রাতুল সাহেব মানুষ টা রসিক। খুব মজা করে গল্প করতে পারেন। দিল খোলা একটা হাসি দিয়ে গল্প শুরু করেন, লোক জমে যায়। প্রথমে এক ভণ্ড বাবার গল্প বললেন, “মাটি বাবা” নাম ভাঙিয়ে এক গ্রামে দরবার বসাতে গিয়েছিল সেই বাবা, তারপর কিভাবে গ্রামবাসীর হাতে সত্যিকারের মাটি খেয়ে নাস্তানাবুদ হতে হলো সে কাহিনী! রাতুল সাহেব হাত-পা নেড়ে ভণ্ডবাবার নাকানি-চুবানি খাওয়ার গল্প এতো মজা করে বললেন যে শুনে সবাই এতো জোরে হাসা শুরু করলো যে পাশের রুম থেকে মানুষ দৌড়ে এলো কী কাহিনী দেখার জন্য! মানুষের আনন্দ দেখে রাতুল সাহেব উৎসাহ পেয়ে গেলেন, এবার আরেকটা গল্প শুরু করলেন- এক ডাকাতের গল্প। এমনিতে সে দেখতে ভারী ভালমানুষ, বাজারে ফ্লেক্সিলোডের দোকান চালায়, কিন্তু রাতের বেলা ডাকাতি করে সেটা কেউ জানে না। এক রাতে মদ খেয়ে টাল হয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে গ্রাম ভুলে কই ঢুকে পড়লো- পরে ধরা খেয়ে বাড়ির লোকের হাতে পিটুনি শুরু হতে সবাই আবিষ্কার করলো ডাকাত ব্যাটা মাতাল হয়ে নিজের শ্বশুর বাড়িতে এসেছিল ডাকাতি করতে! গল্পটি মজার সন্দেহ নেই, তবে রাতুল সাহেবের বলার ভঙ্গিটি আরো মজার! হাত-পা নেড়ে চোখ বড় বড় করে যখন গল্প বলেন- সবাই হেসে কুটোপুটি হয়ে গেলো! দুলালটা বরাবরই সবকিছুতে বাড়াবাড়ি করে। খাবার হাতে সোফার হাতলে কায়দা করে বসে গল্প শুনছিলো, ডাকাতের গল্পটা শুনে সে হাসতে গিয়ে খাবার গলায় আটকে সোফা উলটে পড়ে বিচিত্র এক দৃশ্যের অবতারণা ঘটলো! তাতে অবশ্য আসরে কোন ভাটা পড়লো না। রাতুল সাহেব নতুন একটি গল্প শুরু করলেন- এক পেটমোটা ঘুষখোর পুলিশের, দেখা গেলো সেই গল্পটি আরো হিট খেয়ে গেলো! আমি নিজে একটু বোকাসোকা গম্ভীর মানুষ, রসিকতা কম বুঝি। সেই আমারও হাসতে হাসতে পেটে ব্যথা উঠে গেলো! গল্প গুলো ভারী মজার, দুলাল এর শিক্ষা হয়নি সে আবারও খাবার হাতে নিয়ে গল্প শুনতে এসেছে, হাসতে হাসতে সে এই পড়ে তো সেই পড়ে! কিন্তু এর মাঝেও একজনকে দেখলাম ঘরের কোণায় মুখ ব্যাদান করে বসে আছেন। কেমন অন্যমনস্ক একটা ভাব চোখেমুখে, হঠাৎ হঠাৎ মানুষের হাসির আওয়াজ শুনে তিনি এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন অবাক হয়ে, কেমন হতাশ একটা ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে আবার যেন কি এক চিন্তায় ডুবে গেলেন। শেষদিকে একরকম বিরক্ত হয়েই যেন উঠে গেলেন আসর ছেড়ে। রসিকতাবোধ নেই এমন মানুষ নিয়ে ভারী মুশকিল!
আমরা এসেছি বন্ধু জহিরের বিবাহবার্ষিকীতে। জহির বায়িং হাউজের ব্যবসা করে বেশ বিত্তবান বনে গেছে রাতারাতি, বারিধারায় বড়সড় একটা ফ্ল্যাট কিনেছে। সেই নতুন ফ্ল্যাটেই আজ এসেছি আমরা দাওয়াতে। জহির ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে বাসা। পুরো বাসা জুড়ে সাজসাজ রব, নানারকম মুখরোচক খাবারের আয়োজন। আমি চুপচাপ এক কাপ চা হাতে বারান্দায় এসেছি। বারিধারায় এ জায়গাটি ভারী সুন্দর, ফাঁকা ফাঁকা, ঘিঞ্জি ভাবটা নেই। বারান্দায় এসে আমার মনে গভীর ভাবের উদয় হলো, এক কাব্যিক ভাবালুমেয় আবিষ্ঠতায় রবীন্দ্র সংগীত দুই লাইন গেয়ে উঠলাম, এমন সময় বারান্দার কোণে অন্ধকারে কে যেন হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়ালো টুল থেকে! তাকিয়ে দেখি আসরের সেই গম্ভীর ভদ্রলোক, বারান্দায় বোধহয় এসেছিলেন একটু নিভৃতে সময় কাটাতে- হঠাৎ আমার এই অত্যাচারে বেশ হকচকিয়ে গেছেন! আমি জানি আমার গানের গলা খারাপ, গাইলে মনে হয় কোলাব্যাং লাফাচ্ছে, তবু ভদ্রলোকের মুখে হালকা ভয়ের ছাপ দেখে আমি রীতিমতো অপমানিত বোধ করলাম এতোটাই খারাপ গাই আমি?! বেশ অপ্রস্তুত হয়ে কি বলবো বুঝে না পেয়ে বললাম, “রাতুল সাহেব বেশ জমিয়ে গল্প করতে পারেন, কি বলেন?’ লোকটি কিছু না বলে ভুরু কুঁচকে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো, যেন প্রশ্নটা বুঝতে পারেনি। তারপর হঠাৎ উপরনিচ মাথা নেড়ে বললো, ‘হ্যা!’ তার মুখ খানা তখনও বংগিচ। খাওয়া ভাল হলে আমার মেজাজও বেশ ভাল থাকে, আমি বেশ খোশমেজাজে মানুষের সাথে গল্প জুড়ে দিই তখন। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে লোকটার পাশে বসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, “আমার নাম তাশফিক সামি…’
লোকটি আবারও বেশ বংগিচ মুখ করে আমার হাতের দিকে চেয়ে বেশ অনিচ্ছায় হাতখানা বাড়িয়ে দিলেন, হাত মিলিয়ে বললেন, ‘ও আচ্ছা। ভাল’
আমার মেজাজটা আবার একটু খারাপ হলো। সাধারণত এরকম মুহূর্তে নিজের নাম বলে পরিচয় বলার কথা। বুঝা যাচ্ছে জীবনসংসারের উপর বীতশ্রদ্ধ এই মানুষটি সেই সাধারণ ভদ্রতাটুকুও দেখাতে রাজি নন। আমার একরকম জিদ চেপে গেল, ঠিক করলাম মানুষটির সাথে গল্প করেই ছাড়বো। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে লোকটার পাশে বসে পড়লাম, দরাজ একটা হাসির ভঙ্গি করে বললাম, “আপনার সাথে একটু পরিচিত হতাম…’’
“আমার নাম আসগর আলী’’ এই বলে লোকটি আবার চুপ মেরে গেলেন। মন দিয়ে বাইরে কি যেন দেখছেন। এ তো মহা অভদ্র লোকের পাল্লায় পড়া গেল!
আমি এবার একটু ঝুঁকি নিলাম। মানুষটার ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলাম- “আপনি কি কোন কারণে চিন্তিত? আপনাকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে। কোন কিছু নিয়ে উদবেগে ভুগছেন এমন।’
এবার তিনি একটু নড়েচড়ে বসলেন। আমার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে বললেন, “ফ্ল্যাটবাড়ি জিনিসটা আসলে ভাল না। জহির সাহেব এটা ভাল করেন নি।”
আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম। এতো সুন্দর বিশাল ফ্ল্যাট, সামনে খোলা জায়গা, চমৎকার লোকেশন- সামর্থ্য থাকলে যে কেউ চোখ বন্ধ করে কিনে ফেলতে চাইবে, এখানে মন্দ তো কিছু খুঁজে পাই না!
তারপরও কথা চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটু মাথা চুলকে বললাম, “হ্যা, খরচটা একটু বেশিই পড়েছে জহিরের।”
উনি একটু উত্তেজিত হয়ে মাথা নেড়ে বললেন, “খরচ কোন বিষয় না। বসতবাড়ি জিনিসটা আসলে নিরাপত্তার। ফ্ল্যাটে আপনার কোন নিরাপত্তা নাই। এত বড় বিল্ডিং, বত্রিশটা ফ্ল্যাট। আপনি এদের কাউকে চিনেন না, এদের ঘরে কি ঘটে না ঘটে আপনার কোন ধারণাও নাই। এই ব্যাপারটাই হচ্ছে ভয়ের!’’
মহা সিরিয়াস মানুষ মনে হচ্ছে। তবে ভদ্রলোকের যুক্তিটা একদম ফেলে দেওয়ার মতোও না। আমি বেশ কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনার কি এ নিয়ে কোন অভিজ্ঞতা আছে বুঝি?”
লোকটা মনে হলো যেন আরো বংগিচ হয়ে গেলো। যেন ভয়ংকর কোন অভিজ্ঞতার স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে তিনি প্রাণপণে চেষ্টা করছেন সেটা ভুলে থাকতে। কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে রইলেন তিনি। আমি মনে মনে প্রমাদ গুণলাম। অসুস্থ হয়ে গেলো না তো আবার? বেশ কিছু সময় অস্বস্তিকর নীরবতার পর হঠাৎ মাথা তুলে তাকালেন তিনি, বললেন, “থাক, আপনাকে বলেই ফেলি ঘটনাটা। চেপে রেখে আর কী হবে!’’
আমি বেশ পুলকিত হলাম। চমৎকার একটা গল্প শোনা যাবে মনে হচ্ছে! “জ্বী জ্বী অবশ্যই! শুরু করুন তাহলে!”
“আমি তখন থাকি গোলপুকুর এলাকায়। বেশ ফাঁকা নির্ঝঞ্ঝাট এলাকা। আমি তখন বইমেলার জন্য বই লিখছি। ও, আপনাকে বলা হয়নি। আমি একজন লেখক।”
লোকটার প্রতি আমার ভক্তি এসে গেলো বেশ। একজন লেখকের সাথে কথা বলছি!
“লেখালেখির জন্য আমার আবার খুব নিরিবিলি পরিবেশের দরকার হয়। একা মানুষ, কোন পিছুটান নেই, গোলপুকুরের ফ্ল্যাটটাও খুব সস্তায় ভাড়া পেয়ে গেলাম। ধুম করে উঠে গেলাম একদিন।
নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ- আমার মানিয়ে নিতে বেশ সময় লাগলো। আমি আবার খুব অন্তর্মুখী স্বভাবের, নিজে থেকে কারো সাথে আলাপ করতে জুত পাই না। তারপরও কিভাবে কিভাবে বেশ কয়জনের সাথে পরিচয় হয়ে গেলো। তিনতলার বুড়ি মিসেস গোমেজ- সবসময় হাসিখুশি, শনের মতো চুল, ফর্সা ঠুনঠুনে বুড়ি, ভারী অমায়িক। ছেলেমেয়ে সব বিদেশে ভাল অবস্থানে আছে, এখানে বিধবা বুড়ি একাই থাকে। চারতলায় প্রফেসর সাহেবের সাথেও মোটামুটি খাতির হয়ে গেল। উনার দুই ছেলেমেয়ে- টুকি আর ঝা (এটা আমার দেওয়া ডাক নাম! বাস্তবের নামগুলো বড় কঠিন- সহস্রধন আর চম্পকবন এমন কোন বিচিত্র নাম, প্রফেসর সাহেব রাশিচক্র নিয়ে গবেষণা করেন তাই নামের উপর নাকি গ্রহের কি কি সব হেরফের আছে- অনেক সুচিন্তিত গবেষণার পর এ নাম!) লেখালেখির চিন্তায় যখন বীতশ্রদ্ধ হয়ে যেতাম, টুকি ঝার সাথে গ্যারেজে ক্রিকেট খেলে বেশ কেটে যেত সময়। আমি নিজে থাকতাম চার তলায়। আমার উপরে আর একটাই তলা। তারপর ছাদ।
এই পাঁচতলা নিয়ে ছিলো যতো রহস্য। বিল্ডিংটা বেশ পুরোনো, কিন্তু তারপরও দেখা যায় পাঁচতলার সবগুলো ফ্ল্যাটে মানুষ উঠেনি। কেবল একটা ফ্ল্যাটে ভাড়াটে ছিল পাশের ফ্ল্যাটগুলো ফাঁকা। কিন্তু আসলেই কি ফাঁকা? এটা নিয়ে একরকম জল্পনা-কল্পনা ছিল ভাড়াটেদের মনে। আমি তো নিভৃতচারী মানুষ, আশেপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে তেমন কোন খোঁজখবর রাখতাম না। বই লিখতে এসেছি সেটা নিয়ে পড়াশোনা করেই কেটে যেত দিনের বেশিরভাগ সময়, রাতের বেলা মরার মতো ঘুমাতাম। টুকি আর ঝা আমাকে বিচিত্র সব তথ্য এনে দিতো। বেশিরভাগই বুড়ো দারোয়ান রহমত চাচার থেকে শোনা। পাঁচতলার কোণার ফ্ল্যাটটা সবসময় তালাবন্ধ থাকে। এখানে নাকি কবে এক নিঃসঙ্গ বুড়ি মহিলা থাকতেন। অসুস্থ মানুষ তেমন চলাফেরা করতে পারতেন না। এক ছেলে ছিল বিদেশে থাকে ছ’মাসে বছরে হয়তো একবার আসে। বেচারি বুড়ি সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখতে কখন হার্ট এটাক করে মারা গেছে কেউ জানে না। ছেলে তার অফিসের কাজে ব্যস্ত বিদেশে, মায়ের খবর নেওয়ার সময় নেই। কয়মাস পর দেশে ফিরে দেখে বুড়ির লাশ সোফার সাথে যেন মিশে গেছে। কালচে হাড়গোড়, কিছু চুল আর জামা দেখে বুঝা যায় এটা মায়ের মৃতদেহ। টিভি তখনও চলছে ঝিরঝির। ছেলে আর ফ্ল্যাটটা বেচেনি। বুড়ি যেভাবে রেখেছিলো সেভাবেই সাজিয়ে রেখে বিদেশ চলে গেছে, আর আসেনি এতোদিনে। এখনও নাকি মাঝে মাঝে দরজায় কান পাতলে টিভির চ্যানেল বদলানোর আওয়াজ পাওয়া যায়, কলেজের সেলিম নাকি একরাতে ছাদে গেছে লুকিয়ে বিড়ি খেতে। নামার সময় হঠাৎ শুনে তালাবন্ধ ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে খুটখাট শব্দ। দরজায় কান পেতে শুনে ভেতরে কে যেন ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে হাঁটছে আর খনখনে কণ্ঠে বুড়ি ডাকছে “তোর মা তো মরে লাশ হয়ে আছে রে বাবা! পোকামাকড় খুবলায় শইলের মাংস খায়ে ফেলতেসে তুই কবে আসবি মারে দেখতে!”’ বলতে গিয়ে ঘাড়ের রোম খাড়া হয়ে যায় সেলিমের।
“ধুর! সব বাজে কথা!” মাথা নেড়ে হাসি আমি। সেলিম ছেলেটা ফাজিল আছে, বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতে ওস্তাদ। অদ্ভুত যদি কিছু থাকে পাঁচ তলায় তাহলে সেটা দক্ষিণের ফ্ল্যাট। আমার মাথার ঠিক উপরে সে ফ্ল্যাট। প্রতি রাতে হুটোপুটির আওয়াজ শুনি। খিলখিল হাসির আওয়াজ। ছোট বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করলে যেমন হয়। আমার বেশ ভাল লাগে। বড় মানুষদের মনে নানারকম মারপ্যাঁচ থাকে। ছোটদের মন অনেক স্বচ্ছ- আমার তাই ছোটদেরই বেশি ভাল লাগে। কিন্তু সে ফ্ল্যাটের বাচ্চাদের কখনো বেরোতে দেখিনি। টুকি ঝা কে জিজ্ঞেস করলাম তারাও কিছু বলতে পারে না। ছোট বাচ্চা থাকলে তো দেখার কথা। কেউ নাকি দেখে নি! কি জানি! এটাও আমার কল্পনা কিনা! কাজের চাপে হ্যালুসিনেশন হয়েছে হয়তো! আমি গা করি না।
এভাবে নিরুপদ্রব কেটে গেলো বেশ কিছুদিন। সমস্যা বলতে ঐ একটাই- প্রায়ই রাতের বেলা ঘুম ভেঙে যায়, মাথার উপর ছাদে বাচ্চাদের ছুটোছুটির শব্দ শুনি। রাগও করতে পারি না, আহা থাক! বেচারিদের হয়তো খুব কড়াকড়ির ভেতর থাকতে হয়। বাসা থেকে একদমই বের হতে দেয় না। এজন্যই হয়তো কেউ দেখেনি ওদের। আমার বড় মায়া হয়।
পাঁচতলা জায়গাটাও আমার কাছে কেমন গা ছমছমে লাগে। করিডোরের লাইটটা কে যেন ভেঙে রাখে সবসময়। আবছা আবছা অন্ধকারে কেমন ভূতুড়ে একটা পরিবেশ। আমার মনে আছে একরাতে বাইরে থেকে এসেছি খুব ক্লান্ত বিধ্বস্ত, লিফটে চারের বদলে পাঁচে টিপেছি খেয়াল করিনি। লিফট থেকে নামতেই থতমত খেয়ে গেলাম! এতো অন্ধকার কেন? আর কেমন হু হু করে একরকম বাতাস বইছে। কেমন অদ্ভুত একটা বোঁটকা গন্ধ বাতাসে। আমি চশমা ছাড়া চোখে কম দেখি। হাতড়ে হাতড়ে করিডোরের লাইটের সুইচ খুঁজে বেড়াচ্ছি এমন সময় আবিষ্কার করলাম সমস্যাটা কোথায়- করিডোরের চারটা ফ্ল্যাটের সবগুলোর দরজা হাট করে খোলা! হু হু বাতাসের ঝাপটায় দরজাগুলো কাঁপছে। আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম, এমন তো হওয়ার কথা না! একসাথে সবগুলো ফ্ল্যাটের দরজা কেন খোলা থাকবে? মানুষজন কি কেউ নেই? আমি একটু সামনে আগাতে দেখি একটা ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুম দেখা যাচ্ছে। সোফার উপর আমার দিকে পেছন ফিরে এক মহিলা বসা, তার ময়লা হলদে চুল দেখা যাচ্ছে মাথাটা কেমন অদ্ভুতভাবে নিচের দিকে ঝুলে আছে। মহিলার পায়ের কাছে দুটো ছোট বাচ্চা হামাগুড়ি দিচ্ছে। রুমের কোণায় পুরোন আমলের একটা টিভি চলছে সেখানে কিছু দেখা যাচ্ছে না শুধু ঝিরঝির আওয়াজ। পুরো রুমে আলো বলতে শুধু টিভি স্ক্রিনের ঝিরঝিরে নীল সাদা আভা- সে আলোয় বাচ্চাগুলোর চোখ মিট্মিট করছে। আমি হঠাৎ খেয়াল করলাম বাচ্চাগুলো খেলা থামিয়ে আমার দিকে অবাক হয়ে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। তারপরই কেমন থপথপ করে আমার দিকে হামাগুড়ি দিয়ে আসতে লাগলো বাচ্চাগুলো… আর সোফার হলদে চুলের মহিলাটা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো আমার দিকে… তারপর...
তারপর যে কী দেখেছি আমার ঠিক মনে নেই। শুধু মনে আছে কিছু একটা দেখে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম। ভয়ংকর বীভৎস কিছু একটা। অতিপ্রাকৃত অবিশ্বাস্য অন্য জগতের কিছু দেখেছিলাম। নাকি সবই আমার মনের কল্পনা? লেখালেখি নিয়ে ভয়াবহ চাপের ভেতর আছি, তীব্র মানসিক অশান্তি, তাছাড়া সে রাতে আমি মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত ছিলাম, চোখে চশমাও ছিল না, অন্ধকারে কি দেখতে কি দেখেছি… হয়তো আমার উপরের ফ্ল্যাটের ভাড়াটেদেরই দেখেছিলাম সেদিন।
সেই বাচ্চাদুটো! মনে মনে ভাবলাম আমি। এই প্রথম দেখলাম ওদের। ছোট ছোট আদর আদর দুটো বাচ্চা। আমার ভারী মায়া হলো। আহারে, মা হয়তো সেভাবে আদর যত্ন করতে পারে না। হয়তো মা টা মানসিকভাবে অসুস্থ। সেবা দরকার। নাহ, একটা কিছু করা দরকার। কিন্তু কি যে করবো ভেবে পেলাম না। অযাচিত সাহায্য করতে গিয়ে উপদ্রব হিসেবে নিজেকে পরিচিত করার কোন মানে হয় না।
একটা উপলক্ষ মিলে গেলো কয়দিন পর। সকাল থেকে গা ম্যাজম্যাজ করছিলো। সাধারণত আমি পাড়ার বিসমিল্লাহ হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসি কিন্তু আজকে ইচ্ছে করছিলো না বাইরে যেতে। ভাবলাম অনলাইনে খাবার অর্ডার দিলে কেমন হয়? প্রমাণ সাইজ একটা পিজ্জা নিয়ে ডেলিভারিম্যান যখন হাজির হলো- এক কামড় খেয়ে বুঝলাম ঝোঁকের বশে অর্ডার দেওয়া ঠিক হয়নাই! আমার শরীর এতো ম্যাজম্যাজ করছে যে কিছু খাওয়ার রুচি নাই। পিজ্জাটা খেতে চমৎকার, এটা ফ্রিজে রেখে বাসী হবে ভেবে মনটা একটু খারাপ হলো কাউকে খাওয়াতে পারলে ভাল হতো। হঠাৎ মাথায় এলো, উপরের তলার বাচ্চাগুলোর জন্য খাবারটা পাঠালে কেমন হয়? বাচ্চাগুলো নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবে! মনে হয় না ওরা বাইরের খাবার খুব বেশি খেতে পারে। আহারে! গত দুইদিন রাতে ওদের ছোটাছুটির আওয়াজও পাইনি। অসুস্থ নাকি বাচ্চাগুলো?
আমি পিজ্জার বাক্স হাতে গুটি গুটি পায়ে পাঁচ তলার সিঁড়ি বেয়ে উঠলাম। করিডোরে কোন লাইট নেই। দিনের বেলাতেও কেমন গুমোট অন্ধকার পুরো ফ্লোরজুড়ে। ব্যাখ্যাতীত কোন কারণে আমার ঘাড়ের রোমগুলো দাঁড়িয়ে গেলো। করিডোরের পথটা মনে হচ্ছে যেন কতো দীর্ঘ। আমি পা টেনে টেনে চলছি, নিঃশ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হচ্ছে বুকের ভেতর কেমন ঘড়ঘড় একটা অনুভূতি। আমার মনে হলো বাতাসে সূক্ষ্ম একটা মাংস পঁচা গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। আমার সে রাতের কথা মনে পড়ে গেলো। কী ভয়ংকর! “পুরোটাই আমার উত্তপ্ত মস্তিষ্কের কল্পনা ছিলো” মনকে বারবার প্রবোধ দিলাম। তারপরও মন মানতে চায় না। কেমন একটা অশুভ অনুভূতি হচ্ছে। যেন খুব খারাপ একটা কিছু ঘটতে চলেছে। আমি পা টেনে টেনে দক্ষিণের ফ্ল্যাটের সামনে আসলাম। কাঁপা কাঁপা হাতে কলিংবেল বাজালাম। একবার...দুবার...তিনবার… কোন সাড়া নেই। আমার দুঃখিত হওয়ার কথা, কিন্তু কেন যেন মনে মনে আনন্দ হলো ভেবে যে কারো মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। আরেকটু অপেক্ষা করে চলে যাবো এমন সময় ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে পা টেনে টেনে স্যান্ডেল পায়ে কারো আসার আওয়াজ পেলাম। আমার বুকের ভেতরটা কেমন জমে গেলো। আবার সেই ঘড়ঘড় অনুভূতি। এখানে বাতাসে এমন গুমোট দুর্গন্ধ কিসের? গন্ধটা যেন ক্রমশ বেড়েই চলেছে…
মৃদু ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে দরজাটা খুলে গেলো। ভেতর থেকে উঁকি দিলো একটা মুখ- ময়লা হলদে চুলের সেই বুড়ি! ও! কী বীভৎস চেহারা! চোখগুলো কেমন জুলজুলে। মুখের চামড়াটা এমন কেন? মনে হয় যেন কেউ কেটে এবড়োথেবড়ো চামড়া বসিয়ে দিয়েছে মুখের উপর। দরজাটা একটু ফাঁক করে আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে রইলো সে। মুখটা অল্প হাঁ হয়ে আছে বিকৃতভাবে, নিচের দাঁতের কালচে মাড়ি দেখা যাচ্ছে। ঘরের ভেতর কোন আলো নেই, সবগুলো পর্দা টাঙানো, একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর সেই বোঁটকা গন্ধ! আমার নাড়িভুঁড়ি একদম উলটে এলো। মহিলাটা অদ্ভুতভাবে আমার দিকে কিছুক্ষণ ঘোলাটে চোখে তাকিয়ে বললো, “কী চাই?”
আমি তাড়াতাড়ি হাতের পিজ্জার বাক্সটা মহিলার হাতে তুলে দিয়ে বললাম, “আপনার বাচ্চাদের জন্য!’’ এই বলে তাড়াতাড়ি উলটো দিকে হাঁটা দিলাম। একটা ব্যাপার খেয়াল করে আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে, হাত-পা একটু একটু কাঁপছে। আমি ভেবেছিলাম মানুষটা বয়সে বৃদ্ধা একজন মহিলা, কিন্তু কাছ থেকে দেখে আবিষ্কার করলাম এটা আসলে একটা মধ্যবয়সী লোক, মহিলাদের পোষাক পরা। কণ্ঠ শুনেই বোঝা গেছে। গাট্টাগোটা হাতভরা লোম, বাম হাতের কব্জির কাছে বড় করে একটা পোড়াদাগ।
আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। আমি করিডোরের দেয়াল ধরে কোনমতে হাঁটছি। শুধু মাথার ভেতর ঘুরছে- একটা লোক কেন মহিলাদের পোষাক পরে দুইটা ছোট বাচ্চা নিয়ে অন্ধকার একটা ফ্ল্যাটে এভাবে থাকে? খুব খারাপ একটা কিছু ঘটার অনুভূতি পাচ্ছি, পাকস্থলীর ভেতর কেমন গুড়্গুড় করে উঠলো। টিভির সেই ঝিরঝির শব্দটা কানে বেজে উঠছে...প্রথমে খুব মৃদু লয়ে...তারপর আস্তে আস্তে পুরো মাথা ঝিঁ ঝিঁ হয়ে গেলো তীব্র ঝিরঝির শব্দে! সাদা নীল বীভৎস আলো চোখের সামনে যেন ভনভন করছে!
আমি মাথা চেপে করিডোরের মাঝখানে বসে পড়লাম। করিডোরটা এতো লম্বা কেন? এতো অন্ধকার হয়ে আসছে কেন সবকিছু? আমার চোখে এমন ঘোলা ঘোলা লাগছে কেন সবকিছু? মাংস পঁচা গন্ধটা যেন আবার ক্রমশ বেড়ে চলেছে…
ক্যাঁচক্যাঁচ করে দরজা খোলার শব্দে আমি ভয়ানক চমকে উঠলাম। সেই বুড়ি...না না...লোকটা দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। আমি প্রথমবারের মতো খেয়াল করলাম মানুষটার মুখে অনেকগুলো দাঁত নাই! তারপর...আরো একটা মাথা উঁকি দিলো দেখতে পেলাম...তার নিচে আরো একটা মাথা...ছোট ছোট মাথা...বাচ্চাগুলোর মাথা...আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মুখে কোন অনুভূতি নেই, তিন জোড়া চোখ যেন মরা মাছের মতো নিষ্প্রাণ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তারপর লোকটা বাম হাতে পিজ্জাটা ধরে আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুতভাবে দোলাতে লাগলো আর ফোকলা দাঁতে খলখল করে হেসে উঠলো। আমার বুকের ভেতর কেমন ধড়াস করে উঠলো, আমি তড়িৎ গতিতে লাফ মেরে উঠে সিঁড়ি দিয়ে দুড়দাড় করে নেমে আমার ফ্ল্যাটে এসে দরজার ছিটকিনি আটকে দিলাম। আমার বুকের ভেতর তখনও ধড়াস ধড়াস করে লাফাচ্ছে! একটা মাথা...দুইটা মাথা...তিনটা মাথা...টিভির সেই সাদা নীল আলো আর ঝিরঝির আওয়াজ যেন আবার অবশ করে দিচ্ছে আমার অনুভূতি। আমি তাড়াতাড়ি ৯৯৯ এ কল দিলাম। দরজার ফাঁকে অন্ধকারে উঁকি দিয়ে আছে তিনটা মাথা...তিনটা মাথা...মরা মাছের মতো চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে...কিছু একটা ভয়াবহ ভুল ছিল পুরো দৃশ্যটার ভেতর...অপারেটর কলটা ধরেনি এখনও...আমার গা বেয়ে ঝরণার মতো ঘাম ঝরছে...ঠিক তখন বিদ্যুৎ চমকের মতো পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেলো আমার কাছে কেন পুরো দৃশ্যটা এতো অবাস্তব অব্যাখ্যায় লেগেছিল আমার কাছে। লোকটার মাথার নিচে বাচ্চাগুলোর মাথা ঠিক একটার নিচে আরেকটা এভাবে ছিল- তিনটা মাথা একটার নিচে আরেকটা সোজাভাবে সাজানো-দরজার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আছে-এটা কোনদিনও সম্ভব না...যদি না...যদি না...ওহ খোদা! অপারেটর ফোনটা ধরেছে! আমি কাঁপা কাঁপা গলায় অপারেটরকে পুরো ঘটনাটা বললাম...শুনতে পাচ্ছি আমার ফ্ল্যাটের বাইরে করিডোর বেয়ে কে যেন পা ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে আসছে… আমি চিৎকার করে অপারেটরকে বলছি তাড়াতাড়ি পুলিশ পাঠাতে...দরজার বাইরে কে যেন খলখল করে হেসে উঠলো...আমার দরজার কী হোল এর জায়গাটা গর্ত ছিল, আমি দরজার কাছে যেতেই দেখি সে গর্ত দিয়ে মরা মাছের মতো ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে একটা ছোট বাচ্চা...তার নিচে আরেকটা ছোট বাচ্চা… ওহ খোদা! কী বীভৎস!”
আসগর আলী এটুকু বলে পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছলেন। তিনি অল্প অল্প কাঁপছেন তখনও। আমি নিঃশ্বাস চেপে রেখে বললাম, তারপর কি হলো? তিনি বারান্দা দিয়ে বাইরে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, “পুলিশ এসে ঐ ফ্ল্যাটের ভেতর তিনটা মুণ্ডুহীন লাশ পায়। ঐ ফ্ল্যাটে এক মহিলা তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে থাকতো। মহিলার স্বামী তীব্রভাবে মানসিক অসুস্থ ছিল, পাগলাগারদে আটকা ছিলো। দুইদিন আগে লোকটা পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে যায়, সোজা ফ্ল্যাটে ঢুকে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করে। স্ত্রীর লাশটা বাথটাবে ডুবিয়ে রাখে। মুখ আর মাথার চামড়া কঙ্কাল থেকে ছিলে আলাদা করে মুখোশ হিসেবে পরে লোকটা, গায়ে স্ত্রীর জামা পরে বসে থাকে। পরে কোন একসময় বাচ্চা দুটোকেও গলা কেটে হত্যা করে, মুণ্ডু দুটো ধড় থেকে রান্নাঘরের বটি দিয়ে কেটে বিচ্ছিন্ন করে। দরজার ফাঁক দিয়ে সে আমাকে সেই মুণ্ডূ দুটো দেখাচ্ছিলো… ওহ খোদা! আমি এখনও রাতে ঘুমাতে পারি না ভাবলে!”
আসগর আলী মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে উঠলেন।
“সেই লোকটার কি হলো?’’
“ধরা পড়েনি। পালিয়ে গেছিলো পুলিশ আসার আগেই। ফ্ল্যাটবাড়ি তো, কেউ কারো খবর রাখে না। লোকটা বাচ্চাদুটোর মুণ্ডু আমার বাসার সামনে ফেলে গেছিলো, পুলিশ আসার আগে কেউ দেখেওনি কিছু। সেই বদ্ধপাগল লোকটা এখনও হয়তো আমার আপনার আশেপাশেই কোথাও ঘুরে বেড়াচ্ছে কে জানে!”
আসগর আলী থেমে আবার মুখ হাঁ করে একটু নিঃশ্বাস নিলেন। আমি লক্ষ্য করলাম উনার মুখে খুব অল্প কয়টা দাঁত। কী অদ্ভুত ব্যাপার। উনি আমার দিকে তাকিয়ে নার্ভাসভাবে একটু হাসলেন, “আমি যাই তাহলে। পার্টিতে মন বসছে না। শরীরটা কেমন ঝিমঝিম লাগছে।” আমার সাথে হাত মেলালেন আবার। খেয়াল করে দেখলাম বাম হাতের জায়গাটা পোড়া দাগ। “আবার দেখা হবে!” ঘোলা ঘোলা চোখে আমার দিকে বেশ খানিকক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইলেন , তারপর হাত নেড়ে বললেন তিনি। আমিও মুখে কৃত্রিম একটা হাসি ধরে হাত নাড়লাম। দেখলাম ক্লান্ত শরীরে কেমন ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে পা টেনে বাইরের অন্ধকারে মিশে গেলেন তিনি। আমার বুকের ভেতরটা কেমন ধড়াস ধড়াস করছে। জহিরকে পাশে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, “আসগর আলী লোকটা তোর কি হয়?’’ জহির আমার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, “আমি তো চিনি না এই লোককে! ভেবেছি তোদের কারো বন্ধু হবে! প্রতিবেশীও হতে পারে। ফ্ল্যাটবাড়িতে কতোরকম মানুষই থাকে সবাই কি আর চেনা থাকে?” বলে একগাল হেসে আড্ডায় চলে গেলো ও। রাতুল সাহেব বোধহয় আরেকটা হাসির গল্প শুরু করেছেন।