Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্লিপ অ্যাপনিয়া: বারবার ঘুম ভেঙে যায় যে কারণে

অনেকের ঘুম আসতেই চায় না, আবার অনেকের শোয়া মাত্রই ঘুম চলে আসে। কারো কারো আবার প্রতিদিনই ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে হয়। তো যেভাবেই ঘুমান না কেন, যদি একটু পরপর ঘুম ভেঙে যায়? ঘুম ভেঙে আবার ঘুমালেন, তার একটু পর আবারো? আবার এমনও হতে পারে, আপনি সারারাত অনেক জোরে জোরে নাক ডাকেন, গোঙান, কিন্তু ঘুম ভেঙেছে এমন কিছু বুঝতেই পারেননি কিন্তু তবুও সারাদিন ঘুম ঘুম লাগে বা অবসন্নতা কাজ করে। যদি প্রতিদিন এমনটি হতে থাকে, তাহলে হতে পারে তা স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ।

প্রতিদিনই হয়তো ঘুম আসতে চায় না, বা বারবার ঘুম ভেঙে যায়; source: specialneeddigest.com

হ্যাঁ, স্লিপ অ্যাপনিয়া হলো একটি মারাত্মক ঘুমের ব্যাধি, যেটিতে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস বারবার বন্ধ হয়ে যায়, আবার শুরু হয়। এমন হতে পারে সবাই আপনাকে বলছে আপনি আরামে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলেন, কিন্তু তাও সারারাত ঘুমের পরও সকালে আপনি ক্লান্ত অনুভব করছেন। এটি মারাত্মক একটি রোগ। হেলাফেলায় হতে পারে হৃদরোগসহ নানা জটিলতা। তাই যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া খুবই জরুরি।

source: 1800cpap.com

স্লিপ অ্যাপনিয়ার ধরন

স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রধান তিনটি ধরন হতে পারে। যেমন-

১। প্রতিবন্ধক স্লিপ অ্যাপনিয়া

এ ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগী সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এতে আক্রান্ত রোগীর গ্রীবা বা কন্ঠদেশের পেশিগুলো শিথিল হয়ে যায়।

২। কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়া

দেহের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী পেশিগুলোকে যখন যথাযথ সংকেত দিতে ব্যর্থ হয়, তখনই কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়ার সৃষ্টি হয়।

৩। জটিল স্লিপ অ্যাপনিয়া

এক্ষেত্রে একইসাথে প্রতিবন্ধক স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণগুলো দেখা যায়। এক্ষেত্রে রোগীকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার আওতায় আনতে হয়।

কেন্দ্রীয় এবং প্রতিবন্ধক স্লিপ অ্যাপনিয়া; source: healthysleep.net

এই স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ, রিস্ক ফ্যাক্টর এবং কারণ সবকিছুই এই তিনটি ধরনের উপর ভিত্তি করে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু বিষয় তিনটির ক্ষেত্রেই একই রকম হয়ে থাকে।

লক্ষণসমূহ

প্রতিবন্ধক এবং কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণগুলো বেশিরভাগই একটি আরেকটির উপর সমাপতিত হয়। এর কারণে কোন ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়ায় রোগী আক্রান্ত, তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই প্রতিবন্ধক স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়ার সাধারণ লক্ষণগুলো এখানে উল্লেখ করা হলো:

  • ঘুমের মধ্যে জোরে জোরে নাক ডাকা; সাধারণত প্রতিবন্ধক স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীর ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।
  • অন্যরা লক্ষ্য করে থাকেন যে রোগীর ঘুমের মাঝে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আবার কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।
  • হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যাওয়া এবং শ্বাস নিতে না পারা; এই লক্ষণটি কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রেই বেশি হয়।
  • গলা বা মুখ শুকিয়ে যাওয়ার ফলে ঘুম ভেঙে যাওয়া।
  • প্রতিদিন সকালে মাথাব্যথা অনুভূত হওয়া।
  • ঘুমাতে অসুবিধা হওয়া (ইনসোমনিয়া)।
  • দিনের বেলা খুব বেশি ঘুমানো ( হাইপারসোমনিয়া)।
  • অমনোযোগিতা।
  • বিরক্তি কাজ করা।
  • ভুলে যাওয়া, মেজাজ পরিবর্তন হওয়া এবং যৌনতার আগ্রহ হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি।

প্রতিবন্ধক স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুমের মাঝে এত জোরে শব্দ করে নাক ডাকে যে অন্যরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে;source: dreamstime.com

কেন হয়?

জটিল স্লিপ অ্যাপনিয়া যেহেতু প্রথম দুইটি ধরনের সমন্বিত রূপ, তাই প্রতিবন্ধক স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণ জানতে পারলে জটিল স্লিপ অ্যাপনিয়া সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে।

প্রতিবন্ধক স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণ

গ্রীবার পিছনের পেশিগুলো যখন শিথিল হয়ে যায় তখন প্রতিবন্ধক স্লিপ অ্যাপনিয়া হয়ে থাকে। এই পেশিগুলোর কাজ টাকরা বা তালু, আলজিহ্বা, টনসিল, জিহ্বা এবং গ্রীবাদেশের পার্শ্ব দেয়ালগুলোকে সেগুলোর কাজে সাহায্য করা। তো যখন পেশিগুলো শিথিল হয়ে পড়ে, তখন শ্বাসনালী সরু হয়ে পড়ে শ্বাস গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায় বা পরিমিত শ্বাস গ্রহণ সম্ভব হয় না। ফলে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনের মাত্রাও কমে যায়।

স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস এবং প্রতিবন্ধকতা; source: alabamasleepclinic.com

মস্তিষ্ক যখন এই অসামঞ্জস্যতা বুঝতে পারে তখনই রোগীকে জাগিয়ে দেয় যেন রোগী জেগে ওঠার পর স্বাভাবিকভাবে শ্বাস গ্রহণ করতে পারে। তবে রোগী অনেক সময় বুঝতেই পারেন না তার ঘুম ভেঙেছিল, কারণ এ জেগে ওঠা এবং পুনরায় ঘুমিয়ে পড়ার মধ্যে সময়ের পার্থক্য খুবই কম।

রোগী অনেক সময় চিঁ চিঁ শব্দ বা গোঙানোর মতো শব্দ করতে পারেন ঘুমের মাঝে। এই বিষয়টি সারারাতে প্রতি ঘন্টায় ৫ থেকে ৩০ বার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। এমনভাবে ঘুমের ফলে রোগীর পর্যাপ্ত ঘুম হয় না, তাই জেগে ওঠার পরেও ঘুম ঘম ভাব থেকে যায় এবং অবসন্নতা কাজ করে। প্রতিবন্ধক স্লিপ অ্যাপনিয়ায় রোগী কখনোই বুঝতে পারে না তার রাতে অনেকবার ঘুম ভেঙেছে!

কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণ

কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়া খুব কমই দেখা যায়। এক্ষেত্রে রোগীর মস্তিষ্ক শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত পেশিগুলোকে সংকেত পাঠাতে পারে না। এর ফলে কিছুটা সময় রোগী শ্বাস নিতে পারে না। এমন সময় রোগীর পুরোপুরি ঘুম ভেঙে যায় এবং পুনরায় ঘুমাতে অনেক সময় লেগে যায়।

সারারাত পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াতে রোগী দিনের বেলা বেশি ঘুমান, এমনকি কর্মক্ষেত্রেও; source: emaze.com

কাদের হবার সম্ভাবনা বেশি?

প্রতিবন্ধক স্লিপ অ্যাপনিয়া যাদের হতে পারে

অতিরিক্ত ওজন

স্থূলকায় ব্যক্তিদের স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা সাধারণ ওজনের ব্যক্তিদের তুলনায় চারগুণ বেশি! স্থূলকায় ব্যক্তিদের শরীরে উপরে অংশে, শ্বাসনালীকে ঘিরে চর্বি জমতে পারে, যা শ্বাস গ্রহণে বাধা দান করতে পারে। তবে হ্যাঁ, সকল স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা কিন্তু স্থূলকায় নন!

ঘাড়ের পরিধি

যাদের ঘাড় মোটা তাদের শ্বাসনালী সরু হয়ে থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে ঘাড়ের পরিধি ১৭ ইঞ্চির বেশি, অর্থাৎ ৪৩ সেন্টিমিটারের মতো, তাদের স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি। মহিলাদের ক্ষেত্রে ঘাড়ের পরিধি ১৫ ইঞ্চি বা ৩৮ সেন্টিমিটারের বেশি হলেই তারা ঝুকিতে রয়েছেন বলা যায়।

সরু শ্বাসনালী

অনেকেরই জন্মগতভাবে শ্বাসনালী সরু হয়, অনেকের আবার টনসিল বড় হয়ে শ্বাসনালীকে সরু করে ফেলে (বিশেষত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে)। এ ধরনের ব্যক্তিদের স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি।

যারা পুরুষ

পুরুষেরা মহিলাদের চেয়ে স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হবার প্রবণতা দ্বিগুণ বেশি। মহিলারা সাধারণত স্থূলকায় হয়ে গেলে এবং মেনোপজের পর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

যারা বয়স্ক

স্লিপ অ্যাপনিয়া বয়স্কদের সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

মদ্যপান এবং ঘুমের ওষুধ গ্রহণ

কেননা এই দ্রব্যগুলো গ্রীবার পেশিগুলোকে শিথিল করে ফেলে। ধূমপানকারীরাও অধূমপায়ীদের চেয়ে স্লিপ অ্যাপনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়।

কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়া যাদের হতে পারে

বয়স্ক ব্যক্তি

মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।

হৃদরোগী

যাদের ইতোমধ্যে হৃদরোগ রয়েছে তাদের কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়া হবার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

চেতনানাশক ওষুধ সেবন

যারা আফিম বা এ জাতীয় দীর্ঘক্ষণ চেতনা নাশ করা ওষুধ সেবন করেন তাদের ঝুঁকি রয়েছে।

স্ট্রোক

স্ট্রোক করা রোগীদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়া প্রবল মাত্রায় হতে পারে।

স্লিপ অ্যাপনিয়া থেকে জটিলতা

স্লিপ অ্যাপনিয়াকে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা হয়, কারণ এর সাথে সাথে আরও মারাত্মক কিছু জটিলতা চলে আসে।

অবসাদ

সারারাত ঠিকমতো ঘুম না হওয়ায় দিনের বেলা অবসাদ, মাথা ঝিমঝিম করা, বিরক্তি কাজ করার মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়। অনেকক্ষেত্রেই রোগী সকালে কাজের মাঝে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন, যেমন ধরুন টেলিভশন দেখতে দেখতে বা গাড়ি চালাতে চালাতে। এর ফলে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হবার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও হঠাৎ হঠাৎ রেগে যাওয়া, বিষণ্ণতায় ভোগা ইত্যাদি দেখা যায়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বা কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্তদের স্কুলে খারাপ ফলাফল করা বা আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়।

উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ

রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ হঠাৎ কমে গেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর ফলে রক্তসংবহনতন্ত্রের ধারবাহিকতায় বাধা পড়ে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রতিবন্ধক স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া, হৃৎকম্পন অস্বাভাবিক হওয়া, স্ট্রোক হওয়া, হাইপোক্সেমিয়া বা হাইপোক্সিয়া ইত্যাদি ঝুঁকি রয়েছে যেগুলো আকস্মিক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

টাইপ-২ ডায়াবেটিস

স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের দেহে ইনসুলিন তৈরি হতে বাধা পায়, ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে।

স্লিপ অ্যাপনিয়ার ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য জটিলতা; source: livebetterhc.com

এছাড়াও স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রার অস্বাভাবিকতা, রক্তের চিনির মাত্রার অস্বাভাবিকতা, যকৃতের জটিলতা, ওষুধ গ্রহণ এবং অস্ত্রোপচারে জটিলতার ঝুঁকি রয়েছে।

স্লিপ অ্যাপনিয়া সনাক্তকরণ পদ্ধতি

একজন ব্যক্তির ভেতরে যদি স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণগুলো দেখা যায় তাহলে ডাক্তার তাকে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া টেস্ট’ করাতে দেবেন। এই টেস্টকে ‘পলিসম্‌নোগ্রাম’ বলা হয়। এই টেস্টে বেশ কিছু বিষয় দেখা হয়, বিশেষ করে ঘুমের মাঝে ব্যক্তি কী ধরনের শারীরিক কার্যাবলী করা থাকে তা বৈদ্যুতিক যন্ত্রের মাধ্যমে রেকর্ড করা হয়। তারপর যে রেকর্ড পাওয়া যায় তা একজন অভিজ্ঞ ‘ঘুম বিশেষজ্ঞ’ বিশ্লেষণ করে বলতে পারবেন ব্যক্তিটি আসলেই স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত কিনা।

পলিসম্‌নোগ্রাম; source: snoringmouthpieceguide.com

স্লিপ অ্যাপনিয়ার টেস্ট করানোর যন্ত্রপাতিগুলো দেখে অস্বস্তি হতে পারে। কিন্তু তবুও ব্যক্তি এই যন্ত্রপাতির মাঝেই খুম সহজেই ঘুমিয়ে পড়েন! আধুনিক কিছু কিছু যন্ত্রপাতি আবার বহনযোগ্য, সেগুলো দিয়ে কম জটিলতাসম্পন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে বাড়িতে বসেই টেস্ট করা যেতে পারে।

এই টেস্ট ছাড়াও রোগীকে ইইজি, ইসিজি, ইএমজি, ইওজি, নাসাল এয়ারফ্লো সেন্সর, স্নোর মাইক্রোফোন ইত্যাদি পরীক্ষা এবং যন্ত্রপাতির আওতায় আনা হয়।

চিকিৎসা

বাড়িতে বসে চিকিৎসা

কম মাত্রার স্লিপ অ্যাপনিয়ার ক্ষেত্রে আপনি ঘরে বসেই ব্যবস্থা নিতে পারেন। এক্ষেত্রে নিজের কিছু আচরণ পরিবর্তন করাই হবে মূল উদ্দেশ্য। যেমন-

  • ওজন কমানো
  • মদ্যপান এবং ঘুমের ওষুধ পরিহার করা
  • সঠিক পজিশনে ঘুমানো
  • ধূমপান পরিহার করা
  • চিত হয়ে না শোয়া

সিপিএপি (Continuous Positive Airway Pressure)

সিপিএপি চিকিৎসায় রোগীকে ঘুমের সময় অক্সিজেন মাস্কের মতো নাক এবং মুখ ঢেকে দেয়া একটি মাস্ক পড়তে দেয়া হয়। মাস্কের অপরপ্রান্ত একটি যন্ত্রের সাথে লাগানো থাকে যেটির মাধ্যমে নাকে অনবরত বাতাস প্রবাহ চলতে থাকে। স্লিপ অ্যাপনিয়ার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি।

বিভিন্ন ধরনের সিপিএপি যন্ত্র; source: summitmedicalgroup.com

মাস্কবিহীন এবং তারবিহীন আধুনিক সিপিএপি যন্ত্র; source: fundairing.com

বিপিএপি (Bi-level Positive Airway Pressure) নামক একই প্রকৃতির আরেকটি চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে শ্বাস গ্রহণ এবং শ্বাসত্যাগের সময় বাতাস প্রবাহের মাত্রার তারতম্য থাকে।

বিপিএপি যন্ত্র; source: dontshrink.com

শল্যচিকিৎসা

টনসিল বড় হওয়ার কারণে বা নাকের মধ্যকার পর্দা বেড়ে যাবার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসার আশ্রয় নেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে যে সকল অস্ত্রোপচার হতে পারে-

  • নাকের অস্ত্রোপচার
  • ইউপিপিপি (গ্রীবার পেছনের নরম টিস্যুর অপসারণ)
  • চোয়ালের অস্ত্রোপচার

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গ্রীবার পেছনের নরম টিস্যুগুলোকে সরিয়ে ফেলা হয়; source: slideshare.net

যেসব রোগীর ক্ষেত্রে সিপিএপি ব্যবহারে অসুবিধা হয় তাদের জন্য ‘ইন্সপায়ার’ নামক একটি যন্ত্র বাজারে এসেছে, যেটি অপারেশনের মাধ্যমে বুকের উপরের অংশের ত্বকের নিচে বসিয়ে দেয়া হয়। এই যন্ত্রটি একটি তারের মাধ্যমে ফুসফুসকে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে সংকেত পাঠায়। এর সাথে একটি রিমোটের ব্যবস্থাও রয়েছে যা রোগীর হাতে বা তাকে পরিচর্যাকারীর হাতে থাকবে। রোগী যখন ঘুমাতে যাবে তখন রিমোটের বোতাম চেপে চালু করতে পারবেন, আবার রোগী জেগে থাকলে তা বন্ধ করে রাখতেও পারবেন।

সিপিএপি এর পরিবর্তে ব্যবহৃত যন্ত্র ‘ইন্সপায়ার’; wsj.com

ত্বকের নিচে ‘ইন্সপায়ার’ স্থাপন; source: abc7.com

শেষ কথা

আপনিও যদি প্রতিদিন ঘুমজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে দেরি না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। বাচ্চাদের ঘুমের প্রতিও খেয়াল রাখুন, কেননা বাচ্চারাও স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।

ফিচার ইমেজ- Pinterest

Related Articles