(তৃতীয় পর্বের পর)
জানেন, এই চেম্বার থেকে কোনো শব্দও বাইরে যাবে না। তারপরও তিনি রনির মুখে একখণ্ড কাপড় গুঁজে দিলেন। তারপর দরজা বন্ধ করে বাতি নিভিয়ে চলে এলেন। ফিরে চললেন বাড়ির দিকে। ভাবলেন জ্ঞান ফিরে পেয়ে কতটা আতঙ্কিত হয়ে পড়বে রনি! ঠিক নাবিলার মতো। ভাবনাটা তার মনে একটা পৈশাচিক আনন্দ ছড়িয়ে দিল। নাবিলার মৃত্যুর জন্য দায়ীদের শাস্তি শুরু হলো আজ থেকে।
বাড়ি ফিরে আয়েশ করে শুয়ে পড়লেন ওমর সাহেব। রনিকে খুঁজে না পেলে পুলিশে খবর দেয়া হবে। পুলিশের ছুটাছুটির প্রাথমিক পর্যায়ে বাড়িতেই থাকতে চান তিনি। ঘরের বাতি নিভিয়ে তিনি চুপচাপ শুয়ে রইলেন। মনের একটা অংশ পুলিশের আগমন কামনা করছে আর অন্য অংশ বলছে, না এলেই ভালো হয়। অবশেষে রাত গভীর হয়ে গেলেও কেউ এলো না বাড়িতে। বরাবরের মতোই নিশ্চুপ আঁধারে ডুবে রইল।
রাত দুইটার দিকে বাড়ি থেকে বেরোলেন তিনি পুরানো বাইসাইকেলটা নিয়ে। সোজা চললেন বন্ধুর বাড়ির দিকে। বুক ঢিবঢিব করছিল কিছুটা, কিন্তু পাত্তা দিলেন না তিনি। শহর ছেড়ে বেরিয়ে জোরে প্যাডেল চালিয়ে রাতের আঁধারে চললেন গন্তব্যের দিকে। এতক্ষণে রনির জ্ঞান ফিরে এসেছে নিশ্চয়ই।
আঁধারে ডুবে থাকা বাড়িটার বেজমেন্টে ঢুকে জেনারেটর চালালেন তিনি। জার্মান শেফার্ডটাকে গত দুইদিন ভালো করে খেতে দেননি। সামনের আরও দুদিনও দেবেন না। ইতোমধ্যে রেগে গেছে বিশালদেহী কুকুরটা। তাকে দেখে ধারালো শ্বদন্ত বের করে খিঁচিয়ে উঠল। তিনি পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে ঢুকে পড়লেন কাঠের চেম্বারটায়।
ভেতরে হঠাৎ জ্বলে ওঠা বাল্বের আলোয় চোখ পিট পিট করছে রনি। চোখে মুখে একরাশ আতঙ্ক। ওমর সাহেবকে দেখে চিনতে পেরে গোঁ গোঁ করে উঠল। শরীর ঝাঁকাতে লাগল প্রাণপণে।
‘শুধু শুধু কষ্ট করে কোনো লাভ নেই। ছুটতে পারবে না,’ একদম স্বাভাবিক গলায় বললেন ওমর সাহেব। এগিয়ে গেলেন রনিকে বেঁধে রাখা টেবিলের পাশে সাজানো ডাক্তারি যন্ত্রপাতির দিকে। পকেট থেকে স্বচ্ছ তরলপূর্ণ একটা অ্যাম্পুল বের করলেন। এরপর একটা হাইপোডার্মিক সিরিঞ্জে তরলটুকু ভরলেন। রনির চোখ দেখে মনে হল কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসবে আতঙ্কে।
ব্যাপারটা উপভোগ করতে শুরু করেছেন ওমর সাহেব। রনির দিকে তাকিয়ে হাসলেন। ‘না না খারাপ কিছু নয় এটা’, বললেন তিনি। ‘তোমার হাত পা ছুঁড়াছুঁড়ি দেখতে ভালো লাগছে না। এটা দিয়ে তোমাকে সাময়িক প্যারালাইজড করে দেব। সবকিছু উপলব্ধি করতে পারবে কিন্তু নড়াচড়া করতে পারবে না।
ওহ, আরেকটা কথা। এখন আমি তোমার মুখের কাপড় সরিয়ে নেব। চিৎকার করে কোনো লাভ হবে না এখানে, বুঝেছ? এমনভাবে এই চেম্বারটার ডিজাইন করা যে, একজন মানুষের ভোকাল কর্ড সর্বোচ্চ যত ডেসিবেল শব্দ উৎপন্ন করে তার পুরোটা শুষে নিতে পারবে। সুতরাং শুধু শুধু শরীরের শক্তি খরচ করে কি হবে বলো? তার থেকে সেটা সঞ্চয় করে রাখা ভালো, সামনে কাজে লাগবে।’
রনির মুখে থেকে কাপড়ের টুকরোটা সরিয়ে নিলেন। সাথে সাথে কেশে উঠল সে। ‘আমাকে ছেড়ে দেন, প্লিজ।,’ কেঁদে ফেলল ও।
ঘাড় বাঁকা করে সামনের দিকে একটু ঝুকলেন ওমর সাহেব, ভাবটা এমন যেন রনির কথা ঠিকমত শুনতে পাননি। ‘কি বললে?’
‘আমাকে মাফ করে দেন। ভুল করে ফেলেছি আমি।’
ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন উঠলেন তিনি। ‘বলে কি পাগল ছেলে!’, কপট কৌতুকের সুরে বললেন। ‘তোমাকে কি ছেড়ে দেবার জন্য এত কাঠখড় পুড়িয়ে এখানে আনলাম! মাথা খাটাও ইয়াংম্যান। তুমি এখান থেকে কোথাও যাচ্ছ না। তোমার জন্য অনেক কষ্ট করে রুমটা সাজিয়েছি আমি। তাকাও।’
চারপাশের দেয়ালের দিকে ইঙ্গিত করলেন তিনি। রনিও তাকাল। ‘নাবিলাকে দেখতে পাচ্ছ?’ আনমনে বলতে লাগলেন। চোখে তার আদুরে দৃষ্টি। ‘কী সুন্দরই না ছিল আমার মেয়েটা! কত গুণসম্পন্না, দয়ালু! তুমি তার নখের সমানও ছিলে না। অথচ কী করলে?’
ওমর সাহেবের দৃষ্টিটা বদলে এবার ঘৃণায় পরিণত হল। ‘আমার মেয়েটাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলে তুমি। অত্যাচারে অত্যাচারে শেষ করে দিলে। এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা তাকে দিলে, যা কোনো মেয়ের পক্ষে বহন করা সম্ভব না। এবার নিজে প্রস্তুত হও। কড়ায় গণ্ডায় বুঝে পাবে তুমি সবকিছু। আমার মেয়ে যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছে কয়দিন তার কোনো অংশে কম তুমি পাবে না। বরং একটু বেশিই পাবে।’
লেকচার মুডে আছেন যেন তিনি, বলেই চলেছেন, ‘আমাদের দেশের একজন বিখ্যাত লোকের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে। When you play with gentlemen, you play like a gentleman. But when you play with bastards, make sure you play like a bigger bastard. Otherwise you will lose. বুঝতেই পারছ আমি কোন ভূমিকায় আছি এখন। আমি তোমার লেভেলের চেয়েও অনেক নিচের লেভেলে আছি সুতরাং আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে কোনো লাভ নেই। পারলে ওর কাছে ক্ষমা চাও।’ নাবিলার ছবিগুলো দেখালেন তিনি।
এরপর সিরিঞ্জের সূঁচটা ঢুকিয়ে দিলেন রনির শরীরে। সবটুকু তরল ঢুকে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই নেতিয়ে পড়ল সে। একটা পেনলাইট মেরে তার চোখ দেখলেন ওমর সাহেব। ঠিকমতোই সাড়া দিচ্ছে। দেহের মোটর নিউরনের কাজ সাময়িক বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু সেন্সরিগুলো পরিপূর্ণ কার্যক্ষম। তারমানে রনির শরীর এক্সটার্নাল স্টিমুলির প্রতি সংবেদী কিন্তু তদানুযায়ী সাড়া দিতে অক্ষম।
ওমর সাহেব রনির হাত পায়ের দড়ির বাঁধন খুলে নিলেন। সে যেভাবে ছিল ওভাবেই পড়ে রইল। এবার আন্ডারওয়্যার বাদে সবকিছু খুলে নিলেন তিনি। তারপর তার চার হাত পা চারদিকে ছড়িয়ে নতুন করে বাঁধলেন লোহার কাফ দিয়ে যা টেবিলের সারফেসের সাথে আটকানো ছিল।
কাজের সাথে সাথে মুখ চলছে তার, ‘জানি আমার কথা শুনতে পারছ। তোমাকে কিছু কথা বলি শোন। রাশিয়ার স্পাইরা একটা কথা বলে মৃত্যু নিয়ে, যখন অন্যদেশের এজেন্টদের কাছ থেকে কথা আদায় করার জন্য ইন্টারোগেশন চালায়। “Death is easy. It’s not about the destination. It’s about the journey.” সহজ কথায় তুমি এই চেম্বারেই মরতে চলেছ। কিন্তু মৃত্যুটা হবে অসম্ভব ধীর আর যন্ত্রণাদায়ক। তখন আর প্রানে বাঁচার জন্য অনুনয় বিনয় করবে না। বরং ভাববে আগে মরে গেলেই ভালো হতো। আমার মেয়েটা যেমন নিজের মৃত্যু কামনা করেছিল সেমনভাবে বা তার থেকেও বেশি করে মৃত্যু কামনা করবে তুমি।’
রনি নড়তে চড়তে পারছিল না, কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল ওমর সাহেবের প্রতিটা কথা বুঝতে পারছে। দুই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল তার। দেখে ওমর সাহেবের মনে হলো এত ভালো দৃশ্য আগে কখনো দেখেননি আগে!
এবার স্টেইনলেস ষ্টীল এর ট্রে থেকে কতগুলো ৫ ইঞ্চি লম্বা নিডল নিলেন তিনি। বসলেন রনির ডানহাতের কাছে। তারপর একটা নিডল নিয়ে রনির বৃদ্ধাঙুলের চাড়ির নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দিলেন। আস্তে আস্তে চাড়ির একেবারে গোঁড়া পর্যন্ত ঢুকিয়ে দিলেন।
চোখের তারা বিস্ফোরিত হলো রনির। দ্বিতীয়টা নিডলটা তর্জনীর চাড়ির নিচ দিয়ে পথ করে চলে গেল। প্যারালাইজ না করে নিলে এতক্ষণে টেবিল নড়ে যেত হাত পা ছোঁড়ার কারণে।
ওমর সাহেব একের পর এক নিডল ঢুকিয়ে চললেন। সাথে মুখও চলছে। যেন রনিকে জ্ঞান দিচ্ছেন এমনভাবে বলতে লাগলেন, ‘ব্যাথার একটা স্কেল আছে, বুঝেছ। এক থেকে দশ পর্যন্ত রেঞ্জ। তোমাকে আমি কনস্ট্যান্ট আটের মধ্যে রাখব বা তার বেশি। আমার প্ল্যান অনুযায়ী যতসময় ধরে তুমি আমার মেয়েকে আটকে রেখেছ ঠিক ততসময় তোমাকে মরতে দেব না আমি। এরপরের প্ল্যান আরও এক্সাইটিং।
নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য না, বরং সত্যিই যখন মনপ্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করবে যে, তুমি নাবিলার সাথে যা করেছ তা খুবই খারাপ এবং এর জন্য তুমি সর্বোচ্চ শাস্তির যোগ্য, স্বীকার করবে নিজের মুখে, তারপর তোমাকে মরতে দেব আমি। তার একমুহূর্ত আগেও নয়।’
দুইহাতের দশ আঙুলেই একই কাজ করেছেন তিনি। ‘এই ধরনের ব্যথায় মানুষের ব্রেইন এক্টিভিটি কমতে শুরু করে, বুঝেছ? মানে ব্যথা থেকে দেহকে রক্ষা করার চেষ্টা আর কি। হার্টরেট কমে আসে, অজ্ঞান হয়ে যায় মানুষ। তোমার ব্রেইনকে সে সুযোগ আমি দেব না।’ একটা মেডিক্যাল যন্ত্র সামনে নিয়ে এলেন তিনি। ‘হার্ট মনিটর আর ব্যাটারি আছে আমার কাছে।’
রনির খোলা বুকে কয়েকটা জিনিস লাগালেন তিনি যেগুলোতে লাগানো তার বেরিয়ে এসেছে যন্ত্রটা থেকে। ‘হার্টরেট একটা নির্দিষ্ট লেভেলের নিচে চলে আসলে যন্ত্রটা তোমাকে একটা ‘ওয়েক আপ কল’ দেবে ইলেকট্রিক শক দিয়ে। তারমানে বুঝেছ? প্রতি আউন্স ব্যথা সহ্য করতে হবে তোমাকে।’
এবার তিনি ডিভিডিটা চালিয়ে দিলেন। সাথে সাথে সারাঘর ছোট একটা বাচ্চার নিষ্পাপ হাসির শব্দে ভরে গেল। সেই হাসি শুনলে যে কারও মন ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। ‘শুনেছ, আমার মেয়েটা ছোটবেলায় কত সুন্দর করে হাসত,’ প্রচণ্ড যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকা রনির কানের কাছে গিয়ে ফিসিফিসিয়ে বললেন তিনি।
‘ও আমার জীবনের সবকিছু ছিল। ওর আমার সাথে বলা প্রচুর কথা আমি ধরে রেখেছি। তোমাকে শোনাতে চাই আমি। তোমাকে দেখাতে চাই আমি। বোঝাতে চাই নাবিলা আমার কাছে কি ছিল! তুমি আমার কাছ থেকে কী কেড়ে নিয়েছ! আমি এখন তোমাকে একা রেখে চলে যাব। আমার মেয়ের ছবি আর স্বর তোমাকে পুরানো ভূতের মতো ঘিরে রাখবে।
ওই দেখ, তোমার ঠিক ওপরে আমার মেয়ের একটা ছবি টানানো রয়েছে। সরাসরি তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে তোমার অবস্থা দেখে। যেমন ওর অবস্থা দেখে মজা পেয়েছিলে। আমার মেয়ের কথা আর ছবির জেলখানায় আটকে থাকবে তুমি। তার পাওয়া কষ্ট উপলব্ধি করবে নিজে। প্রায়শ্চিত্ত করবে নিজের পাপের।’
টর্চার চেম্বার থেকে বের হয়ে এলেন তিনি রনিকে ওই অবস্থায় রেখে। আবার তাকে দেখে দাত খিঁচাল কুকুরটা। পরদিন সকালে তিনি যখন নাস্তা করছিলেন তখন একজন পুলিশ এলো থানা থেকে। জানাল, তার করা মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামী রনিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
শুনে তিনি এমন প্রতিক্রিয়া দেখালেন যে মনে হলো অভিনয় লাইনে গেলে অস্কারও জুটে যেতে পারত কপালে। ‘হারামজাদা মনে হয় কোথাও লুকিয়েছে। আমরা তা-ই ধারণা করছি।’ বিড়বিড় করে বলল পুলিশ। তারপর টুকিটাকি কিছু কথা বলে, নাবিলার ঘটনার জন্য সমবেদনা জানিয়ে চলে গেল।
অন্যদিনের মতো স্বাভাবিকভাবে অফিস করলেন তিনি। দেখলেন অফিসে তার প্রতি প্রায় প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। বেশ আগ্রহ নিয়ে কথা বলছে তার সাথে। ভালো লাগল তার ব্যাপারটা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তার মন চলে গেল বেজমেন্ট-এর চেম্বারটাতে। তার আশেপাশের কেউ কল্পনাও করতে পারবে না কী করছেন তিনি!
রাতে আবার তিনি গেলেন বন্ধুর বাড়ির বেজমেন্টে। টর্চার চেম্বারের ভেতর তখন তার আর নাবিলার কণ্ঠে গমগম করছিল, আর তার সাথে মিশে ছিল রনির গলা থেকে বের হওয়া পশুর মতো আওয়াজ। পাগলের মতো হাত পা ছুঁড়ছিল সে। দুই হাতের আঙুল অস্বাভাবিকরকম ফুলে গেছে। রঙ বদলে কাল হয়ে গেছে প্রায়।
শরীর ফ্যাকাশে হয়ে গেছে রনির। মুখ থেকে লালা গড়াচ্ছে। প্রস্রাবের গন্ধও পেলেন ওমর সাহেব। তাকে দেখে চিৎকারের সুর পাল্টে গেল ছেলেটার। শক্তির শেষ সীমায় চলে এসেছে সে প্রায়।
তিনি ধীরে ধীরে নিডলগুলো বের করে নিলেন। ‘খুব ব্যথা, তাই না? ভয় করছে বুঝি অনেক? নাকি অনুভূতি শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে ইতোমধ্যে?’
একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিলো না রনি। শুধু কেঁদেই চলেছে পাগলের মতো। তাকে একটা মরফিন ইঞ্জেকশন দিলেন তিনি। ‘পরবর্তি ডোজ পড়ার আগে একটু রেস্ট নাও। অনেকক্ষণ পেটে কোনো দানাপানি পড়েনি তোমার। দাঁড়াও, খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছি।’
রনির নাকের ভেতর দিয়ে সজোরে একটা নল ঢুকিয়ে দিলেন তিনি। ধনুকের মত বাঁকা হয়ে গেল ওঁর শরীরটা। সিরিঞ্জের মাধ্যমে নলের ভেতর দিয়ে তরল খাবার দিলেন ছেলেটাকে। সরাসরি পাকস্থলীতে পৌঁছে যাবে। ব্যথা সহ্য করার জন্য এনার্জি দরকার।
ঘণ্টা দুয়েক পর দ্বিতীয়বারের মতো শুরু করলেন তিনি। এবার হাতুড়ি আর লোহার একটা সরু-লম্বা রড নিলেন তিনি। রনির হাঁটুর জয়েন্টে রডটা ঠেকিয়ে অন্য মাথায় বাড়ি লাগালেন হাতুড়ি দিয়ে। মাংস ভেদ করে হাড় পর্যন্ত গিয়ে ঠেকল রড এর সরু মাথা। রনির চিৎকারে মনে হলো কানের পর্দা ফেটে যাবে তার।
দ্বিতীয় বাড়ি কষালেন আবার হাতুড়িতে। হাঁটুর সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধির মাঝ বরাবর ঢুকে গেল রডটা। তৃতীয় বাড়িতে অন্যপাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। কয়েকটা শিরা ছিঁড়ে যেতে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটল। নিচে বিছানো পলিথিন শিট রক্তে মাখামাখি হয়ে গেল। রডটা বের করে নিলেন তিনি। এরপর অন্য হাঁটুতে একই কাজ করলেন।
দুই হাতের কনুইও বাদ গেল না। এখানেও থামলেন না ওমর সাহেব। ধারাল একটা ছুরি দিয়ে কয়েকটা মাপা স্ট্যাব করলেন তিনি রনির শরীরে, যেগুলো মৃত্যু ঘটাবে না, কিন্তু মারাত্মক যন্ত্রণা দেবে।
নিজের জোরের সর্বোচ্চ সীমায় চিৎকার করছে রনি। ‘আমাকে মেরে ফেলুন। দোহাই লাগে, আমাকে মেরে ফেলুন। আমি ভুল করেছি।’
‘উহু, এখনো নিজেকে ব্যথা থেকে বাঁচাবার জন্য ওই কথা বলছ। মন থেকে বলোনি। আমি বাইরে আছি। শরীরে শক্তি অবশিষ্ট থাকতে থাকতে নিজের কাজের জন্য মন থেকে ক্ষমা চাও। নাহলে পরে বলার মতো কোনো জোর আর গলায় অবশিষ্ট থাকবে না।’
বাইরে চলে আসলেন ওমর সাহেব। পিছে ‘আমাকে মেরে ফেলুন’ বলে ক্রমাগত চিৎকার করে যাচ্ছে রনি। তিনি আবার ডিভিডি প্লেয়ারটা ছেড়ে রেখে এসেছেন। দরজা বন্ধ করে দিলে চারপাশ সুনশান হয়ে পড়ল। হাতঘড়িতে দেখলেন রাত একটা বাজে। সিদ্ধান্ত নিলেন এক ঘণ্টা অপেক্ষা করবেন তিনি।
ঠিক একঘণ্টা পর রনির ডেথ চেম্বারে ঢুকলেন তিনি। টেবিলের নিচ রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পুরানো রক্ত জমাট বেঁধে আছে, তার ওপর নতুন গড়িয়ে আসা রক্ত আরেকটা স্তর তৈরি করেছে। আর চিৎকার করছে না সে এখন। হয়তোবা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য, অথবা অন্য কিছু।
তিনি ডিভিডি প্লেয়ারটা বন্ধ করে রনির পাশে গিয়ে বসলেন। তার দিকে তাকালও না সে। একদৃষ্টিতে ওপরের ছবির দিকে তাকিয়ে আছে, যে ছবিতে হাস্যোজ্জ্বল নাবিলাকে দেখা যাচ্ছে একটা টেডি বিয়ার নিয়ে বসে আছে। বিড়বিড় করছিল রনি কী বলে যেন।
ওমর সাহেব শোনার জন্য তার মুখের কাছে কান নিয়ে গেলেন। সে বলছিল, ‘আমাকে মাফ করে দাও নাবিলা। অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আমি। আমাকে মাফ করে দাও।’
ওমর সাহেবকে বলে দিতে হলো না। তিনি জানেন মন থেকেই কথাগুলো বলছে রনি। ‘ভেবেছিলাম আরও একদিন তোমাকে বাঁচতে দেব আমি। কিন্তু সে সুযোগ দিলে না তুমি। গুড ফর ইউ। একটা কথা তোমাকে জানিয়ে রাখি। মানুষের দুইধরনের সত্তা আছে। মনুষ্যত্ব আর পশুত্ব।
তুমি নিজের ইচ্ছাতেই তোমার পশুত্বকে লালনপালন করেছ জীবদ্দশায় আর আমার পশুত্ব বিভিন্ন কারণে জোর করেই আমার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখানেই তোমার আর আমার ভেতর ফারাক। তুমি তো এখন মরে গিয়ে বেঁচে যাবে, কিন্তু আমার পশুত্ব নিয়েই কি আমাকে বাকি জীবন পার করতে হবে?’
মাথা দোলালেন তিনি, ‘না, আমি তা পারব না। আমার একটা প্ল্যান আছে বুঝেছ। আমার পরিচিত এক সাইকিয়াট্রিস্ট আছে। সাইকিয়াট্রির আধুনিক সব জ্ঞান তার জানা। আমেরিকাতে বহুদিন যাবত ছিলেন। এখন বাংলাদেশে প্র্যাকটিস করেন। আর কয়েকটা কাজের পর তার কাছে গিয়ে আমার গত কয়েকদিনের স্মৃতির চারপাশে দেয়াল তুলে দেব ধীরে ধীরে। মানে বুঝতে পারছ? তোমার সাথে যা করেছি তার কিছুই আমার মনে থাকবে না। সুতরাং অনুশোচনা করার আর কিছুই থাকবে না।’
কথা শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। সময় হয়ে গেছে। ব্লাড ডোনেট করার সময় যে নিডল ব্যবহার করা হয় সেরকম দুইটা নিলেন তিনি হাতে। সেগুলোর পাইপের সামনে কোনো ব্যাগ লাগানো নেই। ফাঁকা। তিনি এবার সেগুলো একে একে রনির দুই হাতের ধমনীতে ঢুকিয়ে দিলেন।
সাথে সাথেই রক্তে ভরে উঠল দুই পাইপ। সেগুলো বেয়ে মেঝেতে রাখা দুইটা ছোট বালতিতে পড়তে শুরু করল রক্ত। এমনিতেই প্রচুর রক্ত বেরিয়ে গেছে রনির শরীর থেকে। আর বেশি সময় লাগবে না অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে রক্তশূন্যতায় হৃদপিণ্ডের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে।
রনির ডেথ চেম্বার থেকে বেরিয়ে হঠাৎ করেই যেন বিষাদে আক্রান্ত হলেন তিনি। কিন্তু চিন্তাটা বের করে দিলেন মাথা থেকে। তিনি তো জানতেনই এরকম হবে। অনেক চিন্তা করেই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জার্মান শেফার্ডটা কুইকুই করছিল ক্ষুধাতে। ওমর সাহেব এবার একটা সিনথেটিক রোব পরলেন গায়ে। মাথায় একটা টুপি লাগিয়ে চুল ঢেকে ফেললেন।
তারপর একটা ব্যাগ থেকে কসাইদের ব্যবহার করা ধারালো কয়েকটা অস্ত্র বের করলেন। সেগুলো দেখে কুকুরটা শব্দ করা বন্ধ করে দিল। তিনি চোখ দিয়ে অভয় দিলেন ওকে। যেন বোঝাতে চাইলেন, এগুলো তোর জন্য নয়!
শেষে আবার গিয়ে ঢুকলেন ডেথ চেম্বারে। দুচোখ মেলে টর্চার টেবিলের ওপর পড়ে আছে রনি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে জীবনের কোন চিহ্নই নেই শরীরে। দুই পাইপ বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় কিছু রক্ত তখনও পড়ছিল। ওমর সাহেব তার শরীর থেকে সবকিছু সরিয়ে নিলেন। লোহার কাফগুলো খুলে ফেললেন।
রনির ওপর তার তীব্র রাগ থাকলেও মৃতদেহের ওপর তা নেই। কিন্তু নিজের কাজের কোনো চিহ্ন রাখা চলবে না। তাই বাধ্য হয়ে সবচেয়ে খারাপ কাজটা তাকে করতে হবে এখন। রনিকে স্রেফ গায়েব করে দেয়া।
শুরু করলেন তিনি। সময় নিয়ে রনির দেহটাকে খণ্ড খণ্ড করতে শুরু করলেন চাপাতি দিয়ে। ইচ্ছা ছিল ২০৬ টা হাড়কেই আলাদা করে ফেলবেন, কিন্তু এখন আর ইচ্ছা হচ্ছে না। তারপরেও বেশ কয়েক খণ্ড করলেন তিনি।
স্টার্নাম এবং মেরুদণ্ড থেকে পাঁজরের হাড়গুলোকে আলাদা করে ফেললেন। ভার্টিব্রাল কলাম, কক্কিস পেলভিক বোনস থেকে আলাদা হয়ে গেল চাপাতির আঘাতে। ফিমার, টিবিও-ফিবুলা, হিউমেরাস, রেডিও-আলনা কিছুই চাপাতির কোপ থেকে বাদ গেল না।
কাজ শেষে দেখলেন দিন হতে বেশি বাকি নেই। এবার তিনি খণ্ডগুলোকে জার্মান শেফার্ডের সামনে রেখে পোশাক বদলে ফিরে এলেন বাড়িতে। পেছন ফিরে দেখলেন না কী করছে দুইদিনের অভুক্ত কুকুরটা।
রাতে আবার সেখানে গিয়ে দেখলেন কুকুরটার সামনে রনির শরীরের অভুক্ত কিছু অংশ অবশিষ্ট আছে। গত সতেরো ঘণ্টায় রনিকে অনেকটাই খেয়ে নিয়েছে বিশাল কুকুরটা। তিনি বেজমেন্ট এর ফার্নেসে আগুন জ্বালালেন এরপর।
নিরেট কিছু মাংস কুকুরটার খাবার হিসেবে রেখে বাকি হাড়মাংসগুলো ফার্নেসের আগুনে নিক্ষেপ করলেন। এরপর বিভিন্ন দহনযোগ্য জিনিস যেগুলো তিনি কাজে লাগিয়েছেন,সব এক এক করে পুড়িয়ে ফেলতে লাগলেন। টর্চার টেবিলের কাঠগুলো ফার্নেসের জ্বালানী হিসেবে ভালোই কাজ দেখাল!
রক্তমাখা পলিথিন শিট চোখের সামনে গলে গিয়ে আগুনের দলায় পরিণত হলো। পানি গরম করে মেডিক্যাল এপারাটাসগুলো তার মধ্যে ডুবিয়ে দিলেন। ফার্নেসের ভিতর সমস্ত জিনিস ধোঁয়া আর ছাইতে পরিণত হলো ধীরে ধীরে।
ডেথ চেম্বারটার আর কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি নাবিলার ছবিগুলো এক এক করে খুলে এক জায়গায় জড়ো করলেন। তোষকগুলো ছাড়িয়ে নিলেন দেয়াল থেকে। চেম্বারটাকে যখন ভেঙে ফেলছিলেন, তখন ফার্নেসের গনগনে আগুনে রনির হাড়গুলো ভস্মীভূত হচ্ছিল।
আগুন নিভে গেলে তিনি ছাইগুলো সংগ্রহ করলেন ফার্নেস থেকে। বড় যে হাড়গুলো তখনো নিজেদের আকৃতি ধরে রেখেছিল সেগুলোকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেললেন। তারপর সেগুলোকে একটা ব্যাগে করে নিয়ে চলে এলেন একটা স্লুইস গেট এর কাছে, যেখানে একটা নদী থেকে পানি খালে গিয়ে ঢোকে।
গেটটা পথে যাবার সময় দেখেছেন তিনি। সবসময় সেখানে পানির এলোপাথাড়ি স্রোত বয়ে চলে। ওমর সাহেব ব্যাগটাকে উপুড় করে ধরলেন সেখানে। ক্রমাগত পাক খেতে থাকা ঘোলা পানির সাথে কিছুক্ষণের মধ্যেই মিশে গেল ছাই আর হাড়চূর্ণগুলো। এরপর আরও কিছু কাজ বাকি ছিল তার।
দশদিন পর এক সকালে দুই ছেলেকে মাদকপাড়া বলে পরিচিত এক বস্তিতে মৃত অবস্থায় পেল পুলিশ। সনাক্ত করতে পারল তারা তাদের। এক তরুণী হত্যা মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামী তারা। হাতের দাগ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল নিয়মিত মাদক নিত তারা শরীরে। মৃতদের দুইজনের হাতেই দুটো সিরিঞ্জ ধরা ছিল। পুলিশ ধারণা করল মাদকের ওভারডোজ এর কারণে মৃত্যু হয়েছে তাদের। কিন্তু তারা জানল না, ঠিক কি হয়েছিল।
এক মাদকের ডিলারের কাছ থেকে সিরিঞ্জ দুটো পেয়েছিল তারা। তার কথামতো সেটা ছিল খুব দামী মাদক, যা কেনার সামর্থ্য ছিল না তাদের। মাদকের লাইনে নতুন বলে পরিচিতি বাড়ানোর জন্য তিনি উপহার দিয়েছিলেন তাদের। কিন্তু তারা টের পায়নি কী ঢুকাতে চলেছে শরীরে।
জিনিসটা আসলে ছিল ক্রোমিয়াম সায়ানেট। শরীরে বিভিন্ন তরল পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা করে যে কো-এনজাইম তার কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয় সেটা। রক্তে হাইড্রক্সিল আয়নের বন্যা বইয়ে দেয়। ফলাফল পানিতে ডুবে যাবার মতো মৃত্যু।
ছেলে দুটো মৃত্যুপথযাত্রী এক মেয়েকে ডুবিয়ে দিতে গিয়েছিল নদীতে। কপালের কি লিখন! নিজের দেহের পানিতেই ডুবে মরল তারা!
আর তার কিছুদিন পর ডিউটি শেষ করে গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পথে মোটরসাইকেল এক্সিডেন্টে স্পাইনাল কর্ড ভেঙে গেল সদ্য বিবাহিত এক পুলিশ অফিসারের, আর কোনোদিন উঠে দাঁড়াতে পারবে না সে। এক তরুণী হত্যা মামলার তদন্তকারী অফিসার ছিল সে। কিন্তু হত্যাকারীরা প্রমাণের অভাবে জামিন পেয়ে যায়, যার পেছনে তার দুর্নীতির হাত আছে বলে মনে করা হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এমন অ্যাক্সিডেন্টে নতুন স্ত্রীসহ পরিবারের লোকেরা তার বিছানার পাশে বসে চোখের পানি ফেলতে লাগল।
অজানা এক সোর্সের কাছ থেকে পাওয়া গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে প্রচুর পরিমান মাদক উদ্ধার করল পুলিশ। গ্রেফতার করা হলো তাকে হাতেনাতে। রাজনৈতিক ক্ষমতা আর টাকা কিছুই করতে পারল না তার। অনেক বছরের জেল হয়ে যাবে বলে সবাই কানাঘুষো করতে লাগল।
ব্যবসায়ীর ছেলে এক হত্যা মামলার প্রধান আসামী এবং গত কিছুদিন ধরে নিখোঁজ। অল্পদিনের ভিতরই স্বামী আর সন্তানকে হারিয়ে মস্তিস্কবিকৃতি ঘটল ব্যবসায়ীর স্ত্রীর। ধ্বংস হয়ে গেল পরিবারটা।
পরিশিষ্ট
নাবিলার মৃত্যুর পর আটমাস পেরিয়ে গেছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন ওমর সাহেব। মাঝে মাঝে ধোঁয়াটে কিছু স্মৃতি ফিরে আসে তার মনে। মনে হয় কিছু ভুলে গেছেন। তার সাইকিয়াট্রিস্ট অবশ্য বলেছে যে, ও কিছু না। মনের কল্পনামাত্র। সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে। কলেজে তার মেয়ের একটা স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল এর মাঝে।
সেখানে এক হৃদয়স্পর্শী আলোচনা করে সবাইকে কাঁদিয়ে এসেছেন। নিজের মনের দুঃখ অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে এসেছেন। সবাই নিজের ঘরের মেয়ে-বোন বলে ভেবেছে তার মেয়েকে। মৃত্যুর আগে যতটা না পছন্দ করত নাবিলাকে, মৃত্যুর পরে তাকে আরও বেশি পছন্দ করে ফেলল সবাই। নাবিলার ব্যবহার্য্য কিছু জিনিস স্যুভেনির হিসেবে নিয়ে গেছে তার ক্লাসমেটরা। অনেকের কাছে ভালো কিছু করার ইন্সপিরেশন হয়ে গেল সে।
নাবিলার নামে অটিস্টিক শিশুদের জন্য একটা শিশুসদন খুলেছেন তিনি ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে। টেডি বিয়ার হাতে বিশাল একটা হাস্যোজ্জল ছবি টানানো রয়েছে সেটার দরজায়। শিশুসদনের কেউই তাকে চর্মচক্ষে দেখেনি কিন্তু সবার কাছেই সে বড়বোন বলে পরিচিত। তার বাড়িতে এখন লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এবং যারা আসে তারা সবাই ভালো মনের মানুষ।
ইদানীং ওমর সাহেবের অন্তর সবসময়ই যেন কেমন একটা আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। শুধু দুঃখ লাগে সেইসময় যখন স্টাডিতে বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে বসে থাকেন, কিন্তু একটা মেয়েলি কণ্ঠস্বর কপট অভিমানে বলে ওঠে না, ‘বাবা, আমাকে সময় না দিয়ে আবার বই পড়া শুরু করেছ?’
(সমাপ্ত)