Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দিনশেষে কেমন থাকেন বিখ্যাত ব্যক্তিরা? পড়ুন ১১ জনের নৈশ রুটিন।

আমাদের গড় আয়ু কত? ৬০ কিংবা ৭০? জীবনের অর্ধেক সময় পেরোতে না পেরোতেই আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত হয়ে যাই ‘ব্যস্ততা’ আর ‘যান্ত্রিকতা’ এই শব্দযুগলের সাথে। সফলতার সাথে সাথে বাড়ে ব্যস্ততার হার। সফলতার চূড়ায় পৌঁছে যাওয়া মানুষগুলো কীভাবে সময় কাটান? কেমন হয় এই বিখ্যাত মানুষগুলোর জীবন? কেউ হয়তবা ভীষণ ব্যস্ততার পর শরীর এলিয়ে দেন বিছানায়, কেউ হয়তো সময় দেন পরিবারকে, কেউবা ব্যস্ততাকে আপন করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই হারিয়ে ফেলেছেন খুব কাছের মানুষগুলোকে। কিন্তু প্রতিদিন যদি একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে ব্যস্ততা এবং ব্যক্তিগত জীবনকে সমান তালে এগিয়ে নেয়া যায় তাহলে কেমন হয় বলুন তো? ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের মতে, “বিশ্রামের সময়ে কিছু সহজ এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মানুষকে খুব ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে সহায়তা করে”। চলুন দেখে নেয়া যাক কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির প্রাত্যাহিক জীবনযাত্রার অংশবিশেষ।

১. রিচার্ড ব্র্যানসন

তার পুরো নাম স্যার রিচার্ড চার্লেস নিকোলাস ব্রানসন (১৮ জুলাই ১৯৫০), ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে এই গ্রুপটি সারা বিশ্বে প্রায় ৪০০টিরও বেশি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে।

ভার্জিন গ্রুপ; ছবিসূত্র emaze.com

স্যার রিচার্ড প্রতিদিন রাতের খাবার সেরে পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। তিনি বলেন, “এভাবে গল্পগুজবে নতুন আইডিয়া শেয়ার করা হয় এবং নতুন গল্পের সৃষ্টি হয়”। তিনি সাধারণত ৬ ঘণ্টা ঘুমান। তার আগে তিনি গল্প করে সময় কাটাতে ভালবাসেন। গল্পগুজব শেষে রাত ১১ টায় ঘুমাতে যান।

স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন; ছবিসূত্রঃ cnbc.com

২. মার্ক জাকারবার্গ

মার্ক জাকারবার্গকে কে না চেনে! সারাদিনের সব কর্মব্যস্ততার পর ৩৩ বছর বয়সী ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক এলিয়ট জাকারবার্গ তার এক বছর বয়সী শিশু কন্যা ম্যাক্সকে নিয়ে (ইহুদী নিয়মের ‘মী শেবিরাচ’) প্রার্থনায় সময় কাটান। প্রতিদিনই তিনি একই রুটিন মেনে চলেছেন এবং আশা করা যায় আগস্টে তার ঘর আলো করে আসা দ্বিতীয় কন্যা সন্তানটিও শত ব্যস্ততার মাঝে বাবার কাছে খুব সুন্দর সময় পেতে যাচ্ছে।

৩. ডেমন্ড জন

ফুবুর প্রতিষ্ঠাতা ডেমন্ড গার্ফিল্ড জনকে আমরা চিনি তার বিখ্যাত শো ‘শার্ক ট্যাংক’ এর মাধ্যমে। ডেমন্ড জন ‘ডিসলেক্সিয়া’ রোগে আক্রান্ত। ‘ডিসলেক্সিয়া’ তে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত কোনো কিছু পড়তে পারে না। অক্ষর চেনা যায় ঠিকই, কিন্তু অক্ষরগুলো স্থির থাকে না। মনে হয় নড়ছে। যার ফলে কোনোকিছু পড়তে খুব কষ্ট হয়। ‘তারে জামিন পার’ সিনেমার ‘ইশান’ এর কথা মনে পড়ে? সে অক্ষরগুলো উল্টো করে দেখতো। কখনোবা দেখতো অক্ষরগুলো নেচে বেড়াচ্ছে। এটাই সেই রোগ। কিন্তু অসুস্থতা তাকে থামাতে পারেনি। নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার যুদ্ধে নেমে পড়েন। তিনি প্রতিদিন ঘুমাতে যাবার আগে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সেগুলোর বাস্তবায়ন এবং সময়সীমার তালিকা তৈরি করে রাখেন। তার ভাষ্যমতে এই প্রাত্যাহিক কাজটি তাকে সফল হতে অনেক বেশি সহায়তা করেছে।

ডেমন্ড জন; ছবিসূত্রঃ member.1871.com

৪. শেরিল স্যান্ডবার্গ

শেরিল কারা স্যান্ডবার্গ (২৮ আগস্ট, ১৯৬৯) একজন আমেরিকান প্রযুক্তি নির্বাহী কর্মকর্তা এবং লেখিকা। ঘুমাতে যাবার আগে ফেসবুক সিওও (চিফ অপারেটিং অফিসার) শেরিল স্যান্ডবার্গ ‘ব্যাড টিভি’র  টিভি সিরিয়াল দেখেন। নিজের প্রোফাইলে এমনটাই বললেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, মজা করে আরো যোগ করেন, “আমি জানি না আমার স্বামী কেন এটাকে ‘ব্যাড টিভি’ শো বলে। মূলত এটা তো ‘গুড টিভি’ শো যা আমাকে ঘুমাতে সহায়তা করে, কারণ এতে আমি অনেক উৎফুল্ল থাকি”।

শেরিল স্যান্ডবার্গ; ছবিসূত্রঃ thedailybeast.com

৫. বিল গেটস

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বিল গেটস। তিনি কীভাবে অবসর সময় কাটান? শপিং? ঘোরাঘুরি? লং ড্রাইভ? আপনি-আমি যা ভাবছি তার একটিও না। আমাদেরকে রীতিমত চমকে দেবার মতো কাজ করেন তিনি। রাতে ঘুমুতে যাবার আগে জমে যাওয়া ডিশগুলো ধুয়ে রাখেন। অন্যরা সাহায্য করলেও তিনি এই কাজটি খুব স্বাচ্ছন্দ্যের সাথেই করে থাকেন। এছাড়াও তিনি ঘুমাতে যাবার আগে ঘণ্টাখানেক সময় ধরে বই পড়েন। এটি তাকে ঘুমাতে সাহায্য করে।

বিল গেটস; ছবিসূত্রঃ cnbc.com

৬. জেফ বেজোস

জেফ্রি প্রিস্টোন বেজোস আমাজনের সিইও। তিনিও বিল গেটসের মতো নিজেই নিজের ডিশ ধুয়ে রাখতে পছন্দ করেন। তিনি আরও বলেন, “ এটা সত্যিই খুব আনন্দদায়ক কাজ”।

জেফ বেজোস; ছবিসূত্রঃ qz.com

৭. ব্র্যাড স্মিথ

ইন্টুইট এর সিইও ব্র্যাড ডি. স্মিথ রাতে ঘুমাতে যাবার আগে পরিবারের সাথে টিভি শো দেখতে পছন্দ করেন। তার দৈনন্দিন জীবনে এই সময়টুকু একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ব্র্যাড ডি. স্মিথ; ছবিসূত্রঃ career.edu

৮. ইভাংকা ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জ্যৈষ্ঠ কন্যা ইভাংকা ট্রাম্প অত্যন্ত বিশ্রামপ্রিয়। তিনি তার বই ‘উইমেন হু ওয়ার্ক্স’ (Women Who Works) এ উল্লেখ করেন, রাতে বেশিরভাগ সময় ওয়াইন, পাস্তার সাথে ‘রিয়েল হাউজওয়াইফ’ শো দেখে সময় কাটান। এছাড়াও তিনি সারাদিনের জমে থাকা মেইলের জবাব দেন। তিনি কখনোই প্রতিদিনের রুটিন পরিবর্তন করেন না। তার সন্তানদেরও তিনি এভাবেই বড় করেছেন।

ট্রাম্প কন্যা ইভাংকা ট্রাম্প; ছবিসূত্রঃ independent.co.uk

৯. পিচাই সুন্দররাজন

পিচাই সুন্দররাজন ৪৫ বছর বয়সী একজন গুণী ও বিখ্যাত মানুষ।  তিনি ‘সুন্দর পিচাই’ নামেই অধিক পরিচিত। ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট তিনি গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষিত হন। তিনি প্রতিদিন বাড়ি ফিরে ছেলেমেয়েদের ঘুম পাড়িয়ে দেন।

পিচাই সুন্দররাজন; ছবিসূত্রঃ techgig.com

 ১০. আরিয়ানা হাফিংস্টোন

দ্য হাফিংটন পোস্ট’ এর প্রতিষ্ঠাতা আরিয়ানা হাফিংস্টোন ঘুম এবং সুস্বাস্থ্যের ব্যাপারে অতি সচেতন একজন নারী। তার বই “The Sleep Revolution” থেকে জানা যায় তিনি ঘুমানোর আগে সমস্ত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বন্ধ করে দেন। তারপর তিনি প্রশান্তিদায়ক উষ্ণ পানিতে গোসল সেরে নেন এবং এক কাপ ল্যাভেন্ডার বা ক্যামোমিল (ঘুমে সহায়ক) ফ্লেভারের চা পান করে থাকেন। সবশেষে তিনি তালিকা করেন সেই সমস্ত জিনিসের যার জন্য তিনি সর্বদাই কৃতজ্ঞ। আপনিও চেষ্টা করে দেখুন। মন ভালো হয়ে যাবে প্রতিদিনের এই তালিকা দেখে!

আরিয়ানা হাফিংস্টোন; ছবিসূত্রঃ nytimes.com

১১। অপরাহ উইনফ্রে

দ্য অপরাহ উইনফ্রে শোএর কথা মনে আছে? এই শো এর সাবেক উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রে সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে ধ্যান করেন। এই সময়টুকুতে তিনি সারাদিনের ক্লান্তি খুব সহজেই ঝেড়ে ফেলতে পারেন বলে CNBC কে জানান। এছাড়াও তিনি নিয়মিত Transcendental Meditation করে থাকেন। এটি ধ্যানের একটি ভিন্নধর্মী নিয়ম।

ট্রান্সসেন্ডটাল মেডিটেশনের ধাপসমূহ; ছবিসূত্রঃ tmhome.com

অপরাহ উইনফ্রে; ছবিসূত্রঃ peace-achiever.com

বিখ্যাত ব্যক্তিরা জীবনের সমস্ত ব্যস্ততা, সফলতা ও জনপ্রিয়তাকে একপাশে রেখে নিজের জন্য কিছু করছেন। নিজেকে সুস্থ রেখে আরেকটি সুন্দর দিনের অপেক্ষা করছেন। আপনিও চেষ্টা করুন নিজেকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার। নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখুন। এটুকু সময়ে আপনি শুধুই আপনার, আপনার পরিবারের এবং আপনার বন্ধুদের জন্য। দিন শেষে এরাই তো আপনার সব।

ফিচার ইমেজ- powerofposetivity.com

Related Articles