Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বডিলাইনের ব্যবচ্ছেদ: সপ্তম পর্ব

সিডনিতে সিরিজের শেষ টেস্ট শুরু হয়েছিল এক সপ্তাহ ব্যবধানে। অবশ্য দুই ম্যাচের চরিত্রে ব্যবধান ছিল সামান্যই। আরও একবার টস জিতেছিলেন উডফুল, আবারও প্রথম ইনিংসে বড় রানের পরে ধস নেমেছিল অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে। আবারও প্রথম ইনিংসে এমসিসি জবাব দিয়েছিল সামান্য এগিয়ে থেকে, শেষমেশ জয় পেয়েছিল আট উইকেট বাকি থাকতে।

শেষ টেস্টের অস্ট্রেলিয়া দল; Image source: Bodyline Autopsy

তা এরপরেও কিছু পার্থক্য তো থাকেই। অ্যাডিলেডে পাওয়া কনকাশন কাটিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন ওল্ডফিল্ড, প্রথম ইনিংসে করেছিলেন অর্ধশতকও। ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে সেরে ফিরেছিলেন ভোসও, তাকে জায়গা করে দিতে সিরিজে মাত্র এক টেস্ট খেলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল টমি মিশেলকে। গুঞ্জন আছে, জার্ডিন নাকি তার কাঁধে দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছিলেন দ্বাদশ খেলোয়াড় হবার পরেও। সই-শিকারি রূপে অস্ট্রেলিয়া ড্রেসিংরুমে গিয়ে ভেতরের খবর এনে দেবার দায়িত্ব ছিল তার।

আগের ম্যাচেই যেখানে উদ্বোধনী জুটিতে অস্ট্রেলিয়া পেয়েছিল শতরান, এবারে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নিচে রিচার্ডসন গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন ম্যাচের পঞ্চম বলেই। ঘণ্টাখানেক ডাক করে আর সরে গিয়ে বহু কষ্টে-সৃষ্টে ১৪ রান করেছিলেন উডফুল। ফিল্ডিং করতে করতে সাটক্লিফ যে ইনিংসটি দেখেছিলেন এভাবে:

“He (Woodfull) went down on his hands and knees to allow the ball to go over the top. He was hit on the backside a number of times and we appealed for lbw!”

পুরো সিরিজে ঘুমিয়ে থাকবার পরে সিডনিতে এসে আবারও নিদ্রাভঙ্গ হয়েছিল ম্যাককেবের, প্রথম টেস্টের স্মৃতি মনে করিয়ে খেলেছিলেন বিজলি-উজল ঝলকের আরেক ইনিংস, এবারে অবশ্য থেমেছিলেন ৭৩ করে। সিরিজে এর আগ পর্যন্ত এমসিসির ক্রিকেটাররা ক্যাচ ফেলেছিলেন মাত্র একটি, এ ম্যাচে তারা ক্যাচ ফেলেছিলেন মেলা। এমনকি ক্যাচ পড়বার আধিক্য দেখে ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার’ ম্যাচটিকে তৃতীয় শ্রেণির বলে আখ্যা দিতেও দ্বিধা করেনি। প্রথম দিন মধ্যাহ্ন-বিরতিতেই জার্ডিন খেলোয়াড়দের ডেকে কথা বলেছিলেন ক্যাচ ছাড়ার পরিমাণ, খেলায় মনোযোগ ফেরানো নিয়ে। লাঞ্চের পরে সেই জার্ডিনও যখন ফেলেছিলেন ক্যাচ, কিছু ক্রিকেটার আর হাসি চেপে রাখতে পারেননি।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডজনখানেক টেস্ট খেলে ফেললেও ঘরের মাঠে এটিই ছিল ব্র্যাডম্যানের প্রথম টেস্ট। সমস্ত আত্মীয়-পরিজনদের হতাশায় ফেলে তার সাত চারের প্রথম ইনিংস থেমেছিল ৪৮ রানে, সেই ৪৮ রানের ইনিংস দেখেও অবশ্য খুব একটা বিনোদিত হবার উপায় ছিল না। লারউডকে কাট-ফ্লিক করে চার মারলেও, অ্যালেনের দুই ওভারে ২১ রান তুললেও হবসের চোখে সে ইনিংসে প্রাণ ছিল না। ব্রিসবেনের সত্তরোর্ধ্ব রানের ইনিংসটি সিডনিতে তিনি খেলেছিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে। উল্টেপাল্টে গিয়েছিল লেন ডার্লিংয়ের ইনিংসও। ব্রিসবেনে দলীয় সর্বোচ্চ করেছিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে, এবারে ৮৫ করেছিলেন প্রথম ইনিংসেই। সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ৪০০ ছাড়িয়েছিল প্রথমবারের মতো, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্কোরবোর্ডে তারা রান তুলেছিল ৪৩৫।

এ যেন দেবী দুর্গার সঙ্গে শুম্ভ-নিশুম্ভর যুদ্ধ, অবশ্য এখানে শুম্ভ-নিশুম্ভ জিতেছিল; Image source: Bodyline Autopsy

বোলিংয়ে লারউড ছিলেন বরাবরের মতোই ধারাবাহিক। যেন মরসুমের প্রথম ম্যাচ খেলেতে নেমেছেন, এমন ভঙ্গিমায় লারউড গতির ঝড় তুলেছিলেন সিডনির শেষ টেস্টেও। সিরিজের পাঁচ নম্বর টেস্টে এসেও এক পর্যায়ে লারউড বল করেছিলেন ১৪ রানে ৩ উইকেট ফিগার নিয়ে। বডিলাইন বোলিংয়ের পরিমাণ হয়তো বা কমে এসেছিল, কিন্তু বডিলাইন তো তবুও ছিল। ব্র্যাডম্যানের বিপক্ষে টানা চার ওভার লেগ-ফিল্ড নিয়ে বল করেছিলেন লারউড, ইতিহাসে লেখা রয়েছে এমন কিছুই। ব্র্যাডম্যানকে ফেরাতে ব্যাধ হতে হয়েছিল তাকেই, ভোসের ৬-৩ লেগ-ফিল্ডকে ব্র্যাডম্যান স্বাচ্ছন্দ্যে কাটিয়ে দিলেও পারেননি লারউডকে আটকাতে। নিজের ইনিংসের ৫৬তম বলটিতে অফ সাইডে সরে গিয়ে লেগ-স্ট্যাম্প খুলে দিয়েছিলেন লারউডের সামনে, ফাঁকা লেগ-স্ট্যাম্প নাড়িয়ে দিতে লারউডের বলে যথেষ্টই গতি ছিল।

কিন্তু প্রতিনিয়ত ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভেতর দিয়ে যেতে যেতে ভেতরটা যে পুড়ে খাঁক হয়ে যাচ্ছিল, তা বুঝতে পারছিলেন কেবল লারউডই। অ্যাশেজ যেহেতু জেতাই হয়ে গিয়েছিল, তাই সিডনি টেস্ট থেকে লারউড চেয়েছিলেন নিষ্কৃতি। আকুতির জবাবে জার্ডিনের উত্তরে ফুটে উঠেছিল নিজের স্বভাবজাত অস্ট্রেলিয়া-বৈরিতা,

“আমরা তাদের ডুবিয়ে দিয়েছি। আর তাদের সেখানেই রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।”

অধিনায়কত্বের নামে স্বৈরশাসন জার্ডিন চালিয়েছিলেন সে ম্যাচে আরও একবার, নির্যাতিত হয়েছিলেন যথারীতি লারউড। প্রথম ইনিংসে প্রায় ৩৩ ওভার বল করে তিনি চাইছিলেন অখণ্ড বিশ্রাম, নিজেদের ইনিংসের শুরুতে দীর্ঘ শাওয়ার নিয়ে লারউড মাত্রই বেরিয়েছিলেন গোসলখানা করে। স্কোরবোর্ডে ১৫৩ তুলে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরত এসেছিলেন সাটক্লিফ। দিনের আলো প্রায় মরে এসেছে, নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ভেরিটিকে পাঠানো হবে বলেই ছিল সকলের অনুমান। সব অনুমান মিথ্যে প্রমাণ করে জার্ডিন পাঠিয়েছিলেন লারউডকে, ভেতরে ক্ষোভের অনল জ্বললেও লারউড তা মানতে বাধ্য ছিলেন। লারউডকে আগে পাঠানোর কারণ যে দ্বিতীয় ইনিংসে বল করার আগে তাকে কিছু বাড়তি সময় বিরতি দেয়া, জার্ডিন তাকে এই ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজনও বোধ করেননি।

মনের ভেতরের উথাল-পাতাল লারউড ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন মাঠে। প্রথম বলই সজোরে হাঁকিয়ে ছুটেছিলেন রান নিতে, অথচ বল সোজা গিয়েছিল কাভারে দাঁড়ানো ব্র্যাডম্যানের কাছে। পুরো সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার দুরবস্থার প্রতীক হিসেবে ধরা যায় এরপরের মুহূর্তকে। কিপার প্রান্তে বল পাঠালে হ্যামন্ড আউট হচ্ছিলেন নিশ্চিত, উল্টো বোলিং প্রান্তে ছুঁড়ে মেরে ব্র্যাডম্যান বানিয়ে দিয়েছিলেন চার।

ব্যাট হাতে হ্যারল্ড লারউড, চাইলে যে ব্যাটসম্যানও হতে পারতেন, তার প্রমাণ রেখেছিলেন শেষ ম্যাচে; Image source: Bodyline Autopsy

মেলায় যাবার মতো করে লারউড এলোপাথাড়ি ব্যাট চালিয়েছিলেন এরপরও, ও’রাইলির বলে বারকয়েক সমস্যায় পড়লেও রান তুলেছিলেন সমানে। ভাগ্যের খানিক ছোঁয়ার পরে ক্যারিয়ারের একমাত্র শতক প্রাপ্তি যখন হাতছানি দূরত্বে, লারউড ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন মিড-অনে। জীবনে অনেক ক্যাচ ছাড়লেও ৯৮ রানে থাকা লারউডের ক্যাচটি আয়রনমঙ্গার ধরেছিলেন।

লারউড শতক না পেলেও পেয়েছিলেন হ্যামন্ড, এমসিসি একাদশ প্রথম ইনিংস শেষ করেছিল ৪৫৪ রানে। দুই অধিনায়কের চরিত্রগত পার্থক্যের আরও এক নিদর্শন দেখা গিয়েছিল এই ইনিংসেই। উইকেট প্রাপ্তির আশায় ইনিংসের এক পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার পেসার হ্যারি অ্যালেকজান্ডার স্কয়ার লেগে চেয়েছিলেন ফিল্ডার রাখতে। উডফুল তার আবেদন নাকচ করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘বড্ড বেশি বডিলাইনের মতো হয়ে যাবে যে!’

চতুর্থ ইনিংসে এমসিসির ঘাড়ে কিছু রানের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে সান্ত্বনার জয় পাবার প্রত্যাশা ছিল অস্ট্রেলীয়দের, কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় পূরণ হয়নি সে প্রত্যাশাও। গোবরে পদ্মফুল হয়ে ফুটেছিলেন কেবল ব্র্যাডম্যান, উডফুলের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়েছিলেন ১১৫ রানের। ব্র্যাডম্যানের কল্যাণে সেদিন যেন ক্রিকেট মাঠে নেমে এসেছিলেন ফ্রেড অ্যাস্টায়ার। নিজের চটুল পায়ে পুরো গ্রীষ্মের মতোই লারউডের বোলিংয়ে লুকোচুরি খেলেছিলেন ব্র্যাডম্যান, লারউডের কোমরের ওপর করা সব বলই প্রায় এড়িয়ে গিয়েছিলেন। শেষ রক্ষা হয়নি তবুও, ব্র্যাডম্যানের হাতের ওপরের অংশ ঠিকই লারউডের বলে সিলগালা হয়েছিল।

শর্ট বলের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছেন ব্র্যাডম্যান; Image source: Bodyline Autopsy

তবে এবার আর তাকে উইকেট দেননি ব্র্যাডম্যান। দ্বিতীয় ইনিংসে লারউডের পা টানতেও কষ্ট হচ্ছিল ভীষণ, অধিনায়ককে বলেছিলেন তিনি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না মাঠে। জার্ডিনের রূঢ় সত্ত্বা বেরিয়ে এসেছিল আরেকবার। ক্রিজে তখন ব্র্যাডম্যান। সে মুহূর্তে লারউড কোনোমতেই মাঠ ছাড়তে পারবেন না, সোজা জানিয়ে দিয়েছিলেন জার্ডিন। গুরুতর পায়ের চোট নিয়েও ব্র্যাডম্যানকে বল করে গিয়েছিলেন লারউড; এক সিরিজে মরিস টেটের রেকর্ড ৩৮ শিকার পেরিয়ে যাবার বাসনাও অবশ্য ছিল ভেতরে। শেষমেশ আর পারেননি, থামতে হয়েছিল ৩৩ উইকেটেই। লারউডকে ক্লান্ত-অবসন্ন করে ব্র্যাডম্যান টিকেছিলেন ৯৭ মিনিট, মধ্যদুপুরে মায়াবী বিভ্রম জাগানো এক ইনিংসে ৬৯ বলে করেছিলেন ৭১। আউট হয়েছিলেন ভেরিটির আচমকা বাঁক খাওয়া এক বলে।

ভেরিটি যে বলে আউট করেছিলেন ব্র্যাডম্যানকে, তাকে ভেরিটি বলেছেন, ‘ধ্যানের ফল।’ বোলারদের ফুটমার্কে বল ফেললে চকিতে বাঁক নেয় বল, এ জিনিস নাকি তিনি ধ্যান করেই পেয়েছিলেন। সেই ধ্যানে পাওয়া বলেই ব্র্যাডম্যান হয়ে গিয়েছিলেন বোল্ড। আউট হবার পরের দৃশ্যটা হয়েছিল আইকনিক, ড্রেসিংরুমে ফেরত যাচ্ছেন ব্র্যাডম্যান, ধীরপায়ে তার পিছু নিয়েছেন লারউড। ব্র্যাডম্যান শেষ দেখলেন বডিলাইনের, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শেষবার দেখেছিল লারউডকে।

ব্র্যাডম্যান আউট হতেই অস্ট্রেলিয়া ভেঙে পড়েছিল তাসের ঘরের মতো। ৬৭ রানে পড়েছিল ৯ উইকেট, মোটে তিন ব্যাটসম্যান পৌঁছেছিলেন দুই অঙ্কে। ইতিহাস বইয়ের পাতায় যতই লেখা থাকুক ১৯৩২ অ্যাশেজ শেষ হয়েছে আরও একদিন বাদে, ইংল্যান্ডের ৮ উইকেটের জয়ে, বাস্তবিক অর্থে বডিলাইন সিরিজের উপসংহার লেখা হয়েছিল এই মুহূর্তেই।

***

ব্র‍্যাডম্যান আউট হবার পরে ক্রিজে এসেছিলেন লিও ও’ব্রায়েন (৫), ভোসের বলে ক্যাচ দেয়াটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা, ক্রিজে নামবার পর থেকে যাকে সবসময়ই মনে হচ্ছিল আউট। ম্যাককেব (৪) এবার আর পারেননি জাদু দেখাতে, তিন ঘণ্টার সংযমী ইনিংসে উডফুলও করতে পারেননি ৬৭-র বেশি। ব্র‍্যাডম্যানকে আউট করবার বাইরেও সেদিন ভেরিটি তুলেছিলেন আরও ৪ উইকেট। ও’রাইলি আর হ্যারি অ্যালেকজান্ডারকে পরপর দু’বলে বোল্ড আর এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সামনেও। হ্যাটট্রিকটা বোধহয় পেয়েও যেতেন, যদি না চুল পরিমাণ ব্যবধানে বলটা আয়রনমঙ্গারের স্ট্যাম্প মিস না করতো।

খানিক পরেই গাবি অ্যালেন পার্কার লির লেগ-স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলতেই নিশ্চিত হয়েছিল, ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিততে এমসিসির চাই ১৬৪ রান। এক জার্ডিন ছাড়া বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানই রানে ছিলেন বলে ইংল্যান্ডের এ রান তাড়া করা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না; তবে বহুল আলোচিত সিরিজটি নিষ্পত্তির পরেও যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল, তার হেতু ছিলেন হ্যারি ‘বুল’ অ্যালেকজান্ডার।

সিরিজে ভিক্টোরিয়ার ‘বুল’ খেলেছিলেন একটিমাত্রই ম্যাচ, তার টেস্ট ক্যারিয়ারই তো এক টেস্টের। ওই টেস্টেই ওয়াইটকে কানের পাশ ঘেঁষে বল তুলেছিলেন একবার, জার্ডিনকে গ্লাভসে-পেছনে বল লাগিয়েছিলেন কয়েকবার। ওই আঘাত করা পরযন্তই অবশ্য সার, ১১ ওভার বল করেও কোনো উইকেট পাননি হ্যারি, ২ উইকেট হারিয়ে ৭২তম ওভারে ইংল্যান্ড পৌঁছে গিয়েছিল জয়ের বন্দরে। তবে প্রশ্নের সিরিজে প্রশ্ন গজিয়েছিল হ্যারি অ্যালেকজান্ডারকে ঘিরেও, যদি ‘বুল’ গোটা সিরিজটাতেই খেলতেন, জার্ডিন কি একই দমে বডিলাইন বোলিং চালাবার সাহস করতেন?

***

কিন্তু ওই প্রশ্নের উত্তর মেলা তো আর সম্ভব ছিল না, প্রশ্নের উত্তর করতে গিয়ে বিলেতে উৎসবও আটকে ছিল না। সেন্ট জন্স উডের ডাকবাক্সে অভিনন্দনপত্র জমা হচ্ছিল ব্রিসবেন টেস্টের পর থেকেই। উষ্ণ অভ্যর্থনা পাচ্ছিলেন সফররত ক্রিকেটাররাও। ব্রিসবেনের নগরপিতা এমসিসি বহরের মন জুগিয়ে চলবার চেষ্টা করছিলেন অ্যাডিলেড-কাণ্ডের পর থেকেই, চতুর্থ টেস্ট শেষ হবার পরে অভিনন্দন এসেছিল অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকেও। সিরিজ শুরুর মতো শেষেও ডিনারের আয়োজন করা হয়েছিল এমসিসির ক্রিকেটারদের সম্মানে, যদিও প্রথমবারের মতো অতটা স্ফূর্তি ছিল না সে আয়োজনে। ওদিকে বিলেতে চলছিল বিজয়ীদের বরণ করে নেবার প্রস্তুতি, দেশে ফেরবার পরে সংবর্ধনা পেয়েছিলেন সবাই। প্রতি স্টেশনেই হাজির ছিলেন সমর্থকেরা, হর্ষধ্বনিতে স্বাগত জানিয়েছিলেন বীরদের। এত চিঠি, টেলিগ্রাম চালাচালির মধ্যেও এমসিসির কর্তাদের মিষ্টভাষিতায় অবাক হয়েছিলেন জার্ডিনও।

জার্ডিন উপহার পেয়েছিলেন সতীর্থদের কাছ থেকেও; Image source: Getty Images 

এমসিসির ক্রিকেটারদের এমন অভ্যর্থনা পেতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল বেশ, অ্যাশেজ শেষ করে তাদের নামতে হয়েছিল আরও নিচে। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া দলগুলোর সঙ্গে প্রথম শ্রেণির ম্যাচের ফিরতি পর্ব খেলে যেতে হয়েছিল নিউ জিল্যান্ডে, সেখানে খেলতে হয়েছিল দুই টেস্টের সিরিজ। লারউড আর পতৌদি অবশ্য মুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন মিশন থেকে। পতৌদির ছিল পারিবারিক কারণ, আর নিউ জিল্যান্ডে বডিলাইন বোলিংয়ের কোনো ব্যাপার-স্যাপার ছিল না, পায়ে মারাত্মক জখমধারী লারউডকে আটকে রাখার কোনো চিন্তাও তাই জার্ডিন করেননি।

সফরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বডিলাইন অধ্যায় পেরোনোর পরই। ব্যাটে-বলে দারুণ লড়াই উপহার দিয়ে এমসিসি-ভিক্টোরিয়া ম্যাচ হয়েছিল টাই, বিতর্ক ছাড়া সত্যিকারের ক্রিকেটানন্দে ভেসেছিলেন এমসিজিতে মার্চের সাত তারিখে উপস্থিত হাজার দশেক দর্শক। নিউ জিল্যান্ডে এমন কোনো রোমাঞ্চকর ম্যাচ না হলেও রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতেছিলেন হ্যামন্ড। এক টেস্ট ইনিংসে সর্বোচ্চ ছয়, সাথে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের কীর্তি লিখেছিলেন নতুন করে। প্রথম টেস্টে দ্বিশতকের পরে অকল্যান্ডে করেছিলেন ৩৩৬, দুই টেস্টের সিরিজে এই ৫৬৩ গড় অস্পর্শনীয় হয়ে আছে এখনো।

এমসিসি বাড়ির পথ ধরেছিল এরপরে, এবারে অবশ্য উল্টোপথে। ফিজি, হনুলুলু, কানাডা, আমেরিকা হয়ে ক্রিকেটাররা বাড়ি এসেছিলেন মে’র ছয় তারিখে। সফর শেষ হলো।

***

কিন্তু ঘুম ভাঙলেই কি স্বপ্ন ভেঙে যায় নাকি? এতদিন নিত্যনতুন ঘটনা ঘটবার আশঙ্কায় চাপা পড়ে ছিল, এবারে অখণ্ড অবসর মেলাতে সবাই মেলে বসেছিলেন হিসেবের খেরোখাতা। কী পাওয়া গেল, কী হারালো, অঙ্ক কষতে শুরু করেছিলেন সবাই। ইংরেজ সাংবাদিকেরা যেকোনো সূত্র কাজে লাগিয়ে বের করে আনতে চাচ্ছিলেন বারো হাজার মাইল দূরে ঘটা কাণ্ডকীর্তির ভেতর-বাহির। ভেতরের খবর পাবার জন্যে বাতাসে ভাসছিল কড়কড়ে পাউন্ডের গন্ধ, সিরিজে এমসিসির স্কোরার ফার্গুসনের কাছে নাকি একতাড়া ডলার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বহু সাংবাদিক। কিন্তু ফার্গুসন মুখ খোলেননি কারও কাছেই।

বডিলাইনকে নিয়ে বইপত্র লেখা হয়েছে বিস্তর, ছবিটি একেবারেই নগণ্য নমুনা মাত্র; Image source: Bodyline Autopsy

তবে সবাই তো আর ফার্গুসন নন, একে একে মুখ খুলছিলেন অন্যেরা। প্রথম যিনি মুখ খুলেছিলেন, তার মন্তব্যই ছিল সবচেয়ে প্রার্থিত। ‘Now I can speak’, বেশ নাটকীয় ভঙ্গিমায় সূচিত রচনার শেষটা হয়েছিল বেশ ঝাঁঝালোভাবে, ‘আমার বোলিংয়ে কোনো সমস্যাই ছিল না, বরং আমি লেগ-থিওরির প্রয়োগ করেছিলেন নিখুঁতভাবে, খেলতে না পেরে অস্ট্রেলীয়রা অজুহাত খুঁজেছিল’, মে’র ৭ তারিখে এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার সবচাইতে নির্দোষ লাইন বোধকরি এটিই ছিল।

ব্র‍্যাডম্যান তাকে খেলতে ভয় পাচ্ছিলেন, উডফুল পায়ের ব্যবহারে ধীর ছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ইংল্যান্ড শিবির নিয়ে মিথ্যে গল্প ফেঁদেছিল, অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকেরা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের শুধু গালাগালই করেছিল, এসিবির কর্তাদের অর্ধেকই ক্রিকেট বলের ওজন জানে না, যে কেউ এমন দাবি তুললেই তা সাড়া ফেলতো যথেষ্ট। পাঠকদের জন্যে সংযুক্তি, কথাগুলো বেরিয়েছিল হ্যারল্ড লারউডের কলম থেকে।

বারো হাজার মাইল দূরের দুই দেশে এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া হলো দু’রকম। নিজেদের ক্রিকেটারের এমন মন্তব্যে এমসিসি পড়ে গিয়েছিল হতবুদ্ধিকর এক অবস্থায়। আর সিরিজ শেষ হবার পরে অস্ট্রেলিয়া এমনিতেই চলে এসেছিল ফ্রন্টফুটে। কেননা, সামনের অ্যাশেজ অনুষ্ঠিত হবে ইংল্যান্ডে; বডিলাইন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে কিছু করা না হলে সিরিজ বয়কট করা হবে, এমন ঐকমত্যেই পৌঁছেছিলেন এসিবির কর্তারা। লারউডের ওই মন্তব্য প্রতিবেদন বডিলাইন প্রসঙ্গে এসিবির অবস্থান করেছিল আরও শক্তিশালী। অমন আক্রমণাত্মক সব কথার পাশে আনস্পোর্টসম্যানলাইক’ শব্দটিকে যথেষ্টই মোলায়েম শোনায়।

মিডিয়ায় কাঁদা-ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছিল আরেকবার। অস্ট্রেলীয়রা ব্র‍্যাডম্যানকে বলেছিলেন মানহানির মামলা ঠুকে দিতে। ওদিকে জর্জ ডাকওয়ার্থের বরাতে  ইংল্যান্ডে বের হয়েছিল, লারউডের বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা মৃত্যুভয়ের আশঙ্কাও করেছিলেন। ক্রিকেট ছাপিয়ে বডিলাইনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল রাজনৈতিক-সামাজিক সকল ক্ষেত্রে। অস্ট্রেলিয়ানরা অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলেন বিলেতি পণ্য কিনতে। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার রপ্তানি বাণিজ্য পড়ে গিয়েছিল মুখ থুবড়ে। পঞ্চাশ বছর পরে পিছু ফিরে তাকিয়ে বিল ও’রাইলি বলেছিলেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একতাই দাঁড়িয়েছিল সংকটাপন্ন মুহূর্তে।

শিল্প-সাহিত্যের অংশ হয়ে যাওয়া বডিলাইন, কার্টুনটি এঁকেছেন আর্থার মেইলি; Image source: Bodyline Autopsy

বডিলাইন গান-কবিতা-শিল্প-সাহিত্যের অংশ হতে শুরু করেছিল সিরিজের মাঝামাঝিই। ক্রিকেটারদের সম্মানে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও পরিবেশিত হয়েছিল বডিলাইনকে কেন্দ্র করে রচিত নাটক। বডিলাইন নিয়ে প্রকাশ পাওয়া অজস্র বইয়ের প্রথমটিও প্রকাশ পেয়েছিল সিরিজের পরপরই, এমনকি এক জার্মান রাজনীতিবিদ পর্যন্ত বই লিখে ফেলেছিলেন বডিলাইন নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ায় বডিলাইনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে বানানো হয়েছিল টিভি সিরিজ। অস্ট্রেলীয়দের মাঝে বেশ সাড়া ফেললেও সেই সিরিজে সত্যের ভাগ ছিল ছিল সামান্যই।

বডিলাইন হয়ে গিয়েছিল বাণিজ্যেরও মাধ্যম। তখন তো আর পণ্যদূত হবার চল ছিল না ক্রিকেটারদের, লন্ডনের এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বডিলাইন বোলিংয়ের প্রদর্শনী দেখিয়ে কিছু বাড়তি অর্থ উপার্জন করেছিলেন লারউড। ট্যুর ফি আর ফান্ডরেইজিং থেকে পাওয়া ৩৮৮ পাউন্ড মিলিয়ে লারউডের এমনিতেই তখন পোয়াবারো। তখনো জানা যায়নি, লারউডের ভাগ্যাকাশে দুঃখের মেঘ ঘনাচ্ছে অল্প অল্প করে।

অস্ট্রেলিয়ায় বল করে করে বাম পায়ের সিসাময়েড হাড় ভেঙ্গে ফেলেছিলেন লারউড। সেবারের ইংলিশ গ্রীষ্মে তাই বল করেছিলেন মাত্র দশ ওভার।

ক্রিকেটের সবচেয়ে বিখ্যাত পা, লারউডের বাঁ পা; Image source: Bodyline Autopsy

ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিন টেস্টের সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ডে এসেছিল মে’তে। পায়ের চোটে লারউড ছিলেন না এমনিতেই, তার দোসর ভোসও হারিয়ে ফেলেছিলেন ফর্ম। জার্ডিন অধিনায়ক হিসেবে পুনর্বার মনোনয়ন পেলেও ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বডিলাইন প্রয়োগের সাধ কিংবা সাধ্য কোনোটিই তার ছিল না।

তবে ল্যারি কন্সট্যানটাইন আর মার্টিন্ডেল তো ওরকম কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। এর আগ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবগুলো টেস্টে পরাজিত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা বডিলাইন বোলিংকেই ভেবেছিল ফলাফল বদলের অব্যর্থ ঔষধ। একের পর এক খাটো লেংথের বলে এমসিসির ক্রিকেটারদের জীবন বিষিয়ে তুলেছিলেন কন্সট্যানটাইন আর মার্টিন্ডেল মিলে। গায়ে-হাত-পায়ে আঘাত পেয়ে, থুতনি কেটে হ্যামন্ড অনুরোধ করেছিলেন, ‘আমরা শুধু ক্রিকেটই খেলি, কেমন?’ সে ম্যাচে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালন করা টাইগার স্মিথ বহুকাল পরও বোধহয় ফিরে ফিরে দেখেছেন, ওভারে চার-পাঁচটি বল কেমন সাঁইসাঁই করে ব্যাটসম্যানদের ঘাড়-মাথা এড়িয়ে গিয়েছিল।

জার্ডিন অবশ্য অভিযোগ করেননি এমন বোলিংয়ে। উল্টো সমস্ত আঘাত, ব্যথা সয়ে করেছিলেন ওল্ড ট্রাফোর্ডে করেছিলেন ১২৭। লারউড-ভোস না থাকলেও টেড ক্লার্ককে দিয়ে বডিলাইনের প্রয়োগ করেছিলেন তিনিও, যদিও তা প্রভাব ফেলেছিল সামান্যই। তবে বডিলাইন বোলিংয়ের সুফল হাতেনাতে পেয়েছিল জর্জ হেডলির ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তারা পেয়েছিল জয়ের সমান এক ড্র।

তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর জার্ডিন এমন বোলিংয়ে সমস্যা না দেখলেও সমস্যা দেখেছিলেন এমসিসির কর্তাসহ বাকিরা। সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে বডিলাইনের চাক্ষুষ প্রমাণ এ ম্যাচেই প্রথম দেখেছিলেন তারা। মাসকয়েক আগে হম্বিতম্বি করা ক্রিকেট লেখকেরা, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা ‘চোখ বুজেও ওসব বল খেলতে পারবে’ দাবি করা ক্রিকেটবোদ্ধারাও চুপ মেরে গিয়েছিলেন এরপরে। সিডনি সাউদারটন (নামটি লেখায় এর আগেও পড়েছেন) ভোল পাল্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিংকে বলেছিলেন বিরক্তিকর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বডিলাইন বোলিংয়ের খবর পৌঁছে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াতেও। ডন ব্র‍্যাডম্যান কিছুটা জোর পেয়ে বলেছিলেন,

‘এমসিসির কর্তারা একবার লর্ডসের গতিময় পিচে কন্সট্যানটিনকে নামিয়ে দেখুন। বডিলাইনের স্বরূপ বুঝবেন।’  

স্ত্রীকে লেখা পত্রের বাইরে প্রথমবারের মতো বডিলাইনের বিপক্ষে কথা বলেছিলেন পেলহাম ওয়ার্নার। সাথে জাগিয়ে দিয়েছিলেন প্রশ্ন, বিরোধিতাই যখন করছেন, তবে গত অ্যাশেজে কেন জার্ডিনকে আটকাননি? মাঝে ছাইচাপা পড়া প্রশ্নটি আবার জ্বলে উঠেছিল নতুন করে, বডিলাইন বোলিং ছাড়া ইংল্যান্ড কি অ্যাশেজ জিততে পারতো?

***

বডিলাইন বোলিং সংক্রামক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সব পর্যায়ের ক্রিকেটে। যে সময়ে এসিবি-এমসিসির টেলিগ্রাম চালাচালি হচ্ছিল, সে সময়েই সিডনির মুর পার্কে মারামারি বেঁধে যাবার উপক্রম হয়েছিল বডিলাইন বোলিং নিয়ে। ডোমেইনে আধা ঘণ্টা ধরে বডিলাইন বোলিং চলবার পর ম্যাচই বাতিল করে দিতে হয়েছিল আয়োজকদের। ক্রিকেট খেলতে গিয়ে মাথায় চোট পাবার ঘটনা ঘটছিল অহরহ। সেন্টেনিয়াল পার্কের অ্যাম্বুলেন্স অফিসারদের মতে, ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বলের আঘাতে মাথায় চোট পাওয়া রোগীর সংখ্যা সে সময়ে বেড়ে গিয়েছিল চারগুণ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল, ক্লাবে ক্লাবে ভীত-সন্ত্রস্ত ব্যাটিং না করবার অনুরোধ পাঠিয়েও লাভ হচ্ছিল না কোনো।

হেলমেট পরে কাপুরুষেরা, কিন্তু বডিলাইন বোলিংয়ের সামনে ৪৪-বছর বয়সী প্যাটসি হেনড্রেনের এছাড়া আর উপায়ও ছিল না; Image source: Bodyline Autopsy

ইংল্যান্ডের মাঠেও নানা মাত্রার বডিলাইন বোলিং শুরু হয়েছিল গ্রীষ্ম থেকেই। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে এক ম্যাচের বেশি না খেললেও বডিলাইন বোলিংয়ের কলাকৌশল শিখে এসেছিলেন বোয়েস, দেশে ফিরে গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে তা প্রয়োগ করে সাফল্যও পেয়েছিলেন। অতীতে লেজের ব্যাটসম্যানদের গায়ে বল লাগানোকে দেখা হতো কাপুরুষতার পরিচায়ক রূপে, নতুন মৌসুমের শুরু থেকে বডিলাইন বোলিংয়ে টেলএন্ডাররা নাকে-মুখে ধোঁয়া দেখতে লাগলেন সমানে।

কেমব্রিজ-অক্সফোর্ডের ম্যাচ এর আগে ছিল উৎসবের উপলক্ষ, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন ফার্নেসের কল্যাণে ওই মৌসুমে তা ছড়িয়েছিল সংঘাতের বিষবাষ্প। বডিলাইনের নকশাকার আর্থার কার ভোসকে দিয়েই বডিলাইন চালিয়েছিলেন ১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে। লেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ম্যাচে হেইডন স্মিথ হেনেছিলেন পাল্টা আঘাত। প্রথমবারের মতো আক্রমণের শিকার হয়ে কার জানিয়েছিলেন, তিনি এই বোলিংয়ে ভালো কিছু খুঁজে পান না। তবে কারের দ্বিমুখিতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল মৌসুম শেষেই, এক কার বাদে সব অধিনায়কেরা ভোট দিয়েছিলেন বডিলাইনের বিপক্ষে।

বাদবাকি ব্রিটিশ পণ্যের মতো বডিলাইন রপ্তানি হয়েছিল অন্যান্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশেও। সবচেয়ে ভয়ংকর অবস্থা হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে, কালে কালে যা বেড়েছিল আরও। তবে বডিলাইনের শুরুর দিকেই মাথার খুলিতে বল লাগিয়ে প্রায় সীমানাছাড়া করবার ঘটনাও ঘটেছিল ত্রিনিদাদে, দুর্ভাগা ব্যাটসম্যান ছিলেন রোলফ গ্রান্ট।

পুরো ক্রিকেট বিশ্ব তখন এক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে, কী করলে বডিলাইন থেকে মুক্তি মিলবে?

This article is in Bangla language. This article is on the cricket's most sensational test series, 1932-33 ashes. Necessary images are attached inside.

Featured image © Getty Images

Background Image ©  Getty Images

Reference:

  1. David Frith; (2002); Bodyline autopsy: The full story of the most sensational test cricket series Australia vs England 1932-33 (1st ed.); Aurum Press Ltd, 74-77 White Lion Street, London N1 9PF; ABC Books for the Australian Broadcasting Corporation.
  1. Harold Larwood (Duncan Hamilton).Duncan Hamilton (2009); Harold Larwood (Paperback ed.); 21 Bloomsbury Square, London WC1A 2NS; Quercus.

Related Articles