২:হেড্রনের অভ্যন্তরে
হেড্রন সমূহকে শুধু মাত্র শ্রেণীবিন্যাস করা এবং এক ধরনের সাব-অ্যাটমিক পর্যায় সারণির মধ্যে বিন্যস্ত করাই যথেষ্ট নয়। যেমন: পরমাণুগুলোর অভ্যন্তরীণ গঠন খুঁজে বের করার আগ পর্যন্ত এবং বিভিন্ন ইলেক্ট্রন বিন্যাসের গুরুত্ব অনুধাবনের আগ পর্যন্ত মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া যায়নি।
গেল-ম্যানের কাছেও তাই মনে হলো হেড্রন সমূহেরও একটি অভ্যন্তরীণ গঠন থাকার কথা যা তাদের বিভিন্ন শ্রেণীতে উপিস্থিতির বিষয়টি ব্যাখ্যা করবে। এই ধারণা কোনো ভাবেই সমর্থনের অযোগ্য নয়। লেপটনসমূহকে মৌলিক কণিকা হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। তারা স্থানের মধ্যে শুধু একটি বিন্দুর মতো যাদের কোনো অভ্যন্তরীণ গঠন নেই। কিন্তু হেড্রনের ক্ষেত্রেও তা সত্য হওয়ার কোনো কারণ নেই।
তাই গেল-ম্যান পরবর্তীতে যা করার চেষ্টা করলেন তা হচ্ছে, সেই সব মৌলিক কণিকাগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেন যাদের বিভিন্ন সন্নিবেশের মাধ্যমে হয়তোবা হেড্রন কণিকাগুলো উৎপন্ন হয় এবং তাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়। এক ধরনের বিন্যাসে হয়তো প্রোটন উৎপন্ন হয়, আরেক ধরনের বিন্যাসে নিউট্রন, কিংবা অন্য ধরনের বিন্যাসে বিভিন্ন ধরনের পাইয়ন ইত্যাদি ইত্যাদি।
গেল-ম্যান এই কাজটি করতে উদ্যত হওয়ার পর খুব দ্রুতই অনুধাবন করলেন, তিনি যদি প্রচলিত নীতি অনুযায়ী এই ধারণায় আটকে থাকেন যে প্রতিটি কণিকার অবশ্যই ইলেক্ট্রন বা প্রোটনের সমপরিমাণ বা এর পূর্ণসংখ্যার গুণিতক পরিমাণ বৈদ্যুতিক চার্জ থাকতেই হবে, তাহলে তিনি এই কাজটি শেষ করতে পারবে না। তিনি দেখলেন, হেড্রনের উপাদান কণিকাগুলোর ভগ্নাংশ পরিমাণ চার্জ রয়েছে।
এই অবস্থায় গেল-ম্যান ভয় পেলেন। যতদিন মানুষ বৈদ্যুতিক চার্জ নিয়ে গবেষণা করছে, সেই ফ্যারাডের আমলেও যখন তড়িৎ-রসায়ন নিয়ে গবেষণা হয়েছে, তখন থেকে আজ অবধি প্রতিটি ক্ষেত্রেই পাওয়া গেছে যে চার্জ সর্বদা একটি ক্ষুদ্রতম মানের পূর্ণ সংখ্যায় উপস্থিত থাকে (এবং তা স্পষ্টতই অবিভাজ্য) এবং গত এক শতাব্দী যাবৎ এই ক্ষুদ্রতম চার্জটি হচ্ছে ইলেক্ট্রনের চার্জ।
তবে, ১৯৬৩ সালে গেল-ম্যান সিদ্ধান্ত নিলেন, এই ফলাফল যেভাবেই হোক প্রকাশ করবেনই। তিনি প্রস্তাব দিলেন হেড্রনগুলোর গঠনের জন্য তিনটি মৌলিক কণিকা রয়েছে এবং প্রতি হেড্রনের জন্যও তিনটি প্রতিকণিকা রয়েছে। প্রতিটি হেড্রন এই তিনটি মৌলিক কণিকার দুটি অথবা তিনটি দ্বারা গঠিত হয়। মেসন সমূহ গঠিত হয় দুটি কণিকা দ্বারা আর ব্যারিয়ন সমূহ তিনটি কণিকা দ্বারা।
এই মৌলিক কণিকাগুলোকে গেল-ম্যান নাম দিলেন কোয়ার্ক। (এটি সম্ভবতঃ খেয়ালের বশে জেমস জয়েসের উপন্যাস ঋরহহবমধহং ডধশব থেকে নেওয়া হয়ছে। সেখানে একটি প্রবচন ছিল: “ঞযৎবব য়ঁধৎশং ভড়ৎ গঁংঃবৎ গধৎশ”। গেল-ম্যানের কাছে এটিকে মনে হয়েছে “ঞযৎবব য়ঁধৎশ ভড়ৎ গঁংঃবৎ ঐধফৎড়হ”. এই নামটি রেখে দেওয়া না হলেই ভাল হতো কারণ একটি রুচিশীল নয়। তবে, নামটি এঁটে গেল এবং সম্ভবতঃ গেল-ম্যানের জন্যও ছিল তা চমক এখন এই নামটি আর উৎপাটনযোগ্য নয়।)
গেল-ম্যান তিনধরনের কোয়ার্ক সুনির্দিষ্ট করলেন যাদেরকে খেয়ালের বশে ডাকা হয়ছিল আপ কোয়ার্ক, ডাউন কোয়ার্ক এবং স্ট্রেঞ্জ কোয়ার্ক। (এই বিশেষণগুলোকে আক্ষরিকভাবে নেওয়া যাবে না। তবে কেউ চাইলে এগুলোকে ভাবতে পারে: ঁ কোয়ার্ক, ফ কোয়ার্ক এবং ং কোয়ার্ক কিংবা প্রতীক হিসেবে লিখতে পারে ঁ, ফ, এবং ং। ং কে মাঝে মাঝে ংরফবধিু (পার্শ্ববর্তী) এর আদ্যক্ষর হিসেবে দেখা হয় যেন তা অন্যগুলোর সাথে একতা তৈরি করে, তবে স্ট্রেঞ্জ শব্দটিই ভাল, কারণ এটি আরো গুরুত্ববহ।)
ঁ কোয়ার্কের একটি বৈদ্যুতিক চার্জ আছে +২/৩ আর ফ কোয়ার্কের চার্জ ১/৩। (স্বাভাবিক ভাবেই ঁ প্রতিকোয়ার্কের চার্জ -২/৩ এবং ফ প্রতিকোয়ার্কের চার্জ +১/৩)। প্রতিটি কোয়ার্কের সংরক্ষণশীলতা জ্ঞাপক এক শ্রেণির সংখ্যা রয়েছে। কোয়ার্ক গুলোকে নিজেদের মধ্যে এমনভাবে বিন্যাস্ত করতে হবে যেন তারা সবগুলো মিলে প্রতিটি হেড্রনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসূচক সংখ্যাগুলো যথাযথ রাখে।
বিশেষ করে, ভগ্নাংশসুচক সংখ্যাগুলোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট যত্নবান হতে হবে। কোয়ার্কগুলোকে এমনভাবে বিন্যাস্ত করতে হবে, যাতে তাদের দ্বারা গঠিত হেড্রনের মোট বৈদ্যুতিক চার্জের পরিমাণ +১, ০ অথবা -১ হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি প্রোটন তৈরি হয় দুটি ঁ কোয়ার্ক এবং একটি ফ কোয়ার্ক দিয়ে; তাই এর মোট চার্জের পরিমাণ +২/৩ এবং +২/৩ এবং -১/৩, বা +১। একটি প্রতি প্রোটন তৈরি হয় দুটি ঁ প্রতি কোয়ার্ক এবং একটি ফ প্রতি কোয়ার্ক দিয়ে (-২/৩ এবং -২/৩ এবং +১/৩), যাতে মোট চার্জ হয় -১। একটি নিউট্রন গঠিত হয় একটি ঁ কোয়ার্ক এবং দুটি ফ কোয়ার্ক দিয়ে (+২/৩, -১/৩ এবং -১/৩) যাতে মোট চার্জের পরিমাণ হয় ০।
একটি ধনাত্মক পাইয়ন গঠিত হয় একটি ঁ কোয়ার্ক এবং একটি ফ প্রতি কোয়ার্ক দিয়ে (+২/৩ এবং +১/৩), তাতে মোট চার্জ হয় +১, এবং একটি ঋনাত্মক পাইয়ন গঠিত হয় একটি ঁ প্রতিকোয়ার্ক এবং একটি ফ কোয়ার্ক দিয়ে (-২/৩ এবং -১/৩) তাতে মোট চার্জ হয়-১।
প্রোটন গঠিত হয় দুটি আপ (ঁ) এবং একটি ডাউন (ফ) কোয়ার্ক নিয়ে, আর নিউট্রন গঠিত হয় একটি আপ ও দুটি ডাউন কোয়ার্ক নিয়ে। কোয়ার্কগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে গ্লুয়ন ক্ষেত্রের মাধ্যমে।
ং কোয়ার্ক স্ট্রেঞ্জ কণিকা গঠনের ক্ষেত্রে কাজে লাগে, যেখান থেকে এটি তার নাম পেয়েছে। ং কোয়ার্কের বৈদ্যুতিক চার্জ -১/৩ এবং স্ট্রেঞ্জনেস সংখ্যা -১। ং প্রতিকোয়ার্কের বৈদ্যুতিক চার্জ +১/৩ এবং স্ট্রেঞ্জনেস সংখ্যা +১।
ধনাত্মক ক মেসন একটি ঁ কোয়ার্ক এবং একটি ং প্রতিকোয়ার্ক দিয়ে গঠিত (+২/৩ এবং -১/৩) তাই এর মোট চার্জ +১ এবং স্ট্রেঞ্জনেস সংখ্যা +১। ঋনাত্মক ক মেসন একটি ঁ প্রতিকোয়ার্ক এবং একটি ং কোয়ার্ক নিয়ে গঠিত (-২/৩ এবং -১/৩) তাই এর মোট চার্জ -১ এবং এর স্ট্রেঞ্জনেস সংখ্যা -১।
একটি ল্যাম্বডা কণিকা (এটি একটি নিরপেক্ষ হাইপেরন) গঠিত হয় একটি ঁ কোয়ার্ক, একটি ফ কোয়ার্ক এবং একটি ং কোয়ার্ক নিয়ে (+২/৩ এবং -১/৩ এবং -১/৩), যার মোট চার্জ +১ এবং স্টেঞ্জনেস সংখ্যা +১, যখন একটি ওমেগা মাইনাস গঠিত হয় তিনটি ং কোয়ার্ক নিয়ে (-১/৩, এবং -১/৩ এবং -১/৩), যাদের মোট বৈদ্যুতিক চার্জ -১। ল্যাম্বডা এবং ওমেগা মাইনাস উভয়েই স্ট্রেঞ্জ কণিকা।
এই বিশেষ ধরনের পথে বিভিন্ন ধরনের হেড্রন তৈরি করা যায় এবং এই পদ্ধতিতে এমন কোনো বিন্যাস পাওয়া যাবে না যাদের মোট বৈদ্যুতিক চার্জ ০, +১ অথবা -১ হবে না।
কিন্তু এসব কিছু কি আসলেই সত্য? সত্যিই কোয়ার্কের অস্তিত্ব আছে নাকি এটি শুধুই হিসেব রক্ষণ? কেননা, একটি ডলারের নোটকে আমরা অনেক ভাবে ভাংতি করে নিতে পারি, আধুলি, সিকি, ডাইম, নিকেল, পেনি ইত্যাদি। কিন্তু ডলার নোটটিকে যদি ছিঁড়ে কুচি কুচি করা হয় তাহলে তার গঠনকারী কোনো মুদ্রা পাওয়া যাবে না।
তাহলে, ধরে নিন, আপনি একটি হেড্রন কণিকাকে বিদীর্ণ করলেন। তখন কী এটি থেকে কোয়ার্ক বেরিয়ে আসবে? দুর্ভাগ্যবশত এখন পর্যন্ত কেউ হেড্রনকে ভেঙে আলাদা করতে পারেনি কিংবা অন্যভাবে বললে মুক্ত কোয়ার্ক উৎপন্ন করতে পারে নি। যদি দু’একটি উৎপন্ন করা যেত তাহলে এদের আংশিক চার্জ থেকে খুব সহজেই এদের উপস্থিতি সনাক্ত করা যেত। তবে, কিছু কিছু বিজ্ঞানী আছেন যারা মনে করেন হেড্রন থেকে কোয়ার্ক বের করে আনা সম্ভব নয়, এমনকি তাত্ত্বিক ভাবেও নয়। এবং যদি এটি সম্ভবও হতো আমরা এখন পর্যন্ত এত তীব্র শক্তি অর্জনের যন্ত্র তৈরি করতে পারিনি যা এই কাজটি করে দিতে পারবে। অবশ্য, পরোক্ষভাবে কোয়ার্কের প্রকৃত উপস্থিতির আলামত পাওয়া যায়।
১৯১১ সালে রাদারফোর্ড তাঁর আলফা কণিকার মাধ্যমে পরমাণুকে বিস্ফোরণের পরীক্ষার বর্ণনা দিয়েছিলেন। আলফা কণিকাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরমাণুকে এমনভাবে অতিক্রম করে গিয়েছিল যেন পরমাণু ফাঁকা স্থান ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে, এখানে সামান্য কয়েকটি ছড়িয়ে যাওয়া আলফা কণিকা পাওয়া গিয়েছিল। যখনই একটি কণিকা কিছু একটাকে আঘাত করে তখনই সেটি বিচ্যূত হয়। এভাবেই রাদারফোর্ড অনুমান করে নিয়েছিলেন, পরমাণুর মধ্যে খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে অত্যন্ত ভারী একটি বিন্দু রয়েছে-সেটিই হলো পারমাণবিক নিউক্লিয়াস।
তবে কি সম্ভব হতে পারে না, যদি আমরা একটি প্রোটনকে অত্যন্ত শক্তিশালী ইলেক্ট্রন দিয়ে আঘাত করি তাহলে আঘাতের ফলে ইলেক্ট্রনে বিক্ষিপ্ত অবস্থা তৈরি হবে? তাহলে সেই বিক্ষিপ্ত ইলেক্ট্রনের প্রবাহ থেকে যদি প্রোটনের ভিতরে কিছু বিক্ষিপ্ততা উৎপাদনকারী বিন্দু সনাক্ত করা যায়। তাহলে কি আমরা সেখান থেকে কোয়ার্কের উপস্থিতি নির্ণয় করতে পারি না?
১৯৭০ এর দশকের শুরুতে জেরম ফ্রিয়েডম্যান, হেনরি কেনডাল এবং রিচার্ড টেইলর, স্ট্যানফোর্ড (ইউনিভার্সিটি) রৈখিক ত্বরণ যন্ত্রে এই ধরনের পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে তাঁরা তিনজন ১৯৯০ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই পরীক্ষার ফলাফলগুলো আরেক আমেরিকান পদার্থবিদ রিচার্ড ফিলিপ্স ফাইনম্যান (১৯১৮-১৯৮৮) সন্তোষজনকভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। যিনি এরই মধ্যে ১৯৬৫ সালে অন্য একটি কাজের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সাল নাগাদ এটি স্পষ্ট হয়ে গেল, কোয়ার্কের সত্যিই অস্তিত্ব আছে, যদিও মুক্ত অবস্থায় তাদের কখনো সনাক্ত করা যায় নি। ফাইনম্যান প্রোটনের ভিতরকার এই কণিকাগুলোকে নাম দিলেন পার্টন। (আমার নিজস্ব চিন্তাধারা অনুযায়ী এটি কোয়ার্কের চেয়ে আরো ভালো নামকরণ। হয় ফাইনম্যান আমার মতোই কোয়ার্ক নামটিকে শ্রুতিকটু মনে করেছিলেন অথবা তিনি মনে করেছেন গেল-ম্যানের কোয়ার্ক তত্ত্বটি আসলে বাস্তবে যেমন দেখা যায় তেমন নয়।)
কিন্তু এই অবস্থায় বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিল। আমরা পরমাণুর অভ্যন্তরে নামলাম এবং দেখলাম এরা এতোই বিচিত্র যে তাতে এদের সরলতা থাকে না। তাই সরলতা পুনরূদ্ধারের জন্য আমরা সাব-অ্যাটমিক কণিকার অভ্যন্তরে ঢুকলাম, এবং দেখলাম এরা এতোই বিভিন্ন ধরনের যে, দ্বিতীয়বারের মতো সরলতা হারিয়ে গেল। এখন আমরা যখন কোয়ার্কের লেভেলে প্রবেশ করলাম, তখন কি এগুলোর মধ্যেও প্রচুর বিভিন্নতা দেখতে পাব?
কিছু মানুষ ভাবলেন এদের বাইরে অন্তত আরো একধরনের কোয়ার্কের অস্তিত্ব আছে। এদের একজন হলেন জুলিয়ান সেইমোর শুইঙ্গার (জন্ম: ১৯১৮)। তিনি ফাইনম্যানের সাথে ১৯৬৫ সালে নোবেল ভাগ করে নিয়েছিলেন। জুলিয়ানের কাছে মনে হয়েছিল কোয়ার্কসমূহ লেপটনের মতোই মৌলিক কণিকা। তিনি এগুলোকে বিন্দু কণিকা হিসেবে বিশ্বাস করতেন, যাদের নিজস্ব কোনো অভ্যন্তরীণ গঠন নেই। (যাদের ব্যাস হবে শূন্য, যদ্যাবধি আমরা নির্ণয় করতে পারি) এবং তাই এই দুই গুচ্ছ কণিকার মধ্যে প্রতিসাম্যতা বজায় থাকবে।
সেই সময় অবধি দুই ফ্লেভারের লেপটন পরিচিত ছিল ইলেক্ট্রন ও তার নিউট্রিনো এবং মিউয়ন ও তার নিউট্রিনো। তাই দুই ফ্লেভারের প্রতিলেপটনও উপস্থিত ছিল। সেই হিসেবে কোয়ার্কও দুই ফ্লেভারের হওয়ার কথা। এক ধরনের ফ্লেভার বিশিষ্ট কোয়ার্ক হলো ঁ কোয়ার্ক এবং ফ কোয়ার্ক (এবং অবশ্যই সেই সাথে এদের প্রতিকোয়ার্ক) আর অপর ধরনের কোয়ার্ক হলো ং কোয়ার্ক এবং আরেকটি কী হবে? যদি একটি চতুর্থ কোয়ার্কের অস্তিত্ব থাকে, এই ধরনের কোয়ার্ক বিশিষ্ট কণিকা যদিও পাওয়া যায়নি, কিন্তু এর কারণ হতে পারে। এই চতুর্থ কোয়ার্কবাহী কণিকাটি এতোই ভারী, একে উৎপন্ন করার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিশাল শক্তির প্রয়োজন হবে।
১৯৭৪ সালে আমেরিকান পদার্থবিদ বার্টন রিখটারের (জন্ম: ১৯৩১) নেতৃত্বে একটি দল শক্তিশালী স্ট্যানফোর্ড (বিশ্ববিদ্যালয়) পজিট্রন-ইলেক্ট্রন ত্বরণ চক্র ব্যবহার করে একটি অত্যন্ত ভারী কণিকা উৎপন্ন করলেন। এটি প্রোটনের চেয়ে তিন গুণ বেশি ভারী। এই ধরনের আকারের একটি কণিকা একটি সেকেন্ডের ক্ষুদ্রতম ভগ্নাংশের মধ্যে ভেঙে যাওয়ার কথা, কিন্তু এটি ভাঙল না, ঝুলে রইল। তাই, এর মধ্যে একটি নতুন ধরনের কোয়ার্ক থাকার কথা কেননা, ং কোয়ার্কের মতোই (তবে ং কোয়ার্কের চেয়ে অনেক ভারী) সবল মিথষ্ক্রিয়া মাধ্যমে এর ভাঙন ঘটে না।
নতুন কণিকাটির নাম দেওয়া হলো পযধৎসবফ কণিকা (ঈযধৎসবফ = মন্ত্রমুদ্ধ) কেননা এটি দীর্ঘসময় টিকে ছিল এবং সম্ভবত এতে একটি চার্মড কোয়ার্ক বা প কোয়ার্ক অন্তর্ভূক্ত, যা হচ্ছে সেই চতুর্থ কোয়ার্ক যেটি শুইঙ্গার খুঁজছিলেন। এটি অন্য তিনটি কোয়ার্কের চেয়ে অনেক ভারী। ব্রুকহ্যাভেনে একই সময় একই ধরনের কাজ শেষ করে একই উপসংহারে এসে পৌঁছেছিলেন আমেরিকান পদার্থবিদ স্যামুয়েল চাও শুং টিং (জন্ম: ১৯৩৬)। ফলস্বরূপ রিখটার এবং টিং ১৯৭৬ সালে নোবেল পুরস্কার ভাগাভাগি করে নিলেন।
তবে এই সময়ের মধ্যে একটি তৃতীয় স্বাদের লেপটন আবিষ্কৃত হলো যা হচ্ছে টাউয়ন এবং তার টাউয়ন নিউট্রিনো (এবং এর প্রতিকণিকা)। এ থেকে কি বোঝা যায় তৃতীয় স্বাদের আরেক জোড়া কোয়ার্কের অস্তিত্ব থাকবে?
সত্যিই ১৯৭৮ সালে পঞ্চম একটি কণিকা আবিষ্কৃত হলো, যার নাম দেওয়া হলো বটম (নড়ঃঃড়স) কোয়ার্ক বা ন কোয়ার্ক। ষষ্ঠ একটি কোয়ার্ক অবশ্যই থাকবে যাকে বিজ্ঞানীরা টপ (ঃড়ঢ়) কোয়ার্ক বা ঃ কোয়ার্ক বলে ডাকেন, কিন্তু এটি এখনো সনাক্ত হয়নি, সম্ভবত এটি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ভারী বলে। (কিছু বিজ্ঞানী ন এবং ঃ দ্বারা “নবধঁঃু” এবং “ঃৎঁঃয” ধরে নিতে পছন্দ করেন।)