Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হিটলারের ঘনিষ্ঠ অফিসার থেকে মোসাদের হিটম্যান: অটো স্কোর্জেনির রহস্যময় রূপান্তর

জুলাই, ১৯৪৩। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন চরমে। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠে ইউরোপ ততদিনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। হিটলারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ইতালির ফ্যাসিস্ট নেতা বেনিতো মুসোলিনিকে ক্ষমতাচ্যুত এবং বন্দী করা হয়েছে। বন্ধুর বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন হিটলার। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে বন্ধুকে মুক্ত করে আনবেন। এ উদ্দেশ্যে হিটলার নিজে জার্মান বিমান বাহিনী এবং সেনাবাহিনী থেকে ছয় জন স্পেশাল এজেন্টের একটা বিশেষ দল বাছাই করলেন। আর তাদের নেতৃত্বের দায়িত্ব তুলে দিলেন এসএস অফিসার অটো স্কোর্জেনির (Otto Skorzeny) হাতে।

অটো স্কোর্জেনি; Source: faz.net

গ্রেপ্তারের পর শত্রুর চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য ইতালিয়ান কর্তৃপক্ষ মুসোলিনিকে তখন বারবার ইতালির বিভিন্ন শহরে স্থানান্তর করছিল। কিন্তু স্কোর্জেনির নেতৃত্বে জার্মান এসএস বাহিনীর অফিসাররা ঠিকই গোপনে তাদের উপর নজরদারি করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তারা নিশ্চিত হয় যে, মুসোলিনিকে ইতালির গ্র্যান স্যাসো পর্বতমালার উপর অবস্থিত ক্যাম্পো ইম্পেরাতোর নামক হোটেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে। দুর্গম পর্বতের উপর অবস্থিত এই হোটেলে যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল ক্যাবল কার, অর্থাৎ তারের উপর ঝুলন্ত গাড়ি দ্বারা।

কিন্তু অপারেশনের মূল পরিকল্পনাকারী হারাল্ড মর্সের (Harald Mors) পরিকল্পনায় এবং স্কোর্জেনির নেতৃত্বে জার্মান প্যারাট্রুপাররা ১২ই সেপ্টেম্বর রাতে ইঞ্জিনবিহীন গ্লাইডারে চড়ে আকাশপথে পর্বত পাড়ি দিয়ে হোটেলে প্রবেশ করে। আকস্মিক আক্রমণে তারা একটি গুলিও না ছুঁড়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ২০০ ইতালিয়ান গার্ডকে পরাজিত করে মুসোলিনিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। স্কোর্জেনি মুসোলিনির সামনে দাঁড়িয়ে যখন বলেন যে, তিনি ফুয়েরারের নির্দেশে তাকে মুক্ত করতে এসেছেন, তখন মুসোলিনি বলেন, “আমি জানতাম, আমার বন্ধু আমাকে কখনও ভুলবে না।

মুসোলিনিকে মুক্ত করার স্কোর্জিনি (গলায় দূরবীণ ঝোলানো); Source: historyinfotos.com

গ্র্যান স্যাসো রেইড (Gran Sasso Raid) বা অপরাশেন আইখ (Operation Eiche) নামে পরিচিত এ অভিযানের পর স্কোর্জেনি লেফটেন্যান্ট কর্ণেল হিসেবে পদোন্নতি পান এবং সেনাবাহিনীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার, আয়রন ক্রসের দ্য নাইট’স ক্রস অর্জন করেন। তার সাফল্যে খুশি হয়ে স্বয়ং হিটলার তার সাথে কয়েক ঘন্টা ব্যাপী সরাসরি আলাপ করেন। এই অভিযানের পর তিনি বিশ্বব্যাপী ‘ইউরোপের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি‘ হিসেবে পরিচিতি পান।

হেইঞ্জ ক্রুগ: মিসরের মিসাইল গবেষক নাৎসি বিজ্ঞানীর অন্তর্ধান রহস্য

১৯৬২ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর। মুসোলিনিকে উদ্ধারের ঠিক ১৯ বছর পরের কথা। হেইঞ্জ ক্রুগ নামে এক জার্মান রকেট বিজ্ঞানী হঠাৎ করে নিঁখোজ হয়ে যান। ক্রুগ ছিলেন প্রায় এক ডজন সাবেক নাৎসি বিজ্ঞানীর একজন, যারা সেই সময় মিসরীয় সেনাবাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক মিসাইল তৈরির কাজ করছিলেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ক্রুগের নিঁখোজ রহস্যের কোন সমাধান পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে উঠে আসে এক অবিশ্বাস্য কাহিনী। ক্রুগকে অপহরণ এবং হত্যা করেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।

ক্রুগ সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরা শুরু থেকেই ইসরায়েলিদের হত্যার লক্ষ ছিলেন। কারণ এই নাৎসি বিজ্ঞানীদের সাহায্যেই হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ সাফল্য অর্জন করেছিলেন। এদের সহযোগিতায়ই হিটলারের জার্মান বাহিনী প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদীকে হত্যা করে। যুদ্ধ শেষে যখন ফিলিস্তিনের ভূমি অবৈধভাবে দখল করে ইহুদীরা ইসরায়েল নামক অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে, তখন এই রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগের উচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই ছিল ভাগ্যক্রমে হত্যাকান্ড থেকে বেঁচে আসা ব্যক্তি, যাদের আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই নাৎসিদের হাতে নিহত হয়েছিল।

হেইঞ্জ ক্রুগ; Source: bild.de

কিন্তু শুধুমাত্র প্রতিশোধপরায়ণতাই নাৎসি বিজ্ঞানীদেরকে হত্যার একমাত্র কারণ ছিল না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল মিসরের সামরিক শক্তি অর্জনকে নস্যাৎ করে দেওয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে, ১৯৫২ সালের মিসরীয় বিপ্লবের পর মোহাম্মদ নাজিব এবং জামাল আব্দুল নাসেরের হাত ধরে মিসরে ধীরে ধীরে আরব জাতীয়তাবাদ তৈরি হতে থাকে। মিসর তাদের সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়ন করার জন্য গবেষক হিসেবে সাবেক জার্মান নাৎসি বিজ্ঞানীদেরকে নিয়োগ দেয়। ইসরায়েল ব্যাপারটাকে ভালো চোখে দেখেনি। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল অবৈধভাবে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে। তারা শুরু থেকেই জানত, তাদেরকে টিকে থাকতে হলে আশেপাশের কোনো আরব রাষ্ট্রকে শক্তিশালী হতে দেওয়া যাবে না এবং আরবদের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি করতে হবে।

কাজেই মিসর যখন জার্মান বিজ্ঞানীদের সহয়াতায় সামরিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পথে এগোচ্ছিল, তখন ইসরায়েল ভয় পেয়ে যায়। মিসর সহ কোনো আরব রাষ্ট্র তখনও ইসরায়েলের অস্তিত্ব মেনে নেয়নি। তার উপর তারা এমন সব বিজ্ঞানীদেরকে কাজে লাগাচ্ছিল, যারা ইহুদীদেরকে অন্তর থেকে ঘৃণা করে। এই দুই শক্তি এক হলে ইসরায়েলের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়তে পারে। কাজেই ইসরায়েল  তাদের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে দায়িত্ব দেয় এই বিজ্ঞানীদেরকে হত্যা করার জন্য। মোসাদের হিটলিস্টে বিজ্ঞানী ক্রুগের নাম ছিল বেশ উপরের দিকে।

ক্রুগ প্রায় প্রতি রাতে ফোনে হুমকি পেতে থাকেন। তিনি বুঝতে পারেন, তার সময় ঘনিয়ে আসছে। তিনি যোগাযোগ করেন স্কোর্জেনির সাথে এই আশায় যে, হিটলারের অত্যন্ত বিশ্বস্ত এই নাৎসি অফিসারই হয়তো পারবে তাকে সাহায্য করতে। তাছাড়া সেই সময় স্পেনে থাকলেও তার কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত স্কোর্জেনি নিজেও মিসর সরকারের অধীনে প্রথমে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিব এবং পরে জামাল আব্দুল নাসেরের উপদেষ্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। একইসাথে তিনি মিসরের সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়ন করছিলেন এবং তাদেরকে ট্রেনিং দেওয়াচ্ছিলেন।

এছাড়াও শত্রুকে ধোঁকা দেওয়ার ব্যাপারেও স্কোর্জেনির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে, ১৯৪৪ সালে মিত্রবাহিনী যখন ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে নৌ এবং আকাশ পথে প্রবেশ করে, তখন স্কোর্জেনি ১৫০ জন ইংরেজিতে পারদর্শী অফিসারকে মিত্রবাহিনীর মতো পোশাক পরিয়ে তাদের সাথে মিশিয়ে ভেতর থেকে তাদের উপর হামলা করিয়ে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ ঘটান

ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল চলাকালীন বন্দী অবস্থায় স্কোর্জেনি; Source: stern.de

যুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে এই অপরাধে তার দুই বছরের সাজা শেষ হওয়ার পরও যখন আমেরিকানরা তাকে মুক্তি দিচ্ছিল না, তখন আবারও তিনি আমেরিকানদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বন্দী অবস্থা থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এসব কারণে ক্রুগ ইসরায়েলি আততায়ীদের হাত থেকে বাঁচার বুদ্ধির জন্য স্কোর্জেনির শরনাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৬২ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে এই স্কোর্জেনির সাথে দেখা করার জন্যই ক্রুগ জার্মানির মিউনিখের শহরতলীতে যান। কিন্তু সেখান থেকে তিনি আর ফেরত আসেন নি। বহু বছর পর, সাংবাদিকদের তদন্তে মোসাদ এজেন্টদের সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, ক্রুগকে সেদিনই তিনজন মোসাদ এজেন্ট হত্যা করে। তারা তার শরীরের উপর এসিড ঢেলে দেয় এবং গলে যাওয়া শরীরের অবশিষ্ট অংশকে গর্তে ফেলে মাটি এবং পাথর দিয়ে চাপা দিয়ে দেয়, যেন কোনো কুকুরও মৃতদেহের সন্ধান না পায়!

এই নৃশংস, বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনা করেছিলেন মোসাদের স্পেশাল অপারেশন বিভাগের প্রধান ইটজাক শামির (Yitzhak Shamir), যিনি পরবর্তীতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আর হত্যাকান্ড বাস্তবায়ন করা তিন এজেন্টের নেতা, যার গুলিতে ক্রুগ নিহত হয়েছিল, তিনি ছিলেন আর কেউ না, স্বয়ং অটো স্কোর্জেনি! ক্রুগ জানতেন না, যে ইহুদী-বিদ্বেষী, হিটলারের বিশ্বস্ত নাৎসি অফিসারের কাছে তিনি সাহায্য চাইতে গিয়েছিলেন, তিনিই ততদিনে মোসাদের এজেন্টে পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন!

স্কোর্জেনির অবিশ্বাস্য রূপান্তর

এটা প্রায় অবিশ্বাস্য যে, হিটলারের ঘনিষ্ঠ এক নাৎসি অফিসার তার সারা জীবনের বিশ্বাস এবং আদর্শের বিপরীতে গিয়ে মোসাদের পক্ষে কাজ করছে, আর মোসাদও ইহুদী হত্যাকারীদের একজনকে বিশ্বাস করে নিজেদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু এটাই মোসাদের চরিত্র। স্বার্থের জন্য তারা যেকোনো ঝুঁকিই নিতে পারে। তারা যখন দেখল যে, তাদের চোখের সামনে একটি মুসলমান রাষ্ট্র ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠছে, তখন তারা তাদের চিরশত্রু হিটলারের ঘনিষ্ঠ নাৎসি অফিসার এবং হিটলারের অর্থমন্ত্রীর জামাতাকেও নিয়োগ করতে পিছপা হলো না।

ইটজাক শামির; Source: alchetron.com

মিসরের মিসাইল প্রকল্প ধ্বংস করার জন্য মোসাদের দরকার ছিল এমন একজন অফিসারকে হাত করা, যে ঐ মিসাইল প্রকল্পে কাজ করা বিজ্ঞানীদের খুব ঘনিষ্ঠ। মোসাদ প্রথমে স্কোর্জেনিক হত্যা করার পরিকল্পনাই করছিল, কিন্তু পরে ইটজাক শামির সিদ্ধান্ত নেন, যেহেতু স্কোর্জেনি এখন আর সরাসরি মিসরের হয়ে কাজ করছেন না, তাই তাকে হত্যা করে খুব বেশি লাভ হবে না, যতটা লাভ হবে তাকে দলে টানতে পারলে। ইসরায়েলি পত্রিকা হারেট্‌জ, অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং গবেষকদের বরাত দিয়ে পুরো অপারেশনটির বিশদ বর্ণনা দিয়েছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী সাবেক মোসাদ এজেন্টরা জানান, স্কোর্জেনিকে দলে রিক্রুট করার দায়িত্ব পায় জো রানান, যে নিজেও স্কোর্জেনির মতো অস্ট্রিয়ান নাগরিক। রানানের দল স্কোর্জেনির উপর ২৪ ঘন্টা নজরদারি করতে থাকে। এই টীমে ছিল আন্‌কে (Anke) নামের অল্প বয়সী এক জার্মান তরুণী, যে পুরোপুরি মোসাদ এজেন্ট না, বরং সাহায্যকারী। এদেরকে হিব্রু ভাষায় বলা হয় সায়ানিত, যাদের কাজ হচ্ছে মূল মোসাদ এজেন্টদের ছদ্মপরিচয়কে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ভূমিকায় অভিনয় করে যাওয়া। এই বিশেষ অপারেশনে আন্‌কের ভূমিকা ছিল রানানের প্রেমিকা হিসেবে।

হিটলারের সাথে স্কোর্জেনি; Source: express.co.uk

১৯৬২ সালের এক বিকালে স্কোর্জেনি এবং তার স্ত্রী যখন রেস্টুরেস্টে বসে ড্রিংক করছিলেন, তখন রানান এবং আন্‌কে তাদের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য আসে। তারা নিজেদের পরিচয় দেয় এক জার্মান টুরিস্ট দম্পতি হিসেবে, যারা ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে পাসপোর্ট সহ সবকিছু হারিয়েছে। রানানের খাঁটি অস্ট্রিয়ান-জার্মান উচ্চারণ শুনে তাদেরকে সন্দেহ করার কোনো কারণ ছিল না। স্কোর্জেনির স্ত্রী, যিনি ছিলেন হিটলারের অর্থমন্ত্রীর মেয়ে, তাদেরকে রাতটা নিজেদের বাসায় কাটানোর আমন্ত্রণ জানান।

দুই দম্পতি স্কোর্জেনির বাসায় আসে। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল, কিন্তু স্কোর্জেনির কাছে রানান-আন্‌কে যুগলের সম্পর্কটাকে একটু অস্বাভাবিক মনে হতে থাকে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেরকম স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকার কথা, সেরকম না, বরং নতুন পরিচিত প্রেমিক-প্রেমিকার মতো সম্পর্ক। হঠাৎ করেই স্কোর্জেনি তার পকেট থেকে পিস্তল বের করে রানান-আন্‌কে যুগলের দিকে তাক করে বসেন এবং বলেন, “আমি জানি, তোমরা কারা এবং কেন এসেছ এখানে। তোমরা মোসাদ এবং তোমরা এসেছ আমাকে খুন করার জন্য।

কঠোর ট্রেনিং পাওয়া রানান বিন্দুমাত্র না চমকে উত্তর দেয়, “তোমার বক্তব্যের প্রথম অংশ ঠিক, আমরা মোসাদ। কিন্তু আমরা যদি তোমাকে মারতেই চাইতাম, তাহলে তুমি অনেক আগেই মারা যেতে।

তার বক্তব্যে প্রভাবিত হন না স্কোর্জেনি। তিনি বলেন, “হতে পারে। কিন্তু আমি ঝুঁকি নিতে চাই না। তোমাদেরকে মেরে ফেলাই আমার জন্য এখন নিরাপদ।

এবার মুখ খোলে আন‌্‌কে, “তুমি ইচ্ছে করলে আমাদেরকে মেরে ফেলতে পার। কিন্তু আমাদের পরে মোসাদের যে টীমটা আসবে, তারা তোমার সাথে আর ড্রিংক করবে না। তারা সরাসরি তোমার মাথার খুলি উড়িয়ে দিবে। তার চেয়ে পিস্তল নামিয়ে রাখ। আমরা কী বলতে চাই শোন।

যুদ্ধকালীন সময়ে পদোন্নতির সময় স্কোর্জেনি; Source: historyinfotos.com

স্কোর্জেনি পিস্তল নামালেন না, কিন্তু তিনি রানানের প্রস্তাব শুনতে রাজি হলেন। রানান যখন তাকে জানাল, স্কোর্জেনিকে মোসাদের সাথে কাজ করতে হবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং তাদের কাজ সম্পর্কে গোপন তথ্য মোসাদকে দিতে হবে এবং এর বিনিময়ে সে প্রচুর টাকা পাবে, স্কোর্জেনি উত্তর দিলেন, তার টাকার দরকার নেই। কিন্তু মোসাদ যদি তাকে একটা জিনিসের নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে তিনি তাদের সাথে কাজ করতে পারেন। সেটা হল উইজেনথালের তালিকা (Simon Wiesenthal) থেকে তার নাম কাটিয়ে দিতে হবে।

সিমন উইজেনথাল ছিল ভিয়েনার কুখ্যাত নাৎসি শিকারী, যে যুদ্ধের পর বিভিন্ন দেশে লুকিয়ে থাকা নাৎসি অফিসারদেরকে খুঁজে বের করত, তাদের যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে প্রমাণ সংগ্রহ করত এবং তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করানোর ব্যবস্থা করত। সে সর্বমোট ১,১০০ নাৎসি যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের সম্মুখীন করেছিল, বিচারে যাদের অনেকের মৃত্যুদন্ড হয়েছিল। মোসাদ স্কোর্জেনির দাবি মেনে নিতে রাজি হয়। আর বিনিময়ে, নিজের বাকি জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তায় স্কোর্জেনি মোসাদের সাথে কাজ করতে রাজি হন। শুরু হয় প্রচন্ড ইহুদীবাদী এবং ইহুদীবিদ্বেষী দুই শত্রুপক্ষের এক অদ্ভুত মৈত্রী।

মোসাদ তাদের কথা রেখেছিল। স্কোর্জেনিকে কখনোই বিচারের সম্মুখীন করা হয়নি কিংবা তাকে হত্যাও করা হয়নি। তার মৃত্যু হয়েছিল ক্যানসারে। আর ক্রুগের মৃত্যুর পর বাকি বিজ্ঞানীরা প্রাণভয়ে জার্মানীতে ফিরে গেলে মিসর তাদের মিসাইল প্রকল্প ওখানেই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। মুসলিম বিশ্ব এক সামরিক পরাশক্তি পাওয়া থেকে হয় বঞ্চিত।

এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে পড়তে পারেন একই বিষয়ের উপর এই লেখকের লেখা বই “স্পাই স্টোরিজ: এসপিওনাজ জগতের অবিশ্বাস্য কিছু সত্য কাহিনি“।

বইটি সংগ্রহ করতে পারেন এখান থেকে: roar.cm/spy-stories

Related Articles