Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভালোবাসার অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছেন যে তারকারা

আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে বিবাহ-বন্ধনের চেয়ে বিবাহ-বিচ্ছেদের হারটাই বেশি, সেখানে ঐসকল দম্পতিদের সম্পর্কে জানতে ভালোই লাগে যারা কিনা সেই আমৃত্যু একসাথে থাকার শপথবাক্যটি এখনও মেনে চলেছেন। বিশেষ করে হলিউডের মতন জায়গায় যখন আদর্শ দম্পতির উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত ব্র্যাঞ্জেলিনা জুটিরও বিচ্ছেদ ঘটে। এজন্যই হয়তো বলা হয়- ‘হলিউডে বিয়ের মেয়াদ মোটে ৭২ দিন!’ তবে স্রোতের বিপরীতে চলার দৃষ্টান্তও বিরল নয়। যদি সম্পর্কের রসায়ন ও লক্ষ্য ঠিক থাকে, তাহলে সেই প্রিয় মানুষের সাথেই কাটিয়ে দেওয়া যায় বছরের পর বছর। আমাদের আজকের প্রবন্ধটি সাজানো হয়েছে এমনই কয়েকজন তারকা দম্পতি নিয়ে, যারা কিনা এক ছাদের নিচে কাটিয়ে দিয়েছেন বৈবাহিক জীবনের এক যুগেরও বেশি সময়।

পল নিউম্যান ও জোয়ানে উডওয়ার্ড

শুরুটা করা যাক ভিন্ন এক দম্পতির গল্প দিয়ে। অবশ্য দুঃখের ব্যাপার হলো, এই জুটির একজন আজ বেঁচে নেই। হলিউডের সবচেয়ে ‘ড্যাশিং’ দম্পতি হিসেবে পরিচিত এই দুজন ঘর বেঁধেছিলেন সেই ১৯৫৮ সালে এবং ২০০৮ সালে পল যখন মারা যান, তারা তখনও বিবাহিত ছিলেন।

দম্পতির দুই সময়ের ছবি © Getty Images

পল আর জোয়ানের পরিচয় হয়েছিল ১৯৫৩ সালের দিকে। পরে ১৯৫৭ সালে একসাথে ‘দ্য হট সামার’ সিনেমায় অভিনয় করেন তারা। পলের তখন তার প্রথম স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ চলছে। এর ঠিক পরের বছরই তিনি বিয়ে করেন জোয়ানে উডওয়ার্ডকে। তারা সব মিলিয়ে মোট আটটি সিনেমায় একসাথে অভিনয় করেছেন। পলের মৃত্যুর মাসখানেক আগে এই দম্পতি তাদের ৫০তম বিবাহ বার্ষিকী পালন করেন। তাদের সফল দাম্পত্য জীবনের কথা বলতে গিয়ে জোয়ানে বলেছিলেন,

“বয়স বাড়ার সাথে সাথে যৌবন ফুরিয়ে যেতে শুরু করে আর চেহারার সৌন্দর্যও তখন ঝরে পড়ে। কিন্তু আপনি যদি এমন একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পান, যে কিনা সবসময় আপনাকে হাসিখুশি রাখতে পছন্দ করে, সেটা থেকে বড় পাওয়া জীবনে আর কিছু হতে পারে না।”

মেরিল স্ট্রিপ ও ডন গামার

বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতা-অভিনেত্রীর যদি একটি তালিকা তৈরি করা হয়, নিঃসন্দেহে সেটার প্রথমদিকে থাকবেন তিনবারের অস্কারবিজয়ী মার্কিন অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ। কে না চেনে তাকে? সেই আশির দশক থেকে তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন চমৎকার সব চলচ্চিত্র। সবধরনের দর্শকের কাছেই তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। কিন্তু শো-বিজের জগতে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন তারকা হওয়া সত্ত্বেও তার ব্যক্তিগত জীবনের গল্প আজও অধরা রয়ে গেছে সাধারণ দর্শকের কাছে। তবে আমরা এতটুকু জানি যে, মার্কিন ভাস্কর ডন গামারের সঙ্গে তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন সেই ১৯৭৮ সনে। বিয়ের আজ ৩৭ বছর হতে চলল, চার ছেলেমেয়ে নিয়ে তারা এখনও একসাথেই আছেন

স্বামীর সঙ্গে অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ © Lauren Weigle

শুনে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন, একজন অভিনেত্রীর পক্ষে এতদিন বিয়ে টিকিয়ে রাখা কীভাবে সম্ভব? না, এতে অবাক হওয়ার কিছু নাই, এই ভদ্রমহিলা সব বিষয়েই দারুণ পারদর্শী।

টম হ্যাঙ্কস ও রিটা উইলসন

টম হ্যাঙ্কসের সাথে রিটার উইলসনের দেখা হয়েছিল আশির দশকের ‘বসম বাডিজ’ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করার সময়। কিন্তু সমস্যা হল তখন তিনি বিবাহিত ছিলেন, তবে তিনি GQ ম্যাগাজিনে এক সাক্ষাৎকারে বলেন,

“প্রথম দেখাতেই আমাদের দুজনের দুজনকে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের মধ্যে একটা আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল যেটা সে বা আমি চাইলেও অস্বীকার করতে পারবো না। তবুও একদিন তাকে আমার অনুভূতির কথা জানালাম এবং জিজ্ঞেস করে বসি যে, সে আমাকে পছন্দ করে কিনা।”

টম হ্যাঙ্কস এবং রিটা উইলসন © Vittorio Zunino

১৯৮৭ সালের দিকে টম তার বিবাহ বিচ্ছেদ চূড়ান্ত করেন এবং পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে রিটাকে বিয়ে করেন। এই দম্পতি এখনও একসাথে আছেন এবং জন্ম দিয়েছেন দুই সন্তানের। ২০১৫ সালে পিপল ম্যাগাজিনের কাছে এক সাক্ষাৎকারে টম বলেন,

“বিয়ের আজ ২৭ বছর হতে চলল, কিন্তু আমার এখনও মাঝে মাঝে বিশ্বাস হয় না যে সে(রিটা) আমার স্ত্রী। কপাল ভালো যে, আমি হাই স্কুলে থাকতে তার সাথে আমার দেখা হয়নি; তার মতো সুন্দরী কারো সাথে কথা বলার সাহসই আমার তখন ছিল না।”

হিউ জ্যাকম্যান ও ডেবরা-লি ফার্নেস

হিউ আর ডেবরার পরিচয় হয়েছিল ১৯৯৫ সালের দিকে এক নাটকের শুটিং সেটে। এই দম্পতির পরিচয়ের গল্পটা বেশ মজার। এই তো গেলো বছর এ নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন হিউ জ্যাকম্যান,

“সে ছিল নাটকের মূল তারকা। তার সাথে অভিনয় করতে গিয়ে বলতে পারেন হঠাৎ করেই আমি তাকে পছন্দ করতে শুরু করি। বলতে গেলে আমাদের পুরো ক্রু’র অনেকেই তখন তাকে পছন্দ করতো। ব্যাপারটা নিয়ে আমি খুব বিব্রত ছিলাম এবং প্রায় এক সপ্তাহের মতো আমি তার সাথে কোনো কথাই বলিনি। তারপর এক ডিনার পার্টিতে আমি সে সহ আরও বিশ জন মানুষকে দাওয়াত করেছিলাম। পার্টি চলাকালীন সে হঠাৎ এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা ব্যাপার কী বলতো? তুমি দেখি আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করা দিলে, আমি আবার কী করলাম? আমি তাকে বললাম, আরে নাহ! তোমার কোনো দোষ নেই, তবে আমার দুয়েকটা সমস্যা হচ্ছে। এর একটি হলো, আমি তোমাকে ভীষণ পছন্দ করি। তবে চিন্তা করো না আমি সেটা কাটিয়ে উঠবো। কথা শেষ করার আগেই সে বলে উঠলো, ওহ তাই? আমি মনে মনে প্রমাদ গুণতে শুরু করলাম। তারপর আমাকে অবাক করে দিয়েই সে বলে উঠলো, আমি নিজেও তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। তারপর আর কী, তার কথা শুনে আমি তখন খুশিতে আত্মহারা।”

হিউ আর ডেবরা © Lia Toby

১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে এই দম্পতি বিয়ে করেন। তাদের এনগেজমেন্ট ও বিয়ের আঙটি হিউ নিজে ডিজাইন করেছেন। তাতে সংস্কৃত ভাষায় লেখা আছে ‘আমরা আমাদের এই মিলনকে ঈশ্বরের হাতে সঁপে দিচ্ছি’। তারা এখনও একসাথেই আছেন।

উইল স্মিথ ও জ্যাডা পিংকেট

উইল স্মিথ তার প্রথম বিয়েটি করেছিল সেই ১৯৯২ সালে। তবে সেই বিয়েটা খুব বেশীদিন টেকাতে পারেননি। বিয়ের তিন বছরের মাথায় তার বিচ্ছেদ ঘটে শিরি জাম্পিনোর সাথে। এর দু’বছর পর তিনি বিয়ে করেন আরেক অভিনেত্রী জ্যাডা পিংকেট স্মিথকে। তাদের পরিচয়ের পর্বটি বেশ নাটকীয়। নব্বইয়ের দশকে টিভিতে প্রচারিত ধারাবাহিক ‘দ্য ফ্রেশ প্রিন্স অফ বেল এয়ারে’ উইল স্মিথের প্রেমিকার চরিত্রের জন্যে অডিশন দিতে গিয়ে তার সাথে পরিচয় হয় জ্যাডা পিংকেটের। তবে নাটকে উইলের প্রণয়ী হতে না পারলেও বাস্তব জীবনে তিনি তারই ঘরণী হয়েছেন এবং একসাথে কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় বিশটি বছর।

স্মিথ দম্পতি © Frederic J. Brown

তাদের বিশ বছরের বিবাহিত জীবন নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে উইল স্মিথ বলেন,

“বিয়ের ব্যাপারটা যতোটা সহজ মনে হয় আসলে সেটা ততোটা সহজ নয়। আর আমাদের সম্পর্কটা যেন একটু বেশিই জটিল ছিল। সম্পর্কের তিক্ততার বেড়াজালের সম্মুখীন হওয়ার পরেও আমরা আজও টিকে আছি। হাল ছাড়ার পাত্র নই আমরা দুজনের একজনও।”

ডেনজেল ও পলেট ওয়াশিংটন

অন্য অনেক তারকা জুটির মতো এদেরও দেখা হয়েছিল শুটিং সেটে। কিংবদন্তী আফ্রিকান-আমেরিকান দৌড়বিদ উইলমাকে নিয়ে বানানো টিভি সিনেমায় কাজ করার সময় ১৯৭৭ সালে ডেনজেলের সাথে পরিচয় হয় পলেট পিয়ারসনের সাথে। প্রথম পরিচয়েই ভালো লাগা, তারপর ভালোবাসা এবং সেটা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় ১৯৮২ সালের জুনের ২৫ তারিখে।

ডেনজেল ও পলেট ওয়াশিংটন © C. Smith

এই তো কিছুদিন আগে তাদের বিয়ের ৩৫ বছর পূর্ণ হলো। চার সন্তান নিয়ে সুখেই সংসার করছেন ডেনজেল ও পলেট ওয়াশিংটন।

র‍্যাচেল জয়ি ও রজার বারম্যান

ফ্যাশন ডিজাইনার র‍্যাচেল জয়ির সাথে তার ভালোবাসার মানুষটির পরিচয় হয়েছিল সেই ১৯৯১ সালে। তখন তার বয়স মাত্র ১৯ বছর, দুজনেই এক রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন। তাদের প্রথম দর্শন নিয়ে রজার বলেছেন, তাকে প্রথম দেখার কথা আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে। তার পরনে ছিল কালো আঁটসাঁট মিনি ড্রেসের সাথে পায়ে হাই হিলের জুতো, লম্বা ঝলমলে চুল, এম.এ.সি লিপস্টিকে আচ্ছাদিত লাল লাল ঠোঁট। এতো সুন্দর নারী আমি এর আগে কখনও দেখিনি।

সন্তান নিয়ে র‍্যাচেল জয়ি ও রজার বারম্যান © Jennifer Ash

পরিচয়ের ছয় বছর পর এই তারকযুগল বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। বর্তমানে ফুটফুটে দুই সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন তারা।

ড্যানিয়েল ডে-লুইস ও রেবেকা মিলার

রেবেকাকে বিয়ে করার আগে ফরাসি অভিনেত্রী ইসাবেল আদজানির সাথে ডে-লুইসের সম্পর্ক ছিল প্রায় ছয় বছরের মতো। সেই সম্পর্কে ভাঙন ধরলে ১৯৯৫ সালে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় এবং এই ঘটনার কয়েক মাস পরে তাদের প্রথম সন্তান গ্যাব্রিয়েল-কেইন ডে-লুইসের জন্ম হয়।

ড্যানিয়েল ডে-লুইস ও রেবেকা মিলার © Jason Merritt

১৯৯৬ সালে ডে-লুইস যখন ‘দ্য ক্রুসিবল’ সিনেমায় কাজ করছিলেন তখন তার পরিচয় হয় সিনেমা প্রযোজক রবার্ট মিলারের মেয়ে রেবেকা মিলারের সাথে। ডে-লুইসের প্রচারবিমুখতার কারণে কীভাবে কী হয়েছিল সেই গল্প জানা যায়নি, তবে পরিচয়ের এক বছর পরই তারা বিয়ে করেন। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে তিনি বর্তমানে কখনও নিউ ইয়র্ক, কখনও আয়ারল্যান্ডে বাস করছেন।

ডেভিড বেকহাম ও ভিক্টোরিয়া বেকহাম

এখন যার কথা বলবো তিনি হলিউড কিংবা শোবিজের জগতের কেউ নন। তিনি হলেন সাবেক ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহাম। সেই ২০০৭ সালে বেকহাম যখন রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের এল.এ গ্যালাক্সি ক্লাবের হয়ে খেলার জন্য, তখন সেখানকার কতজন মানুষ তাকে চিনে সেটা জানার জন্য ছোট্ট এক জরিপ চালানো হয়েছিল। স্থানীয় এক ভদ্রমহিলাকে বেকহামের কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রথমে তাকে চিনতে পারেননি। পরে হঠাৎ তিনি বলে উঠেন,

“ওহ! আপনি কি ভিক্টোরিয়ার বেকহামের কথা বলছেন?”

পশ এন্ড বেকস © Danny Moloshok

এই দম্পতির দেখা হয়েছিল সেই ১৯৯৭ সালে। ভিক্টোরিয়া তখন স্পাইস গার্লস ব্যান্ডের গায়িকা। বেকহামের অনুরোধে পুরো ব্যান্ড দল সেদিন হাজির হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এক চ্যারিটি ফুটবল ম্যাচ দেখতে। সেখানেই বেকহাম আর ভিক্টোরিয়ার প্রথম দেখা হয়। এই নিয়ে ভিক্টোরিয়া বলেন,

“আমি সত্যিই জানতাম না সে কে ছিল। তাছাড়া আমি তখন ফুটবল খেলাও খুব বেশি দেখতাম না।”

পরিচয়ের ঠিক এক বছর পর এই দম্পতি তাদের এনগেজমেন্টের কথা ঘোষণা করেন। পরে ১৯৯৯ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তারা এখনও চার সন্তান নিয়ে একই ছাদের নিচে বসবাস করছেন। গণমাধ্যমে তাদেরকে একত্রে ‘পশ এন্ড বেকস’ নামে ডাকা হয়।

ফিচার ইমেজ- Edited by Writer

Related Articles