Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কমফোর্ট জোন থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবেন?

কমফোর্ট জোন কী? আরামে থাকা খাওয়ার জায়গা? শান্তির জায়গা? কমফোর্ট জোন বলতে যা বোঝানো হয় তার সত্যিকার অর্থ এর অনেকটাই কাছাকাছি। কমফোর্ট জোন মূলত একটি আচরণগত অবস্থা, যেখানকার পরিবেশ আমাদের পরিচিত; নির্দিষ্ট একটা গণ্ডি, যেখানে কাজ করতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি এবং ফলাফল অনেকটাই নিশ্চিত। আমাদের কাজও আমাদের জানা, ফলাফলও জানা।

হাতেগোনা কিছু মানুষ ছাড়া কমফোর্ট জোনে থাকতে ভালোবাসি আমরা সবাই-ই। কারণ আমরা যখন কমফোর্ট জোন ছেড়ে বাইরে যাই সেটা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। আমাদের উপর চাপ বেড়ে যায়। ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। এমন একটা অনিশ্চিত পরিস্থিতি আসে যে আমরা জানি না আদৌ কী ঘটবে আর আমরা কী করবো। মজার ব্যাপার হলো এই অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির সাথে সাথে আসে সুযোগ আর প্রাপ্তি, যা থেকে এতদিন আমরা বঞ্চিত ছিলাম। বাস্তব জীবনের অবারিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায় চোখের সামনে।

কমফোর্ট জোনকে বলুন, “বাই বাই“; Source: lifehacker.com

আপাতদৃষ্টিতে চাপ, অনিশ্চয়তা আর ঝুঁকি শব্দগুলো নেতিবাচক শোনালেও এর রয়েছে বিশাল ইতিবাচক দিক। কোনোদিন কি ভেবেছেন আপনার রুটিনমাফিক সুনিশ্চিত জগতের বাইরেও আরেকটি অপার সম্ভাবনাময় জগত আছে? শুধুমাত্র অনিশ্চয়তা, চাপ আর ঝুঁকির ভয়ে আপনি সেই সুযোগ হারাচ্ছেন। সবার সামনে বলা কিছু কথা হয়তো আপনাকে এনে দেবে দারুণ এক পরিচিতি, কিন্তু লোকে কী বলবে ভেবে আপনি কথাই বললেন না! নতুন একটা ভাষা শিখবেন বলে ভেবেছেন, কিন্তু ওখানে সময় দিলে যদি পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয় সেই ভয়ে ভাষাটা আর শিখলেনই না। হয়তো ভাবলেন যোগব্যায়াম শুরু করবেন, কিন্তু সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠার ভয়ে আর সেটা শুরু করাই হলো না। এতে করে আসলে কী হলো? আপনি হয়তো আপনার স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করতে পারছেন, কিন্তু এই সামান্য কিছু পদক্ষেপ আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারতো অনেকখানিই। আপনার উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দিত বহুগুণে। একটু ভেবে দেখুন। শুধুমাত্র কমফোর্ট জোনে থাকতে ভালবাসেন বলে জীবনের কত সুযোগ আপনি হারিয়েছেন।

কমফোর্ট জোন সীমিত করছে আপনার সুযোগ। আসুন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু উপায় যা আপনাকে আপনার কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করবে। 

১. আত্মবিশ্বাসী হোন

আত্মবিশ্বাসী রাখুন; Source: medium.com

নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন যে, আপনি পারবেন। নিজের সামর্থ্য আর আকাঙ্ক্ষার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসই আপনাকে কমফোর্ট জোনের দেয়াল ভেঙে বেরোতে সাহায্য করবে।

২. পুরনো কোনো কাজ করুন নতুনভাবে

একই কাজ করুন নতুনভাবে; Source: Enterprise.Microsoft.com

বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার নিত্যদিনকার রাস্তাটি ছেড়ে একদিন নতুন একটা রাস্তা দিয়ে যান যেদিক দিয়ে আপনি সচরাচর যান না। ক্লাসের যে সহপাঠীর সাথে কোনোদিনও কথা হয়নি, তার সাথে গিয়ে কথা বলুন। যে ঘরটা প্রতিদিন মা গুছিয়ে দেন, সেটা আজ নিজেই গোছান। এতে করে আপনি নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শিখবেন।

৩. কঠিন অপশনটি বেছে নিন

কঠিন অপশনটি বেছে নিন; Source: akamommagazine.com

আমরা সবসময় নিজের জন্য সহজ অপশনটিই বেছে নিই। এতে করে নতুন কোনো পরিস্থিতির মোকাবেলা আমাদের করতে হয় না। এই অভ্যাসটি পরিত্যাগ করুন। তুলনামূলক কঠিন আর অপরিচিত অপশনটি বাছাই করুন। সত্যি বলছি, আপনি যদি ব্যর্থও হন, তবুও নতুন কিছু শিখতে পারবেন। নতুন একটি অভিজ্ঞতা হবে।

. মনে রাখবেন আগামীকাল সম্পূর্ণ একটি নতুন দিন

আজ যদি কোনো কাজ করতে গিয়ে আপনি ব্যর্থ হন তার মানে এই না যে আপনার সব সম্ভাবনা শেষ। মনে রাখবেন আগামীকাল সম্পূর্ণ একটি নতুন দিন হতে পারে আপনার জন্য। চাইলেই সেখান থেকে নতুন করে শুরু করতে পারেন।

. নিজেকে নিজেই চ্যালেঞ্জ করুন

নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন; Source: ubookooblog.com

দুর্বল দিকগুলো কাটিয়ে উঠতে নিজেকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিন। হোক না খুব ছোট কিছু। যে কাজগুলো করতে আপনি ভয় একটু একটু করে সেগুলো করতে শুরু করুন। যেমন ঠিক করুন অপরিচিত কোন মানুষের সাথে আগে গিয়ে কথা বলবেন। কিংবা ভিন্নভাষী কারো সাথে বন্ধুত্ব পাতাতেও পারেন। দামাদামি করার অভ্যাস না থাকলে একদিন দোকানদারের সাথে দামাদামি করতে পারেন। একদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুরু করে দিন যোগব্যায়াম। এভাবে আপনি নিজেকে কমফোর্ট জোন থেকে বের করে আনতে পারবেন।  

৬. সেটাই করুন যা করতে আপনি ভয় পান

প্রবল ইচ্ছা আর আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অহেতুক ভয়ের কারণে অনেক কাজ থেকে আমরা পিছিয়ে থাকি। এই অভ্যাস ত্যাগ করুন। যে কাজ করতে আপনার ভয় লাগে সেই কাজই করুন বেশি বেশি।

৭. স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ

স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ দেবে আত্মতৃপ্তি; Source: bidpal.com

কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসার জন্য স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ হতে পারে দারুণ একটি সহায়ক মাধ্যম। এ থেকে যেমন আপনি নতুন নতুন দক্ষতা শিখবেন, নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হবেন, তেমনি দেশ ও সমাজের উন্নয়নেরও অংশীদার হতে পারবেন। মানুষের জন্য কাজ করতে পারা আপনাকে কৃতজ্ঞতাবোধ আর আত্মতৃপ্তির উপলব্ধি দেবে।

৮. অতীতে আপনার আশাতীত কিছু সাফল্যের কথা মনে করুন

অনাগ্রহ জয় করতে পারলে হবে দারুণ কিছু; Source: mypsychologychannel.com

আপনার জীবনে নিশ্চয়ই এমন কোনো না কোনো সময় আছে যখন আপনার মনে হয়েছিলো আপনি পারবেন না, কিন্তু আপনি পেরেছিলেন। সেই সময়গুলো মনে করুন। দেখবেন মনের জোর বেড়ে গেছে বহুগুণ। নিজের উপর বিশ্বাস আসবে।

৯. ব্যর্থতা সফলতারই অংশ

কখনো ব্যর্থ হলেন তার মানে এই না যে আপনি ব্যর্থ। ব্যর্থতাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন। মনে করুন এটা একটা শেখার সুযোগ। ব্যর্থ হলে ভেঙে না পড়ে নিজেকে সাহস জোগান। নিজেকে বলুন, “এটা কোনো ব্যর্থতা নয় বরং আমি একটু কঠিনভাবে শিখছি। এই ভুলগুলো আমি আর কখনোই করবো না।

১০. এমন কারো কথা ভাবুন যারা আপনাকে উৎসাহ দেয়

বাবা-মা, প্রিয় মানুষ, কাছের কোনো বন্ধু আমাদের সবসময়ই উৎসাহ দেয়। তাদের কথা মনে করুন। আবার অনেকের খুব প্রিয় কোনো মোটিভেশনাল উক্তি থাকে। সেটা মনে করার চেষ্টা করুন। সাহস পাবেন।

১১. সাফল্যকে কল্পনা করুন

সাফল্যটা ভাবুন; Source: top-performerblog.com

কমফোর্ট জোন থেকে বের হতে পারলে যে সাফল্যটা আপনার জীবনে আসবে, সেটাকে চোখের সামনে দৃশ্যমান করার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।

১২. অতিরিক্ত চিন্তা বাদ দিন

কোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনা করে আমরা ব্যাপারটাকে জটিল করে ফেলি। এতে করে ওই বিষয়টাতে আমাদের আগ্রহ কমে যায়। যেমন- ছুটির দিনে বন্ধুদের কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করলেন। কিন্তু এতে আপনি অভ্যস্ত নন। এখন যদি আপনি ভাবেন রাস্তায় জ্যাম, পড়ার ক্ষতি হবে, খামোখা কিছু টাকা নষ্ট হবে, তাহলে আপনি শুধুই অজুহাত বানাচ্ছেন আপনার কমফোর্ট জোনে থাকার জন্য। এতে করে হয়তো আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে ছুটির দিনটা কাটাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু বন্ধুদের সাথে আনন্দের মুহূর্তগুলো মিস করছেন যা আপনাকে নতুন উদ্যমে বাঁচার রসদ যোগাতো। এটা শুধুই একটা উদাহরণ। কোনো ব্যাপার নিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভাবা বেশিরভাগ সময়েই নতুন কিছু পাওয়া থেকে আমাদের থামিয়ে দেয়।

১৩. একা নয় কখনোই

সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন পাশে কাউকে রাখতে। সে হতে পারে আপনার খুব কাছের কোনো বন্ধু, মেন্টর কিংবা বাবা-মা। কী করতে চান তাদের জানান। তাদের আন্তরিক পরামর্শ এবং উৎসাহ আপনাকে যেমন সাহস জোগাবে, তেমনি প্রয়োজনে পাবেন সঠিক দিক নির্দেশনা।

feautured image: Linkedin.com

Related Articles