Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সারভাইভালিজম: মহাবিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা পৃথিবীতে বাঁচার উপায়!

একে একে ভেঙে পড়ছে সমাজের সব প্রচলিত প্রথা প্রতিষ্ঠান, ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে নীতি নৈতিকতা, হিংস্র হয়ে পড়ছে মানুষ, আইন-শৃঙ্খলা তলিয়ে যাচ্ছে বিশৃঙ্খলার মাঝে, মানব সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে এক মহাবিপর্যয়ের সন্ধিক্ষণে। এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতি যদি আপনি অনুধাবন করতে পারেন, তাহলে কী করা উচিৎ? একশ্রেণীর লোকজনের পরামর্শ, আপনাকে ‘প্রেপার’ হতে হবে। ইংরেজি শব্দ ‘প্রিপারেশন’ থেকে এসেছে প্রেপার শব্দটি, যার অর্থ হলো, ‘যারা প্রিপেয়ার্ড বা তৈরি’। কীসের জন্য তৈরি? মহাবিপর্যয়ের জন্য!

এই মহাবিপর্যয় ব্যক্তিগত পর্যায়ে হতে পারে, আবার সামষ্টিক পর্যায়েও হতে পারে। তাই প্রেপারগণ উভয় ক্ষেত্রেই নিজেদের তৈরি করেন। সামষ্টিক পর্যায়ে যেমন হঠাৎই পৃথিবীতে আধুনিক সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে। তাতে নগর, শহরই অধিক ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। তখন বেঁচে থাকতে হবে জঙ্গলে গিয়ে অরণ্যানীর মাঝে। সেই বাঁচার জন্য এক প্রস্তুতি। আবার, দিনে দিনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছে। চাকরি হারিয়ে আর কোথাও চাকরি খুঁজে না পেলে তখন কীভাবে বাঁচবেন? ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই প্রশিক্ষণও পান প্রেপারগণ। তাদের প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য, প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকা, তথা ‘সারভাইভ’ করা শেখা। তাই প্রেপারদের আরেক পরিচিত নাম সারভাইভালিস্ট। আর এই ভাবধারা ও বিশ্বাসের চর্চাকে বলা হচ্ছে ‘সারভাইভালিজম’।

প্রতিকূল পরিবেশে আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকার নাম সারভাইভালিজম; Image Source: answerologyreloaded.com

সারভাইভালিজম মূলত একটি আন্দোলন আকারে শুরু হয় আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে। সারভাইভালিস্টরা সারভাইভালিজমের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করতে গিয়ে সাধারণত ১৯৩০ এর অর্থনৈতিক মহামন্দার কথা উল্লেখ করে থাকেন। তবে সারভাইভালিজমের উদ্ভব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও এর পরবর্তীকালীন স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এর ধ্বংসলীলায় ভীতসন্ত্রস্ত মানুষের মনেই প্রথম এ ধারণা আসে যে, সভ্যতা নিকট ভবিষ্যতে ধ্বংস হতে চলেছে। তাছাড়া, সারভাইভালিজমের ব্যাপারটি তখন সরকারেরই বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রোগ্রামের ফসল। যুদ্ধ চলাকালীন পারমাণবিক হামলায় ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে থাকা, দীর্ঘদিনের (১ বছর) খাদ্য মজুদ রাখা, হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হলে পালিয়ে বাঁচা ইত্যাদির প্রশিক্ষণ দেয়া হতো সাধারণ মানুষকে। এদেরই একশ্রেণীর মনে বদ্ধমূল হলো সারভাইভালিজমের ব্যাপারটি, যা স্নায়ুযুদ্ধকালে আরো পাকাপোক্ত হয়।

১৯৫০-৬০’ এর দশকে সারভাইভালিজমের পালে হাওয়া দেয় বিভিন্ন জনপ্রিয় ফিকশনধর্মী লেখা, যেগুলোতে পৃথিবীর বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করা হয়। এদিকে ৬০’ এর দশকে স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রে তখন অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আসন্ন যুদ্ধে শহরগুলোতে খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ বন্ধ হবার একরকম ভয় তৈরি হয়। এ সময়ই কয়েকজন স্বাধীনচেতা মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদটা রাষ্ট্রীয়ভাবে চিন্তা না করে ব্যক্তিগতভাবে চিন্তা করবার পরামর্শ দেন। শুরুটা করেন অখ্যাত আমেরিকান লেখক হ্যারি ব্রাউন। হঠাৎ করেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় হলে কীভাবে ‘সারভাইভ’ করতে হবে, তার উপর নিয়মিত সেমিনার আয়োজন করতে শুরু করেন তিনি। তার সাথে যোগ দেন ডন স্টেফান নামক একজন প্রকৌশলী, যিনি সেমিনারে মানুষদেরকে শেখাতেন কীভাবে আপদকালীন সময়ে সহজে নিজের জন্য নির্জনে একটি ঘর বানিয়ে নেয়া যায়।

হাওয়ার্ড রাফ; Image Source: creativehobby.store

এরপর আসে হাওয়ার্ড রাফের সেই বিখ্যাত বই ‘ফ্যামিন অ্যান্ড সার্ভাইভাল ইন আমেরিকা’। এই বইতে তিনি সতর্ক করার চেষ্টা করেন আসন্ন অর্থনৈতিক বিপর্যয়, খাদ্য সমস্যা এবং তেল সংকট নিয়ে। সারভাইভালিজমের অধিকাংশ উপকরণই এই বইতে পাওয়া যায়। এই আন্দোলন গড়ে ওঠার পেছনে এই বইটির গুরুত্ব অসীম। এর পরই ধারাবাহিকভাবে সারভাইভালিজমকে উৎসাহ দিয়ে বই বেরোতে থাকে। অধিকাংশ লেখকই এক কাল্পনিক ভীতি (নগর সভ্যতা শীঘ্রই ধ্বংস হবে) থেকে মানুষকে শহর, গ্রাম ছেড়ে দূরদূরান্তে, বনে জঙ্গলে একক বসত নির্মাণ করে থাকবার পরামর্শ দেন। ১৯৭৫ সালের দিকে কুর্ট স্যাক্সন নামক এক ব্যক্তি ‘দ্য সারভাইভর’ নামে একটি মাসিক পত্রিকার সূত্রপাত করেন। এই পত্রিকায় কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে হবে সেসব নিয়ে আলোচনা হতো। এসব আলোচনা এমনই যে পৃথিবীতে মানুষ সেই আদিম যুগে ফিরে গেছে, যেখানে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বেঁচে থাকাটাই ছিল জীবনের মূল লক্ষ।

হাওয়ার্ড রাফের দ্বিতীয় বই; Image source: nytimes.com

এদিকে সারভাইভালিজমের প্রাথমিক ভিত্তি গড়ে দেয়া বই ‘ফ্যামিন অ্যান্ড সারভাইভাল ইন আমেরিকা’র দুর্দান্ত সাফল্যের কারণে এ প্রসঙ্গে আরো একটি বই লিখতে অনুপ্রাণিত হন হাওয়ার্ড রাফ। ৮০’র দশকে তিনি লেখেন ‘হাউ টু প্রসপার ডিউরিং দ্য কামিং ব্যাড ডেজ’ যা বেস্টসেলার হয়। এর বছরখানেক পরই ব্রুস ডি ক্লেটনের বই ‘লাইফ আফটার ডুমজডে’ও তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। মোটামুটি ৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই সারভাইভালিজম আন্দোলন আকারে আনুষ্ঠানিক কাঠামো লাভ করে। ৯০’র দশকে এই আন্দোলন আরো জোরদার হয় রুবি রিজের একটি ঘটনায়, যে ঘটনা মিলিশিয়া আন্দোলনের আধুনিক অধ্যায়ের সূত্রপাত ঘটায়। নিজের সুরক্ষা নিজেকেই করতে হবে, এরকম ধ্যান ধারণায় মিল থাকার কারণে মিলিশিয়া আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করে সারভাইভালিস্টগণ। প্রত্যেকের কাছে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র থাকা উচিত,  এরকমটা তাদেরও বিশ্বাস।

সুনামি ২০০৪; Image Source: youtube.com

বিদ্যুৎ ফুরিয়ে যাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ, মহামারী ইত্যাদির ভয় নতুন করে শক্তিশালী হয় ২০০১ সালে। সেবছর টুইন টাওয়ার হামলা, বালি, মাদ্রিদ এবং লন্ডনে ভয়াবহ বোমা হামলায় নতুন করে সারভাইভালিজম মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ২০০৪ সালের ভয়াবহ সুনামিও যোগ দেয় প্রেপারদের ভয়ের কারণগুলোতে। আর ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মহামন্দা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ভয়টাকেও আরো একবার উসকে দেয়। সব মিলিয়ে বেঁচে থাকার জন্য নিজেকে স্বাবলম্বী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করে প্রস্তুত করা মানুষের সংখ্যাটা বাড়ছেই।

সারভাইভালিজম যে প্রকৃতপক্ষে কতদূর এগিয়েছে তা অনুধাবন করা যায় টেলিভিশনের দিকে তাকালেই। প্রতিদিন রাতে ডিসকভারিতে যারা ‘ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড’ দেখার জন্য চোখ রাখেন, তাদের অনেকেই ভেবে দেখেন না যে খামোখা একজন মানুষ কেন গহিন অরণ্যে গিয়ে পোকামাকড় খেয়ে, বাঁশ লতাপাতা দিয়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করছে। এই অনুষ্ঠানটি আসলে সারভাইভালিজম থেকে অনুপ্রাণিত এবং এটি সারভাইভালিস্টদের শেখায় কীভাবে নগর সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেলে জঙ্গলে গিয়ে বেঁচে থাকতে হবে! ‘ম্যান, উইম্যান অ্যান্ড ওয়াইল্ড’, ‘ডুমজডে ক্যাসেল’, ‘ডুমজডে প্রেপারস’ এর মতো অনুষ্ঠানগুলোও সারভাইভালিজম প্রচার করে।

প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার কৌশল শেখান বেয়ার গ্রিলস; Image Source: youtube.com

সারভাইভালিজমের একটি ভালো দিক তো অবশ্যই আছে। প্রতিটি মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারলে তা আদতে সমাজের জন্যই মঙ্গলকর। কিন্তু অলীক কল্পনায় ঘরবাড়ি ছেড়ে বনে জঙ্গলে বসবাস করতে শুরু করাটা নিছক পাগলামি। বেঁচে থাকার জন্য সারভাইভালিস্টরা কিছু কৌশল ও দক্ষতা রপ্ত করেন। সেগুলো সম্পর্কে জানলেই বুঝতে পারবেন কতটুকু ভালো আর কতটুকু পাগলামি!

আকস্মিক বিপদ

সারভাইভালিজমের প্রথম ও প্রধান বিশ্বাস হলো পৃথিবী নিরাপদ নয়, বর্তমান সমাজ, সভ্যতা নিরাপদ নয়। এখানে যেকোনো মূহুর্তে বিপর্যয় ঘটতে পারে। তাই প্রেপার হতে হলে প্রথমে যে বিষয়টি শিখতে হয়, তা হলো আকস্মিক বিপদ মোকাবিলা করা। যেমন, হঠাৎ ভূমিকম্পে ভবন ধ্বসে পড়তে শুরু করলে, কিংবা হঠাৎ একদল ডাকাত আক্রমণ করলে, কিংবা চিড়িয়াখানায় খাঁচা থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে এসে হঠাৎ আক্রমণ করলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কী হওয়া উচিৎ, সারভাইভালিজম তা শেখায়।

গহিন অরণ্যে রুল অব থ্রি

রুল অব থ্রি; Image Source: snare-trap-survive.com

সারভাইভালিজমের আরেকটি প্রাথমিক বিশ্বাস হলো নগর সভ্যতা আর বেশিদিন টিকবে না, বড় ধরনের পারমাণবিক যুদ্ধে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। তাছাড়া বিমান দুর্ঘটনা কিংবা জাহাজডুবির কারণেও কেউ নির্জন দ্বীপে আটকা পড়তে পারে। এ বিশ্বাস থেকে আসে বনেজঙ্গলে বেঁচে থাকার তাগিদ। প্রেপারগণ আকস্মিক বিপদ মোকাবিলা করার পরই গহিন অরণ্যে বেঁচে থাকবার কায়দাকানুন রপ্ত করতে লেগে যান। তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে প্রতিকূল আবহাওয়া, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, পাহাড়ি অঞ্চল, বন্য প্রাণীর ভয় ইত্যাদি উপেক্ষা করে কীভাবে টিকে থাকা যায় তা শেখা। এক্ষেত্রে মানা হয় ‘রুল অব থ্রি’। নিয়মটি এমন, একজন মানুষ বাতাস ছাড়া ৩ মিনিট, আশ্রয় ছাড়া ৩ ঘণ্টা, পানি ছাড়া ৩ দিন এবং খাদ্য ছাড়া ৩ সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারেন।

আত্মরক্ষা

‘সেলফ ডিফেন্স’ বা আত্মরক্ষার কৌশল আয়ত্ত করা প্রেপারদের জন্য অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। মার্শাল আর্ট শেখা, ছুরি-চাকুর ব্যবহার শেখা এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র চালানো শেখাই আত্মরক্ষার অংশ বলে বিবেচিত হয়। প্রেপারগণ এখানে যে নিয়মটি মাথায় রাখেন তা হলো ‘OODA’। এর পূর্ণরূপ, ‘অবজার্ভ’ বা পর্যবেক্ষণ, ‘ওরিয়েন্ট’ বা অবস্থা অনুধাবন, ‘ডিসাইড’ বা কোন প্রক্রিয়ায় সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ‘অ্যাক্ট’ বা সক্রিয়ভাবে বিপদ মোকাবিলা করা।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেঁচে থাকতে শেখায় সারভাইভালিজম; Image Source: snare-trap-survive.com

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় নিজেদের পারদর্শী করে তুলতে সারভাইভালিস্টরা বিভিন্ন প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে ইচ্ছাকৃত বসবাস করেন। খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, দাবানল, ভূমিকম্প, অতিবৃষ্টি, অতিরিক্ত তুষারপাত প্রবণ এলাকায় প্রেপারগণ মাসের পর মাস বসবাস করেন এবং সেসব পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য নিজেদের ঝালিয়ে নেন। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে টিকে থাকার প্রস্তুতি এখানেই শেষ নয়। এই প্রস্তুতি তিন শ্রেণীর। প্রথম শ্রেণীর মানুষজন স্বাভাবিক প্রস্তুতি নেন প্রতিকূল পরিবেশে কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাস বসবাস করে। দ্বিতীয় শ্রেণী কিছুটা লম্বা সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করেন। এই শ্রেণী ২-১০ বছর পরিবার, কর্মজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রতিকূলতার মাঝে বেঁচে থাকেন। তৃতীয় শ্রেণীটা তো কখনোই আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন না! তাদের বিশ্বাস- বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ, বড় ধরনের আগ্নেয়গিরির উদগীরণ কিংবা কোনো গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তা নিকট ভবিষ্যতেই। তাই তারা স্থায়ীভাবেই স্বাভাবিক নাগরিক জীবন ছেড়ে বনে জঙ্গলে বসবাস করেন।

জৈব-রাসায়নিক বিপদ

রাসায়নিক বিপর্যয়; Image Source: preventchemicaldisasters.org

সারভাইভালিজমের আরেকটি প্রস্তুতি হলো জৈব-রাসায়নিক বিপদের মোকাবিলা করতে শেখা। তারা বিশ্বাস করেন যে পৃথিবীতে বড় ধরনের রাসায়নিক অস্ত্রের যুদ্ধ হতে পারে। কিংবা ফ্লু, সার্স, ইবোলা, অ্যানথ্রাক্স, প্লেগের মতো রোগগুলো মধ্যযুগের মতো আবারো মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে বাঁচতে হলে কী করতে হবে? এনবিসি (নিউক্লিয়ার, বায়োলজিক্যাল, কেমিক্যাল) শ্বসন মাস্ক, পলিথিলিন পোশাক, নাইট্রিল গ্লাভস, পিভিসি বুট আর ডাক্ট টেপ পরিধান করে এখন থেকেই অভ্যস্ত হতে হবে!

অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ধ্বস

সারভাইভালিজমের একটি পরিচিত বিশ্বাস হলো প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ধ্বস। সাম্প্রতিককালে গ্রিসের দেউলিয়া হয়ে যাওয়া, জিম্বাবুয়ের মুদ্রার মান অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় সে বিশ্বাস আরো শক্ত হয়েছে। প্রেপারগণ বিশ্বাস করেন যে হঠাৎ হাইপারইনফ্লেশনে পৃথিবীর তাবৎ মুদ্রাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এবং কাগুজে নোট কিংবা ধাতব মুদ্রার আর কোনো মূল্য থাকবে না। এই চিন্তা থেকে তারা রূপা আর স্বর্ণ মজুদ করতে শুরু করেছেন ইতোমধ্যে।

তেল ও বিদ্যুতের সংকট

সারভাইভালিজম বিশ্বাস করে, শীঘ্রই পৃথিবীতে তেলের মজুদ ফুরিয়ে যাবে, বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনও। তাই তারা এখন থেকেই তেল আর বিদ্যুৎ ছাড়া বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন সম্পূর্ণ কৃষিভিত্তিক উপায়ে।

অধিকাংশের মতেই ভ্রান্ত বিশ্বাসকে পুঁজি করে স্বাভাবিক জীবন ছেড়ে জঙ্গলে গিয়ে বসবাস করা একধরনের পাগলামি; Image Source: diysolarpanelsv.com

এছাড়াও ধর্মীয় বিশ্বাস, নৈতিক স্খলন, রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার ভাঙন ইত্যাদি কারণেও সারভাইভালিজম প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রেপারগণ। তারা কিছু প্রয়োজনীয় উপকরণ, যেমন- বস্ত্র, তাবু, আগুন ধরাবার কাঠ, বীজ, পানি, শুষ্ক খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, রক্ষণাত্মক এবং শিকারের উপযোগী দ্রব্যাদি, অস্ত্র, কৃষিজ উপকরণ ইত্যাদি সাথে রাখেন। এসব সাথে রেখে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু এই বিশ্বাসের কারণে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। অলীক ভীতি থাকার কারণ সেগুলোর ব্যবহারের সম্ভাবনাও প্রবল। তাছাড়া, সার্বিক দিক বিচার না করে কেবল বিশ্বাস থেকে স্বাভাবিক জীবন ছেড়ে নিভৃতে বসবাস করা পাগলামিরই সামিল।

Language: Bangla
Topic: Survivalism
Source: All references are hyperlinked inside the article

 

Featured Image: youtube.com

Related Articles