Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পরিত্যক্ত থিম পার্কের অদৃশ্য হাতছানি

এক সময় একটি দেশ মানেই ছিল ছোট্ট ছোট্ট কতগুলো গ্রামের সমষ্টি। সেখান থেকেই গড়ে ওঠেছে সমাজ, তা থেকে ধীরে ধীরে পরিণত হয় একটি রাষ্ট্র তথা দেশ। কালক্রমে সমাজ তথা রাষ্ট্রের সংজ্ঞা পাল্টেছে। গ্রামের একসাথে মিলেমিশে থাকা পরিবারগুলি ভেঙ্গে জীবিকার তাগিদে এসে ঠাঁই করে নিয়েছে শহুরে ব্যস্ত পরিবেশে। এভাবেই গ্রামের সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক পরিবেশ বিলুপ্ত হয়ে শহর গড়ে উঠেছে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে ঘটেছে শিল্পায়ন। আধুনিকতার নামে দেশীয় সংস্কৃতিতে এসে বাসা বেঁধেছে বিদেশি সংস্কৃতি যাকে আমরা বলি বিশ্বায়ন। বিশ্বায়নের যুগে এসে মানুষ হয়ে উঠেছে যান্ত্রিক রোবট। তখন তারা বুঝতে পারলো যে সেই আগের পুরনো খোলামেলা স্বাস্থ্যকর গ্রাম্য সংস্কৃতি কতটা উপকারী ছিল। কিন্তু বিশ্বায়নের দাপটে সেই ছবির মতন আঁকা গ্রাম গুলো হারিয়ে গেছে তত দিনে। কি আর করা! সৃষ্টি হল গ্রামের পরিবেশের আদলে প্রক্সি দেওয়া থিম পার্ক। যাই হোক, মনের প্রশান্তি এনে দিতে ছোট বাচ্চা, শিশুকিশোর, এমনকি বয়স্ক প্রবীণরাও একটু প্রশান্তির ছোঁয়া খুঁজতে থিম পার্কে এসে ভিড় জমাতে শুরু করে।

কিন্তু মাঝে মাঝে এই মনুষ্য সমাজের চলার পথে বাধ সাধে প্রকৃতি। আজ আমরা এমন কিছু পার্কের কথকতা জানব যেখানে প্রকৃতির কাছেই ঘটেছে মানবের পরাজয়। কে জানে, হয়তবা প্রকৃতি তার আপন সাম্রাজ্য বিস্তারের ডালা সাজাতেই মনুষ্য সমাজের গতি পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছে! অথবা হয়ত সত্যি সত্যিই সেখানেই গড়ে তুলেছে অশরীরী আত্মার আসা- যাওয়া!

এমনই প্রায় ১৩০০ পরিত্যক্ত থিম পার্ক রয়েছে যেখানে আজ ঘুঘু চড়ে, হঠাৎ ভেসে আসে আর্ত চিৎকার, অথবা কান্নার শব্দ, চাপা গোঙানির আওয়াজ। যেখানে কিনা রোজ ভিড় জমাতো হাজার হাজার লোক, কোলাহল মুখর থাকতো চারপাশ, আজ সেখানেই ধু ধু করা হাহাকার। পার্কের এক কোণে পড়ে থাকতে দেখা যায় ভাঙা দোলনা, কোথাও আগাছায় ভরা রোলার কোস্টার, কোথাও বা টয় ট্রেন।  আর এখন সেখানে পোকামাকড়ের বাসা। বাতাসে হয়ত বা দোলনা খানা হঠাত দুলতেও চোখে পড়ে। কে জানে, সত্যিই কি তা পবন দেবতা নাকি কোনো অশরীরী আত্মার চলা ফেরা!

ভাবতে ভাবতেই বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে এই পার্ক গুলোর ধ্বংসাবশেষগুলো একপ্রকার ভূতুড়ে আবেদন দেবে আপনাকে, নিয়ে যাবে মনুষ্য বর্জিত কোন দুনিয়াতে! পরিত্যক্ত জায়গাগুলোর দেয়ালের আলো ছায়া মাখা অন্ধকার আপনার মনে এমন এক অনুভূতির সঞ্চার করবে যেন মনে হতে থাকবে শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল কোন স্রোত বয়ে যাচ্ছে ।

3

ল্যান্ড অব ওজে , নর্থ ক্যারোলিনা

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনায় অবস্থিত ল্যান্ড অব ওজে থিম পার্কটি ১৯৭০-এ চালু হয়ে ১৯৮০ পর্যন্ত এই দশ বছর খোলা ছিল। ১৯৭৫ সালে বিধ্বংসী আগুনের কালো থাবা পার্কটিকে মুহূর্তে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে। তারপর থেকেই আর্থিক সমস্যায় পড়েছিলেন উদ্যান কর্তৃপক্ষ। ১৯৮০ সালে পুরোপুরি বন্ধই হয়ে যায় এই পার্ক। ওয়াটোগা লেক ম্যাগাজিনে বলা হয়েছিল যে, ১৯৭০ সালের গ্রীষ্মে এই পার্ক টিতে প্রায় ৪ লাখ টুরিস্ট সমাগম হত। এটি ছিল দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম টুরিস্ট পার্ক।

6

হলি ল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্র – ওয়াটারবুরি, কানেক্টিকুট

ওয়াটারবুরি পার্কটি গড়ে উঠেছিল বাইবেলের বর্ণনার আদলে। ১৮ একর জায়গার উপর দাঁড়িয়ে এই পার্কটি। প্রায় ৪০ হাজার দর্শকের ভীড়ে মুখরিত এই পার্কটি সংস্কারের জন্যে বন্ধ করে দেওয়া হয় ১৯৮৪ সালে। কিন্তু এরপর ১৮৮৬ সালে পার্কটির সংস্কারকের মৃত্যুর সাথে সাথে সংস্কার কাজ ও স্থগিত হয়ে যায় আর চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় পার্কটি।

9

ড্রিমল্যান্ড পার্ক, গ্রেট ব্রিটেন

ড্রিমল্যান্ড পার্কটি ১৯২০ সালে চালু হয়েছিল মারগেট, কেন্ট, ইংল্যান্ডে। এই থিম পার্ক বিখ্যাত ছিল রোলার কোস্টার আর মিনি রেলওয়ের জন্য। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে এই পার্কের মালিকানা বারবার হস্তান্তরিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালে পার্কটি বন্ধ হয়ে যায় ।

12

ওয়ান্ডারল্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, চিন

নব্বইয়ের দশকের দিকে ওয়ান্ডারল্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কটি যখন তেরি হয়, তখন এশিয়ায় এত বড় থিম পার্ক আর ছিল না। দর্শকদের ভিড়ে মুখরিত ছিল পার্কটি। আনন্দ বিনোদনের সবরকম সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন পার্কটিও আর্থিক যোগানের অভাবেই বন্ধ করে দেওয়া হয়।

 অকপো ল্যান্ড পার্ক, কোরিয়া

অকপো ল্যান্ড পার্ক, কোরিয়া

১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কোরিয়ার অকপো ল্যান্ড থিম পার্কটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু ১৯৯৯ সালে ঘটে ভয়ঙ্কর এক দুর্ঘটনা। পরপর দুই শিশু এই পার্কের জনপ্রিয় ডাক রোলার কোস্টার থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায়। এই ঘটনার পরই বন্ধ হয়ে যায় এই পার্ক।

 প্রিপিয়েট থীম পার্ক, ইউক্রেন

প্রিপিয়েট এমিউজমেন্ট পার্ক, ইউক্রেন

প্রিপিয়েট এমিউজমেন্ট পার্কটি ইউক্রেনে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত থিম পার্ক। চেরনোবিল নিউক্লিয়ার দুর্ঘটনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে পার্কটি। এটি ১৯৮৬ সালের ১ মে তারিখে উন্মুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার কয়েকদিন আগেই ২৬ এপ্রিল চেরনোবিল দুর্ঘটনার কারণে তীব্র রেডিয়েশানের দরুণ এই পার্কটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। কথিত আছে, পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছিল মূলত পাওয়ার প্ল্যান্ট এর শ্রমিক ও তাদের পরিবারের বিনোদনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। অনেকের ধারণা ঐ পার্ক এ এখনও পাওয়ার প্ল্যান্ট এর শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মৃত আত্মারা ঘুরে বেড়ায়।

ডিজনি ডিসকভারি আইল্যান্ড,অরল্যান্ড, ফ্লোরিডা

ডিজনি ডিসকভারি আইল্যান্ড,অরল্যান্ড, ফ্লোরিডা

ডিজনি ডিসকভারি আইল্যান্ড  ডেড ওয়াটার পার্ক নামেই বেশি পরিচিত।  মোট আয়তনের অধিক জায়গাই আবদ্ধ জলাভূমি। ডিজনি ডিসকভারি আইল্যান্ড বন্ধ হয়েছে ১৯৯৯ সালে। দর্শনার্থীদের বেড়ানোর জন্য কোন উন্মুক্ত জায়গা রাখা হয়নি। এখন সেটা অ্যানিমেল কিংডম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানে এত সব ভয়ঙ্কর প্রাণীর আবাসস্থল গড়ে উঠেছে যে, কারো পক্ষেই সেখান থেকে বেঁচে ফেরা অসম্ভব বলতে গেলে। আগে এই আইল্যান্ডকে ‘ব্ল্যাক বেয়ারড আইল্যান্ড’ বলা হলেও পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন হয়ে এর নাম হয়েছিল ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’। কারণ এতে রয়েছে প্রায় ৬০০এর ও অধিক পাখি, অসংখ্য প্রজাতির গাছ পালা, বিভিন্ন রকম ফুল ও হিংস্র কুমীর।

এনকোর’স গার্ডেন, তাইওয়ান

এনকোর’স গার্ডেন, তাইওয়ান

তাইওয়ানের এনকোর’স গার্ডেন এর একটা সময় ছিল যখন এই উদ্যানে প্রতি বছর ১০ লক্ষ মানুষ ভিড় জমাতো এখানে। কিন্তু ১৯৯৯ সালের এক ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে এই অঞ্চলে ২০০০ মানুষ মারা যায়। পার্কটির বিভিন্ন জায়গাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকেই তালা পড়ে যায় পার্কটিতে।

স্প্রিপার্ক থিম পার্ক, বার্লিন

স্প্রিপার্ক থিম পার্ক, বার্লিন

এককালে বার্লিন ছিল স্প্রি পার্কের শহর। পার্কটি পরিপূর্ণ ছিল মজার সব রাইডে। মুখ খোলা সুড়ঙ্গ, বিশাল রোলার কোস্টার, অসংখ্য ঝোপ ঝাড়, গাছপালা, প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের সন্নিবেশ। আর্থিক অবস্থার সংকটে পড়ে ২০০২ সালে পার্কটি বন্ধ করে দেয়া হয়।  এখনও সেভাবেই তা পড়ে আছে।

সারা পৃথিবী জুড়ে এধরনের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য থিম পার্ক আজ কালের ধুলোয় বিবর্ণ।  একসময় মানুষের কোলাহলে আশেপাশের প্রকৃতিতে রঙ লাগতো যেসব পার্কে তাতে আজ হাহাকারের শব্দ শোনা যায়। মানুষের তৈরি এসব পার্ক আজ মানুষেরই অদ্ভুত খেয়ালে পরিত্যক্ত।

This article is in Bangla Language. It's about some haunted abandoned theme parks around the world

Featured Image & References:

  1. http://www.therichest.com/expensive-lifestyle/entertainment/10-of-the-creepiest-abandoned-amusement-parks/
  2. http://www.urbanghostsmedia.com/2015/08/most-haunting-abandoned-amusement-parks-of-the-world/
  3. http://www.pixte.com/876911/16-scary-abandoned-theme-parks-around-the-world/
  4. https://www.theguardian.com/artanddesign/2015/jan/07/spreepark-east-berlin-forgotten-theme-park-rollercoaster-story
  5. http://www.abandonedabandoned.com/encore-garden-abandoned-amusement-park-in-taiwan/

Related Articles