ক্ষয়ে যাওয়া জীর্ণ এই বাসাতেই আমার বসবাস। বাপ-দাদার এই বাড়িটি বলতে গেলে আমারও; যেহেতু আমি এখানেই থাকি, অথবা বলা যায় থাকতে ভালোবাসি। এই বাড়ির দেয়ালগুলোর পলেস্তারা খসে যাওয়ায় ভেতরের ইটগুলোর হাড়-পাঁজরা বেরিয়ে গেছে। বাড়ির যে বয়স হয়েছে, এটা তার অকাট্য প্রমাণ—তবে ঠিক কত বছরের যে পুরনো সেইটে বলা কঠিন। এসব নিয়ে কখনও মাথাও ঘামাইনি অবশ্য।
চার কামরার এই বাড়িতে আমি কোনোমতে একটি ঘরের তেল-চিটচিটে বিছানায় পড়ে থাকি। পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে আমার তেমন আফসোস নেই। অবশ্য আফসোস আমার কোনোকালেই ছিল না। এই বাড়ির আরেকটা দিক হলো—এর কোনো ঘরেই আলো ঢোকে না।
আসলে আলো ঢুকতে দেওয়া হয় না। একটু একটু করে বেড়ে ওঠার সময় আমি বুঝতে পারি, আলো আমার বেজায় অপছন্দ। ভালো লাগে না কিছুতেই। তাই গেল বেশ কয়েক বছর, সংখ্যার হিসাবে বলতে পারব না, ঘরের কোনো জানালা-দরজা খোলা হয়নি। যখন প্রয়োজন হয়, কম পাওয়ারের লাইটের আলোতেই আমরা কাজ-কর্ম সারি। আসলে কথাটি ভুল বললাম, আমরা নই- শুধু আমিই কাজ করি।
সেদিন অফিস থেকে ফেরার সময় হঠাৎ একটা লোক আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আমার এমনিতে ভয়-ডর নেই, কিন্তু লোকটা যেভাবে আচমকা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল তাতে আমি রীতিমতো চমকে গিয়েছি এবং একই সঙ্গে খুব বিরক্তও হয়েছি। একে তো লোকটাকে চিনি না, (এমনিতে পাড়ার কারো সাথে আমার উঠা-বসা নেই) তারওপর কথা বলার সময় তার মুখ থেকে পানের বিশ্রী গন্ধ আসছে।
—তোমার মা-বাবা কোথায়? অনেকদিন দেখি না।
—কলকাতায় গিয়েছে। চাচার বাসায়। আর আসবে না ।
—তুমি বাসায় একা থাক?
—না, আরো অনেকেই থাকে। যেমন- ইঁদুর, বিড়াল, বেজী, শুঁয়োপোকা, টিকটিকি এবং আরো অনেকে।
আরো কিছু কথা বলতে চেয়েছিল সে, কিন্তু সেসব ফালতু প্রশ্ন এড়িয়ে আমি বাসার দিকে হাঁটা দেই। আমার স্বপ্নের বাসার দিকে। যেখানে রোদ-আলো খেলা করে না, থাকে শুধু একরাশ অন্ধকার। আমাকে জড়িয়ে রাখে মমতায়। ইঁদুর, বিড়াল, বেজীসহ অন্যসব পোকামাকড় আমাকে গার্ড অভ অনার দিয়ে এগিয়ে নেয়। আমি সম্মানিত বোধ করি! ঘুটঘুটে অন্ধকার-আচ্ছন্ন ঘরের মাঝে প্রবেশ করে আমি যেন পায়ের নিচে লাল গালিচার স্পর্শ পাই। অন্ধকারের মধ্যে বিলীন হয়ে বসে থাকি।
কয়েকদিন ধরে বাবার এক প্যাঁচাল—বিয়ে করো, আমি আর বেশিদিন নাই, তারপর কী হবে আমার- এসব আবোল-তাবোল আর কি। সারাক্ষণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরক্ত করে মারে।
আমি তাকে বোঝাতাম, তুমি মরে গেলেও আমার কাছে থাকবে। কেউ আমার কাছ থেকে তোমাকে সরাতে পারবে না। বাবা আমার কথাগুলো বিশ্বাস করত কিনা জানি না, কিন্তু আমি যখন তাকে কথাগুলো বলতাম সে আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকত। আমি বুঝতে পারতাম সে চোখে থাকত ঘৃণা মিশ্রিত ভয়। তাই দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠত।
মানুষ সর্বদা অন্য মানুষের ভালোবাসা জয় করতে চায় কিন্তু আমি চাইতাম ঘৃণা। ঈশ্বরের কাছে বাবার মৃত্যু কামনা করতাম, সেই সাথে অপেক্ষা করতাম কবে আমি তার বন্ধন মুক্ত হবো। আমি তার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করি। অপেক্ষা . . . অধীর আগ্রহে অপেক্ষা, শুধুই অপেক্ষা!
নিয়মিত অফিসে যাই। ঝড়-বৃষ্টি কিংবা অন্য কোনোকিছু আমার অফিস-যাওয়া বন্ধ করতে পারে না। আমার পলেস্তারা খসে যাওয়া বাড়ি আর তেল-চিটচিটে বিছানা থাকলে কী হবে, বাহ্যিকভাবে আমাকে দেখলে তা বোঝার উপায় নেই। প্রতি সকালে মাথার চুলে বেশি করে তেল দিয়ে ফিটফাট হয়ে অফিসে যাই। অফিসে কারো সাথেই খুব একটা কথা হয় না আমার। আপন মনে কাজ করি।
তবে অফিসের বাইরে কথা হয়। অনেক কথা বলি। আমার জমানো কথা উগরে দেই তার দেহের উপর। তার দেহের প্রতি ধাপে ধাপে সাহিত্য রসের স্বাদ পাই। আমার বদ্ধ ঘরে তেল-চিটচিটের বিছানায় শুয়ে শীৎকারের আওয়াজে সুরের মূর্ছনা খুঁজি। আমার তেল-চিটচিটে বিছানা রঙিন হয়ে উঠে। ভরসার স্থান হয়ে দাঁড়ায় তার কাছে। মায়ের শত চিৎকার, পাপবোধের আস্ফালন আমাদের কানের পাশ কাটিয়ে যায়। আমরা পড়ে থাকি শুঁয়োপোকার মতো আমার এই তেল-চিটচিটে বিছানায়।
মেয়েটার সাথে আমি সম্পর্কে জড়াই বাবার মৃত্যুর পর। ওর মৃত্যুতে আমার মধ্যে আনন্দ খেলে যায়—একটা সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারি। সেই আনন্দের তুলনা হয় না . . .।
বাবার মৃত্যুর পর মা আরো নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। খাওয়াদাওয়া একদমই করে না, নিষ্পলক চেয়ে থাকে আমার দিকে। বাবার চোখে যা দেখেছিলাম- মার বেলায় তার ব্যত্যয় ঘটে না। এইবারও আমার বিজয় হয়। একান্তভাবে নিজের কাছে আপন করে রাখার আনন্দ। মা দিন দিন ঝিমাতে থাকে আর আমি অপেক্ষায় থাকি। কখন শেষ হবে তার আর কখন আমার শুরু হবে?
এখন আমার অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে বদ্ধ ঘরে তেল-চিটচিটে বিছানায় শুয়ে শীৎকারের আওয়াজে সুরের মূর্ছনা খুঁজার। দু-একদিন যদি না আসে তখন মনে হয় বাবা-মার মতো নিজের কাছে আপন করে রেখে দেই তাকে।
এরমধ্যে কী হলো জানেন? অনেকদিন তার দেখা নাই। ক্যালেন্ডারের পাতায় দিন গত হতে থাকে। যে আমি দিনক্ষণের হিসাব রাখতাম না, সে আমি দিনের হিসাব রাখতে শুরু করি। সেই সাথে আমার ভেতরের মানুষটা অসুর হয়ে উঠতে থাকে। আমি আর আমি থাকি না। আমি পরাজিত হই।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি—হায়! ঈশ্বর আমার কেবলই ভুল হয়ে যায়, আমাকে তুমি ক্ষমা করো। ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা করে। সবকিছুর যেমন শুরু আছে তেমন শেষও আছে। দুদিন আগে অথবা পরে।
অবশেষে আমি তার দেখা পাই। সেদিন খুব সেজেছিল সে। আগেও সাজত, তবে সেদিনের মাত্রাটা একটু বেশি ছিল। মাথা ঝিমানো পারফিউমের গন্ধে ভরে উঠেছিল ঘরটা। মনে হচ্ছিল, আমি জ্ঞান হারাচ্ছি। কিন্তু সংজ্ঞা লোপ পাবার আগেই এক ঝটকায় কাছে টেনে এনে তার গা থেকে গন্ধগুলো শুষে নিলাম। মনে হলো আমার তেল-চিটচিটে বিছানায় আগুন লেগেছে। আমি সেই আগুনে তাকে পুড়িয়ে মারলাম! বাইরের মানুষ সেই আগুনের তাপ অনুভব করতে পারল না।
চিরতরে আমার কাছে রেখে দিলাম ওকে। এখন আর হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই।
এখনও আমি প্রতি দিন অফিস থেকে বাসায় ফিরি। বাসার ইঁদুর বিড়াল আর বেজীরা আমাকে সম্মান জানায়। আমি অন্ধকার ঘরের ভেতর হারিয়ে যাই। অতঃপর ভালোবাসা ও আনন্দ, বেদনা আর কামনায় সিক্ত হয়ে রোজকার মতো বেরিয়ে আসি।
তবে এখন আর আমার ঘরটায় তেল-চিটচিটে সেই বিছানাটা নেই। তার পরিবর্তে এসেছে নতুন বিছানা।
এখন শুধু তেল-চিটচিটে হওয়ার অপেক্ষায়!
ক্ষয়ে যাওয়া জীর্ণ এই বাসাতেই আমার বসবাস। বাপ-দাদার এই বাড়িটি বলতে গেলে আমারও; যেহেতু আমি এখানেই থাকি, অথবা বলা যায় থাকতে ভালোবাসি। এই বাড়ির দেয়ালগুলোর পলেস্তারা খসে যাওয়ায় ভেতরের ইটগুলোর হাড়-পাঁজরা বেরিয়ে গেছে। বাড়ির যে বয়স হয়েছে, এটা তার অকাট্য প্রমাণ—তবে ঠিক কত বছরের যে পুরনো সেইটে বলা কঠিন। এসব নিয়ে কখনও মাথাও ঘামাইনি অবশ্য।
চার কামরার এই বাড়িতে আমি কোনোমতে একটি ঘরের তেল-চিটচিটে বিছানায় পড়ে থাকি। পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে আমার তেমন আফসোস নেই। অবশ্য আফসোস আমার কোনোকালেই ছিল না। এই বাড়ির আরেকটা দিক হলো—এর কোনো ঘরেই আলো ঢোকে না।
আসলে আলো ঢুকতে দেওয়া হয় না। একটু একটু করে বেড়ে ওঠার সময় আমি বুঝতে পারি, আলো আমার বেজায় অপছন্দ। ভালো লাগে না কিছুতেই। তাই গেল বেশ কয়েক বছর, সংখ্যার হিসাবে বলতে পারব না, ঘরের কোনো জানালা-দরজা খোলা হয়নি। যখন প্রয়োজন হয়, কম পাওয়ারের লাইটের আলোতেই আমরা কাজ-কর্ম সারি। আসলে কথাটি ভুল বললাম, আমরা নই- শুধু আমিই কাজ করি।
সেদিন অফিস থেকে ফেরার সময় হঠাৎ একটা লোক আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আমার এমনিতে ভয়-ডর নেই, কিন্তু লোকটা যেভাবে আচমকা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল তাতে আমি রীতিমতো চমকে গিয়েছি এবং একই সঙ্গে খুব বিরক্তও হয়েছি। একে তো লোকটাকে চিনি না, (এমনিতে পাড়ার কারো সাথে আমার উঠা-বসা নেই) তারওপর কথা বলার সময় তার মুখ থেকে পানের বিশ্রী গন্ধ আসছে।
—তোমার মা-বাবা কোথায়? অনেকদিন দেখি না।
—কলকাতায় গিয়েছে। চাচার বাসায়। আর আসবে না ।
—তুমি বাসায় একা থাক?
—না, আরো অনেকেই থাকে। যেমন- ইঁদুর, বিড়াল, বেজী, শুঁয়োপোকা, টিকটিকি এবং আরো অনেকে।
আরো কিছু কথা বলতে চেয়েছিল সে, কিন্তু সেসব ফালতু প্রশ্ন এড়িয়ে আমি বাসার দিকে হাঁটা দেই। আমার স্বপ্নের বাসার দিকে। যেখানে রোদ-আলো খেলা করে না, থাকে শুধু একরাশ অন্ধকার। আমাকে জড়িয়ে রাখে মমতায়। ইঁদুর, বিড়াল, বেজীসহ অন্যসব পোকামাকড় আমাকে গার্ড অভ অনার দিয়ে এগিয়ে নেয়। আমি সম্মানিত বোধ করি! ঘুটঘুটে অন্ধকার-আচ্ছন্ন ঘরের মাঝে প্রবেশ করে আমি যেন পায়ের নিচে লাল গালিচার স্পর্শ পাই। অন্ধকারের মধ্যে বিলীন হয়ে বসে থাকি।
কয়েকদিন ধরে বাবার এক প্যাঁচাল—বিয়ে করো, আমি আর বেশিদিন নাই, তারপর কী হবে আমার- এসব আবোল-তাবোল আর কি। সারাক্ষণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরক্ত করে মারে।
আমি তাকে বোঝাতাম, তুমি মরে গেলেও আমার কাছে থাকবে। কেউ আমার কাছ থেকে তোমাকে সরাতে পারবে না। বাবা আমার কথাগুলো বিশ্বাস করত কিনা জানি না, কিন্তু আমি যখন তাকে কথাগুলো বলতাম সে আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকত। আমি বুঝতে পারতাম সে চোখে থাকত ঘৃণা মিশ্রিত ভয়। তাই দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠত।
মানুষ সর্বদা অন্য মানুষের ভালোবাসা জয় করতে চায় কিন্তু আমি চাইতাম ঘৃণা। ঈশ্বরের কাছে বাবার মৃত্যু কামনা করতাম, সেই সাথে অপেক্ষা করতাম কবে আমি তার বন্ধন মুক্ত হবো। আমি তার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করি। অপেক্ষা . . . অধীর আগ্রহে অপেক্ষা, শুধুই অপেক্ষা!
নিয়মিত অফিসে যাই। ঝড়-বৃষ্টি কিংবা অন্য কোনোকিছু আমার অফিস-যাওয়া বন্ধ করতে পারে না। আমার পলেস্তারা খসে যাওয়া বাড়ি আর তেল-চিটচিটে বিছানা থাকলে কী হবে, বাহ্যিকভাবে আমাকে দেখলে তা বোঝার উপায় নেই। প্রতি সকালে মাথার চুলে বেশি করে তেল দিয়ে ফিটফাট হয়ে অফিসে যাই। অফিসে কারো সাথেই খুব একটা কথা হয় না আমার। আপন মনে কাজ করি।
তবে অফিসের বাইরে কথা হয়। অনেক কথা বলি। আমার জমানো কথা উগরে দেই তার দেহের উপর। তার দেহের প্রতি ধাপে ধাপে সাহিত্য রসের স্বাদ পাই। আমার বদ্ধ ঘরে তেল-চিটচিটের বিছানায় শুয়ে শীৎকারের আওয়াজে সুরের মূর্ছনা খুঁজি। আমার তেল-চিটচিটে বিছানা রঙিন হয়ে উঠে। ভরসার স্থান হয়ে দাঁড়ায় তার কাছে। মায়ের শত চিৎকার, পাপবোধের আস্ফালন আমাদের কানের পাশ কাটিয়ে যায়। আমরা পড়ে থাকি শুঁয়োপোকার মতো আমার এই তেল-চিটচিটে বিছানায়।
মেয়েটার সাথে আমি সম্পর্কে জড়াই বাবার মৃত্যুর পর। ওর মৃত্যুতে আমার মধ্যে আনন্দ খেলে যায়—একটা সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারি। সেই আনন্দের তুলনা হয় না . . .।
বাবার মৃত্যুর পর মা আরো নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। খাওয়াদাওয়া একদমই করে না, নিষ্পলক চেয়ে থাকে আমার দিকে। বাবার চোখে যা দেখেছিলাম- মার বেলায় তার ব্যত্যয় ঘটে না। এইবারও আমার বিজয় হয়। একান্তভাবে নিজের কাছে আপন করে রাখার আনন্দ। মা দিন দিন ঝিমাতে থাকে আর আমি অপেক্ষায় থাকি। কখন শেষ হবে তার আর কখন আমার শুরু হবে?
এখন আমার অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে বদ্ধ ঘরে তেল-চিটচিটে বিছানায় শুয়ে শীৎকারের আওয়াজে সুরের মূর্ছনা খুঁজার। দু-একদিন যদি না আসে তখন মনে হয় বাবা-মার মতো নিজের কাছে আপন করে রেখে দেই তাকে।
এরমধ্যে কী হলো জানেন? অনেকদিন তার দেখা নাই। ক্যালেন্ডারের পাতায় দিন গত হতে থাকে। যে আমি দিনক্ষণের হিসাব রাখতাম না, সে আমি দিনের হিসাব রাখতে শুরু করি। সেই সাথে আমার ভেতরের মানুষটা অসুর হয়ে উঠতে থাকে। আমি আর আমি থাকি না। আমি পরাজিত হই।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি—হায়! ঈশ্বর আমার কেবলই ভুল হয়ে যায়, আমাকে তুমি ক্ষমা করো। ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা করে। সবকিছুর যেমন শুরু আছে তেমন শেষও আছে। দুদিন আগে অথবা পরে।
অবশেষে আমি তার দেখা পাই। সেদিন খুব সেজেছিল সে। আগেও সাজত, তবে সেদিনের মাত্রাটা একটু বেশি ছিল। মাথা ঝিমানো পারফিউমের গন্ধে ভরে উঠেছিল ঘরটা। মনে হচ্ছিল, আমি জ্ঞান হারাচ্ছি। কিন্তু সংজ্ঞা লোপ পাবার আগেই এক ঝটকায় কাছে টেনে এনে তার গা থেকে গন্ধগুলো শুষে নিলাম। মনে হলো আমার তেল-চিটচিটে বিছানায় আগুন লেগেছে। আমি সেই আগুনে তাকে পুড়িয়ে মারলাম! বাইরের মানুষ সেই আগুনের তাপ অনুভব করতে পারল না।
চিরতরে আমার কাছে রেখে দিলাম ওকে। এখন আর হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই।
এখনও আমি প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরি। বাসার ইঁদুর বিড়াল আর বেজীরা আমাকে সম্মান জানায়। আমি অন্ধকার ঘরের ভেতর হারিয়ে যাই। অতঃপর ভালোবাসা ও আনন্দ, বেদনা আর কামনায় সিক্ত হয়ে রোজকার মতো বেরিয়ে আসি।
তবে এখন আর আমার ঘরটায় তেল-চিটচিটে সেই বিছানাটা নেই। তার পরিবর্তে এসেছে নতুন বিছানা।
এখন শুধু তেল-চিটচিটে হওয়ার অপেক্ষায়!
(সমাপ্ত)