Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হাজার কোটি টাকার যে গুপ্তধনগুলোর সন্ধান পাওয়া যায়নি আজও

‘গুপ্তধন’ শব্দটি শুনলে সেই ছোটবেলা থেকেই আমাদের সবার মনে কেমন যেন অন্যরকম এক রোমাঞ্চ জেগে ওঠে। মনে হয়- “এই রে, বড়লোক হয়ে যাচ্ছি তো! খালি এটা-সেটা খাবো, এটা-ওটা কিনবো…”। এভাবেই হরেক রকম রঙিন স্বপ্ন চোখের সামনে মুহূর্তের জন্য হলেও ভেসে ওঠে।

আপনি যদি এমন স্বপ্নবাজ মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের লেখাটি কিন্তু আপনার জন্যই। কারণ আজ এমন কিছু গুপ্তধনের ব্যাপারে আপনাদের জানাতে যাচ্ছি, যেখানে সঞ্চিত আছে হাজার হাজার কোটি টাকার গুপ্তধন। চাইলে এর মাঝে দুই-একটি জায়গার সন্ধানে অভিযানে নেমে পড়তে পারেন আপনিও!

ক্বিন শি হুয়াংয়ের সমাধিস্তম্ভের সম্পদ

ক্বিন শি হুয়াং চীনের ‘ক্বিন’ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি কারণে চীনের অধিবাসীরা তাকে আজীবন স্মরণ করবে। তিনিই প্রথম সম্রাট যিনি সমগ্র চীনকে একীভূত করতে পেরেছিলেন। সম্রাট হিসেবে ২২০ থেকে ২১০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মৃত্যুর আগপর্যন্ত চীনকে শাসন করে গেছেন তিনি।

ক্বিন শি হুয়াং; Source: Wikimedia Commons

জীবিতাবস্থায় রাজকীয় জীবন কাটানো এ মানুষটি মৃত্যুর পরেও সেই একইরকম বিলাসী জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি তার সেনাবাহিনীতে হাজার হাজার লোককে জোর করেই ভর্তি করিয়েছিলেন। তাদেরকে বাধ্য করেছিলেন তার জন্য সুবিশাল এক সমাধিসৌধ তৈরী করতে। কথিত আছে, নির্মাণের সময় রাজার পরকালে ব্যবহারের জন্য সেই সমাধিসৌধে নাকি বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ লুকিয়ে রাখা হয়েছিলো।

সম্রাটের কল্পিত সমাধিস্তম্ভ; Source: ancient-origins.net

তবে খুব শীঘ্রই যে সেই সম্পদের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না, সে কথাটি নির্দ্বিধায় বলা যায়। কারণ বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা ধারণা করছেন সেই সমাধিসৌধের নানা জায়গায় বানানো হয়েছিলো অনেকগুলো ফাঁদ, যেগুলো আজও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণস্বরুপ তারা বলেছেন পারদ দিয়ে পূর্ণ বড় বড় গুপ্ত জলাশয়ের কথা, যেগুলো ঘিরে থাকতে পারে সম্রাটের কবরকে। সেখানে যে কী লুকনো আছে, সেটা নিয়েও পুরোপুরি নিশ্চিত নন তারা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সেখানে জেড (সবুজ মূল্যবান পাথর), স্বর্ণ, ব্রোঞ্জ, চমৎকার ফুলদানি এবং আরো অনেক মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত চীনা ঐতিহাসিক লিউ জিয়াংয়ের (৭৭-৬ খ্রি.পূ.) একটি কথাই যথেষ্ট, “ক্বিন শি হুয়াংয়ের মতো এতটা বিলাসীতার সাথে কাউকেই কখনো কবর দেয়া হয় নি।

কপার স্ক্রলে উল্লিখিত হাজার কোটি টাকা দামের গুপ্তধন

কপার স্ক্রলের সন্ধান পাওয়া যায় আজ থেকে আনুমানিক ৬৫ বছর আগে, ১৯৫২ সালের ১৪ মার্চ। ইসরায়েলের ক্বুমরানে মিলেছিলো এর সন্ধান। বহুল আলোচিত ডেড সী স্ক্রলের অংশ হলেও সেগুলোর সাথে কপার স্ক্রলের বেশ ভালো পার্থক্য রয়েছে। ডেড সী স্ক্রলে লেখালেখির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে পার্চমেন্ট কিংবা প্যাপিরাস। অন্যদিকে কপার স্ক্রলে ব্যবহার করা হয়েছে ধাতু, আরো ভালো করে বলতে গেলে শতকরা প্রায় ১ ভাগ টিন মিশ্রিত কপার।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এসব স্ক্রলে কোনো সাহিত্যকর্ম নেই, বরং আছে একটি তালিকা! কী? গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া শুরু করলেন বুঝি? তাহলে আরো পিলে চমকানো খবর আসছে।

কপার স্ক্রলে; Source: Coppersmc

কপার স্ক্রলে আছে ৬৪টি জায়গার নাম, যার মাঝে ৬৩টি জায়গাতেই উল্লেখ করা হয়েছে স্বর্ণ ও রুপা থাকার কথা। সেটাও আমাদের পরিচিত ভরির হিসেবে নয়, একেবারে টনের হিসেবে! এছাড়াও উল্লেখ আছে মূল্যবান রত্ন, জার ভর্তি মুদ্রা ও পুরোহিতদের পোষাক থাকার কথা। কপার স্ক্রলে যে পরিমাণ সম্পদের কথা উল্লেখ করা আছে, সেগুলোর মোট ভর প্রায় ৪,৬০০ ট্যালেন্ট। ট্যালেন্ট হলো ভর পরিমাপের প্রাচীন একটি একক।

1 Talent of Gold = 50 kg

সব মিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে যে, কপার স্ক্রলে উল্লিখিত জায়গাগুলোতে মোট সম্পদের পরিমাণ হাজার কোটি টাকারও বেশি! বেরিয়ে পড়বেন নাকি এর সন্ধানে? কারণ আজও এর সন্ধান পায় নি কেউই।

রাজা জনের ধন-রত্ন

১১৯৯ থেকে ১২১৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় সতের বছর ইংল্যান্ডের রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জন। তিনি অনেকের কাছে কিং জন ‘দ্য ব্যাড’ নামেও পরিচিত। স্বৈরাচারী শাসন নীতি, সংকীর্ণ মনা ও অত্যাচারী স্বভাবই তাকে এ ডাকনামটি জুটিয়ে দেয়। বিভিন্ন জায়গা অবরোধের সময় সেখান থেকে সোনা, রুপা এবং এমনই আরো অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্যাদি সংগ্রহ করা ছিলো তার নেশা। জনের ধন-রত্ন নিয়েও বেশ জনপ্রিয় এক কাহিনী আছে।

রাজা জন; Source: De Re Militari

১২১৬ সালের অক্টোবরে নরফোকের এক বন্দরে ভ্রমণে গিয়েছিলেন রাজা। কিন্তু দুর্ভাগ্যই বলতে হবে তার। কারণ সেখানে গিয়ে রাজা আমাশয়ে আক্রান্ত হন। ফিরে আসার সময় আর আগের কর্দমাক্ত ও জলাভূমিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে আসতে মন চাইলো না তার। তাই একটু ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে আসতে চাইলেন তিনি। ওদিকে তার সাথে থাকা অন্যান্যরা জলাভূমির রাস্তা দিয়েই এগোতে লাগলো। রাজার অনেক মূল্যবান ধন-রত্ন, স্বর্ণমুদ্রা এবং আরো নানা মূল্যবান জিনিস ছিলো দ্বিতীয় এ দলটির সাথেই।

কিন্তু দুর্ভাগ্যই বলতে হবে রাজাবিহীন দলটির। কারণ ফিরে আসার সময় এ দলটি পানিতে ডুবে যায়। সেই সাথে ডুবে যায় তাদের সাথে থাকা যাবতীয় সম্পদও। সম্পদের দুঃখেই কিনা কে জানে, এর অল্প কিছুদিন পরে মারা যান রাজা নিজেও। ১৪ অক্টোবর পরপারে পাড়ি জমান তিনি।

হারিয়ে যাওয়া পাইতিতি শহরের অজস্র সম্পদ

পাইতিতি এমন এক শহর, যার দেখা মিলবে কিংবদন্তীতে। একে ইনকা সভ্যতার ‘হারানো শহর’ বলে কেউ। কেউ আবার রহস্যময়তার আবেশ ছড়াতে ব্যবহার করে ‘গোপন শহর’ কথাটি। এর প্রকৃত অবস্থান যে কোথায় তা নিয়েও রয়েছে মতভেদ। আন্দিজ পর্বতমালার পূর্বে, পেরুর দক্ষিণ-পূর্বে, বলিভিয়ার উত্তরাঞ্চলে কিংবা ব্রাজিলের দক্ষিণ-পশ্চিমে কোথাও শহরটির অবস্থান বলে ধারণা করা হয়। কিংবদন্তীতে আছে, ইনকা সভ্যতার লোকেরা যখন স্প্যানিশ দখলদারদের হাত থেকে জান বাঁচাতে পালাচ্ছিলো, তখন এই শহরেই তাদের বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ লুকিয়ে রেখে যায় তারা।

শিল্পীর কল্পনায় পাইতিতি; Source: theodysseyonline.com

এরপর থেকে প্রজন্মান্তরে সেই সম্পদের কথা ইনকাদের মুখে মুখে ভেসে বেড়াতে থাকে। আমরা এর কথা জানতে পেরেছি ইনকাদেরই বংশধর কেচুয়াদের মাধ্যমে। সোনা, রুপা এবং এমনই আরো অনেক মূল্যবান সম্পদ তারা কীভাবে লুকিয়ে রেখেছিলো, সেই গল্প তারা আজও বলে বেড়ায়। পাহাড়ের আড়ালে থাকা পাইতিতি নাকি তৎকালে বেশ উন্নত এক শহর ছিলো। কতগুলো নয়নাভিরাম ঝর্না চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছিলো শহরটিকে। যদি পাইতিতির কিংবদন্তী সত্য হয়ে থাকে, তবে সেখানে লুকনো ধন-সম্পদের মূল্য আজকের বাজারে দশ বিলিয়ন ইউএস ডলারেরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হয়!

নেফারতিতির হারানো সমাধি

রানী নেফারতিতি ও তার স্বামী আখেনাতেন মিলে প্রাচীন মিশরের ধর্ম ব্যবস্থায় এক বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। কারণ তারা মাত্র একজন দেবতার পূজা করতেন- আতেন। তারা যে সময়ে মিশর শাসন করেছেন, সেই সময়টাকে প্রাচীন মিশরের ইতিহাসের সবচেয়ে সম্পদশালী কাল বলে একবাক্যে মেনে নেন সবাই।

রানী নেফারতিতির আবক্ষ মূর্তি; Source: independent.co.uk

নেফারতিতিকে যে ঠিক কোন জায়গায় সমাহিত করা হয়েছিলো, তার সঠিক সন্ধান মেলে নি আজও। রানী হিসেবে তার প্রভাব-প্রতিপত্তির কথা বিবেচনা করে ইতিহাসবিদগণ ধারণা করেন তার কবরেও সন্ধান মিলতে পারে আশাতীত পরিমাণ ধন-সম্পদের। অনেক ইতিহাসবেত্তাই মনে করছেন রাজা তুতেনখামুনের সমাধিসৌধের ভেতরেই হয়তো কোথাও চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন নেফারতিতি। তবে সেই জায়গাটি যে কোথায় তা আজও এক অমীমাংসিত রহস্য।

শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের ‘ভল্ট বি’

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কেরালায় অবস্থিত জগদ্বিখ্যাত এ শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দির। এই মন্দিরে থাকা ধন-রত্নের অর্থমূল্য শুনলে যে কারো চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। ২০১১ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে মন্দিরের ৫টি ভল্ট খোলা হয়। সেখান থেকে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ ধন-রত্ন, মূল্যবান মুদ্রা ও দেব-দেবীর মূর্তি। ধারণা করা হয়, সেগুলোর বাজার মূল্য ২২ বিলিয়ন ইউএস ডলারের কাছাকাছি!

শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দির; Source: theeventchronicle.com

মন্দিরের কিছু ধন-রত্ন; Source: forbes.com

মন্দিরের অভ্যন্তরের অংশবিশেষ; Source: forbes.com

এ তো কিছুই না। শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের আসল আকর্ষণ তো এর ‘ভল্ট বি’। এই ভল্টটিকে ঘিরে রহস্য এবং কিংবদন্তীর কোনো শেষ নেই। কারণ একটিই। অন্য ভল্টগুলো খোলা হলেও এটি এখনো খোলা হয় নি। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট থেকে জানানো হয়েছে ‘ভল্ট এ’-তে থাকা মূল্যবান সামগ্রীগুলো ঠিকমতো নথিভুক্ত করা গেলে তবেই খোলার অনুমতি দেয়া হবে এ ভল্টটি। তবে এমন ঘোষণায় বসে নেই গবেষকেরা। বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তারা যে দাবী করছেন তাতে বিস্ময়ে মুখ হাঁ হয়ে যেতে বাধ্য। তাদের মতে ভল্ট বি-তে মজুদকৃত সম্পদের বাজারমূল্য ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে!

ধারণা করা হয়, ভল্ট বি’র দরজার সামনে এমন দুটো কোবরার প্রতিকৃতি রয়েছে; Source: forbes.com

কিংবদন্তী প্রচলিত আছে যে, ভল্ট বি’র দরজা ভেতর থেকে পাহারা দিয়ে রেখেছে বিশালাকৃতির দুটি কোবরা। যদি কোনো অনুপ্রবেশকারী সম্পদের লোভে সেখানে প্রবেশ করেও থাকে, তবে সাথে সাথেই সাপের ছোবলে পরপারে পাড়ি জমাবে সে। তবে এ কুসংস্কারের বিরোধীতা করেছিলেন পরিদর্শক জেনারেল বিনোদ। তিনি সুপ্রিম কোর্টকে জানান যে, তারা জানামতে ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে সাতবার ভল্ট বি খোলা হয়েছে। কোনোবারই লোকমুখে প্রচলিত সাপের কামড় খেয়ে মারা যায় নি কেউ।

ফিচার ইমেজ- moneysupermarket.com

Related Articles