Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গর্ভাবস্থায় বমিভাব: সমাধান ঘরোয়া উপায়ে

গর্ভাবস্থায় বমিভাব হওয়া বা বমি হওয়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা। বলতে গেলে প্রায় ৬৫% গর্ভবতী মা-ই গর্ভাবস্থায় এর শিকার হয়ে থাকেন। এই বমি বমি ভাবকে ‘মর্নিং সিকনেস’ বলা হয়। বিশেষ করে গর্ভধারণের প্রথম ৩ মাস এই সমস্যা বেশি দেখা যায়, আবার অনেকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। সত্যি বলতে কী, গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি হওয়া অনেকটা যেন অলিখিত চুক্তির মতোই, এটি ঘটবেই।

কেন গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব বা বমি হয়

গর্ভাবস্থায় বমি বমিভাব বা বমি হওয়ার সঠিক কোনো কারণ পাওয়া যায় না। তবে গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে পেট ও মাংশপেশীর সংকোচন, ঘ্রাণশক্তি বৃদ্ধি পাওয়া, অস্বাভাবিকভাবে গ্যাস্ট্রিকের গতিশীলতা, মানসিক চাপ, ক্লান্তি, উদ্বেগ, পর্যাপ্ত ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি এবং নিম্ম রক্তচাপ- এই বিষয়গুলোকে কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়।

গর্ভাবস্থায় বমিভাব; source: parents.com

গর্ভাবস্থায় বমিভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার ১০টি উপায়

সাধারণত গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব সকাল থেকে শুরু হয়ে দিন বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে, তবে অনেককে আবার দিনের অন্যান্য সময়ও এই সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। বমি হওয়ার এই উপসর্গগুলো খুবই অপ্রীতিকর এবং এই সমস্যা একজন হবু মায়ের সারাদিনের রুটিনে ব্যাপক ঝামেলা সৃষ্টি করে। কিন্তু খুব সহজেই ঘরে বসেই এই বমি বমি ভাব হওয়া প্রতিরোধ করা যায়।

পানি

গর্ভাবস্থায় বমিভাব থেকে মুক্তি পেতে পানি সর্বোত্তম ওষুধ। যে হবু মা প্রায় প্রতি ঘণ্টায় এক গ্লাস করে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তোলেন, তার বমি ভাব হওয়ার সম্ভাবনা কম। শুধু তা-ই নয়, গর্ভাবস্থায় বেশি করে পানি পান করলে গর্ভবতী মায়ের শরীর হাইড্রেটেড থাকে, যা মা ও তার গর্ভের সন্তানের জন্য ভীষণ দরকারি।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন; source: romper.com

  • বিছানার পাশেই এক গ্লাস পানি রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই অল্প অল্প চুমুকে গ্লাসের পানিটুকু পান করুন। কিছুটা সময় দিন পানিকে আপনার শরীরে মিশে যেতে, তারপর বিছানা ছেড়ে উঠুন।
  • এছাড়াও সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এতে করে আপনার হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকবে, শরীর ফুরফুরে ও মানসিকভাবে চনমনে থাকবেন।

আদা

বমিভাব থেকে মুক্তি পেতে আদা একটি অতুলনীয় প্রাকৃতিক উপাদান, এমনকি গর্ভাবস্থায়ও। আদা হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখার পাশাপাশি বমি হওয়ার জন্য দায়ী পেটের অম্লীয় স্রাব প্রতিরোধ করে। এমনকি আদার গন্ধ বমি বমি ভাব কমায়।

এক টুকরা আদা মুখে নিয়ে রাখুন; source: thebump.com

  • ছোট্ট এক টুকরা আদা অথবা আদার স্বাদযুক্ত ক্যান্ডি চুষলেও বমি ভাব কেটে যায়।
  • ৫ ফোঁটা আদার রস এবং এক চা চামচ মধু মিশ্রিত করে যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে খান, তাহলেও উপকার পাবেন।
  • এক চা চামচ আদা পেস্ট সহ এক কাপ পানি দিয়ে চা বানিয়ে তাতে অল্প একটু মধু মিশিয়ে পান করুন, আরাম পাবেন। সকালে দু’বার এই পানীয় পান করলে বমি ভাব কম বোধ করবেন।

লেবু

গর্ভাবস্থায় বমি ভাব দূর করতে আরেকটি অসাধারণ উপাদান হচ্ছে লেবু। লেবুর দারুণ সুস্বাদু গন্ধ স্বাভাবিকভাবেই শরীরে শান্ত একটি প্রভাব ফেলে। লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি গর্ভবতী মা ও গর্ভের সন্তানের জন্য উপকারী।

লেবু নিয়ে ঘ্রাণ নিন; source: livestrong.com

  • একগ্লাস পানিতে একটি ফ্রেশ লেবুর রস এবং খানিকটা মধু মিশিয়ে সকালে পান করুন, বমি বমি ভাব চলে যাবে।
  • এমনকি লেবুর খোসার ঘ্রাণ নিলেও বমি বমি ভাব কেটে যায়।
  • কয়েক ফোঁটা লেবুর সুবাসযুক্ত তেল একটি রুমালে নিয়ে হাতের কাছে রাখুন, যখনই বমি অনুভূতি হবে, রুমালটি নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নিন, স্বস্তি পাবেন।

মেন্থল

মেন্থল আরেকটি অন্যতম ভেষজ উপাদান যা গর্ভাবস্থায় বমিভাব রোধ করে এবং পাকস্থলি শান্ত রেখে গর্ভবতী মাকে আরাম দেয়।

মেন্থল চা পান করুন; source: livestrong.com

  • এক চা চামচ শুকনা মেন্থল এক কাপ পরিমাণ পানিতে দিয়ে গরম করুন এবং এতে অল্প পরিমান চিনি বা মধু মিশিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে পান করুন, এতে করে মর্নিং সিকনেস চলে যাবে।
  • একটি রুমালে মেন্থল সুগন্ধ যুক্ত তেলের কয়েক ফোঁটা মাখিয়ে নিয়ে আপনার হাতের কাছে রাখুন। এরপর যখন বমিভাব আসবে তখন এটির ঘ্রাণ নিন।

দারুচিনি

দারুচিনি মর্নিং সিকনেস দূর করে; source: cinnamonromper.com

গর্ভাবস্থায় বমিভাব থেকে মুক্তি পেতে অনেক গর্ভবতী মা-ই দারুচিনিকে বেশ কার্যকর মাধ্যম হিসেবে পেয়েছেন। দারুচিনি স্বাদযুক্ত চুইংগাম চিবাতে পারেন। একটি টোস্ট নিন এবং এতে কিছুটা মধু লাগিয়ে নিন, টোস্টের উপর সামান্য দারুচিনি গুঁড়া ছিটিয়ে নিন এবং এটি খেয়ে দেখুন, বমিভাব কমে আসবে, আর এটি খাওয়া নিরাপদও। আবার কোনো কোনো হবু মা শুধুমাত্র এক টুকরা দারুচিনি মুখে পুরে রেখেই অনেক উপকার পান।

কারিপাতা

কারিপাতা; source: doctoroz.com

লেবু এবং চিনির সাথে কারিপাতার রস মিশ্রণ বমিভাবের আরেকটি সমাধান হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ১৫-২০টি কারিপাতার রস তৈরি করুন। এবার এর সাথে দুই চা চামচ লেবুর রস এবং চিনি অথবা খানিকটা মধু মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিন বার খেয়ে দেখুন, উপকার পাবেন।

পনির

গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করুন, কারণ এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সঠিক রাখে। একটি গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার মর্নিং সিকনেস অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব অনেকটাই প্রতিরোধ করে।

পনির খেতে পারেন গর্ভাবস্থায়; source: contentful.com

যখন অন্যসব খাবার আপনাকে বমিভাব অনুভূত করায়, তখন পনির হতে পারে আপনার জন্য দারুণ একটি খাবার। আপনি খুব সহজে তাজা ফল এবং সবজির সাথে পনিরের সালাদ বানাতে পারেন এবং এটি দুপুরে কিংবা রাতের খাবারে খেতে পারেন।

ভিটামিন বি৬ গ্রহণ করুন

ভিটামিন বি৬ গর্ভাবস্থায় বমি ও বমিভাব কমাতে সাহায্য করে বলে ধরা হয়। এছাড়াও ভিটামিন বি৬ ভ্রুণের কোনো প্রকার ক্ষতি না করেই গর্ভবতী মায়ের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখে।

ভিটামিন বি৬ সাপ্লিমেন্টস; source: usnews.com

  • মর্নিং সিকনেস দূর করতে সকালে ভিটামিন বি৬ সাপ্লিমেন্টস গ্রহণ করতে পারেন। কী মাত্রায় এই সাপ্লিমেন্ট খাবেন তা জানতে অবশ্যই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
  • একটু সঠিক সুষম খাদ্য তালিকা গর্ভাবস্থায় বমিভাব দূর করতে অনেক কার্যকরী। আপনি প্রতিদিন ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন; যেমন- ব্রাউন রাইস, অ্যাভাকাডো, কলা, মাছ, ভুট্টা এবং বাদামের মতো খাবারগুলো উচ্চ ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ খাবার।

অল্প খান, কিন্তু ঘন ঘন খান

জোর করে না খেয়ে অল্প অল্প করে খান; source: lovingmomentsbras.com

বমি হওয়া বা বমি ভাবের অন্যতম কারণ হলো পেট খালি থাকা এবং ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও জোর করে বেশি খাওয়া। প্রায় সময়ই দেখা যায় যে, হবু মায়েরা একদমই খেতে চান না অথবা খাওয়ার রুচি থাকে না। এক্ষেত্রে জোর করে বেশি না খেয়ে বরং একটু বিরতি নিয়ে নিয়ে খান। যা খেতে ইচ্ছে করে তা-ই খান, তবে লক্ষ্য রাখুন অতিরিক্ত খাবেন না, আবার একদম না খেয়েও থাকবেন না।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন

মর্নিং সিকনেস বা বমিভাবের অন্যতম আরেকটি কারণ হলো আপনার শরীরের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত না করা। সকালে যদি বিছানা ছেড়ে উঠতে আলসেমি লাগে, তাহলে জোর করে উঠবেন না, আরও খানিকটা সময় বিশ্রাম নিন। কারণ এই সময়টায় বমি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ক্লান্তিভাব গর্ভাবস্থায় বমিভাবের অন্যতম কারণ।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন; source: verywell.com

অনেক সময় দেখা যায়, গরম খাবারের চেয়ে ঠাণ্ডা খাবার খেতে গিয়ে বমিভাব কম অনুভূত হয়, তাই চেষ্টা করুন কিঞ্চিৎ ঠাণ্ডা খাবার খেতে। খালি পেটে সকালে ঘুম থেকে একবারে উঠে না গিয়ে হালকা ধরনের কোনো খাবার বিছানায় বসেই খান, এতে করে বমি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। সব সময় চেষ্টা করুন মানসিকভাবে স্থির থাকতে, প্রায় সময়ই দেখা যায় অতিরিক্ত মানসিক উত্তেজনা ও উদ্বেগ গর্ভাবস্থায় বমি ভাবের জন্য দায়ী।

ফিচার ইমেজ- ltkcdn.net

Related Articles