Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দিয়াতলোভ গিরিপথে মৃত্যু: অর্ধশতাব্দীর অমীমাংসিত রহস্য

প্রচণ্ড তুষারপাত হচ্ছে, সাথে হাঁড় কাপানো শীতল বাতাস। ‘মৃতদের পাহাড়’ নামে পরিচিত এক পর্বতের ঢালে তাঁবু গেড়েছে নয় অভিযাত্রী। গা ছমছম করা চারিদিক, রাতের আঁধারে অশুভ আতঙ্কের ফিসফিসানি। হঠাৎ তাঁবু ছিঁড়ে সজোরে বেরিয়ে পড়লো অভিযাত্রীরা। মৃত্যু তাড়া করেছে তাদের। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় গরম কাপড় ছাড়াই খালি পায়ে দৌঁড়াতে শুরু করল রুদ্ধশ্বাসে। মরণ ঠেকানোর সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হলো। কারো মৃত্যু হলো ঠাণ্ডায় জমে গিয়ে, কারো বুকের পাঁজর ভেঙে গুঁড়িয়ে, কারো মাথার খুলি ফেটে গিয়ে।

আজ থেকে প্রায় ছয় দশক আগে, রাশিয়ার বরফঘেরা ‘ডেড মাউন্টেন’ পর্বতের কাছেই ঘটেছিল এমন এক নির্মম ঘটনা। সময়টা ছিল ১৯৫৯ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে। কোনো এক রাতে নয় জন অভিযাত্রীর একটি দল সে পর্বতের ঢালে তাঁবু গেড়েছিল দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে পড়ে। দলের সবাই ছিল দক্ষ পর্বতারোহী। কিন্তু প্রত্যকের ভাগ্যেই সে রাতে ভয়ঙ্কর এক নিয়তি নির্ধারিত ছিল, তা হলো রহস্যময় ও ভয়ঙ্কর মৃত্যু। আজ পর্যন্ত কিনারা হয়নি সে রহস্যের। সেই পর্বতের যে গিরিপথ ধরে অভিযাত্রীরা এগিয়ে গিয়েছিল মৃত্যুর দিকে, দলনেতা ইগর দিয়াতলোভের নামানুসারে সেটার নাম দেয়া হয়েছে ‘দিয়াতলোভ পাস’ বা ‘দিয়াতলোভ গিরিপথ’। রহস্যময় এই ঘটনার আদ্যোপান্ত থাকছে আজকের লেখায়।

রাশিয়ার তৎকালীন স্ফের্দোলোভস্ক শহর থেকে এই অভিযাত্রিকেরা বেরিয়ে পড়েছিল উরাল পর্বতমালার উদ্দেশ্যে। বরফের মাঝে অভিযানের জন্য স্কি করার সাজ-সরঞ্জামসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েই বেরিয়েছিল তারা। মোট দশ জনের এই দলে ছিল দুজন নারী আর আটজন পুরুষ। তাদের মধ্যে তিনজন ছিল প্রকৌশলী আর বাকি সাতজন শিক্ষার্থী। সবারই পড়াশোনা তৎকালীন উরাল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে, আজকে যেটা উরাল ফেডারেল ইউনিভার্সিটি নামে পরিচিত।

দশ অভিযাত্রী; Image source: dyatlov-pass.com

অভিযাত্রীদের প্রত্যেকেরই এর আগে পর্বত অভিযানের অভিজ্ঞতা ছিল। স্কি করার কাজটিতেও তারা ছিল বেশ পারদর্শী। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল ‘ওতোর্তেন’ পর্বত। স্থানীয় আদিবাসীদের ভাষায় ‘ওতোর্তেন’ শব্দের অর্থ হলো, ‘ওখানে যেও না’। সত্যিই এক দুর্গম পাহাড় ছিল সেটি। বিশেষত ফেব্রুয়ারি মাসে সেখানে যাবার পথটি অভিযাত্রীদের জন্য ‘ক্যাটাগরি-থ্রি’ হিসেবে পরিচিত ছিল। ক্যাটাগরি-থ্রি এর অন্তর্ভুক্ত স্থানগুলোকে বিবেচনা করা হতো অভিযানের জন্য সবচেয়ে কঠিন এলাকা হিসেবে। পরবর্তীতে উত্তর মেরুতে অভিযানের পরিকল্পনাকে সামনে রেখেই প্রস্তুতি হিসেবে এই পর্বতাঞ্চলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল এ দলটি।

যাত্রা শুরু হয়েছিল ট্রেনে চেপে। স্ফের্দোলোভস্ক অঞ্চলের উত্তর পাশের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত শহর ইভদেলে ট্রেনটি পৌঁছায় জানুয়ারির ২৫ তারিখে। সেখান থেকে পরের গন্তব্য উত্তরাঞ্চলের সর্বশেষ জনবসতি ভিজহাই এলাকা। সেখানে যাবার জন্যই একটা ট্রাকে উঠে পড়েছিল অভিযাত্রী দল।

ট্রাকে উঠেছে অভিযাত্রীরা; Image source: dyatlov-pass.com

ভিজহাই পৌঁছানোর পর থেকেই সূচনা হলো তাদের রোমাঞ্চকর যাত্রার। জানুয়ারির ২৭ তারিখে তারা রওনা দিল ওতোর্তেনের উদ্দেশ্যে। এদিকে অভিযাত্রী ইউরি ইউদিনের পেট খারাপ হওয়ায় সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। ইউদিন পিছিয়ে আসতে না চাইলেও সবাই মিলে তাকে জোর করে ফেরত পাঠালো, কারণ অসুস্থ শরীর নিয়ে এই দুর্গম পথ পাড়ি দেয়া অসম্ভব। মন খারাপ করে ভিজহাই থেকেই সঙ্গীদের বিদায় দিল সে। কিন্তু ইউদিন জানতো না, সে-ই ছিল এ দলের একমাত্র ভাগ্যবান ব্যক্তি।

বিদায় নিচ্ছে ইউদিন। পেছনে দাঁড়িয়ে দলনেতা দিয়াতলোভ; Image source:র: dyatlov-pass.com

চলতে চলতে জানুয়ারির ৩১ তারিখে তারা এসে পৌঁছাল ‘খোলাত সিয়াকো’ পর্বতের পাদদেশে। স্থানীয় আদিবাসী মানসি জাতির ভাষায় যার অর্থ হলো, ‘মৃতদের পর্বত’। আবহাওয়া তখন অভিযাত্রীদের পক্ষে ছিল না, বাতাস ছিল প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, তুষারপাত চলছিল অবিরাম। পর্বতের ধারেই একটা পরিত্যক্ত ঘরে তারা সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত জিনিসপত্র আর খাবার জড়ো করে রাখল। ফেরার পথে ওগুলো তাদের দরকার হবে।

পরদিন তারা এগিয়ে যেতে লাগল গিরিপথ ধরে। তাদের পরিকল্পনা ছিল একটানা পথ অতিক্রম করে একেবারে গিরিপথের অন্যপাশে গিয়ে পরের রাতে ক্যাম্প তৈরি করবে। কিন্তু আবহাওয়ার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে লাগল। ভয়ঙ্কর তুষারঝড়ের মাঝে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না ঠিকমতো।

এ সময় তারা একটা ভুল করে বসল। দিক হারিয়ে গিরিপথ থেকে সরে আরও পশ্চিম দিকে যেতে যেতে তারা খোলাত সিয়াকো পর্বতের উপরের দিকে এগুতে লাগল একটু একটু করে। যখন তারা ভুল বুঝতে পারলো, ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেক। পর্বতের পাদদেশের জঙ্গল আছে এমন জায়গায় গিয়ে ক্যাম্প করতে চাইলে আবার ফিরতে হবে দেড় মাইল পথ পাড়ি দিয়ে। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল সেই পর্বতের ঢালেই ক্যাম্প করার। এমনও হতে পারে, পর্বত ঢালে ক্যাম্প করার অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যই নেয়া হয়েছিল এ সিদ্ধান্ত।

এগিয়ে যাচ্ছে অভিযাত্রীরা, ব্রিনোলের ক্যামেরায় তোলা ছবি; Image source: dyatlov-pass.com

বিকাল ৫টা নাগাদ তারা ক্যাম্প করল সেখানে। ওতোর্তেন পর্বত তখনও ১০ মাইল দূরে। সন্ধ্যা ৭টার আগেই তাদের খাবারের পর্ব শেষ হলো। দুই-একজন হয়তো তাঁবু থেকে একটু বের হয়েছিল হালকা ঘোরাঘুরি করতে। সম্ভবত সিমিয়ন জোলোতারিওভ আর নিকোলাই ব্রিনোলে- এ দুজনই বের হয়েছিল। বাকিরা বিশ্রামের আয়োজন করছিল তাঁবুর ভেতরে। দীর্ঘ ভ্রমণে ক্লান্ত সবাই, সকালেই রওনা দিতে হবে আবার।

ঠিক এমন সময়, কিছু একটা ঘটল, খুব ভয়ঙ্কর কিছু। ষাট বছর আগে ‘মৃতদের পর্বত’-এর ঢালের সেই ঘটনাটা কী মাত্রার ভয়ঙ্কর ছিল, সেটা কেউ কখনোই জানতে পারে নি। ইতিহাসে আছে শুধু এটুকুই- সেই ঘটনায় নৃশংস মৃত্যু হয়েছিল অভিযাত্রী দলের নয়জনেরই।

ওতোর্তেন পর্বতে গিয়ে আবার ভিজহাই ফেরার পর স্পোর্টস ক্লাবের কাছে টেলিগ্রামে ফেরার সংবাদ পাঠাবে দিয়াতলোভ, এমনটাই কথা ছিল। ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখের মধ্যেই তাদের ভ্রমণ শেষ হবার কথা ছিল। ওদিকে ইউদিন মাঝপথে ফিরে যাবার সময় দিয়াতলোভ তাকে বলেছিল, দুই-একদিন হয়তো বেশি সময়ও লাগতে পারে। সে কারণেই ১২ ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে যাবার পরও তাদের কাছ থেকে কোনো খবর না পেয়ে তেমন একটা চিন্তিত হয়নি কেউ। এ ধরনের অভিযানে ক’দিন বেশি সময় লাগতেই পারে।

কিন্তু চিন্তিত হয়ে পড়েছিল অভিযাত্রীদের স্বজনেরা। তারা দাবি করল দলটিকে খুঁজে বের করার করার জন্য উদ্ধার টিম পাঠানোর। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে উরাল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি সাহায্যকারী দলকে পাঠানো হলো। এরপর সেনাবাহিনী ও পুলিশের দল যোগ দিল উদ্ধার কাজে। প্লেন ও হেলিকপ্টার যুক্ত হলো এ অপারেশনে।

উদ্ধারকারীরা খুঁজে পেয়েছে তাঁবুটি; Image source: dyatlov-pass.com

ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখে খোলাত সিয়াকোর ঢালের সেই ক্যাম্পের পরিত্যক্ত তাঁবুটি পাওয়া গেল। মিখালি শারাভিন নামক এক শিক্ষার্থী তাঁবুটি প্রথম খুঁজে পেয়েছিল। তার কাছ থেকে জানা যায়, ততক্ষণে তাঁবুর কিছুর অংশ তুষার দিয়ে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল, সেটি ছিল অর্ধেক পর্যন্ত ছেঁড়া। অভিযাত্রীদের জিনিসপত্র আর জুতো পড়ে ছিল তাঁবুর ভেতরে।

তদন্ত দলের কাছ থেকে জানা যায়, তাঁবুটি ভেতর থেকেই ছেঁড়া হয়েছিল। তাঁবুর বাইরে থেকে শুরু করে প্রায় ৫০০ মিটার দূর পর্যন্ত জঙ্গলের কাছাকাছি পর্যন্ত আট-নয় জনের পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছিল। ছাপ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, কেউ ছিল খালি পায়ে, কেউ মোজা পরে, আর কারো পায়ে ছিল শুধু একপাটি জুতা। জঙ্গলের কাছাকাছি এসে ছাপগুলো তুষারে ঢাকা পড়ে যায়।

অনুসন্ধান চলতে থাকে। জঙ্গলের ধারে এসে উদ্ধারকর্মীরা একটা সিডার গাছের নিচে আগুন জ্বালানোর চিহ্ন দেখতে পায়। সেখানেই প্রথম পাওয়া যায় দুজনের মৃতদেহ। ইউরি ক্রিভোনিশেঙ্কো আর ইউরি দোরোশেঙ্কোর লাশ পড়ে ছিল সেখানে। যে গাছের নিচে তাদের পাওয়া গেল সেটা পাঁচ মিটার উঁচু থেকে ডাল ভাঙার নমুনা পাওয়া গেল, অর্থাৎ তারা গাছের উপরে উঠেছিল। ফরেনসিক টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাছের বাকলে তাদের রক্ত লেগে ছিল, অর্থাৎ কোনো কারণে তারা ভয়ঙ্কর দ্রুত ভাবে গাছে উঠতে চাইছিল। কী তাড়া করেছিল তাদের? সে উত্তর হয়তো জানা যাবে না কখনোই। এ দুজন মারা গিয়েছিল প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে, হাইপোথার্মিয়ায়।

ক্রিভোনিশেঙ্কো আর দোরোশেঙ্কোর লাশ; Image source: dyatlov-pass.com

২৭ ফেব্রুয়ারিতে সেই সিডার গাছ থেকে আরও ৩০০ মিটার দূরে পাওয়া গেল ইগর দিয়াতলোভের লাশ। তার দু’পায়ে দু’রকম মোজা ছিল। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল কিছু আঘাতের চিহ্ন। একই দিনে জিনাইদা কোলমোগরোভার লাশ পাওয়া যায় সিডার গাছ থেকে ৬৩০ মিটার দূরে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের দাগ ছিল। এদের দুজনেরও মৃত্যু হয় হাইপোথার্মিয়ায়।

৬ দিন পর মার্চের ৫ তারিখে পাওয়া যায় রুস্তেম স্লবোদিনের মৃতদেহ। সেই সিডার গাছ থেকে ৪৮০ মিটার দূরে। এই অভিযাত্রীর লাশের ময়নাতদন্তের সময় দেখা মিলে অদ্ভুত কিছু ঘটনার। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পাবার চিহ্ন তো ছিলই, মাথার খুলিতেও ছিল আঘাত ও রক্তপাতের চিহ্ন। খুলির আঘাতের চিহ্নগুলো এমন ছিল, স্লবোদিন যদি পাহাড়ের নিচের দিকে যাবার সময় খানিক পরপর পড়ে গিয়ে আঘাত পায়, তাহলেই কেবল এমন চিহ্ন তৈরি হওয়া সম্ভব। কিন্তু দলের মধ্যে সবচেয়ে সুঠাম দেহের এই দক্ষ অভিযাত্রী বারবার পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছিল, সেটা সত্যিকার অর্থে ঘটা একরকম অসম্ভব ছিল।

রহস্যময় সে রাতের সাক্ষী সেই সিডার গাছ; Image source: dyatlov-pass.com

রহস্যজনক ব্যাপার হলো, দোরোশেঙ্কো, কোলমোগরোভা আর স্লবোদিনের শরীরে মৃত্যুর চিহ্ন ‘লিভর মর্টিস’ পর্যবেক্ষণ করে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, মৃত্যুর পরে কেউ তাদের লাশের স্থান বদল করেছিল। অবশ্য ময়নাতদন্তকারী লিভর মর্টিস চিনতে ভুল করেছিল, এমনটাও বলে থাকেন কেউ কেউ।

আর চার অভিযাত্রিকের খোঁজ চলতে লাগল, দুই মাসেও দেখা মিলল না তাদের। মে মাসে যখন বরফ গলতে শুরু করল সে সময় কুরিকোভ নামের স্থানীয় এক মানসি আদিবাসী তার কুকুরের সহায়তায় এমন একটা জায়গা খুঁজে পায় যেখানে কিছু কাপড়ের টুকরো ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় ছিল।

মে মাসের ৫ তারিখে শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেল শেষ চার অভিযাত্রীকে। সেই সিডার গাছ থেকে ৭৫ মিটার দূরে জঙ্গলের মধ্যে একটি পরিখার ভেতরে প্রায় ৪ মিটার গভীর তুষারের নিচে চাপা পড়ে ছিল তাদের মৃতদেহ। প্রচণ্ড শীতে কী নিদারুণ যন্ত্রণা নিয়ে তারা মারা গিয়েছিল, সেটা বোঝা যাচ্ছিল তাদের গায়ের পোশাক দেখেই। একজনের মৃত্যুর পর তার গায়ের কাপড় খুলে নিয়ে নিজেদের গায়ে জড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছিল বাকীরা। এমনকি সে জায়গাটায় পৌঁছানোর আগে তারা আগের পাঁচজনের কারো কারো মৃতদেহও দেখেছিল, সেটাও বোঝা যায়, কারণ তাদের গায়ের কাপড়ের অংশও পাওয়া গিয়েছিল এদের কারো কারো গায়ে।

পরিখার ভেতরে পড়ে আছে চার অভিযাত্রীর লাশ, দাঁড়িয়ে আছে একজন উদ্ধারকারী; Image source: dyatlov-pass.com

এই চারজনের মধ্যে কেবল আলেকজান্ডার কোলেভাতভ মারা গিয়েছিল হাইপোথার্মিয়ায়। বাকি তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল অদ্ভুত সব আঘাত পেয়ে। লুদমিলা ডুবিনিনার পাঁজরের দশটি হাড় ভাঙা ছিল, দুই চোখের কোটর ছিল ফাঁকা, কেউ যেন খুবলে নিয়েছে চোখগুলো, গোটা মুখমণ্ডলের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার ছিল, কে যেন তার জিহ্বাটা কেটে ফেলেছিল।

পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ডুবিনিনার জিহ্বা যখন কেটে ফেলা হয়, সে তখনও জীবিত ছিল! সেমিওন জোলোতারিওভের শরীরেও ছিল আঘাতের চিহ্ন, পাঁজরের হাড় ভাঙা, চোখের কোটর ফাঁকা। অদ্ভুতভাবে তার গলায় ঝোলানো ছিল ক্যামেরা, এক হাত এমনভাবে ছিল, যেন কোনো কিছুর ছবি তুলতে চাইছে। অন্য হাতে ছিল কলম-নোটখাতা, যেন কিছু লিখবে এখনই, অথচ সেখানে লেখা ছিল না কিছুই।

আলেকজান্ডার কোলেভাতভের মুখের আঘাতের চিহ্নগুলো দেখে মনে হয় যেন সে মৃত্যুর আগে কারো সাথে ভয়ানক মারপিট করেছে। নাক ভাঙা, কানের উপর ভারী আঘাত, ঘাড় ভাঙা, চোখের চারপাশ কে যেন খুবলে নিয়েছে। আরেক অভিযাত্রিক নিকোলাই থিবিউ-ব্রিনোলের হাত আর মুখের আঘাত ছাড়াও মাথার খুলিতে ছিল প্রচণ্ড আঘাতের চিহ্ন। আগেই বলেছি, জোলোতারিওভ আর ব্রিনোলে রাতের খাবারের পর তাঁবু থেকে বের হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়, কারণ তাদের দুজনের পরনেই সবচেয়ে পরিপাটি পোশাক ছিল। বাকিরা যে কিসের ভয়ে অল্প কিছু কাপড় গায়েই বেরিয়ে এসেছিল তাঁবু থেকে সেটা হয়তো কোনো দিনও জানা যাবে না।

ডুবিনিনা আর জোলোতারিওভের পাঁজর আর ব্রিনোলের খুলিতে যে প্রচণ্ড আঘাতের নিদর্শন রয়েছে, তেমন কোনো আঘাতের জন্য একটা দ্রুতবেগে আসা গাড়ির সজোরে ধাক্কা দিলে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োগ ঘটে তেমনই শক্তির দরকার হয়েছে বলে মনে করেন পোস্টমর্টেমের দায়িত্বে থাকা ডাক্তার বরিস। আর যে বিষয়টি এই রহস্যময় ঘটনার অদ্ভুত এক ব্যাখ্যার জন্ম দেয় সেটি হলো, ডুবিনিনা আর কোলেভাতভের গায়ের পোশাকে পাওয়া গিয়েছিল তেজস্ক্রিয় বস্তুর উপস্থিতি!

কী ঘটেছিল সেই রাতে?

প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা নয়টি তরতাজা প্রাণ কেন হারিয়ে গেল নিঃসঙ্গ জঙ্গলে? কীসের ভয়ে? কীসের আক্রমণে? এমন হাজারো প্রশ্নের কোনো নিশ্চিত জবাব কেউ দিতে পারেনি আজও। ঘটনার ব্যাখ্যায় তৈরি হয়েছে নানান রকম বিশ্লেষণ। কোনোটাই শতভাগ নিশ্চিত নয়। সেগুলোর মধ্যেই অধিক আলোচিত কয়েকটি ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হলো।

কারো মতে, অভিকর্ষের ওঠানামা ঘটতে পারে পৃথিবীর কিছু জায়গায়; Image source: dyatlov-pass.com

রাশিয়ার কিছু বিজ্ঞানীর মতে, অভিযাত্রিকেরা যে জায়গায় তাঁবু গেঁড়েছিল সেটা পৃথিবীর এমন এক অংশ যেখানে অভিকর্ষের প্রভাবের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে পারে। হয়তো ব্যাপারটা ছিল এমন, অভিকর্ষের ওঠানামার কারণে হঠাৎ করেই তাঁবুর বাইরের অংশের বায়ুমণ্ডলের চাপ প্রচণ্ড রকমের কমে গিয়েছিল। আর তাঁবুর ভেতরে চাপ বেশি থাকায় এর ভেতরে অবস্থানরত অভিযাত্রীদের শূণ্যে উঠিয়ে ফেলেছিল কিছুটা। তাঁবুটা শক্তভাবে গাঁথা থাকার কারণে কোনো ভাবে এর ভেতরে থাকতে পারলে হয়তো তারা বেঁচে যেত। কিন্তু যেইমাত্র তারা তাঁবু থেকে বের হতে গেল, অমনি বাইরের চাপ অস্বাভাবিক কম থাকার কারণে তারা প্রচণ্ড গতিতে ছিটকে বের হল এবং সেখান থেকে এক-দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে আছড়ে পড়ল। এদিকে তাদের শরীরের মধ্যকার চাপের তুলনায়ও বাইরের চাপ অনেক কম হবার কারণে মুহূর্তের মধ্যে কারো কারও মাথার খুলি বা বুকের পাঁজরের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ল। আর এত দূরে ছিটকে পড়ায় সবাই আঘাত পেল এবং কেউ তাৎক্ষণিক আর কেউ খানিক পর মারা গেল।

ব্রিনোলের ক্যামেরার ১৭ নম্বর ফ্রেমের এই অবয়বটি কীসের, ইয়েতির? Image source: dyatlov-pass.com

আরেকটি বহুল প্রচলিত ধারণা হলো, ইয়েতির আক্রমণ। বরফের জগতে বসবাসকারী দৈত্যাকার মানুষ সদৃশ এক কল্পিত প্রাণীকে ঘিরে বিভিন্ন কাহিনী সবসময়ই তৈরি হয় যেকোনো বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলের দুর্ঘটনার ব্যাখ্যায়। দিয়াতলোভ গিরিপথে তেমনই এক রাক্ষুসে ইয়েতির বসবাস ছিল বলে কল্পনা করে নিতে ভালোবাসে অনেকেই। অবশ্য আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে এমন কোনো বরফমানবের সন্ধান পাওয়া যায়নি কোথাও। তবুও নানান অস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে এর উপস্থিতি প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে অনেক বার। যেমনটা ঘটেছে এখানেও। ব্রিনোলের ক্যামেরার ১৭ নম্বর ফ্রেমের ছবিটিতে মানুষের একটি অস্পষ্ট অবয়ব দেখা যায়, এটাকেই ইয়েতি বলে দাবি করেন এই ধারণার অনুসারীরা।

কিছু বিজ্ঞানীর মতে, বাতাসের ঘূর্ণির কারণে এমন কোনো ইনফ্রাসাউন্ড বা শব্দেতর তরঙ্গ সৃষ্টি হতে পারে যার প্রভাবে মানুষের শরীরে নানাবিধ জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনই কোনো শব্দেতর তরঙ্গ সৃষ্টি হবার কারণেই হয়তো অভিযাত্রীদের শারীরিক ক্ষতি হয়ে হয়ে পরবর্তীতে তারা মৃত্যুবরণ করে বলে ধারণা করেন অনেকে।

ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে ইভদেলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী গোপনে রকেট উৎক্ষেপণের পরীক্ষা চালায় বলে একটি টেলিগ্রামের সূত্র ধরে জানা যায়। যদিও এমন কোনো ঘটনার শক্ত প্রমাণ নেই কারও কাছেই, সামরিক বাহিনীও সেটা অস্বীকার করেছে। তবে সে সময় উরাল পর্বতমালার দক্ষিণে তেমন কিছু রকেট উৎক্ষেপণের কথা বলেছে সামরিক বাহিনী, সে পাশটায় অভিযাত্রীদের যাবার কোনো সম্ভাবনাই নেই। ইভদেলের সেই গোপন রকেট উৎক্ষেপণ করার সময় কোনো একটা দুর্ঘটনার ফলে জীবন দিতে হয়েছে অভিযাত্রীদের- এমন একটা ধারণাও বেশ চালু আছে।

ক্রিভোনিশেঙ্কোর ক্যামেরায় তোলা এই ছবিটিতে কি ইউএফওর আভাস পাওয়া যায়? Image source: dyatlov-pass.com

পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্রহ থেকে বুদ্ধিমান কোনো সত্তার চাকতি সদৃশ মহাকাশযানে চড়ে পৃথিবীতে আসার বহু গল্প, বহু কল্পকথা রচিত হয়েছে, এখনো হচ্ছে। ইউএফও বা ‘আনআইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট’ নামকরণ করা হয় এমন যানগুলোর। তেমনই কোনো ইউএফওর আগমন ঘটেছিল সে রাতে, আর সেটাই মৃত্যুর কারণ হয়েছিল অভিযাত্রীদের, এমন একটি ধারণাও বেশ জনপ্রিয়। আর এর স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে হাজির করা হয় ক্রিভোনিশেঙ্কোর ক্যামেরায় তোলা সর্বশেষ ছবিটি। ৩৩ নম্বর ফ্রেমের এই ছবিটিতে কিছু বৃত্তাকার আলোকচ্ছটাই দেখা যায় শুধু, সেগুলোকেই ইউএফওর নমুনা হিসেবে মানতে চান অনেকে।

তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কোনো স্পেশাল ফোর্সের হাতে মারা পড়েছে অভিযাত্রীরা, এমন ধারণাও করেন অনেকে। খোলাত সিয়াকো পর্বতের সেই অঞ্চলে হয়তো রাষ্ট্রীয় কোনো গোপন কাজ চলছিল যেটা দেখে ফেলে অভিযাত্রীরা, ফলে মৃত্যুই বরণ করে নিতে হয় তাদের। আবার এমনও ধারণা করা হয়, সে অঞ্চলের নিকটবর্তী কারাগার গুলাগ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা বন্দী ভেবেও তাদের হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

বরফধ্বসের কথাও উঠেছিল কারণ হিসেবে, কিন্তু অভিযাত্রীদের ক্যামেরা থেকে পাওয়া ছবি আর পরবর্তী সময়ের ছবি মিলিয়ে বরফধ্বসের কোনো নমুনা মেলে না।

সবচেয়ে বেশি আলোচিত ধারণাটি হলো, অভিযাত্রীদের দলের তিনজন ছিল গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির এজেন্ট, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে গিয়ে ধরা পড়ে তাদের প্রাণ দিতে হয় দলের বাকিদের সহ! দিয়াতলোভ গিরিপথের এই ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু অনুসন্ধানী গবেষণা চালান আলেক্সেই রাকিতিন, তিনি বিভিন্ন তথ্য দিয়ে তুলে ধরেন এমন ধারণার যৌক্তিকতা। সিমিয়ন আলেকজান্ডার জোলোতারিওভ, আলেকজান্ডার কোলেভাতভ আর ইউরি ক্রিভোনিশেঙ্কো- এই তিনজন কেজিবির হয়ে কাজ করছিল বলে ধারণা করা হয়। সোভিয়েত-মার্কিন তুমুল দ্বন্দ্বের মাঝে সোভিয়েত রাশিয়ার গোপন খবর জানার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআইএ এজেন্টরা অবস্থান করছিল সেই অঞ্চলে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক শক্তিধর হয়ে উঠছে কিনা এবং কোথায়  সেসবের কাজ চালাচ্ছে এসব তথ্য দরকার ছিল সিআইএর। তারা সোভিয়েত নাগরিকদের মধ্য থেকেই নিজেদের এজেন্ট ঠিক করত সব খবর পাবার জন্য। এদিকে কেজিবি এই তিনজনকে দায়িত্ব দেয় ‘ডাবল এজেন্ট’ এর ভূমিকা করার। সিআইএর সোভিয়েত এজেন্ট সেজে সিআইএর কাছে তেজস্ক্রিয়তাযুক্ত কাপড় দিয়ে তাদেরকে বোঝাতে হবে যে সে অঞ্চলের কাছাকাছি সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। অর্থাৎ মিথ্যা তথ্য দিয়ে সিআইএকে বোকা বানাতে হবে। আর কাপড় দেবার সময় সিআইএ এজেন্টদের ছবি তুলে আনবে এই তিনজন।

এই তিনজনের পরিচিতি জানা গেলে আরও নিশ্চিত হওয়া যায় তাদের কেজিবি এজেন্ট হবার ব্যাপারে। আলেকজান্ডার কোলেভাতভ উরাল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে যোগ দেবার আগে মস্কোতে অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম সমৃদ্ধ একটি টপ সিক্রেট পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে ল্যাবরেটরি অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে কাজ করত যে কেন্দ্রের কোনো নামই ছিল না, কেবল ‘পিও বক্স নং ৩৩৯৪’ এই কোডনেম ছাড়া। ইউরি ক্রিভোনিশেঙ্কো এর আগে কাজ করত তখনও পর্যন্ত ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম পারমাণবিক দুর্ঘটনা ‘কিশতিম দুর্ঘটনা’ ঘটেছিল যেখানে, সেই মায়াক প্ল্যান্টে। আর সিমিওন জোলোতারিওভ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়া এক সেনা। নয় অভিযাত্রী উরাল থেকে রওনা হবার ঠিক আগ মুহূর্তে সে এসে যোগ দেয় দলে। দশজনের মধ্যে তিনজনের প্রাক্তন পরিচয়ের কারণেই তাদের ছদ্মবেশী এজেন্ট হবার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।

ছবিতে দেখানো হচ্ছে অভিযাত্রীদের যাত্রাপথ, তাঁবু ও লাশ পাবার চিহ্ন। হলুদ রঙের নির্দেশক জায়গাটিই হলো দিয়াতলোভ গিরিপথ; Image source: dyatlov-pass.com

রাকিতিনের এই ধারণাটি কয়েকটি অদ্ভুত বিষয়ের জবাব দেয়। যেমন- দু’জন অভিযাত্রীর কাছে তেজস্ক্রিয়তা যুক্ত কাপড় পাওয়া গেল কেন, কিংবা দলের একটি ক্যামেরা হারিয়ে গেল কেন। সিআইএ এজেন্টরা কোনোভাবে তাদের মিথ্যা চাল বুঝতে পেরে গোটা দলের সবাইকেই হত্যা করে রাখে, এমন ধারণাই সবচেয়ে যৌক্তিক হিসেবে গৃহীত হয়েছে অনেকের কাছে।

তবু কথা থেকে যায়, রয়ে যায় অনেক প্রশ্ন। তাঁবুটি ভেতর দিক থেকে অমন ভাবে কাটা কেন? কীসের ভয়ে কিংবা কী কারণে ওভাবে তাঁবু ছিঁড়ে বেরিয়ে এলেন অভিযাত্রীরা? প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে জুতো, কাপড় ঠিকমতো না নিয়েই তারা বেরিয়ে পড়ল কেন? কোনো প্রাণী কিংবা মানুষই যদি তাদের আক্রমণ করত তাহলে তো তাদের পায়ের ছাপ থাকবার কথা। তাঁবু থেকে সিডার গাছ পর্যন্ত অভিযাত্রীরা ছাড়া আর কারও পায়ের ছাপ নেই কেন? কীসের ভয়ে সিডার গাছে উঠতে চাইছিলেন দুজন অভিযাত্রী? কয়েকজনের লাশের শরীরের লিভর মর্টিস বা মৃত্যুচিহ্ন অনুসারে তাদের লাশ মৃত্যুর পরেও সরানো হয়েছে, কে সরালো? একজন জীবিত থাকতেই তার জিহ্বা কেটে ফেলা হয়েছে, কীভাবে ঘটল সেটা? দুজনের কাছে তেজস্ক্রিয় কাপড় এলো কোথা থেকে? জোলোতারিওভ মারা যাওয়ার সময় ক্যামেরা এমনভাবে ধরে রেখেছিল যেন সে কিছু একটার ছবি তুলতে চাইছে, কীসের ছবি?

এই অদ্ভুত রহস্যময় ঘটনাগুলো কেন হলো কিংবা কীভাবে হলো সেসব প্রশ্নের সদুত্তর এই অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়েও দিতে পারেনি কেউ। অসুস্থ হয়ে ফিরে আসার কারণে এই ভয়াবহ মৃত্যুর কবল থেকে বেঁচে যাওয়া ইউদিন একবার বলেছিলেন, “যদি সৃষ্টিকর্তাকে একটিবার প্রশ্ন করার সুযোগ পেতাম, তাহলে জানতে চাইতাম, সে রাতে কী ঘটেছিল আমার বন্ধুদের ভাগ্যে?” দিয়াতলোভ গিরিপথে যাওয়া বন্ধ রাখা হয়েছিল একসময়, পরে আবার সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এখনও অনেকেই গবেষণা করছেন এ নিয়ে, সশরীরে দেখতেও যাচ্ছেন সেই জায়গা। অদ্ভুত মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করতে পারেন যে কেউ, যাবেন নাকি একবার সেই গিরিপিথে?

ফিচার ইমেজ- dyatlov-pass.com

Related Articles