Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মারাত্মক ঘুমের সমস্যায় ভোগেন যে তারকারা

“তখন রাত ৪ টা বেজে ৪৭ মিনিট। সারারাত দু’চোখের পাতা এক হয়নি একটুও। বিছানায় শুয়ে শুয়ে কেবলমাত্র খেয়াল করলাম জীবনের গত ১৩ বছরের ১১ বছরই এভাবে জেগে কেটে গেছে আমার। এরপরই সকালের আলো ফুটলে বারাবরের মতো অংকগুলো নিয়ে বসবো।

আমার বয়স এখন ৩০ বছর। বড় হওয়ার পর থেকে পুরো জীবনই আমি এই ভয়াবহ ইনসোমনিয়ায় ভুগেছি আর এটাই আমাকে সেই ৭৫% ব্রিটিশ মহিদের মধ্যে ফেলেছে, ঘুম যাদের কাছে খুব একটা সহজলভ্য নয়।”

এভাবেই ইংল্যান্ডে পরিসংখ্যান তৈরি করার সময় এক ইনসোমনিয়ায় আক্রান্ত মহিলা ডাক্তারকে তার অনুভূতির বর্ননা দেন। আরেক রোগী এডওয়ার্ড নরটনের কথা শুনে ডাক্তার তাকে বলেছিলেন, “আর যা-ই হোক, তুমি না ঘুমিয়ে মরতে পারো না”। অনেক সাধারণ মানুষের কাছে রাতভর শান্তির ঘুম এমনি অধরা। তবে শুধু সাধারণ মানুষ না, অনেক বিখ্যাত আর ক্ষমতাবান মানুষদের জীবনও কেটেছে এমনি ঘুমের জন্য কেবল অপেক্ষায়। আজ কথা হবে তাদের নিয়েই।

একটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য আর বিশ্রাম- এর কি কোনো বিকল্প আছে? এমনকি পৃথিবীর গন্ডি পেরিয়ে মহাকাশের দিকে পা বাড়ালেও মানুষকে নিজের জন্য এ দুইয়ের ব্যবস্থা করতে হয়। সংক্ষিপ্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হলেও নিতে হয় খাবার আর বিশ্রাম, আর অবশ্যই বিশ্রাম মানে একটা নির্দিষ্ট সময়ের ঘুম। এতোই গুরুত্ব আর প্রয়োজনীয়তা যে ঘুমের, সেই ঘুমের সমস্যার কথা আজ নতুন না। আগের তুলনায় আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এই পৃথিবীতে এ সমস্যা যেন একটু বেশিই ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। নাকি মানুষের জীবনের জটিলতা, চাহিদা, আরাম-আয়েশ, আকাঙ্ক্ষা, ক্ষমতা আর প্রযুক্তি নির্ভরতা যত বাড়ছে, ততোই হারাম হচ্ছে তার রাতের শান্তির ঘুম?

ক্ষমতা, অর্থ কিংবা যশ কিছুই যেন নিশ্চয়তা দিতে পারে না আপনার নির্বিঘ্ন ঘুমের- এটাই আরেকবার প্রমাণ হয়, যখন জানা যায় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা কেউ-ই নিশ্চিত করতে পারেনি নিজেদের রাতের নির্বিঘ্ন ঘুম। আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, যিনি কিনা সততার জন্য ‘আমেরিকার সৎ আব্রাহাম’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন, তাঁর জীবনেও ছিল ঘুমহীন রাতের অভিশাপ। জানা যায়, মাঝরাতে তিনি হাঁটতে বেরিয়ে যেতেন এই আশায় যে, হাঁটার ক্লান্তি তাঁর চোখে ঘুম এনে দেবে। এছাড়া তিনি ওই সময় গল্প বলতে শুরু করতেন, অনেক সময় ব্যক্তিগত কাজের কাগজপত্র নিয়েও বসতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, এই পদ্ধতিগুলো অন্য নিদ্রাহীনতার রোগীদের চোখে ঘুম আনতে পারলেও প্রেসিডেন্টকে রাত পার করা ঘুম দিতে পারেনি।

আব্রাহাম লিংকন, লাখো হৃদয়ের বিজেতা ঘুমের সাথে লুকোচুরি খেলেছেন আজীবন; Source: makezine.com

এই প্রসঙ্গে বলতে গেলে এখনকার সময়ের আরেক প্রেসিডেন্টে নাম এসেই যায়। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও তাঁর জীবনে একই ঘুমের কষ্টে ভোগেন নিয়মিত। তিনি নিজেই বলেছেন, “জীবনে বড় ভুল যেগুলো করেছি, তা এই অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকার জন্যেই হয়েছে।”

ঘুমহীন রাজনীতিবিদদের তালিকায় আরেক ক্ষমতাবানের নামও যোগ হয়। আর সেটা হলো ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের নাম। রাতে চার ঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারতেন না তিনি। তাঁর স্ত্রী লেডি থ্যাচার একে অসুস্থতার নিদর্শন হিসেবেই দেখতেন। ঘুম নিয়ে লেডি থ‍্যাচারের “ঘুম হচ্ছে ভোরের সুখী পাখিদের জন্য”- উক্তিটি কিন্তু বেশ বিখ্যাত। রাজনীতির টানাপোড়েন তবে কি ঘুমহীনতার অভিশাপে জর্জরিত? সেই প্রশ্ন তুলে এই তালিকায় যোগ হয় আরেকটি নাম, উইন্সটন চার্চিল। ইংল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চার্চিল মাত্র কয়েক ঘন্টা ঘুমোতে পারতেন রাতে। তার কর্মময় জীবনের পুরোটা সময় ধরেই হতাশা আর ইনসোমনিয়া তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছে। এজন্য তিনি নিজেই এদেরকে তার ‘নিয়ত অনুসরণরত দুর্ভাগ্য’ বলে অভিহিত করেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি এই দুর্ভাগ্যের সাথে যুদ্ধ করে গেছেন।

পাঠক যদি ভাবতে শুরু করেন, কেবলমাত্র রাজনীতির আকাশের এসব উজ্জ্বল নক্ষত্রদের রাতগুলোই না ঘুমিয়ে কাটে, তবে সেই ভুল ভাংবে যখন জানবেন যে, বিশ্বজয়ী তারকা কিংবা শিল্প-সাহিত্যের বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের নামই আসে ইনসোমনিয়ায় আক্রান্ত হিসেবে। বিনোদনের জগতের নামগুলো বলতে গেলে সবার আগে যে নামটি না বললেই নয়, সেটি হলো পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা মাইকেল জ্যাকসনের। পপ সংগীতের দুনিয়ার এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী সম্রাট পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে যে চিরকাল রাজত্ব করবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু পৃথিবীর বুকে তার রাজত্ব শেষ করে মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধের মারাত্মক প্রকোপ। বলা হয়, সারাজীবনই ঘুমানোর জন্য তাকে কড়া মাত্রা ঘুমের ওষুধের শরণাপন্ন হতে হতো। সারারাত জেগে নিজের অনুষ্ঠানের অনুশীলন করা আর ব্যাপক জনপ্রিয়তার পেয়েও ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী হওয়া- এ দুই কারণেই তার রাত নিদ্রাহীন পার হতো। তবুও মাইকেল বিনোদনের জগতে সবচেয়ে পরিশ্রমী ব্যক্তির উপাধি নিজের জন্য রেখেছেন চিরকাল, যা মোটেই কম কিছু নয়। নিজের মেধা আর পরিশ্রমের যথার্থ মূল্যও তিনি পেয়েছেন জীবনকালেই।

বিনোদনের জগতে নিজের উপস্থাপনা আর অনন্য সব নৃত্যভঙ্গিমার মাধ্যমে নিজেকে কিংবদন্তী তারকার উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া আরেক নাম ম্যাডোনা। হাজারো ভক্তের হৃদয়ের এই রাণী নিজের ক্যারিয়ারের পুরোটা প্রায় সময়ই দিনে দু’ঘন্টা করে ঘুমিয়ে কাটান। এমনকি পঞ্চাশ বছর বয়সের পর নিজের তিন সন্তান নিয়ে রাতে যখন ক্লান্তিতে তার সহজেই ঘুমিয়ে যাবার কথা, তখনও তার অধিকাংশ রাত কাটে নির্ঘুম। অবশ্য জানা যায়, ম্যাডোনা তার এই সময়টা নিজেকে সৃজনশীল কাজেই লাগান।

ম্যাডোনা, ভক্তদের হৃদয় জিতলেও নিজের জন্য শান্তির ঘুম জেতা হয়নি তার; Source: pinterest.com

লেডি গাগা নিজের বিপজ্জনক নৃত্যভঙ্গিমা আর বিচিত্র বেশভূষা দিয়ে এখনকার তরুণ প্রজন্মকে মাতিয়ে রাখা আরেক তারকার নাম। কিন্তু তরুণরা কি জানে কী প্রচন্ড যুদ্ধটাই না গাগা করে যাচ্ছেন নিজের ইনসোমনিয়ার সাথে? কখনো কখনো পরপর তিন দিনও না ঘুমিয়ে পার করেন তিনি। কোনো চিকিৎসা বা ধ্যানও করেন না তিনি এজন্য, পাছে তা তার সৃজনশীলতার ক্ষতি করে!

তবে কি পাশ্চাত্যের জীবনেই ইনসোমনিয়ার প্রকোপ বেশি? এশিয়া সহ প্রাচ্যের দেশগুলোতে কি সবাই নির্বিঘ্ন ঘুমে রাত পার করে দেয়? না, মোটেই তা নয়। বলিউডে ঘুমের এই জটিলতায় ভোগা বিখ্যাত তারকার সংখ্যা নেহাত কম নয়। শাহরুখ খান, সোনম কাপুর, বিদ্যা বালান, শহিদ কাপুর, সুশান্ত সিং রাজপুত সহ আরো অনেকে আছে এই তালিকায়। তবে ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তী অভিনেতা অমিতাভ বাচ্চনের কথা এক্ষেত্রে না বললেই নয়। রাত ৩ টা থেকে ৫টা, পুরো দিনে মাত্র দু’ঘন্টা ঘুমান তিনি। ভারতের অনেক মানুষের দুপুরের ঘুমের সময়ের থেকে এ সময়টা কম।

শুধু বিনোদনের ঝলমলে জগতের না, শিল্প-সাহিত্যেরও অনেকেও ভোগেন নিন্দ্রাহীনতায়। স্বনামধন্য সংগীতশিল্পী এ আর রহমান আছেন তাদের মধ্যে। ঘুম সহজে ধরা দেয় না তার কাছেও।

এখানেই শেষ করা যাক এ তালিকা। শুধু যেতে যেতে আরো দুটো নাম বলে যেতে চাই। বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রশংসিত সিনেমা ‘গ্রাভিটি’ সহ ‘দি ডিসেনডেন্টস’, ‘ওশানস ইলেভেন’ এর মতো সিনেমার পরিচালক জর্জ ক্লুনিও ইনসোমনিয়ায় আক্রান্ত। আরো আছেন মেরিলিন মনরোর মতো নিজের সময়কে ছাড়িয়ে যাওয়া শিল্পীও।

মেরিলিন মনরো, ভূবন ভোলানো এই হাসির পেছনের গল্প কি জানি আমরা? Source: news.jarm.com

ইনসোমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা কি তাহলে সৃজনশীলতাকেই সবার আগে আক্রমণ করে?

ফিচার ইমেজ- Melancholy Wallpapers

Related Articles