এক
৭ ডিসেম্বর ১৯৯৮ ইং। মধ্যরাত্রি।
শ্যামলির বেশ ঘুম ঘুম করছিল। বেশ কয়েকবার চোখ লেগে আসলেও আবার জেগে উঠেছে সে। না, বয়স্ক মানুষদের মতো ওর ঘুমের কোনো জটিল সমস্যা নেই। বিছানায় কম্বলের উষ্ণতা পেলেই চোখ লেগে আসে, বহু দিনের অভ্যেস আরকি।
আজ-ও এর বিশেষ ব্যতিক্রম কিছু হতো না। তবে একটা নতুন জায়গা, অর্থাৎ আজ সন্ধ্যায় বড় খালাদের বাড়ির উঠোনে পা দেয়ার সাথে সাথেই কেমন জানি গা ছমছম করছিল শ্যামলির। অবশ্য গাজীপুর শহরটা যে ওর কাছে একেবারেই নতুন, তা কিন্তু নয়। প্রতি শীতেই সে মা আর ছোট ভাইয়ের সাথে বড় খালার বাড়িতে বেড়াতে আসে।
সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণের কাজে ব্যস্ত থাকেন বিধায়, শ্যামলির বাবা’র খুব একটা আসা হয় না অবশ্য। তবে তাতে শ্যামলির খুব একটা দুঃখ নেই। বাবা দেশের জন্য লড়াই করবেন, এটা ভেবেই সে বেশ খুশি। তার অপরিণত মন যুদ্ধ-বিগ্রহের ভয়াবহতা সম্বন্ধে খুব একটা সজাগ নয়, অতো গভীর চিন্তা-ভাবনাও সে এখনো করতে শিখেনি।
বড় খালার বাড়িতে গা ছমছম করার অবশ্য বেশ কিছু কারণ রয়েছে। বাড়িটা গাজীপুরের যে অংশে তার আশে-পাশে আসলে কোনো ‘শহরের’ই অস্তিত্ব নেই। শহরের হিসেবটা আসলে অনেক পরে আসছে, বড় খালার বাড়ির আশেপাশে কয়েক মাইলের মাঝে একঘর গেরস্থ ছাড়া আর কারো বসবাস ছিল না।
অবশ্য এই বাড়িটা থেকে দু’শো গজ দূরেই একটা লাল রঙের কটেজ টাইপ দালান আছে। ব্রিটিশ আমলের দালান। তবে সেটাও বড় খালাদেরই বলা চলে। বড় খালু পেশায় ছিলেন ফরেস্ট অফিসার। এই চাকুরির সুবাদেই কটেজটা পাওয়া। আর কটেজটা পাওয়ার পর, অল্প কিছু দূরে জমি কিনে একটা কাঠের বাড়ি বানিয়ে নিয়েছিলেন বড় খালু। পুরোটাই শখের বসে।
প্রতি শীতকাল বড় খালারা এই কাঠের বাড়িতে কাটান। এই কাঠের বাড়িটা না থাকলে নাকি কোনো শীতকালই বড় খালুর কাছে উপভোগ্য হতো না, বড় খালু অন্তত এমনিই বলেন! তবে গরমের দিনে আবার ফিরে যান তার সরকার প্রদত্ত কটেজটায়।
বড় খালু বেশ চমৎকার মানুষ, এই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই শ্যামলির মনে। তার মতো অদ্ভুত মানুষ সত্যিই সচরাচর দেখা যায় না। হঠাৎ হঠাৎ-ই একেকটা নতুন ব্যাপার বড় খালু মাথায় ভর করে বসে, আর ভদ্রলোক তা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে তার কোনো ঝোঁকই খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না।
তো এই কাঠের বাড়িটার চারপাশেই ছিল বেশ ঘন জঙ্গল, আর রাত্রিকালের জঙ্গল মোটেই নিরব বা নিঃস্তব্ধ নয়। হঠাৎ হঠাৎ একেকটা অদ্ভুত শব্দে শ্যামলি কেঁপে উঠছে। যদি শীতকাল না হয়ে বর্ষার সময় হতো, তাহলে ব্যাঙগুলোর মাঝেও কোনো ক্লান্তির ছাপ থাকত না। এক নাগাড়ে, অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তারাও ডেকে চলত।
ব্যাঙের ডাকের একটা বিচিত্র ব্যাপার লক্ষ করেছিল শ্যামলি বেশ ক’বছর আগে। যেকোনো শব্দ মধ্যরাত্রির রহস্যময়তাকে কমিয়ে দিতে পারে, তবে ব্যাঙের ডাক এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ব্যাঙের ডাকে মধ্যরাত্রির রহস্যময়তা মোটেও কমে না, বরঞ্চ বেড়ে যায় কয়েক গুণ! তবে শীতকাল হওয়ায় গাছ-গাছালির সব ব্যাঙ নিশ্চয়ই শীত নিদ্রায় ব্যস্ত। শ্যামলি এক প্রকার খুশিই হলো।
হঠাৎ-ই একটা বেশ কর্কশ শব্দ পুরো বনটার খানিক আগের নীরবতাকে আবার যেন কটাক্ষ করল। বেশ কর্কশ, রুক্ষ একটা চিৎকার, খানিক বাদেই তার সাথে ‘হু হু’ করে আরও একটা শব্দ যুক্ত হলো। ভাগ্যিস এই শব্দটার সাথেও শ্যামলির পূর্ব পরিচয় আছে, পেঁচা! নতুবা, নিশ্চয়ই ওর আত্মা শুকিয়ে যেত এতক্ষণে!
এই পেঁচার ডাকের সাথে থেকে থেকেই বনের শেয়ালগুলো ডেকে উঠছে। আচ্ছা, শেয়ালের ডাকের সাথে কি অশুভ কিছুর সম্পর্ক আছে? এখন অন্তত শ্যামলির তেমনটাই মনে হচ্ছে। এ যেন শেয়ালের ডাক নয়, অশুভ কোনো প্রেতাত্মার কোনো নিগূঢ় দুঃখ মিশ্রিত কান্নার শব্দ!
শ্যামলি হঠাৎ-ই ঘরের ভেতরে ঠাণ্ডা বাতাসের একটা হালকা ঝাপটা টের পায়। চট করে তার চোখ চলে যায় পায়ের কাছে, খাটের পেছনের জানালাগুলোর দিকে। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। সেই রূপালি চাঁদনী উপচে পড়ছে সেখানটায়। একইসাথে কুয়াশার প্রবেশ-ও চলছে সমানতালে। ঘুমোনোর আগে মা নিশ্চয়ই জানালার খিড়কি বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলেন।
এই অজুহাতে কি একবার মা’কে জাগিয়ে তুলবে? মা উঠে পড়লে ওর ভয়টা নিশ্চয়ই কমে যাবে। তবে ভয়ের ব্যাপারটা মা’কে বুঝতে দেয়া যাবে না। বুঝতে পারলেই কাল সকালে শাওনকে সব বলে দিবেন মা। শাওন-ও তখন তাকে এক হাত জ্বালিয়ে ছাড়বে। শাওন, বড় খালার এক মাত্র সন্তান। শ্যামলি আর শাওন দু’জনের বয়সই একদম পিঠাপিঠি, মাস দু’য়েকের তফাৎ কেবল। তবে, শ্যামলি শাওনকে ‘ভাইয়া’ বলেই ডাকে।
মা’কে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবে কি তুলবে না- এই ভাবতে ভাবতে শ্যামলি আবার যে কখন অতল ঘুমে তলিয়ে পড়লো, তা নিয়ে তার বিন্দুমাত্রও ধারণা নেই।
দুই
শ্যামলির বড় খালু হাফেজ জালাল উদ্দিন সাহেব এই সাত-সকালেই খুব ব্যস্ত। নামের শুরুতে ‘হাফেজ’ শব্দটি থাকলেও পুরোপুরি হাফেজ নন তিনি। খুব ছোটবেলায় মক্তবে ভর্তি হয়েছিলেন হাফেজি শিক্ষার উদ্দেশ্যে, তবে তা আর শেষ করেননি। জন্মের পর জালাল উদ্দিন সাহেবের নানার ইচ্ছায় তার নামের আগে ‘হাফেজ’ যুক্ত করা হয়। আফসোস, নানার ইচ্ছাপূরণে সক্ষম হননি আর।
জীবনের অসংখ্য কাজই তিনি মাঝামাঝি পর্যায়ে গিয়ে ইস্তফা দিয়েছেন। কোনো না কোনো কারণে আর শেষ করেননি। মেতে উঠেছেন নতুন কোনো বিষয় নিয়ে!
এই যে সাত-সকালেই তিনি বেশ ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন, এই ব্যস্ততা কিন্তু কোনো দাপ্তরিক কাজের জন্য নয়। বন বিভাগের উচ্চ পর্যায় থেকে কোন গুরুত্বপূর্ণ চিঠিও তিনি পাননি। তার সকল ব্যস্ততা তার আশেপাশে ছড়ানো ছিটানো কয়েকটা প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই নিয়ে। অবশ্য এগুলোর সবই যে অতি প্রাচীন বা দুর্লভ বই এমন কিছুও নয়। এর অনেকগুলোই হাল আমলের, তবে বেশ কয়েকটা পুরনো দিনের বইও আছে। এই পুরনো দিনের বইগুলো সত্যিই বেশ তথ্যবহুল।
তবে, দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, হাফেজ জালাল উদ্দিন সাহেব বইগুলো পড়তে গিয়ে একটু পর পরই খেই হারাচ্ছেন। দু’এক পাতা পড়ার পরই বুঝতে পারছেন, তিনি আসলে তেমন কিছুই বুঝেননি। পাঠ্যবই পড়ার মতো করে বারবার পড়তে হচ্ছে।
অবশ্য এর মাঝেই দু’একটা বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তিনি জেনে ফেলেছেন। এই যেমন, পৃথিবী যে অক্ষের ওপর ঘোরে সেই অক্ষ আসলে স্থির নয়, এই অক্ষের-ও মৃদু আবর্তন গতি আছে। আর, একবার পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করতে নাকি সময় লাগে প্রায় ছাব্বিশ হাজার বছর! ভাবা যায়?
ছাব্বিশ হাজার বছর নিশ্চয়ই মুখের কথা নয়! এই তথ্যটা দিয়ে তার স্ত্রী রাহেলা বেগমকে নিশ্চয়ই বেশ ভড়কে দেয়া যাবে, এই ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত! আর বোনাস হিসেবে এখন রুনু-ও আছে, রুনু হচ্ছে রাহেলা বেগমের ছোট বোন, সম্পর্কে হাফেজ জালাল উদ্দিন সাহেবের শ্যালিকা হলেও জালাল সাহেব তাকে আপন ছোট বোনের মতোই স্নেহ করেন।
জালাল উদ্দিন সাহেব দ্রুত আরও কিছু তথ্য মুখস্থ করা শুরু করলেন, লোকজনকে জ্ঞানের বহর দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিতে তার বেশ লাগে!
খুটিনাটি বিষয়গুলো বাদ দিয়ে, বেশ নড়বড়ে জ্ঞান নিয়েই জালাল উদ্দিন সাহেব চললেন রান্না ঘরের দিকে, উঠোনের এক প্রান্তের এই রান্না ঘরটাতে দু’বোন এক সাথে শীতের পিঠা বানানোর আয়োজন করেছে। একটু কাছাকাছি আসতেই পিঠার সুবাসে জালাল উদ্দিন সাহেবের খিদে বেশ কয়েকগুণ বেড়ে গেল! সুস্বাদু খাবারের সন্ধান পেলে এই বয়সেও বাচ্চাদের মতোই তার মুখে জল এসে পড়ে!
‘এই যে মাই ডিয়ার শ্যালিকা, এন্ড মাই ডিয়ার ওয়াইফ, তোমরা যেমন এই সাত সকালে আমার জন্যে কষ্ট করছো, আমিও তোমাদের জন্য উপহার নিয়েই এসেছি!’
‘সত্যি দুলাভাই? তা কি সেই উপহার?’ রুনু, অর্থাৎ শ্যামলির মা জিজ্ঞেস করে।
‘সেটা হচ্ছে জ্ঞান, মাই ডিয়ার শালিকা, এস্ট্রোনমি-তে তুমি এখন আমাকে ছোটখাট একজন জ্ঞানকোষ হিসেবে ভেবে নিতে পারো।’
‘তাই নাকি দুলাভাই? তা আকাশের তারা চিনে কি করবেন?’
‘আহা! কিছু করার কথা আসছে কেন?’ বলতে বলতে জালাল উদ্দিন সাহেব পাতের দিকে হাত বাড়ান, মুহূর্তের মধ্যে দুটো পিঠে মুখে চালান করে দেন, আহা! যেন অমৃত!
‘জ্ঞান হচ্ছে অন্তরের শান্তির জন্য, পেটের শান্তির জন্য একটা কিছু খেলেই চলে, কিন্তু জিভের শান্তির জন্য নিশ্চয়ই মজাদার কিছু চাই? ঠিক, তেমনিই অন্তরের শান্তির হাতিয়ার হচ্ছে জ্ঞান!’
‘বাহ! দুলাভাই, তাহলে শাওন, শ্যামলি এদের ঘুম ভাঙলেই আপনার কাছে পাঠিয়ে দিব, আপনি তাদের একটু দীক্ষা দেবেন।’
‘হ্যাঁ, তোর দুলাভাই তো স্কুলমাস্টার, তাকে বল ফরেস্ট অফিসারের চাকরিটা ছেড়ে যেন একটা বিনামূল্যে পাঠদানের স্কুল খুলে বসে। ঘর সংসারে এমনিতেই তার মন নেই, স্কুল খুললে তার বারান্দায় বসে তার দিব্যি দিন কেটে যাবে,’ পাশ থেকে টিপ্পনি দেন রাহেলা বেগম।
‘আচ্ছা, তুমি কি জানো, পৃথিবী যে অক্ষের উপর ঘুরছে, সেই অক্ষ-ও . . .।’ জালাল উদ্দিন সাহেব বেশ নিশ্চিত ছিলেন এই তথ্যটা জানলে রাহেলা বেগম বেশ অভিভূত হবেন। তবে তিনি কথা শেষ করতে পারলেন না। তার আগেই রাহেলা বেগম মুখ ঝামটা দিয়ে বসলেন। এদের পরিবারের সবারই মুখ ঝামটা দেয়া রোগ আছে!
‘ঘরে কি গ্যাস লাইন আছে? নেই! এতবার করে বললাম, কিছু লাকড়ির ব্যবস্থা করে দিতে, মাটির চুলোয় রাঁধতে হয়।’
জালাল উদ্দিন সাহেব এবার তার ভুলটা বুঝতে পারলেন। লাকড়ির কথা তিনি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন।
‘আসলে ফরেস্ট অফিসার হিসেবে লাকড়ি ব্যাপারটাকে ঠিক সমর্থন দিতে পারি না, তাই গড়িমসি করছিলাম।’ জালাল উদ্দিন সাহেব বেশ সাবধানতার সাথে ভুলে যাবার ব্যাপারটাকে এড়িয়ে গেলেন।
‘আর নিজে যখন বন্দুক কাঁধে চড়িয়ে পাখি শিকারে বের হও, তখন লজ্জা করে না?’
‘আহা! প্রতিটা প্রাণীই কিন্তু শিকার করে, পুকুরে যখন জাল ফেলছি, সেটাও কিন্তু এক প্রকার শিকার, তাহলে পাখি শিকারে সমস্যাটা কোথায়? তাছাড়া, ইকোসিস্টেমের যে তারতম্য . . .।’ জালাল সাহেব খুব বেশি চেষ্টা করছিলেন গম্ভীর ভঙ্গিতে একটা কথা বলে প্রসঙ্গটাকে পাল্টে ফেলতে।
‘রাখো তোমার ইকো সিস্টেম,’ আবার চেঁচিয়ে উঠলেন রাহেলা বেগম, ‘লাকড়ি কিভাবে ব্যবস্থা করছো সেটা বলো, নাহলে রাতের বেলা উপোস করতে হবে।’
‘আচ্ছা, এই দিন দুপুরে আমার পরিবারের কেউ বন ধ্বংসে ব্যস্ত, তা দেখলে লোকে কি বলবে? হাজার হোক আমি একজন ফরেস্ট অফিসার। আশেপাশে লোকজন কম সত্য, কিন্তু দু’একজনের চোখে পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু না।’
‘তাহলে দপ্তরিকে বলো, সদর থেকে এনে দিক।’
‘না না, সে অনেক দূর যেতে হবে, লাকড়ি আনতেও বেশ বেগ পেতে হবে কলিম উল্লাহ-কে। আমার অধীনস্থ কর্মচারী বলে তাকে তো এভাবে খাটাতে পারি না।’ চিন্তার একটা ভাঁজ পড়ে জালাল উদ্দিন সাহেবের কপালে। প্রতি শীতেই তাকে লাকড়িসংক্রান্ত জটিলতার মাঝে দিয়ে যেতে হয়। এর কোনো স্থায়ী সমাধান তিনি এখনও করতে পারেননি।
‘আচ্ছা, দুলাভাই,’ এবার মুখ খুলে রুনু, ‘এককাজ করলে কেমন হয়? সন্ধ্যার একটু আগে আগে করে আমরাই না হয় বের হই, অল্প-সল্প লাকড়ি জোগাড় করতে খুব বেশি সময় কিন্তু লাগবে না, আর সেসময়টায় লোকজনের চোখে পড়ার সম্ভাবনাও নেই।’
‘রুনু, তুই কিন্তু খারাপ বলিসনি,’ বলেন রাহেলা বেগম।
‘কিন্তু, সেই সময়টায় তোমাদের আমি বের হতে দিতে পারি না। জঙ্গলে মাঝেমাঝেই ডাকাত সন্ত্রাসীরা আড্ডা ফেলে, কখন কোন অঘটন . . .।’
‘আহা! সাথে তো তুমিও থাকছো, আর কলিম উল্লাহ-কে বলে দিও সাথে সেও যেন থাকে। তোমার বন্দুকটা না হয় তার হাতে দিও।’
‘হ্যাঁ রে, আপু, বেশ একটা অ্যাডভেঞ্চার হবে নিশ্চয়ই,’ সাথে বন্দুক নেবার কথা শুনে রুনুও ছোট খুকির মতো আহ্লাদ করে।
জালাল উদ্দিন ভেবে দেখলেন, দু’বোন খুব একটা খারাপ প্রস্তাব দেয়নি। সাথে বন্দুক থাকছে, তাছাড়া লাকড়ি কাটার সরঞ্জাম-ও থাকবে। খুব একটা বিপদের ভয় নেই। সাত-পাঁচ ভেবে শেষটায় নিজেও রাজি হয়ে গেলেন তিনি।
তিন
জালাল উদ্দিন সাহেবরা যখন বের হলেন, ঘড়ির কাটা তখন সোয়া চারটার ঘর পেরিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামবে। জঙ্গলে সন্ধ্যে নামার দৃশ্যটাও বেশ অদ্ভুত। কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎ ঝুপ করে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে যায়। তাই হাতে একটা শক্তিশালী টর্চ না রেখে জঙ্গলে বের হওয়াটা আসলে চরম বোকামি।
সাথে দপ্তরি কলিম উল্লাহ আছে। তার বাম কাঁধে একটা দু’নলা বন্দুক ঝুলছে। জালাল উদ্দিন সাহেব চাইলেই রাহেলা বেগম আর রুনুকে আসতে মানা করে দিতে পারতেন, তবে সেটা বোকামিই হতো। রুনু এখন দু’সন্তানের জননী হলেও তার ভাব-ভঙ্গি এখনো ছোট খুকির মতোই। কোনো কাজই সে খুব একটা ভেবে-চিন্তে করে না, ভাল-মন্দ বিচার বিবেচনার তোয়াক্কা করে না। খুবই চঞ্চল শ্যালিকা তার।
আজ যদি আসতে না করে দিতেন, পরে নির্ঘাত একা একাই জঙ্গলে বেরিয়ে পড়তো রুনু, অ্যাডভেঞ্চারের লোভে! যদিও জঙ্গলে বাঘ-ভালুক নেই, কিন্তু ডাকাত তো আছে! এর চেয়ে বরং তার সাথেই বের হোক। রুনুর মনের আশাও মিটুক, লাকড়ির যোগান-ও হয়ে যাক। তাহলে, অন্তত অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারটা আর তাকে আলাদা দুশ্চিন্তা করতে হবে না। অবশ্য বাড়ির ছোটদের জঙ্গলে আসার অনুমতি দেননি তিনি।
পথ দেখিয়ে নিয়ে চলছে কলিম উল্লাহ। হাঁটার গতি দেখেই বোঝা যায় এই জঙ্গলটা তার ভালোই চেনা-জানা। দু’পাশে ঘন গজারি গাছের জঙ্গল, তার মাঝ দিয়ে সরু পায়ে চলা পথ। একটা গাছের সাথে অপর গাছের তেমন কোন বৈসাদৃশ্য নেই। সবগুলো গাছই মাটি থেকে সোজা উপরে উঠেছে, হঠাৎ দেখলে মনে হয় যেন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। কাণ্ড থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে ডাল বেরিয়েছে, প্রত্যেকটা ডালেই সবুজ রঙের পাতা।
যেদিকেই তাকানো যায়, সব দিকেই একই রকমের গজারি গাছ, এই বনে অন্যান্য উদ্ভিদের সংখ্যা শাল গাছের তুলনায় অতি নগণ্য। এইসব গাছ থেকেই চাইলে লাকড়ি সংগ্রহ করা যেতো, তবে এই গাছ গুলোর কাণ্ড নাকি বেশ শক্ত। কেটে লাকড়ি করে নিতে বেশ বেগ পেতে হবে। তাই কলিম উদ্দিন পথ দেখিয়ে নিয়ে চলছে তার পরিচিত জায়গায়, সেখানটার গাছগুলোর কাণ্ড নাকি দু’এক কোপেই আলাদা করে ফেলতে পারবে সে। গাছগুলোর বয়স কম হওয়ায় তাদের কাণ্ড এখনো ততটা মজবুত হয়নি। আর বনের মাঝে এভাবে ঘুরে বেড়াতে রাহেলা বেগম, বিশেষ করে রুনুর কোনোই আপত্তি নেই।
হঠাৎই কলিম উল্লাহ পায়ে চলা পথটা ছেড়ে জঙ্গলের ভেতরে প্রবেশ করতে ইশারা দেয় দলটাকে। সবাই বিনা বাক্যব্যয়ে তার পিছু নেয়। তবে এদিকটার জঙ্গল কিছুটা ঘন। মাঝে মাঝেই চলার পথে দু’একটা ডাল এসে পড়ছে, তখন সেই ডাল না কেটে সামনে চলার উপায় নেই। লাকড়ি সংগ্রহ করতে ‘রাম দা’ সদৃশ একটা বস্তু নিয়ে বের হয়েছিলেন রাহেলা বেগম। সেই রাম দা এখন কলিম উল্লাহ-র হাতে। আর বন্দুক হাত বদলি হয়ে ফিরে গিয়েছে জালাল উদ্দিনের কাঁধে।
‘জানেন স্যার, অল্প কিছুদূর হাঁটলেই একটা খুব প্রাচীন মন্দির পড়বে?’ নীরবতা ভাঙ্গে কলিম উল্লাহ।
‘তাই নাকি? কীসের মন্দির?’ রুনুর মাঝেই বেশি আগ্রহ দেখা গেল।
‘তা অতো ভালো বলতে পারি না দিদিমনি। অনেক পুরনো মন্দির। এখন আর পূজো-অর্চণা হয় না। তবে লোকমুখে শুনেছি, একসময় নরবলি দেয়া হতো মন্দিরটাতে।’
‘বলিস কি রে?’ এবার কথা বলে উঠলেন জালাল উদ্দিন সাহেব, কলিম উল্লাহকে স্নেহ করেই তিনি ‘তুই সম্বোধন করেন। ‘এতদিন এখানে আছি, কোনোদিন তো এমন খবর শুনিনি।’
‘তা স্যার জঙ্গলের খবর কয়জনই বা রাখে বলেন? আমি যা শুনেছি ওই লোকমুখেই শুনেছি।’
‘তা বেশ, কিন্তু এই নরবলির ব্যাপারটা কীরকম?’
‘যদ্দুর জানি, মন্দিরটার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেদারনাথ নামের এক ভয়ঙ্কর ডাকু। তার আস্তানাই ছিল আসলে এই মন্দিরটা। সেকালে জঙ্গলে কালে-ভদ্রে হয়তো কেও আসতো। এই শাল বনেও তখনকার দিনে চিতা বাঘের আড্ডা ছিল!’
‘বলিস কিরে? চিতা বাঘ!’
‘মিথ্যা না স্যার, শুনে অনেকেই অবাক হয়। কিন্তু এককালে হরিণ, বুনো শূকর, শিয়াল এইসবও হরহামেশা চরে বেড়াত বনটায়। তবে এখন আর এসব কিছুই নেই।’
‘আচ্ছা, এই মন্দিরটায় কোনো মূর্তি . . . ?’
‘কিসসু নেই স্যার!’ জালাল উদ্দিনের মুখের কথা এক প্রকার কেড়েই নিল কলিম উল্লাহ। ‘লোকমুখে যা শুনেছি, ভেতরে কোনো মূর্তি-টুর্তি নেই।’
‘সেকি, নিজে ভেতরে যাসনি?’
‘তা স্যার ভেতরে যেরকম ঝোপ-জঙ্গল আর সাপের আড্ডা, এর ভেতরে যাবার সাহস অন্তত আমার নেই। দেয়াল টপকিয়ে যদ্দুর পারি, দেখেছি।’
‘আচ্ছা কলিম, আর কদ্দুর হাঁটতে হবে রে? আর কিছুক্ষণ বাদেই তো চারদিক অন্ধকার হবে।' অনেক্ষণ বাদে এবার রাহেলা বেগম মুখ খুলেন। স্বামীর মতো তিনিও কলিম উল্লাহকে তুই করেই বলেন।
‘আর বেশি দেরি নেই দিদিমনি। আর মিনিট ছয়েক হাঁটলেই মন্দির-টার দেখা পাবেন, তার দক্ষিণ কোণের দেয়াল ঘেঁষেই বেশ কিছু কচি শাল দেখেছিলাম হপ্তা কয়েক আগে।’
‘তাই নাকি? এই জঙ্গলে কি করতে এসেছিলি?’
‘দিদিমনি, ছুটির দিনগুলোতে ঘরে বসে থাকলেও সময় কাটে না, পাড়ার বন্ধুরা মিলে মাঝেমাঝেই জঙ্গলে ঘুরতে বেরোই। আমাদের কাছে এই জঙ্গল আসলে কখনোই পুরনো হয় না। তাছাড়া, জঙ্গল ছাড়া এই বিশাল এলাকায় আর কিই বা দেখার আছে বলেন।’
‘আচ্ছা, কলিম,’ এবার প্রশ্ন করেন জালাল উদ্দিন সাহেব, ‘এই কেদারনাথের ব্যাপারে আর কী জানিস বললি না তো?’
‘তেমন কিছুই না স্যার। কেদারনাথ কোন শক্তির আরাধনা করতো সেটা নিয়ে অনেক জনশ্রুতি আছে। বেশির ভাগই গুজব! তবে আমার নিজের একটা মতামত আছে।’
‘তাই নাকি? সেটা কী?’
‘সেকালে কেদারনাথের ভয়ে অনেক এলাকার লোকই নাকি তটস্থ থাকতো। এমনটা কি হতে পারে না, তার সাথে বিরোধে জড়ানো লোকগুলো কে সে ধরে নিয়ে এনে বলি দিয়ে দিত? মন্দিরের পুরোহিতরাও হয়তো তার ডাকাত দলেরই সদস্য ছিল। সেকালের লোকেরা যথেষ্টই বর্বর ছিল। কেদারনাথ মন্দিরের আড়ালে কোনো কালো শক্তির আরাধনা করত এমনটা শুনলেও আমি খুব বেশি অবাক হব না।’
‘হুম, তা অবশ্য খারাপ বলিসনি।’
‘তোমরা দয়া করে এইসব আলোচনা বন্ধ করো তো। অন্ধকার নামছে।' রুনুর নিশ্চয়ই ভয় করছিল এসব শুনতে শুনতে।
আর অল্প কিছুক্ষণ হাঁটার পরই চারজনের দলটা মন্দিরটার কাছাকাছি পৌঁছে গেল। আলো বেশ কমে এসেছে। কিছুক্ষণের ভেতর ঝপ করে অন্ধকার নামবে। জালাল উদ্দিন সাহেব সাবধানতার বসে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে নিয়েছেন।
কলিম উল্লাহ আশেপাশের গাছগাছালি নিরীক্ষণে ব্যস্ত। এরই মাঝে দু’একটা গাছের ডাল সে এক কোপে ফেলে দিয়েছে । তবে তার মন এতে সন্তুষ্ট নয়। খুঁজে খুঁজে কয়েকটা কচি গজারি গাছ পেলেই সে গাছের কাণ্ড-সুদ্ধো কেটে নিতে চায়; তাহলে অল্প পরিশ্রমে অনেক বেশি লাকড়ি পাওয়া যাবে। রাহেলা বেগম এক মনে কলিম উল্লাহর কাজ দেখছিলেন।
তবে রুনুর এইসবে কোনো খেয়াল নেই। নিবিষ্ট মনে সে তাকিয়ে আছে পুরনো মন্দিরটার দেয়ালের দিকে। এককালে বেশ সুন্দর কারুকাজ ছিল এই দেয়ালটা জুড়ে, তা বুঝতে বেশ অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকতে হয়। তবে এখন তার সবই অরক্ষিত ইতিহাস কেবল।
দেয়ালের জায়গায় জায়গায় ফাটল ধরেছে। কোনো কোনো ফাটল দিয়ে অদ্ভুত ধরনের লতা বেরিয়ে এসেছে। দেয়ালের কারুকাজগুলো শ্যাওলার জন্যে এখন আর বোঝা যায় না বললেই চলে। কত ইতিহাস, কত গল্প আর কালের সাক্ষী এই মন্দিরের দেয়ালটা। ভাবতেই রুনুর কেমন অদ্ভুত লাগতে থাকে। এই দেয়ালের অপর প্রান্তেই নিশ্চয়ই মূল মন্দির। একটু কাছাকাছি যেতেই জালাল উদ্দিন সাহেবের সাবধান বাণী শোনা গেল, ‘আর বেশি কাছে যাসনে। সাপ-খোপ থাকতে পারে।’
একটা মনের মতো গাছ পেয়ে সজোরে রাম দা উঁচিয়ে কোপ দিতে যাবে কলিম উল্লাহ, ঠিক এমন সময়ই ঘটলো ঘটনাটা। একটা তীব্র ভয়ঙ্কর মেয়েলি চিৎকার ভেসে এলো মন্দিরের দেয়ালের অপর প্রান্ত থেকে। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই যেন পাথর হয়ে গেলো ক্ষণিকের জন্যে। কারো কোনো বোধশক্তি ছিল না যেন ওই সময়টায়।
পরবর্তী ঘটনা বেশ দ্রুত ঘটতে শুরু করলো। তার চেয়ে দ্বিগুণ চিৎকার দিয়ে এক লাফে দুলাভাইয়ের কাছাকাছি চলে এলো রুনু। একটু আগের নরবলির গল্প এমনিতেই তার মনে ভয়ের সঞ্চার করেছিল। তারপর এমন নীরব-নির্জন পাণ্ডব-বর্জিত এলাকায় আকস্মিক এমন আর্ত চিৎকার যেকোনো সাহসী মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দিত। সেক্ষেত্রে রুনুকে তো বাচ্চাই ধরা যায়। রাহেলা বেগম যেন বোয়াল মাছের মতো খাবি খাচ্ছিলেন। কলিম উল্লাহ হাত থেকে রাম দা ফেলে দিয়ে দোয়া দরুদ পড়তে শুরু করে।
সবার আগে সম্বিত ফিরে পেলেন হাফেজ জালাল উদ্দিন সাহেব। মুহূর্তের মধ্যেই কাঁধে ঝোলানো বন্দুকটা তার হাতে চলে এলো। ধমকের সুরে কলিম উল্লাহকে নির্দেশ দিলেন ফেলে দেয়া রাম দা আবার হাতে তুলে নিতে। তার পরেই দেয়াল ঘেঁষে এগিয়ে চললেন। এই দেয়ালটা মন্দিরের পেছনের দিককার। অপরপ্রান্তে নিশ্চয়ই মন্দিরের ফটক।
ততক্ষণে আশ-পাশে বেশ অন্ধকার নেমেছে। দু’হাতে টর্চ আর বন্দুক উঁচিয়ে ধরে পথ দেখে চলতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল জালাল উদ্দিন সাহেবকে। তার পিছু পিছু রাম দা হাতে আসছিল কলিম উল্লাহ। কিছুক্ষণ হতবিহবল এর মতো দাঁড়িয়ে থেকে আচমকাই যেন বাস্তবে ফিরে আসেন রাহেলা বেগম আর রুনু। তারাও জালাল উদ্দিনের পিছু নিলেন। এখানে এই অন্ধকারে একাকী দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে সেটাই অন্তত নিরাপদ মনে হলো তাদের কাছে।
মন্দিরের ফটকের কাছাকাছি গিয়ে যা আশা করছিলেন তাই দেখলেন জালাল উদ্দিন সাহেব। ফটকটা হাট করে খোলা। কালক্ষেপণ না করে বন্দুক হাতে মন্দিরের সীমানায় প্রবেশ করলেন তিনি, তার পিছু পিছু অন্যরাও। একটু সামনে এগিয়ে যেতেই টর্চের আলোয় যা দেখলেন, তা এই নির্জন এলাকায় যে তাকে দেখতে হবে, সেটা তিনি কখনো ভাবেননি। তবে সেই ভয়ানক চিৎকার-টা শুনেই কেন যেন মনে হচ্ছিল, এ অশরীরী কিছু নয়।
মেয়েটার মুখ টর্চের আলোয় ভালো করে বোঝা যাচ্ছিল না। তবে উঠতি বয়সি মেয়ে। শাড়ির আঁচল মাটিতে গড়াচ্ছে। ব্লাউজের সামনের অংশ দুর্বলভাবে মেয়েটির স্তনের গোপনীয়তা রক্ষা করলেও, হাতের পাশ থেকে পেছন পর্যন্ত অংশটায় কোনো কাপড় ছিল না।
জালাল উদ্দিন সাহেব দ্রুত আশেপাশে টর্চের আলো ফেলেন। মেয়েটিকে ঘিরে ছয়জন লোক। কিছুই বোঝার বাকি থাকে না আর তার। তারপরের ঘটনা আরও বিস্ময়কর। বিকট চিৎকার দিয়ে রাহেলা বেগম কলিম উল্লাহর হাত থেকে রামদা টা ছিনিয়ে নিলেন, মুহূর্তের মধ্যে ছুঁড়ে মারলেন সবচেয়ে কাছে ডান দিকে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে লক্ষ্য করে।
অল্পের জন্যে লোকটার মাথা ঘেঁষে পেছনের মাটিতে গিয়ে পড়ল রামদাটা। অতিরিক্ত উত্তেজনায় রাহেলা বেগম হাতের নিশানা ঠিক রাখতে পারেননি। তবে যদি রাখতে পারতেন, নিমেষের মাঝেই লোকটার মাথা ধড় থেকে আলাদা হয়ে যেত।
অবস্থা বেগতিক দেখে চোখের পলকে দৌঁড়ানো শুরু করে লোকগুলো। টর্চের আলোয় অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার হাতে যে বন্দুক আছে তা বুঝতে কারোই খুব একটা অসুবিধা হচ্ছিল না। বন্দুকের মুখোমুখি হবার সাহস কারোই নেই। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই তারা দেয়ালে চড়ে বসল।
এর মাঝেই একজনকে লক্ষ্য করে বন্দুকের ট্রিগার টিপে দিলেন জালাল উদ্দিন সাহেব। প্রায় সাথে সাথেই অপর পাশে গড়িয়ে পড়ল লোকটা, তবে সেটা গুলি খেয়ে কিনা সেই ব্যাপারে জালাল উদ্দিন সাহেব নিশ্চিত নন। এই আধো আলো আধো অন্ধকারের মাঝে নিশানা ছুটে গেলেও খুব একটা অবাক হবার কিছু নেই।
লোকগুলো বেশ ক্ষীপ্র। এত অল্প সময়ের মাঝে যে তারা সবাই দেয়াল টপকে যাবে, তা ভাবতে পারেননি জালাল উদ্দিন সাহেব। আর এই অন্ধকারের মধ্যেই কত দ্রুত তারা দেয়াল টপকে ফেলল, এর মানে জায়গাটা লোকগুলোর কাছে পূর্ব পরিচিত। বেশ অনেকদিন যাবত এইদিকটায় তাদের আনাগোনা হয়।
যাহোক, সেদিকে আর নজর দিলেন না তিনি। পুনরায় টর্চের আলো ফেললেন মেয়েটার দিকে তাক করে। ভয়ানক বিপদের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে মেয়েটা। দ্রুত মেয়েটার কাছে দৌড়ে গেল রাহেলা বেগম আর রুনু।
জালাল উদ্দিন সাহেবও ধীর গতিতে এগিয়ে চললেন মেয়েটাকে লক্ষ করে, টর্চের আলোয় দেখলেন, মেয়েটা হিস্টিরিয়া-গ্রস্থের মতো কাঁপছে!
(পড়ুন দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব)