এক
‘প্রস্তুত হও, কার্ল বসম্যান। ঈশ্বরের সাথে দেখা করতে যাচ্ছ তুমি।’
চমৎকার এক সন্ধ্যা, মৃদু বাতাস বইছে। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে পাইনের সুবাস। থেকে থেকে সেই গন্ধের সাথে মিশে যাচ্ছে ধুলোর ঝাঁঝালো গন্ধ আর গোবরের দুর্গন্ধ। তিন গন্ধ মিশে সৃষ্টি হয়েছে বিচিত্র এক গন্ধের। দূর থেকে ভেসে আসছে গোরুর ডাক আর খুরের শব্দ। পূর্বদিক থেকে উদিত হচ্ছে একটা ভরা পূর্ণিমার চাঁদ।
এরকম সন্ধ্যায় স্ত্রীর সাথে পোর্চে বসে দু’কাপ কফি নিয়ে ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভালো লাগে। অতীতের পাওয়া, না পাওয়ার হিসেব মেলাতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কার্ল বসম্যানের দুর্ভাগ্য, এসবের কিছুই সে করতে পারছে না।
তার স্ত্রী জুডি কপালের মাঝখানে একটা গোল ফুটো নিয়ে পড়ে আছে কিচেনে। একমাত্র সন্তান টমিও বেঁচে নেই, আততায়ীর গুলির আঘাতে সবার আগে পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছে। ঘোড়ার শব্দ পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল ও, আততায়ীর মুখ ঢাকা থাকায় চ্যালেঞ্জ করেছিল তাকে। টমির হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না, সেটাই হয়েছিল ওর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। টমিকে কোনো সুযোগ না দিয়েই গুলি করেছে আততায়ী। আর এই মুহূর্তে কার্লের চাঁদিতে একটা কুৎসিতদর্শন শটগান ধরে আছে সে।
কার্ল বসম্যানের র্যাঞ্চের নাম বক্সবি। এলাকার ধনী র্যাঞ্চার দুজনের একজন সে, অপরজনের নাম জ্যাক মরমন্ট। জ্যাক শুধু একজন র্যাঞ্চারই নয়, এই এলাকার একমাত্র হোটেলের মালিকও বটে।
এক এলাকায় দুজন প্রভাবশালী র্যাঞ্চারের কথা শুনলে এক বনে দুই সিংহের কথা মনে হতে পারে, তবে জ্যাক আর কার্লের ব্যাপারটা একদমই আলাদা। সেই তরুণ বয়স থেকে খুব ভালো বন্ধু তারা, এই এলাকায় এসেছিলও একসাথে, রেডউড সিটির গোড়াপত্তন তাদেরই হাত ধরে।
তাদের আরও একজন বন্ধু আছে, নাম জোসেফ ব্রাউন। রেডউড সিটিতে সেলুন, ব্যাংক আর জেনারেল স্টোর—সবগুলোই একটি করে এবং সবগুলোরই মালিক জোসেফ। জেনারেল স্টোরের কোনো নাম নেই, তবে সেলুন আর ব্যাংকের আছে। সেলুনের নামটা বেশ গালভরা, ‘দ্য ব্রাউন’স’। আর ব্যাংকের নাম ‘ন্যাশনাল ইউনিয়ন ব্যাংক’।
সব মিলিয়ে রেডউড সিটির হর্তাকর্তা কিংবা বিধাতা বলতে গেলে এই তিনজনই। যেকোনো ব্যাপারে এই তিনজনের কথাই শেষ কথা।
গৃহযুদ্ধের পরে এই এলাকায় এসেছিল জ্যাক, জোসেফ, আর কার্ল। তখন একদমই বুনো ছিল জায়গাটা। ইন্ডিয়ানদের হটিয়ে, আউট-ল’দের সাথে লড়াই করে রেডউড সিটি স্থাপন করেছিল তারা। গড়ে তুলেছিল নিজেদের সাম্রাজ্য।
আর সেই সাম্রাজ্যতেই এখন খুন হতে বসেছে কার্ল বসম্যান!
আততায়ীর কথা শুনে মুখ তুলে তাকালো কার্ল। গলাটা কেমন যেন পরিচিত বলে মনে হলো তার।
কার্ল ছয় ফুটের ওপরে লম্বা, সুদর্শন চেহারার অধিকারী। বয়স পঞ্চান্ন’র মতো হবে। সেটাও বোঝা যায় শুধুমাত্র লতির কাছে কিছু পাকা চুল আর কোমরে কিঞ্চিৎ মেদের কারণে। এইদুটো জিনিস না থাকলে তাকে অনায়াসে চল্লিশ বছরের একজন মানুষ বলে চালিয়ে দেয়া যেত।
এই বয়সেও যথেষ্ট শক্তি রাখে সে। তবে সেই শক্তি আজ কোনো কাজে আসেনি। আততায়ী যখন আক্রমণ করে তখন নিজের অফিসে বসে ছিল কার্ল, র্যাঞ্চের হিসাব নিকাশ দেখছিল। টমিকে গুলি করে সরাসরি অফিসে ঢুকে যায় আততায়ী, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার পায়ে গুলি করে।
গুলির শব্দ পেয়ে ছুটে আসে কার্লের স্ত্রী জুডি, তখন তাকেও গুলি করে আততায়ী। কপালে গুলি নিয়ে কিচেনের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে কার্লের স্ত্রী। তার এতো বছরের সুখের সংসার শেষ হয়ে যায় এক নিমেষে।
র্যাঞ্চের সামনের উঠানে হাঁটুগেঁড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে কার্লকে। হাত-পা পিছন দিকে টেনে শক্ত করে বাঁধা হয়েছে গরুর চামড়া দিয়ে, যত টানাটানি করছে তত কেটে বসে যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ টানাটানি করে হাল ছেড়ে দিয়েছে সে।
চাঁদি থেকে হঠাৎ সরে গেল শটগানের মাজল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিঠের ওপরে আঘাত পড়ল শটগানের বাঁটের। ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো কার্ল। কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছে ও?
অন্য সময় র্যাঞ্চ গমগম করে কাউবয়দের চিৎকার চেঁচামেচিতে। কিন্তু ট্রেইল ড্রাইভের মৌসুম হওয়ায় তিনজন বাদে র্যাঞ্চ প্রায় ফাঁকা। তিনজনের দুজন আছে বাকি গরুগুলোর দেখাশোনায়, ফিরে আসার কথা কিছুক্ষণের মধ্যেই। আর বাকি একজন কুকের সাথে শহরে গিয়েছে রসদ কিনতে, ফিরবে একবারে কাল। আজ রাতটা ফুর্তি করে কাটাবে হয়তো।
রাতে শহরে থাকবে শুনে আপত্তি করেনি কার্ল। আর করবেই বা কেন? একটা রাতেরই তো ব্যাপার। এই এলাকার মালিক তারা তিনজন, এখানে কোনো শত্রু নেই তাদের। আর কাউবয়রা তার র্যাঞ্চের জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করে, এদের খেয়াল রাখাটা তার কর্তব্য।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আপত্তি করার দরকার ছিল। প্রকাশ্য শত্রু হয়তো ছিল না, কিন্তু গোপন শত্রু যে আছে সে তো এখন বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু লোকটা কে . . .?
চিন্তা শেষ হলো না কার্লের। কাঁধের ওপরে শটগানের বাঁট দিয়ে আবার আঘাত করেছে আততায়ী।
ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো কার্ল। চোখে পানি এসে গেছে, ফোঁপাচ্ছে। কেন ওকে এভাবে মারছে লোকটা? ও তো কারো ক্ষতি করেনি কখনো।
পড়ে গিয়েছিল ও। আবার সোজা করে বসিয়ে দিল আততায়ী। শটগান মাটিতে রেখে কার্লের সামনে এসে দাঁড়াল।
শুরু হলো মার। কিল, ঘুষি, লাথি সব একনাগাড়ে মারতে লাগল। অসহায়ের মতো মার খেতে লাগলো কার্ল। আততায়ীর শরীরে প্রচণ্ড জোর। তার এক একটা আঘাতে মাথার মধ্যে তারা জ্বলে উঠতে লাগল কার্লের।
কিছুক্ষণ পর থামলো আততায়ী। কার্লের অবস্থা শোচনীয়, মুখ আর দেখার মতো নেই। ওকে এতক্ষণ ধরে পিটিয়েও কোন ভাবান্তর নেই আততায়ীর, হাঁপাচ্ছে না একদম।
কথা বলার মতো অবস্থা নেই কার্লের। তারপরেও বিড়বিড় করে বলল, ‘কাপুরুষ।’
‘আমি কাপুরুষ?’ মুখের কাপড় সরিয়ে নিল আততায়ী।
আততায়ীকে দেখে চমকে উঠলো র্যাঞ্চার। বিস্ময়ের সুরে বলল, ‘আপনি . . .?’
‘হ্যাঁ, আমি।’ বলল আততায়ী। ‘আমি কাপুরুষ?’ আবার জিজ্ঞেস করল সে। ‘পিটার ট্রিমেনকে মনে পড়ে, কার্ল বসম্যান? পিটারকে কাপুরুষের মতো কারা হত্যা করেছিল?’
বিস্ময়ে বড়বড় হয়ে গেল কার্লের দু’চোখ। মনে পড়েছে! মনে পড়ে গিয়েছে তার পাপের কথা। সারাজীবনে একবারই শুধু খারাপ কাজ করেছিল সে আর তার বন্ধুরা। ভেবেছিল কেউ কখনো জানতেও পারবে না। কিন্তু পাপের দেনা যে শোধ করতেই হয়, তা ভুলে গিয়েছিল সে।
‘নরকে যাও, কার্ল বসম্যান। চিন্তা কোরো না। বেশিক্ষণ একা থাকতে হবে না তোমার। বন্ধুদেরকেও পাবে খুব শীঘ্রই।’
কার্লের মুখের মধ্যে ঢুকে গেল শটগানের নল। চোখ বন্ধ করল কার্ল। সেদিন যদি ওই কাজটা ওরা না করতো, তাহলে আজকে আর . . .।
শটগানের গুলির আঘাতে মাথা স্রেফ উড়ে গেল পোড় খাওয়া র্যাঞ্চারের, ছিটকে পড়ল হলুদ মগজ। চাঁদের আলোতে কেমন কালচে দেখাচ্ছে রক্তের রঙ।
কাজ শেষ হলে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল আততায়ী, বড় করে শ্বাস নিয়ে ফুসফুসে টানলো পাইনের সুবাস। তারপর চাঁদের দিকে চেয়ে বলল, ‘হোয়াট আ ওয়ান্ডারফুল নাইট টু ডাই।’
টমির দেহটা টেনে নিয়ে গিয়ে র্যাঞ্চের মধ্যে ফেলল সে, তারপর র্যাঞ্চে আগুন ধরিয়ে দিল। শুকনো কাঠ আগুন পেয়ে জ্বলে উঠল দাউদাউ করে।
কাজ শেষ হলে ঘোড়ায় উঠলো আততায়ী, যতটা সম্ভব ট্র্যাক মুছে চলে গেল বক্স বি থেকে।
আগুন জ্বলতে থাকল। কাউবয় দুজনের কিছুক্ষণের মধ্যে ফেরার কথা থাকলেও দেখা পাওয়া গেল না তাদের। পুরো বাড়ি জ্বালিয়ে তারপর নিভলো আগুন। চাঁদটা ঝুলছে তখন মধ্য আকাশে।
ভরা পূর্ণিমার আলোয় অপার্থিব দেখাতে লাগলো কার্ল বসম্যানের লাশ।
দুই
পেছন থেকে শব্দ পেয়ে ফিরে তাকাল শেরিফ জন ক্রিসমাস। বমি করছে ডেপুটি ড্যানি ওয়েস্ট।
শেরিফের নিজেরও গা গুলাচ্ছে। আইনরক্ষার কাজে ও নিয়োজিত আছে প্রায় বিশ বছর, কিন্তু হলফ করে বলতে পারে, এ ধরণের বীভৎস হত্যাকাণ্ড আগে দেখেনি।
ওর বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি। দড়ির মতো পাকানো শরীর। আইনের নিবেদিতপ্রাণ সেবক, আউট-ল’দের জন্য রীতিমতো আতঙ্কের কারণ। কোনো আউট-ল’ যদি আইন ভাঙে, তবে তাকে বিচারকের সামনে হাজির না করা পর্যন্ত শান্তি নেই ক্রিসমাসের।
সেই ক্রিসমাস এখন দাঁড়িয়ে আছে বক্স বি’র উঠানে, দৃষ্টি টমির দিক থেকে ঘুরে কার্লের দিকে।
রেডউড সিটিতে খবর নিয়ে গিয়েছিল গরুর পাহারায় থাকা দুজন কাউবয়, মার্ক আর মিগুয়েল। ধারণা করা যায়, খুনী চলে যাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই র্যাঞ্চে এসে পৌঁছায় তারা, মনিব এবং তার পরিবারের এই অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। তারপর দুজন পরামর্শ করে সেই রাতেই রওনা দেয় রেডউডের পথে, ঘুম থেকে ডেকে তোলে ক্রিসমাসকে। ড্যানিকে সাথে নিয়ে সেই রাতেই রওনা দেয় ও। ওদের সাথে যোগ দেয় মার্ক, শহরে থেকে যায় মিগুয়েল।
ক্রিসমাসের পাশে এসে দাঁড়াল ড্যানি। বিবর্ণ হয়ে আছে ওর তামাটে মুখটা। এখন একটু ভালো লাগছে কিনা, জানতে চাইল ক্রিসমাস। প্রশ্নের জবাবে দুর্বলভাবে মাথা নাড়ল সে। ড্যানির বয়স একুশ-বাইশ মতো, কিন্তু চেহারায় বাচ্চাসুলভ একটা ভাব আছে, যার কারণে ওর বয়স আরও কম দেখায়। ক্রিসমাস ওকে প্রায়ই ছোকরা বলে সম্বোধন করে থাকে।
ওদিকে গুম হয়ে আছে মার্ক। থেকে থেকে র্যাঞ্চ নামের ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকাচ্ছে, আর চোয়াল শক্ত হয়ে যাচ্ছে সেসময়। বিড়বিড় করে কী যেন বলছেও। একবার চোখও মুছতে দেখল ক্রিসমাস তাকে।
বেশ বড় একটা জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল মূল বাড়ি আর বাঙ্কহাউজ। ড্যানি আর মার্ককে বাঙ্কহাউজের দিকটা দেখতে বলে নিজের মতো সূত্র খুঁজতে শুরু করল ক্রিসমাস।
পিষে যাওয়া ঘাস আর ঘোড়ার পায়ের ছাপ ছাড়া তেমন কিছুই নেই। আততায়ীর ঘোড়া আবার মলত্যাগও করেছে এক জায়গায়, স্তূপীকৃত হয়ে আছে নাদি। একটু এগিয়ে গেল ও, কাজ সেরে এদিক দিয়েই চলে গেছে আততায়ী। ঘোড়ার পিঠে চাপার কারণে গভীর হয়ে ফুটে আছে ঘোড়ার পায়ের ছাপ।
ঘাস আর ঘোড়ার পায়ের ছাপ থেকে ক্রিসমাস অনুমান করলো, আততায়ী অনেক লম্বা আর ভারী। উচ্চতা ছয়ফুটের উপরে। সেই সাথে গায়ে অনেক শক্তিও ধরে সম্ভবত।
সমস্যা হচ্ছে, এই তথ্য দিয়ে কিছু করা যাবে বলে মনে হয় না। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষের উচ্চতাই ছয় ফুটের ওপরে।
একবার র্যাঞ্চের মধ্য থেকে ঘুরে এলো ক্রিসমাস। ভিতরে দুটো পোড়া লাশ চোখে পড়লো ওর। সম্পূর্ণ ছাই হয়ে গেছে বাড়িটা, বাইরে পড়ে আছে কার্লের লাশ, তার মানে এই দুটো অবশ্যই টমি আর মিসেস জুডির। তাদেরকে জীবন্তাবস্থায় পুড়িয়ে দেয়নি তো?
সম্ভবত না। কারণ, কার্লকে খুনের সময়ে যদি এরা জীবিত থাকত, তবে বাধা দিতো নিশ্চয়ই। অন্তত, টমি তো দিতই। কিন্তু তাহলে, টমিকে খুন করার সময়ও তো কার্লের বাধা দেয়ার কথা, তাই না?
আচ্ছা, কার্লের পায়ে গুলি লেগেছিল, বাইরে দেখেছে ক্রিসমাস। ব্যাপারটা এবার তাহলে ব্যাখ্যা করা যায়। টমিকে প্রথমে খুন করে আততায়ী, কার্ল বেরিয়ে আসতেই গুলি করে কার্লের পায়ে। বাকিটা খুব সহজ। মিসেস জুডিকে খুন করে কার্লের ব্যবস্থা করে আততায়ী। ব্যবস্থা বলতে মুখের মধ্যে শটগান!
গোটা ব্যাপারটা চিন্তা করেই আরেকবার গা গুলিয়ে উঠলো ক্রিসমাসের। কোন ধরনের বেজন্মা এই আততায়ী!
ঘরে আর দেখার কিছু নেই। বেরিয়ে এলো ও। সূর্য উঠছে পূর্ব দিক থেকে। গভীর রাতে রওনা দিয়ে খুব ভোরে এখানে পৌঁছেছে ওরা, আকাশ মাত্র ফর্সা হচ্ছিল তখন। বক্স বি থেকে রেডউডের দূরত্ব খুব বেশি না, কিন্তু রাতের অন্ধকারে আসতে দ্বিগুণেরও বেশি সময় লেগেছে। অবশ্য তাড়াতাড়ি আসলেই বা . . .
আরে! এটা কী?
জিনিসটা একটা ছুরি, প্রথম সূর্যের আলোয় চমকাচ্ছে। এজন্যই চোখে পড়েছে ওর, নয়তো চোখ এড়িয়ে যেত। জিনিসটা আগে কেন ওর চোখে পড়েনি, তা ভেবে অবাক লাগলো ক্রিসমাসের। হত্যাকাণ্ডটা এতটাই হকচকিয়ে দিয়েছে ওকে যে, ঠাণ্ডামাথায় কিছু চিন্তা করতে পারছে না?
ট্র্যাকার হিসেবে খ্যাতি আছে ক্রিসমাসের, পাথরের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া সাপকেও ট্র্যাক করতে পারে ও, এমনটাই বলাবলি করে সবাই। ট্র্যাকার হতে গেলে অতি ছোট জিনিসও চোখ এড়িয়ে যায় না। অথচ এই ছুরিটা ওর চোখ এড়িয়ে গেল কীভাবে?
সাবধানে ছুরিটা তুলে নিলো ক্রিসমাস। একটা বাউয়ি নাইফ, বাঁটটা কালো। বাঁটে খোদাই করা দুটো অক্ষর, এম.টি.।
চিন্তার ভাঁজ পড়লো ক্রিসমাসের কপালে। এম.টি. মানে কী? কারো নাম? নাকি কোনো ব্র্যান্ড?
বেশিক্ষণ চিন্তা করার সময় পেল না ও, কারণ বাঙ্কহাউজের দিক থেকে এগিয়ে আসছে ড্যানি।
ড্যানিকে দেখে ছুরিটা একটা রুমালে জড়াল ক্রিসমাস, তারপর জ্যাকেটের পকেটে চালান করে দিল। ড্যানিকে পরে বললেই হবে।
‘কী অবস্থা? পেলে কিছু?’ ডেপুটিকে জিজ্ঞেস করল ক্রিসমাস, ছোকরার মুখে রঙ ফিরেছে অনেকটা।
‘ছাই ছাড়া আর কিছু না।’ বলল ড্যানি। ‘পকেটে কী রাখলেন, দেখলাম?’
‘বলছি পরে। শুধু এটা বলো, এম.টি. অক্ষর দুটো শুনলে কী মনে হয় তোমার?’
ফাঁকা দৃষ্টিতে শেরিফের দিকে তাকালো ড্যানি। ‘এম.টি.? এম.টি. মানে?’
বাঙ্কহাউজের দিক থেকে আসতে দেখা গেল মার্ককে, আর তখনই বিদ্যুৎ চমকের মতো ব্যাপারটা মাথায় এল ক্রিসমাসের।
‘মার্কের পুরো নাম কী বলো তো?’ চাপা গলায় ও জিজ্ঞেস করল ডেপুটিকে।
‘মার্ক টেলর। কেন, বলুন তো?’
ক্রিসমাসের মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল। ‘বলব পরে। আপাতত শহরে ফিরে যাও তোমরা, ফিরে আন্ডারটেকারকে খবর দাও। লাশগুলোর যা অবস্থা, তার ব্যবস্থা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
‘আপনি কোথায় যাবেন?’
‘আততায়ীর পেছনে।’
তিন
পরদিন দুপুর। কার্ল এবং তার পরিবারের ফিউনারেলে রেডউডের গোরস্থানে জমায়েত হয়েছে সবাই। ক্রিসমাস আর ড্যানি যেমন এসেছে, এসেছে ক্রিসমাসের স্ত্রী মেরিও। এসেছেন জাজ টাইলার আর তার মেয়ে সুজানা। এসেছে কার্লের ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু জোসেফ আর জ্যাক এবং তাদের পরিবার। মিগুয়েল, মার্কও বাদ যায়নি। এছাড়া এসেছে শহরের অন্যান্য নাগরিকরাও। শোক প্রকাশের কালো পোশাক পরে আছে সবাই।
আগেরদিন আততায়ীর ট্র্যাক অনুসরণ করে অনেকদূর চলে গিয়েছিল ক্রিসমাস। পথে একটা নদী পড়ে, নদী পার হয়ে ট্র্যাক খুঁজতে থাকে ও। কিন্তু সমস্যাটা হয় অন্যদিক থেকে। ট্রেইল ড্রাইভের মৌসুম হওয়ায় নিয়মিতভাবে গরুর পাল যাতায়াত করছে এদিক দিয়ে, আততায়ীর ট্র্যাকের উপর দিয়ে হেঁটে গেছে গরুর দল। অনুসরণের সেখানেই সমাপ্তি।
কার্ল বসম্যান সম্পর্কে অনেক ভালো কথা বললেন ফাদার জনসন। এইএলাকার পিছনে কার্লের স্বপ্ন আর শ্রমের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করলেন তিনি। কথা শেষ হলে প্রার্থনা শুরু করলেন, শেষ করলেন ‘এইমেন’ দিয়ে।
পাশাপাশি খোঁড়া তিনটে কবরে তিনটে কফিন নেমে গেল।
নিজের অফিসে বসেছিল ক্রিসমাস। রোল করে একটা সিগারেট ধরালো, পট থেকে কফি ঢেলে নিল এক মগ। কফির জন্য শুকিয়ে গেছে গলা।
ছায়া পড়ল দরজায়। মুখ তুলতেই ড্যানিকে ঢুকতে দেখল।
‘শেরিফ,’ অস্বস্তিভরা গলায় বলল ড্যানি। ‘একটা ব্যাপার হয়েছে।’
‘আবার কী ঘটল?’
‘শহরে এইমাত্র আটজন কঠিন চেহারার ঘোড়সওয়ার ঢুকেছে। আমার ধারণা, গানম্যান।’
‘আটজন গানম্যান? বলো কী? দেখতে হচ্ছে তো!’ বলে অফিস থেকে বেরোল ক্রিসমাস।
ঠিকই বলেছে ড্যানি। আটটা নতুন ঘোড়া সেলুনের সামনের হিচরেইলে বাঁধা, একটার ব্র্যান্ডও পরিচিত নয়। ঘোড়াগুলোর ওপরে চোখ বোলালো ক্রিসমাস, তারপর ব্যাটউইং দরজা ঠেলে সেলুনে ঢুকে গেল।
ঢুকেই একপাশে সরে গেল ও, দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। এই দিনের বেলাতেও আধো অন্ধকার হয়ে আছে জায়গাটা। অন্ধকারের সাথে সইয়ে নেয়ার জন্য কয়েক মুহূর্ত ও সময় দিল চোখজোড়াকে।
বারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুজন আগন্তুক, কথা বলছে নিজেদের মধ্যে। ক্রিসমাসকে ঢুকতে দেখে তাকাল এক মুহূর্তের জন্য, তারপর আবার গল্পে মন দিল।
চারজন আগন্তুক ইতিমধ্যেই বসে গেছে পোকারের টেবিলে, তাদের হাঁকডাকে ভারী হয়ে গেছে সেলুনের পরিবেশ। মদ খাচ্ছে সমানে, আর থেকে থেকে নোংরা খিস্তি করছে।
বাকি দুজনের গায়ের উপরে লেপ্টে আছে দুই বেশ্যা, বেলেল্লাপনা করছে। পরনে তাদের ছোট পোশাক, আগন্তুক দুজনের হাত অদৃশ্য হয়ে গেছে সেই পোশাকের ভিতরে।
শেষের দুজন আগন্তুককে দিয়ে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল ক্রিসমাস, পা বাড়াল সেদিকে।
আর তখনই ভেতরের অফিস থেকে বের হয়ে এল জোসেফ ব্রাউন।
‘মি. জোসেফ, আপনাদের মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু তাই বলে নিরাপত্তার জন্য গানম্যান ভাড়া করে আনবেন, এটা কেমন কথা?’ সেলুনমালিককে প্রশ্ন করল ক্রিসমাস। ‘আর খুনীর পরবর্তী লক্ষ্য যে আপনারা, সেটাই বা নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে?’
জোসেফ ব্রাউনের অফিসে বসে আছে ক্রিসমাস। সেলুনের পেছনদিকে বড় একটা ঘরে অফিসরুমটা। ঘরের মাঝখানে বিশাল একটা টেবিল, টেবিলের ওপাশে বসে আছে জোসেফ আর জ্যাক মরমন্ট। আর টেবিলের এপাশে বসে আছেন জাজ টাইলার। ঘরে আরও কিছু আসবাবপত্র আছে।
ও যা বলতে এসেছিল, সেটা নিয়েই কথা বলছিল সবাই। শহরে আগন্তুকদের ঢুকতে দেখে আর দেরি করেননি জাজ, সেলুনে চলে এসেছেন সরাসরি। আগন্তুকদের বিষয়ে প্রশ্ন তারও। তার প্রশ্নকে আরও জোরদার করল ক্রিসমাস।
‘আইন যখন আমাদের রক্ষা করছে না, তখন তো নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হয়, নাকি?’ চাঁছাছোলা গলায় বলল জোসেফ। ‘আর লক্ষ্যের কথা বলছেন? এই শহরটা গড়ে তুলতে কম কষ্ট তো করতে হয়নি আমাদের তিনজনকে। শত্রুও নেহাত কম নয়। তিনজনের একজন মারা গেছে, আরও ভালোভাবে বললে খুন করা হয়েছে। কার্ল খুন হওয়ার পরে লক্ষ্য হিসেবে যে কারো মনে আমাদের নামটাই আসবে।’
থমকে গেল ক্রিসমাস। বন্ধুর মৃত্যুতে খুবই মর্মাহত হয়েছে জোসেফ, কিন্তু তার থেকেও বেশি হয়েছে ক্ষুব্ধ। পাকা একদিন পার হওয়ার পরেও শেরিফ কোনো সন্ধান বের করতে পারেনি খুনীর, ক্ষোভটা এই কারণেই।
জ্যাক মরমন্টের দিকে তাকাল ও। বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও জ্যাকের সাথে বেশ ভালো খাতির ওর। সেই লোকও বিমর্ষ-বদনে বসে আছে, জোসেফের কথার কোনো প্রতিবাদ করছে না। চোখে ভয় দেখল বলেও মনে হলো ক্রিসমাসের, নিশ্চিত হতে পারল না পুরোপুরি।
‘আপনাদের নিরাপত্তা আইন দেবে। শহরে কি লোকের অভাব নাকি? গোটা দশেক লোককে ডেপুটাইজ করলেই হবে।’
‘শহরের লোকেরা দেবে নিরাপত্তা? ছোঃ!’ মুখ দিয়ে এমন একটা শব্দ করলো জোসেফ যে মেজাজ চড়ে গেল ক্রিসমাসের। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলাল।
‘মি. জোসেফ, আপনারা এরকমটা করতে পারেন না।’ জোরের সাথে বলল ও। ‘মি. বসম্যানের খুন এবং তার প্রায় পরপরই গানম্যান আনাটা শহরবাসীর ওপরে বাজে একটা প্রভাব পড়বে, কেন বুঝতে পারছেন না? আইন তাদেরকে সুরক্ষা দিতে পারছে না, এই প্রশ্ন যদি তাদের মনে উদয় হয়, তবে তাদের দোষ দেয়া যাবে কি?’
‘শহরবাসী কী মনে করল, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’ বলে নিজের চেয়ারে হেলান দিল জোসেফ। ‘আর . . .।’
‘আমার মনে হয়, শেরিফ ঠিকই বলছে।’ প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন জাজ। ‘এরপর থেকে হয়তো আইনের সাহায্য না নিয়ে গানম্যান ভাড়া করে আনবে সবাই।’
‘করলে করবে। এরকম অকর্মা শেরিফ থাকলে সেটাই করা উচিত,’ বাঁকা সুরে বলল জোসেফ। তার কথা শুনে এত অবাক হলো ক্রিসমাস যে কথাই বলতে পারলো না কিছুক্ষণ। কিন্তু ওর হয়ে প্রতিবাদ করলেন জাজ।
‘ওর সাথে আপনি এভাবে কথা বলতে পারেন না, মি. জোসেফ। এতদিন ধরে এই শহরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করে আসছে ও, অপরাধীকে ধরতে সামান্য দেরি হচ্ছে বলে এভাবে আপনি বলতে পারেন না। আমি নিশ্চিত, মি. বসম্যানের খুনীকে ও ঠিকই পাকড়াও করতে পারবে।’
‘আগে করুক, তারপরে না হয় এটা নিয়ে কথা বলা যাবে।’ জাজ আবার কিছু বলতে যাচ্ছেন দেখে বলল, ‘এ বিষয়ে আর কথা বাড়াব না। আর জ্যাকের সাথে জরুরী কিছু কথা আছে আমার, আপনারা এখন আসুন।’
চুপচাপ সেলুন থেকে বেরিয়ে এল শেরিফ, মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে পুরোপুরি। জাজ টাইলার নীরবে অনুসরণ করছেন ওকে।
অফিসে ফিরে এল ক্রিসমাস, মাথা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করছে। এই সময়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখাটা সবচেয়ে বেশি দরকার। ড্যানি থাকলে ভালো হতো, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা যেত ওর সাথে। কিন্তু ছোকরা কোথায় যেন গেছে। সুজানার সাথে দেখা করতে বোধহয়। জাজ টাইলারের মেয়ের সাথে প্রেম ড্যানির, বিয়েও ঠিক হয়ে আছে।
জোসেফের ব্যবহারে প্রচণ্ড অবাক হয়েছে ও। পরিচয়টা নেহাত কম দিনের নয়, সেলুন মালিককে ঠাণ্ডা মাথার বিবেচক মানুষ বলেই মনে হয়েছিল ওর। সেই লোক আজ এরকম ক্ষেপে গেল কেন? বন্ধু মারা যাওয়ার কারণে?
কিন্তু ব্যাপারটা এমন তো নয় যে, এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে, এখনও কেসের কোন কিনারা করতে পারেনি ক্রিসমাস। মাঝে মাত্র একটা দিন পার হয়েছে। আরও একটা ব্যাপার। মি. বসম্যান মারা গেছেন পরশুদিন রাতে, আর আজই আটজন গানম্যান চলে এল শহরে। খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেল না? তাদেরকে কি আগে থেকেই খবর দেয়া ছিল? জোসেফ কি কিছু লুকাতে চাইছে?
অনেকগুলো প্রশ্ন উদয় হয়েছে, কিন্তু জবাব মিলছে না। ভাবনার এই পর্যায়ে ভেতরে ঢুকলেন ফাদার জনসন।
ফাদার জনসনের আসল নাম মার্কাস জনসন। পাদ্রী হলেও তার বয়স খুব বেশি না, বড় জোর পঁয়ত্রিশ। চেহারাটা খারাপ না, তবে অতীতের একটা পোড়া দাগ তার মুখকে বিকৃত করে দিয়েছে, বেঁকে গেছে এক পাশ। শরীরে হয়তো আরও পোড়া দাগ আছে, তবে সবসময় লম্বা একটা আলখাল্লা পরে থাকায় দেখা যায় না তা। ভরাট, গমগমে কণ্ঠস্বর তার।
‘আসুন ফাদার, বসুন।’ পাদ্রীকে অভিবাদন জানিয়ে বসতে বলল ক্রিসমাস, কফি ঢাললো আরেকটা মগে। ‘আপনি আমার অফিসে যে? কোন সমস্যা?’
‘সমস্যা তো বটেই।’
‘কী সমস্যা?’
‘মি. বসম্যানের মতো একজন মানুষ সপরিবারে বীভৎসভাবে খুন হলেন, এখন আবার শহরে ঢুকেছে গানম্যানের দল। শুনলাম, তাদেরকে নাকি ডেকেছেন মি. জোসেফ। এলাকায় এসব কী শুরু হলো, শেরিফ? শান্তিতে কি একটু ঈশ্বরের নামও করা যাবে না নাকি?’
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ক্রিসমাস। খবর ছড়ানো শুরু করেছে। এসে বসতে পর্যন্ত পারেনি, অথচ খবর ছড়িয়ে গেছে, গানম্যান ডেকে এনেছে জোসেফ। এটা যদি ছড়িয়ে থাকে, তবে ওর সাথে জোসেফের তর্কাতর্কির কথাও ছড়িয়েছে। না ছড়ানোটাই অস্বাভাবিক।
‘ফাদার,’ শান্ত গলায় বলল ও। ‘আপনার উদ্বেগ অমূলক নয় একেবারেই। রেডউডে এরকম নৃশংস হত্যাকাণ্ড আগে কখনো ঘটেনি। সমস্যা হচ্ছে, ঘটেনি বলেই সময় লাগছে আমাদের, খুনীকে এখনও ধরতে পারিনি।’
গলা দিয়ে অসন্তোষের একটা শব্দ করলেন ফাদার জনসন। বললেন, ‘যাই হোক, তাড়াতাড়ি হাত চালান। এত সব বাজে ঘটনা একসাথে ঘটছে, সহ্য করা যাচ্ছে না। ঈশ্বর আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন।’ বলে বুকের উপরে ক্রস আঁকলেন, তারপর বেরিয়ে গেলেন অফিস থেকে।
‘আমরা এখন কী করবো, জোসেফ?’ ওরা চলে গেলে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করল জ্যাক। গলা কাঁপছে তার।
বিরক্তির সাথে বন্ধুকে দেখলো জোসেফ। ভীতুর ডিম একটা, মনে মনে ভাবল ও। গানম্যান আনার কোনো দরকারই ছিল না। কিন্তু কার্লের মৃত্যুর পরে এমন ভয় পেয়েছে জ্যাক, আনতে হয়েছে বাধ্য হয়েই। তবে গানম্যানেরা কতটুকু নিরাপত্তা দিতে পারবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে ওর।
‘জোসেফ, পিটার ট্রিমেন ফিরে আসেনি তো কোনোভাবে?’ আবার জিজ্ঞেস করল জ্যাক।
‘ফালতু বকবক কোরো না তো,’ এবার আর বিরক্তি চাপতে পারল না জোসেফ। ‘পিটার ফিরে আসবে কীভাবে? মরা মানুষ ফিরে আসে কখনো?’
বিড়বিড় করে কী যেন বলল জ্যাক, বুঝতে পারলো না ও। জ্যাক সবসময়ই এরকম, একটুতেই ভয়ে মরে যায়। আরে, এত বছর আগে কী করেছিস, তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ আছে? পশ্চিমে এক বছর আগের ঘটনা কেউ মনে রাখে না, আর ত্রিশ বছর!
সেই ঘটনাটা আজও স্পষ্টভাবে মনে আছে জোসেফের। বুদ্ধিটা প্রথমে ওরই মাথায় আসে, তারপরে আলোচনা করে কার্ল আর জ্যাকের সাথে। শুরুতে রাজি ছিল না কেউই, কিন্তু জোসেফ তাদেরকে বোঝায়, এই কাজটা করার পরে আর কোনো চিন্তা থাকবে না। বাকি জীবনটা রাজার হালে কাটাতে পারবে তারা।
কার্লকে রাজি করাতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু জ্যাককে রাজি করাতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যায় জোসেফের। পরিকল্পনা থেকে ওকে বাদ দেয়াও সম্ভব ছিল না, কারণ ওরা কী করতে যাচ্ছে, ততক্ষণে জেনে গেছে জ্যাক।
শহরের বাইরে নিয়ে পিটার ট্রিমেনকে নিজে হাতে খুন করে জোসেফ। পেছন থেকে গুলি করে তার মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দেয়।
বর্তমানে ফিরে এলো জোসেফ। ‘জ্যাক, গানম্যানদের নিয়ে বাড়ি যাও।’ বলল সে, বন্ধুর কথা শুনে উঠে বেরিয়ে গেল জ্যাক। পেছন থেকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল সেলুনমালিক।
শালা কাপুরুষ কোথাকার!
সন্ধ্যা নেমেছে কিছুক্ষণ হলো। নিজের ঘরে বসে শটগানটা তেল নিয়ে পরিষ্কার করছিল খুনী।
জ্যাক আর জোসেফ হারামজাদা এমনই ভয় পেয়েছে যে আটজন গানম্যান ডেকে আনতে হলো! হা হা হা। ওদের কি ধারণা? অতীতের পাপ থেকে গানম্যানেরা ওদের বাঁচাতে পারবে?
দুই হাতে অস্ত্রটা তুলল সে, গুলি করার ভঙ্গীতে তাক করল। খুব শীঘ্রই অস্ত্রটা কাজে লাগবে আবার।
তবে তার আগে পরিকল্পনায় কিছু রদবদল আনতে হবে।
(পড়ুন দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব)