মাইশা রাগী রাগী চোখে ক্যাফেটেরিয়ার এক কোণে তাকিয়ে আছে। ছোটছোট নিশ্বাসের সাথে আগুনের হলকা বের হয়ে আসতে পারে যে কোন সময়। সামনে রাখা চা সিংগারা ঠাণ্ডা হচ্ছে কোন খেয়াল নেই তার।
"কিরে, কী হলো তোর?" অনেকক্ষণ অন্যমনস্ক দেখে মাইশাকে ঠেলা দিলো দোলা, "চা ঠাণ্ডা করছিস ক্যান?"
"দেখ খবিশ মেয়েটা কীরকম ঢলাঢলি করতেসে আমার রাতুলের সাথে," চাপা গলায় হিসহিস করে বললো মেয়েটা, চোখ সরায়নি।
দোলার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মেয়েটার মাথাটা যাচ্ছে দিন দিন। "মাইশা, আবার কী শুরু করলি? ভুলে গেছিস তুইই কিন্তু ছেলেটার সাথে ব্রেকআপ করেছিলি। ছেলেটাকে কম ভুগাসনি তুই।"
মাইশা চুপচাপ চায়ের কাপে চুমুক দিতে লাগলো। হ্যাঁ, রাতুলের সাথে ব্রেকআপ সেই করেছিলো। তার বড্ড একঘেয়ে লাগছিলো। ছেলেটা বড় বেশি ভালো। কোনো খুঁত নেই। কোন রাগ নেই। কোন ঝগড়া পর্যন্ত করা যেতো না তার সাথে। মাইশাকে পাগলের মত ভালোবেসে গেছে ছেলেটা। বিনিময়ে মাইশা কেবল পেইনই দিয়েছে। এখন তাকে হারিয়ে মাইশা টের পায় কী হারিয়েছে সে। ক্যাম্পাসে মুখোমখি হলে মাইশার দিকে বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে ছেলেটা। মাইশার সহ্য হয় না।
সেদিন রাতে ফেসবুকে ঢুকেই মাইশা ফেইক আইডি দিয়ে রাতুলের ওয়ালে গেলো। ছেলে আইডি, রাতুলের লিস্টে আছে সে। ওয়ালে সকালে দেখা ঐ মেয়েটার সাথে সেলফি একটা। মাইশার মনে হলো রাগে মাথায় বিস্ফোরণ হলো। যদিও ক্যাপশন পড়লে মনে হবে যাস্ট দুইটা ফ্রেন্ড মজা করছে এখানে তবুও মাইশার সব রাগ গিয়ে পড়লো ট্যাগ করা মেয়েটার ওপর।
"দাঁড়াও লুতুপুতু বের করছি তোমার," দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললো সে।
পরদিন রাতুল ব্রেক টাইমে হন্তদন্ত হয়ে মাইশাকে খুঁজে বের করলো। মেয়েটাকে টেনে বান্ধবীদের থেকে দূরে টেনে নিয়ে শক্ত মুখে সে বললো, "হোয়াট দা হেল ইজ ইউর প্রবলেম?"
মাইশা কিছু বলছে না। অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। রাতুল অধৈর্য হয়ে চাপা গর্জে উঠলো " জেসিকা ইজ জাস্ট মাই ফ্রেন্ড ফর গডস সেক! কী বলেছো তুমি ওকে কাল রাতে? অ্যান্ড হোয়াই?"
মাইশাও পালটা গর্জালো, "ঐ মেয়ের সাথে কিসের এত লুতুপুতু তোমার? হ্যাঁ?"
"আমি যার সাথে যা খুশি করি তোমার কী? হ্যালো, উই ওয়ার ডান। ওকে? ব্রেক আপ আপনিই চাচ্ছিলেন, আমি না। কি পরিমাণ পেইন বুকে নিয়ে তোমাকে ভুলে থাকি, জানো?"
মাইশা ঠোঁট কামড়াচ্ছে। দু গাল ভিজে গেছে কখন... বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করে সে ভাংগা গলায় বললো, "সরি বাবুনি আমি সরি। আমি জানি আমি পেইন দেই তোমাকে। আমি ভালো না। বাট যেদিন থেকে তুমি আর ফোন দাও না, আর আমাদের চ্যাট হয় না... অনেক মিস করি আমি তোমাকে। আর তোমার সাথে ঐ মেয়েটাকে সেদিন দেখে এত্ত রাগ লাগতেসিলো... আই লাভ ইউ বাবু... আমি সরি।"
মেয়েটা রাতুলের হাত জড়িয়ে ঝরঝর করে কাঁদছে। সবাই তাকিয়ে আছে। রাতুল বিষণ্ণ চেহারায় তাকিয়ে থাকে ছোটখাটো পুতুলের মত মেয়েটার দিকে। সে জানে এই মেয়ে তার লাইফে অনন্তকাল পেইনই দিয়ে যাবে। তাও কিছু কিছু পেইন ওর্থ হ্যাভিং, তাই না?
রাতুল মাইশার গালের পানি দু হাতে মছে দেয়, ভেজা চোখে তাকিয়ে থাকা এই মেয়েটার জন্য তার চোখে কত রাতের কত ফোঁটা পানির হিসেব তার চাওয়া হবে না কখনও।