Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কাকা: আমার রিয়াল মাদ্রিদে ব্যর্থতার জন্য দায়ী চোট আর মরিনহো

মদ্রিচের আগে মেসি-রোনালদো বৃত্তের বাইরে কাকাই ছিলেন বর্ষসেরা খেলোয়াড়। ২০০৭ সালে ব্যালন ডি অর জিতে কাকা পৌঁছে যান তার ক্যারিয়ারের চূড়ায়, হাতে নেন বর্ষসেরার ট্রফি। এর পর থেকেই কাকার ক্যারিয়ারে পতন শুরু। একবার চেলসিতে যাবার গুজবে চরমে ওঠে। কাকা যেতে চাননি, তাকে যেতে দিতে চাননি এসি মিলানের সমর্থকরাও। মিলানে কাকার বাসার সামনে অজস্র মিলান ফ্যান দাঁড়িয়ে ছিল। সাও পাওলোর রাজপুত্র বেরিয়ে এসে দুবার বুকে হাত ঠুকে দর্শকদের জানালেন, তিনি কোথাও যাচ্ছেন না। ইতালির সব প্রধান পত্রিকা খেলা না, মূল কাগজের প্রথম পাতায়ই লিখলো, “হৃদয়ের ডাক শুনলেন কাকা।

কিন্তু বছর না ঘুরতেই মিলানের দ্বারে আসেন রিয়ালের উচ্চাভিলাষী প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। মিলানও তখন ধুঁকছে আর্থিকভাবে। আর রিয়াল মাদ্রিদের ডাক সবসময় সবার কাছে আসে না। কাকাকে বিক্রি করতে রাজি হলো এসি মিলান। এরপর থেকেই তাঁর পতন শুরু। সম্প্রতি কাকা স্পোর্টস টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে খোলাখুলিভাবেই বললেন রিয়ালে তার সময়টা নিয়ে, বললেন হোসে মরিনহো, আঞ্চেলত্তি আর রোনালদোকে নিয়েও। চলুন দেখে নেয়া যাক সেই সাক্ষাৎকারের আসল অংশগুলো।

কেমন ছিল মাদ্রিদের সময়টা?

রিয়ালে কাকার সময়টা ততটা সাফল্যমন্ডিত ছিল না; Image Source: AS English – Diario AS

মাদ্রিদে খেলাটা এমন একটা সুযোগ যা কখনোই আপনার সামনে বারবার আসে না। আমি তাই এটি লুফে নিয়েছিলাম। আমি জানি না আমাকে জেদ পেয়ে বসেছিল কি না, কিন্তু আমি খুব বেশি উদগ্রীব ছিলাম রিয়াল মাদ্রিদে আমার সাফল্যের জন্য। আমি আমার সেরাটা দিয়েছি। ক্লাব বা কোচ সবার সিদ্ধান্তকে সম্মান দিয়েছি। কিন্তু ২০১৩-১৪ মৌসুমে আঞ্চেলত্তি এলেন। তখন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি রিয়াল মাদ্রিদকে নতুন করে সাজাবেন।

তার পরিকল্পনা ছিল তরুণ খেলোয়াড়দের কেন্দ্র করে। বস আঞ্চেলত্তিও আমার সাথে পুরো সৎ ছিলেন। আমি তাকে আগেই জানতাম। তাই তিনি সরাসরিই বললেন, “দেখো, প্রেসিডেন্ট চান যে, আমি নতুন প্রতিভাদের উপর ভিত্তি করে দল সাজাই।” আমি কার্লোকে বললাম, আমার নিয়মিত খেলা প্রয়োজন, কারণ সামনেই বিশ্বকাপ আসছে, আর আমি সেখানে খেলতে চাই। দুজনে মিলে সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম যে, আমার জন্য ক্লাব ছেড়ে যাওয়াই সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত হবে। আমি ক্লাব ছাড়লাম। তবে দেখুন, এখনও আমার জন্য রিয়াল মাদ্রিদের দরজা সব সময় খোলা। ওখানকার বোর্ড ও সমর্থকরা আমাকে পছন্দ করেন।

কী ছিল রিয়াল মাদ্রিদে তার ব্যর্থতার মূল কারণ?

আমার মাদ্রিদে মূল সমস্যা ছিল ধারাবাহিকতা। একেবারে শুরুর দিকে এটা ছিল চোট নিয়ে। ২০০৯ এর দিকে আমার মোটামুটি চোট ছিল কোমরে, কিন্তু আমি খেলা থামাইনি। মাত্রাতিরিক্ত চাপ দিয়েছিলাম নিজেকে যে, আমার বিশ্বকাপ খেলতেই হবে, কারণ দুঙ্গা কখনও কোনো খেলোয়াড়কে নেবেন না যে চোটগ্রস্ত। আমি কাউকে বুঝতে দিলাম না। চোট নিয়েই বিশ্বকাপে গেলাম। সেখান থেকে গোড়ালির চোট নিয়ে ফিরলাম। যেহেতু আমার উপর দলের অনেক কিছু নির্ভর করতো, তাই আমি বিশ্বকাপে চোট নিয়েই খেললাম। বিশ্বকাপের পর আমাকে ছুরির নিচে যেতে হয়, আর তারপর ছয় মাস বিশ্রাম। যখন ফিরলাম তখন আমাদের কোচ হয়ে এলেন হোসে মরিনহো…

হোসে মরিনহো; Image Source: Managing Madrid

সেটাই বলছিলাম যে, আমার প্রথম সমস্যা ছিল চোট, আর তারপর মরিনহো। তিনটা বছর আমি কাটিয়েছি শুধু এটা প্রমাণ করতে যে, আমি খেলার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তিনি আমাকে প্রমাণ করার সুযোগ দিচ্ছিলেন না। তাই আমি আদর্শ পেশাদার খেলোয়াড় হতে চাইলাম। কোচের সব সিদ্ধান্ত বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিলাম। তাই আজও রিয়াল মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট আমাকে বলেন যে, আমিই নাকি তার দেখা রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে খেলা সেরা পেশাদার খেলোয়াড়।

কেমন ছিল মরিনহোর সাথে তার সম্পর্ক?

তখন কোনো একটা সময়ে তার সাথে আমার বেশ কিছু ব্যাপারে দ্বিমত ছিল। আমি ভাবতাম, আমার আরো বেশি খেলা উচিত, অন্তত আমি যেভাবে ট্রেনিং সেশনে পেশাদারিত্ব দেখাচ্ছিলাম তার উপর ভিত্তি করে। আমি কখনো বিদ্রোহ করিনি, অযথা সবার সামনে অভিযোগ করিনি বা সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে এসব নিয়ে কথা বলিনি। আমি তাকে বলতাম, “বস, আমি জানি আপনার কাছে বিকল্প অনেক। তবে আমি মনে করি আমার আরো খেলা উচিত। তবে সিদ্ধান্ত অবশ্যই আপনার, কারণ আপনি কোচ।

দল তখন খুব ভাল খেলছিল। আমার থাকা না থাকার কোনো ফারাক বোধগম্য পর্যায়ে ছিল না। হোসে আমাকে বললেন যে, আমার আপাতত বেঞ্চেই থাকতে হচ্ছে, কারণ আমার পজিশনে খেলছে মেসুত ওজিল, আর ও আসলেই ভাল করছিল। ওজিল নিঃসন্দেহে সেরা খেলোয়াড়। আমি নিজেকে সর্বদা প্রস্তুত রাখতাম আর কোচকে বলতাম যে, যেকোনো সময় আমি নামার জন্য তৈরি। কোচের সাথে আমার কোনো সমস্যা ছিল না, সমস্যা ছিল তার পছন্দ নিয়ে, কারণ স্বাভাবিকভাবেই আমি খেলতে চাইতাম। আর কোচকে দোষ দেয়ারও কিছু নেই। এই দল লিগ জিতেছিল, আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি ফাইনালে পেনাল্টি ভাগ্যের কাছে হেরে যায়। তাই কোচের সিদ্ধান্তও সঠিক ছিল তার দৃষ্টিকোণ থেকে। তবে মরিনহো আমার জন্য ছিলেন বন্ধুর একজন কোচ। হয়তো আমার রিয়াল মাদ্রিদ ক্যারিয়ার অন্যরকমও হতে পারতো।

মরিনহোই কাকার শ্লথ মাদ্রিদ ক্যারিয়ারের জন্য অনেকটা দায়ী; Image Source:Palbrosinfotainment.com

এখনও কি তার সাথে সম্পর্ক বিদ্যমান?

জোসে মরিনহোর সাথে বর্তমানে আমার কোনো সমস্যা নেই। এই কিছুদিন আগেও ম্যানচেস্টারে গিয়েছিলাম এক বিজ্ঞাপনের কাজে। আমি যে হোটেলে ছিলাম, মরিনহোও সেখানেই ছিলেন। প্রায় ঘন্টা দুয়েক আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আপনারা তাকে টিভিতে যেমন দেখেন, অনেক সময় তিনি এমনই। হয়তো তিনি রাগে ফেটে পড়তে পারেন, কিন্তু আদতে তিনি সত্যিই অসম্ভব বুদ্ধিমান ব্যক্তি। তিনি কী বলছেন বা কী বলবেন- সব তার পরিকল্পনা করা থাকে।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সত্যিই খুব সাধারণ ও নম্র একজন ব্যক্তি। আমি আবারও বলছি, খুবই নম্র। চার বছর প্রতিদিন তাকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। ট্রেনিংয়ে সে সর্বদা সর্বাগ্রে আসে। এমনও হয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলসে আমরা প্রীতি ম্যাচ খেলে অন্য শহরে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে সে পনেরোটি ফোন অর্ডার দিয়ে কিনে এনে হোটেলের সব পরিচ্ছন্নকর্মীকে উপহার দিয়ে গেল। সে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। কথার মাধ্যমে উজ্জীবিত করেছে।

সব সহ-খেলোয়াড়ই দেখতো, ট্রেনিংয়ে আমি কতটা অন্তঃপ্রাণ ছিলাম নিজের সুযোগ পাওয়ার জন্য। সবাই আমাকে ভালবাসতো। আমার পুরো ক্যারিয়ারে কোনো সহ-খেলোয়াড়ের সাথে এক মূহুর্তের জন্যও কোনো ঝামেলা হয়নি। আমি শুধু রিয়াল মাদ্রিদ না, পুরো ক্যারিয়ার নিয়েই গর্বিত। তাই আমি যত ক্লাবেই খেলেছি, সব ক্লাবেই আমি সদা-স্বাগত।

কাকা-রোনালদোকে রিয়াল সমর্থকরা ডাকতেন ‘CrisKa’; Image Source:Soccer Laduma

সত্যিই রিকার্ডো কাকা ফুটবল বিশ্বে অদ্বিতীয়। কোনো কোচ আজবধি তার প্রতি বিষেদাগার করেননি, কোনো প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় তাকে ছোট করে কথা বলেননি। তিনি মাঠে যেমন সপ্রতিভ, মাঠের বাইরেও ব্যক্তি হিসেবে উদাহরণস্বরুপ। যে কোচের জন্য তিনি তার ক্যারিয়ারের মূল্যবান সময় হারিয়েছেন, তার সাথেও ঘন্টার পর ঘন্টা খোশগল্প করতে পারেন। আসলেই কাকা খেলোয়াড় কিংবা পেশাদারিত্বের দিক বিবেচনায় অনন্য।

ফুটবল নিয়ে আরও জানতে পড়ুন-

১) The Manager: Inside the Minds of Football’s Leaders
২) The Football Book

This Bangla article is about Kaka's interview on his time at Real madrid and relationship with Jose Mourinho. Kaka also revealed on his relationship with Juventus superstar Cristiano Ronaldo too.

Ricardo Kaka is a Brazil legend who played for Real Madrid, A.C Milan and Brazil. Jose Mourinho is also a legendary coach who coached Real Madrid too. Both crossed their path during 2010-2013. This article is also about reflection on this.

The feature image is taken from  Extra.ie

Related Articles