Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অভিশপ্ত আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের কথা

রোনাল্ড রিগান, আমেরিকার ৪০ তম প্রেসিডেন্ট। ১৯৮০ সালে যখন তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন, তারা মাথার উপর ঝুলছিল ১৪০ বছর পুরোনো এক অভিশাপ। প্রায় দেড় শতাব্দী ধরে ৭ জন প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর কারণ হিসেবে এই অভিশাপকে দায়ী করে থাকে অনেকেই। অভিশাপকে সত্য করতেই যেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অফিসে জয়েন করার ৬৯তম দিনে হামলা হলো রিগানের উপর, গুলি লাগল তার বুকের বামদিকে। তবে কি সেই অভিশাপ সত্যি হতে চলেছে? প্রায় দুই শতাব্দী পেছনে ফিরে চলুন দেখা যাক কখন শুরু এই অভিশাপের।

রিগানকে গুলি করার পর আততায়ীকে ঘিরে ধরে নিরাপত্তাকর্মীরা, Source: rarehistoricalphoto.com

স্বাধীনতার পর থেকেই আমেরিকান সরকার পশ্চিমে নিজেদের সীমানা বাড়াতে থাকে। সেসময় আমেরিকার পশ্চিম দিকে রেড ইন্ডিয়ানরা ছিল সংখ্যাগুরু। ফলে যুদ্ধ করে জায়গা দখল করে কিংবা ইন্ডিয়ানদের সাথে চুক্তির মাধ্যমে জায়গা কিনে আমেরিকান সরকার জনবসতি স্থাপন শুরু করে। ১৮০০ সালে ইন্ডিয়ানা রাজ্যের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন। শুরু থেকেই তিনি ইন্ডিয়ানায় ব্যাপক জনবসতি করার লক্ষ্যে কাজ করতে থাকেন। এর প্রেক্ষিতে তিনি রেড ইন্ডিয়ানদের সাথে বিভিন্ন চুক্তি করতে থাকেন যাতে অন্যরা এসে নিরাপদে বাস করতে পারে। ১৮০৯ সালে রেড ইন্ডিয়ান নেতাদের সাথে এক চুক্তির মাধ্যমে হ্যারিসন প্রায় বারো হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা কিনে নেন তাদের কাছ থেকে। এই চুক্তিটি ফোর্ট ওয়েন-এর চুক্তি নামে পরিচিত।

হ্যারিসন,  Source: thoughtco.com

ঠিক সেসময় ‘তেন্সকওয়াতাওয়া’ নামের একজন রেড ইন্ডিয়ান আমেরিকানদের সাথে চুক্তির বিরোধিতা শুরু করে ইন্ডিয়ানদের আগের মতো জীবন যাপনে ফিরে যাবার আহ্বান শুরু করে। তিনি ‘দ্য প্রফেট’ নামে পরিচিত ছিলেন। প্রফেট এবং তার ভাই ‘তেকুমসেহ’ ফোর্ট ওয়েন চুক্তির বিরোধিতা শুরু করে। আমেরিকার জমির মালিক সকল রেড ইন্ডিয়ান গোত্র, তাই সবার সম্মতি না থাকলে বিক্রি করা যাবে না, এই যুক্তিতে দুই ভাই আমেরিকান সরকারের বিরোধীতা শুরু করে।

তেন্সকওয়াতাওয়া, Source: americanyamp. Artist: George Catlin

তবে তারা ভাল মতোই জানত সরাসরি যুদ্ধে আমেরিকার সাথে পারা যাবে না। তাই সরকারের বিরুদ্ধে কিছু না বলে তারা রেড ইন্ডিয়ান নেতাদের ভয় দেখানো শুরু করে। দুই ভাই একটি শহরের প্রতিষ্ঠা করে, আমেরিকানরা যার নাম দিয়েছিল ‘প্রফেট টাউন’। মূলত এই শহরই ছিল দুই ভাইয়ের বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দু। যেসব রেড ইন্ডিয়ান নেতারা ফোর্ট ওয়েন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল, তেকুমসেহ তাদের ভয় দেখানো শুরু করে, সেই সাথে যারা এই চুক্তির পক্ষে ছিল তাদেরও নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রফেট টাউনে তাদের বিদ্রোহে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাতে থাকে। তার মতে ফোর্ট ওয়েন চুক্তি একটি অবৈধ চুক্তি।

তেকুমসেহ, Source: creekdontrise

১৮১০ সালে তেকুমসেহ’র সাথে হ্যারিসনের বৈঠক হয়। তেকুমসেহ দাবি করে ফোর্ট ওয়েন চুক্তি বাতিল করতে এবং বিক্রিত জমিতে যেন কোনো জনবসতি না হয় সে ব্যাপারে হুমকি দেয়। স্বাভাবিকভাবেই হ্যারিসন এই দাবি অস্বীকার করে। তেকুমসেহ হুমকি দেয় যদি যুদ্ধ লেগে যায়, তাহলে তারা ব্রিটিশদের সাহায্য চাবে। আর সেসময় আমেরিকার সাথে ব্রিটেনের সম্পর্ক ভাল ছিল না। ১৮১০ সালে কানাডার ব্রিটিশ এজেন্টরা রেড ইন্ডিয়ানদের সাথে  চুক্তি করেছিল রেড ইন্ডিয়ানদের রক্ষা করার। আর এই সুযোগ নিতে চেয়েছিল তেকুমসেহ।

১৮১১ সালের আগস্টে হ্যারিসন এবং তেকুমসেহ এর আবারো বৈঠক হয়। তেকুমসেহ হ্যারিসনকে আশ্বস্ত করে যে তারা দুই ভাই শান্তির পক্ষে। কিন্তু তেকুমসেহ ভেতরে ভেতরে অন্য পরিকল্পনা করছিল। বৈঠকের কিছুদিন পরেই হ্যারিসন বাণিজ্যিক কাজে কেন্টাকি যান। এ সময় তেকুমসেহ দক্ষিণের কয়েকটি গোত্রের সাথে চুক্তি করে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে চাচ্ছিল। বেশিরভাগ গোত্রই তেকুমসেহকে পাত্তা দেয়নি। তবে কিছু সমর্থক ঠিকই পেয়ে যায়, তাদের নিয়েই সে একটি সেনাবাহিনী গঠন করে ফেলে।

ইতোমধ্যে ভারপ্রাপ্ত গভর্নর হ্যারিসনকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়ে তাকে ফিরে আসতে বলেন। হ্যারিসন দ্রুত ফিরে এসে মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের কাজ শুরু করেন। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে তাকে তেকুমসেহ’র বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবার অনুমতিও দিয়ে দেয়। ২৫০ জনের নিয়মিত বাহিনী এবং প্রায় ৭০০ জনের মিলিশিয়া বাহিনী নিয়ে হ্যারিসনের সেনাবাহিনী প্রফেট টাউনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

সে বছরেরই ৬ নভেম্বর তারা প্রফেট টাউনের কাছাকাছি পৌঁছে যায় এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে। সেদিন যুদ্ধ না হলেও পরদিন হয় মূল যুদ্ধ। আমেরিকানদের উন্নত যুদ্ধ কৌশলের কাছে রেড ইন্ডিয়ানদের পুরনো রণকৌশল কোনো কাজে আসেনি স্বাভাবিকভাবেই। শোচনীয় পরাজয় ঘটে রেড ইন্ডিয়ানদের।

যুদ্ধে পরাজয়ের পর তেন্সকওয়াতাওয়া হ্যারিসনকে অভিশাপ দেয়। মজার ব্যাপার এই অভিশাপটি ঠিক কিভাবে দেয়া হয়েছিল তার কোনো সঠিক তথ্য নেই। এই অভিশাপের বেশ কয়েকটি ভার্সন আছে। এক ভার্সনে আছে- “হ্যারিসন যে বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবে এবং সে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থাতেই মারা যাবে। শুধু তাই না, এরপর থেকে প্রতি বিশ বছর পর যেসব প্রেসিডেন্ট আসবে তারাও প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় মারা যাবে।” আরেক ভার্সনে আছে- “হ্যারিসন যে বছর নির্বাচিত হবে, সে বছরের শেষ অংক দিয়ে যেসব বছরে নির্বাচন হবে, সেসব বছরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টরা সবাই প্রেসিডেন্ট অবস্থায় মারা যাবে (১৮৪০ হলে যেসব বছরের শেষে ০ আছে সেসব বছরের নির্বাচনের প্রেসিডেন্টরা)।” এই অভিশাপের অনেকগুলো নাম আছে- Curse of Tippecanoe, Tecumseh’s Curse, the Presidential Curse, Zero-Year Curse, the Twenty-Year Curse, the Twenty-Year Presidential Jinx. চলুন দেখে আসা যাক কেমন ছিল ‘অভিশপ্ত’ প্রেসিডেন্টদের শাসনামল।

হ্যারিসন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন ১৮৪০ সালে। মার্চ মাসের ঠান্ডা এক দিনে তিনি তার অভিষেক ভাষণ দেন। তার লম্বা ভাষণের সময় বৃষ্টি শুরু হয়। অভিশাপের কারণেই কি-না কে জানে, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। অফিসে বসার এক মাসের মধ্যে সেই নিউমোনিয়ায় মারা যান।

বিশ বছর পর, ১৮৬০ সালে প্রেসিডেন্ট হন আব্রাহাম লিংকন। তার প্রথম টার্মের পুরোটাই কেটে যায় গৃহযুদ্ধ থামাতে। ১৮৬৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন লিংকন। ১৮৬৫ সালের ৯ এপ্রিল গৃহযুদ্ধ শেষ হয় আর ঠিক পাঁচ দিন পর আততায়ীর হাতে নিহত হন তিনি। ফোর্ড থিয়েটারে নাটক দেখার সময় পয়েন্ট ব্লাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে হত্যা করা হয় লিংকনকে।

আব্রাহাম লিংকন, Source: indiaopines.com

এরপর ১৮৮০, প্রেসিডেন্ট হলেন জেমস গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের ২ জুলাই বাল্টিমোর রেলওয়ে স্টেশনে আততায়ীর গুলিতে আহত হন তিনি। হাতে এবং পিঠে গুলি লাগে তার, ডাক্তারদের অনেক চেষ্টাও তাকে বাঁচাতে পারেনি মৃত্যুর হাত থেকে। ১১ সপ্তাহ কষ্ট ভোগ করার পর ১৯ সেপ্টেম্বর মারা যান গারফিল্ড।

জেমস গারফিল্ড, Source: Bio.com

ঠিক ২০ বছর পর ১৯০০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হন উইলিয়াম ম্যাককেনলি। এর আগে ১৮৯৬ সালে তিনি প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছিলেন। নতুন শতাব্দীর শুরু থেকেই ইউরোপ ছিল উত্তপ্ত। আসন্ন বিশ্বযুদ্ধের আঁচ কিছুটা হলেও টের পাওয়া যাচ্ছিল। এ কারণে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা টিম তার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সেসবে কান না দিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর ৫০ হাজার মানুষের সামনে এক বক্তৃতা দেন। সেখানে তাকে হত্যার জন্য চেষ্টা করা হলেও তাকে চিনতে না পারায় তিনি বেঁচে যান। কিন্তু সেটা মাত্র একদিনের জন্য। পরদিনই টেম্পল অব মিউজিকে তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে আততায়ী। গুলি করে দুটি, তলপেটে লাগে দুটি গুলিই। দ্রুত চিকিৎসা দেয়াতে তার অবস্থা কিছুটা হলেও উন্নত হচ্ছিল, কিন্তু পাকস্থলিতে রক্ত চলাচল বাধা সৃষ্টি হওয়ায় (যা ডাক্তাররা ধরতে পারেননি) ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যান ম্যাককেনলি

উইলিয়াম ম্যাককেনলি, Source: bio.com

পরের দু’জন ওয়ারেন হার্ডিং এবং ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট আততায়ীর হাতে মারা যাননি। তবে মারা গেছেন প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থাতেই! হার্ডিং ছিলেন প্রথম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কানাডা সফরে যান। ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় ৫০ হাজার মানুষের সামনে এক বক্তৃতা দেন তিনি। ব্যস্ত শিডিউলের কারণে সেদিনই তিনি সিয়াটলে চলে যান। ২৭ জুলাই রাতে ট্রেনে থাকা অবস্থায় বুক ব্যথার কারণে তার ব্যাক্তিগত ডাক্তারদের ডাকেন। দুজন ডাক্তার দু’রকম মত দেন, একজন বলেন তার খাবারের সমস্যা হয়েছে, আরেকজন বলেন হার্টের সমস্যা। ট্রেন দ্রুত স্যান ফ্রান্সিস্কোর দিকে এগিয়ে যায়। ২৯ জুলাই স্যান ফ্রান্সিস্কো পৌঁছলে তিনি সুস্থ বোধ করছেন বলে ট্রেন থেকে হেঁটেই যান কারো সাহায্য ছাড়াই। সেখান থেকে হোটেলে গেলে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় ডাক্তাররা আবিষ্কার করেন হার্ডিং শুধু হার্টের সমস্যায় ভুগছেন না, তার নিউমোনিয়াও হয়েছে। সেসময় অ্যান্টিবায়োটিক ছিল না বলে নিউমোনিয়া ভয়াবহ রোগ ছিল। ২ আগষ্ট হার্ট অ্যাটাকে মারা যান হার্ডিং।

ওয়ারেন হার্ডিং, Source: bio.com

রুজভেল্টের কাহিনী আরো অবাক করার মতো। তিনি মারা গেছেন চতুর্থ টার্মে, যেন মৃত্যুই তাঁকে বারবার প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে! বর্তমানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেউ দু’বারের বেশি হতে পারে না। তবে এটি আইন হিসেবে এসেছে ১৯৪৭ সালে। এর আগে কোনো লিখিত আইন ছিল না যে কেউ দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারবে না। তবে বেশিরভাগ প্রেসিডেন্টই স্বেচ্ছায় তৃতীয়বার নির্বাচন করতেন না। রুজভেল্ট ১৯৩২ সালের নির্বাচনে প্রথম প্রেসিডেন্ট হন। অভিশাপের সূত্রানুযায়ী ১৯৪০ সালে যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, তার মৃত্যু হবে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায়। রুজভেল্ট প্রথমে তৃতীয়বারের জন্য দাঁড়াতে না চাইলেও পরে রাজি হন এবং তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হন ১৯৪০ সালের নির্বাচনে। এরপর ভাগ্যই হয়ত তাকে ১৯৪৪ সালের নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো প্রেসিডেন্ট করে এবং ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য মারা যান তিনি প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায়! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকাকে বিশ্বে পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাতে তার বিশাল ভূমিকা ছিল।

ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট, Source: bio.com

এরপর ১৯৬০ সালের নির্বাচন, আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। কিউবাকে কেন্দ্র করে আমেরিকা আর রাশিয়ার মধ্যে নিউক্লিয়ার যুদ্ধ প্রায় লেগেই গিয়েছিল। কিন্তু কেনেডির বুদ্ধিমত্তায় সেবার বেঁচে যায় সবাই। ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর  ডালাসে গাড়িতে করে এক শোভাযাত্রায় যাবার সময় তিনি আততায়ীর গুলির শিকার হন, সেখানেই মারা যান তিনি। তার হত্যাকান্ড নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক আছে। তার হত্যাকারীকে ধরা হলেও সেই হত্যাকারী আবার আরেকজনের গুলিতে মারা যায় পুলিশের হাতে থাকা অবস্থাতেই। এমনকি পুরো ব্যাপারটিকেই অনেকে নাটক বলে থাকেন। মাফিয়া চক্র থেকে শুরু করে তার নিরাপত্তার কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিক্রেট সার্ভিসকেও অনেকে সন্দেহের চোখে দেখে।

কেনেডির গাড়িবহরে গুলির পর, পেছনে সিক্রেট সার্ভিসের তৎপরতা, গুলিতে স্বামীর মাথার খুলির উড়ে যাওয়া অংশ তোলার চেষ্টায় মিসেস কেনেডি, Source: Los Angels Times

এরপর আসলেন রোনাল্ড রিগান, ১৯৮০ সালে নির্বাচিত হলেন ৪০তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে। ১৯৮১ সালের ৩০ মার্চ গুলি লাগলো তার শরীরে, তবে বেঁচে গেলেন সেই যাত্রায়। গুলি লেগে তার ফুসফুস ফুটো পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল, তবে আধুনিক চিকিৎসার কল্যাণে গুলি লাগার পরেও সুস্থ হয়ে অফিসে ফেরেন, জেতেন পরের নির্বাচন এবং ১৯৮৯ সালে জীবিত অবস্থায় শেষ করলেন প্রেসিডেন্সি। তিনিই ১৪০ বছরে প্রথম ব্যক্তি, যিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন পুরনো ইন্ডিয়ান অভিশাপ মাথায় নিয়ে, কিন্তু প্রেসিডেন্সির মেয়াদ শেষ করলেন বেঁচে থেকে। তবে মজার ব্যাপার হলো হ্যারিসন আর হার্ডিংয়ের মতো তিনিও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান, পার্থক্য শুধু তিনি প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় মারা যাননি।

রোনাল্ড রিগান, Source: bio.com

এরপর ২০০০ সালে জর্জ বুশ। আফগানিস্তান এবং ইরাক যুদ্ধের কারণে বিতর্কিত বুশও দু’বার মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। ২০০২ সালে প্রেটজেল (এক ধরণের বেকড কেক) খেতে গিয়ে গলায় আটকে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিলেন যখন তার বক্তৃতার সময় গ্রেনেড ছুড়ে মারা হয়েছিল; বুশ এবং অন্যদের ভাগ্য ভাল ছিল  সেই গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়নি। ২০০৯ সালে জীবিত অবস্থায় তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করেন বারাক ওবামার হাতে। পরপর দুজন প্রেসিডেন্ট বেঁচে যান অভিশাপের হাত থেকে।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ৭ জন প্রেসিডেন্ট মারা যাওয়া, দু’জনের প্রায় মারা যাওয়া- এরপরেও এই অভিশাপের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়, কারণ এর কোনো লিখিত প্রমাণ নেই! ১৯৩১ সালে ‘রিপল’স বিলিভ ইট অর নট’ বইয়ে প্রথমবারের মতো এই অভিশাপ নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়। এর আগে এটি কেউই জানত না। ১৯৩১ এর পরেই মূলত এই অভিশাপের ব্যাপারটি মিডিয়ার আকর্ষণ পায়।

Feature image source: Pinterest

Related Articles