Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পানি পান না করে বেঁচে ছিলেন যারা

প্রশ্নটা হাস্যকর হলেও বেশ যৌক্তিক। বলা হয়, ভবিষ্যতে কোনো বিশ্বযুদ্ধ হলে সেটা হবে পানি নিয়েই। কাড়াকাড়ি পড়ে যাবে মানুষ আর দেশের মধ্যে পানির উৎসের মালিকানা নিয়ে। এখনো অবশ্য পানি নিয়ে কম সমস্যায় পড়ছে না পৃথিবী। বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা নিয়ে এই সমস্যা আমাদের অনেকদিনের। তবে পৃথিবী কিংবা দেশ নয়, একদম গোড়ার কথা বলছি। মানে আমি, আপনি কিংবা এমন আর সব মানুষের কথা। পানি আমাদের শরীরের একটি বড় উপাদান। নারীদের শরীরের ৫০ শতাংশ এবং পুরুষদের শরীরের ৬০ শতাংশ জুড়ে থাকে পানি। তাই নিজেদের শরীর ঠিক রাখার জন্য দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পান করাটা প্রয়োজন।

নিজেদের শরীর ঠিক রাখার জন্য দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পান করাটা প্রয়োজন; Source: ABC

কিন্তু কী হবে যদি আপনি পানি পান না করেন? পানি পান না করে কি সত্যিই টিকে থাকা যায়?

চলুন প্রথমে জেনে আসি পর্যাপ্ত পানি না পান করার ফলাফল। সঠিক পরিমাণে পানি পান না করলে আপনি বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হবেন।

১) ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা

আমরা পিপাসাবোধ করলে সেসময় আমাদের শরীরে ১ শতাংশ পানির ঘাটতি দেখা দেয়। কিন্তু যদি আমরা নিজেদের পিপাসা নিবারণ না করি, সেক্ষেত্রে এই মাত্রা বেড়ে যায় আর শুষ্ক মুখ, হলদেটে মূত্র, অবসাদ, ঘোলাটে চোখ, ত্বকের নানাবিধ সমস্যা, নিম্ন রক্তচাপ ইত্যাদি দেখা দেয়। শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়া ব্যহত করে শক, কোমা এবং মৃত্যু পর্যন্ত আপনাকে টেনে নিয়ে যেতে পারে পানি না পান করার মতন সাধারণ বিষয়টি।

শরীরে ১ শতাংশ পানি কমে গেলেই আমরা পিপাসাবোধ করি; Source: markbuchanan.net

২) বর্জ্য নিঃসরণজনিত সমস্যা

আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সুস্থতা এবং বর্জ্য নিঃসরণের জন্য পানির দরকার পড়ে। পানি পান না করলে শরীরের পক্ষে খাবার হজম এবং সেটাকে মলে পরিণত করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য। ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি ওয়েক্সনার মেডিক্যাল সেন্টারের মতে, প্রাত্যাহিক জীবনে মানুষ কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে এই কম পানি পান করার কারণেই। এছাড়া ঘাম উৎপাদনের মাধ্যমে শরীরের বর্জ্য দূর করতেও দরকার পড়ে পানির।

৩) পেশীসংক্রান্ত সমস্যা

আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি ৫ শতাংশ পর্যন্ত চলে গেলেই শুরু হয় পেশীসংক্রান্ত সমস্যাগুলো। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তো কমেই যায়, সেই সাথে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়াতে পেশী নড়াচড়ায় কষ্ট তৈরি হয়। পানি পেশী ও হাড়ের সংযোগস্থলগুলোকে স্বাভাবিকভাবে নড়তে সাহায্য করে। এই গতিবিধি ব্যহত হয় পানি পান না করলে।

মোটকথা, যদি আপনি দিনের হিসেবে পর্যায়ক্রমে পানি না পান করে থাকার প্রভাব জানতে চান, সেক্ষেত্রে এই ব্যাপারগুলো ঘটবে।

পানি পান বন্ধ করে দেওয়ার পরপরই আপনার মুখে শুষ্কতা অনুভব করবেন আপনি। সাথে থাকবে মূত্রের রঙ ও গন্ধ পরিবর্তন। আপনি না চাইলেও নিজ থেকেই আপনার শরীর সতর্ক হয়ে যাবে। একটু একটু করে পানি জমিয়ে রাখতে শুরু করবে সে।

এক থেকে দুইদিনের মধ্যে আপনার শরীর মূত্র নিষ্কাশন বন্ধ করে দেবে। সারা শরীরে ঘোলাটে ভাব অনুভব করবেন আপনি। সর্দি দেখা দিতে পারে। আর সেই সাথে পেশীতে নানারকম সমস্যাবোধ করবেন। খাবার হজমের চাইতেও মস্তিষ্ক পরিচালনা হয়ে উঠবে শরীরের কাছে প্রধান বিষয়। মস্তিষ্ক ধীরগতিতে চলতে শুরু করবে। রক্ত সঞ্চালন ধীর হতে থাকবে, শরীরে নীলচে ছোপ দেখতে পাবেন আপনি, সেই সাথে শরীরের তাপমাত্রাও বেড়ে যাবে।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মিশেল মফিট এবং গ্রেগরী ব্রাউনের মতে, পাঁচ থেকে ছয়দিনের মাথায় শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ বন্ধ করে দেবে এবং মস্তিষ্কও থেমে যাবে। মোটকথা, পানি না পান করলে দুইদিন থেকে শুরু করে এক সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুবরণ করা স্বাভাবিক।

পানি পান না করলে দুইদিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে; Source: hikingartist.com

সাধারণত, আমাদের শরীর ক্রমাগত পানি ব্যবহার করে। আমরা এই যে নিঃশ্বাস নিচ্ছি সেটার মাধ্যমেও পানি খরচ হয়ে যায়। আর সেটা যদি হয় বেশ পরিশ্রমের কাজ তাহলে তো কথাই নেই। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক র‍্যান্ডাল কে. প্যাকার জানান, ভারী কাজের মাধ্যমে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতি ঘন্টায় এক থেকে দেড় লিটার পানি ঘামের মাধ্যমেই ঝরিয়ে ফেলতে সক্ষম। খাবার থেকেও হয়তো খানিকটা পানি পাওয়া যায়, তবে সেটা আমাদের শরীরের জন্য যথেষ্ট নয়।

তবে এগুলো ছিল তরল জাতীয় যেকোনো উপাদান থেকে বিরত থাকার ফলাফল। খাবার ও সামান্য কিছু তরল পানীয়ের মাধ্যমে কি জীবন বাঁচানো সম্ভব? স্বাভাবিক শরীরের অধিকারীদের কথা বলবো না এবার। তবে উল্লেখ করবো পানি পান না করেই জীবনযাপন করা কিছু মানুষের নাম।

১) প্রহ্লাদ জানি

ভারতের এই সন্ন্যাসী দাবী করেন, তিনি ১৯৪০ সাল থেকে খাবার কিংবা পানি ছাড়া বেঁচে আছেন। ২০০৩ এবং ২০১০ সালে প্রহ্লাদ জানি আদতেও সত্যি বলছেন কিনা সেটা যাচাই করার জন্য পরীক্ষা করা হয়। ভারতের আহমেদাবাদে অবস্থিত স্টারলিং হাসপাতালের চিকিৎসক সুধীর শাহ নিজে এই পরীক্ষা শেষ করে জানান যে, প্রহ্লাদ জানি খাবার এবং পানি ছাড়া বেশ ভালোভাবেই বেঁচে আছেন। যদিও অনেকেই ব্যাপারটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে বিজ্ঞান নিজের মতন কাজ করুক কিংবা না করুক, প্রহ্লাদ জানি বেশ লম্বা একটি সময় সবার নজরবন্দী হয়ে থেকেছেন। কিন্তু কোনো পরীক্ষাতেই কোনো কাজ হয়নি।

খাবার এবং পানি ছাড়াই বেঁচে আছেন প্রহ্লাদ জানি; Source: NY Daily News

সারাটা সময়েই ক্যামেরার সামনে ছিলেন প্রহ্লাদ জানি। কেবল গড়গড়া করা আর গোসল করা বাদে আর একবারের জন্যও পানির সংস্পর্শে যাননি তিনি। তাহলে কীভাবে নিজের শরীর পরিচালনা করেন তিনি? কেবল যে পানি পান বা খাবার খাননি প্রহ্লাদ জানি তা কিন্তু নয়, এই পুরোটা সময় মল-মূত্রও ত্যাগ করতে হয়নি তাকে।

টানা পনেরো দিনের পর্যবেক্ষণ শেষে পরীক্ষা করা হয় প্রহ্লাদকে। চিকিৎসকেরা জানান, সাধারণত পানি পান না করলে বা খাবার গ্রহণ না করলে যে প্রভাবগুলো মানুষের শরীরে দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর কোনোটাই ছিল না প্রহ্লাদ জানির শরীরে। সত্যি বলতে গেলে, তার বয়সের চাইতে আরো কমবয়সীদের মতন সুস্থ ও নীরোগ ছিল তার শরীর। প্রহ্লাদ জানির দাবী, সূর্য থেকেই নিজের দরকারী শক্তি পান তিনি।

২) পিটার ফেলেক

পিটার ফেলেক অবশ্য প্রহ্লাদ জানির মতো এতদিন ধরে পানি পান না করে বেঁচে নেই। খাবারটাও তিনি আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতই খান। মল-মূত্র ত্যাগ করেন নিয়মিত। পিটার ফেলেকের পানি না পান করাটা পুরোটাই নিজের শখের বশে।

কোনো পানীয়ই পান করেন না পিটার; Source: Munchies (Vice)

শুরুটা হয় ২০১২ সালের ৫ মে। পিটারের মনে হলো পানি না পান করেই থাকবেন তিনি। আর সেটাই করলেন শেষ পর্যন্ত। প্রথমে খানিকটা সোডা আর চকলেট মিল্ক পান করেছিলেন কিছুদিন। তবে ধীরে ধীরে সেগুলোও বাদ দিয়ে দেন পিটার নিজের খাবার তালিকা থেকে। এরপর থেকে কেবল কাঁচা সব্জি খেয়েই নিজের শরীরের খাবার এবং পানির চাহিদা পূরণ করেছেন পিটার। বর্তমানে প্রতিদিন ৮০০-১,০০০ ক্যালরির খাবার গ্রহণ করেন তিনি। সবজি থেকে প্রাপ্ত পানি দিয়েই বেশ চলে যায় তার। বাড়তি পানির আর দরকারই পড়ে না।

অবশ্য প্রহ্লাদ জানি ও পিটার ফেলেকের নামগুলো অস্বাভাবিক উদাহরণের মতো করেই ভেবে নিয়েছেন গবেষক ও চিকিৎসকেরা। আমাদের মতো সাধারণ ও স্বাভাবিক মানুষগুলোর পক্ষে এমনটা সম্ভব নয়। যারা পেরেছেন তাদের শরীর সেভাবেই তৈরি এবং তাই খুব সহজেই পানি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারছেন। আর সবার মতো আপনিও কি সুস্থ থাকতে চান? তাহলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন!

ফিচার ইমেজ- greenwaterscience.com

Related Articles