Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতি বছর বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং করা হয়। বিভিন্ন মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে এসব তালিকা তৈরি করা হয়। ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষার পরিবেশ, গবেষণার পরিবেশ, ল্যাবরেটরি, গবেষণাপত্রের সংখ্যা, গবেষণার মান, নিজস্ব ওয়েবসাইট প্রভৃতি হচ্ছে র‍্যাংকিংয়ের ভিত্তি। একেক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে একেক বিশ্ববিদ্যালয় সেরার অবস্থানে আসে। আবার একেক বছর সেরা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একেক অবস্থানে থাকে। তবে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলোকে যে স্কেল দিয়ে যাচাই করা হোক না কেন, যে বছরেই বিবেচনা করা হোক না কেন, ঘুরেফিরে প্রথম দিকেই থাকে। এরকম কিছু বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এমআইটি, অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, ক্যালটেক, স্ট্যানফোর্ড, ক্যামব্রিজ, প্রিন্সটন প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়। এরকম সেরা ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তুলে ধরা হলো এখানে। তালিকার ক্রম সাজাতে টাইম হায়ার এডুকেশন প্রকাশিত র‍্যাংকিং ব্যবহার করা হয়েছে।

১. অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাজ্য)

source: Oxford Study Abroad

নানা দিক থেকে নানা বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো অক্সফোর্ডের চেয়ে উপরে অবস্থান করতে পারবে। কিন্তু কিছু দিক থেকে অক্সফোর্ডের অহংকার শত বছরেও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচে যাবে না। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। ১০৯৬ সালেরও আগে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব করার মতো অনেক কিছু আছে। দীর্ঘ এই সময়ে হাজার হাজার গুণীজনের জন্ম দিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। মোটা দাগে উল্লেখ করলে ইংল্যান্ডের ৪ জন রাজা, ২৫ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, ৮ জন বিদেশি রাজা, ১ জন পোপ, ১৮ জন কার্ডিনাল, ৭ জন সেইন্ট এবং প্রায় অর্ধশত নোবেল লরিয়েট এখান থেকে লেখাপড়া সম্পন্ন করেছিলেন। অস্কার ওয়াইল্ড, স্টিফেন হকিং, বিল ক্লিনটন, ইন্দিরা গান্ধী সহ অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। ২২ হাজার ছাত্র একত্রে লেখাপড়া করতে পারে এখানে। ১০০টি লাইব্রেরি মিলে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি সিস্টেম এখানেই অবস্থিত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস’ নামে একটি স্বতন্ত্র প্রকাশনাও আছে।

২. ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাজ্য)

source: Business Insider

বেশ কয়েক বছর ধরে এটি প্রথম অবস্থানে ছিল। বর্তমানে অন্যান্যরা উপরে উঠে যাওয়াতে একে কিছুটা নিচে নামতে হয়েছে। এটিও পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। এটি স্থাপিত হয়েছিল ১২০৯ সালে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতে পারে এখানে। এখান থেকে ৯০ জনেরও বেশি ব্যক্তি নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির আবাস ছিল এখানে। আইজ্যাক নিউটন, চার্লস রবার্ট ডারউইন, শ্রীনিবাস রামানুজন, জি এইচ হার্ডি, স্টিফেন হকিং, জামাল নজরুল ইসলাম সহ অনেক বিখ্যাতদের ধারণ করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এখানেও অক্সফোর্ডের মতো বিস্তৃত লাইব্রেরি সিস্টেম আছে। ক্যামব্রিজের লাইব্রেরিতে প্রায় ১৫ মিলিয়ন বই আছে

তাছাড়াও ‘ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস’ নামে স্বতন্ত্র একটি প্রকাশনা সংস্থা আছে এর। এখান থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চস্তরের বই প্রকাশ করা হয়। এখানকার গবেষণা সাময়িকীগুলোর মান অনেক ভালো এবং আন্তর্জাতিকভাবে সেরা গবেষকরা সেখানে তাদের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন।

৩. ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (যুক্তরাষ্ট্র)

source: Century 21

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘ক্যালটেক’ নামেও পরিচিত। ভালো ক্যাম্পাস, উন্নত মানের গবেষণা, গবেষণার উন্নত পরিবেশ প্রভৃতি একে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সারা বিশ্ব থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষা লাভ করতে আসে। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি, ক্যালটেক সিসমোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, ইন্টারন্যাশনাল অবজারভেটরি নেটওয়ার্ক সহ অনেক উন্নতমানের গবেষণাগার এখানে অবস্থিত। ৩৫টি নোবেল পদক, ১টি ফিল্ডস পদক, ৭১টি ন্যাশনাল মেডেল অব সায়েন্স ও ন্যাশনাল মেডেল অব টেকনোলজি পদকজয়ী সহ আরো অনেক গুণীকে ধারণ করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

৪. স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র)

source: ThingLink

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় এটি। সারা বিশ্বে অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৮৮৫ সালে। ২১টি নোবেল পুরস্কার সহ অনেক সফল উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব আছেন যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গুগলের উদ্যোক্তা ল্যারি পেইজ ও সার্গেই ব্রিন এখানে লেখাপড়া করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিও ছিলেন এখানকার ছাত্র

৫. ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (যুক্তরাষ্ট্র)

source: ThingLink

যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৮৬১ সালে গৃহযুদ্ধের দুই দিন আগে স্থাপিত হয়। অনেক র‍্যাংকিংয়ে এটি প্রথম অবস্থানে থাকে। আধুনিক ও উন্নতমানের গবেষণার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জুড়ি নেই। চিকিৎসাক্ষেত্রে বা প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কিংবা প্রকৌশল ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক গবেষণাগুলো এখানে প্রচুর হয়। ৮৫টি নোবেল, ৫৮টি ন্যাশনাল মেডেল অব সায়েন্স, ২৯টি ন্যাশনাল মেডেল অব টেকনোলজি সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদকজয়ীরা ঘুরে বেড়িয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিতে-গলিতে। পেনিসিলিনের রাসায়নিক সংশ্লেষণ, রাডারের উন্নয়ন, মৌলিক কণা কোয়ার্কের আবিস্কার, ম্যাগনেটিক কোর মেমোরি, ডিজিটাল কম্পিউটার প্রভৃতি অনেক আবিস্কার এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অলংকৃত করে আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি পৃথিবীর সেরা।

৬. হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র)

source: College Atlas

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৬৩৬ সালে। বিশ্ববিদ্যালয় তৈরিতে প্রথম দিকের দাতা জন হার্ভার্ডের নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। ১৬৩৮ সালে মারা যাবার আগে তিনি তার লাইব্রেরি এবং অর্ধেক সম্পত্তি দান করে গিয়েছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়কে। ৪৫টি নোবেল, ৪৮টি পুলিৎজার সহ অনেক মূল্যবান পদকজয়ীদের পদচারণা ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি এখানেই অবস্থিত। সাড়ে ২০ মিলিয়ন ভলিউম, ৪০০ মিলিয়ন মেন্যুস্ক্রিপ্ট, ১০ মিলিয়ন আলোকচিত্র, ১২৪ মিলিয়ন ওয়েবপেইজ আর্কাইভ, ৫.৪ টেরাবাইট ডিজিটাল আর্কাইভ সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের সংগ্রহ আছে এখানে।

৭. প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র)

source: Princeton University

এটিও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চশিক্ষার জন্য সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৭৪৬ সালে। প্রথম দিকে এর নাম ছিল কলেজ অব নিউ জার্সি। পরবর্তীতে ১৮৯৬ সালে এর নাম পরিবর্তন করে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি রাখা হয়। ছাত্রসংখ্যা খুব বেশি নয়, সব মিলিয়ে ১০ হাজারেরও কম শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে পারে একসাথে। ৪০টি নোবেল পুরস্কার, ১৭টি ন্যাশনাল মেডেল অব সায়েন্স সহ অনেক মর্যাদাপূর্ণ পুরষ্কার আছে এর অধীনে। ইতিহাসের অন্যতম সেরা শিক্ষক, বিজ্ঞানী, লেখক রিচার্ড ফাইনম্যান (পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ী) ছিলেন এখানকার ছাত্র।

৮. ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন (যুক্তরাজ্য)

source: Imperial College

যুক্তরাজ্যের অন্যতম বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান এটি। ১৫ হাজার ছাত্র ও ৮ হাজার শিক্ষক-কর্মীদের উপস্থিতিতে এখানে চলে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসা ও বাণিজ্য বিষয়ে পড়াশোনা। ১৪টি নোবেল পুরস্কার এসেছে এর মাধ্যমে। আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ছিলেন এখানকারই ছাত্র। এইচ জি ওয়েলসের মতো লেখক, রাজিব গান্ধীর মতো রাজনীতিবিদ সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব পড়াশোনা করেছেন এখানে

৯. শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র)

source: US News

১৮৯০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১৮৯২ সালে প্রথম এর ক্লাস শুরু হয়। ৮০টিরও বেশি নোবেল পদক, বিজ্ঞান ও কলা মিলিয়ে ৩০টি জাতীয় পদক, ৯টি ফিল্ডস পদক সহ অনেক সম্মানজনক পুরস্কার অর্জন করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। জেমস ওয়াটসন, পল স্যামুয়েলসন, রবার্ট লুকাস, জোসেফ ডেভিসন সহ অনেক নামকরা নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব এখানকার ছাত্র। সুব্রাহ্মণ্যম চন্দ্রশেখর, এনরিকো ফার্মি, মাইকেলসন সহ অনেক গুণী বিজ্ঞানী এখানে ছিলেন শিক্ষক হিসেবে।

১০. সুইস ফেডারেল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (সুইজারল্যান্ড)

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি এটি, ‘ফেডারেল পলিটেকনিক স্কুল’ নামে এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮৫৫ সালে। আধুনিক পদার্থবিদ্যার জনক আলবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পরবর্তীতে অধ্যাপক। এক্স-রে রশ্মির আবিস্কারক উইলহেম রনজেনের স্নাতক শিক্ষাও এই বিশ্ববিদ্যালয়েই। কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার প্রাতঃস্মরণীয় বিজ্ঞানী উলফগ্যাং পলি অধ্যাপনা করেছিলেন এখানে।

source: ethz.ch

ইউরোপের জ্ঞানের জগতে গবেষণার জন্য পথিকৃৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও চিকিৎসাশাস্ত্রে মোট ২১ জন নোবেল বিজয়ীর পদচারণায় গর্বিত হয়েছে এই ক্যাম্পাস। বিশ্বের ১২০টি দেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী এখানে ব্যস্ত থাকেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় জ্ঞানার্জনের জন্য।

আরো কিছু সেরা বিশ্ববিদ্যালয়

১১. ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া (যুক্তরাষ্ট্র)
১২. ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র)
১৩. জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র)
১৪. কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র)
১৫. ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (যুক্তরাজ্য)
১৬. ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র)
১৭. ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র)
১৮. কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র)
১৯. নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র)
২০. ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান (যুক্তরাষ্ট্র)

ফিচার ছবি- Oxbridge

Related Articles