তেইশ
বর্তমান
পরের ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে গেল। আসলামের জেল হয়ে গেল। রিয়ার মৃত্যুর পর রহমান সাহেবও বেশিদিন রইলেন না। এক সপ্তাহ পরে আরেকবার স্ট্রোক হলো তার। মারা গেলেন তিনিও।
আবরার সাহেবের সন্দেহ হয়েছিল কিনা জানি না, কিন্তু তিনি আর বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলেন না। করেই বা লাভ কি, রহমান পরিবারের কেউ তো আর বেঁচে নেই।
রহমান সাহেব মারা যাবার প্রায় এক মাস পর, মিস সানজিদা আমাকে ফোন করে। অফিসে যেতে বলল। গেলাম।
রিয়া আর রোমেল কেউ বেঁচে না থাকায়, তিন নম্বর উইলটা বের করে আনলেন আবরার সাহেব। সব সম্পত্তি বিক্রি করে, রওশন আরা মেমোরিয়াল হার্ট ফাউন্ডেশন করার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন তিনি। সেই সাথে এ-ও জানালেন, বয়স হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছু দায়িত্ব অন্যদের হাতে তুলে দিয়ে নির্ভার হতে চান তিনি। তাই, রওশন আরা মেমোরিয়াল হার্ট ফাউন্ডেশন চালাবার দায়িত্ব তিনি ন্যস্ত করছেন মিস সানজিদা চৌধুরী তামান্নার হাতে।
এই উইলেও—আগের উইলটার মতো—রহমান সাহেবের অ্যাকাউন্টের ক্যাশ টাকা ভাগ করে দেয়ার কথা বলা আছে। তবে যেহেতু রিয়া নেই, তাই রিয়ার ভাগের অংশটাও ভাগ করে দেয়া হবে। আমরা সবাই আগের পরিমাণের প্রায় দেড় গুণ পরিমাণ ক্যাশ টাকা পেলাম।
আমার ভাগের টাকা দিয়ে প্রথমে চাচীর অপারেশন করিয়ে আনলাম। চাচীর দেহ প্রতিস্থাপিত কিডনিটাকে মেনে নেয় কিনা, সেটা ভেবে বেশ টেনশনে ছিলাম। কিন্তু না, অসুবিধা হলো না।
হাতে বাড়তি বেশ কিছু টাকা রয়ে গেল।
দেশে ফিরে আবার চলে গেলাম আমার মেডিকেলে। এফসিপিএসের ট্রেনিঙে ঢুকে পড়লাম।
চব্বিশ
ভবিষ্যৎ—পাঁচ বছর পর
কোর্স কমপ্লিট করার সার্টিফিকেট আর সিভি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি দরজার সামনে। অনেক কষ্ট করে আজকে এ পর্যায়ে আসতে হয়েছে। তাই হাসি সামলাতে পারছি না। সামনের দরজায় লেখা -
মিসেস সানজিদা সরোয়ার
অ্যাসোসিয়েট পার্টনার
অ্যাটর্নি অ্যাট ল
চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইন ল ফার্ম
মিস সানজিদা, উপ্স মিস না মিসেস। আর এখন নিশ্চয় আমি ওকে তামান্না বলে ডাকতে পারি। তামান্না আর আমার বিয়ে হয়েছে দুই বছর আগে। চাচীকে নিয়ে ইন্ডিয়া থেকে ঘুরে আসার পর, আমি একদিন তামান্নাকে বাইরে ঘুরতে যাবার প্রস্তাব দেই। ‘এত তাড়াতাড়ি! উচিত হবে না’—বলতে বলতে রাজি হয়ে যায় সে। সেই থেকে শুরু আমাদের প্রকাশ্যে ঘোরা-ফেরা। এরপর, দুই বছর আগে বিয়ে করে ফেলি। চাচী খুব খুশি হয়েছিলেন সেদিন। হাসি যেন মুখ থেকে সরছিল না।
আলতো করে নক করলাম দরজায়। ‘মে আই কাম ইন, ম্যাডাম?’ হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করলাম আমি।
‘খুব জরুরী কাজ না থাকলে থাক।’ তামান্না গলায় ছদ্ম রাগ এনে উত্তর দিল। কিন্তু চোখ থেকে হাসির আভা সরাতে পারল না।
‘কিন্তু ভিতরে যে আমার বউ আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সে আবার খুব রাগী আর ঝগড়াটে। দয়া করুন ম্যাডাম। এই অভাগার যন্ত্রণা আর বাড়াবেন না।’ কপট অনুনয়ের সুরে বললাম।
‘তাই বুঝি?’ তামান্নাও কপট রাগের সুরে বলল, ‘তা এমন মেয়েকে বিয়ে করতে গেলেন কেন?’
‘কী করব ম্যাডাম। বয়সের দোষ।’ বলতে বলতে হেসে ফেললাম।
তামান্নাও হেসে ফেলল।
ভিতরে ঢুকে টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারটায় বসে পড়লাম। সার্টিফিকেট আর সিভিটা বাড়িয়ে ধরলাম ওর দিকে।
হাত বাড়িয়ে কাগজগুলো নিল সে। একবার পরখ করে দেখল। এরপর ড্রয়ার খুলে একটা খাম বের করে আনল। খামের উপর বড় বড় হরফে লেখা:
রওশন আরা মেমোরিয়াল হার্ট ফাউন্ডেশন
আমার দিকে খামটা বাড়িয়ে দিল সে। মুখে বলল, ‘ওয়েলকাম, ডিপার্টেমন্টাল হেড, স্যার।’
হাত বাড়িয়ে রওশন আরা মেমোরিয়াল হার্ট ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আমার নিয়োগ পত্রটা নিলাম আমি।
তামান্নার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললাম, ‘অবশেষে!’
হাসি ফিরিয়ে দিল সে-ও। ‘অবশেষে।’