Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যে আটটি উপায়ে কাটিয়ে উঠবেন কষ্টের মুহূর্ত

প্রসঙ্গটা কষ্ট; জানেনই তো, জীবন জোয়ার-ভাটার খেলা। আজ রোদ, তো কাল ঝড়-তুফান। রোজকার জীবনে ছোট বা বড় হাজার রকম কষ্ট আসে। এসব ছাপিয়ে নিজেকে সামনে টেনে নিয়ে যাওয়াটাই জীবনের মূল উপজীব্য। কষ্টের সাথে সবার বোঝাপড়া করার কিংবা কষ্ট কাটিয়ে ওঠার ধরণ এক না। একই কষ্টানুভূতির তীব্রতা আবার ব্যক্তিভেদে আলাদা। সাময়িক কষ্টগুলো অনেক সময় হতে পারে স্থায়ী যাতনার কারণ।

কষ্ট আসতে পারে নানা রুপ নিয়ে: কারও দ্বারা অপমানিত হওয়া, কোনো বন্ধু কর্তৃক প্রতারিত হওয়া, প্রিয় কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের কোনো সদস্যের আকস্মিক মৃত্যু, অনেক সাধনায় গড়া প্রেমের সম্পর্কের ভাঙন ইত্যাদি। যে ভুক্তভোগী, সে-ই শুধু জানে তার কষ্টের তীব্রতা। আমরা সবাই কম-বেশি জানি কী করে কষ্ট কাটিয়ে উঠতে হয়। কিন্তু নিগুঢ় কষ্ট জর্জরিত অবস্থায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো জ্ঞানই কাজ করে না।

এই লেখার উদ্দেশ্য কাউকে লড়তে শেখানো নয়, কিছু জানা কথারই সুবিন্যস্ত পুনরালোচনা মাত্র। প্রত্যেকের নিজ নিজ কষ্টের সাথে প্রাণপণ লড়াইয়ের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে চলুন জানা যাক কী করে কাটিয়ে উঠবেন একটি সাধারণ কষ্টের আঘাত। কষ্ট কাটিয়ে ওঠার এই আটটি বিজ্ঞানসম্মত পথ কারও দুর্বল মুহূর্তে হতে পারে বেশ উপকারী।

১) অবসর নিন

হোক একটু অবসর; econoars.com

অতিরিক্ত কাজের বোঝা একদমই নেবেন না। যদি প্রয়োজন হয়, সাধারণ কাজের রুটিন থেকেও অবসর নিন। নিজেকে সময় দিন, পারলে কিছুদিনের জন্য জায়গা পরিবর্তন করুন। সাধারণত যেকোনো কষ্টে পতিত হবার পরে মস্তিষ্কের মূল তাড়না থাকে প্রয়োজনীয় হরমোন ক্ষরণ করে কষ্টানুভূতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। যে কারণে কাজে মনোযোগ না থাকাটা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় অতিরিক্ত কাজ কিংবা অপ্রিয় কাজ স্বভাবতই শরীর ও মন উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া কিঞ্চিৎ অবসর আপনার মস্তিষ্ককে উক্ত কষ্টের মূল তাৎপর্য উপলব্ধি করতে ও কষ্ট কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় লজিক সরবরাহ করতে সাহায্য করবে।

২) কেঁদে নিন

বয়ে যাক সব গ্লানি; kienthuc.net.vn

কান্না হলো কষ্টের মাত্রা হালকা করার সবচেয়ে ফলপ্রসূ উপায়। কষ্ট পেলে কান্না আটকে নিজেকে শক্ত-সমর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা না করে কোনো আড়াল খুঁজে ছেড়ে দিন চোখের জল। অনেকেই অনেক তীব্র কষ্টেও কান্নাহীনতায় ভোগেন। তারা আত্মনিমগ্ন হয়ে নিজেকে নিজের অসহায় অবস্থার উপলব্ধি করিয়ে কান্নার প্রয়াস চালাতে পারেন। কান্না চেপে থাকলে মানসিক সমস্যাগুলো শুধু বাড়েই, কমে না। আর কান্না মোটেও দুর্বলতার লক্ষণ না। এক পশলা কান্নার পর দেখবেন কতটা হালকা লাগে আর কত সহজে পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারেন। তাই নিজের উপর মায়া অনুভব করুন, গলা ছেড়ে কাঁদুন।

৩) মাদক পরিহার করুন

মাদককে না বলুন; crna.gora.me

কেউ কেউ কষ্টের সময়গুলোতে বাস্তবতা থেকে পরিত্রাণ পেতে সিগারেট বা অন্যান্য মাদকদ্রব্যের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সিগারেটের নিকোটিন বা অন্যান্য মাদকদ্রব্যের সংশ্লিষ্ট মাদকতা ক্ষণিকের জন্য বিষণ্ণতা দূর করতে পারে, কিন্তু সত্যিই নেশা কেটে গেলে সবই কেটে যায়। বাস্তবতা থেকে পলায়নপ্রবণ হয়ে নেশাদ্রব্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন না। আপনার শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ব্যবস্থা নিতে দিন। একই কথা বিভিন্ন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মানবজীবনের অঙ্গাঅঙ্গি অংশ হিসেবে কষ্ট যেমন আছে, তেমনি কষ্টের সাথে লড়াই করার জন্য শরীরে নির্দিষ্ট যান্ত্রিক ব্যবস্থাও আছে। আপনার বিষণ্ণতা প্রশমিত করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু হরমোনের নিঃসরনের ব্যবস্থা আছে, আছে স্নায়ুকোষের নিজস্ব কর্মপদ্ধতি। মাদকদ্রব্যের ব্যবহারে শরীর সেই স্বাভাবিক মেকানিজমকে রেখে মাদকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে; একইসাথে এসব অভ্যন্তরীন শারীরিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাতেও ব্যাঘাত ঘটে। একজন নেশাগ্রস্ত মানুষ মাত্রই অসুস্থ। তাই বিষণ্ণতা বা কষ্টের সময় নেশাকে না বলুন। সাময়িক যাতনার ফলে সারাজীবনের জন্য অসুস্থ হয়ে গেলে তা জীবনের পরাজয় ব্যতীত কিছু না।

৪) ক্ষমা করুন

ক্ষমা জরুরী; bahaiteachings.org

কোনো ঘটনার জন্য নিজেকে লাগাতার দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন। যদি আপনার দোষ থাকেও, সেটি থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তীতে যেন আর না হয় সে বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হোন। যা হয়ে গেছে তা আপনি বদলতে পারবেন না, বরং যা হতে চলেছে তার জন্য প্রস্তুত হোন। নিজেই নিজের শাস্তিদাতা হওয়া থেকে বিরত হোন; নিজেকে ক্ষমা করুন। একইসাথে ক্ষমা করুন আশেপাশের মানুষদের। কারো উপর রাগ যত চেপে রাখবেন ততই আপনার কষ্টের সময়কাল বাড়তে থাকবে। আর যদি অন্যদের ক্ষমা করতে না পারেন, তো তাদের তুচ্ছজ্ঞান করুন। আপনাকে পীড়া দেয় এমন মানুষদের নিজের অবচেতন মন থেকে বের করে দিন। নিজের খেয়াল রাখুন।

৫) মানুষের পাশে দাঁড়ান

ভাগ হয়ে যাক কষ্ট; lacasamorett.com

এটা সত্য যে আপনার মতো আরও লাখো মানুষ আরও নানারকম কষ্টে নিপতিত রয়েছে। তাদের বেশিরভাগের তুলনায় আপনার কষ্টটি হয়তো কিছুই না। দারিদ্র, অশিক্ষা, স্বাস্থ্যহীনতা, সুবিধাহীনতা আরও কত জীবন-মরণ সমস্যা নিয়ে মানুষ বেঁচে আছে পৃথিবীর বুকে, তার ইয়ত্তা নেই। পারলে লেগে যান এসব দুঃস্থ মানুষের সেবায়। এতে দু’টো ব্যাপার ঘটবে- এক, যদি নিজের প্রতি কোনো গ্লানি থাকে, তা মানুষকে একটু শান্তি দিতে পারার সুখে ভেসে চলে যাবে; দুই, মানুষের বৃহত্তর কষ্টের সংস্পর্শে এসে আপনার কষ্টানুভূতি বহুলাংশে প্রশমিত হবে। মনে রাখবেন, সুখ ভাগাভাগিতে বাড়ে, আর দুঃখ ভাগাভাগিতে কমে।

৬) সাহায্য নিন

প্রয়োজনে সাহায্য নিন, হোক তা মানবিক বা ঐশ্বরিক। কেউ মনের দিক দিয়ে যত শক্তিশালীই হোক না কেন, কষ্টের মুহূর্তে একটু সাহায্য সবাই চায়। অন্তত মন উজাড় করে কথা বলার একটা মানুষ, একজন ভালো শ্রোতা খুবই জরুরী এ সময়। তাই নিজেকে একা না রেখে যতটা পারা যায় মানুষের সাথে মিশুন। ঘুরুন, আড্ডা দিন, যাদের সাথে থাকতে ভালো লাগে তাদের মাঝেই থাকুন। প্রয়োজনভেদে শুধু একজন বিশেষ বন্ধুর সাহায্য নিতে পারেন, যে কোনো প্রশ্ন না করে নীরবে শুনে যাবে আপনার সব কথা। আর যদি ভাগ্যে এমন বন্ধু না থাকে, তাহলে ভালো কোনো থেরাপিস্ট বা সাইকোলজিস্টের সাহায্য নিতে পারেন। শুধু চেপে রাখা কষ্টগুলো কথার রুপে বাইরে বের করে আনাটা জরুরী। এই সুযোগগুলো হোক বা না হোক, নিজেকে পুরোপুরি সমর্পন করুন ঈশ্বরের হাতে। তিনিই আপনার কষ্টের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সম্যক অবহিত এই বিশ্বাস রাখুন। আর মনের কথা, আকুতি সব নির্জনে ঢেলে দিন তার সামনে।

৭) পড়া ও লেখা

লেখালেখি চলুক; inshorts.com

ফিকশন বা নভেল পড়ার মাধ্যমে আপনি সহজেই নিজেকে নিজের জর্জরিত অস্তিত্ব থেকে কিছুক্ষণের জন্য সরিয়ে নিতে পারেন। কল্পকাহিনীসমূহ আপনার কল্পনাকে সচল করে নতুন করে আশাবাদী হতে সাহায্য করতে পারে। তবে পড়ার চেয়েও বেশি কাজে দেবে লেখা। মনের ভাবনাগুলো, অনুভূতিগুলো মেলে ধরুন কাগজে। মন আশ্চর্যরকম দ্রুতগতিতে হালকা হতে বাধ্য। কাগজ আপনার একনিষ্ঠ শ্রোতা বন্ধুর মতোই আপনার সব জমে থাকা, বিষিয়ে ওঠা আবেগ, কষ্টানুভূতি আর চাপা কান্নার বাষ্প বের করে আনবে।

৮) সময় দিন

সময় শুষে নেবে সব ব্যথা; finetechtime.com

সময় সব ক্ষত সারিয়ে তোলে। আজ, এই মুহূর্তের অনুভূতি নিঃসন্দেহে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আর থাকবে না। নিজেকে কষ্ট কাটিয়ে ওঠার জন্য সময় দিন। ধৈর্য্য রাখুন। বিশ্বাস রাখুন ঈশ্বরের উপর। আজ যা হয়েছে, এর ফলশ্রুতি হিসেবে কোনো না কোনোভাবে ভালো কিছু কাল অবশ্যই পাবেন। সময়ের চক্রে আপনিও কাটিয়ে উঠবেন দুঃসহ কষ্টের যাতনা, যেভাবে কাটিয়ে উঠছে রোজ কোটি কোটি মানুষ।

ভালো থাকুন। আগামীতে বিশ্বাস রাখুন। নিজের যত্ন নিন।

ফিচার ইমেজ- medium.com

Related Articles