Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিখ্যাত নেতাদের অদ্ভুত যত ভয়

ভয় এমন এক মানবিক অনুভূতি, যার শুরু হয় একেবারে ছোটবেলা থেকে। শৈশবে বাবা-মা ও বড়রা কোনো কিছু করা থেকে বিরত রাখতে চাইলে সবচেয়ে বেশি দেখাতেন ভূতের ভয়। সেই সাথে তেলাপোকা আর মাকড়শার মতো প্রাণীর ভয় তো আছেই। এর সাথে কালক্রমে যুক্ত হয় কুকুর ও অন্যান্য প্রাণীদের ঘিরে ভয়ও।

বিশ্বের ইতিহাসে বিখ্যাত/কুখ্যাত বিভিন্ন নেতার জীবনী পড়লে, বই-ইন্টারনেট ঘেঁটে তাদের ছবি দেখলে বেশ অকুতোভয় মনে হয় তাদের। তবে তারাও যেহেতু রক্তমাংসের মানুষই ছিলেন, তাই ভয় নামক অনুভূতিটা দিনশেষে তাদেরও ছিলো, ঠিক আমাদের মতোই!

১) অ্যাডলফ হিটলার

অ্যাডলফ হিটলারকে ইতিহাস মনে রেখেছে তার নাৎসি বাহিনীর মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের জন্য। এর মাঝে সবচেয়ে বেশি শোনা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীদের উপর চালিত গণহত্যা নিয়ে। এছাড়া ইন্টারনেট ঘাটিয়েও তার যেসব ছবি খুঁজে পাওয়া যায়, সেসব দেখে আর যা-ই হোক, এটা ভুলেও কারো মাথায় আসবে না যে তিনিও কোনো মানুষকে যমের মতো ভয় পেতে পারেন।

তবে বাস্তবে আসলেই এমনটা হয়েছিলো। ইতিহাস যে মানুষটিকে এক ভয়ঙ্কর মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছে, ছবি যে মানুষটিকে কারো কাছে অকুতোভয় আবার কারো কাছে পাষাণ হৃদয়ের এক নেতা হিসেবে তুলে ধরে, জার্মানির সেই একনায়কও ভীষণ ভয় পেতেন দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতে! অবিশ্বাস্য শোনালেও কথাটি আসলেই সত্য। ২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘ডেন্টিস্ট অভ দ্য ডেভিল’ বইটিতে লেখক মেনেভ্‌স ডেপ্রেম-হেনেন এমন কথাই জানিয়েছেন। হিটলারের জন্য তো যেনতেন কাউকে দাঁতের ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ দেয়া যায় না। তার জন্য ছিলো নির্ধারিত একজন ডাক্তার। আর এ দায়িত্বটি পালন করতেন এসএস বাহিনীর ডেপুটি চীফ ডেন্টাল সার্জন ডাক্তার হুগো বালশ্‌ক, যিনি প্রায় দুই দশক ধরে হিটলারের দাঁতের পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করেছেন।

Source: Medium

হিটলারের দাঁতের চিকিৎসা সংক্রান্ত রেকর্ড যাচাইয়ে বেশ আগ্রহী ছিলো সোভিয়েত বাহিনী। তবে এ সংক্রান্ত নথিপত্র তাদের আগেই হস্তগত করে নিয়েছিলেন ইহুদী চিকিৎসক ফেডর ব্রুক। ডাক্তার ব্রুকের কাছ থেকেই এসব কাগজ পেয়েছিলেন লেখক মেনেভ্‌স।

দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগলেও দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতে ভয় পেতেন হিটলার। এজন্য সেই সমস্যাগুলো ক্রমাগত বাড়তে থাকায় দাঁত তাকে ভালোই ভোগাতো। বালশ্‌ক জানিয়েছিলেন, হিটলার প্রায় সময়ই দাঁতের ব্যথার ব্যাপারে বলতেন। এছাড়া তার মুখে ছিলো মারাত্মক দুর্গন্ধ আর দাঁতগুলো ছিলো হলুদাভ। মুখে ফোঁড়া এবং মাড়ির রোগেও ভুগছিলেন তিনি। একবার একটি রুট ক্যানাল করাতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় নিয়েছিলেন তিনি কেবলমাত্র দাঁতব্যথার ভয়েই। অনেকেই মনে করেন, মুখের রোগগুলোই তার নানা দুশ্চিন্তা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ভগ্নস্বাস্থ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

২) চেঙ্গিস খান

চেঙ্গিস খানের নাম শোনে নি এমন মানুষ বোধহয় পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না একজনও। এমনকি যে মানুষটি খান সাহেবের প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত মঙ্গোল সাম্রাজ্য নিয়ে খুব বেশি কিছু জানে না, সে-ও জানে তার নাম! তার হাত ধরে যাত্রা শুরু করা মঙ্গোল সাম্রাজ্য অল্প সময়ের মাঝেই বিশ্বের বুকে মূর্তিমান আতঙ্ক রুপে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তাদের ভয়ঙ্কর সেনাবাহিনীর সামনে দাঁড়াতে সাহস পেত না অন্য কোনো বাহিনীই।

সে যা-ই হোক, আমাদের আজকের আলোচনা দ্য গ্রেট খানের বীরত্ব কিংবা তার মঙ্গোল বাহিনীর নৃশংসতা নিয়ে না। ইতিহাসে যেভাবে চেঙ্গিস খানকে চিত্রায়িত করা হয়েছে, তাতে যে কেউই তাকে বিশ্ববিজেতা এক নেতার প্রতিমূর্তি হিসেবে মনে করতে পারে, যার মনে ভয়ের লেশমাত্র ছিলো না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দিনশেষে তিনিও একজন রক্তমাংসের মানুষই ছিলেন। তাই ভয় নামক মানবিক অনুভূতির উর্ধ্বে ওঠা সম্ভব হয় নি তার পক্ষেও।

Source: Youtube

কিংবদন্তী এবং ‘সিক্রেট হিস্টোরি অভ দ্য মঙ্গোলস’ বইটি থেকে জানা যায় যে, চেঙ্গিস খান ভয় পেতেন তিনটি প্রাণীকে– তার মা, স্ত্রী এবং কুকুর!

মঙ্গোলদের নেতা হওয়ার পূর্বে চেঙ্গিস খানের নাম ছিলো তেমুজিন, ‘চেঙ্গিস খান’ হলো তার উপাধি। তেমুজিনের বয়স যখন আট বছর, তখন একদিন তার বাবা ইয়েসুগেইয়ের সাথে দেখা হয় এক লোকের, নাম তার দেই-সেতসেন। দেইয়ের বোর্তে নামে এক মেয়ে ছিলো। বোর্তে আবার বয়সে ছিল তেমুজিনের চেয়ে প্রায় এক বছরের মতো বড়। একসময় ইয়েসুগেইয়ের সাথে দেই-সেতসেনের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সুসম্পর্ককে চিরস্থায়ী রুপ দিতে তারা নিজেদের ছেলে-মেয়েকে একে অপরের সাথে বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। ভবিষ্যত যৌতুকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ছেলেকে হবু শ্বশুরের বাড়িতে রেখে যাবার আগে তিনি বলে যান, “আমার ছেলে কুকুরকে ভয় পায়। ভাইয়েরা আমার, কুকুর যাতে ওকে ভয় দেখাতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রেখ।

দেখা যাচ্ছে, এ ভয়ের কথা মূলত শৈশবের সাথে সম্পর্কিত। যদিও অনেকেই তাদের শৈশবের ভয়কে আজীবন বয়ে বেড়ায়, তবে বড় হয়ে চেঙ্গিসের মতো একজন নেতা শৈশবের সেই ভীতিকে পুষে রেখেছিলেন কিনা তা জানা যায় না। কোনো কোনো ঐতিহাসিক চেঙ্গিসের এ কুকুরভীতির জন্য তার সমালোচনা করেছেন (তাতে খানের কী-ই বা আসে যায়?)। তবে এ ভয়কে নিতান্ত অমূলক না বলে বরং আত্মরক্ষার জন্য দরকারি বলাটাই ভালো। কারণ মঙ্গোলীয় কুকুরগুলো বেশ বড় আকারের ও হিংস্র স্বভাবের। অসাবধান পথচারীদের উপর তাদের হিংস্র আক্রমণের ইতিহাসও কম ছিলো না। মঙ্গোলীয়রা তাদের কুকুরগুলো সম্পর্কে বলতো, “(কুকুরগুলো) বড় ও অস্থিসার বর্বর পশু, বড় বড় লোমওয়ালা, উচ্চ স্বরের এবং বদমেজাজী। তাদেরকে ভয় পাওয়া এবং এড়িয়ে চলা উচিত।” সেই সাথে তারা আরো বলতো যে, “তুমি ঘোড়া কিংবা উটের উপর থাকলেও তারা তোমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং যদি তুমি হাঁটতে থাকো, তাহলে সেগুলোকে বশে আনাটা মাঝে মাঝে দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে।

৩) অগাস্টাস সিজার

২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করা অগাস্টাস সিজারকে গণ্য করা হয় রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। রোমান ঐতিহাসিক সুইটোনিয়াসের মতে, সিজার ভয় পেতেন বজ্রপাতকে। একবার ক্যান্টাব্রিয়ান ক্যাম্পেইনের সময় রাতের বেলায় বসে ছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই তার খুব কাছেই বজ্রপাত আঘাত হানে। এতে আগুন ধরে যায় বসার সেই জায়গাটিতে। এছাড়া এটি সরাসরি আঘাত হেনেছিল সম্রাটের এক ভৃত্যের শরীরে, যে তখন মশাল হাতে হেঁটে যাচ্ছিলো। এতে মারা যায় সেই ভৃত্য।

Source: Wikimedia Commons

এ ঘটনার পরপরই টেম্পল অভ জুপিটার নির্মাণ করেছিলেন সম্রাট, উদ্দেশ্য ছিলো ঈশ্বরের ক্রোধকে প্রশমিত করা। তবে কুসংস্কারাচ্ছন্ন এ রাজা বাকি জীবনটা ভয়ে ভয়েই কাটিয়েছেন। সিজার সবসময় সীলের চামড়াকে রক্ষাকবচ মনে করে সাথে নিয়ে ঘুরতেন, ঝড়বৃষ্টি আসলে মাটির নীচে একটি ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিতেন।

৪) পিটার দ্য গ্রেট

১৬৮২ থেকে ১৭২১ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার জারের দায়িত্ব পালন করা পিটার দ্য গ্রেট আবার ভয় পেতেন তেলাপোকাকে। জানা যায়, যদি কোনো বাড়িতে থাকা অবস্থায় সেখানে একটি তেলাপোকার সন্ধানও তিনি পেতেন, তবে সাথে সাথেই সেই বাড়ি থেকে দৌড়ে পালাতেন এই সম্রাট! সাম্রাজ্যের নানা অংশে ঘুরে দেখার সময় তিনি যেসব বাড়িতে অবস্থান করতেন, সেসব বাড়ি তার ভৃত্যরা আগে এমনভাবে সাফ করে রাখতো যেন সেখানে তেলাপোকার নামগন্ধও না থাকে।

Source: worldatlas.com

একবার এমনই এক ভ্রমণে বেরিয়ে কাঠের তৈরি একটি ঘরে উঠেছিলেন তিনি। রাতের বেলায় খেতে বসে তিনি বাড়ির মালিককে জিজ্ঞেস করেছিলেন তার বাড়িতে কোনো তেলাপোকা আছে কিনা। উত্তরে লোকটি জানায়, “খুব বেশি একটা নেই। আর ওগুলো যাতে ভয় পেয়ে চলে যায়, সেজন্য একটাকে মেরে দেয়ালে পিন দিয়ে আটকে রেখেছি!” এ কথা শুনে রাজা মাথা ঘুরিয়ে তার ঠিক সামনেই তেলাপোকাটিকে দেয়ালে ঝুলে থাকতে দেখলেন। এরপর আর কোনো কথা না বলে উঠে দাঁড়িয়েই সজোরে ঘুষি চালিয়ে দিলেন লোকটির মুখে। এরপর সভাসদবর্গকে নিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তখনই বাড়িটি ত্যাগ করেন তিনি।

৫) মুয়াম্মার গাদ্দাফী

Source: Unilad

লিবিয়ার সাবেক একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফীর ভয় ছিলো উচ্চতা আর সমুদ্রের উপর দিয়ে দীর্ঘকালীন বিমান ভ্রমণ নিয়ে। উইকিলিক্সের ফাঁস হওয়া নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, গাদ্দাফী টানা আট ঘণ্টার বেশি সমুদ্রের উপর বিমান ভ্রমণ সহ্য করতে পারতেন না। এজন্য ছোটাছুটি করা লাগতো তার কর্মচারীদের। একবার শুধুমাত্র এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাবার পথে যাত্রাবিরতি করা হয়েছিলো পর্তুগালে। আবার ভেনেজুয়েলা থেকে লিবিয়া ফেরার পথেও একবার এ ভীতির কারণেই যাত্রাবিরতি করা হয়েছিলো নিউফাউন্ডল্যান্ডে।

৬) কিল জং ইল

উত্তর কোরিয়ার সাবেক শাসক কিম জং ইল ভয় পেতেন আকাশপথে যেকোনো ধরনের ভ্রমণকেই। এজন্য দরকারে তিনি সাঁজোয়া ট্রেনে চড়ে দূরে কোথাও ভ্রমণে যেতেন, তাও বিমানে চড়ে নয়। এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপে রাষ্ট্রীয় সফরেও তিনি গিয়েছিলেন ট্রেনে চড়েই।

এ ভয়ের পেছনে অবশ্য বিভিন্ন কারণও জড়িত ছিলো। উত্তর কোরিয়ায় নিযুক্ত সাবেক সুইডিশ রাষ্ট্রদূত ইনগলফ কীসফ জানান, জং ইলের কপাল থেকে মাথা পর্যন্ত বেশ বড় রকমের একটি কাটা দাগ ছিলো। ধারণা করা হয়, ১৯৭৬ সালে এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার শিকার হয়েই চিরস্থায়ী এ ক্ষতটি পান তিনি। সেই দুর্ঘটনায় ভালোই আহত হয়েছিলেন কিম জং ইল। দুর্ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে বহুকাল।

Source: CNN

১৯৮২ সালে IL-62 মডেলের পাঁচটি বিমান কেনা হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে, উদ্দেশ্য ছিলো সেগুলোকে কিমের যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হবে। কিন্তু এক টেস্ট ফ্লাইটের সময় তার সামনেই ধ্বংস হয়ে যায় একটি বিমান, যার ফলে পাইলট সহ মারা যান তাতে থাকা ১৭ জন যাত্রী।

এসব দুর্ঘটনাই কিম জং ইলকে বিমানযাত্রী হতে নিরুৎসাহিত করেছে ভীষণভাবে। তবে দেশটির বর্তমান শাসক কিম জং উনের আবার বাবার মতো বিমান ভ্রমণ নিয়ে এমন কোনো ভীতি নেই।

ফিচার ইমেজ- Unilad

Related Articles