Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মৃত মানুষ জেগে ওঠার অভূতপূর্ব কিছু ঘটনা

সিনেমা বা নাটকের প্রধান চরিত্র মারা যাওয়ার পর আবার পুনর্জীবিত হওয়া অথবা পুনর্জন্ম নেওয়ার ব্যাপারটা নতুন কিছু না। কাহিনীর স্বার্থে পরিচালকেরা তাদেরকে মেরে ফেলেন, এরপর সেই কারণে আবার বাঁচিয়ে তুলেন বা অন্য পন্থায় তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। সিনেমার মতো করে বাস্তব জীবনেও মানুষ অমরত্ব লাভের জন্য কত শত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেই প্রাচীনকাল থেকে। তবে কিছু মানুষ মারা যাওয়ার পর (প্রকৃতপক্ষে মারা যান নি) পৃথিবীর বুকে আবার ফেরত এসে অমরত্ব বা পুনর্জন্মের সব গল্পকেও যেন হার মানিয়ে দিয়েছেন। সেরকমই কিছু ঘটনা নিয়ে সাজিয়েছি আমাদের আজকের এই প্রবন্ধ।

অলৌকিক আলো

অ্যানালিয়া বাউটার নামের এক আর্জেন্টিনীয় নারী যখন পঞ্চমবারের মতো গর্ভবতী হয়েছিলেন, সেই বার নির্ধারিত সময়ের ১২ সপ্তাহ আগেই তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। সন্তান ডেলিভারি দেওয়ার পর ডাক্তার তাকে জানান যে, তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেছেন। মর্মাহত অ্যানা এবং তার স্বামী একটি মৃত্যুসনদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। তবে ঘটনার ১২ ঘণ্টার পর শেষবারের মতো তাদের কন্যা সন্তানের মৃতদেহ দেখার জন্যে তারা আবার হাসপাতালের মর্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ততক্ষণে একে একে হাসপাতালের ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ সহ গাইনোকোলজিস্ট, এমনকি একজন নিনিটোলজিস্ট পর্যন্ত লাশ দেখে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, মেয়েটি মৃত।

মায়ের সাথে লুস মিলাগ্রস; Source: Republica

কিন্তু যখন কফিনের মুখ খোলা হয়, অ্যানা তখন মেয়ের গাল স্পর্শ করলে তার মৃতদেহ মৃদুভাবে কেঁপে ওঠে এবং সে আস্তে আস্তে কাঁদতে শুরু করে। প্রথমে অ্যানা ভাবেন ব্যাপারটি নিছকই তার কল্পনা, পরক্ষণেই তার ভুল ভাঙে এবং তিনি বুঝতে পারেন যে, তার সন্তান বেঁচে আছে! মেয়েটির নাম রাখা হয় লুস মিরাগ্রস অর্থাৎ অলৌকিক আলো।

আলভারো গার্জা জুনিয়র

প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের দিকে মিনেসোটা এবং উত্তর ডাকোটার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ‘রেড রিভার’ যখন জমাট বাঁধতে শুরু করে, তখন সেটা পরিণত হয় শিশুদের অস্থায়ী খেলার মাঠে। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর মাসের ২১ তারিখ আলভারো গার্জাও খেলছিল জমাটবাঁধা রেড রিভারের উপর। খেলতে খেলতে হঠাৎ বরফের স্তর ভেঙে ভেতরে পড়ে গেলে প্রায় ৪৫ মিনিট খোঁজাখুঁজি করার পর তাকে অজ্ঞান অবস্থায় বরফের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। তার নাড়িতে কোনো স্পন্দন ছিল না, এমনকি তার শরীরের তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিগ্রিরও কম। সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা বাইপাস মেশিন দিয়ে তার শরীর উষ্ণ করেন এবং পাইপ দিয়ে ফুসফুসে জমে থাকা পানি বের করার পর তার হৃদস্পন্দন আবার চালু হয়।

বরফে জমাটবাঁধা রেড রিভার; Source: Wikimedia Commons

চার দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সে ক্ষীণভাবে নড়াচড়া করতে শুরু করে এবং সতেরো দিন পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রথমে কিছুদিন তার চলাফেরা করতে কষ্ট হলেও, ধীরে ধীরে তার শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়।

আমি কি ভোট দিয়েছি?

Source: News.com.au

২০১২ সালের যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা। মিশিগানের এক ভোটকেন্দ্রে টাই হাউস্টন নামক এক সেবিকা ব্যালট পেপার জমা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি এক নারীর চিৎকার শুনতে পান। তিনি দ্রুত তার কাছে ছুটে গেলেন। নারীটির স্বামী পথিমধ্যে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তিনি ভয়ে চিৎকার করেছিলেন। হাউস্টন পরীক্ষা করে বুঝতে পারলেন, লোকটির হ্রদক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি তাকে মাটিতে শুইয়ে সতর্কতার সাথে সিপিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করতে থাকেন। হাউস্টনের দক্ষতায় কিছুক্ষণের মধ্যেই পুনরায় হৃদক্রিয়া শুরু হয় লোকটির। মৃত্যুর একদম কাছ থেকে ফিরে আসা লোকটি উঠে বসলেন এক সময়। এরপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি তার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন, “এই! আমি কি ভোট দিয়েছি?”

জোহানেসবার্গের ভূত

২০১১ সালের জুলাই মাসে আশি বছর বয়সী এক আফ্রিকান বৃদ্ধকে মৃত ভেবে তার পরিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খবর দেয় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজন করার জন্য। কোম্পানির গাড়ির ড্রাইভারকে পাঠানো হয় বৃদ্ধের নাড়ি এবং হৃদস্পন্দন পরীক্ষা করে দেখার জন্য; চালক বেচারা কোনো স্পন্দন খুঁজে না পেয়ে বৃদ্ধের লাশটি মর্গে নিয়ে যায়। সেখানে হিমাগারে রাখা হয় হতভাগ্য বৃদ্ধের মরদেহ।

Source: Gizmodo

এর ঠিক ২১ ঘণ্টা পর ঘটে অদ্ভুত এক কাণ্ড। হিমাগারে আবদ্ধ অবস্থায় রাখা বৃদ্ধ জেগে উঠে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। তার চিৎকার শুনে কর্মচারীরা পিলে চমকে উঠেন। বৃদ্ধকে ভূত ভেবে সবাই মর্গ ছেড়ে পালিয়ে যান। ভীতসন্ত্রস্ত মর্গের মালিক পুলিশে ফোন দেন এবং তারা পোঁছানোর আগ পর্যন্ত সবাই বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন। পুলিশ আসার পর বৃদ্ধের অসার দেহকে ফ্রিজ থেকে বের করা তারপর অতিদ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান যে, হঠাৎ হাঁপানি ওঠার কারণে সাময়িকভাবে তার হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল!

লি ঝিউফেং

৯৫ বছর বয়সী কারো হঠাৎ করে মারা যাওয়ার ব্যাপারটা একদম অস্বাভাবিক কিছু না। এই বয়সের মানুষেরা বাঁচতে বাঁচতে ক্লান্ত হয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করেন। সেক্ষেত্রে মৃত্যুটা তার কাছে হয়তো কাঙ্ক্ষিত স্বস্তি পাওয়ার মতোই। তিনি পরপারে চলে যাওয়ার পর আমাদের কাছেও ব্যাপারটা ধীরে ধীরে সয়ে যায়। আমরা ভুলে যাই সেই দুঃখের কথা। আর আমরা কখনও তার মৃত্যুর ৬/৭ দিন পর তিনি আবার ফিরে আসবেন, সেই অপেক্ষায় বসে থাকি না। তাছাড়া বেঁচে থাকাটা হয়তো আনন্দের, কিন্তু আপনি বেঁচে উঠে যখন নিজেকে আবিস্কার করবেন বদ্ধ কফিনের ভেতর, তখন ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়াবে মৃত্যুর থেকেও বেশি ভয়ংকর!

লি ঝিউফেং; Source: The Express Tribune

সেরকমই একজনের গল্প বলবো এখন। চাইনিজ সেই বৃদ্ধ মহিলার নাম লি ঝিউফেং। ৯৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধাকে একদিন তার বাসগৃহে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি ২ সপ্তাহ ধরে মাথার জখমে ভুগছিলেন। প্রতিবেশী কিংওয়াং তাকে পরীক্ষা করে দেখে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর যা হবার তাই হলো। শেষকৃত্যের জন্য মহিলাকে একটি কফিনে ভরে সংরক্ষণ করে রাখা হলো। আত্মীয় স্বজনরা এসে ভিড় জমাতে লাগলো তাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য। তাকে দাফন করার ঠিক আগের দিন জনাব কিংওয়াং তার কফিনের কাছে গেলেন। এরপর তিনি বিস্ময়ে হতবাক অবাক হয়ে গেলেন। কারণ, কফিনটি ছিলো সম্পূর্ন খালি। খানিকক্ষণ খুঁজাখুঁজি করার পর সেই বৃদ্ধাকে দেখা গেলো তিনি রান্নাঘরে ব্যস্তভাবে মাছ ভাজি করছেন!

এরিকা ও এলায়না

টেক্সাসের মিসৌরি শহরের বাসিন্দা এরিকা নাইগ্রেলি। শহরেরই এক উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি ইংরেজি পড়াতেন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৬ সপ্তাহের গর্ভবতী অবস্থায় তিনি স্কুলে যান ক্লাস নিতে। ক্লাস নিতে নিতে হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন এবং এক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার স্বামী নাথান একই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। সাথে সাথে ৯১১ ইমার্জেন্সিতে ফোন দেওয়া হয়। মধ্যবর্তী সময়ে সহকর্মীরা একটি ডিফাইব্রিলেটরের সাহায্যে সিপিআর পদ্ধতিতে তার হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। জরুরী সেবায় নিয়োজিত কর্মীরা খানিকক্ষণ পর এসে এরিকাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান এবং সেখানে চিকিৎসকরা তাকে অচেতন অবস্থাতেই দ্রুত সিজার করানোর সিদ্ধান্ত নেন।

শিশু এলায়না এবং তার বাবা-মা; Source: CNN

জরুরী ভিত্তিতে সিজারের মাধ্যমে এরিকার সন্তানের জন্ম দেওয়া হলেও সদ্য প্রসূত সন্তানকে মায়ের কোলে তুলে দেয়া হলো না। কারণ, এরিকা তখন আর বেঁচে নেই। তার হৃৎস্পন্দন থেমে যাওয়ায় ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপরই ঘটে অবাক করা ঘটনা। ডাক্তার এরিকার রুমে ফিরে এসে দেখেন, তার হৃদস্পন্দন ফিরে এসেছে! পরবর্তী পাঁচদিন তিনি কোমায় ছিলেন। সেই সময় চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা করার পর আবিস্কার করেন, এরিকা হাইপারট্রফিক কার্ডিয়োমিওপ্যাথি নামের হৃদরোগে আক্রান্ত, যে কারণে হৃদপেশি ফুলে যায় এবং রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়। এরিকা আর তার নবজাত শিশুকে আরও দুই সপ্তাহ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। মা-মেয়ে দুজনেই বর্তমানে সুস্থ আছেন।

ফিচার ইমেজ- HBO

Related Articles