Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রাচীন বিশ্বের কিছু বিখ্যাত গ্রন্থাগার

বইপ্রেমীদের কাছে গ্রন্থাগার মানেই আনন্দের কিছু,  গ্রন্থাগার মানেই ভালবাসার জায়গা। যেদিন থেকে মানুষ অক্ষরকে পাথর, চামড়া বা পাতায় আটকে ফেলতে শিখেছিল সেদিন থেকেই তারা সেগুলো সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল। যখনও বই তৈরি হয় নি তারও আগে জন্ম গ্রন্থাগারের। মূলত রাজা-বাদশারাই প্রথমে  গ্রন্থাগারের সূত্রপাত ঘটায়। সেগুলোই ছিল তখনকার সংস্কৃতি এবং জ্ঞান অর্জনের কেন্দ্র। পরবর্তীতে এই গ্রন্থাগার থেকেই সূত্রপাত ঘটে বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের। আজ আমরা জানবো তেমনই কিছু বিখ্যাত গ্রন্থাগারের কথা কথা যেগুলো ছিল প্রাচীন বিশ্বের জ্ঞানের আধার। জ্ঞান বিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার পেছনে যেসব গ্রন্থাগারের অবদান অনেকটুকু।

আসুরবানিপালের রাজকীয় গ্রন্থাগার

অ্যাসিরীয় সভ্যতার একটি শিলালিপির খন্ড; Source: Public Domain

প্রাচীন গ্রন্থাগারের কথা বলতে গেলে সর্বপ্রাচীন  হিসেবে যে গ্রন্থাগারটির নাম উঠে আসে তা হলো রাজা আসুরবানিপালের রাজকীয় গ্রন্থাগার। প্রাচীন অ্যাসিরীয় সভ্যতার অন্যতম সম্রাট আসুরবানিপাল খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে প্রাচীন নিনেভাহ (বর্তমান ইরাকে) গ্রন্থাগারটি স্থাপন করেন। গ্রন্থাগারটিতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রায় ত্রিশ হাজারের মতো কীলকবর্ণের শিলালিপি সংরক্ষিত ছিল। এর অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন রাজকীয় নথিপত্র, ধর্মীয় মন্ত্র ও রীতিনীতির বর্ণনা এবং অধিবিদ্যার উপর। এগুলোর সাথে সাথে সেখানে চার হাজার বছরের পুরনো “এপিক অফ গিলগামেশ” সহ অসংখ্য সাহিত্যের কাজও সংরক্ষিত ছিল। বইপ্রেমী আসুরবানিপাল গ্রন্থাগারটির অধিকাংশ শিলালিপি জোগাড় করেছিলেন ব্যাবিলনিয়া সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে লুট করে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় পুরাতত্ত্ববিদরা আসুরবানিপালের এই গ্রন্থাগারটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। এর অধিকাংশ শিলালিপি এখন লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। মজার ব্যপার হচ্ছে, আসুরবানিপাল যদিও তার গ্রন্থাগারের অধিকাংশ শিলালিপি লুটতরাজ করে সংগ্রহ করেছিলেন, কিন্তু একইসাথে তাকে চুরি সম্পর্কে বিশেষভাবে উদ্বিগ্নও দেখা যায়। একটি শিলালিপির খোঁদাই করা লেখা থেকে দেখা যায় সেখানে সতর্ক করা আছে, যদি কেউ তার শিলালিপিগুলো চুরি করে তাহলে, “ ঈশ্বর তাকে ছুঁড়ে ফেলবে, তার নাম এবং তার বংশধরদেরও ভূখণ্ড থেকে মুছে ফেলবে!”

আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার

আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারে আগুন লাগার ছবি; Source: Fine Art Images/Getty Images

প্রাচীন বিখ্যাত গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার অন্যতম। ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট এর মৃত্যুর পর মিশরের শাসনাভার গিয়ে পরে তৎকালীন জেনারেল টলেমী ১ম সয়েটারের উপর। তিনি ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানপিপাসু। তার ইচ্ছেতেই মিউসেস বা শিল্পকর্মের নয়টি দেবীর মন্দির হিসেবে আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার এবং জাদুঘরটির জন্ম হয় এবং পরবর্তীতে তা প্রাচীন বিশ্বের জ্ঞানের রত্নভাণ্ডার হয়ে ওঠে। গ্রন্থাগারটিতে সাহিত্য, গণিত, দর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান আইন সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রায় পাঁচ হাজারের মতো প্যাপিরাসের স্ক্রল সংরক্ষিত ছিল। সমৃদ্ধ এই গ্রন্থাগার এবং এর সাথের গবেষণাগার তৎকালীন সময়ের বিদ্বানদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল। গ্রন্থাগারটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে জ্ঞান চর্চার বিশেষ সুযোগসুবিধা দেখে ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চল সহ বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য চিন্তাবিদ এবং গবেষকরা সেখানে এসে বসবাস করা শুরু করেছিলেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা সেখানে বিভিন্ন গবেষণার কাজ করতেন এবং সেগুলোর কপি তৈরি করতেন। আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারের গবেষকদের মধ্যে স্ট্রাবো, ইউক্লিড এবং আর্কিমিডিস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ঐতিহাসিকদের মতে বিখ্যাত এই গ্রন্থাগারটির পতনের সূত্রপাত ঘটে খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৪৮ সালে, যখন জুলিয়াস সিজার মিসরের সম্রাট ৩য় টলেমির বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার সময় ভুলক্রমে গ্রন্থাগারটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে এর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়, অসংখ্য গবেষণা কাজ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ঐতিহাসিকদের মতে এরপরও গ্রন্থাগারটি কয়েক শতাব্দী টিকে ছিল। এটি সম্পূর্ণ রুপে ধ্বংস হয় ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট অরলিয়ানের রাজত্বকালে, আবার অনেকের মতে এটি ৪০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল।

পারগামামের গ্রন্থাগার

পুনর্নির্মাণের পর পারগামাম; Source: De Agostini/Getty Images

পারগামামের গ্রন্থাগারটি তৈরি হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে প্রাচীন আট্টালিদ রাজবংশের হাতে (বর্তমান তুরস্ক যেখানে অবস্থিত)। গ্রন্থাগারটি গ্রিক বিদ্যার দেবী অ্যাথেনার নামে উৎসর্গ করা একটি মন্দিরে স্থাপিত ছিল। এতে মোট চারটি কক্ষ ছিল। এর তিনটিতে ছিল প্যাপিরাসের স্ক্রল এবং অন্য কক্ষটি বিদ্বানদের বিভিন্ন সমাবেশের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, পারগামামের গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত স্ক্রলের সংখা ছিল প্রায় বিশ লক্ষ! প্রাচীন ইতিহাসবিদ প্লিনি দ্য এলডারের মতে গ্রন্থাগারটি তৎকালীন সময়ে এত বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল যে, এটি আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারের সাথে একটি সূক্ষ্ম প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল। উভয় গ্রন্থাগারেই অসংখ্য বই তথা প্যাপিরাসের স্ক্রল সংরক্ষিত ছিল এবং উভয় গ্রন্থাগারই চিন্তা এবং গবেষণার জন্য মোক্ষম পীঠস্থান গড়ে তুলেছিল, যারা হয়ে উঠেছিল একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কথিত আছে, একবার মিশরের রাজা পারগামাম গ্রন্থাগারের প্যাপিরাস বোঝাই জাহাজ আটকে দিয়েছিল এই আশা করে যাতে গ্রন্থাগারটির বিকাশ কিছুটা হলেও স্থগিত হয়ে যায়! ধারণা করা হয়, এর ফলস্বরূপই হয়ত শহরটি পরবর্তীতে চামড়ার কাগজ উৎপাদনের একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

প্যাপিরির উদ্যান

প্রায় ২০০০ বছর আগ্নেয় উপাদানের নিচে চাপা পড়ে থাকার পর প্যাপিরির উদ্যানটি জনসাধারণের নিকট আবার উন্মুক্ত হয়; Source: Eric VANDEVILLE/Getty Images

যদিও এটি প্রাচীন বিশ্বের কোনো বড় গ্রন্থাগার না, কিন্তু প্যাপিরির উদ্যানই একমাত্র গ্রন্থাগার যার সংগ্রহগুলো এখনো সুরক্ষিত আছে। জুলিয়াস সিজারের শ্বশুর লুসিয়াস কালপারনিয়াস রোমের হাকুলেনিয়ামের একটি বাগানবাড়িতে গ্রন্থাগারটি তৈরি করেছিলেন। গ্রন্থাগারটিতে মাত্র ১,৮০০টির মতো স্ক্রল সংরক্ষিত ছিল। ৭৯ খ্রিস্টাব্দে যখন মাউন্ট ভিসুভিয়াস থেকে অগ্নুৎপাত ঘটে তখন গ্রন্থাগারটি আগ্নেয় উপাদানের নিচে চাপা পড়ে যায়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার হচ্ছে, প্রায় ৯০ ফুট আগ্নেয় উপাদানের নিচে চাপা থেকেও গ্রন্থাগারটি চমৎকারভাবে সংরক্ষিত ছিল। এর কয়লার কালিতে কালো হয়ে যাওয়া স্ক্রলগুলো যদিও ১৮ শতাব্দীর আগে পাঠোদ্ধার করা যায়নি, তবে বর্তমানে গবেষকেরা মাল্টিস্পেক্ট্রাল ইমেজিং, এক্স-রে সহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন লিপিগুলো পাঠোদ্ধার করার জন্য। গবেষকেরা এরই মধ্যে জানতে পেরেছেন গ্রন্থাগারটিতে ফিলোডেমাস নামের একজন এপিকুরিয়ান দার্শনিক এবং কবির বেশকিছু লেখা ছিল।

ট্র্যোজান ফোরামের গ্রন্থাগার

ট্রোজানের স্তম্ভ; Source: John Harper/Getty Images

১১২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ট্রোজান রোমের কেন্দ্রে বহু কাজে ব্যবহারের জন্য একটি ভবন তৈরি করেন। ভবনটিতে কেনাকাটার জন্য বাজার, ধর্মীয় উপাসনালায়ের সাথে সাথে রোমের সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থাগারটিও ছিল। গ্রন্থাগারটি দুটি আলাদা কাঠামোতে বিভক্ত ছিল, এর একটিতে ল্যাটিন ভাষা এবং অপরটিতে গ্রিক ভাষা নিয়ে কাজ করা হত। গ্রন্থাগারটির বিপরীত পাশেই অবস্থিত ছিল ট্রোজানের স্তম্ভ। এটি ছিল রাজ্যের সেনাবাহিনীর সাফল্যের সম্মানে বানানো একটি বৃহৎ স্মৃতিস্তম্ভ। গ্রন্থাগারটির উভয় কাঠামোই সুচারুভাবে কংক্রিট, মারবেল পাথর এবং গ্রানাইট দিয়ে সজ্জিত ছিল। এর ভেতরে বসে পড়ার জন্য বিশাল জায়গা সহ দুই ধাপের বই রাখার জন্য বিশাল বিশাল আলমারি ছিল। বলা হয়, গ্রন্থাগারটির সংগ্রহে অত্যন্ত বিশ হাজার স্ক্রল ছিল। ট্রোজান ফোরামের গ্রন্থাগারটির ধ্বংস ঠিক কবে হয় ঐতিহাসিকরা সঠিভাবে এখনো বলতে পারেন না। তবে বিভিন্ন লেখা থেকে দেখা যায় এটি প্রায় ৫ম শতাব্দী পর্যন্ত টিকে ছিল। সুতরাং এ থেকে বোঝা যায়, গ্রন্থাগারটি অন্ততপক্ষে তিনশ বছর টিকে ছিল।

সেলসাসের গ্রন্থাগার

সেলসাসের গ্রন্থাগার; Source: Public Domain

সাম্রাজ্যবাদী যুগ ধরে পুরো রোম জুড়ে প্রায় ২ ডজনের মতো গ্রন্থাগার ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ১২০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময় তৎকালীন একজন রোমান দূতের ছেলে টাইবেরিয়াস জুলিয়াস সেলসাস পোলেমেনিয়াস তার বাবার স্মৃতিতে এফেসাস শহরে একটি গ্রন্থাগার তৈরি করেন। গ্রন্থাগার ভবনটির অলংকৃত সম্মুখভাগটি আজও দাঁড়িয়ে আছে এবং এর মারবেল পাথরের তৈরি সিড়ি ও চারটি স্তম্ভ এখনো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বিদ্যা, সততা, বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছে। এর অভ্যন্তরটি একটি আয়তাকার চেম্বার এবং বইয়ের তাক রাখার জন্য কতগুলো কুলঙ্গি নিয়ে গঠিত। গ্রন্থাগারটিতে প্রায় ১২,০০০ এর মতো স্ক্রল ছিল। তবে সন্দেহাতীতভাবে গ্রন্থাগারটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সেলসিয়াস নিজে, যিনি এর অভ্যন্তরে একটি কারুকাজ খচিত কবরে আজও শুয়ে আছেন।

কনস্ট্যান্টিনোপেলের ইমপেরিয়াল গ্রন্থাগার

কনস্ট্যান্টিনোপেলের ইমপেরিয়াল গ্রন্থাগার; Source: Ken Welsh/Getty Images

পাশ্চাত্য রোমান সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ক্লাসিক্যাল গ্রিক এবং রোমান চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটতে থাকে বাইজান্টাইনের রাজধানী কন্সট্যান্টিপোলে। শহরের ইমপেরিয়াল গ্রন্থাগারটির প্রথম প্রকাশ ঘটে ৪র্থ শতাব্দীতে কন্সটান্টাইন দ্য গ্রেট এর অধীনে। গ্রন্থাগারটির সংগ্রহ যখন প্রায় ১,২০,০০০ এ পৌছায়, এর পর থেকে কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত গ্রন্থাগারটি অসংখ্য উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে যেতে থাকে অবহেলা এবং ঘন ঘন আগুন লাগার কারণে। এরপর যখন ১২০৪ সালে ক্রুসেডের আর্মিরা কন্সট্যান্টিপোলে হামলা করে, তখন গ্রন্থাগারটির উপর দিয়ে একটি বিধ্বংসী ঝড় বয়ে যায়। গ্রন্থাগারটির পণ্ডিত এবং লেখকরা তেমন নতুন কিছু তৈরি করতে না পারলেও, গ্রিক এবং রোমান সাহিত্যগুলো সংরক্ষণ করার জন্য এবং তাদের প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া প্যাপিরাসের স্ক্রলগুলো চামড়ার স্ক্রলে সংরক্ষণ করার জন্য তাদের বেশ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

বাগদাদের জ্ঞানের ঘর: হাউজ অফ উইজডম

হাউজ অফ উইজডমের গবেষণাগারে বহুবিদ্যাজ্ঞ আল-রাজী; Source: Leemage/Getty Images

ইসলামের স্বর্ণযুগে ইরাকের শহর বাগদাদ আত্মপ্রকাশ করেছিল সে সময়কার বিশ্বের জ্ঞান অর্জনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে, আর তার কেন্দ্রবিন্দু ছিল হাউজ অফ উইজডম বা বাইত আল হিকমাহ তথা বাগদাদের জ্ঞানের ঘর। হাউজ অফ উইজডম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল খলিফা হারুন-আল-রসিদের সময়। এখানে পারসিয়ান, ভারতীয় এবং গ্রিক ভাষায় গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, বিজ্ঞান, ঔষধ এবং দর্শনশাস্ত্রের উপর অসংখ্য বই এবং পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত ছিল। এই বই এবং পাণ্ডুলিপিগুলো তৎকালীন সময়ের মধ্যপ্রাচ্যের জ্ঞানীগুণীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে কাজ করতো। তারা সেগুলো সেখানে অধ্যয়ন করতে আসতেন এবং সেগুলোকে আরবি ভাষায় অনুবাদ করতো। বীজগণিতের পিতা বিখ্যাত গণিতবিদ আল খোয়ারেজমি, আরবের দার্শনিক হিসেবে পরিচিত বহুবিদ্যাজ্ঞ চিন্তাবিদ আল কিন্দি সহ ইতিহাসের অসংখ্য ইসলামিক মনিষীই সেখানে অধ্যয়ন করেছিলেন। গ্রন্থাগারটি প্রায় কয়েকশত বছর সম্পূর্ণ বাগদাদ সহ বিশ্বের তৎকালীন বিখ্যাত সব চিন্তাবিদ, দার্শনিক এবং প্রকাশকদের মিলনমেলা হিসেবে টিকে ছিল। এর ভয়ানক পরিসমাপ্তি ঘটে মঙ্গোলদের হাতে ১২৫৮ সালে। কিংবদন্তী আছে, গ্রন্থাগারটি ধ্বংস করার জন্য মঙ্গোলদের এত বই টাইগ্রিস নদীতে ফেলতে হয়েছিল যে এতে করে বইয়ের কালিতে টাইগ্রিস নদীর পানি কালো হয়ে গিয়েছিল।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়; Source: eisamay.indiatimes

৪২৭ থেকে ১১৯৭ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একটি প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র। বিশেষজ্ঞরা এই মহাবিহারকে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম মনে করেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার ধর্ম গুঞ্জ বা ধর্মগঞ্জ সেই সময়ে বৌদ্ধজ্ঞানের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ভান্ডার হিসাবে সুপরিচিত ছিল। পাঠাগারটির ছিল তিনটি নয়তলার সমান উচু ভবন। ভবন তিনটির নাম ছিল রত্নসাগর, রত্নদধি এবং রত্নরঞ্জন। পাঠাগারটিতে খুব সতর্কতার সাথে পাণ্ডুলিপি তৈরি করা হতো। তৎকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখাতেই চর্চার সুযোগ ছিল বলে সুদূর কোরিয়া, জাপান, চীন, তিব্বত, ইন্দোনেশিয়া, পারস্য এবং তুরস্ক থেকে জ্ঞানী এবং জ্ঞান পিপাসুরা এখানে এসে ভিড় করতেন। ১১৯৩ সালে তুর্কিদের হাতে সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়টির সাথে সাথে গ্রন্থাগারটিও ধ্বংস হয়ে যায়

ফিচার ইমেজ © m-eralp

Related Articles