৩: মহাবিশ্বের সূচনা
বর্তমানে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। এটি উন্মুক্ত বা আবদ্ধ যাই হোক না কেন, এই মুহূর্তে এটি সম্প্রসারিত হচ্ছে। তার মানে হচ্ছে, এটি এখনকার চেয়ে গত বছর আরো ছোট ছিল এবং তার আগের বছর তার চেয়েও ছোট ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমরা যদি ভবিষ্যতের দিকে তাকাই, তাহলে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণশীলতার এই সমাপ্তিহীনতা অনুভব করা যায় এবং মনে করা যায়, এটি হয়তো চিরতরে সম্প্রসারিত হতেই থাকবে। তবে, আমরা যদি অতীতে যেতে থাকি তাহলে সমাপ্তিহীনতার সুযোগ থাকে না। মহাবিশ্ব এই ক্ষেত্রে ক্রমশঃ ছোট থেকে ছোট পাওয়া যাবে এবং সুদূর অতীতের কোনো এক সময়ে একে একটি ক্ষুদ্রতম আকৃতিতে দেখা যাবে।
এই বিষয়টি যিনি প্রথমবারের মতো তুলে ধরেছিলেন, তিনি হচ্ছেন বেলজিয়ান জ্যোতির্বিদ আব্বে জর্জেস হেনরি লেমাইটার (১৮৯৪-১৯৬৬)। ১৯২৭ সালে তিনি প্রস্তাব দিলেন যে, সময়ের পেছন ফিরে তাকালে এমন একটি সময় পাওয়া যাবে, যখন মহাবিশ্বের যাবতীয় ভর ও শক্তি আক্ষরিতভাবে দলিত অবস্থায় একটি অতিমাত্রায় ঘন বস্তু হিসেবে বিদ্যমান ছিল। এই অবস্থায় এই বস্তুটি এমন প্রলয়ঙ্কারী আর ধ্বংসাত্মক উপায়ে বিস্ফোরিত হয়েছিল যা আমরা একটি সমগ্র মহাবিশ্বের আকারের জন্য কেবল কল্পনাই করতে পারি। এই বিস্ফোরণের প্রভাব এখনো আমাদের উপর পড়ছে যা আমরা সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব হিসেবে পর্যবেক্ষণ করি। রাশিয়ান-আমেরিকান পদার্থবিদ জর্জ গ্যামো (১৯০৪-১৯৬৮) একে বিগ ব্যাং (বৃহৎবিস্ফোরণ) হিসেবে ডাকলেন এবং সেই থেকে এই নামটি জড়িয়ে গেল।
বিগব্যাং মডেল অনুযায়ী আধুনিক মহাবিশ্ব একটি অত্যন্ত ঘনীভূত ও উত্তপ্ত অবস্থা থেকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। উপরের অক্ষ বরাবর সময় (ঃ) নির্দেশিত হচ্ছে।
স্বাভাবিকভাবেই বিগ ব্যাং এর ধারণার প্রতি কিছু বাধা তৈরি হলো। একটি সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব ব্যাখ্যার জন্য এর পাশাপাশি অন্যান্য ব্যাখ্যাও অগ্রবর্তী হয়েছিল। ১৯৬৪ সালের আগে এই বিষয়টির মীমাংসা হয়নি যতদিন না জার্মান-আমেরিকান পদার্থবিদ আর্নো অ্যালান পেনজিয়াস (জন্ম ১৯৩৩) এবং পদার্থবিদ রবার্ট উড্রো উইলসন (জন্ম: ১৯৩৬) আকাশ হতে নিঃসৃত বেতার তরঙ্গের বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
আকাশের যেদিকেই তাকিয়েছেন, তাঁরা যদি যথেষ্ট চিরে দেখেন তাহলে সর্বত্রই বিকিরণ সনাক্ত করতে পেরেছিলেন যা এত শত কোটি বছর ধরে ভ্রমণ করছে যে এগুলো বিগ ব্যাঙ-এর সময় সৃষ্টি না হয়েই যায় না, যদি সত্যি বিগ ব্যাং হয়ে থাকে। তাঁরা আকাশের সব জায়গা থেকেই সমান ও ক্ষীণ বেতার তরঙ্গের পটভূমি খুঁজে পেয়েছিলেন যা বিগ ব্যাং এর দূরবর্তী ‘প্রতিধ্বনি’ ইঙ্গিত করে। পদার্থবিদগণ এই বিষয়টিকে বিগ ব্যাং প্রতিষ্ঠার জন্য গ্রহণ করলেন এবং তাঁদের কাজের জন্য পেনজিয়াস এবং উইলসন ১৯৭৮ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করলেন।
তবে অবশ্যই, বিগ ব্যাং তত্ত্বের সমস্যাও আছে। যেমন, কখন এই ঘটনা ঘটল? এটি জানার একটি উপায় হচ্ছে মহাবিশ্বের বর্তমান সম্প্রসারণের হার নির্ণয় করা এবং এখান থেকে বের করা, এই হারে সম্প্রসারিত হলে অতীতে তা কখন পুঞ্জীভূত ও ঘনীভূত ছিল। বিষয়টি করার চেয়ে বলা অনেক অনেক বেশি সহজ। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ অনেকভাবেই নির্ণয় করা যায়। একটি পদ্ধতিতে সবচেয়ে পুরোনো নক্ষত্রের বয়স নির্ণয় করা যায় এবং অন্যক্ষেত্রে আমাদের নিকট দৃশ্যমান সবচেয়ে দূরবর্তী বস্তুগুলোর দূরত্ব নির্ণয় করা যায় (এবং এর মাধ্যমে সেগুলো হতে আগত বিকিরণের সময় নির্ণয় করা যায়)।
এই যুগেও জ্যোতির্বিদগণ বিগ ব্যাং এর দূরবর্তী ‘প্রতিধ্বনি’ শুনতে পান। এই ফলাফলগুলো পরস্পরবিরোধী প্রবণতা দেখায় এবং বিগ ব্যাং এর অনুমিত ফল ১০ বিলিয়ন থেকে ২০ বিলিয়ন বছর পূর্বে পর্যন্ত পাওয়া যায়। সাধারণত, লোকজন এই পার্থক্যের মাঝামাঝি একটি সময় বেছে নেয়, এবং ধরে নেয় এই মহাবিশ্ব বর্তমান সময়ের ১৫ বিলিয়ন বছর আগে উদ্ভব ঘটেছে, কিন্তু আমার ধারণা, প্রকৃত সত্যতা ২০ বিলিয়ন বছরের কাছাকাছি।
এখানে আরো সূক্ষ্ম সমস্যাও আছে। পেনজিয়াস এবং উইলসন যেই বেতার তরঙ্গ পটভূমি সনাক্ত করেছিলেন তা আকাশের সবদিকের জন্য অতিমাত্রায় সুষম, এবং তা মহাবিশ্বের একটি সার্বিক (গড়) তাপমাত্রা পরমশূন্যের তিন ডিগ্রি উপরে নির্দেশ করে। এটি ধন্দময়, কেননা যদি তাপমাত্রা সুষম হতে হয়, তাহলে বস্তুসমূহের মধ্যে সাধারণত কিছুটা সংযোগ থাকতে হয় যাতে তারা সহজে বিভিন্ন অংশের মধ্যে তাপের আদান-প্রদানের মাধ্যমে সুষম অবস্থা তৈরি করতে পারে। কিন্তু এটি সম্ভব নয়, কারণ কিছু কিছু বস্তু পরস্পর হতে এতোই দূরে অবস্থান করে যে, আলো যদি এদের এক বস্তু থেকে অপর বস্তুতে গমন করতে হয় তাহলে যে সময় লাগবে তা মহাবিশ্বের বয়সের চেয়ে বেশি হবে। কোনো কিছুই আলোর বেশি বেগে ভ্রমণ করতে পারে না, তাহলে তাপমাত্রার এই সুষম অবস্থার জন্য দায়ি কে? অন্যকথায়, মহাবিশ্ব এতো মসৃণ হলো কীভাবে?
আরেকটি সমস্যা ঠিক এর উল্টো। যদি মহাবিশ্ব সুষমই হয়, তাহলে এর
সুষমতা বজায় নেই কেন? কেন এটি বৈশিষ্ট্যহীন সাব-অ্যাটমিক কণিকার ফেনা নয়, এবং বিরামহীন ভাবে সম্প্রসারণশীল? কেন কণিকাগুলো বিশাল টুকরোয় ঘনীভূত হয়ে গ্যালাক্সিগুচ্ছ তৈরি করে এবং গ্যালাক্সিসমূহ ঘনীভূত হয়ে একক নক্ষত্র তৈরি করে? অন্যভাষায়, কেন মহাবিশ্ব কিছু দিক দিয়ে এতো মসৃণ আর কিছু দিক দিয়ে এতো কর্কশ?
এর বাইরে আরো অনেক সমস্যাই আছে, কিন্তু সবকিছুই। এর বয়স, এর মসৃণতা, এর কর্কশতা ইত্যাদি। কেবল মাত্র মহাবিশ্বের একেবারে শুরুর প্রকান্ড বিস্ফোরণের ঠিক প্রথম ক্ষণের উপর নির্ভর করে। স্বাভাবিকভাবেই, সেটি দেখার জন্য তখন কেউ উপস্থিত ছিল না, তবে বিজ্ঞানীরা এর কার্যকারণ বের করার জন্য বর্তমান অবস্থার মহাবিশ্ব থেকে জানা এবং সাব-অ্যাটমিক কণিকা থেকে অর্জন করা জ্ঞান কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন।
এভাবেই, তাঁরা ধরে নেন, যতই সময়ের পেছনের দিকে যাওয়া যায় এবং বিগ ব্যাং এর নিকট থেকে নিকটতর হওয়া যায়, ততোই তাপমাত্রা অধিক থেকে অধিকতর হতে থাকে এবং শক্তি ঘনত্বও বিশাল থেকে বিশালতর হতে থাকে। বিজ্ঞানীরা অনুভব করেন, তাঁরা বিগব্যাং এর ১০-৪৫ সেকেন্ড (এক সেকেন্ডের বিলিয়নের ট্রিলিয়নের ট্রিলিয়নের ট্রিলিয়ন ভাগের একভাগ) সময়ের ব্যাপারে কিছু বলতে পারবেন না। এই স্বল্প সময়ে মহাবিশ্বের অবস্থা এতোই চরমভাবাপন্ন ছিল যে, সময় এবং স্থানের ধারণা অর্থহীন হয়ে পড়ে।
তবে, মহাবিশ্ব এক সেকেন্ডের অতি অতি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশের মধ্যে শীতল হয়ে যায়। শুরুতে এটি কেবল কোয়ার্কের একটি মহাসমুদ্র ছিল যারা মুক্তভাবে বিরাজ করতে পেরেছিল। কারণ সেই সময় আর কিছুই বিদ্যমান থাকতে পারত না এবং তাদের শক্তি এত বেশি ছিল যে তারা পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে স্থিতিশীল হওয়ার সুযোগ পায়নি।
মহাবিশ্বের বয়স যখন এক সেকেন্ডের মিলিয়ন ভাগের একভাগ হলো তখন বড় কোয়ার্ক গুলো ভেঙে বর্তমান সময়ে প্রাপ্ত কোয়ার্ক এবং লেপটনে পরিণত হলো। এবং সেই কোয়ার্কগুলো ব্যারিয়ন এবং মেসন তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করার মতো শীতল হলো। এর পরে আর মুক্ত কোয়ার্কের অস্তিত্ব রইল না। শুরুতে প্রযুক্ত একটি মাত্র মিথষ্ক্রিয়া, আমাদের বর্তমানে পরিচিত চার ধরনের মিথষ্ক্রিয়ায় বিভাজিত হলো। যখন মহাবিশ্বের ১ সেকেন্ড বয়স, তখন নিউট্রিনোগুলো অন্যান্য কণিকার সাথে মিথষ্ক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়ার মতো যথেষ্ট পাতলা হলো। তারা বাকি মহাবিশ্বের প্রতি উদাসীন হওয়ার মতো স্বাধীন হলো এবং তারপর থেকে সেই আচরণ চালিয়ে গেল। মহাবিশ্বের বয়স যখন তিন মিনিটে পৌঁছালো তখন সবচেয়ে সরলাকৃতির নিউক্লিয়াসগুলো তৈরি হতে শুরু করল।
এক লক্ষ বছর পরে ইলেক্ট্রন নিউক্লিয়াসকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করল ফলে পরমাণু সৃষ্টি হলো। তারপর পদার্থসমূহ ঘনীভূত হয়ে গ্যালাক্সি এবং নক্ষত্রে পরিণত হতে লাগল এবং মহাবিশ্ব বর্তমান সময়ের আকৃতি লাভ করতে শুরু করল।
তবে, তারপরও বিজ্ঞানীরা ঠিক শূন্য সময়ের ঘটনা নিয়ে ভাবনা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারেননি, তা ঘটেছে বিগ ব্যাং এর প্রকৃত শুরু এবং ১০-৪৫ সেকেন্ড সময়ের সীমায়। মহাজাগতিক ডিম্বের বস্তুরগুলোর উৎপত্তি কোথায়?
যদি আমরা মহাজাগতিক ডিম্বের উদ্ভবের আগের পরিস্থিতি বিবেচনা করতে চাই তাহলে শূন্যতার একটি অসীমাবদ্ধ মহাসাগর কল্পনা করতে পারি। যদিও স্পষ্টতই এটি প্রকৃত অবস্থার বর্ণনা নয়। সেই মহাশূন্যতায় শক্তি বিদ্যমান ছিল। এটি পুরোপুরি শূন্য মাধ্যম নয় কেননা সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি শূন্য মাধ্যমে কিছুই থাকবে না। তবে প্রাক-মহাবিশ্বে শক্তির উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও আমরা এটিকে আপাত শূন্য মাধ্যম হিসেবে ধরে নিতে পারি। এই আপাত শূন্যমাধ্যমে কোনো বিক্ষিপ্ত পরিবর্তনের দরুন উদ্ভুত অজানা বলে ও অজানা কারণে শক্তি দলা পাকিয়ে ও ঘনীভূত হয়ে একটি ক্ষুদ্র পদার্থের বিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, আমরা এই সীমা নির্ধারণের অযোগ্য, আপাত শূন্য মাধ্যমকে যত্রতত্র ভাসমান পদার্থের ফেনার মত ধরে নিতে পারি, যেমন ফেনা তৈরি হয় পৃথিবীতে সমুদ্র স্রোতের মাধ্যমে।
এই ধরনের পদার্থের কণা হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে উধাও হয়ে যায় এবং আপাত শূন্যস্থান তৈরি করে ফেলে যেখান থেকে তাদের উৎপত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু কণা হয়তো আকারে যথেষ্ট বড় হয় এবং তারা বিশেষ অবস্থায় তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে যায় যার ফলে একটি মহাবিশ্বের উদ্ভব এবং সম্ভাব্য কয়েক বিলিয়ন বছরের জন্য টিকে যাওয়া নিশ্চিত হয়।
তাহলে, আমরা হয়তো অসীম সংখ্যক মহাবিশ্বের একটিতে বসবাস করছি যেগুলো বিভিন্ন ধাপের বিকাশমান অবস্থায় আছে এবং প্রকৃতির সূত্রগুলো প্রত্যেকটিতে আলাদাভাবে কাজ করে। অবশ্য অন্য মহাবিশ্বের সাথে যোগাযোগের একেবারেই কোনো উপায় নেই এবং আমরা আমাদের মহাবিশ্বে আবদ্ধ, যেমনটি কোয়ার্ক আবদ্ধ হেড্রনের মধ্যে। তবে এতে আমাদের আতঙ্কের মহামারী ছড়ানোর প্রয়োজন নেই। আমাদের মহাবিশ্ব নিজেই যথেষ্ট বিশালায়তনের এবং সবদিক থেকেই ধন্দময়।
মহাবিশ্বের সূচনার এই দর্শনের মাধ্যমে ১৯৮০ সালে আমেরিকান পদার্থবিদ অ্যালান গুথ (অষধহ এঁঃয) প্রস্তাব দিলেন, মহাবিশ্বের একেবারে প্রাথমিক ধাপে একটি তাৎক্ষণিক “স্ফীতকরণ” পর্যায় ছিল। এই চিত্রটি স্ফীত মহাবিশ্ব হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
স্ফীতকরণ দশাটি কতক্ষণ বজায় ছিল বা এই স্ফীতি কত ব্যাপক ছিল তা করায়ত্ব করা খুবই মুশকিল। স্ফীতকরণ শুরু হয় ১০-৩৫ সেকেন্ড (এক সেকেন্ডের দশ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ভাগের একভাগ) সময়ে এবং পরবর্তী প্রতি ১০-৩৫ সেকেন্ডে এর আকার দ্বিগুণ হয়ে যায়। হাজার খানেকবার দ্বিগুণ হওয়ার পর (বিগ ব্যাং এর মাত্র ১০-৩২ সেকেন্ড পর), স্ফীতকরণ থেমে যায়। এই সময়ের ব্যাবধান এরই মধ্যে মহাবিশ্বের আয়তনে ১০৫০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। স্ফীতকরণের আগের চেয়ে এর আয়তন একশ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গুণ বাড়িয়ে এই পর্যায়টি সমাপ্ত হয়। তাছাড়া আয়তন বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি আরো অনেকটুকু আপাত শূন্যমাধ্যম এবং তার শক্তি গ্রাস করে যার ফলে তার ভরও প্রকান্ডরূপে বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে দেখানো যায়, এই রকম একটি তাৎক্ষণিক স্ফীতকরণের ফলে মহাবিশ্ব মসৃণ এবং প্রায় সমতল হয় এবং এর ফলে এটির ভরের ঘনত্ব, একটি খোলা এবং আবদ্ধ মহাবিশ্বের মাঝামাঝি হতে পারে।
গুথের স্ফীত মহাবিশ্ব বর্তমান সময়ের বিদ্যমান মহাবিশ্বের সবকিছু ব্যাখ্যা করে না। বিজ্ঞানীরা এটিকে পরিমার্জিত করার জন্য কাজ করছেন যাতে আমাদেরকে ঘিরে রাখা বিষয়ের বিশেষ করে গ্যালাক্সির উদ্ভবের একটি উন্নত চিত্র পেতে পারেন।
এই কাজটি করতে হলে আরো একটি একীভবনের প্রয়োজন। শুধু সবল এবং তড়িৎ-দুর্বল বল একই ছাতার নিচে আসলেই হবে না, মহাকর্ষকেও এর নিচে আনতে হবে। মহাকর্ষ এখন পর্যন্ত এই ধরনের যেকোনো উদ্যোগকে বাধা দিয়েছে, তবে বিজ্ঞানীরা ইদানিং সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব নামের একটি বিষয় নিয়ে কাজ করছেন যাকে ‘সর্বময় তত্ত্ব’ ও বলা হয়।
সর্বময় তত্ত্বের খসড়া
শুধু ব্যরিয়ন এবং লেপটনকে একত্রিত করেই মৌলিক কিছু তৈরির উদাহরণ দেওয়া যায় না বরং ফার্মিয়ন এবং বোসনগুলোকেও একীভূত করে আরো মৌলিক কিছুর উদাহরণ তৈরির বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। নতুন একগুচ্ছ কণিকার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে যেখানে নতুন ফার্মিয়নসমূহ বোসনের সাথে এবং বোসনসমূহ ফার্মিয়নের সাথে তুলনীয়।
এখনো এমন একটি স্বপ্ন বিদ্যমান আছে যাতে একগুচ্ছ সমীকরণ মহাবিশ্বের যাবতীয় বিদ্যমান কণিকাগুলোকে ব্যাখ্যা করবে এবং তাদের ঘিরে সবরকম মিথষ্ক্রিয়াও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটি এই মহাবিশ্বের একটি যথাযথ চিত্র প্রণয়নের জন্য দরকার যা এক ধরনের কণিকা এবং এক ধরনের মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে সূচনা হয়েছে। একটি কণিকা যা ক্রমশ শীতল হয়ে এবং নিজেকে বিভাজিত করে আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায় বিপুল পরিমাণ বৈচিত্র্য তৈরি করেছে।
আর এর সবকিছুর সূচনা হয়েছিল কিছু প্রাচীন মানুষের মাধ্যমে যারা প্রশ্ন করেছিল আমরা পদার্থকে কতদূর পর্যন্ত ভাগ করতে পারি। এখান থেকেই সঠিক প্রশ্ন করার মাধ্যমে প্রাপ্ত ধারণার ব্যাপকতা অনুভব করা যায়।