ছ’বছর বয়সী সাচিকোর জন্য দিনটি অন্য আর আট-দশটা স্বাভাবিক দিনের মতোই শুরু হয়েছিল। ততদিনে তার দেশ মারাত্মক এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, ফলে ঘরে খাবার মতো তেমন কিছু ছিল না। সকাল ১১টার দিকে সে আরও চার বন্ধুর সাথে বাইরে খেলাধুলা করছিল। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, অল্প সময় পর তাদের সকলেই মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল! তারা যেখানে খেলছিল, সেখান থেকে মাত্র আধা মাইল দূরত্বে একটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল। পরবর্তী দিন, এবং এরপর আসতে থাকা মাসগুলোতে সাচিকো একে একে তার পরিবারের সদস্যদের চিরতরে হারিয়ে ফেললো, তার চুলগুলো ঝরে গেলো, মাঝরাতে সে চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে উঠতো। যখন সে স্কুলে যাবার মতো শারীরিক সুস্থতা অর্জন করলো, তখন দেখা দিলো আরেক বিপত্তি, স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে নিয়ে মজা করতো। তবে এত সব বাধা-বিপত্তির মাঝে দিয়ে যেতে হলেও সে বুঝতে চাইতো যে, তার জীবনে আসলে কী ঘটে গিয়েছে; মানসিক দৃঢ়তা খুঁজে বেড়াতো হেলেন কেলার, গান্ধী এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের লেখনীর মাঝে। সাচিকো ইয়াসুই এর সাথে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিস্তৃত পরিসরের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে মূল বইটির লেখিকা কারেন স্টেলসন অল্প বয়সী এক মেয়ের জীবন সংগ্রামের বাস্তব কাহিনী ফুটিয়ে তুলেছেন এই বইটিতে, যে কি না সৌভাগ্যক্রমে নাগাসাকির পারমাণবিক বোমার আঘাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল। সেই সাথে তিনি তুলে ধরেছেন সেই মেয়েটির জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের কথা, যার মাধ্যমে সে ক্রমাগত শান্তির অনুসন্ধান করে চলেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আগ্রহীদের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন এক আঙ্গিকে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুদ্ধের শেষ দিনগুলোর কথা ফুটিয়ে তুলেছেন লেখিকা কারেন স্টেলসন, সেই সাথে তুলে ধরেছেন যুদ্ধ-পরবর্তী জাপানের নানাবিধ পরিস্থিতির হৃদয়গ্রাহী বর্ণনাও।