Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সাপ সম্পর্কে প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস ও সেগুলোর সত্যতা যাচাই

সাপ সকলের পরিচিত একটি সরীসৃপ প্রাণী। এন্টার্কটিকা মহাদেশ ব্যতিত সকল মহাদেশেই এই প্রাণীকে দেখা যায়। সারাবিশ্বে আনুমানিক ২,৯০০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এই সাপ নিয়ে আমাদের দেশ সহ বিভিন্ন দেশে অনেক নাটক-সিনেমা, গল্প রচিত হয়েছে। এছাড়াও প্রচলিত রয়েছে অনেক ধরনের কল্পকথা, যেগুলো আবার অনেক সময় সত্য বলেও মনে হয়। আজকের এই লেখায় সাপ সম্পর্কিত কিছু বহুল প্রচলিত কল্পকথা, ভ্রান্তকথা, গুজব ও সেগুলোর পিছনের সত্যতা জানানোর চেষ্টা করব।

কালনাগিনী সাপ ছোবল দিলেই মৃত্যু নিশ্চিত, তাই তার নাম কাল সাপ!

কালনাগিনী সাধারণত কালনাগ, কালসাপ, উড়ন্ত সাপ, উড়াল মহারাজ সাপ, সুন্দরী সাপ ইত্যাদি নামে পরিচিত। এই সাপের তিনটি উপপ্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়। তন্মধ্যে বাংলাদেশে প্রাপ্ত উপ-প্রজাতিটির বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Chrysopelea ornata ornatissima.

কালনাগিনী সাপ; Source: inaturalist.org

ইংরেজিতে এই সাপকে Golden Tree Snake বলা হয়। এই সাপ দিনের বেলায় খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। সাধারণত বিষাক্ত সাপেরা বিষ, শিকারকে মেরে ফেলার জন্য ব্যবহার করে। তবে কালনাগিনী সাপ শিকারকে কামড়ে ধরে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ও ঘাড় ভেঙ্গে মেরে ফেলে। এর বিষ খুবই মৃদু, যা একজন মানুষকে কখনই মেরে ফেলতে পারবে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই সাপের ছোবলে কারো মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায় না। তাই কাল সাপের ছোবলে কারো মৃত্যু হওয়া নিতান্তই ভ্রান্ত কথা ও মৃত্যু নিশ্চিত এ কথাও বলা যায় না।

সাপ দুধ পান করে!

সাপ দুগ্ধদানকারী মায়ের স্তন থেকে ও গোয়াল ঘরের গরুকে পেচিয়ে দুধ পান করে এমন কথা আদিকাল থেকে প্রচলিত আছে। গাভীর বাঁটে সাপের দাঁতে কাটার দাগও দেখার কথা বলেন অনেকেই। শুধু তা-ই নয়, দুধ পান করে বলে একটি সাপের নাম দেয়া হয়েছে মিল্ক স্নেক বা দুধ সাপ, Lampropeltis triangulum হচ্ছে যার বৈজ্ঞানিক নাম।

মিল্ক স্নেক বা দুধ সাপ; Source: reference.com

বাস্তবতা হল, সাপটি ইঁদুর, টিকটিকি ইত্যাদি খেয়ে জীবন বাঁচায়। এই সাপ পাথর, তক্তার আড়াল ও স্বল্প আলোযুক্ত স্থানে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। এছাড়াও ইঁদুরের সন্ধানে এরা প্রায়শই গোয়াল ঘরে যায়। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে গোয়াল ঘরগুলোও কিন্তু স্বল্প আলোযুক্ত হয়ে থাকে। তবে এই সাপ এ দেশে পাওয়া যায় না। সাপটি দক্ষিণ-পশ্চিম কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ প্রদেশ থেকে মধ্য যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইকুয়েডর, উত্তর ভেনিজুয়েলা ও মেক্সিকোতে পাওয়া যায়।

এভাবেই দুধ পানের সময় কামড়ে ধরে বাছুর; Source: photobucket.com

সাপ মূলত দুধ পান করে না। এরা দুধ হজমও করতে পারে না। তাছাড়াও এদের জিহ্বা দুধ চুষে বের করার উপযোগী নয়। যারা সাপকে দুধ পান করায় তারা মূলত দীর্ঘদিন সাপকে পানি পান না করিয়ে রাখে। ফলে তীব্র পিপাসায় তা দুধ পান করতে পারে। তাই বলে ওলান থেকে গাভীকে পেচিয়ে দুধ পান করার বিষয়টি নিতান্তই ভ্রান্ত ধারণা। তাছাড়াও সাপের ধারালো দাঁত বাঁটে ক্ষত করলে গাভী নিশ্চয়ই খুশি মনে দাঁড়িয়ে থাকবে না।

বাছুরের কামড়ে বাঁটে ক্ষত; Source: pixabay.com

অনেক সময় গাভীর বাঁটে কাটা দাগ বা ক্ষতের মতো দেখা যায়। তা দেখে মানুষ সাপে দুধ পান করেছে বলে থাকেন। কিন্তু দাগগুলো মূলত বাছুরের দাঁতের জন্য হয়ে থাকে। ওলানে দুধ না থাকলে বাছুর তার ধারালো দাঁত দিয়ে বাঁটে কামড় দিতে পারে। মানুষের বাচ্চার ক্ষেত্রেও স্তনবৃন্ত কামড়ানো অতি স্বাভাবিক ঘটনা। এছাড়াও ওলান লাল হওয়া, ফেটে যাওয়া ইত্যাদির জন্য দায়ী মাস্টাইটিস নামক রোগ।

সাপের মণি

সাপের মাথা থেকে মণি সংগ্রহ করতে পারলে যে কেউই প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হতে পারবে! অমাবস্যার রাতে মণি নিয়ে খাবার সংগ্রহে বের হয় কিং কোবরা। জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে মণি। উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে পড়ে চারদিক। কেউ যদি এই মণির উপর গোবর ফেলে অথবা হাতে থাকা কোনো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় তবে মণিটি আর আলো ছড়াতে পারে না। তখন অন্ধকারে সাপ দেখতে পায় না। সেই সুযোগে মণিটি সংগ্রহ করতে পারলে ধনী হওয়া ঠেকায় কে?

কিং কোবরা, কথিত আছে এই সাপে মণি থাকে; Source: roaring.earth

বাস্তব কথা হচ্ছে, সাপের মণি নাটক-সিনেমাতেই সম্ভব। সাপের মাথায় মণি থাকলে তা সাপের পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্তের সময় বের হওয়া কথা। তবে সাপের মুখে অনেক সময় পাথরের টুকরার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সেটার কারণ হচ্ছে সায়ালোলিথিয়াসিস নামক রোগ। যার অর্থ হল লালাস্রাবী গ্রন্থিতে পাথর হওয়া। এই রোগ মানুষেরও হতে পারে।

অনেকের মতে, কিং কোবরা যখন ১৫০-৫০০ বছর বাঁচে তখন তাকে রাজকোবরা বলা হয়। এই রাজকোবরার মধ্যে মণি পাওয়া যায়। বাস্তবতা হচ্ছে কিং কোবরার গড় আয়ু মাত্র ১৭ থেকে ২০ বছর। সুতরাং সাপের মণি গল্প-উপন্যাস ও নাটক-সিনেমাতেই সম্ভব, বাস্তবে নয়।

সাপ প্রতিশোধ নেয়

সাপকে আঘাত করলে সেই আঘাতের জবাব একদিন সুযোগ বুঝে দিবেই। আবার কোবরা সাপের পুরুষটাকে মেরে ফেললে স্ত্রী সাপ প্রতিশোধ নেয়, এমন ঘটনার উপর বাংলাদেশ ও ভারতে বহু সিনেমা নির্মিত হয়েছে। এছাড়াও এমন কথা বিশ্বাস করার মতো লোকের অভাবও নেই। আসলেই কি সাপ প্রতিশোধ নিতে পারে?

সাপের ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক; Source: biologists.org

সাপের মস্তিষ্ক খুবই ছোট। তাই কোনো ঘটনাকে মনে রেখে তার জবাব দেয়ার মতো স্মৃতিশক্তি তার নেই।

দুই মাথাওয়ালা সাপ

দুই মাথাওয়ালা সাপ দেখানোর কথা বলে সাপুড়েরা সাধারণত দর্শক আকৃষ্ট করে। বাস্তবতা হচ্ছে লেজের স্থানে মাথা তথা দুই মাথাওয়ালা সাপের কোনো অস্তিত্ব নাই। তবে রেড স্যান্ড বোয়া সাপের লেজের দিকটাও মাথার মতই দেখায়। সাপটি আত্মরক্ষার জন্য শিকারীকে ধোঁকা দিতে পারে। শিকারী যদি লেজকে মাথা মনে করে ধরতে যায় তবে অপর পাশের আসল মাথা দিয়ে ছোবল দিবে। তবে সাপটি কিন্তু বিষাক্ত নয়।

বলুনতো আসল মাথা কোনটা?; Source: sansaniindia.com

লেজের দিকে মাথা না থাকলেও দুই মাথাযুক্ত মানবশিশুর মতো পাশাপাশি লাগানো দুটি মাথাওয়ালা সাপের জন্ম হতে পারে।

বাঁশির সুরে সাপ নাচে

এক সময় সাপ খেলার বহুল প্রচলন ছিল। সাপুড়েরা বাঁশি বাজিয়ে সাপের নাচ দেখাতো। কিন্তু বর্তমানে বাঁশির সুরে যে সাপ নাচে না তা প্রায় সবারই জানা হয়ে গেছে। তাই হয়তো সাপুড়েদের দিনকাল আর ভালো যাচ্ছে না।

সাপুড়ের মধুর বাঁশির সুর কিন্তু সাপতো শোনে না; Source: youtube.com

সাপ মূলত বাঁশি, সাপুড়ের গতিবিধি ও মাটিতে তৈরিকৃত কম্পনের জন্য এদিক-ওদিক দোল দেয়। সে কানে শোনে না। তাই বাঁশির সুরে দূর থেকে সাপ চলে আসার কথাও অবাস্তব।

লাল লাইফবয় সাবান দিয়ে সাপ তাড়ানো

সাপ নিয়ে আতঙ্কের যেমন শেষ নেই তেমনই শেষ নেই গুজবেরও। সাম্প্রতিক নতুন একটি গুজব বা ভ্রান্ত কথা প্রচারিত হয়েছে আমাদের দেশে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দ্বারা হাজার হাজার মানুষের মাঝে ছড়িয়ে গিয়েছিল কথাটি। কথাটি হচ্ছে লাল লাইফবয় সাবান কেটে বন্যা কবলিত স্থানের ঘরে রাখলে সাপ আসবে না। কারণ সাবানে কার্বোলিক এসিড আছে।

সাবান কেটে ঘরে রাখলাম, সাপ তো গেল না?; Source: sunicovn.com

কার্বলিক এসিড সাপ তাড়ায় কথাটি সত্য। কিন্তু লাইফবয় সাবান সাপ তাড়াবে এটি পুরোপুরি মিথ্যা। ১৮৯৪ সালে লিভার ব্রাদার্স সোপ ফ্যাক্টরি যখন লাইফবয় সাবান প্রস্তুত করে, তখন তাতে কার্বোলিক এসিড ব্যবহার করেছিল। তবে এই এসিড বিষাক্ত ও ব্যবহারের পর ত্বক চুলকায় বলে বর্তমানে আর ব্যবহৃত হয় না। সুতরাং লাইফবয় সাবান ব্যবহার করলে সাপ পালানোর প্রশ্নই আসে না।

ফিচার ইমেজ- kids.nationalgeographic.com

Related Articles