Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

একনায়কদের প্রেমের বিচিত্র সব কাহিনী

একনায়কদের কথা শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে এমন কিছু মানুষের ছবি, যারা সবসময় নিজেদের স্বার্থোদ্ধারে ব্যস্ত, যাদের ফুলে ওঠা ধন-সম্পদের পাহাড়ের আড়ালে চাপা পড়ে থাকে দেশের অগণিত নির্যাতিত মানুষের কঙ্কাল, নিষ্পেষিত মানুষের দীর্ঘশ্বাস।

কিন্তু দিনশেষে তারাও তো মানুষ (আগে ‘অ’ আছে!)। তাই প্রেম-ভালোবাসার মতো অনুভূতি তাদের মাঝেও বিদ্যমান। তবে সাধারণ পুরুষের ভালোবাসার ছায়ায় যেখানে ‘সাধারণত’ আশ্রয় পান একজন নারী, সেখানে এসব একনায়কগণ বটবৃক্ষ হয়ে ছায়া দিতে চান অনেককেই!

১) রবার্ট মুগাবে (জিম্বাবুয়ে)

১৯৮৭ সাল থেকে জিম্বাবুয়ের শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রবার্ট মুগাবে। প্রথম স্ত্রী স্যালি যখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুশয্যায় ছিলেন, জিম্বাবুয়ের এই প্রেসিডেন্ট তখন সময় কাটাচ্ছিলেন তার তরুণী সেক্রেটারি গ্রেসের সাথে, তাকে প্রস্তুত করে তুলছিলেন ভবিষ্যতের ফার্স্ট লেডি হিসেবে। স্যালি মারা যান ১৯৯২ সালে। গ্রেস ও মুগাবের ভালোবাসার ফসল হিসেবে পৃথিবীর আলো দেখেছে তিনটি সন্তান। এর মাঝে প্রথমজনের জন্মের সময় স্যালি বেঁচে ছিলেন। ১৯৬৬ সালে স্যালি-মুগাবে দম্পতির একমাত্র সন্তানটি মারা গিয়েছিলো। এরপর আর কখনোই তার পক্ষে সন্তান গর্ভধারণ সম্ভব হয় নি। ফলে গ্রেসের সাথে স্বামীর এমন ঘনিষ্ঠতা এবং পরবর্তীতে অন্তিম শয্যায় তাদের সন্তানের জন্ম যে তার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়েছিলো, তা বোধহয় না বললেও চলে।

গ্রেস ও মুগাবে; Source: AFP/Getty Images

তবে গ্রেসকেই যদি আপনি মুগাবের ‘একমাত্র দ্বিতীয় ভালোবাসা’ ভেবে থাকেন, তাহলে ভুল করবেন। কারণ স্যালি মারা যাবার কাছাকাছি সময়ে গর্ভবতী হয়ে পড়েন দেশটির উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী ওপ্পাহ মুচিঙ্গুরিও। ওপ্পাহর সাবেক স্বামীর মতে, মাঝে মাঝেই রাতের বেলা ওপ্পাহকে বিভিন্ন মিটিংয়ের অজুহাতে ডাকাতেন মুগাবে। মুগাবের সাথে ওপ্পাহর সম্পর্কের কথা গ্রেসও জানতেন। অনুমিতভাবেই, এটা তিনি স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। এজন্য এ দুই নারীর মাঝে হাতাহাতির ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে।

২) সাদ্দাম হোসেন (ইরাক)

ইরাকের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পুরো নাম সাদ্দাম হোসেন আব্‌দ আল-মাজিদ আল-তিকরিতী। ১৯৭৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রায় দু’যুগ দেশটিকে শাসন করেছেন তিনি।

সাদ্দাম হুসেইন; Source: Wikimedia Commons

১৯৬৮ সালে মারিয়া পারি লাম্পসোসের সাথে সাদ্দামের প্রথম দেখা হয়। প্রথম দেখাতেই লোকটির চোখ জোড়া অসম্ভব ভালো লেগে যায় তার। তার ভাষ্যমতে, সেগুলো ছিলো বেশ ‘সুগভীর ও সোনালী’, যা কেবলমাত্র আসল পুরুষের মাঝেই দেখা যায়! অবশ্য বয়সও এর পেছনে উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে। কারণ, তখন সাদ্দাম হোসেনের বয়স ছিলো ৩১, ওদিকে মারিয়ার মাত্র ১৬। ফলে কৈশোরের রঙিন চশমাও এর পেছনে উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে। চমৎকার রূপ, বিত্তশালী পরিবার ও ফ্যাশন সচেতনতার কারণে বন্ধু-বান্ধবেরা তাকে ডাকতো ‘বাগদাদের রাজকন্যা’ বলে। তবে সাদ্দাম এতকিছুর ধার ধারতেন না। তিনি মারিয়াকে ‘শাকরা’ বলে ডাকতেন, যার অর্থ স্বর্ণকেশী।

মারিয়া পারি লাম্পসোস; Source: latimes.com

একসময় সাদ্দাম ও মারিয়ার মাঝে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে সেটাও খুব একটা সুখকর ছিলো না। তাদের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো। এমনকি গুপ্তচর লাগিয়ে মারিয়াকে অনুসরণ করা, ব্ল্যাকমেইল থেকে শুরু করে পালানোর চেষ্টার দায়ে জেলে পর্যন্ত যেতে হয়েছে মারিয়াকে। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি চলে যান সুইডেনের গ্রামাঞ্চলে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এত কলহের পরও সাদ্দামের জন্য মনের কোথায় যেন ঠিকই একটি টান অনুভব করেন মারিয়া!

সাদ্দাম ও মারিয়ার সম্পর্ককে অনেকেই গালগল্প বলতে চাইলেও, মারিয়ার লেখা বই আর সেখানে থাকা ছবি অবশ্য তার পক্ষেই রায় দেয়। তবে স্বর্ণকেশীদের প্রতি ইরাকের সাবেক এ প্রেসিডেন্টের যে একটা আলাদা টান ছিলো, সে কথাটি সর্বজন বিদিত। তার প্রথম স্ত্রী সাজিদা তালফাহ’র চুলের রঙ প্রাকৃতিকভাবে বাদামী বর্ণের ছিলো। তবে বিয়ের পরপরই সেটা সোনালী হয়ে যেতে দেখা যায়। সাদ্দামের দ্বিতীয় স্ত্রী সামিরা শাহবান্দারও ছিলেন একজন স্বর্ণকেশী। সামিরাকে তিনি এতটাই ভালোবেসেছিলেন যে, সামিরার তৎকালীন স্বামী যেন তাকে তালাক দেয়, সেজন্য তাকে ঘুষ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিলো! সামিরার ভাইকে খুন করা হয়েছিলো, কারণ তিনি সাদ্দামের সাথে তার বোনের সম্পর্ক নিয়ে কটুক্তি করেছিলেন। এমনকি তাদের দুজনের মধ্যকার বার্তাবাহককে ঈর্ষাবশত খুন করায় আপন ছেলেকে তিনি সুইজারল্যান্ডে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন বলেও শোনা যায়।

৩) বেনিতো মুসোলিনি (ইতালি)

ইতালির জাতীয় ফ্যাসিস্ট পার্টির নেতা বেনিতো মুসোলিনি ১৯২২ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত দেশটি শাসন করে গেছেন। তার নারীপ্রীতির ধরনটা ছিলো বেশ অদ্ভুত। তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে, নারীদের আসলে তিনি ঘৃণা করেন, সব নারীই তার কাছে পতিতার সমতুল্য! বিশেষ করে শারীরিক সম্পর্কের পর নারীদের সহ্য করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠতো। তখন তাদের উপর তার শারীরিক নির্যাতনের কথাও শোনা যায়।

মুসোলিনি; Source: thefamouspeople.com

ক্লারেত্তা পেতাচ্চি; Source: spiegel.de

মুসোলিনির উপপত্নীর সংখ্যা ছিলো অসংখ্য। এর মাঝে অনেকে তার সন্তান জন্ম দিয়েছে বলেও শোনা যায়। তবে এদের মাঝে কেবলমাত্র একজনই তার মন জয় করে নিয়েছিলেন, যার নাম ক্লারেত্তা পেতাচ্চি। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এ দুজনের মাঝে বয়সের ব্যবধান ছিলো ২৯ বছর! নিজের স্ত্রীকেও তিনি ততটা সময় দিতেন না, যতটা দিতেন পেতাচ্চিকে। তার মনোরঞ্জনে কোনো ত্রুটিই রাখতে চাইতেন না তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে মুসোলিনির স্ত্রী চেষ্টা করছিলেন ইতালি থেকে যেকোনোভাবে পালিয়ে যাবার। ওদিকে মুসোলিনি ও পেতাচ্চি পণ করেছিলেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একসাথে থাকার। ১৯৪৫ সালের ২৮ এপ্রিল অবশেষে গুলি করে হত্যা করা হয় এই জুটিকে। মিলানের পিয়াজ্জালে লরেতো থেকে তাদের দুজনের মৃতদেহ উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো।

৪) ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কো (স্পেন)

১৯৩৯ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্পেনকে শাসন করে গেছেন এ সামরিক শাসক। তবে অন্য একনায়কদের মতো বিয়ের বন্যা বইয়ে দেননি তিনি, বরং তিনি থেকে গেছেন চিরকুমার। অবশ্য এটা তিনি স্বেচ্ছায় করেননি, করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কো; Source: Kutxa Fototeka

ফ্রাঙ্কোর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের কাছ থেকে জানা যায় যে, এক যুদ্ধে ফ্রাঙ্কোর অণ্ডকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। এছাড়া তার লিঙ্গের অগ্রভাগের চামড়াও নাকি বেশ শক্ত ছিলো। এ বিষয়গুলোই কোনো নারীর সাথে তার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনকে বেশ কঠিন করে তুলেছিলো। কারমেন পোলোর সাথে তার সংসার জীবনে মাত্র একটি কন্যাসন্তানই জন্ম নিয়েছিলো।

৫) কিম জং ইল (উত্তর কোরিয়া)

কিম জং ইল উত্তর কোরিয়ার সুপ্রিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৯৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত। তার শাসনামলে বারবণিতাদের অল্প বয়সেই বাবা-মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনা হতো বলে জানা যায়। এরপর সেই দুর্ভাগা তরুণীদের ভাগ করা হতো তিনটি দলে– হায়েংবোকজো (সুখী দল), গামুজো (নৃত্যশিল্পী ও সঙ্গীতশিল্পী দল) এবং মাঞ্জোকজো (সন্তুষ্ট দল)। তাদের নিয়েই গঠিত হতো উত্তর কোরীয় সুপ্রিম লিডারের ব্যক্তিগত ‘সুখপ্রদানকারী দল’!

কিম জং ইল; Source: Joseph Ferris III

তবে স্ত্রী ও উপপত্নীদের বাদ দিয়ে কিমের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ জাপানের স্টেজ ম্যাজিশিয়ান টেঙ্কো হিকিতা ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি তার নামে একটি থিয়েটার বানিয়েছিলেন, তার সকল বার্বি পুতুল সংগ্রহ করেছিলেন, এমনকি আশির দশকে টোকিয়োতে মাঝে মাঝে নাকি তাকে দেখতেও যেতেন! একবার টেঙ্কো হিকিতা পানির নিচে একটি জাদুর প্রদর্শনীতে উত্তর কোরিয়াতে এসেছিলেন বলেও জানা যায়। সেবার নাকি কিম তাকে ফেরত যেতে দিতে চান নি, যতক্ষণ না টেঙ্কো পুনরায় কিমের দেশে ফিরে আসার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। এমনকি জাপানে ফিরে যাবার পরও উত্তর কোরিয়ার গুপ্তচরেরা তাকে প্রায়শই অনুসরণ করছে বলে অভিযোগ করতেন টেঙ্কো।

৬) ইদি আমিন (উগান্ডা)

১৯৭১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ছিলেন মিলিটারি অফিসার ইদি আমিন দাদা। এ সময়কালে তিনি মোট পাঁচটি বিয়ে করেছিলেন! প্রথম স্ত্রী মালয়ামুর সাথে নানা বিষয়ে বিবাদের জড়িয়ে তাকে তালাক দেন তিনি। যখন তিনি জানতে পারেন, দ্বিতীয় স্ত্রী কে আদোরা সম্পর্কে তার কাজিন হয়, তখন তাকেও তিনি তালাক দেন!

সারাহ কিয়োলাবার সাথে ইদি আমিন; Source: AFP/Getty Images

ইদি আমিন দাদার সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন পঞ্চম স্ত্রী সারাহ কিয়োলাবা। যখন সারাহর সাথে তার দেখা হয়, তখন তিনি অন্য আরেক ছেলের সাথে সম্পর্কে ছিলেন। এমনকি সারাহ তখন গর্ভবতীও ছিলেন। কিন্তু সবকিছুকে তুচ্ছ করে সারাহকে নিজের করে পেতে অদ্ভুত কাজ করে বসেন উগান্ডার সাবেক এ শাসক। তিনি সারাহর সেই প্রেমিককেই হঠাৎ করে উধাও করে দেন! এরপর সারাহর গর্ভে থাকা সন্তানকে নিজের সন্তানের মতোই বড় করেন তিনি।

ফিচার ইমেজ- The Daily Beast

Related Articles