথে করে আনা ক্লোরোফর্ম ঢেলে নিলেন কিছুটা। তারপর সেটা হাতে রেখে মাইক্রোবাসের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন কেউকেটা একটা ভঙ্গিতে। যস্মিন দেশে যদাচার!
রনি প্রায় কাছে চলে এসেছে। বেশ একটা ভারী কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘এই ছেলে, কানা জাহাঙ্গীর এর আখড়াটা কোনদিকে বলতে পারবে?’
‘কে আপনি?’
‘তা দিয়ে তোমার কোনো কাজ নেই,’ তিনি একটু একটু করে এগোচ্ছিলেন রনির দিকে। ‘ওর সাথে আমার একটা পুরানো লেনদেন ছিল।’
রনি কিছুটা উৎসুক হয়ে উঠেছে। জাহাঙ্গীর এর আখড়াতেই যায় সে। সে খানিকটা এগিয়ে এলো।
ওমর সাহেব দেখলেন তার হাতের আওতায় চলে এসেছে সে। আর দেরি না করে বিদ্যুতগতিতে রনির একটা হাত কব্জির কাছে ধরলেন তিনি। নিজের দিকে টানলেন তাকে, সাথে সাথে হাতটা মুচড়ে পিঠের কাছে নিয়ে এলেন, আর অন্য হাতে রুমালটা চেপে ধরলেন তার নাকে।
সামান্য টু শব্দটি করার সুযোগ পেল না সে। হাত বেকায়দা অবস্থায় পড়াতে নড়াচড়াও করতে পারল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে নেতিয়ে পড়ল। দেরি না করে খোলা দরজা দিয়ে অজ্ঞান রনিকে মাইক্রোবাসের ভেতর ছুঁড়ে দিলেন তিনি।
দুই সিটের মাঝে গিয়ে পড়ল সে। একটা মোটা কাল চাদর দিয়ে তাকে ঢেকে দিলেন। জানেন ঘণ্টা দুয়েকের আগে তার জ্ঞান ফিরবে না। এরপর তাড়াতাড়ি ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলেন। স্টার্ট দিয়ে দ্রুতগতিতে এলাকা ছাড়লেন তিনি। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর পৌঁছালেন বন্ধুর বাড়িতে। শহর ছাড়ানোর পর গাড়ির হেডলাইট বন্ধ করে আস্তে আস্তে চালিয়েছেন। পথে কোনো সমস্যা হয়নি।
রনির হালকা পাতলা শরীরটা কাঁধে ফেলে বাড়ির ভেতর নিয়ে চললেন। কুকুরটাকে কাঠের সাউন্ডপ্রুফ চেম্বার থেকে বের করে রনিকে ভেতরে নিয়ে শোয়ালেন টেবিলের ওপর। ভালো করে এরপর হাত-পা বাঁধলেন দড়ি দিয়ে।
(পড়ুন চতুর্থ তথা শেষ পর্ব)